আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৭

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৭
Raiha Zubair Ripte

অফিসের বন্ধ কক্ষে মিলনের মৃ’ত দেহ পড়ে আছে। ক্ষিধের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজেই নিজের হাত কাম’ড়িয়ে জখম করে ফেলেছে তবুও একটা টু শব্দ বের করে নি যে কারা কারা এই নারী পা’চার চক্রের সাথে জড়িত। হাতের অবস্থা টা যাচ্ছে তাই। ইনফেকশন হয়ে গেছে। এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে দেওয়ালে মাথা ঠুকে আ’ত্মহ’ত্যা করেছে।

লারার বমি বমি ভাব আসছে মিলনের হাতের অবস্থা দেখে। সায়ান সূক্ষ্ম চোখে দেখলো মিলন কে। তারপর বেরিয়ে আসলো ঐ কক্ষ থেকে। রাহাতের ইচ্ছে করছে এই মৃ’ত দেহ টাকে কয়েক টুকরো তে বিভক্ত করতে। অসভ্য ছেলে নিজের প্রান দিলো অথচ বললো না কারা কারা আছে এসবের পেছনে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কেস টা আরো জটিল হয়ে দাঁড়ালো। সায়ান কেবিনে এসে চেয়ারে পুরো শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। পুরো শরীর ঘেমে গেছে। মাথার উপর সিলিং ফ্যান টা ভনভন করছে। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর সামনে টেবিলে থাকা ফোন টা বেজে উঠে। সায়ান ফোনের শব্দে চোখ মেলে তাকায়। টেবিল থেকে ফোন টা নিতেই চোখে পড়ে রাকিব হোসাইন নাম। সায়ান আলতো হাসে। ফোন টা কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে-

-“ হোয়াটসঅ্যাপ মাই বয়?
-“ অল গুড। কেমন আছো?
-“ বেটা কে ছেড়ে বাবা কি করে ভালো থাকে বলো তো?
-“ তাহলে বিডি চলে এসো।
-“ হ্যাঁ আসছি এবার।
সায়ান অবাক হয়-
-“ সত্যি বিডি আসছো? নাকি জোকস্?
-“ সত্যি বিডি আসছি আমি।
-“ কবে?
-“ সিক্রেট।

-“ মিথ্যা কথা। মজা করছো নিশ্চয়ই মামু। এতো বছরেও যখন তোমায় বিডি আনতে পারলাম না আর এখন কি না তুমি নিজ থেকে বিডি আসবে! এটাও বিশ্বাস করা লাগবে আমার?
-“ তোর মামু কিন্তু মিথ্যা বলে না সায়ান।
সায়ান এবার সিরিয়াস হলো।

-“ সত্যি তাহলে আসছো?
-“ হুমমম। সময় ঘনিয়ে এসেছে যে,বিডি তো ব্যাক করতেই হবে।
-“ মানে?
-“ ও কিছু না। খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে। নিজের খেয়াল রাখিস,আল্লাহ হাফেজ।
রাকিব হোসাইন ফোন কে’টে দিলো। সায়ান তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে। লোকটা পুরো রহস্যময় সায়ানের কাছে। কেমন যেনো রহস্য নিয়ে সবসময় কথা বলে।

পরন্ত বিকেলে রাস্তার পাশ ঘেঁষে হেঁটে যাচ্ছে চিত্রা। গন্তব্য তার এতিমখানায়। দুপুরে দিকে খবর পেয়েছে তুলির শরীরে ভীষণ জ্বর এসেছে। খবর টা শোনা মাত্রই চিত্রা বের হয়েছে বাসা থেকে। এতিমখানা খুব বেশি দূরে নয়,তাই পায়ে হেঁটে আসছে। এতিমখানার মোড়ে আসতেই চিত্রা দোকান থেকে দুটো কোন আইসক্রিম নেয়। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে কোন আইসক্রিম।

এতিমখানার ভেতরে ঢুকতেই ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়ে আসে চিত্রার কাছে। চিত্রা পরম আবেশে তাদের জড়িয়ে নেয় বক্ষপটে। এই এতিম শিশু গুলোর মাঝে থাকলে অদ্ভুত এক শান্তি পাওয়া যায়। তাই তো এতিমখানার নাম দেওয়া হয়েছে শান্তিনিকেতন।
হাফিজা বেগম এগিয়ে এলেন। বাচ্চা গুলো কে বললেন গিয়ে খেলতে। বাচ্চা গুলো চলে গেলো। চিত্রা বাচ্চা গুলোর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ এখন কেমন আছে তুলি?
হাফিজা বেগম দুশ্চিন্তা নিয়ে বললেন-
-“ জ্বর কমে নি এখনও।
চিত্রা চকিতে তাকালো। তারপর দ্রুত পায়ে হেঁটে তুলির রুমের দিকে গেলো।
বিছানায় কাঁথা শরীরে দিয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে তুলি। মাথা ব্যাথায় চোখ খুলে তাকাতে পারছে না। চিত্রা তুলির পাশে বসলো। কপালে হাত রাখতেই শিউরে উঠলো। গলা ছেড়ে হাফিজা বেগম কে ডেকে বলল-

