চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩২

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩২
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

হানিমুন সবাই যায় বিয়ের এক সপ্তাহে? আমরা যাচ্ছি দুমাস পর। সাথে আছে আরেকটা কাপেল। বেস্টু মিষ্টির বিয়েটা ফাইনালি হয়েই গেল ওর বিয়ের আজকে চারদিন তো ওকে আমরা হানিমুনে টিকিট গিফট করেছি। সাথে আমি আর স্পর্শ যাব। আমাদের তো আর যাওয়া হলো না আমার লেট লতিফ যাব আর এই প্ল্যান টা করেছি আমি। যেই শুনেছি মিষ্টির বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেই ভেবে নিয়েছি যে ওদের এই হানিমুনের ট্রিপ গিফট করবো আর দুই বান্ধবী একসাথে হানিমুনে যাবো। অনেক আগেই আমরা পাঁচ বান্ধবীর সাথে গল্প করতাম। আমরা সবাই একসাথে হানিমুনে যাব। কিন্তু দুঃখের কপাল হলো না। তাই আমরা দুজনই যাবো। ইনশাল্লাহ একদিন সবার জোড়া হয়ে গেলে আবার যাব।

তো আজকে আমরা রওনা হয়ে গেছি দুই জোড়া কাপেল। উদ্দেশ্যে এখন কক্সবাজারে। আমার মনে আছে ছোটবেলায় একবার কক্সবাজারে গিয়েছিলাম আমি আব্বু আম্মু আপু আমি। সেটা ছিল আব্বুর অফিসের ট্যুর। তো তখনি আমার কক্সবাজারে এসে এতো ভালো লেগেছিল যে আমি নিয়ত করে নিয়েছিলাম বিয়ের পর প্রথম হানিমুন আমি কক্সবাজারেই আসবো।
আমি আর মিষ্টি গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছি। আর সামনে বসেছে স্পর্শ আর মিষ্টির হাজবেন্ড দিগন্ত ভাইয়া। স্পর্শ তো গাল ফুলিয়ে একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। কারণ তার ইচ্ছে ছিল আমি আর স্পর্শ একসাথে বসবো। দিগন্ত ভাইয়া ও মিষ্টি দিকে তাকাচ্ছে অসহায় মুখে। তাদের মনের আশা অপূর্ণ করে আমি আর মিষ্টি পেছনে বসে সারা রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছি।
স্পর্শ ড্রাইভ করছে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল। নিরিবিলি শোনশান একটা জায়গা স্পর্শ আর দিগন্ত ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে এলো। আমি আর মিষ্টি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ আমার সাইটে এসে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ তারাতারি গাড়ি থেকে নামো।’
আমি চরম উত্তেজনা নিয়ে বললাম, ‘ মানে কি? এখনি নামবো কেন? এতে তোমার অনেক দেরি।’
‘ দরকার আছে নামো।’
‘ নো। আপনি আমাকে সামনে নেওয়ার জন্য এমন করছেন তাই না। আমি সামনে যাবনা। আমি আর মিষ্টি একসাথে যাব।’
স্পর্শ আমার কথা শুনে মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে জোর করে টেনে আমাকে গাড়ি থেকে নামাল।ওদিক দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টি কে নামিয়েছি! গাড়ি থেকে নেমে বললাম,
‘ কি হচ্ছে এসব দুজনের মাথায় ভূত চাপলো নাকি?’

মিষ্টি দিগন্ত কে বলল, ‘ এই আপনার সমস্যা কি? আপনি আমাকে এইভাবে টেনে গাড়ি থেকে না নামালেন কেন?’
আমি ওদের স্পর্শকে বললাম, ‘ সমস্যা কি কি হয়েছে আপনাদের? এই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে কি করতে চাইছেন শুনি? ‘
কোমরে হাত দিয়ে বললাম। স্পর্শ আমার কাঁধে হাত রেখে নিজের সাথে চিপকে নিয়ে হাঁটতে লাগল।
আর বলল,’ কি সুন্দর রোমান্টিক একটা রাস্তা তাই না! আমাদের জন্য; আসো আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটু প্রেম করি।’
আমি বললাম, ‘ আপনার মাথাটা গেছে। চলুন তো তাড়াতাড়ি আমাদের পৌঁছাতে হবে। এখন এই রাস্তায় হেঁটে টাইম নষ্ট করতে পারবো না।’
‘ কি সুন্দর জায়গাটা প্রেম করার জন্য পারফেক্ট। আসো এখানে হানিমুন সেরে ফেলি। ওই পানি দেখার জন্য কক্সবাজার যাওয়ার লাগবেনা।’

