চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৯

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৯
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

পরদিন যখন আমরা সবাই চলে আসব। সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাব কিন্তু সকাল থেকে আমি জারাকে দেখতে পাচ্ছি না। আমি এদিক ওদিক উঁকি ঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোথাও নাই গাড়িতে উঠে গিয়ে উঠলাম না। জারার সাথে শেষ একটা দেখা না করে শান্তি লাগছে না। আমি গাড়িতে না উঠে আবার বাসার ভেতরে চলে গেলাম। আর সোজা জারার রুমে গেলাম। জারা বিছানার ওপর বসে কাঁদছিল। আমি বিস্মিত হয়ে জারার কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
‘ জারা কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন? সকাল থেকে তোমাকে খুঁজছি তুমি রুমের ভেতর বসে আছো কেন একা?’
জারা অশ্রুসিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে আবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো। আর বলল,

‘ আমাকে স্পর্শ ভাইয়া দুইটা থাপ্পড় মেরেছে।’
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘কেন?’
‘ জানি না শুধু বলেছে, ‘ এই বয়সে এতো উদ্দক্ত ভালো না।’
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। স্পর্শ হঠাৎ জারাকে মারলো কেন?
আমি চিন্তা ভাবনা করছি জারা আমাকে আবার বলল, ‘ তুমি তাই ভাইয়া কে সব বলে দিলে। আমার জানি তুমি সব বলেছো না হলে স্পর্শ ভাইয়া এসব জানলো কি করে আমি তাকে পছন্দ করি আর তোমাকে দেখতে পারিনা।’
আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ কি? আমি আবার কি বললাম। আমি তো আরো মিথ্যা বলে তোমাকে বাঁচিয়ে দিলাম।’
জারা চোখ মুছতে মুছতে বলল, ‘ আমাকে ক্ষমা করে দাও। স্পর্শ ভাইয়াকে আমায় বাবাকে এসব বলতে দিও না তাহলে আমি মরেই যাব। আমাকে আর মা কে খুব বকবে বাবা। আমি আর কখনো তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করবো না। স্পর্শ ভাইয়াকে নিয়ে আর বাজে চিন্তা ও করবো না তিনি আমার ভাই ই‌’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আরে শান্ত হ‌ও‌। আমি স্পর্শ কে বুঝাবো। তিনি আমার কথা শুনবে কিনা জানি না।’
‘ তোমাকে ভাইয়া খুব ভালোবাসে তোমার কথা শুনবে তুমি বাঁচাও আমাকে।’
‘ওকে চেষ্টা করবো। আমাকে আর হিংসা করবে না কিন্তু।’
‘ ওকে ভাবি।’
জারার মুখে ভাবি ডাক শুনে আমি তো চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললাম।
‘এই দিনে ভাবি হয়ে গেলাম! বাব্বাহ!’
‘ কাল ভাইয়া বলে দিয়েছে। তোমাকে ভাবি সম্বোধন না করলে আমার খবর আছে। এতদিন যে আমি তোমার সাথে কথা বলিনি কি কারণে। ভাই ওসব ধরে ফেলেছে আমাকে খুব শাসন করেছে।’
‘ ভালোই তোমার মাথার ভূত তো নেমেছে।’

জারা মাথা নিচু করে রইল। আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে এলাম মনে মনে খুব হাসছে। কাল স্পর্শ ও কে থাপ্পর মেরেছে বকেছে আমি সব দেখেছি। স্পর্শ সব ধরে ফেলেছে টের ও পেয়েছি কিন্তু আমি তবু ও জারাকে দোষী করিনি নিজে থেকে বাঁচিয়েছি। আমি জানি তো স্পর্শ নিজেই সব ধরে ফেলবে আর যা করার নিজেই করবে। আমার বলার দরকার নাই।
গাড়িতে স্পর্শর পাশেই বসলাম। স্পর্শ আমাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে? একা একা হাসছো কেন?’
আমি হাসি মুখেই স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এমনিই। আচ্ছা একটা কথা বলি?’
স্পর্শ বলল, ‘ কি কথা?’
আমি বললাম, ‘ আপনি কি আমাকে খুব বেশি ভালোবাসেন?’
স্পর্শ আমার কথা শুনে বিশ্মিত নয়নে তাকালো।
‘হঠাৎ এই কথা কেন?’
‘বলেন না!’
‘তুমি কি এতদিনে ও বুঝতে পারোনি?’
‘পেরেছি আবার পারিনি।’

‘ নিজে থেকে সবটা বুঝো। আমি আমার ভালোবাসাটা তোমাকে বোঝাতে পারবো না সেটা তোমাকে অনুভব করে বুঝে নিতে হবে।’
‘ তাও মুখে বলবেন না ভালোবাসি?’
‘ বললাম তো তুমি বুঝে নাও। মনের গহীনে কতটা ভালোবাসা লুকানো আছে তা বুঝিয়ে দিতে পারব না। বের করতে হবে তোমায় আমি আর প্রকাশ করতে পারব না। কাল ও কিন্তু তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছ আর যেটা আমি সবসময় অপছন্দ করি। সে কাজটা তুমি করেছ আমার থেকে অনেক কথা লুকিয়ে গেছে সহ্য করেছে একা একা।প্রথমে তোমাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করবে সব কথা সবার আগে আমাকে জানাবে। কখনো মিথ্যে বলবে না কিন্তু সেই সবই তুমি করেছ। তবু কিন্তু আমি শান্ত আছি নিজেকে কন্ট্রোল রেখেছি।’

