আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৮

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৮
Raiha Zubair Ripte

গোধূলির আলোমাখা আকাশপটের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রাকিব হোসাইন। তার পাশেই রেলিং ঘেঁষে রাকিব হোসাইন এর দিকে তাকিয়ে আছে সায়ান। একটু আগেই সে ফেসবুকে ঢুকতে না ঢুকতেই তার মামুর বলা প্রাক্তন কে নিয়ে ভিডিও টা চোখে পড়েছে। তার মামুর প্রাক্তন আছে এও যেনো অবিশ্বাস্য ঠেকলো সায়ানের কাছে। অবিশ্বাস নিয়ে সায়ান বলল-

-“ সত্যি মামু তোমার প্রাক্তন ছিলো? কই কখনও তো বলো নি? এরজন্য ই কি এখনও তুমি বিয়ে করছো না? আর দেশে পা রাখতে না রাখতেই পুরো ভাইরাল হয়ে গেলে।
রাকিব হোসাইন ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো সায়ানের দিকে। মৃদু হেঁসে বলল-
-“ সে শুধুই আমার প্রাক্তন ই ছিলো না। ছিলো আমার হৃদপিণ্ডের একটা অংশ। কিন্তু মূর্খ রমণী বুঝলো না। তাই তো মেতে উঠলো মৃ’ত্যুর’ খেলায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ মানে?
-“ এই মানে বুঝতে ঢের সময় লাগবে। তাই আপাতত এই টপিক বাদ দে। তোর কাজ কেমন চলছে? নারী চক্রের কোনো খোঁজ পেলি?
-“ নাহ্, কাল থেকে পুরোপুরি লেগে পড়বো এই কেস নিয়ে।
-“ কোনো হেল্প লাগলে আমাকে জানাস।
সায়ান ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তুমি কিভাবে সাহায্য করবে? তুমি বিজনেসম্যান হয়ে সাহায্য করবে একজন সিআইডি কে তার কেস সল্ভ করতে!
রাকিব হোসাইন হাসলো। রহস্যময় সেই হাসি।

-“ রূপ বদলেছে পেশা বদলেছে,তাই বলে সত্তা বদলে যায় নি।
সায়ান বেশ বিরক্ত হলো। তার মামুর কোনো কথার মাথা মণ্ডু সে বুঝে উঠতে পারে না। ফোনে ইমার্জেন্সি ফোনকল আসায় সায়ান নিচে নেমে যায়। রাকিব হোসাইন আকাশের পানে ঠোঁট কামড়ে কিয়ৎ ক্ষন চেয়ে থেকে পকেট থেকে ফোন বের করে। গ্যালারিতে ঢুকে একটা পিক ওপেন করে তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে-

-“ ইউর গেইম ইজ ওভার। অনেক হয়েছে আর না। তোমার কৃতকর্মের শাস্তি এবার তুমি কড়ায়গণ্ডায় পাবে। সবার জীবন কে নড়ক বানানোর ফল তো তোমায় ভোগ করতেই হবে। ❝ তোমার দেওয়া শেষ আঘাতের পর সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি আর তোমাকে চাই নি,চেয়েছিলাম শুধু ধৈর্য্য। এবার সেই ধৈর্য্যর ও বাঁধ তুমি ভেঙে দিয়েছো। খুব বাজে ভাবে শেষ হবে তুমি দেখে নিও ❞

বকুল ফুলের গাছের ছায়াতলের বেঞ্চে বসে আছে তুলি। রাতের দিকে জ্বর নেমে গেছে, এখন শরীর বেশ ভালো। আকাশ টা মেঘলা। কি সুন্দর ঠান্ডা হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। থেকে কালো মেঘ গুলো আকাশে জমাটবদ্ধ হচ্ছে আর দমকা হাওয়া আসলেই সেগুলো পানির মতো ভেসে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আকস্মিক চোখের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেতে চমকে উঠে তুলি। হাতের মালিকের হাত দুটো ছুঁয়ে দেখে। বাম হাতের মধ্য আঙ্গুলে কাঙ্ক্ষিত জিনিস আছে জেনে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। উৎফুল্লতা নিয়ে বলল-

