কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৮

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৮
Suraiya Aayat

‘ কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ‘
আরিশের মুখের দিকে খানিকটা উদাসীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল আরু।
আরিশ কোন রকম বাঁকা ভাবে জবাব না দিয়ে বলল
‘এখানে বসো’
আরিশ নিজের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে আরু কে বসার জন্য বলল, আরু ভ্রু কুঁচকে আরিশের পাশে বসে বলল
” কি হয়েছে বলুন”

আরিশ কিছু না বলে হঠাৎই আরুর মুখের কাছে এগিয়ে এলো, আরিশের উষ্ন নিশ্বাস আরুর গলায় আর মুখে এসে ছড়িয়ে পড়ছে যাতে আরুর শরীরের মাঝে শিহরন জাগছে আর হুদস্পন্দন দ্রুত গতিতে চলছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না, এই হঠাৎ হঠাৎ মেঘ বৃষ্টির মতো কাছে এসে ভালোবাসা গুলো কালবৈশাখীর মতো ভয়ংকর হয় আর শরীর আর মনের তীব্র আকুলতাকেও বাড়িয়ে দিয়ে অনুভূতি গুলোকে তীব্র আসক্তি দেয় যাকে বলে প্রেমাসক্তি।
এমনটা নয় যে আরিশ ওকে এই মুহূর্তে স্পর্শ করেছে বা ওর শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে আছে, তেমনটা নয় তবুও অনুভূতিগুলো মাতাল করা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরুর হাত ঘামছে, হাত দুটো কচলাচ্ছে, না আরিশ ওর কাছে আসছে আর না ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে যাতে করে আরুর উন্মাদনা বাড়ছে। আরু এবার মুখ ফুটে বলল
” কিছু বলবেন? ”
আরিশ কিছু বলছে না, আরুর কাছে আরও বেশ কিছুটা সরে এলেই আরু একটু নড়েচড়ে বসলো তাতে আরিশের ভাবাবেগের কতোটা পরিবর্তন হলো বলা যায় না। আরিশ হঠাৎ করে আচমকাই হেসে উঠতেই আরু কেঁপে উঠলো খানিকটা। আরিশ হাসছে, আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত চাহনিতে। আরিশের হাসি থামছে না দেখে আরু বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো

“অদ্ভুত! হাসছেন কেন এভাবে? ”
আরিশ এবার হাসি থামিয়ে বলল
” আচ্ছা তাহলে গম্ভীর হয়ে যাচ্ছি। ”
আরু বিছানার ওপর থাকা বালিশ নিয়ে আরিশের গায়ে ছুড়ে মেরে বলল
” দিনদিন এমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছেন কেন? পাগল পাগল লাগে। ”
কথাটা বলে আরু চলে যেতে নিলেই আরিশ হাতটা ধরে ওর কাছে টেনে এনে বলল
” আর তুমি বেসামাল হয়ে যাও, তাইতো? ”

আরু ঘাবড়ে গেল, সত্যিই তাই, চোখ নামিয়ে নিলো আরু, ঠোঁট জোড়া ঈষৎ কাঁপছে আর বুক দুরু দুরু করছে, মাঝেমাঝে মানুষটাকে ডাক্তার কম মানুষ তাত্ত্বিক বেশি মনে হয় আরুর। হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না কারন ওর চেষ্টার ফল হবে বৃথা। আরু মুখ নীচু করে বলল
” এগুলো আপনার ভাবনা, আমার না। আর আপনার কথায় আমি বেসামাল হতে যাবো কেন? আমি কি আপনার মতো পাগল নাকি? ”

আরিশ এবার একটা ঝটকা দিয়ে আরুর হাত ধরে টানতেই আরু আরিশের বুকের ওপর এসে পড়তেই আরু থতমত খেয়ে গেল। আরিশ একটা হাত কোমরে রাখতেই আরু আরিশের আর এক হাত খপ করে জড়িয়ে ধরলো, আরিশ মুচকি হেসে আরুর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল
” কি ভাবছো? আমি মানুষটা বড্ড বেহায়া তাই না? এই ভাবে যখন তখন তোমার অনুভূতি তে কালবৈশাখী ঝড় এনে দিই, না চাইতেও তোমার হার্টবিট দ্রুত হয়, আমার থেকেও তোমার নিজেকে বেশি পাগল পাগল মনে হয় তাইনা? ”
আরু বেশ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল

” না আ আ। ”
আরিশের মুখের হাসি প্রশস্ত হলো, থাক মেয়েটাকে আর বিধ্বস্ত করে লাভ নেই।
আরিশ বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
“তোমার বোন তো প্রেমে পড়েছে। ”
কথাটা শোনামাত্রই আরুর শ্বাস আটকে এলো প্রায়, কথাগুলো যেন গলার মাঝে দলা পাকিয়ে এলো। আরু ভাবলো মধু বোধহয় আরিশের প্রেমে পড়েছে। আরু আমতা আমতা করে বলল
” প্রেমে পড়েছে? মানে টা কি?”

