কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৬

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৬
নন্দিনী নীলা

মৌমিতা দিশেহারা হয়ে কল করল আরাফাত কে। আরাফাত কল রিসিভ করে হ্যালো বলতে মৌমিতা কেঁদে উঠল।
” কি হয়েছে কাঁদছ কেন?” অবাক স্বরে বলল আরাফাত।
” আরাফ আই এ্যাম প্রেগন্যান্ট।”
আরাফাত বজ্রপাতের মত চেঁচিয়ে বলল,,” হোয়াট আর ইউ ম্যাড?”

” এখন কি হবে আরাফ বাসায় জানতে পারলে আমাকে মেরে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। আমার খুব ভয় লাগছে।”
” এখন একটাই পথ আছে। বেবি টা নষ্ট করতে হবে।”
মৌমিতা চমকে উঠে বলল,,” এসব কি বলছ। ও আমাদের সন্তান আমি ওকে মারতে পারব না।”
” তুমি কি চাইছ?”
” তুমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসো আরাফ। আমরা বিয়ে করে নেই তাহলে তো আর সমস্যা হবে না সবাই জানলে।”
” হোয়াট কি সব বলছ। আমি এখনি বিয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” মানে কি আরাফ প্রেমের শুরুতে তো বিয়ের জন্য পাগল ছিলে। আমি রাজি ছিলাম না বলে কত কথাই বলতে আজ যখন রাজি হচ্ছি মত পরিবর্তন কেন করছ।”
” দেখ মৌমি তুমি আগামীকাল হসপিটালে আসো। যেভাবেই হোক বাচ্চাটা নষ্ট করতে হবে।”
” এক কথা বারবার বলবে না‌। আমার সন্তান আমি মারতে পারব না। তুমি তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসো।”

” তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছ আমি বললাম তো এখনি বিয়ে করতে পারব না। আমার আরো সময় প্রয়োজন।”
” বিয়ের জন্য কতদিন প্রয়োজন?”
” কমপক্ষে তিনবছর। এখনি বিয়ে করে ঝামেলায় পড়তে চাই না। আমি একটু ইনজয় করতে চাই দেখ প্রেম করছি এভাবেই চলতে দাও না। যখন বিয়ে হবে তখন তো বেবি হবে। এটার জন্য তুমি আমার সাথে ঝামেলা করো না‌‌। কাল সময় মতো সিটি হসপিটালে চলে এসো জান।”

বলেই ফোন কেটে দিল। মৌমিতা পাথরের ন্যায় বসে আছে। কি করবে মাথায় ঢুকছে না। আরাফাত এইভাবে পাল্টে যাবে ও ভাবতে পারছে না। এতো দিন নিজেই বিয়ের কথা বলত এখন যেই ও নিজে চাইছে বিয়ে তখন উল্টো সুর গাইছে। পরদিন হসপিটালে গেল না মৌমিতা তা নিয়ে ওদের মধ্যে ঝগড়া হলো।
” কাজটা তুমি ঠিক করলে না মৌমি। সারাটা দিন আমি হসপিটালের বাইরে দাঁড়িয়ে কল দিয়েছি তুমি ফোন অফ করে রাখলে।”

” আমি বলেছি তো আমি আমার সন্তান মারব না।”
” ওকে ফাইন। তোমার যা খুশি করো। আমি এর ঝামেলা নিতে পারব না।”
” কি বললে তুমি। নিজের সন্তান দের ঝামেলা মনে হচ্ছে এখন?”
” ঝামেলায় তো। শোন এই বেবি যতদিন তুমি না নষ্ট না করবে ততদিন আমার সাথে কোন কন্টাক্ট করবে না।”

সেদিনের পর আর যোগাযোগ করতে পারে নি মৌমিতা আরাফাতের সাথে। আরাফাত এইভাবে ওকে ঠকিয়ে দিবে ও কল্পনাতেও ভাবেনি। চোখে শুধু নোনাজল আসছিল। এদিকে বাসায় ও বিয়ের প্রস্তাব আসছে। তারা ঠিক করে ফেলতে চাইছে। মৌমিতা না কাউকে বলতে পারছে আর না বিয়ে আটকাতে পারছে না। এতো অসহায় লাগছিল। আজ মৌমিতাকে দেখতে এসেছে ও ভেবেই রেখেছে আজ ওর জীবনের শেষ দিন। ভুল মানুষকে ভালবাসার শাস্তি নিজের জীবন দিয়ে চুকাবে।