-“ ডক্টর কি বলেছে? জ্বর কেনো কমে নি?
-“ মেডিসিন তো দিয়েছে। খেয়েছে কিছুক্ষণ আগে। আজ রাতের মধ্যে নাকি জ্বর নেমে যাবে।
চিত্রা তপ্ত শ্বাস ফেলে পাশে থাকা জলের বাটি থেকে ভেজা পট্টি তুলে নেয়। হাতের আইসক্রিম টা ফ্রিজে রেখে দিতে বলে। তারপর ভেজা পট্টি টা চেপে তুলির কপালে দেয়। তুলি ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে। চোখ খুলার চেষ্টা করতেই চিত্রা বলে উঠে –

-“ তাকাস না। শুয়ে থাক৷ আমি।
তুলি চোখ মেলে তাকালো। চোখের সামনে চিত্রা কে দেখে অধর কোনে হাসি ফুটে উঠলো। অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠতে চাইলে চিত্রা ধমক দিয়ে উঠে-
-“ শুয়ে থাকতে বলেছি। উঠছিস কেনো? চুপচাপ শুয়ে থাক। আমি আছি কাছেই।

তুলি চিত্রার হাত টেনে বুকে গুঁজে নিলো। তারপর চোখ বন্ধ করলো। চিত্রা স্মিত হাসলো। মেয়েটার মুখ জুড়ে কি মায়া,সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। সারাটাদিন তাকিয়ে থাকলেও বোধহয় চিত্রা বিরক্ত বোধ করবে না।
সন্ধ্যা নামার আগ দিয়ে চিত্রা তুলি কে ঘুম থেকে জাগিয়ে উঠায়। হাফিজা বেগমের নিয়ে আসা খাবার টা নিজ হাতে তুলি কে খাইয়ে দেয়। তুলি পরম তৃপ্তি নিয়ে খাবার টা খায়। খাবার খাওয়া শেষে মেডিসিন খাইয়ে দেয়।
বাসায় ফিরার জন্য প্রস্তুতি নিতেই তুলি চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে। তুলির ইচ্ছে করছে না এই নারীর সঙ্গ ছাড়তে। আচমকা জড়িয়ে ধরায় চিত্রা বলে উঠে –

-“ শরীর খারাপ লাগছে?
তুলি ডানে বামে মাথা নাড়ায়।
-“ তাহলে?
-“ চলে যাবে এখনই?
নরম গলায় কথাটা বলে তুলি। চিত্রা স্মিত হেঁসে বলে-
-“ হ্যাঁ সন্ধ্যা হয়ে আসছে যে৷ বাসায় ফিরতে হবে তো।
তুলি ছেড়ে দিলো। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল-

-“ আচ্ছা সাবধানে যাবে।
চিত্রা বসা থেকে উঠে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম দুটো বের করে তুলির সামনে মেলে ধরে। তুলি এক নজর দেখে চোখ সরিয়ে নেয়।

-“ খাবি না? ভেবেছিলাম মা মেয়ে মিলে এই সাঝ সন্ধ্যায় আইসক্রিম খাবো।
তুলি একটা আইসক্রিম হাতে নেয়। তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ ছাঁদে বসে খাবে? বেশ লাগবে। চাঁদ দেখবো আর আইসক্রিম খাবো।
চিত্রা মুচকি হেঁসে সম্মতি জানালো। তুলি চিত্রার হাত ধরে ছাঁদে আসলো।
চারিদিকে আঁধার নেমে এসেছে। রাস্তার কৃত্রিম আলোয় চকচক করছে শহর টা। তুলি চিত্রা কে নিয়ে দোলনায় বসলো। চিত্রার কাঁধে মাথা রেখে বলল-

-“ পৃথিবীর সব চাইতে শান্তি ঠিক এই জায়গা টায়।
চিত্রা আইসক্রিমে কামড় দিয়ে বলল-
-“ কোন জায়গায়?
-” এই যে তোমার কাঁধে মাথা রেখে আইসক্রিম খেতে খেতে সন্ধ্যা এই সাঝ টাকে বিলাস করা।
চিত্রা তুলির মাথায় চুমু খেলো। তারপর হাতের ফোন টা থেকে তুষার কে ফোন করে জানালো বাসায় ফিরার পথে তাকে নিয়ে যেতে।

