গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৫

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৫
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী

দোলনায় বসে আছে ফাইজা। আর পেছন থেকে দোল দিচ্ছে ফারদিন। ফাইজা চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত’ট উপভোগ করতে লাগলো। চোখ বন্ধ করেই আবদারের স্বরে বলে উঠলো…..
–একটা গান শুনাবেন মিস্টার অভদ্র? তবে অবশ্যই গান’টা আমি সিলেক্ট করে দিব…..
ফাইজার আবদারে ফারদিন মুচকি হেসে ঠোঁট কামড়ে বললো…..
–একটা রোমান্টিক গান হলে কিন্তু দারুন হবে। সাথে হালকা-পাতলা রোমান্স ও করতে পারব। কি বলো জান?
ফাইজা মুখ’টা সামান্য ফুলিয়ে বলে উঠলো…..
–নাহ আমার ফেবারিট গান’টা গাইতে হবে প্লিজ…..
ফারদিন ভাবুক স্বরে বলে উঠলো….
–তুমি কখনো আমাকে বলো’নি তোমার প্রিয় গান’ কি? তাহলে নাম না বললে কি করে গাইব?

ফাইজা গানের নাম’টা বলতে’ই ফারদিন চিন্তায় পড়ে গেলো। কারন এই গান’টা ও শুনলেও সুর ভালো করে উঠাতে পারেনা। তাও চেষ্টা করতে লাগলো। ফাইজা দোলনায় দোল খাচ্ছে আর ফারদিন ওর সামনে’ই একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে গিটারে সুর তুলতে লাগলো। বাসার থেকে বের হওয়ার সময় কাঁধে করে গিটার নিয়ে এসেছিলো। এই আবদার’টাও ফাইজা’র। কিন্তু হাতে যেহেতু ব্যাথা তাই গিটার বাজাতে বারন করেছে ফাইজা। কিন্তু ফারদিন সে কি আর কারোর কথা শোনার পাত্র৷ ব্যাথা যেহেতু বাম হাতে তাই মনের মাধুরি মিশিয়ে সুর তুলে গাইতে শুরু করলো…….
“চলতি সময় থমকে দাড়ায়”
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়””
এইটুকু গেয়ে ফাইজার সামনে এসে ওর হাত’টা শক্ত করে ধরে হাতের উল্টো পাশে চু’মু খেয়ে আবার গাইতে শুরু করলো।
কি মায়ার কোন সে নেশায়…
বারে বারে মন ছুঁতে চায়
চেনা মুখ ঘোর পাঁক খায়..
চোখের পাতায়……
এইটুকু গেয়ে এইবার ফাইজার চোখের পাতায় ডিপলি চু’মু খেয়ে আবার উঠে গিয়ে গিটার’টাকে কাঁধে ঝুলিয়ে গাইতে শুরু করল…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই…..
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই….
এইটুকু গেয়ে ফাইজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে’ই ফাইজা ফারদিনের’ হাত’টা ধরতে’ই ফারদিন এক টানে ফাইজা’কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফারদিনের গলা জড়িয়ে ধরে ওর চোখে চোখ রেখে এইবার ফাইজা গাইতে শুরু করলো…….
“” তুমি আমি আর নিরব’তা”
শুনতে পাও এই মনের কথা..
ঘোর আঁধারে ও তোমায় দেখি…
তুমি কবিতা ও তুমি কবি……
বলে ফারদিন’কে ছেড়ে দিতে’ই ফারদিন আবারো গিটার বাজানো শুরু করলো। ফাইজা একটু সামনে এগিয়ে গাইতে শুরু করলো….
আজ কাল মন ডুবে যায়..
অনুভবে তুমি ভাসো তাই…
এই আমি না চেনে আমায়
চেনায় না…..
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই…..
ফাইজা এইটুকু গাইতে’ ফারদিন ও সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে শুরু করলো…..
আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার তোমাকে চাই…..
গান’টা শেষ হতে’ই ফাইজা’ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ফারদিন’কে। ফারদিন ও ফাইজা’র কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে উঠলো…..

