গোপন কথা পর্ব ৩+৪

গোপন কথা পর্ব ৩+৪
অনন্য শফিক

নোরা কী করবে না করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।সে অনুভব করলো তার গায়ে যেন আগুন ধরে গেছে! সেই আগুনে সে পোড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে!
সে তিশাকে ডেকে নিলো। এবং বললো,’তিশা,এসব আমার মোটেও ভালো লাগছে না।আমি আর এখানে থাকতে চাই না বোন। এক্ষুনি চলে যেতে চাই এখান থেকে।’
তিশা মুখ কুঁচকে বললো,’কীভাবে যাবে বলো? তুমি তো ফেঁসে গেছো।এখান থেকে তুমি কিছুতেই বেরুতে পারবে না।বড় ভাবী তোমায় বেরুতে দিবে না!’

‘মানে? বেরুতে দিবে না মানে কী?সে কী ডাইনি নাকি?’
তিশা আর চেপে থাকতে পারলো না।সে শব্দ করে হেসে উঠলো।
ফিরোজা বেগমও ভেতর ঘর থেকে এবার চটজলদি এলেন। এসে ওরা যে ঘরের ভেতর ঢুকেছে সেই ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বললেন,’হয়েছে। অনেক বেশি মজা হয়ে গেছে। বেশি মজা ভালো নয় কিন্তু। এবার তোরা বেড়িয়ে আয় বলছি!’
ফিরোজা বেগম কথাটা বলতেই হাট করে ভেতর থেকে দরজাটা খুলে বেড়িয়ে এলো ওরা দুজন।ফাহাদ আর দীপা।ওরা বেড়িয়ে এসে হাসতে হাসতে ভেঙে পড়লো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নোরা এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না। এবার দীপাই গিয়ে ওর হাতটা ধরলো। তারপর বললো,’বোন তোমার সাথে সবাই মিলে অনেক হাসি তামাশা করে ফেলেছি। সকাল বেলা একবার সেন্সলেসও নাকি হয়েছো তুমি তিশার কাছ থেকে ওসব শোনে! আসলে ওদের কোন দোষ নাই।সবটাই আমার প্লান ছিলো। আমার প্লান মোতাবেক সব হয়েছে।সত্যি বলতে আমি তোমাদের বিয়ের দিন এখানে থাকতে পারিনি। আমার অফিস থেকে ছুটি পাইনি আসার।কারণ সেদিন বেদেশী বাইয়ার এসেছিল অফিসে। ওদের সাথে মিটিং ছিল। এরপর যখন ছুটি পেলাম সঙ্গে সঙ্গে চলে এলাম তোমায় দেখতে।বিয়ের দিনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আজ তা সুদে আসলে পুষিয়ে নিলাম। অবশ্য তোমার শাশুড়ি মানে আমার মেজো খালা এটা কিছুতেই মানতে নারাজ ছিলেন। তিনি বারবার বলছিলেন তিনি শাশুড়ি হয়ে কীভাবে পুত্রবধূর সাথে এসব মিথ্যে নাটক খেলবেন! কিন্তু আমি তাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তুমি যদি আমার কথামতো কাজ না করো তবে কিন্তু আমি আসবো না!’

ফিরোজা বেগম এবার নিজেই নোরার কাছে এগিয়ে এলেন। এসে ওকে জাপটে ধরে বললেন,’মাগো,আমারে তুমি ভুল বুইঝো না।দীপা আমার বড় বোনের মেয়ে।ওর স্বামী থাকে ইতালিতে।আর ও ঢাকায় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। বিয়েতে আসার জন্য ও প্রস্তুত ছিল।ব্যাগপত্র গুছিয়ে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পর্যন্ত অগ্রীম কেটে রেখেছিল। কিন্তু কী দূর্ভাগ্য ওর, ওইদিনই নাকি হুট করে ওর বস ফোন দিলো।বললো জরুরি মিটিং আছে। মিটিংয়ে না গেলে চাকরি থাকবে না!তাই সে চাকরি বাঁচাতে গিয়ে বিয়েটা মিস্ করলো। বিয়ের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে সে আমার কাছে আবদার করলো এসব করতে।
আমি বারবার না করেছি। কিন্তু ও শোনে না।বলে তবে সে আসবেই না আর।
অবশেষে আমি রাজি হয়েছি।

