কুসুম কাঁটা পর্ব ১৪

কুসুম কাঁটা পর্ব ১৪
সাবিকুন নাহার নিপা

রঙ্গনা নিচে এসে তুলিকে বলল,
“বুবু তোদের ওই পেয়িং গেস্ট কে স্পেশাল দাওয়াত করিস নি?”
তুলি কেকে চকলেট লাগাচ্ছিল। রঙ্গনার কথায় মৃদু হাসলো। বলল,
“স্পেশাল দাওয়াত মানে? ও তো আমাদের ই একজন। ”

রঙ্গনা ভেংচি কেটে বলল, সবেতে বাড়াবাড়ি তোদের। থাকছে, খাচ্ছে টাকা দিয়ে। তাকে নিজের লোক বানিয়ে নিয়েছে!
তুলি হেসে বলল,
“ব্যাপার টা কী? আজ ও’কে নিয়ে কেন পড়লি!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রঙ্গনা উপরের ঘটনা টুকু বলল না। মিশুকের ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখটা! একটু স্মার্ট সাজতে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলা! এই ছেলেটা বিরক্তিকর সেটা প্রথম দিনের কথাতেই বোঝা গেছে। একটা মেয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেছে অমনি একশ ডিগ্রী এঙ্গেলে ভাব বেড়ে গেল। সেই টিপিক্যাল বাঙ্গালী ছেলে। রঙ্গনা এমন ছেলে একটুও পছন্দ করে না। মানুষ যত সহজ হয়, ততো ভালো।

শ্রাবণ্য মেরুন রঙের জামদানী শাড়ি পরেছে। চুলটা খোপা করা। স্বপ্নীল বলল,
“খোপা করা চুলে তোমাকে বড় লাগে। খোলা চুলে ভালো লাগে।”
শ্রাবণ্য বিরসমুখে আচ্ছা বলল। স্বপ্নীলও আর কিছু বলে নি। ও ভেবেছিল শ্রাবণ্য হয়তো এরপর চুল টা খুলে রাখবে। কিন্তু সেটা করে নি। ওভাবেই ঘোরাঘুরি করছিল।

গেস্ট রা চলে এলো সাত টা নাগাদ। সাত, আটজন আসার কথা বলে সতেরো জন এসেছে৷ পাত্র এখনো আসে নি। তার একটা বিশেষ কাজ আছে৷ সেটা সেড়ে আসবে। পাত্রের বড় খালা, খালু এসেছেন। মা আসেন নি, তিনি সেজেগুজে রওনা হবার সময় পা স্লিপ করে পড়ে গেছেন। পাত্রের বাবা এসেছেন। সঙ্গে ছোট মামা, মামী। পাঁচ জন কাজিন এসেছে। আর বাকীরা বাচ্চাকাচ্চা। শিলা একটু ভ্রু কুঁচকালেন৷ যদিও তাদের আয়োজন কম না, ত্রিশ জনের আয়োজন করেছে।

তবুও এতো মানুষের আগমন মন:পুত হয় নি। পাত্রের নাম রাফাত। রাফাতের বড় খালা বেশ স্বাস্থ্যবতী। শাড়িটা কেমন যেন পেঁচিয়ে পরেছেন। দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় খুলে যাবে। তিনি কোনোভাবে হেটে এসে সোফায় বসলেন। ঘনঘন নি:শ্বাস নিতে লাগলেন। বোঝা গেল এটুকুতেই উনি হাপিয়ে গেছেন। ওনার সাথে বসেছেন মামী। তিনি পার্লার থেকে মেকাপ করে এসেছেন নাকি নিজে করেছে বোঝা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত মেকাপের কারণে তার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। একই বয়সী তিনটা মেয়ে একই ডিজাইনের আলাদা রঙের জামা পরেছে। তাদের মেকাপ নরমাল, দেখতে ভালো লাগছে। সঙ্গে যে ছেলে দুটো এসেছে তাদের সঙ্গে ঘরে ঢুকেই হা হা হি হি করছে।

রাফাতের বড় খালা ঘরে ঢুকেই সুপুরি কাটতে শুরু করেছেন। তার মুখ দেখেও বোঝা যাচ্ছে পানখোর।
মামী এদিক ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“রঞ্জনা কি করে?”
তুলি পাশে ছিলো। ও মৃদু হেসে বলল,
“আমার বোনের নাম রঙ্গনা। ”

মামী মুখটা কেমন যেন করলেন। যেন তুলি ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে মহা অন্যায় করেছে।
রঙ্গনাকে দেখা নিয়ে তাদের তেমন আগ্রহ দেখা গেল না। দাদু গল্প জুড়ে দিয়েছেন সবার সঙ্গে। তিনি আজ আমুদে মেজাজে আছেন। দাদীও সেখানে বসে আছেন। তিনিও আজ সেজেগুজে আছেন। হঠাৎ দেখলে কেউ ভাববে তিনি ওই বাড়ির লোক।