” আমি বিয়ে করব না মা কেন তোমার আমার কথাটা বুঝতে পারছ না।”
মৌমিতার মা বললেন,” বাইরে আয় তো একবার। দেখ রাজপুত্র এর মতো ছেলে‌। তোর পছন্দ না হলে ভেঙে দেব।”
” সত্যি? আমার পছন্দ না হলে ভেঙে দিবা?” উজ্জ্বল মুখ করে বলল।
” ছেলে তোর পছন্দ হবে আমি শিউর তাই ভাঙার প্রশ্নোই আসে না।”
মৌমিতা ছলছল চোখে তাকিয়ে র‌ইল মায়ের দিকে। মাথায় ঘোমটা টেনে মেয়েকে নিয়ে বাইরে এলেন।
মৌমিতা মাথা নিচু করে বসে আছে।‌

ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
সামনে থেকে কেউ বলল তাদের দিকে তাকাতে। মৌমিতা চোখ মুছে তাকাতেই চোখে কপালে তুলে ফেলল।
বিস্ফোরণ চোখে তাকিয়ে আছে সামনে ওর মুখোমুখী বসে থাকা আরাফাতের দিকে।
এই ছেলেটা বিয়ে করবে না বলে এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করছে না। এখন চলে আসছে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে। আসবেই যেহেতু আমার সাথে কেন ঝগড়া করল। সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য নাকি। মলিন মুখটা নিমিষেই আনন্দে ছেয়ে গেল। মৌমিতা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাফাতের দিকে।

ওদের আলাদা কথা বলার জন্য রুমে পাঠানো হলো। মৌমিতা যতটা বিষণ্ণ মুখে বাইরে এসেছিল ততটাই প্রফুল্ল হয়ে ভেতরে এল।
রুমে এসে মৌমিতা আরাফাত কে জড়িয়ে ধরল। আর বলল,
” আরাফ তুমি সত্যি এসেছ। আমি তো বিলিভ করতেই পারছি না। এই সাতদিন আমার কতটা যন্ত্রণায় কেটেছে জানো। তুমি সারপ্রাইজ দিতে এমন করেছ? তাই বলে এতোটা আমি কত কিছু ভেবেছিলাম জানো। একবার আমাদের বেবি নষ্ট ও করতে চাইছিলাম পড়ে ভাবলাম সন্তান বাঁচাতে না পারলে আর নিজে বেঁচে থেকে কি করব। নিজেও আত্নহত্যা করতে চাইছিলাম।”

সাদিকুর বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে মৌমিতার দিকে। সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
মৌমিতা সাদিকুর এর হাত ধরে বলল,,” তুমি কথা বলছো না কেন? ”
সাদিকুর ঢোক গিলে বলল,,” আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।”
মৌমিতা কপাল কুঁচকে বলল,,” মানে! কি ভুল হবে। আর তুমি এমন অপরিচিত দের মতো আপনি করে কথা বলছ কেন?”
” মানে হচ্ছে আমি আপনাকে চিনি না আজকে প্রথম দেখলাম।”

” এটা কি ধরনের ফাজলামো আরাফ। দেখ আমার এমনিতেই এই কয়দিন অনেক কষ্ট কেটেছে আর কষ্ট দিও না।”
বলতে বলতে মৌমিতা সাদিকুর এর হাত পেটের উপর রেখে বলল,,” এখানে আমাদের বাচ্চা আছে আরাফ তুমি তাকে মেরে ফেলতে চাইছিলে আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো। এখন আবার আরেকটা মজা শুরু করেছ। আমার এসব ভাল লাগছে না। আমি আজ অনেক হ্যাপি তুমি এসেছ বলে আর কষ্ট দিও না এসব বলে প্লিজ।”
সাদিকুর হাত টান দিয়ে দূরে সরে বলল,,” দেখুন আমি আরাফ নয় আমি সাদিকুর।”

