গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৬

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৬
লেখনীতে জেনিফা চৌধুরী 

সুই’সা’ইড করতে যেয়ে গলায় দড়ি প্যাঁচিয়ে কোনো মেয়ে ফিল্টার লাগিয়ে সুন্দর পোছ দিয়ে ছবি তুলতে পারে ভাবতে’ই জেহেরের মাথা ঘুরে যাচ্ছে। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে পর্দায় মুখ লুঁকিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরজার কান্ড দেখছে জেহের। আর আরজা চেয়ারের উপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে সুন্দর সুন্দর কয়েক’টা ছবি তুললো। কিছু বিভিন্ন স্টাইলে তুললো। আর কিছু ছবি’তে মুখ’টাকে অসহায় করে চোখে ড্রপ দিয়ে পানি বানিয়ে তুলছে। এইসব দেখেই জেহেরের মন চাচ্ছে নিজেই ওই দড়ি’তে ঝুলে পড়তে। জেহের জানতো এই মেয়ে জীবনে সুই’সা’ইড টুইসাইড করব না। তাও ওইযে মন মানতে চায়’নি তাই ছুটে এসেছিলো। আর ছুটে এসে এইসব কান্ড দেখবে ভাবতে’ই ওর চেহারার রং পাল্টে যাচ্ছে। ছবি তোলা শেষ হতে’ই আরজা সাবধানে চেয়ার থেকে নেমে দড়ি’টা’কে খুলে রেখে দিলো। তারপর বিছানায় বালিশ কোলে নিয়ে বসে মুখে দুষ্টু হাসি রেখে বলে উঠলো…..

–মিস্টার জেহের আদনান আমাকে বাচ্চা বলা। আমার ভালোবাসা নাকি আবেগ। এখন বুঝবেন আবেগ কাকে বলে। আবার বড় মুখ করে বলছেন অন্য কাউকে ভালোবাসি। ওই শা’ক চু’ন্নি’কে একবার পাই ন্যাড়া করে রাস্তায় ছেড়ে দিব। আমার জেহেরের দিকে নজর দেওয়া শুধু একবার জানতে পারি কে তার ওই পেয়ারি ভালোবাসার মানুষ তারপর দেখাব মজা। আর মিস্টার জেহের আদনান আজ যদি আপনাকে দিয়ে ভালোবাসি শব্দ’টা না বলাতে পারছি তাহলে আমার নাম ও আরজা না। হুউউ…..
বলে আঙ্গুল দিয়ে নাক’টা ঘষে ফোস করে একটা নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর পূর্বের মতো কাঁদো কাঁদো ফেস করে কাউকে কল দেওয়ার জন্য ফোন’টা হাতে নিলো। জেহের বুঝতে পারলো ফোন’টা ওর কাছে’ই আসবে তাই আগেই দৌড়ে আরজা রুমের সামনে থেকে চলে আসলো। আরজা’র কল’টা রিসিভ করে কানে ধরতে’ই আরজা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো……..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—আমি চলে যাচ্ছি। আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করব না। শুধু শুনে রাখুন আমার মৃ’ত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন আপনি আর আপনার গার্ল ফ্রেন্ড। ভালো থাকবেন..
আরজার কথাগুলো শুনে জেহের হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে না পেরে এক মুহূর্তের জন্য কোমায় চলে গেলো। একটা মানুষ এমন অভিনয় করতে পারে। আরে ও তো সিনেমায় কোনো অডিশন ছাড়াই চান্স পেয়ে যাবে। এই মেয়ে’টাকে সারাজীবন কি করে সামলাবো? কথাগুলো ভেবে জেহের আনমনেই বলে উঠলো…..
–ভালোবাসা কাঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না…….
এই মুহূর্তে জেহের কাছ থেকে এমন কথা আশা করে’নি আরজা। ও সু/ইসাইড করতে যাচ্ছে শুনেও কোনো রিয়েক্ট করলো না ভেবেই আরজা ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। আরজার কান্নার শব্দ শুনে জেহের ধ্যান ফিরে এলো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে প্রশ্ন করলো….

