কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩১ (২)

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩১ (২)
নন্দিনী নীলা

জায়ান কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিল,,” who are you?”
লোকটা গামছা দিয়ে মুখ কপাল ঠেকে রেখেছে তার শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। জায়ানের কথা শুনে লোকটা লাফ দিয়ে উঠে এক দৌড়ে সীমানার বাইরে চলে গেল। জায়ান ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে সেদিক পানে তাকিয়ে আছে হতবিহ্বল চোখে।
” এভাবে দৌড়ে পালালো কেন?” সন্দেহজনক কন্ঠে বিড়বিড় করল জায়ান।

তখনি পেছনে থেকে তৃষ্ণার বাবা জায়ানকে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে আসতে থাকে,” জামাই বাবাজি, ও জামাই বাবাজি ওইহানে কি করতাছ? বাড়ি আহো তাড়াতাড়ি।”
জায়ান শশুর বাবার ডাক শুনে আর না দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগে।
তৃষ্ণার বাবা জায়ানের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেন,,” তুমি ঠিক আছ তো বাবা?”
জায়ান ভ্রু কুটি করে বলল,,” আমার কি হবে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আমাদের গ্রাম হচ্ছে চোরের নাখরা। এমনে ক‌ইরা রাত ক‌ইরা বের হয় না কেউ। চোর ছ্যাচড় ঘুরে বেড়ায়।”
” বলেন কি এই মাত্র এক মুখ ডাকা লোকের সাথে দেখা হয়েছিল। উনিও কি চোর?”
তৃষ্ণার বাবা আন্দাজ করে বলল,” চোর ছাড়া কেউ মুখ ঠেকে ঘুরে শুনি নাই। চোর ই হবে তোমার কোন ক্ষতি বা কিছু চুরি করে নাই তো বাবা?”
” ভয় পাবেন না এসব চোর আমার কিছুই করতে পারবে না।”

তৃষ্ণা জায়ানকে আসতে দেখে শক্ত গলায় বলে,,” আপনি একা একা ওইদিকে কেন গেছিলেন? কাউকে না বলে।”
” মারবে নাকি? এতো রেগে চেয়ে আছো যে?”
তৃষ্ণা রাগ করে রুমে চলে গেল।
জায়ান ও পেছনে পেছনে এসে বলল,,” তুমি ওইসব ভীতু চোরের জন্য আমায় নিয়ে ভয় পাচ্ছিলে রিয়েলি?”
তৃষ্ণা কোমরে হাত রেখে রেগে বলল,” ওদের কাছে চাকু থাকে জানেন। যদি আপনার ক্ষতি করে দিত। একদিন ফোনে কথা না বললে কি এমন ক্ষতি হতো।”

” ওরে আমার বোকা ব‌উটা রে। তোমার ব‌র‌কে চাকুর পার দিয়ে মারতে পারবে না। আমি কাদের সাথে উঠা বসা করি জানলে তুমি হার্ট অ্যাটাক করবে দেখা যায়। আর শোন তোমাদের এলাকার চোর আমাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে গেছে।”
” চোরের সাথে দেখা হয়েছিল আপনার?” চোখ কপালে তুলে বলল তৃষ্ণা।
জায়ান তৃষ্ণার ভীত মুখশ্রী দেখে না হেসে পারল না।

” হ্যা দেখলাম কেমন সাহসী চোর। চাকু না বের করে দৌড়ে পালাল।”
” সত্যি?”
” ইয়েস।”
” তবুও আপনি একা আর কোথাও যাবেন না।”
” আচ্ছা গেলাম না।”
জায়ান বিছানায় বসে বলল।

” তুমি এতো রাগ দেখাতে পার আগে তো জানতাম না।”
” আপনাকে এতো ভালবাসি তাও তো আগে জানতাম না।”
” ভালবাসা হয়ে এখন রাগ দেখানোর সাহস পাচ্ছ। আমার সরল কোমল ব‌উটা কেমন রাগী হয়ে উঠছে। আমি জায়ান আহনাফ ব‌উয়ের রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম ভাবা যায়?”

” আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
” এতো ভালবাসা কবে হয়ে গেল?” জায়ান তৃষ্ণাকে কাছে টেনে বলল।
” জানি না।”
” সব জানো তুমি। কিন্তু বোকা সেজে থাকো।”
তৃষ্ণা জায়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলল,” ছারুন‌।”

” কেন?”
” বাইরে যাব।”
” ওয়াশরুমে?”
” নাহ মার কাছে যাব।”
” মার কাছে কি মেয়ে তোমার বিয়ে হয়ে গেছে এখন শুধু জামাইয়ের কাছে থাকবে। স্বামী সেবা করবে তা না শুধু মার কাছে যাব বলো।”
” আপনার জন্যেই যাব!”
” আমার জন্য?”
” হুম মা আপনার জন্য দুধ গরম করেছে নিয়ে আসি গ্লাস।”
” ধ্যাত কোথায় একটু শান্তিতে প্রেম করব।তার শান্তি নাই। যাও।”
তৃষ্ণা জায়ানের মুখশ্রী দেখে হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো।

উর্মি আরিফের জন্য অপেক্ষা করছে। আজকে মিহিরের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা। আরিফ সেই কখন কল করে বলেছে আসছে এখনো এসে পৌঁছাল না। এদিকে ও রেডি হয়ে বসে আছে। নিজেই গাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আরিফ বলেছে না আমি তোমাকে পিক করব।
সব অপেক্ষার প্রহর ঘটিয়ে এসে পৌঁছাল আরিফ।
এসেই কান ধরে সরি সরি বলতে লাগল।

” এতো সময় কেন লাগল?”
” মাঝরাস্তায় এক কলেজ ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা হয়েছিল তাই আরকি।”
” আমি এতো কল দিলাম ধরলেন না কেন?”
” ও ধরতে দেয়নি আসলে অনেক দিন পর দেখা তাই একটু কথা বলছিলাম।”
“কেমন কথা ধরতে কেন দিবে অসহ্য কর ফ্রেন্ড আপনার।”
” বকা দিয়ে রাগ কমাও আর চলো তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে আসি।”
উর্মি এগিয়ে এসে আরিফের বাহুতে কিল ঘুষি মেরে বলল,,” আপনাকে আজ মেরেই ফেলব। বলেছি না ও আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড না।”

” মারামারি করেই সময় পার করে ফেল। যেতে আর হবে না।”
” চলেন।” মার থামিয়ে বলল।
দুজনেই গাড়িতে উঠে র‌ওনা হলো। উর্মি হাঁসফাঁস করছে কীভাবে ওই শয়তান টাকে শাস্তি দিলে ওর মনের কষ্ট দূর হবে। ওর মতো প্রতারক কে ভালবেসে জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল করেছে ও।
মানুষ চিনতে ও এতো ভুল করল। এই আফসোস ও রাখবে কোথায়।
” কি ভাবছ? নামো চলে এসেছি তো।”
চমকে তাকালো উর্মি আরিফ গাড়ি থামিয়ে ওকে ডাকছে। ও অন্যমনষ্ক হয়ে ছিল তাই শুনতে পায় নি ও সরি বলে নেমে আসে।

গাড়ি থেকে নেমে ওর কপাল কুঁচকে উঠে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে কেন?
ও প্রশ্নবোধক চোখে তাকায় আরিফের দিকে আরিফ এগিয়ে এসে বলল,,” মিহির এখানেই আছে চলো আমার সাথে।”
” এখানে?”
” হুম।”
উর্মি আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। চারতলার লিফটে উঠে পরে ওরা। একটা কেবিনে নিয়ে আসে আরিফ ওকে। উঁকি মেরেই ও মিহিরের মাকে দেখতে পায়।