ঘুটঘুটে অন্ধকারে সোফায় পা তুলে বসে এক মধ্যবয়সী পুরুষ। হাতে তার জলন্ত সিগারেট। পাশ থেকে ফোন টা হাতে নিয়ে কল লাগালো কাঙ্ক্ষিত এক নম্বরে। আজ অনেক গুলো বছর পর সেই নম্বরে কল দিচ্ছে। তিনবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো। থমথমে সুরে বলে উঠল-
-“ মনে আছে আমাকে? নম্বর চিনতে অসুবিধা হয় নি তো?
ফোনের ওপাশে থাকা আগুন্তক স্মিত হাসলো।

-“ না চেনার অবকাশ নেই।
-“ আবার মতে উঠবো মর’ণ খেলায়। সঙ্গ চাইছি এবার ও।
-“ এবার ও ফেরাবো না আপনায়।
-“ ফিরছি খুব শীগ্রই।
-“ অপেক্ষায় রইলাম।

ওপাশ থেকে ফোন কে’টে গেলো। লোকটা ফোন টা পাশে রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। খানিক টা এগিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সামনে দাঁড়ালো। দেওয়াল জুড়ে অসংখ্য ছবির বাহার। খাঁন পরিবারের সবার ছবি ক্রস লাল চিহ্ন দিয়ে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝখানে থাকা তুষারের ছবির দিকে তীর ছুঁড়ে দিয়ে বলল-
-“ এবার ও তুমি হারবে তুষার খাঁন। এবার তোমাকে পুরোপুরি নিঃস্ব করে ছাড়বো আমি। তোমার ধ্বংস এবার অনিবার্য।
কথাটা বলে হো হো করে হেঁসে উঠলো।

তন্ময় সন্ধ্যা পরপরই নিজের অ্যাপার্টমেন্টে চলে আসে। হাতে তার শপিং ব্যাগ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে শপিং করে এসেছে। কলিং বেল চাপতেই সাব্বির দরজা খুলে দেয়। সাব্বির কে নিজের ফ্ল্যাটে দেখে একটু চমকালেও রুমের ভেতর ঢুকে তার সকল ফ্রেন্ড কে দেখে বুঝলো ব্যাপার টা।
টায়রা ফোন ঘাটছিলো সোফায় বসে বসে। মূলত সে ড্রেস দেখছে অনলাইনে আর দোলন কে জিজ্ঞেস করছে কোন সুন্দর।

তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে লারা আর রাহাত নেই। রাহাত নিজের ফ্ল্যাটে ঘুমিয়ে আছে। দোলন আড়চোখে তাকালো একবার তন্ময়ের দিকে। ফলে চোখাচোখি হলো দু’জনের। তন্ময় ও সেই মূহুর্তেই তাকিয়েছিল। তন্ময় দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। সোজা রুমে ঢুকে বিছানার উপর শপিল ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। বসার রুমে আসতেই দোলনের দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ এক কাপ কফি নিয়ে আসো।
দোলন চুপচাপ চলে গেলো। সাব্বির তন্ময়ের পিঠে কিল বসিয়ে বলে-
-“ শা’লা বউয়ের জন্য শপিং করে এনেছিস নিশ্চয়ই। আমাদের টা কবে দিবি।
তন্ময় ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তুই আমার বউ লাগিস?
সাব্বির চোখ ছোট ছোট করে বলল-

-“ ফ্রেন্ড লাগি ফ্রেন্ড। ফরএভার ফ্রেন্ড।
-“ আমার এতো টাকা হয় নি যাকে তাকে শপিং করে দেওয়ার। বেতন না এসেছে গতকাল? একাউন্ট থেকে টাকা বের করে শপিং কর গিয়ে মানা করছে কে।
সাব্বির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে লিখনের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ দেখ লিখন দেখ তন্ময় আমাদের ঈদের গিফট দিবে না। বউ পেয়ে কেমন স্বার্থপর হয়ে গেছে। এটলিস্ট তুই আমাকে কিছু দিস।
লিখন একবার বউয়ের দিকে তাকালো। অসহায় চোখে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ তোর কি আমারে আইফেল টাওয়ারের মালিক মনে হয়? পাশে তাকিয়ে দেখ সে আমাকে ফতুর বানানোর জন্য ফোন ঘাঁটছে।
সাব্বির বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। টায়রার পাশে গিয়ে জোরে বলে উঠল-

