কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৫+৬

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৫+৬
Suraiya Aayat

কোনরকমে চোখটা মুছে আরু ট্রলিটা বার করে জামা কাপড় গোছাতে লাগলো, ওর কিছু জামকাপড় কোনরকমে গুছিয়ে ট্রলির চেন টানতে টানতে ফুঁপিয়ে উঠতেই অনিকা আর আফসানা বেগম ধড়ফড়িয়ে রুমে আসলেন, আরু চোখের জলটা মুছে ট্রলিটা নামাতেই অনিকা খান আরুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন
” এই আরু মা এসব কি পাগলামি হ্যাঁ? আর এসব ট্রলি গুছিয়ে কোথায় চললি ? আরিশ জানলে কি হবে জানিস?”
আরু ফুঁপিয়ে বলে উঠলো

” ওটাই আমার ভয়, আমাকে ছাড়ো ফুপি আমি থাকবো না এখানে, উনি রাতে এসে আমার খবর খারাপ করে দিবে আর ওই ছেলেকে আমি চিনি না জানি না তার জন্য উনি আমার ওপর হামলে পড়বে ৷ উনি আসার আগে আমি চলে যাবো এখান থেকে ৷”
আরুর মা আরুকে খানিকটা ধমকে বলল
” আরু, খামোখা ভয় পাচ্ছিস কেন? আরিশকে আমরা বুঝিয়ে বললে ও কিছু বলবে না ৷”
আরু ফুঁপিয়ে উঠে এবার ট্রলিটা হাতে নিয়ে বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমি এতোকিছু শুনতে চাইছি না, আমি এখন কোথায় যাবো বলো , ফুপির বাসা? নাহ সেখানে কি করে যাবো সেখানেই তো ভয়, খালামনির বাসা যাবো? আমার তো খালামনিই নায়, তাহলে কোথায় যবো, নানুবাসা ? হ্যাঁ নানুবাসা ই যাবো আমি ৷”
কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে গেলেই অনিকা খান আরুর গালে হাত রেখে বললেন
” আরে মা পাগলামো করিস না শোন, আরিশ কিছু বলবেনা ওকে বুঝিয়ে বললে ঠিক বুঝবে ও তাছাড়া মানছি আমার ছেলেটা তোকে নিয়ে একটু ওভার পজেসিভ তবুও !”

আরু ফোঁপাচ্ছে কিছু বলছে না, এটা নতুন কোন ঘটনা না, এতো তাড়াতাড়ি ওদের এনগেজমেন্ট ও হতো না আরিশ সেটেল হয়ে গেলে এনগেজমেন্ট হতো কিন্তু তিনমাস আগে যখন আরু ওর নানুর বাসা গিয়েছিলো তখন ওর নানু আরু আর ওর বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রামের মোড়ল বাড়ির ছেলের সাথে বিয়ের পাকা কথা ঠিক করে রেখেছিলো তারপর আরু এনগেজমেন্টে রাজি না থাকলেও বিয়ে এনগেজমছন্ট করাতে চেয়েছিলো আরুর নানু ৷ কথাটা আরিশ কোনভাবে জানতে পারে তারপর সেখানে ব্যান্ডপাটি সহ লোকজন নিয়ে হাজির হয়েছিলো , পুরো গ্রামকে জানিয়েছিলো যে ওর সাথে আরুর এনগেজমেন্ট হবে ৷

তারপর সেদিন আরুর সাথে এনগেজমেন্ট করে রাখে তারপর থেকে আরুর বিষয়ে আরিশ লাগামছাড়া কোন কাজ পছন্দ করে না ৷ তারপর থেকে আরুর নানুর সাথে আরিশের আঁদায় কাচকলার সম্পর্ক ৷ আর ওদের এনগেজমেন্ট করার পরও এমনকিছু ঘটলো এতে আরিশ নিশ্চয় কিছু না কিছু ঘটাবে তার ওপর আরিশ যাওয়ার আগে এমন একটা ঠান্ডা যুদ্ধ লাগিয়ে গেছে আরুর মনে তাতে ওর ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক ৷
আরু এবার খানিকটা রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

” আচ্ছা যাবো না ওখানে গেলে উনি শিউর এবার আমাকে আর আস্ত রাখবে না , আমি কোথাও যাবো না কিন্তু তুমি এখনই ওনাকে ফোন করে বলো যে আমার কোন দোষ নেই এতে, যা করেছে ওই রাতুল গাধা ৷”
আরুর মা বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ অনিকা খান আরুকে বিছানায় বসিয়ে ফোন হাতে নিয়ে আরিশকে ফোন করলো, কয়েক সেকেন্ড রিঙ হওয়ার পরই আরিশ ফোনটা ধরলো, ওপাশ থেকে গম্ভীর স্বরে বলল
” হমম বলো ‌৷”

