কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৫ (২)

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৫ (২)
নন্দিনী নীলা

” দাঁড়া। ” তৃষ্ণা বকুলের হাত টেনে ধরে বলল।
বকুল করুণ চোখে তাকাল তৃষ্ণার দিকে।
” বুবু কিছু ক‌ইবা?”
” হ আমারে সত্যি করে একটা কথা বলবি?”
” কি কথা বুবু?”
” আয়ান তোকে জোর করে এসব করাচ্ছে ভয় দেখিয়ে তাই না?”

বকুল মাথা নিচু করে বলল,,” না।”
তৃষ্ণা থমকে হাত ছেড়ে দিল ওর চোখ টলমল করছে।
” যেদিন সত্যি কথা বলতে পারবি সেদিন আমার সামনে আসবি এর আগে যেন তোর মুখ না দেখি আমি।”
বকুল তৃষ্ণার হাত ধরে বলল,,” কেমন আছি জিজ্ঞেস করবে না?”
তৃষ্ণা ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বলল,,” ভালোই আছিস দেখতেই পাচ্ছি জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন কি?”
বকুল শুকনো হাসি দিল। তৃষ্ণা সেই হাসির পেছনে অগণিত কষ্টের আভাস দেখতে পেল না সামনে থেকে সরে গেল।
জায়ান তৃষ্ণাকে বলল,,” তোমার ভাই ঢাকা কোথায় থাকে জানো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” নাহ তো। কেন?”
” এমনিতেই এতো দিন ধরে আছে ভাইয়ের বাসায় যাবে না দেখা করতে?”
তৃষ্ণা হঠাৎ‌ই চমকে উঠল, অবাক চোখে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে। হঠাৎ উনি ভাইকে নিয়ে কৌতুহল দেখাচ্ছে কেন?
” আপনি নিজে বলছেন যেতে।”
” হ্যা এতো অবাক হ‌ওয়ার কি আছে তারা কি আমার শত্রু নাকি যে যেতে পারবে না‌।”
” তা না আপনি এমন কথা বলবেন কখনো আসা করিনি।”

” যাবে?”
” হ্যা।”
” রেডি হয়ে নাও।”
” এখনি?” চোখ কপালে তুলে বলল।
” ইয়েস।”

তৃষ্ণা জায়ানের ভাবভঙ্গি কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ সেখানে যেতে চাইছে কেন? তার মনে কি চলছে? ভাবুক চোখে তাকিয়ে আছে। জায়ান তাড়া দিতেই আলমারি থেকে শাড়ি বের করল।
জায়ান আর তৃষ্ণা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। বাসা থেকে বের হতে যাবে তখনি বাসায় পুলিশ এসে ঢুকে। তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে চেয়ে আছে। জায়ান নিজে ও কিছু বুঝতে পারছে না। পুলিশ বাসা কেন? জেসমিন পুলিশে সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলছে। মহিলা কনস্টেবলের সাথে লিয়াকে উপরে পাঠাল। জায়ান তাকিয়ে আছে সাদিকুর এর দিকে।
তিনি অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।

জায়ান হুংকার দিয়ে বলল,,”এসব কি হচ্ছে? পুলিশ বাসায় কেন?”
জেসমিন কাছে এসে বললেন,,” জায়ান মৌমিতা কে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।”
জায়ান আশ্চর্য চোখে তাকাল জেসমিন এর দিকে। জেসমিন কথা সাজিয়ে বলার চেষ্টা করছে।
জায়ান শক্ত গলায় বলল,,” হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ?”

জেসমিন ভয়ার্ত গলায় বলল,,” দেখ জায়ান আমি জানি তোমার খারাপ লাগছে কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বাসায় ঝামেলা করছে। এভাবে বাসায় রেখে আমরা তো রিক্স নিতে পারি না। মৌমিতা সুস্থ হোক সেটাই চাই।”
” সুস্থ হোক চান নাকি শাস্তি চান?”
” জায়ান শাস্তি চাইব কেন?”

