কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৩+৪

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৩+৪
Suraiya Aayat

নিজের ক্লাস রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ কেউ যেন ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে একটা ফাঁকা রুমে ঢুকিয়ে নিয়ে গেল ৷ হঠাৎ এমন কিছু হওয়াতে আরুর যেন দম আটকা অবস্থা ৷ রুমে ঢুকতেই কারোর বুকে এসে আছড়ে পড়লো আরু , ভয়ে চেঁচাতে যাবে তখনই আগেই কেউ হাত দিয়ে ওর মুখটা চেপে ধরলো, আরুর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে এলো, অন্ধকারে চেনার উপায়টুকু নেই ৷

হঠাৎ ফোনের ফ্ল্যাশের আলো মুখের ওপর পড়তেই আরুর চোখ জোড়া বড়ো বড়ো হয়ে গেল,লোমকূপ গুলোতে ঘামের আস্তরন, অন্ধকারে আর গরমে কপাল বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে, শার্টটা শক্ত করে ধরে রাখা হাতটাও কাঁপছে, হাত দিয়ে চেপে রাখা ঠোঁটটাও কাঁপছে , আর হৃদস্পন্দনের ক্রমাগত ছন্দপতনে হৃদয়বিদারন এক অনুভূতি ৷ফোনের ফ্ল্যাশের আলো মুখ থেকে সরিয়ে দিতেই আরু আরিশের বুকে মাথা রাখলো, বেশ শব্দ সহকারে হাপাচ্ছে আরু, দুই হাত দিয়ে শার্টটা খামচি মেরে ধরে আছে , আরিশের বুকে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস চালাচ্ছে আরু ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরুর এমন চঞ্চলতা আর অস্থিরতাতে আরিশ একটু ঠোঁট চেপে হাসলো তারপর আরুর সামনে নিজের মি অভদ্র টাইপ ব্যাক্তিত্বটাকে বজায় রাখার জন্য আরুর চুলে দিয়ে থাকা গার্ডারটা শক্ত করে চেপে ধরে একটানে তা মাথা থেকে খুলে নিতেই আরু আহহ করে শব্দ করে উঠলো ৷ হেয়ার ব্যান্ডটা পকেটে ঢুকিয়ে আরুর চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো, আরু চোখ মুখ খিঁচে আছে , আরিশ আরুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল
” কালকে অসুস্থ ছিলাম, নিজের মাঝে হুস ছিলো না, আজকে সজ্ঞানে আছি তাই ইটস মাই টাইম ৷ তুমি কি ভাবলে এত সহজে তোমাকে ছেড়ে দেবো আরুপাখি ? পানিশমেন্ট পাবে না ?”
আরু চোখ মুখ কুঁচকে বলল

” ধূর, ছাড়ুন আমার লাগছে ৷ আর আপনি আমার ওপর রাগ দেখাচ্ছেন কোন সাহসে রাগ তো আমার দেখানোর কথা কারন আপনি এবং আপনার নিষ্ঠুর পরিবার মহলের কেউ আমাকে একটা খবর অবধি দেইনি যে আপনি হসপিটাল থেকে চলে এসেছেন ৷ কতো কষ্ট করে রান্না করে নিয়ে গেলাম তার কোন দাম নেই ৷ হুহ !”
কথাটা শুনে আরিশ আরুকে ছেড়ে রুমের আলোটা দিতেই আরু বড়ো একটা নিশ্বাস নিলো ৷ আরিশ একটা চেয়ার টেনে আরুর হাত ধরে টেনে ওর কোলে বসিয়ে বলল

” পানিশমেন্ট পরে দেবো আগে তোমার এফর্টটাকে এপ্রিশিয়েট করি ৷ কই কি রান্না করেছো দেখি দাও, খুদা লাখসে, সকাল থেকে কিছু খায়নি ৷”
আরিশের কথা শুনে আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে ব্যাগটাকে শক্ত করে জাড়িয়ে ধরে বলল
” সরুন, একটা খাবার ও পাবেন না আপনি , আপনার জন্য হসপিটাল থেকে আমাকে আবার হুদাই ফিরে আসতে হয়েছে তাই একটা খাবার ও আপনি পাবেন না ৷ ”
আরিশ এবার মুচকি হেসে বলল
” চলো তাহলে তোমাকে একটা কিস করি ৷ শুনেছি মেয়েদের কিসে নাকি মিষ্টি থাকে আর মিষ্টি খেলে শরীরে অনেক ক্যালোরি পাওয়া যায় সাথে এনার্জি ও৷”