–কি হলো কাঁদছো কেনো?
আরজা কাঁদতে কাঁদতে’ই জবাব দিলো…..
–জানেন আজ আমার একটা গান খুব মনে পড়ছে। এইবার প্রশ্ন করেন গান’টা কি তাহলে বলব?
জেহের ও হাবলার মতো মুখ করে প্রশ্ন করলো……
–কি গান বলো?
এইবার আরজা একটু নাক টেনে বেসুরে চেঁচিয়ে গাইতে শুরু করলো….
“বলবো নাকো আর কোনোদিন ভালোবাসো তুমি মোরেএএএএএএ”
বলবো নাকো আর কোনোদিন ভালোবাসো তুমি মোরেএএ..
বলে ছিলে গোওওওওওও ভালোবাসি গোওওওওও……
আর শুনতে পারলো না জেহের। এমন বেসুরে গলায় কেউ গান গাইতে পারে। জোরে চেঁচিয়ে ধমকের স্বরে বলে উঠলো…..

—চুপ। একদম চুপ। আর একটা শব্দ তোমার গলা থেকে যেনো বের না হয়।
জেহের ধমকে আরজা থতমত খেয়ে উঠলো। কি করলো ও? একটা দুঃখের ছ্যাকা খাওয়া গান এই তো গাইতে ছিলো। তারজন্য এভাবে ধমক দেওয়া লাগে। ভেবে আরজা ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো……
—সত্যি আজকের পর আর বলবো না ভালোবাসি। ভালো থাকবেন ফ্যানের ঝুলানো দড়ি’টা ডাকছে আমায়…..
বলে জেহের’কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো আরজা। জেহের এখনো থ হয়ে আছে। একটা মেয়ে এমন পাগল টাইপ কি করে হয়? আরজা ফোন কে’টে ফোন’টাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো……
–এইবার আর আমার চুনাময়না’টাকে আছাড় মা/রব না। আমার এত্ত সাধের মোবাইল ওই ম’ক্কেলের জন্য কেনো আছাড় দিব……
তখন আরজার পুরনো ফোন’টাকে আছাড় মে/রেছিলো। আরজা এইবার খুশিত্ব গদগদ হয়ে বলে উঠলো….

-এখন হবে আসল খেলা। আসুন মিস্টার জেহের আসুন। এসে সিনেমা স্টাইলে বলবেন……
এইটুকু বলে মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে খাট থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে অভিনয় করে বলতে লাগলো…..
–নাহ প্রিয়া থুক্কু প্রিয়া না আরজা। নাহ আরজা না তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি না। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি ম’রতে পারো নাহহহ……
এইটুকু অভিনয় করে নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে নিজের কাঁধে নিজেই চাপ’ড় মে/রে বললো….
–বাহ আরজা বাহ তুই তো খুব ভালো অভিনয় পারিস। খুব শিঘ্রই তুই সিনেমায় চান্স পেয়ে যাবি…..
কথাগুলো বলে ঢং করে একটু লাজুক হাসলো আরজা। এমন সময় দরজা থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো…..
–জ্বী আপনি খুব শিঘ্রই হলিউড সিনেমায় হিরো আলমের সাথে চান্স পেয়ে যাবেন……
চেনা কন্ঠ স্বর শুনেই আরজা থতমত খেয়ে পেছনে তাঁকিয়ে জমে গেলো। জেহের কে দরজায় রাগী ফেস করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরজা চোখ বড় বড় করে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–মৃ”ত্যুর আগে আপনাকে স’চোক্ষে দেখতে পারব ভাবিনি জেহের। আমার সময় শেষ। জোরে জোরে পড়ুন ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না’ইলাইহি রাজিউন…..
এইটুকু বলেই মাথায় হাত দিয়ে ঘুরতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো…..
–নিচে পড়লে শিউর আমার মাঝা কোমড় ভাঙ্গবে। কিছুতে’ই নিচে পড়া যাবেনা….
এইটুকু মনে মনে বলে ঘুরে বিছানার সামনে গিয়ে ধপ করে বিছানায় পড়ে গেলো। আরজা’র কাহিনী বুঝতে না পেরে জেহের ও কিছু’টা ঘাবড়ে গেলো। একটু ভয় পেয়ে জোরে আরজা বলে ডেকে আরজার সামনে গিয়ে বসে ওর মাথা’টা কোলে তুলে নিয়ে পা’গলের মতো ডাকতে লাগলো আরজা’কে। আর আরজা জেহের অস্থিরতা শুনে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছে। জেহের আরজার নাকের সামনে হাত নিয়ে নিঃশ্বাস চেক করলো। এইবার আরজার মুখের দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে দেখলো আরজার চোখ পিট পিট করছে। জেহের খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলো আরজা এখনো নাটক করছে। তাই সুযোগ বুঝে আরজার গালে মশা বলে জোরে একটা থা’প্প’ড় মে/রে বসলো। থা’প্প’ড় খেয়েই আরজা “ও মাগো” বলে উঠে বসে গাল ডলতে ডলতে বলে উঠলো …..

