প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পুনরাগমনী পর্ব

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পুনরাগমনী পর্ব
Writer Mahfuza Akter

রাত যত গভীর হচ্ছে, বৃষ্টির মাত্রা যেন ততই বাড়ছে। এই অবিরত বর্ষণ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই মুগ্ধর। মুগ্ধ বিমূঢ় ভঙ্গিতে ঘরময় পায়চারী করছে। ঘড়িতে রাত তিনটে বাজতে চললো। অডিও মেসেজে অরুণীর কথাগুলো শোনার পর থেকে মুগ্ধর মনে প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করছে।

ঘন্টা খানেকের মধ্যে সে অরুণীকে একাত্তর বার কল করেছে। কিন্তু প্রতিবারই তাকে আশ্চর্যান্বিত করে অপরপ্রান্ত থেকে ‘সুইচড্-অফ’ বলছে। মুগ্ধ চোখ-মুখ কুঁচকে পায়চারী করছে আর ভাবছে, আজকের মতো পীড়াদায়ক রাতে অরুণী কেন ফোন বন্ধ করে রেখেছে? মেয়েটা কোনো সমস্যায় পড়লো না তো! মুগ্ধ চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বাইকের চাবি হাতে নিলো। দরজার দিকে ঘুরতেই দেখলো, প্রহর এক ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কোথাও যাওয়ার চিন্তা করছিস নাকি?”
“তুমি এখানে কী করছো?”
“তোকে যা জিজ্ঞেস করেছি, তার উত্তর দে!”
মুগ্ধ ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত তিনটে বেজে গেছে ইতোমধ্যে। প্রহর এখনো উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ আরেকবার অরুণীকে কল দিলো। এবারও সুইচড্-অফ বলছে। সে প্রহরের সামনে ফোনের স্ক্রিন তুলে ধরে উদভ্রান্তের ন্যায় বললো,

“এই যে দেখো! সেভেনটি-প্লাস কল করেছি। কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স নেই। আমার চিন্তা হচ্ছে। ওর হোস্টেলে যাবো আমি এখন।”
বলেই মুগ্ধ প্রহরের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ব্যাপারটা বুঝতে প্রহরের কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল। বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে ছুটে গেল মুগ্ধর পেছনে। মুগ্ধর বাহু টেনে ধরে বললো,
“আরেহ্! পাগল নাকি তুই? এই মাঝরাতে গার্লস হোস্টেলে যাবি? মাথা ঠিক আছে তোর? আর বাইরের ওয়েদার দেখেছিস? কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে! ”

মুগ্ধ নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
“আমার মাথা এতো দিন খারাপ ছিল। এখন মাথা ঠিক হয়ে গেছে বলেই যেতে চাইছি। আমায় আর আটকিয়ে রেখো না, ভাইয়া! যেতে দাও।”
প্রহর মুগ্ধকে টেনে ওর ঘরে নিয়ে যেতো যেতে বললো,
“প্রেমে পড়ে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তোর। চল, ঘরে চল। পরে বাবা দেখে ফেললে বিপদ হয়ে যাবে।”
“কিন্তু ভাইয়া, অরুণী…….”
“ও হোস্টেলেই আছে। খোঁজ নিয়েছি আমি।”

মুগ্ধ ঘরে আসতেই প্রহরের এমন কথা শুনে থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মানে? তুমি কীভাবে খোঁজ নিলে?”
প্রহর মুগ্ধকে বিছানায় বসিয়ে নিজে খাবারের প্লেট হাতে ওর পাশে বসলো। মুগ্ধর মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো,

“তোর জন্য আমাকে কত কিছু যে করতে হবে! বড় ভাই হয়ে ছোট ভাইয়ের প্রেমে সাহায্য করছি। কাজটা একদমই ঠিক না। তবুও এই বেঠিক কাজটা করতে হচ্ছে।”
মুগ্ধ খাবার চিবোতে চিবোতে বললো,
“তোমার কাজটা একদমই বেঠিক না। কারণ আমার প্রেমটা একেবারে অথেনটিক!”
“হ্যাঁ, সেই! অরুণী তোর মতো জুনিয়র ছেলের প্রেমে পড়বে, না? ওর এতো খারাপ দিন চলে আসেনি।”
মুগ্ধ নাক ফুলিয়ে বললো,