কথাটা শোনা মাত্রই আরু ঝটপট আরিশের কোল থেকে উঠে গেল তারপর ব্যাগটা হাতে ঝুলিয়ে বলল
” এত লুইচ্ছা হলেন কবে আপনি ? আপনাকে আগে যদিও কখনো ভালো ভাবিনি তবে এতোটা লুইচ্ছা হবেন সেটা জানতাম না , আমি আজই ফুপিকে বলবো তার এই লুইচ্ছা ছেলেকে আমি কখনো বিয়ে করতে পারবো না ৷”
কথাটা বলে আরু মুখ বাকালো ৷ আরিশ এবার চেয়ার থেকে উঠে আরুর দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই আরু বলে উঠলো
” এভাবে এগোচ্ছেন কেন হ্যাঁ ? আপনি কি ভাবেন আমি ভয় পাচ্ছি ?”

এবার আরুর কথাতে সামান্য কিন্তু কিন্তুর ছাপ এলো, বেশ তুতলিয়ে বলল
” ওভাবে তাকালে আর কাছে আসলেও আমি ভয় পায়না হু , এসব রোমিওগিরি আমার কাছে দেখাতে আসবেন না ৷”
কথা বলার এক পর্যায়ে আরুর দেওয়ালটা পিঠে ঠেকে যেতে নিলেই আরিশ হাত ধরে কাছে টেনে এনে ওর শরীরের সাথে মিশিয়ে নিলো, আরুর চোয়াল ধরে বলল
” এত কাল ধরে নিরামিষ হয়ে আছি আমি শুধু একটু আমিষের অপেক্ষাতে, আমি তো নিয়েই ছাড়বো, বহু অপেক্ষা করেছি ৷”
আরুর মাঝে এবার সামান্য কাঁপাকাঁপি শুরু হলো, কথার ভঙ্গিমা খানিকটা অগোছালো হয়ে গেল ৷
” কিইইই বওওলছেন এসঅঅব ! হ্যাঁ, আর এসব আমিষ নিরামিষ কিইই হু , সরে যান নাহলে আমি সত্যিই আজ ফুপিকে সব বলবো ৷”
আরিশ আরুর দিকে এক নেশা ভরা চাহনিতে তাকিয়ে বলল
“তোমার ফুপিকে আমি ভয় পাই?”

আরু মাথা নীচু করে আছে,কি বলবে বুঝতে পারছে না,আরিশ তো আরিশের মতোই চিরকাল ঘাড়ত্যাড়া , নিজের মতো চলে ৷ আরু কিছু বলার জন্য মুখটা তুলতেই আরিশ আরুর কোমর ধরে আরো কাছে টেনে নিলো,আরু বেটে আর একটু গোলুমোলু হওয়াই আরিঝের বুকেই ওর মাথা রাখার স্থান ৷ আরুর ঠোঁট কাঁপছে, আরিশ আরুর চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে আরুর ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যেতেই আরু অনেক ভয়ে ভয়ে বলল
” প্লিজ !”

আরিশ আরুর কথার সবরকম বাধা অতিক্রম করে আরুর ঠোঁট শক্ত করে চেপে ধরতেই আরিশের শার্ট থেকে আরুর হাতের বাধন আলগা হয়ে এলো, আরিশ যেন অদ্ভুদ এক নেশার ঘোরে আছে ‌ ৷ বেশ কিছুখন ধরে আরিশ আরূর ঠোঁটটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে কিন্তু আরূর কোন রেসপন্স নেই দেখে আরিশ রেগে গেল, কপাল কুঁচকে আরুর নীচের ঠোঁটটা শক্ত করে কামড়ে ধরতেই আরু ব্যাথায় আরিশকে ধাক্কা মারলেও আরিশ ছাড়লো না, আরূর ঠোঁটটা ছেড়ে খানিকটা রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল
” ইউ হ্যাভ আ লাস্ট চান্স আরূপাখি, এবার যদি রেসপন্স না করেছো তো আজকে সোজা বিয়ে করে একেবারে বাসর ঘরে ঢুকে যাবো বলে রাখলাম তখন আরো বেশি কিছু হবে ৷”