কথাটা শুনতেই আমি ধাক্কা মেরে স্পর্শকে নিজে থেকে ছাড়িয়ে একহাত কোমরে দিয়ে বললাম,
‘আপনি তো মহা কিপটা! টাকার জন্য বউকে নিয়ে এই আদ পছা জায়গা পছন্দ করে রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল আনার চেষ্টা করছেন। আমি এত বোকা না ওকে।’
‘তুমি তো বোকাই তুমি হচ্ছে মহা বোকা। না হলে কি আর দুজন নতুন হাসবেন্ড ওয়াইফ কে এভাবে আলাদা করে বসায়? আমরা না হয় পুরাতন হয়ে গেছি। কত প্রেম করেছি। আর ওরা কেবল কালকে বিয়ে শেষ করলো। আর আজকে তুমি ওদের আলাদা করে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে বসে আছো।’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘কি বললেন আমি কাবাব মে হাড্ডি? আমি কার বারা ভাতে ধান দিয়েছি শুনি?’
স্পর্শ বলল, ‘ এখন তুমি আমার সাথে সামনে বসবে আর মিষ্টিকে দিগন্ত সাথে পিছনে ছেড়ে দিবে। দিগন্তের মুখটা দেখেছো আর মিষ্টি মুখটা দেখেছো? তোমার জন্য বেচারী কিছুই বলতে পারিনি লজ্জায়।
নিজেতো রোমান্টিকতার কিছুই বোঝনা খালি আছো সবাইকে ডিস্টার্ব করতে।’
আমি স্পর্শ কে কঠিন কয়টা কথা বলতে যাব তার আগেই স্পর্শ আমাকে টেনে দেখালো মিষ্টি আর দিগন্ত ভাইয়া খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কি যেন বলছে। স্পর্শ খুব সাবধানে তাদের কাছাকাছি নিয়ে এলো আমাকে। ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম ওরা দুজন একসাথে বসতে চায়। শুধু আমার জন্যই দুই বেচারা বেচারী এতক্ষণ মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। ওদের কথা শুনে আমার ভীষণ লজ্জা লাগলো। আমি লজ্জা পেয়ে সবার আগেই সামনের সিটে বসে পড়লাম। স্পর্শ ড্রাইভিং সিটে বসে মিষ্টি করে হাসলো।
দিগন্ত ভাইয়া আর মিষ্টি এসে দেখল আমি আর স্পর্শ সামনে বসে আছি। তা দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করল মিষ্টি,
‘ ওই তুই সামনে বসেছিস কেন? পেছনে আয় আমার সাথে বসবি না?’
আমি বললাম, ‘ না আমি আমার জামাই ছাড়া বসবো না। এতক্ষণ তো এমনি বসেছিলাম। তুই ভাইয়ার সাথে বস। খালি আমাকে ডাকিস কেন?’

আমার কথা শুনে মিষ্টি থমকাতে থমকাতে পেছনে গিয়ে বসলো। দিগন্ত ভাইয়া তো খুশিতে বাকবাকুম। আর আমি সামনে বসে রইলাম গাল ফুলিয়ে। স্পর্শ যেহেতু এতই বোঝে আমাকে আগে কেন বলল না?
স্পর্শ একটু পরপর আমাকে বউ বউ করে ডাকছে আমি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছি। একটু একটু করে পেছনে তাকালে দেখতে পারি দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টি হাতে হাত রেখে খুব চিপকে বসে গল্প করছে। আর মিষ্টি একটু পরপর লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিচ্ছে।
সেই মুহূর্তেই আমার মনে হলো আমার কোলের উপর থেকে আমার হাতটা কেউ টেনে নিচ্ছে। স্পর্শ ছাড়া এই কাজ আর কে করতে পারে? তিনি আমার হাত টেনে ডাইভিং এর মাঝেই দুই তিনটা চুমু খেলো হাতের পিঠে। আমি চোখ রাঙিয়ে হাত টেনে নিয়ে নিলাম আর বললাম,
‘নির্লজ্জ।’

স্পর্শ অবাক গলায় বলল, ‘এখানে নির্লজ্জ এর কি করলাম আমি? আমার বউ তাকে আমি স্পর্শ করেছি। এখানে কার বাপের কি? এতে লজ্জাই বা কেন পাবো আজব?’
‘ দেখতে পাচ্ছেন না পেছনে মিষ্টি আর দিগন্ত ভাই আছে তাদের সামনে। আপনি আমাকে এইভাবে চুমু খেলেন কেন? ছিহ।’
‘ওদের তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নাই আমরা কি করছি সেসব দেখতে আসবে। একবার ওদের দিকে তাকিয়ে দেখো ওরা তো আমাদের থেকেও বেশী নির্লজ্জ্বের কাজ করছে।’
আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম স্পর্শের দিকে। মন চাচ্ছে এই চোখ দিয়ে আগুনের গুলি বের করে ওনাকে ভষ্স করে দেই‌।
কিন্তু আমি পেছনে তাকালাম তাও। পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম মিষ্টি দিগন্ত ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে । আর দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
স্পর্শ চোখের ইশারায় বলল, ‘ কি ব্যাপার ম্যাডাম এবার কিছু বলেন।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩১

‘ আপনি চুপ থাকুন তো।’
আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ট্রাই করলাম। তারপর কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।
যখন চোখ খুলি নিজেকে পেছনের সিটে স্পর্শের বাহুতে পাই। সামনে মিষ্টি আর দিগন্ত ভাইয়া ড্রাইভ করছে।
আমি ঘুমঘুম চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমরা এখানে কেন?’
স্পর্শ বলল, ‘ ব‌উকে আরামশে ঘুম পাড়াতে আসছি।’
‘ মানে!’
‘ কিছু না। ওই দেখো চলে আসছি।’
‘ আপনি বুঝিয়ে বলুন।’
‘ পাগলি নামো।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩৩