কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৭

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৭
Suraiya Aayat

বিছানার উপর খাবার রাখা আছে প্লেটে করে, আরিশের কাধে মাথা রেখে বসে আছে আরু, কিছুখন আগেও ক্ষিদেয় ওর পেটের মধ্যে ইদুর লাফালাফি করছিলো যেন কিন্তু এখন যেন খিদে উড়ে গেছে ওর। আরিশ আরুর দিকে একবার তাকালো তারপর আবার সামনের দিকে তাকিয়ে বলল
” খেয়ে নাও এবার, অনেকখন হলো খাবার দিয়ে গেছেন এবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। ”
আরু মাথা নাড়া দিয়ে বলল
” আমার খিদে নেই। ”
আরিশ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল

” সরে যাও। ”
আরু অবাক হলো আর খানিকটা রেগেও গেল, রাগের খাতিরে বলল
” খুব ক্ষতি হয়ে যেত বুঝি আপনার কাধে মাথা রাখলে? ”
আরিশ প্লেট থেকে একটু পরোটা নিয়ে আরুর মুখের সামনে ধরে বলল
” নাও হা করো। ”
আরু কথা এগুলো না বেশি, হা করলেই আরিশ আরু কে খাইয়ে দিলো আর আরুর মাথাটা আরিশের কাধে রেখে বলল
” নাও এবার মাথা রাখো। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরু কিছুখনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল, ঠিক কি বলা উচিত ওর বুঝতে পারছেনা। ”
আরু্ নিজেকে অনেক বকাঝকা করতে লাগলো মনে মনে কারন আরিশ আর ওর ভাবনা চিন্তার ধারাটা একদম বিপরীত, দুজনের ভাবনা কখনো মেলেনা কারন আরিশ যদি ঠিক বলে তো আরু ভাবে আর বলে ভুল!
আরু ওর বোঝানোর কথা ভেবে মুচকি হাসলো আর ভাবলো
” পারফেক্ট তো সবাই হতে চায় আমি না হয় বরঞ্চ একটু ইম্পারফেক্ট ই হয়ে থাকি, ওনার কাছে একটু আদুরে, একটু চঞ্চল, একটু দুষ্ট। ”

আরিশ আরুকে ডেকে আর এক লোকমা দিতে যাবে তখনই কেউ দরজা ঠেলে হুড়হুড়ে করে ঢুকে পড়লো, আরু দ্রুত আরিশের থেকে সরে আসতেই দেখলো মধু দাড়িয়ে রয়েছে আর আছে একগাল হাসি, আরু বলে উঠলো
” এভাবে কেও ঘরে ঢুকে পড়ে না বলে? ”
আরিশ প্লেট রেখে বলল
” কেমন আছো মধু। ”

আরু আরিশের দিকে তাকালো আর একবার মধুর দিক তাকালো। মধু মুচকি মুচকি হাসছে, আরু রেগে আরিশকে বলল
” কি হলো খাইয়ে দিন আমাকে, থেমে গেলেন কেন? ”
আরিশ আবার প্লেটটা নিতেই মধু বলে উঠল
” তোমরা তো এখন খাচ্ছো, তাহলে খেয়ে নাও আমি পরে আসছি। আর আরিশ তোমার সাথে একটু পার্সোনাল কথা আছে আমার। ”
আরু রেগে গাল নাড়তে নাড়তে বলল
” ভাইয়া বলো মধু, নট আরিশ। ”

মধু আরুর দিকে কিস সাইন দিয়ে বেরিয়ে গেল, আরিশের হাসি পায় আরুর এমন কাজে তবে হাসে না।
মধু চলে যেতেই আরু রাগী রাগী ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলল
” আপনি একদম ওর সাথে পার্সোনালি কথা বলবেন না, যা বলবেন আমার সামনে। ”
আরিশ প্লেটটা রেখে জলের গ্লাসটা আরুর মুখের সামনে ধরে বলল
” মধুকে দেখলেই তুমি রেগে যাও কেন আরু পাখি? ”
আরু আসল কারনটা রেখে বলল