-“ টায়রা এই ড্রেস টা নে। পদ্মজা ড্রেস,এবারের ভাইরাল ড্রেস। সেই মানাবে তোকে। লিখনের পদ্মজা ড্রেস এটা।
টায়রা চমকে উঠলো। ড্রেস টার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। টায়রা কে চুপ থাকতে দেখে সাব্বির ফের বলল-
-“ তোকে কিন্তু তোর সতীনের ড্রেসে বেশ মানাবে টায়রা। কতবড় সৌভাগ্য তর জানিস! লিখনের পদ্মজা কে তুই ঘরে আনবি। তুই জানিস লিখন এই পদ্মজা কে কতটা ভালোবাসতো! আমি ইন্সপ্যায়ার হয়ে গেছি লিখনের ভালোবাসা দেখে। কিন্তু আফসোস এই লিখন ব্যাটা তোরে ঐ লিখনের মতো ভালোবাসতে পারলো না।
লিখন সাব্বিরের মাথায় থা,প্পড় দেয়।

-“ একদম উল্টাপাল্টা বুঝাবি না আমার বউরে। আমি ঐ লিখনের থেকেও বেশি ভালোবাসি আমার টায়রা কে। তাই না টায়রা?
-“ আমার এই ড্রেস টা চাই লিখন।
লিখনের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো টায়রার কথায়। সাব্বির সেটা দেখে বলল-
-“ এলা দে তোর ভালোবাসার প্রমান। পদ্মজা রে নিয়ে আয় ঘরে। কিনে দে পদ্মজা জামা।
লিখন বউয়ের শরীর ঘেঁষে বসলো। ড্রেস টার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলল-

-” ছিঃ এটা একটা ড্রেস হলো? এর চেয়েও সুন্দর ড্রেস কিনে দিবো। এসব পদ্মজা ফদ্মজা ড্রেস কিনতে হবে না।
টায়রার দৃঢ় জবাব।
-“ আমার এই পদ্মজা ড্রেস ই চাই।
লিখন ঠোঁটের কোণে বিরবির করে আওড়ালো-
-“ নিজের সতিন কে যেভাবে চাইলে এভাবে আমাকে তো কোনোদিন চেয়ে দেখলে না টায়রা। আফসোস টা থেকে যাবে।

-“ কি রে দিবি না কিনে পদ্মজা ড্রেস?
লিখন রাগী চোখে তাকালো সাব্বিরের দিকে। সাব্বির হো হো করে হেঁসে উঠলো।
এরমধ্যে দোলন কফি এনে তন্ময়ের হাতে দেয়। তন্ময় কফিতে চুমুক বসিয়ে বলে-
-“ এবার তোরা তোদের রুমে যা। আমি ভীষণ টায়ার্ড।
টায়রা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। লিখনের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে বলল-
-“ অর্ডার কনফার্ম করে দিছি টাকা টা বিকাশ করো তাড়াতাড়ি।

লিখন বউয়ের পেছন পেছন চলে গেলো। সাব্বির কে এখনও যেতে না দেখে তন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তোরে কি আলাদা ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে যেতে বলতে হবে।
সাব্বির বসা থেকে উঠে যেতে যেতে বলল-
-“ আমার ও বিয়ে টা হোক। আমিও মুখের উপর বলবো আমি ভীষণ টায়ার্ড আমর রুম বের হ।
দোলন দরজা আঁকিয়ে দিলো। সোজা রুমে এসে বিছানার উপর থাকা প্যাকেট গুলে নেড়েচেড়ে দেখলো। কি সুন্দর এক একটা জামা। লোকটার পছন্দ আছে বলতে হবে।
প্যাকেট গুলোর মধ্যে থাকা একটা মিষ্টি কালারের জামা বের করতেই হাতে স্পর্শ পেয়ে হাত থেমে যায়। পাশ ফিরে দেখে তন্ময়।

-“ এগুলো তোমার জন্য না দোলন।
দোলন হাত সরিয়ে আনে। কিছুটা লজ্জা পায়।
-“ কার জন্য এগুলো?
-“ তুলির জন্য।
-“ কে এই তুলি?
-“ না জানলেও চলবে। এগুলো তে হাত দিবা না। তোমার গুলো আলমারি তে আছে।
কথাটা বলে তন্ময় প্যাকেট গুলো নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। দোলনের মন কেমন বিষাদে ভরে গেলো। মনে উঁকিঝুঁকি দিলো হাজারো প্রশ্ন। কে এই তুলি? তন্ময় কেনো তুলির জন্য ড্রেস কিনলো? কি সম্পর্কে এদের?