-“ ভাইয়া!
তন্ময় তুলির চোখ ছেড়ে দিলো। তুলি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে তন্ময় কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো। তন্ময় জড়িয়ে নিলো বক্ষে।
-“ কেমন আছিস?শুনেছি জ্বর এসেছিল শরীরে? বৃষ্টি তে না ভিজলে কি চলে না?
-“ তোমাকে দেখে অন্নেক টা ভালো হয়ে গেছি।
তন্ময় মৃদু হাসলো। তুলিকে ছেড়ে দিয়ে বেঞ্চ টাতে বসলো তুলি কে নিয়ে।

-“ আমার সাথে যাবি আমার বাসায়? ওখানেই থাকবি দোলনের সাথে।
তুলি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ দোলন কে?
-“ তোর ভাবি।
সহসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তুলি। অবাক হয়ে বলল-
-“ তুমি বিয়ে করেছো ভাইয়া। সিরিয়াসলি!
-“ হুমম।
তুলি ফের বসলো বেঞ্চে। অস্থিরতা নিয়ে বলল-

-“ তাড়াতাড়ি পিক দেখাও ভাবি পুর। মা কেনো কাল আমায় বললো না তুমি বিয়ে করেছো?
-“ উনি এসেছিলেন কাল?
-“ হ্যাঁ। সন্ধ্যার পর আঙ্কেল এসে নিয়ে গেছে।
তন্ময় ফোন থেকে দোলনের একটা পিক বের করলো। গতকাল ই তোলা হয়েছে দোলন তখন সোফায় বসে ছিলো। তুলি তন্ময়ের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিলো। ফোনের স্কিনে থাকা দোলনের পিক দেখলো বড্ড চেনা চেনা লাগছে মেয়েোটাকে। কিন্তু কোথায় দেখেছে ঠিক মনে পড়ছে না।

-“ ভাই আমি এই মেয়েকে কোথাও দেখেছি। কিন্তু কোথায় দেখছি?
ভাবুক হয়ে কথাটা বলে তুলি। তন্ময় স্কিনে থাকা দোলনের পিক টার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেঁসে বলে-
-“ খাঁন বাড়িতে। যেদিন মিসেস খাঁন অসুস্থ ছিলো।
তুলির রাগ হলো। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল-
-“ মিসেস খাঁন কি হ্যাঁ? মা বলতে পারো না? আমি বাহিরের এতিম মেয়ে হয়ে তোমার মা’কে মা ডাকি আর তুমি কি না তাকে মিসেস খাঁন ডাকো।
তন্ময় আলতো হাসলো।

-“ কে বলেছে তুই বাহিরের এতিম মেয়ে? তুই আমার বোন। আর রইলো তাকে মা ডাকার কথা? যেদিন তার রত্ন কে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবো সেদিনই তাকে মা ডাকবো।
তুলির মন খারাপ হয়ে গেলো। বিষন্ন মন নিয়ে বলল-
-“ তুমি তোমার বোন কে খুঁজে পেলে আমায় ভুলে যাবে তাই না ভাইয়া? মা ও আমায় ভুলে যাবে তার রত্ন কে পেয়ে। বেশ ভালোই হবে,মা তার রত্ন কে ফিরে পাবে আর তুমি তোমার হারিয়ে যাওয়া বোন কে।
তন্ময় আলতো করে জড়িয়ে ধরলো তুলি কে।

-“ তোকে ভুলা অসম্ভব। তোর মধ্যে আমি আমার তৃষা কে খুঁজে পেয়েছি। সেখানে তৃষা কে খুঁজে পেলেও তোকে ভুলতে পারবো না। তৃষার মতো তুই ও আমার বোন।
তুলি আলতো হাসলো। তন্ময় যতই মুখে বলুক,তুলি বেশ জানে তৃষা কে খুঁজে পেলে সবাই তাকে ভুলে যাবে। তবে তুলি মন থেকে চায় তৃষা কে খুঁজে পাওয়া যাক। তার চিত্রা মায়ের কলিজা ঠান্ডা হোক। কতদিন ছেলের মুখে মা ডাক শুনে না।