মিহির বেডে শুয়ে আছে ওর হাতে, পায়ে ও মাথায় ব্যান্ডেজ করা।
মিহিরের মা বসে তসবিহ পড়ছিল। ওদের দেখেই উঠে দাঁড়ায়। উর্মিকে দেখে কান্নায় ভেঙে পরে। ছেলের খারাপ কাজের কথা উনি শুনেছে নিজেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ছেলের থেকে কিন্তু এতোটা অসুস্থ যে মা হয়ে ছেলে এই অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে পারে নি। তার ছেলে যে এতোটা খারাপ পথে চলে গেছে তিনি কল্পনাও করেননি‌। উর্মির কাছে ছেলের হয়ে ক্ষমা চাইল। উর্মি কি আর করবে মিহিরের যা অবস্থা আর কিছু করলে মরেই যাবে। একজন মায়ের চোখের জল দেখে ও নরম হয়ে আসে। আসার আগে ঘৃণার দৃষ্টিতে একপলক তাকায় মিহিরের দিকে। এতো সুন্দর দেখতে বলেই তার মনটা এতো কুৎসিত।

আরিফের দিকে তাকায় শ্যামবর্ণ হলে কতটা পরিষ্কার তার মন। এতো কিছুর পর ও ওর পাশে কেমন বন্ধুর মতো আছে। এমন‌ই একজন সঙ্গী সবাই চাই। ও ভালবাসে না আরিফকে। কিন্তু ও মিহির কেউ ভালবাসে না। দ্বিতীয় বার ভালবাসতে ও আরিফ’কেই চায়।

” কি ব্যাপার হা করে তাকিয়ে আছো যে।”
” এমনিতেই।”
আরিফ উত্তর শুনে জোকস শুনছে এমন করে হাসল।
” হাসছেন কেন?”
” এমনিতেই।”
এবার উর্মির হেসে উঠল।

পরদিন বিকেলে তৃষ্ণা, জায়ান ও বকুল গ্রামে ঘুরতে বের হয়। তৃষ্ণা দের এলাকার সব লোকজন ঘুরে ঘুরে জায়ানকে দেখছে। দৌড়ে এসে তৃষ্ণার ও জায়ানের খোঁজ নিচ্ছে। তৃষ্ণার গায়ে দামি শাড়ি ও স্বর্ণের গহনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আর এতো সুন্দর করে কথা বলছে যেন তৃষ্ণা কোন মিনিস্টারের ব‌উ।
তৃষ্ণার এতো আদর আহ্লাদ ভালোই লাগছে‌‌।
” একা একাই হাসছ কেন?”
তৃষ্ণা জায়ানের প্রশ্নে হাসি থামিয়ে দেয়।

” সবাই আপনার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। আমার খুব হাসি পাচ্ছে।”
জায়ান নিজেও খেয়াল করেছে সবার অদ্ভুত নজর। ও যেন কোন বিশেষ বস্তু না তাকালে বড়ো কিছু মিস হয়ে যাবে এমন করে ফিরে তাকাচ্ছে।
‘ এভাবে তাকিয়ে আছে কেন সমস্যা কি?” বিরক্তিকর কন্ঠে বলল জায়ান।
তৃষ্ণা জায়ানের হাত ধরে বলল,,” বাদ দেন তো আপনি ঘুরতে এসেছেন‌। মানুষের নজর না দেখে গ্রাম দেখেন।”
বকুল হাঁটতে হাঁটতে আগে চলে গেছে। জায়ান বকুল কে ডাকল। বকুল পেছনে ঘুরে আবার ওদের কাছে ফিরে এলো।

” বকুল ফোনটা ধরো। আর দেখিয়ে দিচ্ছি কীভাবে ছবি তুলবে।”
বকুলকে দেখিয়ে দিল জায়ান। সুন্দর আঁকাবাঁকা মাটির চিকন রাস্তা। জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে কাপল পোজ দিল।
” তুলতে পারছ?”
বকুল খুশিতে এগিয়ে এসে ওদের দিকে ফোন ধরে বলল,,” বুবু দেখ আমি কত সুন্দর ছবি তুলছি। দুলাভাই দেখেন।”
ছবিটা আসলেই অনেক সুন্দর হয়েছে। তৃষ্ণা আর জায়ান আরো কয়টা ছবি তুলল বকুল সহ সেলফি তুলল। জায়ান বেশি হাঁটতে পারে না তাই তাড়াতাড়ি ফিরে এলো।

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩১

এবার আরিফ আর উর্মির বিয়েটা দিতেই হবে কি বলেন পাঠক গণ!!

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩২ (১)