গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ২৫

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ২৫
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী

কলেজ ক্যাম্পাসে স্যার হয়ে অন্য একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রাখা কোন ধরনের ভদ্রতা। কথা’টা মাথায় উঠতে’ই ফাইজা কড়া কন্ঠে বলে উঠলো…
–আপনি কেনো কলেজ ক্যাম্পাসে একটা মেয়ে’কে জড়িয়ে ধরবেন। লজ্জা করে না আপনার?
ফাইজার কথায় ফারদিন হা করে চেয়ে রইলো ওর দিকে। এই মেয়েকে এতক্ষন যাবৎ কি বুঝালো? আর সে কি বললো? ভাবতেই ফারদিনের নিজের মাথার চুল নিজের ছি’ড়তে ইচ্ছে করছে। তাও নিজেকে সামলে ফাইজার হাত দুটো টেনে নিতে গিয়েও থেমে গেলো। ফাইজা’কে একটু রাগানোর জন্য ভাব নিয়ে বলতে শুরু করলো…..
–একটা স্টাইলিশ মে’য়ে জড়িয়ে ধরেছিলো তো তাই আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি জান……

কথা শুনেই ফাইজা চোখ বড় বড় করে ফারদিনের দিকে তাকালো। ফারদিনের চেহারা শান্ত দেখে রেগে সামনে থাকা টিস্যু বক্স’টা ছুড়ে মা/রলো ফারদিনের দিকে। ফারদিন টিস্যু বক্স’টা কেস ধরে নিয়ে আবারো পূর্বের গতীতে বলে উঠলো…..
–রাগ করছো কেনো জান? সত্যি বলছি তিথী’কে দেখতে জোস লাগে…..
ফাইজা এইবার রেগে উঠে গিয়ে ফারদিনের কলার চে’পে ধরে ফারদিনের দিকে একটু ঝুঁকে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো…..
–আমি ছাড়া অন্য মেয়ের দিকের নজর দিলে তোর চোখ দুটো আমি তুলে নিয়ে বক্সে ভরে ফ্রীজে রেখে দিব। মাইন্ড ইট……
বলেই রেগে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে। ফাইজা’র এমন হু’মকি দেখে ফারদিন শব্দ করে হেসে উঠে বলে উঠলো….
–মহারানী রেগে গেছে…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই রেস্টুরেন্টের বিল পে করে ছুটলো ফাইজার পিছু পিছু। ফাইজা গাড়ি’তে উঠে চুপ চাপ বসে আছে। ফারদিন ও এসে কোনো কথা না বলে গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজা’যে খুব রেগে আছে তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ফাইজা’কে আরেক’টু রাগানোর জন্য ফারদিন হালকা কেশে বলতে লাগলো…..
–তিথী আমাকে কত বছর ধরে ভালোবাসে দেখেছো। চোখের সামনে তিথীর মতো একটা ওয়াও মেয়ে থাকতে অন্য একজনের নজর দেই কি করে বলো জান?
রাগে ফাইজার শরীর জ্বলে উঠলো। মন চাচ্ছে এক্ষুনি ফারদিনের মাথা’টা ফা’টিয়ে ফেলতে। দাত কড়মড় করে চেয়ে রইলো বাইরের দিকে। ফারদিন মুখ টিপে টিপে হাসচ্ছে। ফারদিন এক হাতে ফাইজার এক হাত টেনে বুকে চে’পে ধরলো। ফাইজা হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই ফারদিন বললো…..
–তুমি ছাড়া দ্বিতীয় মেয়ে আমার লাইফে কোনো দিন আসবে না জান…….
ফারদিনের কথায় ফাইজার অভিমানী মন’টা নিমিশেই ভালোবাসায় ছেয়ে গেলো। জড়োসড়ো হয়ে ফারদিনের বুকে গুটিয়ে গেলো। নিচু স্বরে বলতে লাগলো…..