কল লাউডে দেওয়া আছে তাই আরুর কানে কথাগুলো আসছে , আরিশের এমন রুক্ষ কন্ঠ শুনে আরু ভয়ে কুঁকড়ে গেল ৷ আরু উঠে যেতে নিলেই অনিকা খান চোখের ইশারায় আরুকে বসতে বললেন
আরু বসে ফুঁপিয়ে উঠলো তখনই ওপাশ থেকে আরিশ বলে উঠলো
” আম্মু কলটা লাউড থেকে নরমাল করো ৷”
কথাটা শুনে অনিকা খান আর আরু দুজনেই চমকে গেলেন, আরিশের বুদ্বির সম্পর্কে তর ধারনাটা হয়তো কম ৷ উনি ঘাবড়ে গিয়ে কলটা নরমাল করতেই আরিশ বলে উঠলো

” আম্মু তুমি বাসায় যাও এক্ষুনি ৷আমি রাতে বাসায় ফিরবো , আর কাচ্চি রাঁধবে আর না পারলে অর্ডার দেবে আর সানাকে বলো আমার রুমটা যেন সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে ৷”
কথাটা বলে আরিশ কল কেটে দিতে গেলেই উনি বললেন
” আরে শোন আরিশ কাটিস না, যেটা বলার জন্য তোকে ফোন করলাম সেটা তো শুনলিই না ৷”
আরিশ ভারী কন্ঠে বলল
” হমম বলো ৷”
উনিও একটু শুকনো ঢোক গিলে বললেন

” তুই আরু মাকে ভুল বুঝিস না, আরু মা ওই ছেলেটাকে চেনে না ইভেন কে তাও জানে না আর ছেলেটা হয়তো আরু কে চিনতো কোনভাবে তারপর পছন্দ হয়েছে তাই না জেনে বিয়ের প্রস্তাব এনেছে আর এটা একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে আর মেয়েটা খামোখা ভয় পাচ্ছে যে তুই কিছু বলিস কি না ৷”
আরিশ আগের মতোই ভারী কন্ঠে বলল
” আমি সব জানি, ওকে আমি কিছু বলবো না তাই খামোখা ভয় পেতে বারন করো ৷ সন্ধ্যার সময় আমি যাবো তখন যদি মুখে ভয়ের ছাপ দেখি তো তার খবর আছে ৷ রাখছি ৷”

কথাটা বলে আরিশ ফোনটা কেটে দিলো ৷ ওনার বুকের ভিতর দিয়েও যেন এক ঝড় বয়ে গেল ৷ উনি আরুর দিকে প্রথমে বিরষ মুখে তাকিয়ে তারপর ফিক করে হেসে বললেন
” আরিশ কিছু বলবেনা তোকে বললাম না তুই খামোখা ভয় পাচ্ছিস ৷”
আরু ও একটু মনে সাহস এনে বলল
” আর কি বলেছে ?”
উনি আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
” আর বলেছে সে সন্ধ্যায় এসে যদি দেখে যে তোর মুখে ভয়ের ছাপ তো তোর খবর খারাপ বুঝলি ?”
আরু এবার ওনার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলো তারপর ভাঙা গলায় বলল
” ফুপি উনি এমন কেন?”
উনি মুচকি হেসে বললেন

” ও তোকে ভালোবাসে তাই এমন পাগলামি করে ৷”
আরু কিছু বলল না চোখটা বন্ধ করে নিলো , মনে মনে ভাবলো যে রাতুল নামের ছেলেটাকে যদি কখনো রাস্তায় বা অন্য কোথাও দেখে তো গুন্ডা দিয়ে পিটাবে আরু ৷

কিছুখন আগে সন্ধ্যার আযান দিয়েছে, আরু নামাজ পড়ে ঘরে বসে আছে,ঘড়িতে কাটায় কাটায় 6 টা বাজে তারমানে এক্ষুনি আরিশ আসবে তাই আরু মুখে কোন ভয়ের ছাপ রাখতে চাইছে না ৷ আজকে আরুর বাবা আরমান সাহেব ও অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরেছেন দেখে আরু বেশ অবাক হলো কারন জিজ্ঞাসা করলে বললেন যে আরিশ নাকি কোন একটা দরকারে ওনাকে আজকে বাড়ি থাকতে বলেছেন ৷ আরমান সাহেব নামাজ পড়ে এসে সোফাতে বসে সবে খবরের কাগজটা হাতে নিয়েছেন তেমন সময় বাসার কলিংবেলটা বাজলেই কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিতেই সানা আর অনিকা খান এলো ৷ ওনাকে দেখে খানিকটা অবাক হলো আরু আর ওর বাবা ৷ দুপুরবেলা অনিকা খান বাসায় ফিরেছিলেন আবার সন্ধ্যা হতে না হতে আবার এসেছেন তার কারনটা বুঝলো না ৷ অনিকা খান আসতেই আরমান সাহেব বলে উঠলেন