আরিশ আরুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝলো যে আরু ঠিক কি আন্দাজ করতে চাইছে, আরুর মুখে ভয়ের ছাপ দেখে আরিশের মনে আরও তীব্র আকাঙ্খা জাগলো ভয়টাকে বাড়িয়ে দেওয়ার, তাই বলল
” প্রেম কি? কি আবার! সুদর্শন ছেলে তাই প্রেমে পড়েছে এটাই স্বাভাবিক। ”
কথাটা আরিশ যতোটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলতে পারছে আরু ততোটাই স্বাভাবিক ভাবে ভাবতে পারছে না তাই আরিশের কলারটা ধরে বলল

” কি চলছে কি আপনাদের মাঝে বলুন সত্যি করে না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু। ”
আরিশ দেখলো ভয়ে আরুর চোখ দুটো লাল হয়ে এসেছে আর চোখ জোড়া ভিজে ভিজে আর বেশি কিছু বললেই হয়তো কেঁদে ফেলবে।
আরিশ আরুর মাথাটা ওর বুকে চেপে ধরে বলল
” প্রেমে পড়েছে মধু, গভীর প্রেম যাকে বলে। ”
আরু রেগে একই অবস্থায় থেকে বলল
” আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন, সত্তি করে বলুন। ”

আরিশের হাসি পেলেও এই মুহূর্তে আরুর মনের অবস্থার কথা ভেবে হাসতে ইচ্ছা করছে না।
” সকালে যাকে ফাকা রাস্তায় একপ্রকার ধমকানি দিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ালে সেই মানুষটার প্রেমে পড়েছে তোমার বোন।”
আরুর আর বুঝতে অসুবিধা হলো না কি বলতে চাইছে আরিশ, হাফ ছাড়লো আরু, আকারনেই নিজের দুই হাত আরিশের পিঠে প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরলো আরিশকে আর বেশ সস্তির সাথে বলল

” তা সেই গোবিন্দ কে মধু ভালোবেসেছে! গুড চয়েজ, মধুর লাক ভালো, আমাআআআআআআর থেকে তো ভালো। ”
শেষের বলা কথাটুকু আরু ইচ্ছা করেই টেনে বলল কারন একটাই তা হলো আরিশকে জেলাস ফিল করানোর কিন্তু আরিশ তো আরিশ তাকে কি আদেও আরু এসব বলে জেলাস ফিল করাতে পারবে?
আরিশ উল্টে বলল
” তোমার ব্যাড লাক আরু পাখি যে তুমি ওর সাথে বিয়ে করতে পারলে না, আফসোস! তোমার ওর সাথে বিয়ে হলে আমি একটা দাওয়াত পেতাম অন্তত।

কথাটা শুনতেই আরু রেগে গেল, আরিশকে ছেড়ে দু হাত দিয়ে একপ্রকার ধাক্কা মেরে বলল
” থাক থাক এসব আর বলতে হবে না, আপনার জন্য জীবনে একটা প্রেম অবধি আমি করতে পারিনি, প্রেম তো দূরে থাক কোন ছেলে ফ্রেন্ড ও ছিলোনা আমরা আর এদিকে আপনার তো মেয়েদের সাথে কথা বলতে দ্বিধাবোধ হয় না। ”
আরিশ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল
” আমি থাকতে তোমার অন্য কাওকে আবার কিসের দরকার? তোমার সূচনা ও আমি তেই আর সমাপ্তি ও আমি তেই। বুঝলে আরু পাখি? ”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৭

আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে চলে যেতে নিলেই আরিশ বলল
” বাই দা ওয়ে ওদের এই রিলেশনে তোমার কোন অসুবিধা নেই তো? আই থিংক হওয়ার তো কথা যতোই হোক,,, ”
আরিশ কিছু বলতে যাবে আরও , তখন আরু বলল
” আমি কি আপনার মতো যে অন্যর জীবনে বিছুটি পাতার মতো হবো! হাহ! জীবনে আমি প্রেম করতে পারিনি বলে অন্যকে প্রেম করতে দেবো না এমন মানসিকতা আপনার থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই। ”
আরু দরজা পার করে বাইরে যাবে সেই মুহুর্তে আরিশ বলল

” নিজের জিনিসকে নিজের করে নেওয়ার জন্য সবকিছু জায়েজ আরুপাখি। ”
আরু আর পিছু ঘুরলো না, আপনা আপনিই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
আরু চলে যেতেই আরিশ বলল
” তোমাকে চেয়েছিলাম তাই তোমাকে পাওয়ার জন্য অনেক রকম যুদ্ধ করেছি এন্ড এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন দ্যা ওয়ার। ”
আরু মধুর রুমের দিকে যাচ্ছে আর বলছে
” প্রেম করার জন্য এই মেয়ে আর অন্য কাওকে পেলো না? শেষমেষ ওই গোবিন্দ টাকেই। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। মধু, মধু, এই মধুর বাচ্চা, কোথায় তুই? ”

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৯