” আমার মায়ের ব্যাপারে এতো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আপনি কে? তার ছেলে আছে। কোন অধিকারে নিলেন? আমাকে না জানিয়ে এসব করে আপনি ঠিক করলেন না।” রাগে জায়ান রীতিমতো কাঁপছে।
তখন আয়ান এগিয়ে এসে বলল,,” আমি নিয়েছি। আমার নিশ্চয়ই অধিকার আছে।”
জায়ান থেমে গেল।

” মানে? তুই সব জানতি?”
“হ্যা। তুই ছেলে হলে আমিও ছেলে তাই আমি সিদ্ধান্ত নিতেই পারি।”
জায়ান ক্রোধে এসে ঘুসি পারল আয়ান কে। আয়ান ছিটকে পড়ে জায়ানের দিকে পাল্টা আঘাত করতে আসতে চাইল। কিন্তু পুলিশের সামনে দুই ভাই মারামারি বেশিক্ষণ করতে পারল না। দুজনকে থামিয়ে দিল। জায়ান কোন ভাবেই মৌমিতা কে যেতে দিবে না পুলিশের সাথে। তা নিয়ে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করল। জেসমিন আতংকিত মুখে তাকিয়ে আছে। জায়ানের যে মৌমিতার উপর এর দরদ আগে বুঝতে পারে নি। বুঝবে কি করে সব সময় ছেলেটা মায়ের থেকে দূরত্ব রেখে চলত। আজ সে তার জন্য এতো ভয়ংকর হয়েছে বিশ্বাসী হচ্ছে না।

আইনকে থামানোর ক্ষমতা নাই জায়ানের তাই থামাতে পারল না মৌমিতা কে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেল জায়ান চেয়েও থামাতে পারল না। যেতে দিতে বাধ্য হলো।
তৃষ্ণা নিশ্চুপ চেয়ে সবটা পাথরের ন্যায় দেখলে। মাথা ভনভন করছে ওর। চোখ ভরা চরম বিষ্ময়, মনে হাজারো প্রশ্ন, ঘুরপাক খাচ্ছে। ওর হাত পা কাঁপছে জায়ানের রাগ দেখে‌। জায়ান ড্রয়িংরুমের সব জিনিস তছনছ করে ফেলল। নিজের হাত কেটে ও রক্ত বের হচ্ছে তৃষ্ণা কি করবে কিভাবে থামাবে মাথায় ঢুকছে না। ভয়ে ও জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জায়ানের কষ্ট ও উপলব্ধি করতে পারছে ওর চোখে পানি টলটল করছে। জোভান আর সাদিকুর জায়ান কে জোর করে থামিয়ে সোফায় শক্ত করে বসালো।

সাদিকুর বললেন,,” কষ্ট পেয়ো না। ওকে চিকিৎসা নিতে দাও। সুস্থ হলে আমরা জামিন করিয়ে বাসায় নিয়ে আসব। তোমার মাকে কেউ থানায় রাখতে পারবে না আমি কথা দিচ্ছি। মা সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক তুমি চাও না?”
জায়ান সাদিকুর কে জড়িয়ে ধরল। জোভান জায়ান কে রুমে নিয়ে এল। তৃষ্ণা ও পেছনে পেছনে রুমে এসেছে।
” ভাবি ভাইয়াকে সামলাও।”

বলেই জোভান চলে গেল। তৃষ্ণা দূরত্ব রেখেই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে। জায়ান বিছানা থেকে উঠে ড্রয়ার থেকে একটা বোতল বের করে ব্যালকনিতে চলে গেল। তৃষ্ণা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। জানালা থেকে তাকিয়ে দেখল জায়ান চুমুক দিচ্ছে। ও চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। এটা কি খাচ্ছে কষ্টে মানুষ না খেয়ে থাকে আর উনি ওটা নিয়ে চলে গেল‌।

তৃষ্ণা ব্যালকনিতে গিয়ে জায়ান কে বলল,,” আপনি কি খাচ্ছেন ওটা দেখি।”
বলতে বলতে তৃষ্ণা মুখ চেপে ধরে বলল,,” এতো গন্ধ ক্যান?”
জায়ান বলল,,” তৃষ্ণা ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”

” আপনার হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে কিছু করেন।”
” যাও এখানে থেকে।” ধমকে উঠল।
” আপনি এটা কি খাচ্ছেন আগে বলেন তারপর যাব। কেমন‌ বিদঘুটে গন্ধ ছিহ।”
জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে রুমে এনে ব্যালকনির দরজা আটকে দিল।
তৃষ্ণা হা করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জানালার ফাঁক দিয়ে জায়ান কে বলল,,” আপনি এইভাবে আমাকে সরিয়ে দিলেন।”

জায়ান উত্তর দিল না‌।
তৃষ্ণা বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। একটু পর পর জায়ানের দিকে তাকাচ্ছে। জায়ান কি কাঁদছে এজন্য আমাকে সরিয়ে দিল। তৃষ্ণার ও কান্না পাচ্ছে মৌমিতা কে পুলিশ নিয়ে গেল কিন্তু কেন? তৃষ্ণা ঢোক গিলে আবার জানালার ফাঁক দিয়ে চেয়ে বলল,,” আমাকে আপনার কাছে নিন প্লিজ। এভাবে একা গোমরে না মরে। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই কষ্ট ভাগাভাগি করতে চাই। আমি আপনাকে ভালবাসি আপনাকে এভাবে আমি দেখতে পাচ্ছি না।”

