কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ৩০
Suraiya Aayat
রাতের গভীরতার সাথে নির্জনতার হয়তো বিশেষ একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক আছে, রাত বাড়লে অন্ধকারের সাথে সাথে যখন ঝিঁঝি পোকার ডাক গুলো আরও বেশি করে শুনতে পাওয়া যায় তখন যদি একা সময় কাটাও তো তখন হয়তো বোঝা যায় যে পৃথিবীটা বিরাট এক মায়ার গোলকধাঁধা, একা এসেছো তাই যেতেও হবে একা, কেও কারোর নয়।
আরুর মনের অবস্থা বিশেষ ভালো নেই সেই দুপুর থেকে মন খারাপ করে রয়েছে, দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়ালো আর বিকেল গড়িয়ে রাত, সময় ঠিক বহমান তেমনি আমাদের জীবন ও। ঘড়ির কাটা হয়তো হাতেনাতে গুনলে ঠিক বারোটা ছোঁব ছোঁব, হঠাৎ করে একবার ঘুম ভাঙতেই আর ঘুম আসেনি আরিশের তাই কোন করম কোন ভাবনা কাটিয়ে উঠতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এই বাড়িটা নেহাতই বড়োসড়ো তাই নির্দিধ্বায় চলাফেরা করা যায় যেখানে সেখানে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আরিশ নিঃশব্দে হাটছে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পাছে অন্ধকার কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে এক হুলুস্থুলু কান্ড না ঘটে। খুব যে অন্ধকার তেমনটা বলা ভুল, অমাবস্যা কি পূর্নিমা তার ধারনা নেই তবে রাতের মধ্যে গগনে পূর্নিমা রাতের ঝলসানো রুটির মতো একটা চাঁদ বিদ্যমান, আশপাশটা দেখা যাচ্ছে বেশ। ধীর পায়ে হাটতে হাটতে হঠাৎই হাটার গতিটা বাড়িয়ে দিয়ে ছুটলো আরিশ,বৃদ্ধ মানুষটাকে পড়তে পড়তে ধরলো আরিশ। চাঁদের আবছা আলোতে আরুর নানা ভাইয়েই মুখটা আরিশের স্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখতে কোন রকম কোন বাঁধা সৃষ্টি করছে না, তার চেহারাটা যেন পূর্বের ন্যায় আরও জ্বলজ্বল করছে। আরিশ বেশ শক্ত হাতে ওনাকে ধরলেন, ভারী শরীরের ভার আরিশ ঠিক সামলে নিয়েছে, উনি হয়তো কিছু বলতে চাইছেন যা ওনার চোখের চাহনিতেই স্পষ্ট।
আরিশ ওনাকে খানিকটা সোজা করে দাড় করিয়ে বলল
” চলুন আপনাকে ঘরে দিয়ে আসি। ”
উনি আরিশের দিকে ভেজা ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলেন। আরিশ ওনার শরীরের ভার বইতে ওনার এক হাত নিজের কাধে নিয়ে বলল
“হাটুন। ”
উনিও আরিশের সাথে পা বাড়ালেন আর ছলছল দৃষ্টিতে আরিশের দিকে চেয়ে রইলেন বেশ অনেকখন।
রাত প্রায় তিনটের কাছাকাছি, আরুর নানা ভাইয়ের ঘর থেকে বার হলো আরিশ, বুকের মাঝে এক ঈষৎ চিনচিন ব্যাথা করে উঠছে যা ওর হুদয়কে ভারাক্রান্ত করার জন্য যথেষ্ট। কখন যে চোখের কোনে একটু জল জমে এলো আরিশ বুঝতেই পারলো না, তবে পুরুষ মানুষরা হয় কঠোর, ভীষন করম কঠোর তাদেরকে যে কাঁদতে মানা।
একটা উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস মুখ থেকে আপনার আপনিই বেরিয়ে এলো, হাটা দিলো ঘরের দিকে। নাহ আজকে আর ঘুম আসবে না সারাটা রাত হয়তো এভাবেই কাটবে আর এভাবেই কখন যে মধ্য রাত কাটিয়ে ভোর হয়ে যাবে তা বুঝতেই পারবে না।
*
“আর একদিন থাকলে হতো না মামনি? না মানে এমনিতেই তো তোমরা আসো না তার ওপর আসলে তাও এতো তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছো। ”
বেশ আকুতির সুরে কথাগুলো বলে উঠলেন আরুর মামী। আরু ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল
“নাহ মামনি, অন্য কোনদিন আসবো আবার, আমারা তো এসেছিলাম ই একদিনের জন্য বলো। তাছাড়া ওনার এবার ফাইনাল এক্সাম আছে আর তাছাড়া আমারো তো আর একমাস পর মেডিকেল এর এক্সাম, পড়াশোনার ও অবস্থা একটা। আসবো পরে আবার, আর মধুর এক্সাম হলে ওকে পাঠিয়ে দিও।
পাশ থেকে মধু বলে উঠলো
” আবার কবে আসবে অরিও? ”
আরু মধুর প্রশ্নের কোন উত্তর দিলো না, মন ভালো নেই ওর। আরুর মামী মধুকে বলে উঠলো
” কানে তুলো দিয়ে ছিলে তুমি এতখন মধু? আরু এতোখন ধরে কি বললো। ”
মধু চুপ হয়ে গেল, সত্যিই ভুলটা ওর যে ও এমন বোকা বোকা প্রশ্ন করেছে। আরু ব্যাগটা নামিয়ে বলল
” আসছি। ”
কথাটা বলেই আরু দরজার বাইরে পা রাখতে গেলেই আরুর মামী বলে উঠলেন
“তোমার নানা ভাইয়ের সাথে দেখা করবে না মামনি? ”
আরু থেমে গেল, কান্না পাচ্ছে খুব, কালকে থেকে অভিমানের দাঁড়ি পাল্লাটা তে কেবল অভিমান ই বেড়ে যাচ্ছে। আরু একটু ধরা গলায় বললো “নাহ! ”
আরুর মামী বেশ নরম সুরে বললেন
” উনি কষ্ট পাবেন আরু। ”
আরু কিছু বললো না বেরিয়ে গেল, বেশ দ্রুত পায়ে হাটতে শুরু করলো। নানা ভাইয়ের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, ঘরে ঢুকবে না এমনটাই মনো স্থির করে নিয়েছে আগে থেকে। আরু দরজার আড়াল থেকে দেখলো ওনাকে, আরিশ কেও দেখলো আর বেশ অবাক হলো দুজনে হয়তো কথা বলছেন। আরু একটু খুশি হলো এটা দেখে, ওনাকে এক ঝলক দেখেই আরু গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আরিশের জন্য অপেক্ষা করছে, হঠাৎ মধু এসে বলল
” অরিও তুমি থেকে যাও না প্লিজ। অন্তত আমার কথা ভেবে থেকে যাও, তুমি একটু আম্মুকে আর বাবা কে ভোলার কথাটা বলে যাও ওনারা তোমার কথা ফেলতে পারেনা অরিও। ”
আরু মধুর দিকে তাকিয়ে বেশ নরম সুরে আর গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” সব কিছুর একটা সময় থাকে তাই বিষয়টা তোমার ব্রেন অবধি পৌছালে খুশি হবো। ”
আরুর এটুকু বলা তেই মধু আর কিছু বলার সাহস পেলো না, মধু দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ, আরিশ এলো, মধুকে দেখে বলল
” মধু আজ আসি, আবার দেখা হবে। ”
মধু ঈষৎ মুচকি হাসলো, আরুর এমন নরম কন্ঠে ধমক শুনে ও আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। আরিশ ও মুচকি হেসে গাড়িতে উঠলো, দেখলো আরুর সিট বেল্ট বাঁধা নেই তা দেখে আরিশ আর কিছু বললো না চুপচাপ আরুর সিট বেল্ট বেঁধে দিলো।
“কি হয়েছে মন খারাপ? সেই থেকে দেখছি মন খারাপ করে বসে আছিস কি হয়েছে বল। ”
কথাটা শোনার পরপর ই আরু অনিকা খানের কাধে মাথা রেখে বলল
” আচ্ছা ফুপি আমরা সবাই এমন কেন বলোতো? ”
আরুর কথাতে উনি বেশ ঘাবড়ে গেলেন তারপর আমতা আমতা করে বললেন
” কেমন রে আরু মা। ”
আরু বলল
” এই যেমন। ”
কথাটা শেষ হত্তয়ার আগে আরিশের ডাক এলো ” আম্মু শোনো। ” আরু ওনার কাধ থেকে মাথা সরিয়ে নিলো, উনি আরুর দিকে তাকিয়ে বললেন
” একটু অপেক্ষা কর আমি আসছি। আরিশের হয়তো কিছু দরকার। ”
আরু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। উনি আরিশের কাছে গেলেন। আরিশের কাছে গিয়ে বললেন
” কি রে ডাকছিস যে কিছু দরকার? ”
আরিশের চোখ মুখ শুকিয়ে এসেছে প্রায়, শুকনো ঠোঁট দুটো একটু ভিজিয়ে বলল
” নানাভাই উনি আর নেই। ”
কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৯
কথাটা শোনার জন্য হয়তো অনিকা খান মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না, ভর সন্ধ্যায় এমন একটা খবর পাবেন তা হয়তো ভাবতেও পারেননি উনি।থতমত খেয়ে গেলেন উনি।
” কি বলছিস এটা।”
” উনি অনেক অসুস্থ ছিলেন, তাছাড়া ওনার অবস্থা ও খুব একটা ভালো ছিলো না, আরুকে কালকে এমন কিছুই বোঝাতে চেয়েছিলেন তাই আরুপাখির এতো অভিমান। ”
উনি চেয়ারে বসে পড়লেন।
” মেয়েটাকে এখন কি করে সামলায়? আফসানা কি জানে? ”
“হমম মামী জানে, আমি আরুপাখিকে নিয়ে এক্ষুনি যাচ্ছি, তুমি বাবা সানা মামা আর মামীর সাথে আসো। ”
কথাটা বলে আরিশ একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। নীচে গিয়ে দেখলো আরু সোফা তে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। আরিশ ধীর পায়ে আরুর কাছে গিয়ে বলল
” আরুপাখি? ”
আরু চমকে উঠলো, উঠে বসে বলল
” আপনি। কিছু বলবেন? ”
আরিশ আরুর হাতটা ধরে বলল
” নানা ভাই এর শরীরটা ভীষন খারাপ দেখতে যাবো এক্ষুনি চলো। ”
আরিশ আরু কে কিছু বলার সুযোগ দিলো না, আরু কে নিয়ে গাড়িতে বসালো। আরু কে সত্যি কথাটা এখনি বললো না নয়তো আরু সারাটা রাস্তা কাঁদবে।