দুটো ছেলের একজন শ্রাবণ্যকে দেখছে বারবার। মেয়েগুলো সেটা নিয়ে হাসাহাসি করছে।
শিলার এদেরকে পছন্দ হয় নি। এদের কে যেমন সামাজিক বলা যায় না, তেমনি অসামাজিকও বলা যায় না। শ্রাবণ্য শাশুড়ী কে বলল,
“আম্মু, আপনি এদের দেখে ভয় কেন পাচ্ছেন? রাফাত ভাইয়া তো এদের সাথে থাকেন না। সে থাকে তার বাবা মায়ের সঙ্গে। ”

শ্রাবণ্যর কথা শিলার মনে ধরলো৷ তবুও আত্মীয়দের ফেলে দেয়া যায় না।
এদিকে রঙ্গনার বিরক্ত লাগলো রাফাতের ঠিক সময়ে না আসার ব্যাপার টায়। ভদ্রলোকের সঙ্গে ওর একবার কথা হয়েছে। কথাবার্তায় স্মার্ট, ভালো লেগেছে। কিন্তু এর ফ্যামিলির আচরণ একটুও পছন্দ হচ্ছে না। তারমধ্যে বাচ্চাগুলো হৈচৈ করছে। ওর মাথা ধরে গেছে। এতগুলো বাচ্চা নিয়ে কেউ আসে!
রাফাতের খালা খানিকক্ষণ পর জানালেন যে তার মেয়ে জামাই আসবে। একটু সমস্যার কারণে তারা আসতে পারে নি তাদের সঙ্গে।

সবাই আসার পর রঙ্গনাকে আনা হলো। ওর চোয়াল শক্ত। তুলি কানে কানে বলল,
“তুই নরমাল হ। এমন শক্ত মুখ করে আছিস! দেখে মনে হচ্ছে দাঁত পড়েছে।”
রঙ্গনা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“স্বপ্নকে গিয়ে একটা থাপ্পড় মার। ওর বউকে নিয়ে পালিয়ে গেলেও হা করে বসে থাকবে। গাধা কোথাকার! ”
উল্লেখ্য, রঙ্গনা কথাবার্তায় বুঝলো যে লাল শার্ট পরা কালো ছেলেটা শ্রাবণ্যর প্রেমে পড়েছে। ওরা শ্রাবণ্যকে রঙ্গনার বোন ভেবেছে। এদিকে স্বপ্নীল দূরে দূরে আছে। রঙ্গনা মনে মনে ভাবলো যদি এই পরিবারে ওর বিয়ে হয় তবে এই কালো ছেলেটাকে মেরে ও নীল বানিয়ে দিবে।

রঙ্গনাকে তেমন প্রশ্ন করা হলো না। শুধু মামী একঘর লোকের সামনে জিজ্ঞেস করলেন,
“কোন পার্লার দিয়া সাজছ রঞ্জনা? সাজ ভালো হয় নাই। কালা লাগতেছে। ”
রঙ্গনা তুলির দিকে একবার তাকালো। তুলি ইশারায় চুপ থাকতে বলল। বাচ্চাদের দল এবার এই ঘরে এসেছে। এখানে এসে একটা হৈ হুল্লোড় করার চেষ্টা করছে। মন্টি, রিন্টিও যুক্ত হয়েছে। কেউ কিছু বলছে না। সবাই এর মধ্যেই কথাবার্তা বলছে। দাদু একবার মন্টি রিন্টির নাম ধরে ডাকলেন। ওরা আজ সেটা পাত্তা দেবার প্রয়োজন মনে করলো না।

রঙ্গনা নিজের মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মন্টি, রিন্টিকে দুটো থাপ্পড় মারলো। ওরা দুজন কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। বাকী বাচ্চাগুলো চুপচাপ হয়ে গেছে। ঘরে পিনপতন নীরবতা। রঙ্গনা এসে নিজের সিটে বসে লাল শার্ট পরা কালো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“শ্রাবণ্য আমার বোন না। ভাইয়ের বউ। আর কোন ইনস্টিটিউটে শিখেছ অপরিচিত জায়গায় গিয়ে এমন করার!”
পুরো পরিবেশ বদলে গেল। শিলা এখানে নেই। শ্রাবণ্য গিয়ে বলল,
“এখন আর টেনশন কইরেন না আম্মু। বিয়ে ভেঙে গেছে। ছোট আপু তার ফর্ম চিনিয়ে দিয়েছে।”
শিলা হেসে ফেলল। শ্রাবণ্যও হাসলো।

কুসুম কাঁটা পর্ব ১৩

রাফাত এলো রাত দশটা নাগাদ। ত্রিশ কেজি কাঁচাগোল্লা নিয়ে। রঙ্গনা তখন তুলির ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়েছে। বড় খালা পান চিবুতে চিবুতে বলল,
“রাফাত রঙ্গুনার সাথে কথা বলুক। আমরা বড় রা বিয়ের ডেট ফাইনাল করি। আপারেও(শিলাকে) ডাকো।
এতো ঝামেলা, গন্ডগোল কিছুই টের পেল না মিশুক। তবে বাইরে যাবার সময় রাফাত কে দেখে একটু ধাক্কা খেল। ছেলেটা অত্যন্ত সুপুরুষ।

কুসুম কাঁটা পর্ব ১৫