” আরিশ কোথায়? ছেলেটার কথা মতো তাড়াতাড়ি বাসায় এলাম আর সে নিজেই বেপাত্তা ৷”
আরুর মা আফসানা বেগম রান্না ঘরে নাস্তা হিসাবে কিছু বানাচ্ছিলেন তখনই আফসানা বেগমের গলার আওয়াজ শুনে খুন্তি হাতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন ৷
সানা আরুর কাছে গেছে ‌৷ আরিশ সন্ধ্যা বেলা আরুকে পড়াতে আসে তবে সানা আরিশের কাছে পড়েনা কারন ও মনে করে যে বাসার লোকের কাছে পড়াশোনা হয় না তাই ৷ আফসানা বেগম কোমর থেকে শাড়ির আঁচলটা ছাড়িয়ে বললেন
” কি ব্যাপার আপু তুমি এই না কিছুখন আগে বাসায় গেলে আবার এসেছো কোন সমস্যা?”
অনিকা খান সোফাতে বসে বলল

” আরিশ বলল যে সন্ধ্যা হলে যেন এখানে আসি তাই, বললো যে কাচ্চি বানাতে তাই এখানে এসে আবার কখন বাসায় ফিরবো তারপর কাচ্চি বানাবো তাই আর বেশি না ভেবে বানিয়ে ফেললাম আর আরুর জন্য টিফিন বক্সে আছে সানা নিয়ে গেছে আরুর কাছে ৷”
” ওহহ আচ্ছা, তাহলে আরিশ যতখন না আসে তোমরা অপেক্ষা করো আমি ততখনে রন্নাটা শেষ করি ৷”
আফসানা বেগম চলে যেতে না যেতেই টেবিলের ওপরে রাখা আরমান সাহেবের ফোনটা বেজে উঠতেই উনি ফোনটার দিকে তাকিয়ে বেশ গলা ছেড়ে ডাকলেন
” আফসানা তোমার আব্বাজান মানে আমার শ্বশুরজান ফোন করেছেন কথা বলে যাও ৷”
আফসানা বেগম রান্না ঘর থেকে গলা ছেড়ে একটু চিৎকার করে বলল

” আমার বাপকে নিয়ে মজা করা কবে বন্ধ করবে তুমি ? বেশি রসিকতা না করে তুমি ফোনটা ধরো আমি রান্না করছি ৷”
উনি হাসতে হাসতে বললেন
” কম ঝামেলা করেননি তোমার এই বাপ আমাদের বিয়ের সময়, তাই যতদিন উনি বেঁচে থাকবেন ততদিন আমি বলবো ৷”
কথাটা বলে হাসি নিয়ন্ত্রন করে ফোনটা ধরতেই অপর পাশ থেকে বেশ লম্বা সুরে আরুর নানাভাই বলে উঠলেন
” হ্যালোওওওওওওও !”
আরমান সাহেব খানিকটা গলা পরিষ্কার করে বললেন

” জ্বি আসসালাম ওয়ালাইকুম বাবা কেমন আছেন?”
উনি একটু কেশে বেশ গাঢ় কন্ঠে বললেন
” ওয়ালাইকুম আসসালাম ,এইইইই তো ভালোইইই ৷ তোমরাআআ কেমন আছোওওও ?”
অনিকা খান ও কিচেনে গেলেন ৷
” জ্বি ভালো , বাসার সবাই কেমন আছে ?”
” আছে আলহামদুলিল্লাহ ৷ শোনো আরমান যে কারনে তোমাকে ফোন করেছিলাম আরকি ৷”
আরমান সাহেব এবার একটু বেশ নড়েচড়ে বললেন
” জ্বি বাবা বলেন ‌৷”

” বলছিলাম কি আমি ভাবছি যে কালকে তোমাদের বাসায় যাবো, বুঝতেই তো পারছো বয়সটা তো আর কম হলো না, মরি বাঁচি অবস্থা, তোমাদেরকে তাই ভাবলাম একটু দেখতে যায় ৷ সেই জন্যই আরকি ৷”
” জ্বি সেটা তো খুব ভালো কথা , আসুন সমস্যা নেই তো৷”
” নাহ , সমস্যা আছে?”
আরমান সাহেব চোখ বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে উঠলেন
” জ্বি কি সমস্যা?”
” সমস্যা তো ওই ফটকে হাটুর বয়সের ছেলেটা যার সাথে আমার আরু দিদিভাইয়ের বিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছো তোমরা ৷”
আরমান সাহেব রিতিমতো বিরক্ত হয়ে বললেন