জায়ান নড়ল না। তৃষ্ণা ওভাবেই চেয়ে আরো অনেক কথাই বলছে। জায়ান দরজা খুলে দিল তৃষ্ণা খুশি হয়ে দৌড়ে গেল।
জায়ান তৃষ্ণাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। ওর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে তৃষ্ণার কাঁধ ভিজিয়ে দিচ্ছে। তৃষ্ণা নাক মুখ কুঁচকে আছে ওর বমি পাচ্ছে জায়ানের মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ আসছে।
জায়ান তৃষ্ণাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরের বসে পড়ল। তৃষ্ণা ধরেও আটকাতে পারল না এতো শক্তিশালী ভারি মানুষটাকে ধরা রাখা সম্ভব নাকি।

তৃষ্ণা জায়ানের পাশে বসে নাক আঁচল দিয়ে চেপে বলল,,,” এমন দুর্গন্ধ আসছে কেন? কি খেয়েছেন কি এটা দেখি!”
তৃষ্ণা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে শুঁকতেই ওয়াক করে উঠল। জায়ান টান দিয়ে বোতল নিয়ে বলল,,” বাংলা এটাকে মদ বলে।”

তৃষ্ণা চোখ কপালে তুলে বলল,,” ছিহ আপনি মদ খান।”
” হ্যা খাই তোমার কোন সমস্যা?” দাঁতে দাঁত চেপে বলল জায়ান।
তৃষ্ণা শক্ত কন্ঠস্বর শুনে ভয়ে মানা নাড়িয়ে বলল না।
মিনমিন স্বরে বলল,,” খারাপ মানুষ রা মদ খায় শুনেছিলাম। আমাদের গ্রামে ও অনেকে খায় আম্মা বলেছে তারা খারাপ। ভালো মানুষ এসব খায় না। আপনি কেন এসব খান।”
জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে গলা ফাটিয়ে হাসি দিয়ে বলল,,” আমিও খারাপ।”

” না আপনি ভালো।”
” না আমি খারাপ।”
” খারাপ হলেও আমি আপনায় ভালবাসি।”
জায়ান তৃষ্ণার গাল ছুঁইয়ে দিয়ে হাসল। মাতাল হাসি।
” মদ খেলেও আমি কিন্তু মাতাল হ‌ইনা। আজ মাতাল হতে ইচ্ছে করছে তোমার প্রেমেতে।”
” আপনার কি অনেক খারাপ লাগছে মায়ের জন্য। তাকে পুলিশ কেন‌ নিয়ে গেল?”
জায়ান বলল,,” কারণ সে একজন আসামি‌।খুনের আসামি। তাদের কে তো পুলিশরাই নিয়ে যাবে তাই না।”
তৃষ্ণার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
থমকানো গলায় জিজ্ঞেস করল,,” কি সব বলছেন?”

” ঠিক‌‌ ই বলছি।”
” অসম্ভব। আপনার মা খুনি এটা আপনি কি করে বললেন? আপনার কি মাথা ঠিক আছে! কি সব উল্টো পাল্টা বকছেন!”
জায়ান পাগলের মতো হেঁসে উঠল। যেন হাসির প্রশ্ন করেছে তৃষ্ণা।
” আমার মাথা ঠিক না থাকলেই ভাল হতো তাই না। আচ্ছা তৃষ্ণা আমিও যদি মায়ের মতো পাগল হয়ে যায়‌। আমার সাথে থাকবে তুমি এমনি ভাবে ভালবাসবে তো?”
” এসব কি ধরনের কথা। কথা ঘুরিয়ে দিবেন না বলেন কেন খুনি বললেন। কাকে খুন করেছে বলেন?”
” আমার বাবা কে।”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৫ (১)

তৃষ্ণা এবার নিশ্চিত জ্ঞান হারিয়ে পরেই যাবে। কি সব বলছে উনি। উনার বাবাকে উনার মা মারলে সাদিকুর রহমান কে? উফ মাথা ঘুরাচ্ছে আমার।
মদ খেলে মানুষ উল্টো পাল্টা বলতে শুরু করে দেয়। একবার ভাইয়া ও তো পাড়ার লোকদের সাথে খেয়ে বাসায় এসে উল্টো বকেছিল। বাবা তো সেদিন মারার জন্য লাঠি নিয়ে দৌড়াচ্ছিল।
উনি ও নিশ্চিত এসব ছাইপাশ খাওয়ার ফলে উল্টো পাল্টা বকছে।

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৬