গোপন কথা পর্ব ৫+৬

গোপন কথা পর্ব ৫+৬
অনন্য শফিক

একদিন নোরার কাছে এসে তিশা বললো,’ভাবী, এবার বুঝি তোমার কপাল সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেল! তোমার জন্য আমার খারাপ লাগে!কষ্ট পাই আমি!’
তিশা ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।
নোরা অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে। তারপর বলে,’কপাল খারাপ হবে কেন? কপাল তো সবে জোড়তে শুরু করেছে। সেদিন না বিয়ে হলো আমার। এখনও শরীরে হলুদের গন্ধ লেগে আছে। সামনে কতোদিন বাকী।কতো আনন্দ বাকী!’
তিশা বললো,’ভাবী, কীভাবে যে কথাটা বলি তোমার কাছে! আমারই খারাপ লাগছে।’
নোরা ওকে তাড়া দিয়ে বললো,’আরে সমস্যা নাই কোন। আমার যথেষ্ঠ সাহস আছে।কথা হজম করার শক্তি আছে।বলে ফেল।’
তিশা কিছুটা হাসি হাসি ভাব করলো ঠোঁটে। তারপর বললো,’সে তো দেখেছিই সেদিন তোমার যে কতো সাহস আর কতো ধৈর্য্য!অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল কে তবে?’

নোরা বললো,’আজও তবে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলতে এসেছিস তাই না?আজ আবার নতুন করে কী বলে ধোঁকা দিবি?’
তিশা মলিণ বদনে বললো,’না ভাবী। আজ যা বলবো তা সত্য।আল্লার কসম।’
‘তো বলে ফেল। আমার আর তর সইছে না বাপু!’
তিশা এবার বললো।বললো,’ভাবী, ভাইয়ার সাথে দীপা আপুর মনে হয় অন্য কোন সম্পর্ক আছে!’
নোরা হাসলো। হেসে বললো,’হ্যা আছেই তো। সেদিন না বললি তুই।দীপা আপু তোর ভাইয়ার প্রথম পক্ষের স্ত্রী।প্রমাণও তো আছে।একটা তিন বছর বয়সী ছেলে।’
তিশার খারাপ লাগছে। সে বললো,’না ভাবী না।এটা মোটেও মজা না কিন্তু!’
‘তবে কী এটা?কী এটা হুম?’
‘আমি অন্য কিছু দেখেছি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘কী দেখেছিস? ওরা ভাই বোনের সম্পর্কের আড়ালে বর- বধূ খেলছে।তাই তো?’
‘ভাবী তুমি এমন করে কথা বলছো কেন? তুমি কী আমার প্রতি বিরক্ত?রাগ করেছো আমার সাথে?’
‘রাগের কী হলো?তুই কী আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছিস নাকি আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিস যে তোর সাথে রাগ করবো!’
‘ভাবী, তুমি তাহলে ওদের বিষয়ে সব জানো?’
‘দিনের আলোয় কেউ যদি ওসব করে বেড়ায় তবে না জানবার তো কথা না।আমি তো আর অন্ধ না।চোখেও ছানি টানি পড়েনি।আমি সব জানি।সব দেখি।’
‘তবে যে চুপ করে আছো?’

‘এটাই নিয়ম। মেয়েদের চুপ করে থাকতে হয়। তুইও তো মেয়ে। বিয়ে হলেই বুঝতে পারবি!’
‘কী বলছো এসব তুমি? তোমার জায়গায় যদি আমি থাকতাম তবে দেখতে আমি কী করতাম!’
নোরা হাসলো। হেসে বললো,’কী করতি?’
‘ওমন অসভ্য বরকে মেরে হাজত খাটতাম।’
‘তো অসভ্য ভাইটিকে মারছিস না কেন এখনো?’
নোরার হাতটা ধরে কেঁদে ফেললো তিশা। কেঁদে কেটে সে বললো,’বিশ্বাস করো ভাবী আমি ভাবতেও পারছি আমার ভাই অতটা নোংরা!সত্যিই আমার ইচ্ছে করছে ওকে খুন করতে!’