‘আমি একা সব সামলাতে পারবো ভেবে আপনাকে জানাই নি!আর আমি জানতাম আমার বলতে হয়না আমার সমস্ত সমস্যা সবকিছু আপনি ধরে ফেলবেন‌ই। আমি কিছু আপনার থেকে লুকাতে পারবো না সবকিছু আপনিই ধরে ফেলবেন‌ই। আমার বিশ্বাস তো সত্যি হলোই আমার না বলতেও আপনি সব জেনে গেলেন।’
‘ এতো কনফিডেন্স!’
‘হুম অনেক।’
স্পর্শ আমার কথায় হাসলো। আমি ও হাসলাম। রাস্তা পেরিয়ে আসতে গল্প ঘুম সব‌ই হলো। অনেকদিন পর নিজের বাড়ি ফিরে এসে স্বস্তি পেলাম। আসার আগে শশুর বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি। ভাইয়া আর আপুরা চলে গেছে নিজেদের শশুর বাড়ি। আমি আব্বু আম্মু বাড়ি এসেছি।‌ অনেকদিন পর একটা শান্তির ঘুম দিলাম। কিন্তু স্পর্শ কে খুব বেশি মিস করলাম। এতো দিন লোকটার সাথে এক সাথে ছিলাম আজ তিনি আমার পাশে নাই কষ্ট তো হবেই। তাই মিসটাও বেশি করলাম। তবু ও কল করলাম না। ঘুম ভাঙলো স্পর্শের কলে।

‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!’ ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম।
স্পর্শ বলল, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করতেছ? ঘুমিয়ে ছিলা?’
‘ হুম। আপনি কি করছেন?’
‘ কাজ করছি।’
‘এক জায়গা থেকে এসে কাজ শুরু করে দিয়েছেন আপনার ক্লান্ত লাগছে না?’
‘ নাহ। আমি এত সহজে ক্লান্ত হই না।’
‘ ওহ ভালো।’
‘ অনেক তো বেড়ানো হলো এবার একটু লেখাপড়া শুরু করো তোমার তো এক্সাম চলে এসেছে।’
‘সে তো দেরি আছে আরও কয়েকমাস মাস!’

‘চোখের নিমিষেই এই কয় মাস শেষ হয়ে যাবে। ঘুমানো বাদ দিয়ে বই খুলে বস। কাল থেকে তো কলেজ খোলা আসছো তো?’
‘ হুম আসবো। কিন্তু আমি এখন পরতে পারবো না। আমি এখন রেস্ট করবো।’
‘ পাক্কা তিন ঘন্টা ঘুমিয়েছো তাও তোমার রেস্ট করা হয় নাই? আরো করতে হবে! কেমন জার্নি করেছ! তোমাকে তো আর মাটি কাটতে নিয়ে যায় নাই ঘুরেছ, বেরিয়েছো তবু এত ক্লান্তি কোথা থেকে আসে।’
‘ কোথায় ভেবেছিলাম আপনি বোধহয় আমাকে মিস করছেন। তাই কল করছেন। কিছু আবেগ মাখা রোমান্টিক কথা বলবেন তা না ফোন করেই টিচার দের মত ধমকানো শুরু করে দিয়েছেন।’
‘ আমি তো তোমার টিচার ই।’

‘ টিচার হওয়ার আগে কিন্তু আপনি আমার বর। আগে হবু বর ছিলেন এখন শুধু হাজবেন্ড আমার তিন বার কবুল বলা হাজবেন্ড। আপনি আমাকে হাজবেন্ডের মত কেয়ার ভালোবাসার না দিয়ে বারবার টিচার দের মত শাসন করতে পারেন না।’
‘ এখন আমি তোমাকে টিচার হয়েই কল করেছি তাই আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলো‌।’
‘ ধুর দুনিয়ায় এত চাকরি থাকতে এই টিচার হওয়ার ভূত আপনাকে কে দিয়েছিল বলেন তো? আমার এমন সর্বনাশ কে করল আমি জানতে চাই।’
‘ আমি স্পর্শ কারো কথায় কান দেয় না নিজেই যা ভাল লাগে তাই করি। অবশ্যই এটা আমার‌ই সিদ্ধান্ত।’
‘আপনি নিজে আমার এত বড় সর্বনাশ করেছেন! আপনাকে আমি এর জন্য শাস্তি দিয়েই ছাড়বো হু।’
‘ ওকে দেখা যাবে তারাতাড়ি উঠে পড়ো বাই।’
রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে গেলাম।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৮

পরদিন অনেক দিন পর কলেজে এসেছি।
কিন্তু এসেই মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। স্পর্শ একটা মেয়ের সাথে সারা কলেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আর মিষ্টি দু’জন কে আগাগোড়া দেখছি।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২০