–এত জোরে কেউ থা’প্প’ড় মা/রে? আপনার কি মায়া দরদ বলতে কিছু নেই…..
এইবার জেহের অসহায় মুখ করে বলে উঠলো….
–খুব জোরে লেগেছে তাইনা।
আরজাও জেহেরের সাথে অসহায় ফেস করে মাথা ঝুলালো। যার মানে “হ্যা” খুব জোরে লেগেছে। এইবার জেহের আরজা’কে চমকে দিয়ে আরেক গালে দ্বিতীয় বার থা’প্প’ড় দিয়ে বলে উঠলো….
–আসলে তুমি তো বলেছিলে তুমি সুই/সা’ইড করেছো। আর তখন তোমার গালে একটা ইয়া বড় মশা বসেছিলো তাই ভাবলাম আহারে বেচারি’কে মশা’টা কামড় দিলে খুব খারাপ হবে। তাই, আর কি একটু জোরেই মশা’কে মা/রছিলাম। ভালো করেছি না আরজু বেবিইইই……
আরজা এখনো গালে হাত দিয়ে বোকা বোকা মুখ করে চেয়ে আছে জেহেরের দিকে। জেহের এইবার কিছু না বলে মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে ভ্রু নাচালো। তখনি ফোন’টা বেজে উঠতে জেহের পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরেই আদুরে স্বরে বলে উঠলো…..
–হ্যালো প্রিয়াঙ্কা। বেবি আমি তো তোমার কথা’ই ভাবছিলাম। তোমাকে কত্ত মিস করছিলাম জানো। আই লাভ ইউ বেবি। উম্মাহহহহহ……

বলে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর আরজা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। তার মানে সত্যি জেহেরের গার্লফ্রেন্ড আছে। এইটুকু শুনে’ই আরজার এতক্ষনের সব দুষ্টু’মি বুদ্ধি গুলো হাওয়া হয়ে গেলো। মুখ’টা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। চোখের পাতা গুলো ভারী হয়ে আসলো। গাল বেগে মোটা করে গড়িয়ে পড়তে লাগলো নোনা জল। বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো। এতক্ষনের হাসির আমেজ টা মুখ’ থেকে উধাও হয়ে গেলো। ভেবেছিলো জেহের ও’কে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করছেনা। তাই এতক্ষন ওত সব কিছু নাটক করছিলো। কিন্তু এখন আর কিছু ভাবলো না আরজা জড়ানো কন্ঠে বললো….
–তারমানে আপনি সত্যি অন্য কাউকে ভালোবাসে জেহের ভাইয়া। আমাকে একবার ভালোবাসলে কি হতো? আমি যে আপনাকে সত্যি খুব বেশি ভালোবাসি…..
এইটুকু বলে বালিশে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আর জেহের দরজার আড়াল থেকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো…..

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৫

–দুইদিন পর তোমার বিয়ে। আমি তোমাকে সারাজীবন খুব হাসি খুশি দেখতে চাই ড্রামাকুইন। তাই বিয়ের আগে একটু কান্না করিয়ে নিচ্ছি তার জন্য সো সরি মাই ড্রামাকুইন…….

গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব ৩৭

1 COMMENT

Comments are closed.