–যতবার এই পৃথিবী’তে জন্মানোর সুযোগ পাবো ততবার যেনো শুধু তোমাকে পাই। আমি বার বার বহুজনম শুধু তোমাকে চাই জান……
ফাইজা লাজুক হেসে ফারদিনের তালে তাল মিলিয়ে বললো…….
–আমি বার বার লক্ষকোটি বার আপনাকে চাই জনাব…….
বলে ফারদিনের গলায় চুমু খেয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে ফারদিনের বুকে মুখ লুঁকালো। আর ফাইজার বোকা কান্ডে ফারদিন উচ্চস্বরে হেসে দিলো। হঠাৎ কয়েকজনের জোরে শিস বাজানোর সাথে হাত-তালির শব্দে ফারদিন ফাইজ দুজনে’ই হকচকিয়ে উঠে সামনে তাঁকাতেই দেখলো চার-পাঁচটা ছেলের সাথে তিনজন মেয়ে। ওরা সবাই একসাথে দাড়িয়ে শিস বাজাচ্ছে আর হাততালি দিচ্ছে। ফারদিন ফাইজা ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাঁকাতেই ওরা সামনে এগিয়ে আসলো। ওদের মধ্যে থেকে একজন মেয়ে এগিয়ে এসে ফারদিনের দিকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলো…….

–আমি নেহা আর ওরা সবাই আমার ফ্রেন্ড। আমরা সবাই মিলে এইদিক’টায় মিউজিক ভিডিও করার জন্য এসেছিলাম। আর এসে যে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখব সত্যি ভাবিনি। বিশ্বাস করুন আপনাদের দুজন’কে একসাথে চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর লাগছে। আমরা ওইদিক’টায় ছিলাম বলে আপনারা হয়তো খেয়াল করেন’নি। যখনি আপনি এই আপু’কে দোল দিচ্ছিলেন তখন দৃশ্য’টা খুব বেশি সুন্দর লাগছিলো। যেহেতু ক্যামেরা হাতে’ই ছিলো তাই আপনাদের পারমিশন না নিয়ে’ই কতগুলো ছবি তুলে নিয়ে ভিডিও করা শুরু করলাম আর এতক্ষনের পুরো’টা সময় আমরা ক্যামেরায় বন্দি করে নিয়েছি। উই আর সো সরি পারমিশন ছাড়া’ই ছবি ভিডিও করার জন্য…….
মেয়ে’টার কথা শুনে ফারদিন হালকা হাসলেও ফাইজা হা করে তাঁকিয়ে আছে। লজ্জায় ওর মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তারমানে এতক্ষনের সব কিছু ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে। ইসস কি লজ্জা? ফাইজা লজ্জায় ফারদিনের পিছে মুখ লুকালো। ফাইজার লজ্জা পাওয়া দেখে ওরা সবাই এক সাথে হেসে দিলো। ফারদিন কিছুক্ষন ওদের সাথে কথা বলে ছবি গুলো নিজের ফোনে নিয়ে নিলো। ছবি আর ভিডিও গুলো আসলেই খুব সুন্দর হয়েছে। ওরা যাওয়ার সময় ফারদিন আর ফাইজার সাথে একটা সেল্ফী তুলে নিলো। ওরা সবাই চলে যেতে’ই ফাইজা কোমরে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টি’তে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো….