” নামটাও চেঞ্জ করে ফেললে। দেখ এসব মজা আমার ভালো লাগছে না।”
এবার সাদিকুর ধমক দিয়ে বলল,,” আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন। আমি সাদিকুর মজা কেন করব। আপনি হয়তো কারো সাথে আমি গুলিয়ে ফেলেছেন।”
মৌমিতার বুক ধক করে উঠল। ও আরাফ আর ওর একটা ছবি সাদিকুর কে দেখাল।
” এটা তুমি না?”
সাদিকুর ভাল করে ছবিটা দেখে চমকালো।

” না এটা আমার ছোট ভাই আরাফাত। আমরা টুইন।”
মৌমিতা মুখে হাত দিয়ে পিছিয়ে গেল‌। দুজনের কেউই কথা বলতে পারছে না। দুজনেই বিষ্ময় এ হতবিহ্বল হয়ে গেছে।
সাদিকুর বেরিয়ে গেল। মৌমিতা থপ করে ফ্লোরের বসে পড়ল। একটু আগেই যে খুশির জোয়ারে
ভাসছিল নিমিষেই সব নিঃশেষ হয়ে গেল।

মৌমিতা ফোনে না পেয়ে মেসেজ করে রাখল আরাফ কে কিন্তু আরাফের কি সেসব দেখার টাইম আছে? মৌমিতা সাদিকুর এর সাথে আলাদা করে দেখা করে সব খুলে বলল।‌ সব শুনে সাদিকুর মাথা নিচু করে ফেলল।
” কি‌ হলো কথা বলছেন না কেন? আপনার ভাইয়ের সন্তান আমার পেটে। আপনারা কি এর কোন ব্যবস্থা নিবেন না? প্লিজ আমাকে সাহায্য করেন আমি ওকে অনেক ভালবাসি। সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারব না।”

” আরাফাত অলরেডি বিবাহিত।”
মৌমিতা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল আর কি কি শুনতে হবে।
” আরাফ বিবাহিত। কিন্তু ও যে বলেছিল..
” জানি না কি বলেছিল কিন্তু ও এখন বিবাহিত। আর বিয়েটা করেছে এক সপ্তাহ আগেই।”
” বলেন কি তার মানে আমার সাথে যোগাযোগ অফ করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে। অথচ ও বলেছিল এখনি বিয়ে করতে চায় না।”

” আমি এখন কি করব? ওর সাথে একবার দেখা করিয়ে দেবেন প্লিজ।” খুব অসহায় কন্ঠে বলল সাদিকুর রাজি হলো।
সাদিকুর আরাফাতের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেয় মৌমিতা কে। মৌমিতা আরাফাত কে রাজি করাতে পায়ে পর্যন্ত ধরে। বিবাহিত আরাফাত তাও ও সন্তানের জন্য আরাফাতে ব‌উ হতে চায়। সন্তানের পরিচয় ভিক্ষা চায়। আরাফাত সেদিন সবার সামনে ওকে অপমান করে বের করে দেয়। লজ্জা অপমানে মৌমিতা সেদিন‌ই মরতে চায়। এই মুখ নিয়ে আর বাড়ি যাবে না।

সাদিকুর বাঁচায় সেদিন ওকে আর নিজে থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
” আরাফ এর শাস্তি আপনি কেন নিবেন। আপনি ভালো একজন লাইফ পার্টনার ডিজার্ভ করেন। আমি ভুল করেছি এর শাস্তি আমিই ভোগ করব। নিজের জীবন উৎসর্গ করে।”

” আমি আপনার জন্য বিয়ে করতে চাইছি না। আমি চাইছি আমার সন্তানের জন্য। এই সন্তান আমার পরিচয়ে বড় হবে। আপনি ওই বাড়ির ব‌উ হ‌ওয়ার অধিকার রাখেন। আপনার গর্ভে আমার ভাইয়ের সন্তান। তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে বেঁচে থেকে নিজের অধিকার আদায় করে নেওয়ার। ভাই তাদের বঞ্চিত করলেও আমি চাই না তারা বঞ্চিত হোক। আপনি আমার ব‌উয়ের পরিচয় ওই বাড়ি যাবেন আর নিজের সন্তানদের অধিকার আদায় করে নিবেন।”
” আপনার মতো একজন ভাল মানুষের দেখা কেন আগে পেলাম না। একটা জানোয়ার পাল্লায় পড়ে আমার জীবনটা নরক হয়ে গেল।”

