আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৯

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৯
Raiha Zubair Ripte

সায়ানের কেবিনে সায়ানের সামনেই চেয়ারে বসে আছে সাব্বির,রায়াত,লারা,তন্ময়,লিখন। সায়ান একবার সকলের মুখের পানে তাকলো। তারপর সামনে থাকা ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বলল-
-“ কোনো ক্লু পেলেন আপনারা?
তন্ময় নড়েচড়ে বসলো। ইশারায় লিখন কে কিছু বলতে বলল। লিখন নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো কিছু বলার জন্য।
-“ জ্বি একটা ক্লু পাওয়া গেছে।
সায়ান সিরিয়াস হয়ে তাকালো।

-“ কি ক্লু?
-“ মিলনের নম্বরে একটা নম্বর পাওয়া গেছে। নম্বর টা মালদ্বীপের। রোজ কথা আদান-প্রদান হতো এই নম্বরে।
-“ নম্বর টা কার জানা গেছে?
-“ হুমম। মিস্টার জনস নামের এক লোকের।
-“ মিস্টার জনস.. কয়েকবার আওড়ালো ঠোঁটের কোণে। “ নম্বর টা আমায় সেন্ড করো তো।
-“ জ্বি। লিখন নম্বর টা সায়ানের নম্বরে সেন্ড করলো। সায়ান নম্বর টা দেখে নিলো। তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল- “ রেডি হয়ে যাও আমরা খুব শীগ্রই মালদ্বীপ যাচ্ছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সায়ান বেরিয়ে গেলো। তন্ময় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। -“ তোরা যাস ওনার সাথে। আমি যেতে পারবো না।
কথাটা বলে তন্ময় ও বেরিয়ে গেলো।
লিখন নম্বর টার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে বলল-
-“ মিস্টার জনস ই কি তাহলে এসবের পেছনে আছে?
রাহাত জবাব দিলো- হয়তো।

-“ দেশে ফিরেছি দেখা করতে চাই। আগুন্তকের কথায় স্মিত হাসলো ফোনের এপাশে থাকা ওপর আগুন্তক।
-“ ঠিকানা সেন্ড করুন,দেখা করি আসি অতি শীগ্রই।
অতঃপর মেসেজ আসার শব্দ আসলো।
-“ তাড়াতাড়ি চলে আসবে। অনেক প্ল্যান করা বাকি এখনও। লাফাঙ্গার গুলো উঠেপড়ে লেগেছে আমাদের পেছন। অতি শীগ্রই ওদের কেও শেষ করতে হবে।

-“ সময় মতো তো সব খবরই পাচ্ছেন,তারা কি করছে না করছে তবুও ভয় পাচ্ছেন! বেশ ইন্টারেস্টিং তো।
-“ ভয় সাধে পাচ্ছি না৷ সায়ান মাহবুব ধুরন্ধর তার উপর তুষার খাঁনের ছেলে আরেক ধুরন্ধর। দুই ধুরন্ধর এক সাথে। বুঝতে পারছো জল কতদূর গড়াতে পারে?
-“ আহ! এই ধুরন্ধর তন্ময় কেই কি না জামাই বানাতে চেয়েছিলেন! কথাটা বলে হেঁসে উঠলো।
-“ আহ হেঁসো না তো। তখন আবেগ কাজ করেছিলো বিবেক কাজ করে নি তাই তো বাধ্য হয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর আবেগে ভাসলে চলবে না। মা ছেলের মাঝে বেশ ভালোই দণ্ড লাগিয়ে দিয়েছো। বাট কথা তো ছিলো বাবা ছেলের মাঝে বাড়াবে দুরত্ব।
-“ সেটা না হয় রহস্যই থাক কেনো মা ছেলের মাঝে দূরত্ব বাড়ালাম। এখন রাখছি, যখন তখন ফোন দিবেন না। দরকার হলে আমি ফোন দিবো। তবুও আপনি দিবেন না।

খাঁন বাড়িতে তুষারের সাথে অপরিচিত মুখ দেখে সবাই তাকিয়ে আছে সেই মুখের দিকে। অধরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল সামনে থাকা অপরিচিত মুখশ্রী দেখে এগিয়ে আসে। তুষার চিত্রার দিকে তাকিয়ে দু কাপ ব্লাক কফি উইদাউট চিনি বানিয়ে আনতে বলে। চিত্রা চলে যায় রান্না ঘরে। তুষার তার সাথে করে নিয়ে আসা মানুষটি কে নিয়ে সোফায় বসে। তৃষ্ণা বেশ ভালো করে তুষারের পাশে থাকা মানুষটির মুখ দেখলো। কোথাও একটা দেখেছে এই মুখ। চেনা চেনা লাগছে।

-“ আপনাকে আমার বেশ চেনা চেনা লাগছে।
তৃষ্ণার কথায় মুচকি হাসলো সে। তুষার হাই তুলতে তুলতে বলল-
-“ ফেসবুকের ভাইরাল বয় ও। যে তার প্রাক্তন কে ভীষণ ঘৃণা করে।
তৃষ্ণার এবার মনে পড়লো। অধরা ভ্রু কুঁচকালো। তার ও এবার মনে পড়েছে সেই ভিডিও টা। যেখানে এই লোক তার প্রাক্তন কে নিয়ে বেশ অনেক কথাই বলেছিলো।
-“ নাম কি উনার?

