চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩৪

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩৪
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

ঠান্ডা পানিতে এতক্ষণ গোসল করার জন্য আমাদের রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো। মিষ্টি আর আমি জ্বরে ভুগতে লাগলাম বিছানায় পরে। স্পর্শ আর দিগন্ত ভাইয়া হন্যে হয়ে ডাক্তার ধরে নিয়ে এসেছে। তারপর আমাকে ওষুধ খাইয়ে বিছানায় ফেলে রেখেছে। আর পায়চারি করছে আর আমাকে যা নয় তাই বলে বকাঝকা করছে। আমি তিতা মুখে স্পর্শ দিকে তাকিয়ে অসুস্থ গলায় বললাম,
‘ আমি অসুস্থ আর আপনি আমাকে বকতেছেন?’
‘ হ্যাঁ বকছি। তুমি বকার মতো কাজ করলে না বকে কি আদর করবো?’
‘ আদর করবেন। অসুস্থ হলে বকা বারণ। তখন আদর সোহাগ করতে হয়। এখনকার যত রাগ বকা আছে সব তুলে রাখুন যখন আমি সুস্থ হবো তখন বকবেন।’

‘ তোমাকে আমি যত‌ই গাধা বলিনা কেন তুমি কিন্তু মোটেও তা নয়। যথেষ্ট চালাক চতুর।’
‘ সে তো আমি সবসময় বলি। আমার বুদ্ধির কাছে আপনি কিছুই না। কিন্তু আপনি বিশ্বাসই করতে চান না আমার বুদ্ধি আছে।’খুব গর্বের সাথে বললাম।
স্পর্শ বলল, ‘ জী ম্যাডাম আপনার বুদ্ধির কাছে তো আমি শিশু।’
‘ইয়েস, আজকে বুঝতে পারলেন। আমি তো সেই কবে বুঝতে পেরেছি।’
‘পারবেন ই তো মাথা মোটারা ফালতু জিনিস আগে বুঝে।’ স্পর্শ বিড়বিড় করে বলল।
আমি স্পর্শের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি বললেন? বিরবির করে জোরে বলুন আমি শুনবো।’
‘কেন তুমি না বুদ্ধিমান। তাহলে আমার জোরে বলতে হবে কেন? আমার বিরবির কথাই বুঝে নাও‌।’
‘আমি নিজেকে বুদ্ধিমান বলেছি। আমিতো বলিনি আমি সব কথা বুঝতে পারব।’
‘ সরি আমি আর বলতে পারবো না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আমি ভীতু। নিশ্চয়ই আমাকে কিছু বলেছেন। যার জন্য এখন বলতে পারছেন না। কারণ আপনি আমাকে ভয় পান।’
স্পর্শ চোখ কপালে তুলে আমার দিকে তাকালো,’হোয়াট আমি তোমাকে ভয় পাই?’
‘পেতেই পারেন! কিন্তু স্বীকার করতে চান না। আপনি আমাকে ভয় পান‌। এজন্যই তো আমাকে বাজে কিছু বলেছেন বিড়বিড় করে। যেটা এখন জোরে বলার সাহস পাচ্ছেন না। আপনি একটা ভীতুর ডিম।’
স্পর্শ পায়চারি অফ করে একদম আমার পাশে এসে দুহাত আমার দু পাশে রেখে তোমার মুখোমুখি হয়ে নিজের মাথা নিচু করে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমি তোমাকে ভয় পাই?’
‘হ্যাঁ ।’
‘তখন আমি বলেছিলাম মাথামোটারা সবকিছু আগে বুজে। এখনো বলছি তুমি একটা মাথা মোটা।’
আমি বললাম, ‘আমার মাথা কোথায় মোটা আমার মাথা যথেষ্ট সুন্দর ছোট। এই ছোট মাথা আপনার মোটা লাগছে আপনি আসলেই একটা পাগল।’

“ওরে আমি কার সাথে কথা বলছি? আমি তোমার এই মাথামোটা বলিনি।’
‘সিস্টেম ছাড়া কথা বলছেন এখন আমাকে ধমকাচ্ছে।’
‘তোমাকে বোঝানো আমার কম্ম না দয়া করে চুপ করো। অসুস্থ তাই তোমাকে আর আমাকে ধমকাচ্ছে চাচ্ছি না। এমনিতে আমার মাথার প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। এক জায়গাতে এসে আনন্দ ফুর্তি করব তা আমার রোগীর সেবা করতে হচ্ছে। ফাটা কপাল আমার।’
‘যান আপনার আমাকে সেবা করতে হবেনা। আপনার আনন্দ করুন। ঘুরেন বেশি করে।’
‘একা ঘুরতে গেলে বিয়ে করেছি কেন? এ কক্সবাজার ভাজা ভাজা করে ঘুরা আমার শেষ সে অনেক আগেই। এখন তো আমি বউ নিয়ে রোমান্টিক ওয়েদারে ঘুরব। কিন্তু তোমার জন্য কিছুই হচ্ছে না। কতটা জ্বর এসেছে দেখো। তোমার মুখটা কেমন লাল হয়ে আছে। তাকিয়ে থাকতে পারছে না। অথচ মুখ চালিয়ে যাচ্ছ আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য।’