“ভাইয়া, তুমি কিন্তু আমায় অপমান করছো!”
প্রহর হেসে মুগ্ধকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,
“আমি সত্যিটাই বলছি। তুই অরুণীকে নিয়ে এতো আকাশ-কুসুম ভাবা বন্ধ কর।”
মুগ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
“প্রেমে পড়লে মানুষ আকাশ-কুসুম কল্পনা-ই করে। তুমিও একদিন মা*রা*ত্মকভাবে কারো প্রেমে পড়বে। তখন আমার পেইনটা বুঝতে পারবে। হুহ্!”
প্রহর এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে বললো,
“দোয়া দিলি নাকি অভিশাপ দিলি?”
“দু’টোই।”

ভোরের আলো ফুটে উঠতেই তরী ঘুম থেকে জেগে গেল। তার পাশেই সৌহার্দ্য কপালে হাত রেখে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তরী শোয়া থেকে উঠে বসতেই সৌহার্দ্য কপাল থেকে হাত সরিয়ে তার দিকে তাকালো,
“ঘুম ভেঙে গেছে তোমার? এতো সকালেই?”
তরী অবাক চোখে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি ঘুমাননি?”
সৌহার্দ্য বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“নাহ্! তুমি সারারাত অসুস্থ ছিলে! তাই আমার ঘুম আসেনি।”
তরীর কথার অপেক্ষা না করেই সৌহার্দ্য তার গালে-কপালে হাত ছুঁইয়ে বললো,
“টেম্পারেচার নরমাল আছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও তাহলে! আমি ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করি।”
সৌহার্দ্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তরী তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
সৌহার্দ্য কিচেনে এসে প্রহরকে কল দিতে গিয়ে দেখলো, প্রহর মেসেজ পাঠিয়েছে,

“তোর কাজের লোক দুপুরে আসবে। সকালের খাবারটা নিজেই বানিয়ে খেয়ে নে, ভাই!”
সৌহার্দ্য মেসেজটা দেখে হেসে ফেললো। চুলা জ্বালাতে জ্বালাতে ভাবলো, কী রান্না করা যায়?
“এ কী? আপনি রান্না করছেন যে?”
সৌহার্দ্য সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তরী চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

“আমি না করলে কে করবে? তুমি তো অসুস্থ! রান্না না করলে খাবে কীভাবে? ”
তরী অতি আশ্চর্য হয়ে বললো,
“আপনি রান্না করতে পারেন?”
সৌহার্দ্য হেসে বললো,

“আমার মতো যারা বিদেশে বছরের পর বছর কাটিয়ে এসেছে, তারা সবাই-ই রান্না শিখে ফেলে। বুঝেছো?”
সৌহার্দ্য রান্না করছে, আর তরী অবাক হয়ে দেখছে। রান্নায় সৌহার্দ্যের হাত বেশ পাকা। বলতে গেলে সে নিজেও এতো দক্ষ না রান্না-বান্নায়! হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তরী মুখ ফসকে বলেই ফেললো,
“আপনি এতো পারফেক্ট কীভাবে?”
সৌহার্দ্য তরীর এমন প্রশ্ন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সৌহার্দ্যের চাহনি দেখে তরী কিছুটা ভড়কে গেল। কিছুক্ষণ আগে করা প্রশ্নটার কথা ভাবতেই হকচকিয়ে গিয়ে বললো,

“আব্ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে! সরি।”
সৌহার্দ্য হেসে উঠে বললো,
“মুখ ফসকে প্রশংসা-ই তো করেছো! গালি তো দাওনি! সরি কেন বলছো?”
তরী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
“আমি রুমে যাচ্ছি।”
তরী ঘুরে দাঁড়াতেই সৌহার্দ্য পিছু ডাকলো,
“শোনো।”
তরী সৌহার্দ্যের দিকে তাকাতেই সে বললো,
“একটা প্রশ্ন করার ছিল।”
তরী বললো, “করুন।”

“আরমান আঙ্কেলকে এতো ভয় পাও কেন তুমি?”
প্রশ্নটা শুনে তরী কিছুক্ষণ বিমূঢ় হয়ে রইলো। সৌহার্দ্য তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তরীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠছে। তরীর অস্থিরতা, অস্বস্তি, ভীতি সবটা সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। সৌহার্দ্য কিছু বলার আগেই তরী দ্রুত পায়ে ঘরের দিকে চলে গেল।

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৩১

সৌহার্দ্য চিন্তিত ভঙ্গিতে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। রান্নায় মনোনিবেশ করতে করতে বললো,
“ডক্টর আরমানের কেইসটা দিনদিন ক্রিটিক্যাল হয়ে যাচ্ছে।”

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ৩২