” থাক না বাবা এসব কথাব ওরা আজকাল কার ছেলেমেয়ে ওরা যেটাতে খুশি থাকে সেটাই করতে দেওয়া উচিত, আমরাই বা আর কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবো ৷”
উনি এবার ভারী গলায় বললেন
” তোমরা যা খুশি করো কিন্তু আমি যে কদিন তোমাদের বাসায় থাকবো সে কদিন ওই ছেলে যেন এই বাসায় না আসে মোটকথা আমার চোখের সামনে ওই ছোকরা ঘোরাফেরা না করলেই হলো হু ৷”
কথাটা শুনে আরমান সাহেবের মেজাজটাই বিগড়ে গেল , কি বলবে বুঝছেন না, বিরক্ত হয়ে ফোনই কেটে দিলেন ৷ অপরদিকে আরম সাহেবের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আরুর নানা ভাই বললেন

” হ্যালোওওওও, হ্যালোওওও ৷ কই কিছু শোনা যায় না কেন?
তবুও কিছু শোনা যাচ্ছে না,উনি ভাবলেন আরমান সাহেব হয়তো ইচ্ছা করে কথা বলছেন না তাই ভেবে উনি আরমান সাহেবকে” বেয়াদপ” বলে সম্মোহন করে ফোনটা তার নাতনির হাতে ধরিয়ে দিয়ে টলতে টলতে ঘরে চলে গেলেন, বয়সটা তার কম নয়, 85 বছরের দোরগোড়ায় আর এই বয়সেও আরিশের সাথে কোমর বেধে ঝগড়া করার কথা উনি 2 মিনিট ও ভাববেন না , তবে আরিশই বা কম কিসের, উনিও যেমন বুনো ওল আরিশ ও তেমনি বাঘা তেঁতুল, তাদের দুজনের ক্যাটফাইট আরু উপভোগ করে বেশ ৷

” কাচ্চিটা জোশ, আহ….পুরো ঠোঁটে লেগে আছে যেন ৷ ” আঙুল চাটতে চাটতে একমনে কথাগুলো বলতে লাগলো আরু ৷ তখনই সানা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বলল
” আরু ভাইয়া এসেছে , তোকে নীচে ডাকছে ‌৷”
আরু একটা ঢেকুর তুলে বলল
” আরে খাড়াও মিয়া, সবে কাচ্চিটা সাবাড় করসি, আগে হজম করতে দাও….”খানিকটা গ্রাম্য ভাষায় কথাটা বলল আরু ‌৷
সানা মুখে খানিকটা আতঙ্ক নিয়ে বলল
” আরু সিরিয়াস কাজে ডাকছে দেরি করিস না তাড়াতাড়ি আই, আর দেরি হয়ে গেলে ভাইয়া চলে আসলে তখন হয়তো ভালো হবে না বিষয়টা ৷”

কথা বলে সানা নীচে চলে গেল ৷ আরু তাড়াতাড়ি করে হাতটা ধুয়ে একটা ওড়না গায়ে পেঁচিয়ে চম্পট নীচে দৌড়ালো , এমনিতেই আজকের দিনটা ওর জন্য খারাপ তার ওপর আর কোন ভুল করে দিনটাকে আরো খারাপ করতে চাইনা আরু ‌৷
আরু নীচে গেল গিয়ে দেখলো আরিশ বসে আছে সাথে ওর পরিবারের সবাই চুপ হয়ে আছে , সবাই যেন নিরবতা পালন করছে , আর সবার মাঝে সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী পরা একটা মুরব্বী লোক বসে আছে যাকে আরু কখনো দেখেওনি ৷আরু ও গিয়ে সানার পাশে বসতেই মুরব্বী লোকটা বলে উঠলো,

” মা তুমি ওখানে বসো ৷” আরিশের পাশের জায়গাটা লক্ষ করে ‌৷
আরু একটু ইতস্তত বোধ করলেও আরিশের সাথে চোখাচোখি হওয়াতে ভয়ে আরিশের পাশে গিয়ে বসে পড়লো ৷ আরু আরিশের থেকে খানিকটা দুরত্ব বজায় করে বসলো আর আরিশ ওদের মাঝের দুরত্বটা একবার দেখে বলে উঠলো
” কাজী সাহেব নিন আপনি শুরু করুন বিয়ে পড়ানো ৷”
কাজী সাহেব আর বিয়ে এই শব্দটা শুনে আরুর পিলে চমকে উঠলো যেন, ফট করে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল
” মানে টা কি, কার বিয়ে ?”

আরিশ এবার আরুর ওড়নাটা ভালো করে মাথা সহ শরীরে জড়িয়ে দিয়ে বলল
” তোমার আর আমার বিয়ে আরুপাখি ৷”
আরু সবার দিকে তাকালো সবাই একপ্রকার সিরিয়াসনেস নিয়ে বসে আছে, আরিশের কথার ওপর কেউ কথা বলেনা ঠিকই কিন্তু তাই বলে এতো বড়ো সিদ্ধান্ত কীভাবে এতো তাড়াতাড়ি….আরু অর কিছু ভাবতে পারছে না….

শুধু একবার আরিশের চোখের দিকে তাকালো….আরিশের চোখটা যেন বিরাট এক সাগরের মতো যেখানে হাজারো শব্দভান্ডারে গড়া শব্দ আছে কিন্তু যার বোঝার ক্ষমতা আরুর নেই…..অতঃপর বারবার কিছু অসমাপ্ত কথন নিয়েই ওকে থেমে থাকতে হয় ‌৷
আরিশের দিকে করুন চোখে তাকাল আরু৷ আরিশকে কখনো ও বুঝে উঠতে পারে না, বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ কাজী আনলো বিয়ে পড়ানোর জন্য আর ওর বড়ির লোকেরাও কিছু বলছে না,সবাই চুপ করে আছে ৷ আরিশ আরুর দিকে একপলক তাকিয়ে আরুর দিকে খানিকটা সরে গিয়ে বসলো আর বলল

” এরপর যাতে কেউ আর নেক্সট টাইম এমন বিয়ের প্রপোজাল আনতে না পারে তার পারমানেন্ট একটা সলিউশন বার করলাম ৷ আমার আরুপাখি শুধুই আমার ৷”
আরু অবাক চোখে আরিশের দিকে তাকালো,খানিকটা রেগে গিয়ে বলল
” এতো সামান্য একটা বিষয়ের জন্য আপনার বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তাটা এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ালো?”

কথাটা শুনে আরিশ চুপ করে রইলো, আরু যাই বলুক ওর আরুপাখিকে কেউ নিজের করে নেওয়ার কথা ভাবলেও আরিশ তাকে শেষ করে দেবে আর প্রয়োজনে যা ব্যাবস্থা নেওয়ার ও নেবে ৷ আরু ওর বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই উনি চোখ নামিয়ে নিলেন, না পেরে আরু ওর ফুপি অনিকা খানের দিকে তাকালো উনি চোখের ইশারায় আরুকে বিয়ে করে নিতে বলল কারন উনিও জানেন যে বিয়েটা হবেই আর না হলে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে এখনই যাতে সবাই মরা পড়বে একেবারে ৷ সানা এক কোনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে ৷ আরু ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো ও হাসছে তা দেখে ওর শরীর জলে উঠলো ৷ আরিশ বলে উঠলো

” কাজী সাহেব আপনি বিয়ে পড়ান ৷”
কাজী সাহেব বলতে শুরু করলেন
” আফজালর খানের পুত্র আবরার আরিশ খান আপনি কি আরমান রহমানের কন্যা বিনতে আরুশি রহমানের সাথে এই বিয়েতে কবুল ? যদি কবুল হন তাহলে বলুন কবুল ৷”
আরিশ আরুর দিকে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে তাকালো মনে হচ্ছে কবুল বলেই ওর সব ভালোবাসা আরুর প্রতি উজাড় করে দিক ‌৷ আরিশ তিনবার কবুল বললো ৷ আরী মথা নীচু করে আছে আরিশের দিকে তাকাচ্ছেনা ৷
কাজু সাহেব আরিশের দিকে রেজিস্ট্রি পেপার বাড়িয়ে দিতেই আরিশ সই করে দিলো , জবার আরুকে বললেন

” ধানমন্ডী নিবাসী আফজাল খানের একমাত্র পুত্র আবরার আরিশ খান নগত 15 লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া মিরপুর নিবাসী আরমান রহমানের কন্যা বিনতে আরুশি রহমান আপনাকে বিবাহ করিতে চায় আপনি কি এই বিবাহে কবুল? যদি কবুল হন তাহলে বলেন কবুল ৷ ”
কাজী সাহেব আরুকে কবুল বলতে বললেই আরু সবার দিকে একপলক তাকালো, সবার মুখে চিন্তার ছাপ যেন ওয়ার্ল্ড কাপ দেখতে বসেছে , তাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে অরিশের দিকে তাকালো, আরিশের চোখে অদ্ভুত এক প্রশান্তি দেখতে পাচ্ছে আরু যা আগে ছিলো চঞ্চলতায় ভরা ৷ আরু ছলছল চোখে তাকাতেই আরিশ বলল