–আপনাকে ভালোবাসার অধিকার শুধু মাত্র আমার……
ফাইজার সাথে তাল মিলিয়ে ফারদিন ও বলে উঠলো……
–তোমাকে ভালোবাসার অধিকার এক মাত্র আমার ছাড়া আর কারোর নেই জান…….
ফাইজা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে রইলো ওর বুকে।
–লং ড্রাইভে যাবে….
ফারদিনের প্রশ্নে ফাইজা অন্যমনস্ক হয়ে উওর দিলো…..
–আপনি নিলে আমি সব জায়গায় যেতে রাজি…..
ফাইজার উওরে ফারদিন হালকা হাসলো। আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে ফারদিন। আর ফাইজা চোখ বন্ধ করে রেস্টুরেন্টের কথা গুলো ভাবছে। বার বার না চাইতেও একটা চিন্তা মাথায় এসে পড়ছে ওর। তিথী ওদের মাঝে কোনো ঝামেলা তৈরি করবে না তো? হারিয়ে ফেলবে না তো ফারদিনকে? ভাবতেই ওর বুকের ভেতর ব্যাথা শুরু হলো। নেত্র যুগলে জলধারা এসে হা’না’ দিলো।

রেস্টুরেন্টে ফারদিন ওর এতদিনের সব ব্যবহারের কারন বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য শান্ত কন্ঠেই বলতে লাগলো।
–কলেজে যেই মেয়ে’টা আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। ওর নাম তিথী। একটা সাইকো মেয়ে। আই থিংক ওর মাথায় প্রবলেম আছে। না হলে একটা মেয়ে এত’টা পাগ’লামি করতে পারে’না। কলেজের ফাস্ট দিন থেকে ও আমার পেছনে আঠার মতো লেগে ছিলো। আমি শুধু ও’কে কেনো? কোনো মেয়ে’কেই সহ্য করতে পারতাম না। তিথী আমার এই দিক’টা জানতো। তাই নিজেও আমার কাছাকাছি বেশি আসতো না। তবে হুটহাট যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরতো। এই বিষয় গুলো খুব বেশি বিরক্তিকর ছিলো আমার জন্য। কত শত থা’প্প’ড় যে খেয়েছে আমার হাতে তার হিসেব নেই।

কিন্তু তাও আমার পিছু ছাড়লো না। কলেজ শেষ করে আমি যেই ভার্সিটি’তে ভর্তি হলাম। তিথী ও সেখানে গিয়ে ভর্তি উঠলো। খুব বেশি বিরক্ত ছিলাম ওর প্রতি। আমাকে যেসব মেয়ে আজকে এসে লাভ লেটার বা প্রোপজ করতো। ঠিক তার পরের দিন থেকে সেই মেয়েগুলো’কে আমি কলেজে বা ভার্সিতে দেখতে পেতাম না। খুব অবাক করা বিষয় ছিলো আমার কাছে এটা? এক সময় মেয়েরা আমাকে দেখলে নিজ ইচ্ছায় এক প্রকার পালিয়ে যেতো। কেনো যেনো এইসব কারন আমার কাছে অদ্ভুত লাগতো। কিন্তু মেয়েদের প্রতি ইন্টারেস্ট না থাকায় আমি এত কিছু ভেবে দেখি’নি৷ এভাবেই ভার্সিটি কলেজ শেষ হলো। তিথী’কে কোনো ভাবেই ছাড়াতে পারিনি নিজের থেকে। সব সময় গ্যাং নিয়ে ঘুরে বেড়াত। একটা মেয়ে হয়েও ওর মধ্যে মেয়েলী ব্যাপার গুলো খুব কম ছিলো। ভার্সিটি শেষ করে ও চলে গেলো বাহিরে। তখন মনে হলো আমার জীবন থেকে একটা আপদ বিদায় হয়েছে।
বলেই একটু হাসলো ফারদিন। ফাইজা চেয়ে চেয়ে সব’টা শুনছে। ফারদিন একটু চুপ থেকে আবারো বলতে শুরু করলো…..

–ও বাহিরে চলে যাওয়ার পর। বাইরে বের হলে মনে হতো আমাকে কেউ প্রতি মুহূর্ত ফলো করে। কিন্তু কোনোদিন সন্দেহভাজন কাউকে দেখতাম না। কেমন অস্বস্তি হতো। এই অস্বস্তির কারন খুঁজে পেতাম না। এর মধ্যে তুমি এলে আমার জীবনে। তোমাকে পেয়ে এইসব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম। যেহেতু তোমার বাবার শর্ত অনুযায়ী তোমার থেকে দূরে থাকতাম। সেহেতু ওইসব কোনোদিন তোমার কাছাকাছি যাই’নি। দূর থেকেই প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত তোমাকে আগলে রাখতাম। তোমার ছায়া হয়ে থাকতাম। দূর থেকে তোমাকে দেখে নয়ন জুড়াতাম।