–আপনার সাথে থাকার ফলে দিন দিন আমিও নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে আর থাকব না আপনার সাথে……
বলে সামনে হাটা ধরলো। আর ফারদিন হা করে তাঁকিয়ে আছে। ও করলো টা কি? ফারদিন ফাইজা’র পিছু পিছু হাটছে আর বলছে…..
–ও জান। জান। ও জান। একটু বলো না আমি কি করেছি। জানননন……
ফারদিনের শেষে জান শব্দ’টা একটু টেনে জোরে বললো। ফাইজা এইবার কানে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….
–এই হাম্বার মতো রাস্তা ঘাটে চেঁচাচ্ছেন কেনো? মানুষ হাম্বা মনে করে গোয়াল ঘরে নিয়ে বেঁধে রাখবে। আইছে জান। মনে হচ্ছে তার জান কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যতসব আজাইরা ঢং। একদম আসবেন না আমার পিছু পিছু। শা”লা খা’টাশ লজ্জা শরম কিছু নেই। আমার পিছু পিছু আসএ একদম ঘুষি মে/রে নাকের বারান্দা ছুটিয়ে দিব……
বলে বড় বড় পা ফেলে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ফারদিনের মুখ’টা এতক্ষনে হা হয়ে আছে। এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলো কোনো কারন ছাড়া’ই? কিসব বলে গেলো? খা’টাশ’ হাম্বার। উফফ আর ভাবতে পারলো না ফারদিন। মুখ ফুলিয়ে ফোস হয়ে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। হাত দুটো কোমরে রেখে ঘাড় কাত করে একবার ফাইজার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে একটু মুচকি হাসলো। আর মনে মনে ভাবলো “এই মেয়ে’টা কবে যেনো ও’কে পাগল বানিয়ে ফেলে”। ভাবতে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে মেয়েলী ভঙ্গী’তে অভিনয় করে বলে উঠলো…..
–হায় মা’রডালা। কি লজ্জা…….
এইটুকু বলেই নিজেই জোরে শব্দ করে হেসে উঠলো। একা একা’ই কোমরে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে। তা ফাইজা দূর থেকে খেয়াল করে ওর দিকে রাগী চাহনী দিয়ে আছে। আর ফারদিন হাসতে হাসতে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

জেহের নিজের রুমে বসে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো। এমন সময় ওর ফোন’টা বেজে উঠতে’ই স্কীনের থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের দিকে চোখ দিতে’ই চেনা নাম’টা দেখে একটু হেসে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতে’ই ওই পাশ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসলো। কান্নার কারন’টা জেহের বুঝতে পারলো। তাই একটু মজার স্বরে বললো…..
–বাচ্চা’টা কি এখনো দুপুরের বিষয় নিয়ে ভাবছে। আরজা লিস্টেন টু মি,তুমি এখনো বেশ ছোট। যত বড় হবে তত তোমার ভালো লাগা বাড়বে। চাহিদা বাড়বে। তোমার মধ্যে ম্যাচুরিটি আসবে। তখন তুমি আজকের দিনের জন্য পস্তাবে। তাই আগের থেকেই তোমাকে বুঝাচ্ছি আবেগ’টাকে লক করো। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই……….
জেহের কথা গুলো বলে উঠতে’ই আরজা কান্নারত অবস্থায় চেঁচিয়ে ওপাশ থেকে বলে উঠলো…..

–খুব শিঘ্রই আমার বিয়ে। আপনাকে আর আজকের পর কেউ বিরক্ত করবে না। আমি বাচ্চা, ইমম্যাচুর, আমার ভালোবাসা’টা আবেগ তাইনা। খুব ঠান্ডা মাথায় আমাকে অপমান করলেন তো। ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা শুধু আমি জানি তাই আপনার করা অপমান গুলো মেনে নিলাম। আপনার উপর কোনো অভিযোগ নেই। ভালো থাকবেন আপনি। আজকের পর আর কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। শুধু একটা কথা মনে রাখুন” আমি সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসি জেহের” খুব বেশি ভালোবাসি” আমি কোনো দিন অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। দরকার পড়লে আমি সুইসাইড করব। বাড়ি ছাড়ব তাও অন্য কাউকে বিয়ে করব না।
বলেই কাঁদতে লাগলো। তখনি এক বিকট শব্দে ফোন’টা কেটে গেলো। জেহের ঠিক বুঝতে পারলো এই মুহূর্তে অপরপাশের মানুষ’টা ফোন’টাকে ছুড়ে মে’রেছে। আরজার কথাগুলো শুনে জেহের মন’টা নিমিশেই খারাপ হয়ে গেলো। নিজে নিজেই বলে উঠলো…..

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৪

–একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেলো নাকি ব্যাপার’টা। যদি কিছু করে বসে…. ওহ নো…….
বলেই জেহের ফোন’টাকে পকেটে ঢুকিয়ে এক প্রকার দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো।

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৬