হু হু করে কেঁদে উঠল মৌমিতা।
খুব তাড়াতাড়িই ওদের বিয়েটা হয়ে গেল। আরাফাত হয়তো ভাবেনি মৌমিতা এই বিয়েটা করবে। আরাফাত বিয়ের কয়দিন আগে থেকে মৌমিতা কে কল করে বিয়েটা করতে মানা করছে অনেক। কিন্তু ধোঁকাবাজের কথায় কান দেয়নি মৌমিতা।
বিয়ের কয়দিন পর‌ই সবাই জানতে পারে মৌমিতা প্রেগন্যান্ট সবাই বলছিল এতো আগেই কেন বাচ্চা নিয়েছে। বিপরীতে মৌমিতা উত্তর না দিলেও সাদিকুর উত্তর দেয়। তিনিই চেয়েছেন তাই।

নয় মাস সাদিকুর এতো কেয়ার করেছে ওর ও মুগ্ধ হয়ে যায় মানুষটার উপর। এতো ভাল মানুষ ও হয় বুঝি। এক‌ই বাসায় থাকার ফলে আরাফাত এর সাথে দেখা হয়। ও দেখা হলেই কেমন জানি করে তাকিয়ে থাকে ওকে দেখলে মৌমিতা আরো চিপকে থাকে সাদিকুর এর সাথে।
সাদিকুর এর সাথে ভালো একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কিন্তু স্ত্রীর অধিকার ও দিতে পারেনি। সাদিকুর ও তেমন জোর করেনি। কিন্তু স্বামী হিসেবে যতটা দায়িত্ব পালন করার তার চেয়েও বেশি করে।

দীর্ঘ নয় মাস পর মৌমিতা যমজ ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু পরিবার জানে আটমাসে বেবি হয়েছে। একেবারে বাপের কার্বন কপি। দেখতে সেম আরাফাতের মতো হয়েছে। মৌমিতা সন্তানের মুখ দেখে কেঁদে ফেলে।
আত্নীয় স্বজনরা বলে উঠে,,” সাদিকুর রে তোর ছেলেরা তো একেবারে তোর মতো হয়েছে।”
সাদিকুর আর আরাফাত যমজ না হলে এই সন্তান দেখে সবাই বলে উঠতো সাদিকুর এর সন্তান আরাফাতের মতো কেন? কিন্তু আল্লাহর তায়ালার অশেষ রহমত।

তিনজন ব্যক্তি ছাড়া দুনিয়ার সবাই জানতে পারবে সন্তান সাদিকুর এর। গোপন থেকে যায় আসল সত্য টা। বিয়ের দুই বছর হয়ে যায় বাচ্চা রা ও বড়ো হয়ে উঠছে এখন হাঁটতে পারে একটু একটু। হঠাৎ করেই আরাফাত আর তন্বীর ডিভোর্স হয়ে যায়। তাদের মধ্যে হঠাৎ করেই বনিবনা কম দেখা যাচ্ছিল। মাঝে মাঝেই ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া যেত শেষমেশ ডিভোর্স হয়ে যায়। আরাফাত তন্বী কে বিয়ে করেছিল সম্পত্তির লোভে। এদিকে তন্বীর বাবা মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করার জন্য ত্যাজ্য করেছে এজন্য সব কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আরাফাত এসব জানতে পেরে ঝগড়া করত নিয়মিত। তন্বী এসব সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্সের কথা বলে। দুজনের সিদ্ধান্তে ডিভোর্স হয়ে যায়। তন্বীর বাবা মেয়ের ডিভোর্স এর খবর পেয়ে মেয়েকে নিতে আসে খুশি হয়ে।

বাচ্চাদের পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। বাসায় বড়ো করে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। এর মাঝে সাদিকুর এর সাথে মৌমিতার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সহজ হয়ে উঠেছে। একটা সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করছে ওরা। মৌমিতা এখন শুধু একটা কথাই ভাবে আরাফাত সেদিন ওকে মেনে না নিয়ে ভালোই করেছে। ওর মতো জানোয়ার সাথে ঘর করার থেকে মৃত্যু শেয় এর মধ্যে আরাফাত আরো একটা বিয়ে করেছিল কিন্তু সেটাও টিকে নি। টিকবে কি করে ওর যে চরিত্র কোন মেয়ে জেনে শুনে ওর সাথে সংসার করবে নাকি। অসংখ্য মেয়েদের সাথে ওর চলাফেরা। আর কত মেয়ের সাথে যে খারাপ সম্পর্কে আছে আল্লাহ তাআলা জানেন।