” আরুপাখি কবুল বলো ৷”
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে তিনবার কবুল বলতেই আরিশ আরুর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো, আরিশের চোখের কোনেও জল জমে এসেছে আর তা ও আরুকে দেখাতে চাইনা ৷ রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করে আরু মাথা নীচু করে রইলো , চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ আরিশের সাথে আজ না হোক কাল ওর বিয়ে হতোই এটা আরু খুব ভালো করেই জানে কিন্তু কথায় আছে বিয়ে করলে নাকি জীবনের স্বাধীনতা হারিয়ে যাই তাই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে আরু নিজের জীবনের স্বাধীনতা হারতে চাইনি ৷

কাজী সাহেব দেন মোহরের টাকা আরুর হাতে ধরিয়ে দিতেই আরুর মা হসিমুখে মিষ্টির প্লেট এনে দিলেন ওনাকে, সবাই যেন এতখন এটা গম্ভীরতার জগতে চলে গিয়েছিলো কিন্তু এখন যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলো ৷ আরু মাথা নীচু করে আছে ৷ সানা এসে আরুর কাঁধে হাত রাখতেই আরু রেগে হাত ছাড়িয়ে দিয়ে মাথা নীচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো ৷ সানা এখনো চোখ টিপে হাসছে ৷ হঠাৎ আরিশ সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল

” আরুপাখি চলো এবার পড়াশোনা করবে ৷এমনিতেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে এই বিয়ের চক্করে ৷”
আরিশ কথাটা এমন ভাবে আরুকে বলল যেন আরু আজকেই বিয়েটা করতে চেয়েছিলো তাই আরিশ বিয়েটা করেছে ৷আরিশের বলা কথাটা শুনে আরু তিরতির করে রেগে গেল কিন্তু প্রকাশ করলো না কোনভাবেই ৷
সানা অবাক হয়ে বলল
” আজকেই তোদের বিয়ে হলো আর আজকেই আবার পড়াশোনা? এতো খুশির একটা দিন আজকে তাই একদিন তো ছাড় দে ৷”
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল

” ছাড় পেতে পেতে আজকে এতোদুর , আর কোন কিছুতে ছাড় নেই সব কিছুতেই আমি ৷ হোয়াটএভার ৷ আরুপাখি চলো ৷”
অনিকা খান এবার মিষ্টি সুরে আরিশকে ধমক দিয়ে বললেন
” কি রে আরিশ , এটা কি হচ্ছে বলতো , আজেকের দিনটা তো দে দেখছিস তো মেয়েটা কাঁদছে ৷”
আরিশ অনিকা খানের কথার উত্তরে বলল
“বিয়ের আগে কাচ্চি খেয়েছে সে , ভরা পেটে বিয়ে করেছে তার আবার এতো কষ্ট কিসের? এতো কষ্ট মষ্ট কিছু না দেখো মনে মনে হয়তো নাচছে সারাজীবন তোমার হাতের কাচ্চি খেতে পারবে সেই খুশিতে ৷”

আরুকে হাসানোর জন্য কথাটা বলল, কিন্তু হিতে বিপরীত হলো আরু রেগে গেল ‌, আর ওঠার নাম নিলো না সেখান থেকে ৷ আরু উঠছেনা দেখে আরিশ বলল
” আরুপাখি কি বলেছি শোনোনি ‌৷”
আরিশ আর সবার কথপোকথন শুনে আরু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতেই আরিশ এবার আর কোন কিছুর পরোয়া না করে সোফা থেকে আরুকে কোলে তুলে নিয়ে কাউকে আর কিছু না বলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলো ৷ অনিকা খান আর সানা দুজন গড়াগড়ি দিয়ে হাসছে ‌৷ আরু ওর কান্নামাখা ফোলাফোলা চোখে আরিশের দিকে তাকিয়ে বলল

” এটা কি হলো?”
আরিশ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
” কোনটা?”
আরু রেগে বলল
” আপনি আমাকে সবার সামনে থেকে কোলে করে তুলে আনলেন যে , মুরব্বিদেরকে সম্মান করেন না কেন? ওরা কি ভাবলো আর এতো লুইচ্ছা লুইচ্ছা ভাব কেন আপনার মাঝে? ”
আরিশ ততখনে ঘরে ঢুকে পা দিয়ে দরজাটা এক ধাক্কায় বন্ধ করে দিয়ে আরুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর দিকে ঝুকে বলল
” যাদেরকে তুমি মুরব্বি বলছো তারাও একসময় এমন দিন পার করেছে তাই তারা কিছু ভাববে না , আর ভাবলেও বা কি আই ডোন্ট কেয়ার ৷”