ওদের সাথে থেকে থেকে আমিও ছেলে মানুষি করেছি।আমি যা করেছি তা একটু বাড়াবাড়িই ছিল। এর জন্য তোমার মাকে তুমি লজ্জা দিও না গো মা!’
নোরা কী বলবে বুঝতে পারছে না। তার বুকটা কেমন ধুকপুক করছে। সকাল থেকে একটা ভয় তাকে তাড়িয়ে মারছিলো। কিন্তু এটাই শুকরিয়ার বিষয় যে ওরা মজা করেছে ‌।সত্যি সত্যি এমন কিছু হয়নি।হলে সর্বনাশ হতো!
তবুও তার মন খারাপ হলো প্রচন্ড।সে বোঝেই পেলো না এটা আবার কোন ধরনের মজা! পৃথিবীতে মজার বিষয়ের কী অভাব আছে নাকি!

দীপার মিষ্টি মিষ্টি কথা আর সুন্দর আচরণে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল নোরা। কিন্তু এই মুগ্ধতা তার বেশিক্ষণ টিকলো না।দীপা আসার তিনদিন পর এক দুপুরে যখন তিশার কলেজে অভিভাবক সমাবেশে তারা মা মেয়ে চলে গেল তখন নোরা আর দীপা এক খাটে শুয়ে মজার মজার গল্প করছিলো। গল্প করতে করতে হঠাৎ নোরা ঘুমিয়ে পড়লো।আধ ঘন্টার মতো ঘুমালো সে। এবং ইলেকট্রিসিটি চলে যাওয়ায় গরমে ঘামে ভিজে একসার হয়ে জেগে উঠলো নোরা। জেগে উঠে দেখে তার পাশে দীপা নেই।সে ভাবলো অন্য কোন ঘরে আছে হয়তোবা। কিন্তু সে অন্য কোন ঘরে গিয়ে যে এভাবে দীপাকে দেখতে পাবে তা কল্পনাও করেনি।সে গিয়ে দেখে ওরা হাত ধরাধরি করে খাটের উপর শুয়ে আছে।দীপা আর ফাহাদ। দীপার উড়ুর উপর একটা পা তুলে রেখেছে ফাহাদ।

দৃশ্যটা দেখে নোরার দু চোখ আঁধার হয়ে এলো।সে প্রথমে ভাবলো ভুল কিছু দেখছে। কিন্তু যখন নিজের কানেই শুনতে পেলো ফাহাদ বলছে,’দরজাটা আটকে এসো।কেউ এসে দেখে ফেলতে পারে!’
দীপা বললো,’দেখার মতো কেউ থাকলে তো দেখবে।’
ফাহাদ অবাক হয়ে বললো,’নোরা যদি চলে আসে!’
‘আরে ও ঘুমাচ্ছে। উঠবে না এখন। তাছাড়া দরজা লক করলে কেউ দেখলে সরাসরি সন্দেহ করবে। কিন্তু দরজা খোলা থাকলে কেউ কিছু ভাববে না।মিছেমিছি অনেক কিছুই বানিয়ে বলা যাবে। তাছাড়া দরজা খোলা ঘরে দুজন কাজিন থাকলে মাইন্ড করার কী আছে?কেউ তো আর সরাসরি ঘরে ঢুকে যাচ্ছে না।আর দরজা খোলা রেখে আমরা এমন কিছু করবো তা কোন বোকাও কল্পনা করতে পারবে না!’