এই বাসায় এসে ওর চালচলন দেখে মৌমিতা খুব প্রশান্তি অনুভব করে। ওর মতো শয়তানের থেকে ও বেঁচে গেছে।
কিন্তু শয়তান টা এখন আবার ওর দিকে কু নজর দিয়ে তাকায়। মাঝে মাঝে একা পেলে ক্ষমা চায়। মন চায় তখন ঠাঁটিয়ে দেই। কিন্তু মৌমিতা কথা বলে না। যতটা বলা দরকার সবার সামনে বলে দেবর হিসাবে।
জায়ান আয়ানের দিকে ইদানিং আরাফাতের খুব মায়া বেড়েছে। মাঝে মাঝেই দেখি ওদের কোলে তুলে আদর করছে। ওদের কাছে যেতে দেখলেই মৌমিতা ওদের টেনে নিয়ে যায়।

” ওরা কিন্তু আমার ও সন্তান তুমি এইভাবে ওদের আমার থেকে দূরে রাখতে পারো না।”
মৌমিতা রক্ত চোখে তাকিয়ে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বলল,,” ওরা সাদিকুর এর সন্তান। এটাই সত্যি এটাই সত্য হয়ে থাকবে।”বলেই চলে গেল।
মৌমিতা চিন্তায় বিভোর ছিল তখনি সাদিকুর এর কথায় ঘোর কাটে ও সাদিকুর এর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে।
জন্মদিনের কেক কেটে দুজনেই বাবা মাকে খাইয়ে দেয়। ভীড়ের মধ্যে থেকে আরাফাত মৌমিতা কে টেনে আড়ালে টেনে নিয়ে আসে।

” এসব কি ধরনের অসভ্যতামি? আপনি আমাকে টেনে এখানে নিয়ে এলেন কেন ছাড়েন বলছি।”
” তুমি আমার কাছে ফিরে না এলে সবাইকে জানিয়ে দেব জায়ান, আয়ানের বাবা আমি। প্রমাণ হিসেবে টেস্ট করাবো।”
রাগে মৌমিতা ঠাস করে থাপ্পড় মারতে চাইল। আরাফাত হাত ধরে বলল,,” ভুল করেও আমায় মারার চেষ্টা করবে না। আমি কিন্তু সব ফাঁস করে দেব তখন দেখব মুখ কিভাবে দেখাও। তার থেকে ভাল আমার কথায় রাজি হয়ে যাও। আমি তুমি আর আমাদের সন্তান সবাই মিলে সুখের সংসার করব।”

” মনে আছে আপনার পায়ে পর্যন্ত পড়েছিলাম আপনি কীভাবে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।”
” তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। তোমার মর্ম বুঝি নি। এখন তো চাইছি তুমি ফিরে আসো প্লিজ।”
” জীবনে ও না। আমি সাদিকুর কে ভালবাসি।”
আরাফাত মৌমিতা কে জোর করে রুমে নিয়ে দরজা আটকে দেয়। জোর করে মৌমিতার হাতে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। মৌমিতা চিৎকার করছে। কিন্তু বাইরে জোরে জোরে গান বাজছে
মৌমিতার চিৎকার কারো কানে যাচ্ছে না।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আরাফাত মৌমিতার শাড়ি টেনে খোলে ফেলে। মৌমিতা কোন উপায় পাচ্ছে না কিভাবে নিজেকে এই নরপশুর হাত থেকে বাঁচাবে।

তখনি দেখতে পায় ট্রি টেবিলের উপর গ্লাস মৌমিতা সেটা আস্তে করে হাতে নেয়। আরাফাত তখন ওর ব্লাউজ খোলার চেষ্টা করছে। ও গ্লাস নিয়ে জোরে আরাফাতের মাথায় বারি দেয়। আরাফাত বারি খেয়ে মৌমিতার গায়ের উপর থেকে সরে এসে উঠে বসে মাথায় হাত দিয়ে। মৌমিতা দরজা খুলতে গিয়ে ও পারে না শয়তানটা আবার ছুটে এসে ওকে আটকায়। পাশ থেকে ফুলদানি নিয়ে আরাফাতের দিকে ছুড়ে মারে। আরাফাতের কপাল বেয়ে গলগলিয়ে পড়ছে ও ওভাবেই বসে পড়ে বিড়বিড় করে বলে,,” আমি সবাইকে জানিয়ে দেব জায়ান আয়ান তোর অবৈধ সন্তান সবাই তোর আর তোর সন্তানের দিক থুথু ফেলবে।”