আরু শুকনো ঢোক গিললো তারপর চুপচাপ মাথা নীচু করে রইলো ৷ হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আরু হাত থেকে ব্যাগটা ফেলে আরিশের দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে আরিশের শার্টটা টেনে নিজের কাছে আনলো, আরিশ কিছুটা হলেও অবাক হলো,আরু কাছে টেনে বলল
” সবসময় ধমকালেই কি আমি ভয় পেয়ে যাবো ভেবেছেন ? আমি কি কিছু করতে পারিনা ?”
আরিশ কিছু বলতে যাবে তার আগে আরু আরিশের ঠোঁটটা আঁকড়ে ধরলো যাতে আরিশ তো রিতীমতো অবাক, আরু এমনটা করবে তা ও কখনো কল্পনাতেও আনেনি ৷ আরিশের চুল মুঠ করে ধরে আছে আরু, আরিশের ঠোঁটের হাইটে ও না তাই পা টা খানিকটা উঁচু করেছে তা বুঝে আরিশ আরুর কোমর ধরে খানিকটা উঁচু করে ধরলো ৷ কিছুখন পর আরু আরিশকে ছেড়ে আরিশকে খানিকটা ধাক্কা মেরে ঠোঁটটা মুছে চোখ টিপ মেরে বলল

” ভাবুন যে আপনার এই ভার্সিটির কোন জুনিয়ার আপনার নাকের ডগা দিয়ে আপনাকেই র‌্যাগিং করে চলে গেছে,,,,,মি অভদ্র ৷ সো আমি জিতে গেলাম আর আপনি হেরে গেলেন ৷ বাই দা ওয়ে আমার লিপসে সুগার আছে কি জানিনা তবে আপনার ঠোঁটে নিম পাতা ঘষা আছে ৷ হাহ !”
কথাটা বলে আরু চলে যেতে নিলেই আরিশ বলে উঠলো
” আমার চালে আমাকেই কিস্তিমাত ! ওয়েল ‌,মাঝে মাঝে হেরে গিয়ে যদি এতো সুন্দর শান্তনা পুরষ্কার পাওয়া যাই তো আমি হাজার বার হারতে রাজি আছি মিসেস আবরার আরুশি খান ৷”
কথাটা বলে আরুর দিকে চোখ টিপ মারতেই আরু রেগে গেল তারপর ঝটপট কযে আরিশের কাছে গিয়ে আরিশের হাতে খাবারের ব্যাগটা দিয়ে বলল
” আপনি ভাঙবেন তবুও মচকাবেন না ৷”
আরিশ হাসলো, আরু ব্যাগটা দিয়ে রেগে চলে গেল ৷

প্রিন্সিপালের সাথে করিডোরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আরিশ , হঠাৎ খেয়াল করলো আরু হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো আরিশ, 12.10 বাজে, তারমানে আরুর সবে একটা ক্লাস হয়েছে আর বাকি ক্লাস না করেই বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ওর ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্যার বললেন,
“ওয়েল ! আরিশ নাও আই হ্যাভ টু গো,ইফ ইউ হ্যাভ এনি প্রবলেম এবাউট দিস টপিক ইউ ক্যান টেল মি ৷”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
“ওকে স্যার ৷ থ্যাংক ইউ ৷”

কথাটা বলে আরিশ চলে এলো ৷ আরিশ ভার্সিটিতে থাকাকালীন পুরো সময়টুকু আরুকে নিজের মতো করে থাকতে দেই কিন্তু যখন খুব বাজে সময় যায় তখন ভার্সিটিতে থাকতেও আরূকে কিছুখন সময়ের জন্য বিরক্ত করে ৷ আরিশ নিজের রূমের দিকে গেল,ওর রূম 4র্থ ফ্লোর আর আরুর 3য় ফ্লোর তাই ভাবলো যাওয়ার সময় আরূর ক্লাসে গিয়ে ওর ফ্রেন্ডদেরকে জিজ্ঞাসা করবে যে আরূ চলে গেল কেন ৷ আরিশ রূমে ঢুকতেই সবাই বেশ ওর দিকে তাকাতাকি করতে লাগলো কারন আবরার আরিশ খানকে কমবেশি সবাই চেনে তার মেধার জন্য আর আরিশ খানিকটা হলেও মেয়েদের কাছে ক্রাশ জাতীয় বস্তু ৷ রূমে ঢুকতেই বেশ কিছু মেয়ে আরিশের দিকে তাকিয়ে রইলো হা করে কোন কারন ছাড়াই, তাদের কাছে এভাবে তাকানোর কোন নির্দিষ্ট কারন নেই, জিজ্ঞাসা করলেই বলে ” ভালো লাগে দেখতে তাই তাকিয়ে থাকি ৷”