নোরা তখন দরজা থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওখান থেকে সব শোনা যায়। সামান্য উঁকি দিলে ভেতরের সবকিছু দেখা যায়। আরেকবার সে উঁকি দিলো।ওরা আরো কাছাকাছি ঘেঁষছে। যেভাবে কামাতুর দুটি মানুষ একত্র হয়। সেভাবে।নোরা ভাবলো বিষয়টা দেখে চুপ করে থাকবে কি না। সবাই যেভাবে চুপ হয়ে থাকে।চুপ হয়ে না থেকেই বা কী করবে! মেয়েদের কী শশুর বাড়ি এসে উচ্চ বাক্য করলে চলে?তালাক ফালাকের ডর ভয় থাকে। স্বামী শাশুড়ির অত্যাচারের ভয় থাকে। তাছাড়া মান সম্মানের ব্যপার তো আছেই। কিন্তু নোরা এই মুহূর্তে অন্য কিছু ভাবছে।সে ভাবছে নিজেকে অন্য রকম কিছু।সে নিজেকে আর আটটা দশটা মেয়ের জায়গায় ভাবছে না এখন।সে জানে চুপ থেকে কাউকে অপরাধ করতে দেয়াও অপরাধ! তিনদিন আগেও যে নোরা ভেবেছিল ফাহাদকে ডিভোর্স দিবে।ওর সাথে আর সংসার করবে না।

সেই নোরাই এই মুহূর্তে নিজ চোখে এসব দেখার পরেও ভাবছে ফাহাদকে সে ডিভোর্স দিবে না।ওর সাথেই সংসার করবে।কারণ আজ যদি নোরা ওকে ডিভোর্স দেয় তবে দু’দিন পর ফাহাদ অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে আনবে।আর সেই মেয়েও এখানে এসে স্বামীর এসব নোংরা কাজ দেখে সারা জীবন ডুকরে ডুকরে কেঁদে যাবে।এই জন্য সে ঠিক করেছে অন্য কাউকে কষ্ট পেতে সে দিবে না।সে বরং এখানে থেকে একটা রাখাল যেভাবে তার দুষ্ট গোরুকে ঠিক করে ঠিক সেভাবেই সে তার বদ স্বামীকে ঠিক করবে।প্রয়োজনে যতো কষ্ট সহ্য করতে হয় সে তা করবে। তবে কষ্ট সহ্য সে একাই করবে না।

ফাহাদ কেও কষ্ট দিবে। শিক্ষা দিবে।আর সুচুতুর দীপার জীবনটাও বিষময় করে তুলবে সে। কীভাবে স্বামীর আড়ালে আবডালে পর পুরুষের সাথে উগ্র যৌনতায় মেতে উঠে তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাইয়ে ছাড়বে।এতে তার বাঁধা আসবে।বিপত্তি আসবে।আসুক।একটা সুখের ঘর বাঁধতে আসলেই সংগ্রাম প্রয়োজন।একটা সমাজ পরিবর্তনের জন্যও প্রয়োজন কঠোর সাধনার।হতে পারে তার এই ত্যাগ তিতিক্ষা থেকে অনেকেই শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।যে সকল নারী আজ জুলুমের শিকার হয়ে চুপ করে আছে তারা মুখ খুলবে একদিন। স্বামীকে পুজো করা ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধ মেয়েগুলো স্বামীর ভুল গুলো মুখ বুজে সহ্য না করে এরপর থেকে আওয়াজ তুলবে।

এ আওয়াজ একদিন পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।সে জানে,যেদিন পৃথিবীর সকল নারী নিজেকে সম্মান দিতে জানবে, নিজেকে আর কখনো পুরুষের চেয়ে ছোট মনে করবে না ঠিক সেদিনই এ সমাজ বদলে যাবে। সেদিনই নারী তার স্বামীর অশৃঙ্খল যৌনতা মুখ বুজে আর সহ্য করবে না। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তার গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা সামান্য বকা দেয়ারও সাহস করবে না! সেদিন এ দেশের স্কুলগুলোতে ছেলে মেয়ে উভয়েই সমান সুযোগ পাবে। অংকের শিক্ষক অংক বুঝিয়ে দেয়ার নামে নারীর কাছে ঘেঁষে তার নরম পিঠে হাত রাখতে পারবে না।কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে মেয়েরা ফোঁটে থাকবে লাল টকটকে গোলাপের মতো।