আরু জানে যে আরিশ হচ্ছে ওর কাছে এই দুনিয়ার সবচেয়ে বেহায়া একজন পুরুষ হতে চায় যে কি না আরুর জন্য সবরকম চরিত্র গ্রহন করতে পারে , কখনো আরুর মিঃ অভদ্র কখনো বা সুপুরুষ এক কথায় সাধু ব্যাক্তি যার মুখ দেখে মনেই হবে না যে তার পেটে পেটে আরুকে কাছে টেনে নিজের করে নেওয়ার এতো বিদে্্্য ৷ আরু আরিশকে সরাতে যাবে তার আগেই আরিশ আরো কিছুটা আরুর দিকে ঝুকে বলল

” আচ্ছা আরুপাখি এখন তো আমরা লিগালি হাজবেন্ড ওয়াইফ আর আমার তোমার ওপর অধিকার আছে আর তোমার আমার ওপর, তাই কাছে আসতে তো বাধা নেই তাইনা ৷”
কথাটা শুনে আরু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল
” কি যা তা বলছেন এসব ? আমি এখনো পিচ্চি আর আমার কিছু করার মতো এখনো বয়স হয়নি ‌৷ প্লিজ সরে যান নাহলে আমি চেঁচাবো ৷”

আরিশ মুচকি হেসে বলল
” আরুপাখি আই হেট ইউর লুইচ্ছা মনমানসিকতা , ইস কি সব যে তুমি ভাবো না,আমি তো কিস করার কথা বললাম আর তুমি কতো কিছু ভেবে রেখেছো ৷ তুমি তো দেখছি আমার থেকেও ফাস্ট ৷”
কথাটা বলে আরুর দিকে চোখ মারতে গেলেই আরু বিছানা থেকে নামতে গেলো আর আরিশ হাতটা ধরে ওর কাছে টেনে এনে ওর কোলে বসিয়ে নিয়ে বলল
” চাইলেই কি সবসময় দূরে সরে যাওয়া যায়?”
আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো, মানুষটা চাইছে কি ৷ আরু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

” কি বলছেন আপনি?”
আরিশ এবার আরুকে আরো জাপটে ধরে বলল
” আমার মিষ্টি কোথায় আরুপাখি?”
আরু ঝটপট সহজ ভাবে বলল
” ফ্রিজে?”
আরিশ এবার আরুকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল
” সব মিষ্টি যদি ফ্রিজে থাকতো তাহলে আমাকে আর বিয়ে করতে হতো না, হোয়াট এভার তোমার গবেট মাথায় এসব আসবেও না কখনো ৷ ”

আরুর দিকে এগিয়ে আরুর গলা থেকে ওড়নাটা একটানে ফেলে দিয়ে গলায় ঠোঁট ছোঁয়াতেই আরু বলে উঠলো
” এই এই কি করছেন, আমার সুড়সুড়ি লাগে সরে যান ৷ ”
আরিশ রাগী চোখে আরুর দিকে তাকাতেই আরু চুপ হয়ে গেল, তারপর গলায় বেশ জোরে একটা কামড় বসাতেই আরু আরিশের গলায় একটা খামচি দিয়ে আহহ করে উঠলো
” কামড়ে নিলেন কেন?”
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
” দেখো এবার আর সুড়সুড়ি লাগবে না ৷”

কথাটা বলে আরুর কামড়ানো জায়গায় ঠোঁট বোলাতে নিলেই আরু বিছানার চাঁদরে খামছি মারলো,,মনুষটাকে সরালেও আর এক বিপদ, সরালেই পানিশমেন্ট মানে তার ভাষায় দ্বিগুন রোমান্টিক অত্যাচার ৷ আরিশ এবার আরুর ঠোঁটে কাছে নেমে আসতেই আরু বলল
” প্লিজ আর না ৷”
আরিশ আরুর ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলল
” এভাবে বলবে না আরুপাখি আরো বেশি নেশা ধরে যায় ৷”
কথাটা বলে আরুর ঠোঁটের দিকে এগোতেই দরজায় নক পড়লো ৷
আরু নকের আওয়াজ শুনে বলল

” কেউ আসছে প্লিজ সরুন ‌৷”
আরিশ আরুর গায়ে ওড়নাটা জড়িয়ে দিয়ে বলল
” বাকি টুকু রাতে ‌৷”
আরু অবাক হয়ে বলল
” রাতে মানে ?”
আরিশ মুচকি হেসে চোখ টিপ মারলো ৷ আরু আরিশের কথার মানে খুঁজে পেতেই ভয় পেয়ে গেল ৷ আরিশ গিয়ে দরজা খুলে দেখলো সানা এসেছে ‍ ৷ আরিশ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
” কি হয়েছে মহারানি?”
সানা রুমের ভিতর ঢুকে বলল