‘আমি আর আপনার সাথে কথাই বলব না। কথা বললেই নাকি খালি ঝগড়া করি।’
স্পর্শ আমার কপালে স্পর্শ করে বলল, ‘এই অবস্থাতেও অভিমান? ‘
‘ হুম। আমি আপনার সাথে আর কথা বলবো না।
রাগ করেছি। আপনি আবার আমাকে ঝগড়াটি বলেছেন, মাথামোটা বলেছেন অনেক কিছু বলেছেন। অসুস্থতা মাঝে কোথায় শুধু আদর যত্ন করবেন, মিষ্টি করে কথা বলবেন তা না আমাকে ধমকাচ্ছেন।’
‘ তো তুমি ধমক খাওয়া‌ মতো কাজ করলে কেন?’
‘ভুল হয়ে গেছে বললাম তো! ‘
‘ আচ্ছা কান্না করতে হবে না। আর ধমকাবো না সরি।’
আমি মাথা বাম কাত করে রইলাম কথা বলবোনা স্পর্শের সাথে।
স্পর্শ আমার মাথা টেনে সোজা করে আমার কপালের আর নাকে চুমু খেল। আর সাথে সাথেই বললো,
‘ইস আমার ঠোঁট টা পুড়ে গেল।’

‘ ঢং। ভালোই হয়েছে। আমাকে টাচ করতে আসবেন তো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমাকে মাথামোটার বলার শাস্তি এটা আপনার।’
‘ শাস্তি হলেও তো আমি তোমাকে দূরে রাখতে পারব না। তাই এই শাস্তিটা ও আমি মাথা পেতে নিলাম।’
রাতে আমার জ্বরের মাত্রা আরো ভালো আর আমি জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল কথা বলতে লাগলাম। স্পর্শ ভয় পেয়ে আমার মাথায় জলপট্টি নিয়ে বসে ছিল। সারারাত তিনি কি ছটফট যে করেছে। এসব দেখে আমার গর্বে বুকটা ভরে উঠেছিল। ইশ কতইনা ভালবাসেন উনি আমাকে এমন একটা হাজবেন্ড পেয়ে আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবতী। উনার মত একজন জীবনসঙ্গিনী পেয়ে আমি খুব লাকি।

সকালে আমার জ্বর কমে আসায় আমি যখন চোখ মেলি দেখি স্পর্শ আমার পাশে বসে গালে হাত দিয়ে বসে আছে ওই ভাবে ঘুমিয়ে আছে। আমি ওইভাবে স্পর্শকে টেনেটুনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। সারারাত ঘুমাতে পারিনি চোখ দুটো ফুলে আছে। এখন একটু ঘুমাক। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে এলাম শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, মাথা ঘোরাচ্ছে মুখ তো তিতা বিষ হয়ে আছে। স্পর্শ মনে হয় সকালেই ঘুমিয়েছে কারণ এখানে কফির কাপ রাখা আমি একটা নিয়ে খেলাম।
স্পর্শ উঠে আমাকে বসে থাকতে দেখে উত্তেজিত হয়ে ছুটে এলো আমার কাছে। আর বলল,
‘ এই শোনো তুমি উঠেছ কেন? কিছু দরকার হলে তুমি আমাকে বলবে তা না করে নিজে নিজে পাকনামি করে আবার উঠেছ। আবার কোন অঘটন ঘটাতে চাও তাই না।তুমি কি আমাকে একটু শান্তি দেবেনা ?’

বলতে বলতে আমার কাছে এসে আমার কপালে গালে গলায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কেমন। আমি স্পর্শের এত চিন্তা দেখে বললাম,
‘আই এম ফাইন! আমি এখন অনেকটা ঠিক আছে। খুব ভালো লাগছে। শরীর ব্যথা কমে এসেছে। তাই ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। আপনি তো সারারাত অনেক কিছু করলেন। বসে থেকে একদম নেতিয়ে গেছেন। এজন্য আপনি একটু শুয়ে বিশ্রাম নিন। একটু পরে না হয় আমি ডেকে দেবো আপনাকে।’
‘আমার বিশ্রাম নেয়ার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। সবকিছু তুমি নিজে ঠিক করতে যাব না। আর পাকনামি করে আমাকে কষ্ট দেবে না প্লিজ। তুমি অসুস্থ থাকলে, কষ্টে থাকলে আমি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারি না।
বুকে ব্যথা করে তুমি কি আমাকে বুঝবে না।’

স্পর্শ কথা শোনে আমি গলে ক্ষীর হয়ে গেলাম। স্পর্শকে জাপ্টে ধরে বললাম, ‘আচ্ছা আই এম সরি। আমি আপনাকে আর কষ্ট দেব না। আপনার সব কথা বাধ্য মেয়ের মত শুনবো।’
স্পর্শ আমাকে জড়িয়ে ধরল। সকালের নাস্তা করার পর জোর করে রেডি হয়ে গেলাম বেড়াতে যাব। স্পর্শ কিছুতেই যাবে না। কিন্তু আমি আর মিষ্টি তো রেডি হয়ে বসে আছি।
স্পর্শ শুধু বলছে, ‘একমাস থাকব তোমরা সুস্থ হও তারপর যত খুশি ঘুরবো। এখন এই শরীর নিয়ে ঘোরাঘুরি করে আর তোমাদের অসুস্থ করতে চাইনা।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩৩

কিন্তু আমি আর মিষ্টি নাছোড়বান্দা আমরা এভাবে যাব আমরা। একদম ঠিক আছি আমাদের কিছু হবে না। এসব বলে পাগল করে দিচ্ছি দুজনকে।
অবশেষে আমরা দেখা করতে যাওয়া হলো। দিগন্ত আর স্পর্শ মুখটা হাঁড়ির মতো করে রাখলো। কিন্তু আমি আর মিষ্টি তো খুবই এনজয় করছি । কাল রাতে যে আমি জ্বরে কাতর হয়ে পরে ছিলাম কেউ দেখলে বলবেই না।

চড়ুইপাখির অভিমান শেষ পর্ব