অটোতে,বাসে,ট্রেনে কিংবা শপিং মলের ভিড়ে কোন কামুক পুরুষ ইচ্ছে করলেই তার বুকে, পিঠে, শরীরের স্পর্শকাতর অন্য কোন জায়গায় হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে পারবে না।যদি এমন কিছু করে তবে নারীও ওর গাল কষে চড় বসিয়ে দিবে।প্রয়োজনে রাস্তায় ফেলে কুকুরের মতো পেটাবে। এবং সে একা নয়, তাকে দেখে আশে পাশের সকল নারীরই এগিয়ে আসবে তাকে সাহায্য করতে।যদি এমন কিছু হয়।যদি নারীরা প্রতিবাদী হয়। তবে সব পুরুষ আপনা আপনি নারীর যথার্থ সম্মান দিবে।হোক সেটা ভয়েই।যে সমাজের মানুষ উপলব্ধি করে না। ভালোবেসে কাউকে সম্মান দেয় না।সেই সমাজ থেকে জোর করেই সম্মান আদায় করতে হবে।
নোরা তার জীবনের সংগ্রামটা এখান থেকেই শুরু করলো। অবশ্য তখন ওরা দুজন আরো কাছাকাছি। দীপার বুকের উপর গরম শ্বাস ফেলছে ফাহাদ।আর তক্ষুনি ঘরের ভেতর ঢুকে গেল নোরা। এবং গর্জন করে বলে উঠলো—–
এসব কী হ্যা?এসব কী?’

নোরা জোর গলায় বললো।অনেকটা চিৎকার বলা যায় একে।
ওরা ভীষণ রকম চমকে উঠলো।দীপা তাড়াহুড়ো করে কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকলো। খানিকটা লজ্জাও পেলো। ফাহাদের মেজাজ গেল বিগড়ে।সে বিছানা থেকে নেমে এসে রাগী রাগী চোখে তাকালো নোরার দিকে। তারপর উচ্চ স্বরে বললো,’কী সমস্যা তোমার?কথা নাই বার্তা নাই হুট করে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করছো এসব কী?এসব কী?’
নোরা বোকা ভনে গেল।বড় অদ্ভুত কান্ড তো! তার স্বামী একটা পর নারীর সাথে যৌনতায় মেতে উঠেছে আর সে এসে দেখে ফেলায় তার অপরাধ হয়ে গেল?কী আজব দুনিয়া!

নোরা চুপ করে ছিল।ওর চুপ থাকার সুযোগ নিয়ে দীপা বললো,’কী হয়েছে নোরা? কোন সমস্যা নাকি? হঠাৎ যে এলে?’
নোরা ওদের কথার ধরণই বুঝতে পারছে না।সে কী বলবে না বলবে বুঝতে পারছে না।
দীপা ঠোঁট টিপে হাসলো। ফাহাদ পদ্ধতিটা ভালো জানে।সে এবার সুযোগ বুঝে ইচ্ছে মতো কিছু নিতি বাক্য কপচে দিলো। বললো,’ভাই বোন এক ঘরে বসে গল্প সল্প করতেই পারে। শুধু গল্প সল্প করা না। তারা শপিংয়ে,পার্কে কিংবা অন্য কোথাও বেড়াতে যেতে পারে। কিন্তু এর জন্য এভাবে তুমি হুট করে এসে এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে ফেলতে পারো না!এটা অন্যায়।এটা অপমানের শামিল।’
তারপর দীপা ফাহাদকে বললো,’ভাই,তুই থাক তোর বউ নিয়ে। তোদের মাঝে আমি আর ঝগড়া ফ্যাসাদ লাগাতে চাই না।আমি চাই না আমার জন্য তোদের সম্পর্ক মলিন হোক। যেখানে বিয়ের সপ্তাহ না যেতেই তোর বউ তোকে এভাবে এসে সন্দেহ করছে।আমি তোর বয়সে বড় কাজিন হওয়া সত্ত্বেও আমায় আর তোকে নিয়ে খারাপ ধারণা করছে, এখানে থাকার আমার কোন প্রশ্নই আসে না। আমার ভুল হয়েছে।বড় ভুল হয়েছে। নিজের ভাই নাই। খালার ছেলেকে আপন ভাই ভেবে তার নতুন বউ দেখতে এলাম।আর এসে এই অপমান!’