‘অত সহজ না রে তিশা। সবকিছু অত সহজ না।যদি সহজ হতো তবে সবাই খুনি হতো!পাপ আর থাকতো না পৃথিবীতে।আর মুখ দিয়ে সবাই বলতে পারে আমি হলে খুন করে ফেলতাম।এটা করতাম ওটা করতাম। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবতা বড় কঠিন!’
তিশা বললো,’আমি মাকে আজ বলবো।প্রয়োজনে মাকে নিয়ে দেখাবো ওরা কী করে!’
নোরা ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেললো। তারপর বললো,’একদম না। একদম এটা করবি না।সময় হলে আমিই বলবো।প্লিজ তুই শুধু দেখে যা। আমার একটা প্লান আছে।সময় হলে তুই বুঝতে পারবি। এখন মুখ বন্ধ করে রাখ লক্ষ্মী বোন!’
তিশা মাথা নেড়ে সায় দিলো।সে চুপ থাকবে আর আড়াল থেকে দেখে যাবে। শুধুই দেখে যাবে।

ওরা পাপ করে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা পাপ।ঘরে সুন্দরী এবং নতুন স্ত্রী রেখে পর নারীর সঙ্গে মেতে উঠে ফাহাদ।এই পাপের শুরু দু চারদিন আগে থেকে শুরু হয়নি।এর শুরু বহু বছর আগে।তখন দীপার বিয়ে হয়নি। কেবল ক্লাস নাইনে পড়ে। ফাহাদও ওর সাথেই পড়তো।একই ক্লাসে একই স্কুলে। ফাহাদের একটা প্রেম ছিল। দীপার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সাথে। কিন্তু দীপার কেন জানি তা সহ্য হতো না। ফাহাদ যখন ওই মেয়েটির সাথে কথা বলতো, হেঁটে হেঁটে স্কুলের মাঠ পাড়ি দিতো, কখনো বাদাম কিংবা আইসক্রিম কিনে একসাথে খেতো ওর সহ্য হতো না।তার কান্না পেতো। নিজেকে অসহায় মনে হতো। ধীরে ধীরে এই অসহায়ত্ব আরো বাড়ে।তার খেতে ভালো লাগে না, কারোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না,পড়তেও ইচ্ছে হতো না। এভাবেই সে একদিন আবিষ্কার করে ফাহাদকে তার চায়।যে করেই হোক ওই মেয়েটির কাছ থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর কোন এক নির্জন দুপুরে বাসায় যখন কেউ ছিল না তখন দীপা জাপটে ধরেছিল ফাহাদকে। বুকের ভেতর তার মাথা গুঁজে কেঁদেছিলো। কেঁদে কেঁদে ফাহাদের গোলাপ রঙা পাতলা শার্টখানি ভিজিয়ে ফেলেছিল একেবারে।

ফাহাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো কী হলো?
দীপা বলেছিল,তুই আর কারোর হতে পারবি না।কারোর না।
এরপর ওরা মেতে উঠেছিল প্রথম পাপে। ফাহাদ অতটা পাকা ছিল না।বুঝতো না অত কিছু।দীপা ওর চেয়ে এক বছরের বড় ছিল।সে সব বুঝতো।অথবা তার উপর ভর করেছিল সেদিন ইবলিশ। তারপর ওরা পাপ করলো। দীর্ঘদিন।এই পাপের সমাপ্তি ঘটলো যখন মাধ্যমিক পাশ করতেই হুট করে দীপার বিয়ে হয়ে গেল।দীপা কেঁদেছিলো।ফাহাদও। কিন্তু ওরা অন্য সব ছেলে মেয়েদের মতো ছিল না। বিয়ে নিয়ে অত হৈচৈ করেনি। হয়তোবা বিয়ের আগেই তাদের দেনা পাওনা পরিশোধ হয়ে গিয়েছিল বলেই ! ফিরোজা বেগম সহজ সরল ছিলেন আজীবন। এখনও তিনি যেমন ওদের কান্ড কারখানা বুঝতে পারছেন না। তখনও বুঝতে পারেননি।

দীপার বিয়ের পর সে পাল্টে গিয়েছিল। ফাহাদ গোপনে ফোন করলে ব্লক করে দিতো।কথা বলতো না। এরপর ওর ছেলে হলো। তখন ফাহাদ একেবারেই ওকে ভুলে বসলো। কিন্তু ও যখন ভুলে বসলো তখন ফের ইবলিশ ভর করলো দীপার কাঁধে।ওর হাসব্যান্ড তখন চলে গেছে ইতালি। এরপর থেকে আবার শুরু। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হলেই ফাহাদকে সে ফোন করে ডাকতো।ঢাকায় তার কাছে।
কিন্তু বিয়ের পর ফাহাদের এই পথ থেকে ফিরে আসা কর্তব্য ছিল। ফিরে আসবে বলেও মনস্থির করেছিল। কিন্তু পারেনি। তৃতীয়বারের মতো এসে ইবলিশ এসে ভর করে বসলো দীপার কাঁধে।পাপে জড়াবে না জড়াবে না করেও লোভ সামলাতে পারলো না ফাহাদ!