কিন্তু আস্তে আস্তে তোমার প্রতি এত’টাই আসক্ত হয়ে উঠছিলাম। যে তোমার থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। তাই কাঠখড় পুঁড়িয়ে কলেজের জব’টা নিয়ে’ই নিলাম। যেদিন তুমি আমাকে ভরা রাস্তায় “ভালোবাসি” বললে সেদিন আমি কত’টা খুশি হয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারব না। মন চাচ্ছিলো তোমাকে জড়িয়ে ধরে লক্ষ চুমু’তে ভরিয়ে দেই। কিন্তু,সেদিন আমি প্রথম বারের মতো কোনো একজনের হিংস্র চাহনী দেখেছিলাম আমাদেদ উপর। তিথী’র ব্যাপারে ততদিনে খোঁজ নিয়ে একটা বিষয় জেনেছিলাম। যেই মেয়েগুলো আমার কাছে ঘেষার চেষ্টা করতো তাদের প্রত্যেক’কে তিথী জঘন্য ভাবে মে-রে হসপিটালে ভর্তি করাতো। দুইজন ওর সাথে একটু বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছিলো বলে ওই মেয়ে দুটো’কে নির্মম ভাবে ম-রতে হয়েছিলো ওর হাতে। তোমাকে পেয়ে এইসব কিছু ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু সেদিন যখন ও’কে ওই খানে হিংস্র বাঘিনী রুপে দেখেছিলাম সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম। ওর নেক্সট টার্গেট হবে তুমি।

আর এইজন্যই সেদিন সবার সামনে ওই আচরন করেছিলাম। প্রথম বারের মতো তোমার গায়ে হাত তুলেছিলাম। তারপর থেকে ও’কে কখনো দেখিনি আমি। কিন্তু ওর ঠিক করা লোক আমাকে আর তোমাকে প্রতি মুহূর্ত ফলো করতো। তাই না চাইতেও তোমাকে বাঁচানোর জন্য সবার সামনে তোমার সাথে মিস বিহেভিয়ার করতাম। কিন্তু, ওইদিন ক্যাম্পাসে সবার সামনে যখন জড়িয়ে ধরে ভালোবাসি বলেছিলে তখন থেকে আমি সব ভয় কা’টিয়ে নিয়েছিলাম। তোমাকে আগলে নিয়েছিলাম। একদিকে কাকন আর আমার বাবা আরেক দিকে এই তিথী সব মিলিয়ে আমি খুব বেশি চা’পে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার এক্সিডেন্টের পর তিথীর লোক বা তিথী’ কারোর কোনো খোঁজ পাই’নি আমি। তাই ভেবেছিলাম ও আমার পিছু ছেড়ে দিয়েছে৷ তাই ঠান্ডা মাথায় কাকনদের ব্যবস্থা করলাম। কিন্তু এই আপদ’টা হুট করে আবার এসে জুটবে আমি বুঝতেই পারিনি। আর এইবার ও খুব বেশি আটঘাট বেঁধে নেমেছে। না জানি ও কিভাবে কি ক্ষতি করে বসে? কিন্তু আমি থাকতে তোমার গাঁয়ে এক বিন্দু আঁচড় কেউ লাগাতে পারবে না। ইটস মাই প্রমিস……

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ২৪

গাড়ি থামিতে’ই ফাইজার ধ্যান ভাঙ্গলো। হঠাৎ করে গাড়ি থেমে যেতে দেখে মাথা উঁচু করে সামনে তাঁকাতেই দেখলো কয়েক’টা লোক হাতে লা/ঠি, ছু’ড়ি নিয়ে দাড়ানো। লোক গুলো’কে দেখেই ফাইজা ভয়ে ফারদিনে শার্ট খামচে ধরে ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো….
–এরা কারা? গাড়ি থামালেন কেনো আপনি?
লোক গুলো’কে দেখে ফারদিন ও খানিক’টা ঘাবড়ে গেলো। কারা এরা? কেনো হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো? ফারদিন গাড়ি থেকে নামার জন্য তৈরি হতেই ফাইজা ওকে আরো শক্ত করে ধরে বলে উঠলো….
–নামবেন না? ওরা যদি কোনো ক্ষতি করে দেয়? প্লিজ নামবেন না…..
ওদের কথার মাঝে’ই হঠাৎ কাচ ভাঙার শব্দে ওরা দুজনেই কেঁপে উঠলো। ফারদিনের গাড়ির উপর জোরে বা’ড়ি পড়তেই সামনের কাঁচ’টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। কোনো অশনি ঘটতে চলছে আবারো?

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ২৬