অধরার করা প্রশ্নে তুষার জবাব দিতে নিলে তুষারের পাশে বসে থাকা মানুষ টি বলে উঠে –
-“ রাকিব হোসাইন আমার নাম মিস অধরা।
অধরার কুঁচকে ফেলা ভ্রু সটান হয়। চিত্রা কফির মগ এনে টি-টেবিলের উপর রাখে। তুষার কফির মগ উঠিয়ে তাতে চুমুক বসায়। সামনে থাকা আরেক মগ রাকিবের দিকে এগিয়ে দেয়।
-“ চিত্রা ও হচ্ছে রাকিব। রাফির বিজনেস পার্টনার।
-“ আসসালামু আলাইকুম ভাবি।

রাকিবের দেওয়া সালামের জবাব দেয় চিত্রা। তারপর রান্না ঘরে চলে যায়। তুষার তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে রোমিলা বেগম কে ডেকে আনতে বলে। তৃষ্ণা চলে যায়। রাকিব হোসাইন কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে উঠে –
-“ বেশ অনেক গুলো বছর পর ফেরা।
তুষার কফি খেতে খেতে হুমম বলল। অধরা ভ্রু কুঁচকালো। অনেকগুলো বছর পর ফেরা মানে?
-“ আপনি বাহিরে থাকতেন?

অধরার করা প্রশ্নে রাকিব হোসাইন অধরার দিকে তাকালো।
-“ হ্যাঁ, নিজ দেশ ছেড়ে বাহিরে থাকতে হয়েছে এতোদিন। বাট এখন থেকে এ দেশেই থাকবো।
অধরা বিরক্তবোধ করলো। অধরা তো জাস্ট জিগ্যেস করছে সে বাহিরে থাকে কি না? তার উত্তর হ্যাঁ বা না তে দিলেই তো হতো। এতো কিছু বলার কি দরকার ছিলো?

তুষার কফি শেষ হয়ে যাওয়ায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর কফির মগ টা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো।
বসার রুমে এখন শুধু রাকিব হোসাইন আর অধরা। রাকিব হোসাইন একবার অধরার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল-
-“ আপনি রাফি তুষারের বোন তাই না?
অধরা রাকিব হোসাইন এর দিকে একপলক তাকালো। তারপর রাকিব হোসাইন এর কথার জবাব না দিয়ে বসা থেকে উঠে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
রাকিব অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হেসো উঠলো।

তন্ময় ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। দোলন খাবার বেড়ে দিচ্ছে। তন্ময় খাবারের প্লেট টেনে নিয়ে বলে-
-“ এক্সামের রেজাল্ট দিবে কবে?
-“ নেক্সট উইকে।
তন্ময় খাবার মুখে নিলো। -“ তুমিও বসে খেয়ে নাও।
দোলন খেতে বসলো।
দু’জনের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে দোলন এঁটো প্লেট ধুয়ে উপর করে রেখে রুমে ঢুকে। তন্ময় সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। দোলন সেদিকে তাকালো। তন্ময় দোলন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে-

-“ কিছু বলবে?
দোলান মাথা নাড়িয়ে বলে- হ্যাঁ।
-“ বলো।
-“ একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-“ হুমম করো।
-“ তুলি কে সেটা কি বলা যাবে?
-“ হুমম যাবে।
-“ কে?
-“ আমার বোন।

দোলন ভ্রু কুঁচকে বলল- “ বোন!
-“ হু বোন। তুমি তাকে দেখেছো তো।
-“ সত্যি দেখেছি?
-“ হু। মাস চারেক আগে। যেদিন মিসেস খাঁন অসুস্থ ছিলো। তুমি আর তোমার ফুপি এসেছিলে রাতে মনে আছে?
দোলন মনে করার চেষ্টা করলো।
-“ হু মনে পড়েছে। মিসেস খাঁনের রুমে যে তার মাথার কাছে বসে ছিলো ঐ মেয়েটিই তুলি।
-“ ঐ আপু টাই তুলি আপু!

বিস্ময় হয়ে বলে দোলন। মাস চারেক আগে চিত্রা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। জ্বরে নাজেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছিল। তুলি শুনামাত্রই এতিমখানা থেকে চলে আসে খাঁন বাড়িতে। তুষার বাড়ি ছিলো না। কাজের জন্য কোনো এক জায়গায় আটকা ছিলো। তুলি এসে চিত্রার মাথায় জলপট্টি দেয়। তবুও যখন জ্বর কমার নাম নিচ্ছিলো না তখন তৃষ্ণা ডক্টর মরিয়ম মান্নান কে আসতে বলেন।
মরিয়ম মান্নান দোলন কে সাথে নিয়ে আসে। তখনই তুলি আর দোলনের খানিক দেখা হয়। তবে কথা হয় না।
দোলন কে চুপ থাকতে দেখে তন্ময় বলে উঠে –

-“ কৌতূহল দমেছে?
দোলন জবাব দিলো না।
-“ লাইট টা নিভিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমার ঘুমোতে দেরি হবে।
দোলন অবাক হয়ে বলে- আপনি এ ঘরে ঘুমাবেন?
বিয়ের পর জাস্ট একদিনই তন্ময় দোলনের সাথে রুম শেয়ার করেছিল আর সেটা বিয়ের দিনই। এরপর তন্ময় পাশের রুমেই ঘুমিয়েছে।
তন্ময় ছোট্ট করে হুমম জানায়। দোলনের অধরে হাসি ফুটে উঠে। লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে বলে-

-“ শুভ রাত্রি।
তন্ময় দোলনের দিকে তাকায়। ততক্ষণে দোলন উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়েছে। মধ্য রাত্রি অব্দি ল্যাপটপে কাজ করে বিছানায় আসে তন্ময়। দোলন ঘুমে কাতর। ঘুমন্ত দোলন কে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৮

-❝ শহর জুড়ে সেদিন ছিলো ফাগুন হাওয়ার মাস। তোমার ঐ মায়াবী চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।❞

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১০