রাতে ঘুম আসে না নোরার চোখে।সে গোপনে কাঁদে। নিজেকে বড় দূর্ভাগা মনে হয় তার।আর ভাবে অতীতের দিনগুলো।কত স্বপ্ন ছিল তার।মা সব সময় বলতো,তোর কপালে ভালো বর আছে রে।যে মেয়েরা ঠোঁট কাঁটা তাদের ভাগ্যে লক্ষ্মী ছেলে জুটে। কিন্তু তার ভাগ্যে জুটলো না কেন?মার কথা মিথ্যে হয়ে গেল কেন?
সে রাতেই সে লক্ষ্য স্থীর করে। বিশ্বাসঘাতকদের জন্য কোন দয়া নেই।সে যা নিয়ত করেছে তাই করবে। নিজের সংসার ভেঙ্গে যাবে আর সে কেন অন্যের সংসার নিয়ে ভাববে!

সে রাতে আরো একজন ঘুমোতে পারছে না। বিছানায় ছটফট করছে শুধু।ঘুম আসে না।সে আর কেউ নয়।তিশা।সে ভাবে পৃথিবীর সব পুরুষেরাই কী এমন? নোংরা! কীভাবে নিজের ঘরে স্ত্রী রেখে পর নারীর সাথে মেতে উঠে নোংরামিতে!
তারপর ভাবে দীপার কথা। ঘেন্না করে দীপাকে তার!বিদেশ বিভূঁইয়ে স্বামীটি তার কতো কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে তাকে দিচ্ছে। দূরে থেকেও তার কথা হয়তোবা কতো কতো বার মনে করছে।আর সে কি না!
ছিঃ!তিন বছরের ছেলেটি যদি বড় হয়ে কোনদিন জানে তার মা এমন নোংরা, তখন?
সে কী কোনদিন তাকে মা বলে ডাকতে পারবে? ঘেন্না করবে না ডাকতে?
তিশাও ভাবে এদের একটা শিক্ষা হওয়া প্রয়োজন। কঠিন থেকে কঠিনতর শিক্ষা!
বারংবার ওসব নোংরামো চোখে পড়লে কার বা সহ্য হয়! তিশা কতো বার দেখেছে ওদের!

ওর সামনেই একে অপরের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যাওয়া। চুপিচুপি কানে এটা ওটা বলা।হুট করে দৌড়ে ছাদে উঠা।রাত বিরাত নেই এক ঘরে শুয়ে বসে গল্প আর গল্প।ও- মা! এদের আচরণ এমন যেন এরা বারো-তেরো বছরের সদ্য কিশোর- কিশোরী। বারো -তেরো বছর বয়সের ছেলে মেয়েরা অনেকটা এমন হয়। ছটফটে।বুনো পাখির মতো। উড়নচন্ডী।এরা কে কী বলবে বা ভাববে এসবের ধার ধারে না।অথবা ওরা জানেই না যে ওদের নিয়ে কোন আলোচনা হতে পারে! আলোচনা হইয়ো না।বড়োরা জানে এই বয়সটা এমনই।ওই বয়সে ছেলে মেয়েদের ভেতর সদ্য কামনা জেগে উঠে। কানাকানি ফিস ফিস করে এটা ওটা বলে ওরা।তাই বলে ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়া বিবাহিত দুটো ছেলে মেয়েও এমন করবে?

ওরা ভেবেছে টা কী!নাটক সিনেমার শুটিং করছে নাকি? নাকি ভেবেছে, এ বাড়ির আর সকল মানুষ বোকা সোকা। শুধু তারা দুজন কপোত- কপোতীই জ্ঞানী। একেবারে এরিস্টটল!না না তার উস্তাদের উস্তাদ সক্রেটিস?
কথাগুলো ভাবলো তিশা। এই কথাগুলো ভাবার কারণ আছে।আজ দুপুর সাড়ে এগারোটা কী বারোটা। তখন তিশা ডাইনিং পেরিযে নোরার কাছে যাচ্ছিল। তখনই দেখলো,দীপা ঘরের ভেতর থেকে ফাহাদের হাত ধরে টেনে ওকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।দীপার তিন বছর বয়সী ছেলেটা তখন ঘরে।ফ্লোরে বসে মায়ের ট্যাব নিয়ে কী যেন একটা দেখছে। কার্টুন ফার্টুন হবে সম্ভবত।
কী ভয়াবহ লজ্জার কথা! ছেলেটার সামনে এসব!
কিন্তু ওরা এইসব লজ্জা শরম কবেই খেয়ে বসে আছে!
ওরা ডাকাতের মতো।দস্যুর মতো। এদের কাছে দিন এবং রাতের কোন তফাৎ নাই।তফাৎ নাই পাপ কিংবা পূণ্যেরও।