আমি আমার প্রাক্তন কে চরম ঘৃণা করি। সে ক্ষমার অযোগ্য। সে প্রতারক হলেও আমি তাকে মনে রেখেছি।
পৃথিবীর সকল মানুষ যদি তাদের প্রাক্তনকে ক্ষমা করে দেওয়ার মিছিলে অংশগ্রহণ করে তবুও আমি আমার প্রাক্তনকে ক্ষমা করবো না।

যে আমার সুন্দর জীবনকে র/ক্তপাতহীন হ*ত্যা করার জন্য বেঁচে নিয়েছিলো কা’টা গোলাপ, ঠোঁটের কোণে মিথ্যা গুঁজে রাখা চুমু, জ্যোৎস্নার আলো থেকে টেনে হিঁচড়ে অন্ধকারে একা রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছে যে মানুষ।
ঐ সকল প্রেমিকার নামে বুকের তিন ইঞ্চি গভীরে আমি আজন্মকাল ঘৃণা লিখে রাখি। ওদের ক্ষমা করা পাপ।

ধরুন পৃথিবী ধ্বংস হওয়া চূড়ান্ত, মৃ*ত্যু বুকের উপর ওঠে হামাগুড়ি দিচ্ছে, হৃদয়পিণ্ডে কু/ড়ো/ল মা*রছে যন্ত্রণায়, ঐ মুহূর্তেও যদি আমার প্রাক্তন এসে আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি করুনা করে হলেও তাঁকে ক্ষমা করবো না। আমি মৃ*ত্যু*কে ছুঁতে ছুঁতে কাঁপা কাঁপা হাতে শাহাদাত আঙ্গুল তুলে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিব, পৃথিবীর সমস্ত শুদ্ধ প্রেমিকাদের গায়ে কলঙ্ক লেগে যাবে তোমাকে ক্ষমা করে দিলে। ভালোবাসি এখনো তবে ক্ষমা করতে পারছিনা তোমায়, আমি তোমায় ঘৃণা করি, বিশ্রী রকম ঘৃণা করি লক্ষ্মীটি!’ ©

ভিডিও টা মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলো। প্রাক্তন কে নিয়ে এমন কথাশুনে সবাই হতবাক। কেউ তার প্রাক্তন কে নিয়ে এমন টাও বলতে পারে তা যেনো কারো মাথাতেও আসে নি। কে এই পুরুষ যার মনে তার প্রাক্তন কে নিয়ে এতো ঘৃণা? এমন সুদর্শন পুরুষ কেও কোনো রমণী ঠকাতে পারে! যারা ভিডিও টা দেখেছে সবাই বেশ ক্ষুব্ধ হলো ঐ রমণীর উপরে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৬

(#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২ পরিচ্ছেদ২ নিয়ে কিছু বলতে চাই। এই গল্পে অনেক চরিত্র, আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হয়। সেজন্য চরিত্র টাকে খুলাসা করে দিচ্ছি।
তুষার-চিত্রার ছেলে মেয়ের নাম= তন্ময়,তৃষা।
রাফি-তৃষ্ণার ছেলে মেয়ের নাম= তান,রাহা।
ডক্টর মরিয়ম মান্নান চিত্রার ডক্টর,যে প্রথম পরিচ্ছেদে ছিলো। আপনারা ভুলে গেছেন।
ডক্টর মরিয়ম মান্নানের মেয়ের নাম= মিথিলা।
আর ভাইয়ের মেয়ে দোলন যে তন্ময়ের বউ।
রাহাত,সাব্বির,লিখন,লারা,টায়রা। এরা তন্ময়ের ফ্রেন্ড।
লিখনের বউ টায়রা।
রাহা রাহাত কে ভালোবাসে।
লারা সায়ান কে পছন্দ করে।
সায়ান একজন সিআইডি। তন্ময় দের টিমে ট্রান্সফার হয়েছে
আর তুলি কার নায়েকা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন? তুলি তন্ময় দের এতিমখানায় থাকে।
আর ফারাহ্ সে তন্ময় কে পছন্দ করে।
এই পোস্ট টা মুখস্থ করে নিয়েন তাহলে চরিত্র বুঝতে সমস্যা হবে না আশা করি। বলেছি একটা চরিত্রের সাথে আরেক টা চরিত্র কানেক্টেড। তাই যে সূক্ষ্ম ভাবে এই গল্প টা পড়বে সেই বুঝতে পারবে কেবল সম্পর্ক গুলো। তবে আর বেশি দেরি নেই, রহস্য উন্মোচন করতে।)

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৮