দীপা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
ফাহাদ অনুরোধের গলায় বললো,’দীপা কান্না করিস না।আমি ওকে শাসন করবো।নেক্সট আর এমন হবে না!’
দীপা তবুও কাঁদছে। কিছুতেই কান্না থামাচ্ছে না।
ফাহাদ এবার নোরার দিকে এগিয়ে গেল।আর রাগে লাল হয়ে উঠা চোখে বললো,’ওর কাছে গিয়ে মাফ চাও। এক্ষুনি।কোয়িক!’
নোরা বললো,’কিছুতেই না। এমন কিছু করার কোন প্রশ্নই আসে না।আমি চোখে যা দেখেছি তা ভাই বোনের মধ্যে কিছুতেই হতে পারে না!এটা অনৈতিক।এটা অন্যায়!’
ফাহাদ রাগের গলায় বললো,’কী দেখেছো তুমি হ্যা?কী দেখেছো?ভাই বোনের মধ্যে হতে পারে এমন কী দেখেছো?’
নোরা বললো,’তোমরা নোংরামো করছিলে।আমি স্পষ্ট দেখেছি।’
ফাহাদ সঙ্গে সঙ্গে ওর গালে চড় বসিয়ে দিলো। এবং একটা বকা দিয়ে বসলো। তাছাড়া হুমকিও দিলো।বললো,’আরেকবার এমন বাজে কথা বললে ঘাড় ধরে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবো!’

নোরা এবার বললো,’এ বাড়িতে থাকার এমনিতেও আমার কোন রকম ইচ্ছে নাই। তবে আপাতত যাচ্ছিও না।সময় হলেই এখান থেকে যাবো। তবে অসম্মান নিজের কাঁধে নিয়ে যাবো না বরং অসম্মানিত করে যাবো।’
ফাহাদের রাগ আরো বাড়ছে।সে এবার ওর গায়ে হাত তুলতে চায়লো। তখনই এসে তাকে থামিয়ে দিলো দীপা।বললো,’থাক মারিসনে।কম বয়স। বুঝতে পারেনি। ভুল বুঝেছে।ছোটরা ভুল করতেই পারে। এই জন্য তো তাদের গায়ে হাত তোলা যাবে না। সুন্দর করে কথা দিয়ে বোঝ দিতে হবে!’