” কেন আবার! ও আপনাকে আরিশ বলে ডাকবে কেন? ও কি জানে না যে আপনি ওর থেকে বয়সে বড়ো আর বয়সে বড়ো রা মুরব্বী হয় আর তাদের নাম ধরে ডাকলে গুনাহ হয়। ”
আরিশ আবাক হত্তয়ার ভান করে বলল
“ও, আমি তো এভাবে ভেবেই দেখিনি। ”
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
“ভাববেন ই বা কি করে, আমি ভালোভাবে কখনো কিছু ভাবেন যে এটাও ভাববেন। ”
আরিশ আর কিছু বলল না, কথা বলতে বলতে আরও কয়েকবার খাবার দিয়ে আরুর খাওয়া হয়ে যেতেই আরিশ হাত ধুয়ে নিতেই আরু বলল

” হাত ধুয়ে ফেললেন যে, আপনি খাবেন না? ”
” তোমার খাইয়ে দেওয়ার কথা তাই তো হাত ধুয়ে ফেললাম। ”
আরু উঠে বলল
” আমি পারবো না। ”
“তাহলে মধুকে ডাকি? ”
আরু রেগে গিয়ে আরিশের গলা ধরে বলল
” আর একবার মধু মধু করে দেখুন কি করি আমি। ”
” খিদে পেয়েছে আমার, ফাস্ট। ”

আরু আরিশের পাশে বসে আরিশকে খাইয়ে দিলো, আরিশ খাচ্ছে আর আরুর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলেও লাভ নেই কারন ও জানে যে মানুষটা জন্মগত ঘাড় ত্যাড়া ওর থেকে চোখ সরাতে বললেও সরাবেনা। ”
দুপুর একটা বাজতে চলল প্রায়, ওরা এসে পৌছেছে সকাল সকাল ই কারন ওরা ভোরে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো। আরু ওর নানা ভাইকে দেখতে গেছে আর আরিশ ঘরেই আছে, আরু আরিশকে যাওয়ার জন্য জোর করেছিলো তবুও আরিশ যাইনি।

প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি বাপরীত পতিক্রিয়া থাকে তেমন ই এক্ষেত্রেও আছে, আরিশ যদি ওনার সামনে যায় আর উনি যদি আরিশকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে তখন আর এক বিপদ হবে। আরিশ বালিশে একটু আরাম করে মাথা দিতে গেলেই কল আসলো। অনিকা খানের থেকে কল এসেছে। আরিশ ফোনটা ধরতেই দুটো গলার আওয়াজ পেলো তা শুনে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে অনিকা খান আর আফসানা বেগম এখন একসঙ্গে আছেন।
আরিশ শুরুতেই বলে উঠলো

” আম্মু তুমি বাসাতে নেই? মীরপুর আছো তুমি? ”
উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন
“হমমম, তুই আর আরু গ্ৰ্য।মে গেছিস তাই আফসানা চিন্তা করছিলো আর আমি ভাবলাম চলে আসি তাই আর কি।
আরিশ আর কথা বাড়ানো না, ও জানে এটা হলো ওনার বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসার একপ্রকার ছুতো, এইরকম আরও অনেক কথা বলে উনি মীরপুর নিজের বাসাতে ঘুরে আসেন তবে আগে আরু যখন আরিশদের বাসাতে থাকতো না তখন উনি বেশিরভাগ সময় আরু কে দেখার কথা বলে ঘুরে আসতেন তবে আফজাল খান কখনো রাগ করেন না, মাঝে মাঝে উনিও ইচ্ছা হলে এই ওই বন্ধুর বাড়িতে সময় কাটিয়ে আসেন। এই বয়সেও আফজাল খান আর অনিকা খানের মাঝে কোন মনোমালিন্য নেই বরং তাদের সম্পর্ক টা দেখার মতো।

” আরুর নানাভাই তোকে কিছু বলেছে নাকি? ”
প্রশ্নটা শোনার পর আরিশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আরুর মা আফসানা বেগম কাকুতি সুরে বললেন
” আরিশ বাবা, সব ই তো বোঝ, আমার বাবা তোমাকে বললে তিনি কিছু মনে করো না, বয়স হয়েছে তো। ”
আরিশ ওনার অসুস্থতআর কথাটা চেপে গেলেন, আর বেশি কিছু বললো না। ওদের কথায় কথায় মধু ঘরে ঢুকতেই আরিশ বলে উঠলো
“মামি আমি পরে আবার কল করছি। ”

কলটা কেটে দিতেই মধু একপ্রকার দৌড়ে আরিশের পাশে বসে বলল
” আরিশ ভাইয়া আমার তোমার সাথে একটা দরকার আছে। ”
ভাইয়া ডাকাতে আরিশ আবাক হলো ছোটখাটো।
” হমমম বলো কি দরকার? কিন্তু তার আগে একটা কথা বলো, ভাইয়া ডাকলে যে আগে তো কখনো বলতে না। ”
আরিশের কথা শুনে মধু মুচকি হাসতেই আরিশ বলল
” কি হলো হাসছো যে! ”
মধু আগের তুলনায় আরও জোরে হেসে বলল

” অরিও কে রাগানোর জন্য, আমার তো অরিও কে রাগাতে খুব ভালো লাগে তাই তো এতো কিছু করি, আর অরিও রেগে যায়। ”
মধুর কথা শুনে আরিশ ও হেসে ফেলল।
” তা বেশ, কিন্তু কি বলবে তা বলো। ”
আরিশ খেয়াল করলো যে মধু হালকা ব্লাশ করছে তা দেখে আরিশ ভ্রু কুচকে বলল
” লাভ টাভ এর কেস নাকি? ”
মধু আগের মতোই মুখ নীচু করে মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল
“হমমম। ”
” তা কে সে? ”

মধু এবার মুখ উচুঁ করে বলল
” আছে আমাদের এখানকার ই একজন। ”
” চিনি আমি তাকে? ”
মধু হালকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল
” হমমম। ”
” তাহলে কে তা জানতেই হয়। ”
মধু এবার বলতে শুরু করলো
“ওই যে ওই ছেলেটা যার সাথে দাদাভাই অরিও র বিয়ে ঠিক করেছিলো। ”
কথাটা শুনে আরিশ বিষম খেলো, সকাল সকাল আরু ছেলেটাকে টাইট দিয়ে এসেছে ফাকা রাস্তায় আর মধু এখন বলে কি না তাকেই পছন্দ করে। আরিশের হাসি ও পাচ্ছে আবার আরু জানলে কি হবে তখন ভেবে ভয় ও পাচ্ছে। আরিশ চুপ করে আছে কোন কথা বলছে না দেখে মধু বলল

” কি হলো ভাইয়া চুপ করে আছো কেন কিছু বলো। ছেলেটাকে তোমার পছন্দ হয়নি? ”
আরিশ বেশ আমতা আমতা করে বলল
” দেখো মধু তুমি যা বলছো তা আমার কাছে সহজ মনে হলেও আরু পাখির কাছে তা সহজ হবে না, তাই আমি বলি কি তুমি একবার আরু পাখিকে বলে দেখো তারপর না হয়। ”
মধু চটপট উঠে দাড়ালো আর বলল

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৬

” এই কাজটা তোমার, অরিও কে তুমি বলবে কথাটা আমি বলবো না, আর অরিও কে মানানোর দায়িত্ব টাও তোমার আমি চললাম। ”
কথাটা বলে মধু রুম থেকে বেরিয়ে গেল, আরিশের হাসি পাচ্ছে ভীষন, আরু যখন জানতে যে ওই ছেলের প্রেমে তার বোন পাগল যাকে কি নাও সহ্য ই করতে পারে না। আরিশ হাসছে, হঠাৎ কারোর আসার শব্দ শুনে আরিশ নিজেই হাসিটা কন্ট্র্যোল করে নিলো। আরু এসেছে। আরিশকে গম্ভীর হয়ে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলল
” কি হলো এভাবে বসে আছেন যে, সাধুদের মতো হিমালয় জাবেন বলে তার ই প্রস্তুতি নাকি? ”
আরিশ তাও কথা বলছে না, আরু এবার আরিশের সামনে গিয়ে বলল

” এই যে কি হলো চুপ করে আছেন যে। ”
আরিশ তাও চুপ, আসলে ওর হাসি পাচ্ছে তাই হাসি আটকানোর চেষ্টায় আছে। আরিশ তাও কথা বলছে না দেখে আরু চে৺চিয়ে বলল
“এই আরিশ কথা বল। ”
আরিশ আর পারলো না চুপ করে থাকতে, ভেটকে দিলো আর হো হো করে হেসে দিলো আর আরু তো বোকা বনে গেল।

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৮