তন্ময় তুলি কে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর এতিমখানার ভেতরে ঢুকলো। হাফিজা বেগমের রুমে গিয়ে তুলি কে বিছানায় বসালো। পাশ থেকে শপিং ব্যাগ বের করে তুলির হাতে দিয়ে বলল-
-“ এগুলো তোর জন্য নিয়ে এসেছি। একদম ফিরিয়ে দিবি না। কিছু আনলে নিতে চাস না। এগুলো এবার নিতেই হবে। কোনো না শুনবো না।

তুলি শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে একবার তাকালো। তারপর হাতে তুলে নিয়ে সাইডে রাখলো।
-“ আচ্ছা বেশ না করবো না। নিলাম তোমার দেওয়া প্যাকেট গুলো। এবার শান্তি পেয়েছো?
তন্ময় মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। এর আগে তুলির জন্য জামা কিনে রেখেছিল কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেই জামা দোলনের ব্যাবহারের কাজে লেগে যায়। সেজন্য ফের তুলির জন্য জামা কিনতে হয়। তন্ময় হাত ঘড়িটায় সময় দেখে নিলো। ফিরতে হবে বাসায়।

-“ আচ্ছা আজ আসি রে তুলি,দেরি হয়ে যাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে।
-“ আচ্ছা সাবধানে যাবে। আর ভাবিপু কে নিয়ে আসবে আমি দেখবো।
-“ বেশ,খুব শীগ্রই দেখা করাবো। আসি।
তন্ময় চলে যায়। তুলি তন্ময়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দূর আকাশে উড়তে থাকা এক ঝাঁক পাখির দিকে দৃষ্টি পাত করে।

বসার ঘরে সোফায় বসে আছে অধরা। পাশেই তান টিভিতে কার্টুন দেখছে। চিত্রা রান্না ঘরে খাবার বানাচ্ছে। অধরা তান কে টেনে কোলে বসালো। গালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ তোমার বাবা কোথায় গেছে তান?
তান টিভির দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল-
-“ বাবা মালদ্বীপ গেছে।

অধরা তান কে কোল থেকে নামালো। আজ সকালেই তড়িঘড়ি করে রাফি কে কোথাও যেতে দেখেছে অধরা। সময়ের অভাবে তৃষ্ণার থেকে জানা হয় নি। সেজন্য তানের থেকে জেনে নিলো। রাফি বেশ নামকরা ব্যাবসায়ী হয়ে উঠেছে। মালদ্বীপে বেশ ভালোই নামডাক শুনেছে অধরা। সামির খাঁন মা-রা যাওয়ার পর থেকে একা হাতেই পুরো বিজনেস টাকে সামলাচ্ছে।

অধরা বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হাতের মুঠোফোন টা বেজে উঠে। অধরা একবার ফোনের দিকে তাকায়,তারপর আশেপাশে তাকিয়ে বাহিরে চলে আসে।
তুষার পার্টি অফিসে বসে আছে। সামনেই এক গাদা ফাইল। ফাইল গুলোতে একবার চোখ বুলালো,তারপর উপর থেকে একটা ফাইল তুলে নিলো। ফাইল টা খুলে চোখ বুলাতেই ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়। তুষার সেদিকে তাকায়। মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ টা অন করতেই অতি আশ্চর্য নিয়ে হেঁসে উঠে মেসেজ টা দেখে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৭

-“ আই এ্যাম ব্যাক তুষার খাঁন। উই উইল মিট ভেরি স্যুন।
তুষার টাইপ করলো- “ অপেক্ষা টা বেশ দীর্ঘ ছিলো। তবে আজই যে তার সমাপ্তি হবে ধারনাতেও ছিলো না। আমি এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম এতো গুলো বছর। আই হোপ এবার অপেক্ষার পালা শেষ হবে।
কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে ভেসে আসলো -“ মেবি।
তুষার ফোন বন্ধ করলো। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছু কল্পনা করতেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৯