আরিশ এবার চাহনি উপেক্ষা করে আরু যে বেঞ্চে বসে তার পিছনের বেঞ্চের মেয়েটাকে গিয়ে বলল
“এই বেঞ্চকাতে চারজন লেডি গ্যাংস্টার থাকে তারা আজকে আসেনি ?”
মেয়েটা আরিশের দিকে কিছুখন তাকিয়ে রইলো কোন উত্তর দিলো না, আরিশ ভাব সাব বুঝে বলল
” এহেম এহেম, আই আসকড ইউ সামথিং !”
মেয়েটা ঘোরের মাঝে বলল

” ভাইয়া আপনি কি সিংগেল ? না মানে আমিও সিংগেল, যদি বলতেন তাহলে আপনার সাথেই মিংগেল হতাম আরকি ৷”
আরিশ মাথার চুলগুলো টেনে বলল
” আমি বিবাহিত আপু, আর এই বেঞ্চে যে লেডি গ্যাংস্টার বসে আরুশি রহমান সে আমার ফিয়ন্সে?৷”
মেয়েকার ঘোর কাটলো তারপর খানিকটা লজ্জা সুরে বলল
“সরি ভাইইয়া বুঝতে পারিনি ৷”

আরিশ ইটস ওকে বলে বেরিয়ে গেল নিজের ঘরে ৷ আরিশ রুমে গিয়ে সাহেলের পাশে বসতেই দেখলো সাহেল খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ইকুয়েশন মেলানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, আনেকবার কাটাকুটি করেছে , আরিশ ভালো করে তাকিয়ে রইলো ইকুয়েকশটার দিকে আর সাহেলের খাতার দিকে যেখানে ও কাটাকাটি করেছে বারবার ৷ প্রথমবার চেষ্টায় শুরুর দুইটা লাইন ঠিক বাকিটা ভুল, দ্বিতীয়বার চেষ্টায় প্রথম চারটে লাইন ঠিক পরের গুলো ভুল,,তৃতীয়বারের চেষ্টায় প্রথম 9টা লাইন ঠিক বাকিটা ভুল ৷
এখন চতুর্থ বারের মতো চেষ্টা করছে প্রথম থেকে ঠিকঠাক কিন্তু শেষের লাইনটা এসে ভুল করতে নিলেই আরিশ ওর কাছ থেকে পেনটা কেড়ে নিয়ে বলল

” কি সমস্যা হয়েছে বল ?”
সাহেল অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
” মানে ?”
আরিশ এবার শেষের লাইনটা ঠিক করে বলল
” আন্টি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাইনা ?”
সাহেল. একটু হাসি ফুটিয়ে বলল
” না তেমন কিছু না , সামান্য ৷”
আরিশ সাহেলের দিকে খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলল
” দেখ তো এবার ঠিক আছে কি ?”
সাহেল মুচকি হেসে বলল
” তুই করেছিস যখন নিঃসন্দেহে ঠিক হবে ৷”
আরিশ সাহেলের কাধে হাত রেখে বলল

” আমার বলা আর কথা কথাগুলো যদি তোর এতোই ঠিক মনে হয় তাহলে আন্টিকে এখনো ধানমন্ডি আনিসনি কেন? আমি তো অনেক আগেই বলেছিলাম আন্টিকে ধানমন্ডি আনার কথা এনে তোদের সাথে রাখার কথা ৷ ”
সাহেল মুচকি হেসে বলল
” আচ্ছা আনবো ৷”
আরিশ ঘড়ির সময় দেখে বলল
” ইউ হ্যাভ ওনলি 24 আওয়ার, এর মাঝে আন্টির বাক্সপেট্রা আমি ধানমন্ডিতে আমার ফ্ল্যাটে যেন দেখতে পাই, আমি কালকে আন্টির সাথে ওখানেই মিট করবো৷ এখন আসি আরুপাখির সাথে দেখা করবো, মেয়েটা হুঠ করে বাসায় চলে গেছে ‌৷”
সাহেল কিন্তু করে বললেই আরিশ বলল
” নো মোর ওয়ার্ডস ৷”
আরিশ বাসায় চলে গেল ৷

” এই ছেলেকে তুই চিনিস আরু ? সত্যি করে বল?”
খানিকটা চোখ রাঙিয়ে কথাগুলো বলল আরুর মা আফসানা বেগম ৷
আরু কাঁদোকাঁদো চোখে বিড়বিড় করে ওর ফুপির দিকে তাকিয়ে বলল
” ও ফুপি তোমার ভাইয়ের বউকে বোঝাও দেখ সে আমার কথা বিশ্বাস ই করছে না ৷”
আরু কেঁদে দেবে এমন অবস্থা ৷ আরুকে নিজের কাছে টেনে খানিকটা ধমকের সুরে বললেন অনিকা খান

” এই আফসানা হচ্ছে কি, মেয়েটা বলছে তো যে ছেলেটা কে ও জানেনা তারপর ও ওকে জোর করছিস কেন? আর ওই ছেলেই বা যদি এখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে তাহলে ওর কি করার !”
আফসানা বেগম রেগে বললেন
” ও যদি ছেলেটা কে না চেনে তাহলে ছেলেটা বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস কি করে পায়?”