দীপা ছলে বলে কৌশলে নোরাকে কনভিন্স করে ফেলতে চায়লো। কিন্তু নোরাও তো সহজে হাল ছাড়ার মেয়ে নয়।সেও পাছে বলে দিলো,’চোর ধরা পড়লে সাত পাঁচ বলে বেঁচে যেতে অনেক কিছুই করে! কিন্তু আমি বোকা না।বয়স কম হলেও এইটুকু জ্ঞান আমার আছে।আমি এটা বুঝি যে কোনটা বোনকে আদর করা আর কোনটা যৌনতায় মেতে উঠা!’
ফাহাদের আর সহ্য হচ্ছে না। এবার সে সত্যি সত্যি মারলো নোরাকে।ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে গেল বিছানার কাছে। তারপর বিছানার সাথে তার মুখটা নিচে ফেলে অনেকক্ষণ চেপে ধরে রাখলো।নোরার তখন মনে হতে লাগলো এই বুঝি তার দম আটকে আসছে।
দীপা এবারও ছাড়িয়ে নিলো।বললো,’করছিস কী তুই হ্যা? নতুন বউয়ের সাথে কেউ এমন করে রে?তুই যা।ঘর থেকে এখন বেড়িয়ে যা।রাগ থামলে আসিস।আমি নোরার সাথে কথা বলছি।দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
ফাহাদ আলনা থেকে এষ রঙা শার্টটা নামিয়ে গায়ে দিতে দিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।ও চলে গেলে দীপা এসে নোরার হাত ধরতে চাইতেই নোরা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো।ও বললো,’একবার গা কেঁটে দিয়ে গিয়ে এবার লবণ নিয়ে এসেছেন!মানে সাপও আপনি ওজাও আপনি!’

দীপা ওর মুখোমুখি বসলো। বসে বললো,’দেখো নোরা, তুমি সত্যিই আমাদের ভুল বুঝছো। আসলে ছোট বেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।আমি ওর এক বছরের বড় হলেও আমরা ছিলাম সব সময় বন্ধুর মতো। আমাদের মধ্যে এমন সম্পর্ক ছিল যে আমরা মাঝেমধ্যে ভুলেই যেতাম আমরা আলাদা জেন্ডারের।আর মাথায় ওরকম কিছু আসতোও না। অনেক দিন পর ওর সাথে দেখা।সময় সুযোগ মিলে না বলে আসতে পারি না। অনেক দিন পর সুযোগ মিলায় এবার আসতে পারলাম।তাই আজ দু’ ভাই বোন মিলে খাটে শুয়ে থেকে সুখ দুঃখের আলাপ করছিলাম।আর তুমি আমাদের দেখে খারাপ কিছু ভেবে নিলে!বোকা মেয়ে, শুনো চোর কখনো দিনে দুপুরে দরজা খুলে রেখে এভাবে চুরি করবে না। তাছাড়া আমি ওর এক বছরের বড়।দুজনই মেরিড। আমার একটা তিন বছর বয়সী ছেলেও আছে।এই বয়সে এসে আমি কেন ওসব করবো!’

নোরা কেন জানি মুখ ফুটে কিছু বললো না।সে এমন ভাব করলো যেন দীপার কথাগুলো যৌক্তিক। কিন্তু সে মনে মনে ঠিকই বললো,আপনি আসলে চোর না। আপনি ডাকাত।ডাকাতেরা দরজা বন্ধ করে মালামাল লোট করে না। মালিকের সামনে থেকেই কেড়ে নিয়ে যায়!
দীপা ওর শান্ত মৌন ভাব দেখে বুঝতে পারলো নোরা ওকে বিশ্বাস করেছে। কনভিন্স হয়ে গেছে ও।দীপা তাই প্রশান্তির হাসি হাসলো। হেসে বললো,’দেখো আবার বোকামি করে এই কথা কারোর কাছে বলে দিও না যেন! মানুষ তখন খারাপ ভাববে। আর তুমি তো চাও না তোমার হাসব্যান্ডকে নিয়ে কেউ চরিত্রহীনতার প্রশ্ন তোলুক?’