তিশাকে দেখেও ওরা দমে গেল না।তিশাও দাঁড়িয়ে রইল না।তার মেজাজ অত্যন্ত খারাপ হয়ে আছে।আজ সে বড়ো সড়ো একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে বলে মনস্থির করলো!
সে ধপধপ করে হেঁটে নোরার ঘরে এলো। তারপর বললো,’খবর কী আছে তোমার?’
নোরা মৃদু হেসে বললো,’কিসের খবর?’
‘চোখ কী অন্ধ নাকি তোমার?’
‘কেন কী হয়েছে আবার?’
‘দেখে এসো গিয়ে কী হচ্ছে না হচ্ছে! এদের যদি লজ্জা শরম বলতে থাকতো কিছু!দরজাটা খোলা রেখেই! ছিঃ!তাও ছেলেটার সামনে।আরে ওসবের এতো নেশা থাকলে তুই বস্তিতে যা। ওখানে ঘর বেঁধে ফেল। ঢাকায় থেকে চাকরি বাকরি করে কী লাভ? ওখানে গেলে তো এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারছিস।টাকা আর শখ দুটোই পূরণ হচ্ছে! তোকে কেউ বাঁধা টাধাও দিচ্ছে না!মন যতো চায় ততো ফূর্তি কর।’

তিশা রাগে ফুঁস ফুঁস করছে। অতটুকু বয়সে এর আগে সে কখনও এমন রাগেনি!
নোরা বললো,’আসলেই ওর পতিলালয়ে যাওয়া উচিৎ।ও এর একদম যোগ্য।যে মেয়ে তার নিজের ছেলেটার সামনে এসব করে বেড়ায় এরচেয়ে নোংরা মহিলা আর কে আছে!’
তিশা বললো,’ইচ্ছে করছে এদের কুপিয়ে মারি! ‘
নোরা বললো,’কুপিয়ে মারলে তো এরা একেবারেই মরে যাবে। আবার ওদের খুনের দায়ে তোর জেল ফাঁস হবে। দেশের আইনটাও হাতে তোলে নেয়া হবে! এরচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে একটা কিছু করতে হবে।যাতে করে এদের রোজ রোজ মৃত্যু হবে।ধর, এমন একটা কিছু করলাম যার পর ওরা সারা জীবন ভুগবে। ভুগবে আর ভুগবে!আর দীপার শেষ ঠিকানা টা হবে পতিতালয়।তোর ভাইটার কোথায় ঠিকানা হয় জানি না!

কিন্তু আমার না ওর ছেলেটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে। ছেলেটার জীবনটা খুব কষ্টে যাবে রে!’
তিশা বললো,’ছেলেটার জীবন আবার সুখেই বা যাবে কবে?যখন বড় হয়ে সে বুঝতে শিখবে।যখন সে জানবে তার মা তার চোখের সামনে পর পুরুষের সাথে যা করতো তা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত পাপ। তখন? এরচেয়ে কী এটা ভালো না যে ছেলেটাকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়া? তার বাবা তাকে উপযুক্ত পরিবেশে বড় করে তুলবে। এমন কাল নাগিনীর বিষের ছোঁয়া তবে তার গায়ে আর লাগবে না!তার বাবা তাকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবে!’
নোরা বললো,’কথা তো মন্দ বলিসনি। কিন্তু আমার জীবনটা কী হবে বল দেখি তো?আমি তো কলঙ্কিনী হয়ে যাবো রে তিশা!’
তিশার রাগ লাগছে খুব!সে রাগের গলায় বললো,’অশিক্ষিত আর কুসংস্কার পূর্ণ মেয়েদের মতো কথা বলা রাখো তো তুমি। তুমি কী এখনও ভাবছো ভাইয়ার সংসার করবে?’
‘হ্যা ভাবছি।ওর চরিত্র বদলে গেলে করবো।’
তিশা বললো,’তুমি আমার চেয়ে হয়তোবা বয়সে বড় কিন্তু তুমি অনেক গাধা আছো। তুমি যেভাবে মানুষ নিয়ে ভাবো মানুষ আসলে তেমন না।’