দরজা খুলতে গিয়েও মৌমিতা থেমে যায়। এগিয়ে এসে আরাফাত কে বলে,,” আমার সন্তানদের সুখ কেড়ে নিতে চাস? পারবি না তুই বেঁচে থাকলে না সবাই জানবে। আজ তোকে নিজ হাতে খুন করব আমি। দেখি কিভাবে আমার ছেলেদের দিকে নজর দিস।”
সন্তানের জন্য একজন মা কতটা সাহসী হতে পারে আরাফাত বুঝতে পারে নি। ও হাসছে মারার কথা শুনে।
এদিকে মৌমিতা টেবিল লাইট দিয়ে জোরে আরাফাতের মাথায় আঘাত করে। আরাফাত বসা থেকে ঠাস করে শুয়ে পড়ে। নিভু নিভু চোখ তাকিয়ে আছে মৌমিতার দিকে। মৌমিতা বিছানায় বসে তাকিয়ে আছে আরাফাতের দিকে।

” আমি খুন করেছি। শয়তান নিঃশেষে করেছি। ভাল কাজ করেছি।”
জানালার ফাঁক দিয়ে ভেতরে সমস্ত ঘটনা দেখে জায়ান চিৎকার করে উঠল। সাদিকুর এসে ছেলের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। জায়ান ভয়ে কাঁপছে। হাত দিয়ে মা মা খুন এসব বলছে। সাদিকুর দরজা ভেঙে যা দেখল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। মৌমিতা আরাফাতের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে ওকে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,,” ওকে আমি খুন করে ফেলেছি ও কি বলছিল জানো সন্তানের আসল পরিচয় জানিয়ে দিবে। এটা হতে দেওয়া যায় না বলো। আমি ঠিক করেছি না।”

সাদিকুর মৌমিতার শরীরে শাড়ি জড়িয়ে বলল,,” তাই বলে মেরে ফেললে আমার ভাইকে।”
সাদিকুর এর বাবা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেয়।
” বাবা আপনি পুলিশে কেন খবর দিলেন।”
” আমার ছেলের খুনিকে আমি পুলিশে দেব।”
” ও আমার স্ত্রী।”
” তোমার স্ত্রী বলে তো আমি আমার ছেলের খুনিকে ছেড়ে দিতে পারি না।”

সেই মুহূর্তেই পুলিশ ধরে নিয়ে যায় মৌমিতা কে। মৌমিতা পাগলের তো খালি বলছিল বিড়বিড় করে,, আমি একদম ঠিক করেছি। আমি খুন করেছি। কাউকে আমার সন্তানের সুখ কেড়ে নিতে দেব না।
নিজের মুখে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বড়ো শাস্তি না হলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। কিন্তু এক মাসের মধ্যে সবাই বুঝতে পারে মৌমিতা আর স্বাভাবিক নাই।‌ নিজের হাতে খুন করলেও ও এতো বড়ো শক নিতে পারেনি ও পাগলের মতো আচরণ করতে লাগে। তখন ও মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করা হয় এসব দেখে অনেক কষ্টে সাদিকুর চিকিৎসা বাসায় রেখে করতে চায় বলে জানায়। অনেক ছুটাছুটির উপরমহল থেকে রাজি হয়।বাসায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসা ও চলছিল তারপর হঠাৎ,,,”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৫ (২)

জায়ান থেমে গেছে।
তৃষ্ণা জায়ানের হাত ধরে বলল,,” চিকিৎসা তো চলছিল তারপর কি হয়েছিল। চিকিৎসা বন্ধ করে দিলেন কেন?”
“খুব ঘুম পাচ্ছে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না।”
তৃষ্ণা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,” আচ্ছা এখানে না রুমে আসুন।”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৩৭ (১)