নোরা এবার কথা বললো।বললো,’সে যদি সৎ চরিত্রের হয় তবে আমি ওর জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা করবো না কখনো!’
দীপা আবার হাসলো। হেসে নোরার হাত ছুঁয়ে বললো,’আরে বোকা মেয়ে, তোমার হাসব্যান্ড শতভাগ সৎ।মনে রেখো সন্দেহ খুব খারাপ অসুখ। হাসব্যান্ড যদি তার ওয়াইফকে আর ওয়াইফ যদি তার হাসব্যান্ডকে সন্দেহ করে তবে সেই সংসার হয় নরকের মতো!ধরো তোমার দুলাভাই যে সেই সুদূর ইতালিতে আছে , ওখানে কী করছে না করছে আমি কিন্তু জানি না। ওইসব দেশ আমাদের দেশের মতো না। ওখানে খুব সহজেই মেয়ে পার্টনার পাওয়া যায়। ওদের সাথে বেড শেয়ার করা যায়।এতে কেউ কিছু মনেও করে না।ওসব নিয়ে আলোচনাও হয় না। কিন্তু আমার বিশ্বাস ও এমন না। এই যে বিশ্বাস এই বিশ্বাসের নামই ভালোবাসা।এই বিশ্বাসের নামই ঘর কিংবা সংসার।তোমাকেও এমন হতে হবে। চোখ বুজে হাসব্যান্ডকে বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের মা চাচীরা তো এমনি এমনি আর বলে না স্বামী দেবতার মতো।এই কথা মিথ্যে না। তুমি তোমার হাসব্যান্ডকে বিশ্বাস করে দেখো।কী পরিমাণ ভালোবাসা পাও।আর যদি অবিশ্বাস করো। তার সাথে খারাপ আচরণ করো। তবে তো আজ দেখলেই কী হলো! তুমি এ বাড়ির নতুন বউ হয়েও মার খেয়েছো!আর কখনো এমন করো না। ঠিক আছে?’
নোরা মাথা উপর থেকে নিচে ঝুঁকিয়ে বললো,’ঠিক আছে।’

গোপন কথা পর্ব ১+২

সেদিন কলেজ থেকে তিশা আর ওর মা ফিরে এলে নোরা ওদের কাছে কিছুই বললো না। সবকিছুই চেপে গেল। কেন চেপে গেল তা বোঝা গেল না।নাকি সে আবার ভীতু হয়ে গেল!অন্য আট দশটা মেয়ের মতোই এই সাধারণ সত্যিটা মেনে নিলো যে স্বামী দেবতার মতো।তার কোন ভুল ধরা যাবে না। তাকে সন্দেহ করা যাবে না। সন্দেহ করলে সংসার সুখের হবে না।নরক হয়ে যাবে সংসার!
দীপা এমনটিই ভেবেছে।ভেবেছে নোরা ওর সব কথাই মেনে নিয়েছে।ও আর কোনদিন মুখ খুলবে না। ফাহাদও নিশ্চিন্ত হলো।যেহুতু সেই রাতে নোরা তাকে কাছে ঘেঁষতে বাঁধা দিলো না তবে তো এটা বলাই যায় নোরার মনে আর কোন রাগ অভিমান নাই তার প্রতি।
নোরাও ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলেছে।যেন আর ওদের ভেতর কোন রাগ অভিমান কিংবা সন্দেহের দেয়াল নাই।

এতে সাহস আরো বেড়ে গেল ওদের। এবার কিন্তু ওরা যখন তখন ছাদে উঠছে। খানিক ফাঁক ফোকর পেলেই গা ঘষাঘষি করছে। এসব দেখেও না দেখার ভান করছে নোরা।সে ওদের বুঝাচ্ছে সে কিছুই মনে করছে না।যেন এসব হওয়ার ছিল।এতে তার মন খারাপ করা কিংবা রাগ করার কিছু নাই!

ফিরোজা বেগম অবশ্য এসবের কিছুই ধরতে পারেননি। আদতে তিনি সহজ সরল মানুষ। এসবের কিছুই বোঝেন না।ভাবেন ওরা সম বয়সী। তাছাড়া কাজিন। একসাথে বড় হয়েছে।দুজনই বিবাহিত। ওদের মধ্যে যা হয় তা গল্প গুজব। অতীতের সব কথাবার্তা বলে ওরা। আনন্দ করে। হাসাহাসি করে এই তো!
কিন্তু আরেকজনের নজরে ঠিকই পড়ে যায় ওদের নোংরামো গুলো। একদিন নোরার কাছে এসে-

গোপন কথা পর্ব ৫+৬