” আম্মু আজকের দিনে পড়াতে না করেছে ৷ মামা তোকে নীচে ডাকছে , বলেছে দরকারি কথা আছে ৷”
আরিশ সানার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল
” আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম ডিসরটার্ব হলো ৷”
সানা আরিশের দিকে ঘুরে আরিশের ঘাড়ের দিকে লক্ষ করে আরুর দিকে তাকালো তারপর আরুর পাশে বসে আরুর গলার দিকে চেক করতে গেলেই আরু ইতস্তত. বোধ করে নিজের দিকে তাকালো যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না ৷ তারপর হঠাৎ সানা বলল
” হ্যাঁ বুঝেছি খুব ভালোই ক্লাস হচ্ছিল,তোদের ক্লাসে কামড়াকামড়ি , খামচাখামচি সবই তো হয় দেখছি ৷ তা আমাকেও এমন কোন কোচিং এর টিচার খুজে দে ভাইয়া আমিও এমন খামচা খামচি করবো ৷”

আরিশ ভাবলেশহীন হয়ে বললো
” নীচে গিয়ে তোর বিয়ের কথাটা বলে আসি, একটা ভালো রিকশা মামা দেখেছিলাম তোর সাথে মানাবে ৷”
সানা রেগে বলল
” ভাইয়া ৷”
আরিশ মুচকি হেসে নীচে চলে গেল ৷ সানা আরুর দিকে বিড়বিড় করে সরে এসে বলল
” কি ক্লাস করলি রে আরু আমাকে বল ৷”
আরু রেগে সানার পিঠে থাবড় মেরে বলল
” ফক্কিনি তোর সাথে কথা নেই, তুই তখন দাঁত বার করে হাসছিলি ‌৷”
সানা আরুর গলা জড়িয়ে বলল

” জানু রাগ করে না, ভাবী আমার ৷”
আরু মুখ ভঙচি দিলো ৷
আরিশ নীচে নামতেই তার কিছুখন পর আরু আর সানা নামলো ৷ আরু কিচেনে ঢুকেও ঢুকছে না তার উদ্দেশ্য হলো আরিশের সাথে ওর বাবা কি কি কথা বলে তা ও শুনবে , চোখটা রন্নাঘরে কিন্তু কান আর মনটা আরিশ আর ওর বাবার দিকেই ৷ আরমান সাহেব বললেন

” শোনো আরিশ বাবা, তোমার কথাতে আমরা কখনো দ্বি মত করিনি, আমি জানি আরু তোমার সাথে অনেক ভালো থাকবে কিন্তু আরু তো এখনো অনেকটাই ছোট আর তোমার আর আরুর বিয়েটা তো আরো 2 বছর পর হওয়ার কথা ছিলো তাই আমি চাইছি দুই বছর পর না হয় বড়ো আর ধুমধাম করে বিয়ে হলে তখনই আরু তোমাদের ,,,”
উনি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশ বলল
” আমি আজকে আরুকে আমার সাথে নিয়ে যবো মামু ৷”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৩+৪

কথাটা শুনে যেন আরমান সাহেব নিজেও লজ্জায় পড়ে গেলেন, আসলেই এই যুগের ছেলে মেয়েরা বড্ড ঠোঁট কাটা স্বভাবের ৷ উনি আর কিছু বলতে যাবেন তার আগে আরিশের মুখের দিকে তাকালো , আরিশের হাবভাব দেখে বুঝলেন যে আরিশ আজ আরুকে না নিয়ে যাবে না তাই উনি কথা ঘুরিয়ে বললেন
” আচ্ছা তা হয় হবে, বিয়ের প্রথম দিন মেয়ে তার শ্বসুর বাড়িতে যাবে এটাই স্বাভাবিক , তা আমি বলছিলাম যেটা সেটা হলো যে পরে ধুমধাম করে বিয়ে দেবো ততদিন তুমিও সেটেল হও ৷”
আরিশ মাথা ধড়িয়ে বরল ” জ্বি ৷”

আরিশ জানতো মে উনি ঠিক এমন কিছুই বলবেন কিন্তু ও তো আজ আরুকে না নিয়ে ফিরবেনা ৷
ওনারা আরো কিছুটা কথা বললেন ৷
আরু লজ্জায় সেখানে আর থাকতে পারলো না, রুমে এসে দরজা লক করে দিলো ৷ আজ আরিশের সাথে এক ছাদের নীচে প্রথমবার রাত কাটাবে তাও আজ আরিশ ওর স্বামী ৷
ভাবলেই বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে, কিন্তু আরু ঠিক করলো আর যাই হয়ে যাক ও আজ আরিশের সাথে যাবে না ৷

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৭+৮