কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৬

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৬
Suraiya Aayat

বাসার ভিতরে ঢুকছে আরিশ আর আরু, আরিশ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে আরুর প্রতি আপাতত রাগটা দমিয়ে দিয়ে আরুর কথা শুনছে। আরুর বাসার ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল
‘সব হয়েছে শুধু আপনার জন্য, আপনার মতো নিষ্ঠুর আর খারাপ লোক আমি আর দুটো দেখিনি নাহলে আপনি আমাকে ওখানে একা রেখে চলে আসতে পারতেন না, আর আমার যদি কোন বিপদ হতো তখন আপনি তো নাচতে নাচতে আবার একটা বিয়ে করে নিতেন তাইনা! ‘

কথায় কথায় আর রাগের চোটে আরু কথাটা বলে ফেলেছে ঠিকই কিন্তু ওর মাথাতে নেই যে কথাটা আরিশের ওপর ঠিক কতোটা এফেক্ট ফেলতে পারে। আরু র পা দু টো হঠাৎ থেমে গেল আর দ্রুত আরিশ এর দিকে ঘুরে তাকালো, আরিশ নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর চোখ মুখের অবস্থা দেখে ভাবশাব বোঝার উপায় নেই । আরু একটু শুকনো ঢোক গিলমোর ভয়ে এই বুঝি আরিশ রেগে গিয়ে আবার ঢাকা ফিরে যায় সেই ভয়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরু আর আরিশ এর মাঝের দূরত্ব টা বেশ দুই কি তিন হাতের। আরু আর কোন কিছু না ভেবে আরিশকে জড়িয়ে ধরলো ঝাপটে এই বুঝি না আরিশ রাগ করে। আরু জড়িয়ে ধরে আছে শক্ত করে কিন্তু আরিশ এখনো ধরছে না, আরিশ আরুর দৃষ্টির অগোচরে মুচকি হাসলো যা এই মুহূর্তে আরুর ভাবনার ধরা ছো‍য়ার বাইরে। আরু জড়িয়ে ধরে বলল

‘সরি সরি আমি যা বলেছি ভেবে বলিনি। ‘
আরিশ আরুর হাতটা ছাড়িয়ে নিতে গেলেই আরু আরিশের দিকে তাকিয়ে আরও জোরে জাপটে ধরে বলল
‘ বললাম তো আমি ইচ্ছে করে আপনার বিয়ের কথা বলিনি, যেচে আবার চড় খেতে চাইনা আমি। ‘
কথাটা বলে আরিশের বুকে মাথা রাখলো। আরিশ এবার আলতো হাতে আরু কে দূরে সরিয়ে আরুর হাতটা ধরে হাটতে হাটতে বলল
‘ রাতে তোমার ক্লাস নেবো আমি। ‘
আরু বিরক্তিতে চোখ মুখ কোচকালো।

দুজনেই বাসায় ঢুকতেই হঠাৎ আরুর মামী ওদেরকে দেখতেই দ্রুত পায়ে ওদের দিকে গিয়ে বললেন
‘আরিশ আর আরু মা যে, তোমরা হঠাৎ এভাবে, চমকে গেলাম তো। ‘
আরু গিয়ে ওর মামিকে জড়িয়ে ধরলো, উনিও আরু কে আগলে নিলেন।
‘কেমন আছো মামী? ‘
‘এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি, আরিশ বাবা তুমি কেমন আছো? ‘
‘ জ্বি মামী আমিও ভালো আছি, মধুকে দেখছিনা যে! ”

কথাটা শোনার সাথে সাথে আরু আরিশের দিকে রাগী চোখে তাকালো যা দেখে আরিশের বেশ মজাই লাগছে কিন্তু আরুর সামনে তা প্রকাশ করলে চলবেনা।
আরু আর আরিশের এমন চাওয়া চাইয়ির কারন যদিও আরুর মামীর পক্ষে বোঝা সম্ভব না তাই উনি সহজ ভাবেই বললেন
‘ মধু তো বাসাতেই ছিলো কিছুখন আগে কিন্তু এখন তো বাসাতে নেই, টিউশন গেছে। চলে আসবে তাড়াতাড়ি। ‘
আরু যেন আরিশের দিক থেকে জহুরি টাইপ দৃষ্টিটা সরাতে পারছে না। উনি বলে উঠলেন
‘তোমরা গিয়ে বিশ্রাম করো আমি নাশতা বানায় ততখনে।’

আরিশকে কিছু না বলে আরু গটগট করে হেটে রুমে চলে গেল, আরিশ বিষয়টা বুঝলো, হাসি পাচ্ছে ভীষন তবে মেয়েটাকে এখনো জালানো বাকি আছে কথাটা ভেবে আরিশ ও আরুর পিছন পিছন গেল। আরিশ রুমে ঢুকতেই আরু আরিশের জামাটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ আমি তো এতদিন ভাবতাম যে মধু চিপকু টাইপের কিন্তু এখন এটাও ভালোই বুঝতে পারছি যে আপনিও কিছু কম জান না, আপনিও গায়ে পড়া ব্যাটাছেলে। হু! ‘
আরিশের ভ্রু জোড়া আপনা আপনিই কুচকে গেল কারন এমন ওয়ার্ড ও আগে শুনেছে বলে ওর মনে পড়ছে না। আরিশ এবার বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল

‘ আরু পাখি, এটা কি ভাষা হমমম?এই শিখিয়েছিলেন আমি তোমাকে? ‘
আরু মুখ ভাঙচি দিয়ে বলল
‘এমন ভাবে বলছেন যে আপনিই আমাকে মানুষ করেছেন ছোট থেকে হাহ! ”
আরিশ এক ঝটকায় আরুর হাতটা ধরে কাছে টেনে এনে বলল