আরুর মায়ের এমন ধমক শুনে আরু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল, একেই এই ছেলে যাকে আরু চেনে না জানে না সে আরুকে বিয়ে করবে বলে পুরো ফ্যমিলি নিয়ে হাজির বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য আর অন্যদিকে আরিশ যদি জানে এই সব ব্যাপার তাহলে আজ ওর খবর আছে ৷ এমনিতেই সারাদিন ভার্সিটিতে গিয়ে যা যা কাজকর্ম করে তার খেসারত রাতের বেলা দিতে হয় আরিশের পড়ানো শেষ হয়ে গেলে তার ওপর আর এক নতুন প্যারা , কথাগুলো ভেবে কেঁদে ফেলল আরু ৷
অনিকা বেগম আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
” এভাবে কেউ বকে, আমি দেখছি, তুই কোন কথা বলবি না আফসানা , আমি দেখছি কি করা যাই, ওরা যদি জানে যে আরু এংগেজড তাহলে হয়তো ভুল বুঝতে পারবে ৷”
কথাটা বলে আরুর দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে উনি বেরিয়ে গেলেন ৷
ওনাদের কাছে গিয়ে বললেন

” তা বাবা তোমার নাম কি ? আর আরুকে কিভাবে চেনো ?”
ছেলেটা মুচকি হেসে বলল
” জি আন্টি আমার নাম রাতুল , আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ৷ আরুকে আমি প্রায় 2 মাস ধরে চিনি ৷ কিন্তু আরু আমাকে চেনে না ৷”
কথাটা শুনে আরু ওর মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকালো ৷ আরু আর ওর মা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে আর শুনছে ৷
রাতুলের মা কিছু বলতে যাবে তখনই আরিশ বসায় ঢুকতেই দেখলো কয়েকজন বসে আছে আর ওর মা তাদের সামনে কথা বলছে ৷”
আরিশকে দেখে অনিকা খান বললেন
” এটা আমার ছেলে আরিশ , এনএসইউ তে পড়ে, এবছর লাস্ট ইয়ার ৷ ”
আরিশের নাম শুনে আরু আর আফসানা বেগম বেরিয়ে এলো ৷
আরিশকে দেখে রতুল বলল

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ১+২

” ওহহ এটা তো তাহলে আরুর ভাই , মানে আমার শালা হবে ৷”
কথাটা শুনে আরিশের ভ্রু কুঁচকে এলো, তারপর আরুর দিকে ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকালো ৷ আরু ভয়ে কুঁকড়ে গেছে, আরিশের এই শান্ত দৃষ্টির গভীরতা আরু জানে ৷ আরিশ এবার আরুর থেকে চোখ সরিয়ে বলল
” ওহহ ! তা আরুর বিয়ে নাকি ?”
রাতুল নামের ছেলেটা বলল ” জ্বি, ওকে বিয়ে করতে চায় আমি ৷”
রাতুলের মা বললো
” বসো বাবা, তোমার সাথেও একটু পরিচিত হয় ৷”
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল

” মামী তোমার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছো সেটা বলোনি তো , আর তোমার মেয়ের ভার্সিটি থেকে ফেরার জন্য ব্যাস্তাতার কারন ও বুঝলাম ৷ ভালো ৷ তাহলে বিয়ের কথা ফাইনাল করো ৷”
কথাটা শুনে আরুর মা বললো
” এটা কেমন কথা আরিশ ৷”
আরিশ ওর চাপ দাঁড়িতে হাত দিয়ে বলল

” আরুপাখি রাতে পড়াতে আসবো, আর এতো খুশির খবর শুনলাম মিষ্টি রেডি রেখো ৷”
কথাটা বলে আরিশ বেরিয়ে গেল ৷ আজকে ওর খবর আছে, আর এই রাতুল নামের ছেলেটার জন্য আজ যে আরিশ ওকে কি করবে তার নেই ঠিক কথাটা ভেবে আরু কেঁদে ফেলল তারপর দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৫+৬