‘মানুষ তবে কেমন?’
‘মানুষ ফেরেশতার চেয়েও উত্তম আবার শয়তানের চেয়েও অধম। খারাপ মানুষ হুট করে ভালো হয়ে গেলে তাকে বিশ্বাস করা বোকার কাজ। তুমি রিস্ক নিয়ে যদি ওকে বিশ্বাস করে থেকে যাও তবে দেখবে নতুন করে তোমায় সে ঠকাচ্ছে। তখন? তখন কী উপায় হবে তোমার?
আমি তো ডিসিশন নিয়েছি কখনো বিয়েটাই করবো না। বিয়ে করে অত কষ্ট সহ্য করতে পারবো না! এরচেয়ে একা থাকাই ভালো।’
নোরা ভাবতে পারছে না আর কিছু।কারণ সে জানে একবার ডিভোর্স হয়ে গেলে তারপরের জীবনটা একটা নারীর জন্য কী কষ্টের! তবুও সে সিদ্ধান্ত নিলো। নিজের আত্মসম্মানের চেয়ে ডিভোর্সি মহিলা হয়ে সারা জীবন একা থাকা ভালো।সে জানে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্টের একটি হলো স্বামীর অন্য মেয়ের সাথে পরকিয়ার সম্পর্ক।এটা মেনে নেয়া যায় না। কিছুতেই না।
সে মনে মনে ঠিক করে নিলো, এই নোংরা লোকটির সাথে কিছুতেই সে সংসার করবে না। কিছুতেই না।

শেষ বিকেলে নোরা তিশাকে নিয়ে ছাদের উপর উঠলো। গোলাপ বাগানের কাছে দাঁড়িয়ে প্রায় হয়ে আসা সন্ধ্যায় তিশার সাথে একটা গোপন কথা বললো নোরা।নোরা বললো,’তোর একটা কাজ করতে হবে। যেভাবেই হোক করতে হবে।’
তিশা বলে,’তোমার জন্য আমি সবকিছুই করতে পারি।ভাবী, এমন কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে সারা জীবনভর থাকলেও তাদের আপন করে নেয়া যায় না। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদেরকে এক পলক দেখেও আপন করে নেয়া যায়। আমার এক পলকে দেখেও আপন হওয়া মানুষটি তুমি। তোমার মঙ্গল হয় এমন যে কোন কাজ আমি করতে পারি!’
নোরা এবার কাজটির কথা বলে।বলে,’তুই দীপার সাথে গলায় গলায় ভাব করবি।’
তিশা কেঁপে উঠে।রাগে তার হাত পা টান টান হয়ে উঠে। মাথায় চক্কর দেয়।

গোপন কথা পর্ব ৩+৪

সে বলে,’এটা কোন ধরনের কথা বললে তুমি!ওর মতো নোংরা মহিলার সাথে আমি গলায় গলায় ভাব করতে যাবো কেন?ওর মুখে তো আমার থুথু দিতে ইচ্ছে করে।এরচে বরং বলো ওর মুখে থুথু দিয়ে আসি। হুকুম করতে দেরি হবে কিন্তু কাজ সেরে আসতে দেরি হবে না!’
নোরা এবার বলে,’এই তোর আমার প্রতি ভালোবাসা? একটু আগেই না বললি তুই আমার জন্য সব করতে পারিস!আমি তোর আপন মানুষ। আমি যা বলবো তাই করতে প্রস্তুত তুই। কিন্তু এখন না বলছিস কেন?প্রশ্ন তুলছিস কেন?’
তিশা ভীষণ রকম অবাক হয়।সে বলে,’তাই বলে কী আমি তার সাথে গিয়ে ভাব করবো, গলায় গলায় মিশবো? জড়াজড়ি করবো ওর সাথে? যে কি না তোমার এবং আমার চোখের বালি।যে কি না এই পবিত্র বাড়িটিকে ওর পাপের কালিমায় অপবিত্র করে দিয়েছে। এটা আমি কীভাবে করবো বলো!’

নোরা হাসে। অদ্ভুত করে হাসে।ওর হাসির রেখায় মিলিয়ে যায় মেঘের ওপারে লাল দিবাকর। একদল পানকৌড়ি উড়ে যায় ডানা মেলে।আর গোলাপের ডালে এসে বসে পড়ে একটা ঘাস ফড়িং।
তিশা বুঝতে পারে না এ হাসির মর্ম।সে চেয়ে তাকে নোরার মুখের দিকে। বোকার মতো।নোরা কী তাকে দিয়ে কোন গেইম খেলতে চায়?
যদি খেলে তবে মন্দ হবে না।সে ভালো খেলবে বরং!
নোরা এবার তিশার নরম তুলতুলে হাত দুটো ধরে। তারপর সেই জোড়া হাত তার হাতের ভেতর নিয়ে মুষ্টি করে ধরে আদর করতে করতে বলে,’ওর সাথে এমন ভাবে মিশবি যেন ও ভাবে তুই——-

গোপন কথা শেষ পর্ব