‘ পুরোনো কথা মনে থাকলে তোমার তাহলে তুমি কখনো আমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা মাথায় আনতে না আরু পাখি। ‘
আরুর শরীরের ভিতর দিয়ে এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল যেন, ঠোঁটটাও শুকিয়ে গেছে কি বলবে বুঝতে পারছে না তবে এটুকু ভালোই বুঝলো যে আরিশ অভিমান থেকে কথা গুলো বলছে না হলে আরিশ আরু কে হার্ট করে কখনো কোন কথা বলে না।

আরু আরিশের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কি বলবে বুঝতে পারছেন না কিন্তু যখনই কিছু বলতে যাবে তখনই বাইরে থেকে কারোর পড়ে যাওয়ার মতো ধপ করে আওয়াজ আসতেই আরু আরিশকে ছেড়ে ছুটে গেল দেখার জন্য যে কি হয়েছে তারপর আরুর চিৎকার শুনে আরিশ ও বাইরে গেলেই দেখলো আরুর নানা ভাই তিনি মাটিতে পড়ে আছেন, হাতের লাঠিটা দূরে ছিটকে পড়েছে। আরু ওনাকে ধরে আছে, আর অন্য দিকে আরুর মামী ছুটে আসছেন।

আরুর নানা ভাই রাতীমতো হাপাচ্ছেন কারন বয়স হয়েছে আর পড়ে গিয়ে শরীরের ওজনের বিরুদ্ধে নিজেকে সামলে উঠতে পারছেন না। আরিশ গিয়ে ওনাকে ধরে তুললেন, উনাকে ধরে আরু আর আরিশ দাড় করালো, ওনার শরীরের ভার ওদের ওপর, ধীরে ধীরে ওনাকে ঘরে নিয়ে গেল আর বিছানায় ওনাকে শুইয়ে দিতেই উনি বড়ো বড়ো শ্বাস ফেলতে লাগলেন তা দেখে আরু আরিশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো ভয়ে, আরুর চোখের কোনে জল জমে রয়েছে। আরিশ একবার আরুর দিকে তাকিয়ে আরুর নানা ভাইয়ের কাছে যেতেই আরুর মামী বলে উঠলেন

‘ বাবার শরীরটা ভালো নামে এখনই ডক্টর ডাকা উচিত, আমি ডক্টরের কাছে ফোন করছি। ‘
আরিশ আর কিছু বললো না, আরু বলে উঠলো
‘ মামী উনি ডক্টর। ‘ আরিশকে উদ্দেশ্যে করে বলল।
আরুর মামি থতমত হয়ে বলল
‘ ওহহ তাই তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আরিশ বাবাই ডক্টর।’
আরিশ আরু কে ডেকে বলল
‘আরু পাখি! ”
আরু তড়িঘড়ি উত্তর দিলো
‘হমমম বলুন। ‘

‘গাড়িতে আমার ব্যাগে স্টেথোস্কোপ আছে আর মেডিসিনের বক্স আছে একটু আনো তো। ‘
আরু দৌড়ে ছুটে গেল আনতে। আরিশ ওনার দিকে তাকিয়ে আছেন, ওনার চোখের বর্ন ঘোলাটে, উনি বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছেন মৃত্যু পথযাত্রী দের মতো। আরিশ ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই আরু চলে এলো ঘরে। আরিশ একটু চেক আপ করে বলল
‘ মামী একটু বেশি মিষ্টি করে শরবত নিয়ে আসেন তো, নানা ভাই এর প্রেশার লো। ‘

উনি আর বিলম্ব করলেন না, শরবত করে আনলেন। আরু গালে হাত রেখে ওর নানা ভাইয়ের পাশে বসে আছে, মানুষটাকে ও অনেক ভালোবাসে। আরিশ খেয়াল করলো যে আরুর নানা ভাই একবার ও আরিশের দিক তাকাচ্ছেন না তাই আরিশ ভাবলো উনি হয়তো এখনো আরিশকে মেনে নিতে পারেননি তাই আরিশ সেখান থেকে উঠে গেল। আরিশ বাইরে বারান্দায় দাড়ালো, কিছুখন পর আরুর মামী শরবত নিয়ে ঢুকলেন তখন আরিশ ওনার হাতে একটা ঔষুধ দিয়ে বললেন

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৫

‘ এই ঔষধ টা ওনাকে খাইয়ে দেবেন এখনই। ‘
‘আচ্ছা।’
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন। আরিশ কিছু একটা ভাবছে, এক ভাবনা ওর মাথায় চেপেছে।
কিছুখন পর আরও বেরিয়ে এলো দেখলো আরিশ দাড়িয়ে আছে, আরু বেশ দিতে কন্ঠে প্রশ্ন করলো
‘নানা ভাই ঠিক হয়ে যাবে তো? ‘

আরুর কথা শুনে আরিশ আরুর দিকে ফিরে তাকালো কিছু না বলে শুধু একটা কথায় বলল
‘ যার হায়াত যতোদিন আরু পাখি। ‘
আরু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলল
‘মানে। ‘
আরু কে কাদতে দেখে আরিশ ম্লান হেসে বলল
‘চিন্তা করো না ঠিক হয়ে যাবে, তাছাড়া আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ওনাকে তো সুস্থ হতেই হবে তাইনা। ‘
আরু চোখ মুছে আরিশের শরীরের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো আর আরিশের কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।

কারনে অকারনে ভালোবাসি পর্ব ২৭