চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩১

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩১
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

স্পর্শ রান্না করতে গিয়েছে আধাঘন্টা চলে গেছে। বারবার করে বলেছে আমি যেন রুম থেকে বের না হয়। তার বারণ এর জন্য আমি যেতে পারছিনা। কি করছে কে জানে? আমি নিজেই তো পারিনা রান্না করতে। তিনি ছেলে হয়ে এসব করতে গেলেন। কোন ঘটন না ঘটিয়ে ফেলে। আল্লাহ। আমি চিন্তায় বসে থাকতে পারলাম না পায়চারী করতে লাগলাম।
ঠিক এক ঘণ্টা পর স্পর্শ বাটি হাতে রুমে এলো। ঘেমে নিয়ে একদম একাকার অবস্থা স্পর্শের। আমি এগিয়ে এসে দাঁড়ালাম। বাটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে খিচুড়ি দেখতে পেলাম ভুনা খিচুড়ি।

ভুনা খিচুড়ি আমার ফেভারিট। তাও আবার গরুর মাংস দিয়ে। আর সেটাই রান্না করেছে স্পর্শ। দেখতে তো খুব সুন্দর লাগছে এত সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি। স্পর্শ ক্লান্ত গলায় বলল,
‘তাড়াতাড়ি বসে পরো।টেস্ট করে বলো কেমন হয়েছে! সরি দেরি হয়ে গেল রান্না করতে।’
আমি ওরনার কোণা দিয়ে স্পর্শে মুখ মুছে দিলাম। স্পর্শ নিজের থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ ছিহ ছিহ আমার গায়ের উপর আসছো কেনো? দেখো না আমি ভিজে গেছি। তুমি খাও আমি গোসল করে আসি। ‘
বলেই চলে যেতে চাইলো আমি স্পর্শ কে টেনে ধরে জড়িয়ে ধরলাম।
‘আরে করছো টা কি ? এই মেয়েকে ছাড়তে বললে মেয়ে দেখে আরো জাপ্টে ধরে।’
‘হ্যাঁ ধরবইতো‌। একশ বার ধরবো! হাজার বার ধরে থাকবে আপনার কি?’
‘ আমার আবার কি আমার তো ভালোই? আমিও ধরব।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলেই স্পর্শ আমাকে দু’হাতে টাইট করে ধরলো। আমার মনে হয় হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে গেল আমি ছটফট করে তাড়াতাড়ি স্পর্শ থেকে সরে আসলাম।
‘এমন দানবের মত কেউ ধরে মনে হয়েছিল আমার হাড্ডি মাংস সব ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে।’
‘আমার কাজ সফল! আমাকে তো ছেড়ে দিয়েছো। নিজে তো ধরতেই পারো না। শরীরে তো শক্তি নাই কিছুই খালি আছে হাড্ডি।’
‘ একদম আমাকে হাড্ডি বলে অপমান করবেন না। এখন আমি ঝগড়া করার মুডে নেই। আমার খিদে পেয়েছে আমি খাব তাড়াতাড়ি বসেন!’
‘আমি এখন খাব না। এটা শুধু তোমার জন্য তুমি খাও। আমি এখন গোসল করব শরীর দিয়ে দুর্গন্ধ ছুটে গেছে। আর তুমি আমাকে জাপ্টে ধরে আছো? বুঝিনা তোমার কি গন্ধ লাগছে না?’
‘না তো কোথায় গন্ধ? আমিতো সুগন্ধ পাচ্ছি। পারফিউম এর থেকেও এই ঘ্রাণটা সুন্দর।’
‘ এতো প্রেম কি রান্না করে খাওয়ানোর জন্য? এত রোমান্টিক হলে তো আমি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে সব কাজ ফেলে বউয়ের সেফ হয়ে যাব।’

‘ ওকে হয়ে যান। আপনি আমার বিনা পয়সার সেফ।’
‘ পয়সা লাগবে না ব‌উয়ের আদর, ভালোবাসা পেলেই হবে।’ স্পর্শ একদম আর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল। আমি ধাক্কা দিয়ে বললাম
‘ আপনার শরীর দিয়ে গন্ধ বের হচ্ছে। যান গোসল করে আসেন। আমার খিদে পেয়েছে খুব।’
স্পর্শ মুখ কালো করে বলল, ‘এই না বলে পারফিউম এর থেকেও সুগন্ধ বের হচ্ছে । এখন আবার গন্ধ হলো কিভাবে?’
‘জানিনা!’
স্পর্শ চলে গেল আমাকে খেয়ে নিতে বলে। আমি খেলাম না। গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম। খিচুড়ি দিকে তাকিয়ে আছি। আর অপেক্ষা করছি স্পর্শ কখন গোসল করে বের হবে। স্পর্শ বের হলো আজ তাড়াতাড়ি ।সব সময় তার গোসল করতে লাগে লম্বা সময়।
বেরিয়ে এসে আমাকে না খেয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ খাও নি কেন? খাবার কি খুব খারাপ হয়েছে?’
আমি বললাম, ‘ খাইই নাই তো জানবো কি করে ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে?’

‘ খাওনি কেন?’
‘ আপনার জন্য। একা খেতে ভালো লাগছে না। আসেন না একসাথে খাই!’
‘ আমি খাব না।’
‘ কেন?
‘ তুমি খাবে আর আমি দেখবো তাই।’
‘ আজব কথা বার্তা।’
আমি স্পর্শকে টেনে বসিয়ে দিলাম। আর নিজ হাতে খেতে লাগলাম। খুব একটা ভালো না হলেও খারাপ হয়নি। খাওয়া যাবে। আমি স্পর্শের মুখে জোর করে খাবার ঢুকিয়ে দিলাম। স্পর্শ আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কেমন হয়েছে? খাওয়া যাচ্ছে কি? ফার্স্ট কিন্তু রান্না করেছি!’
আমি উত্তর দিইনি একেবারে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছি।
‘এবার খেয়ে দেখুন কেমন হয়েছে নিজে টেস্ট করুন।’
‘ভালো হয়নি। তোমার খেতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে
মুখের উপর কিছু বলতে পারছনা।খেতে হবে না রেখে দাও।’

‘পাগল নাকি আমি তো পুরো এই টা একাই খাব। আপনার জন্য আমি ফ্রিজ থেকে গরম করে এনে দেবো তার পরে খেয়েন। এটা খুব ভালো হয়েছে। আর একটা কথা আমি এত এত রান্না দেখেছি। করার চেষ্টা করছি। তবু আপনার মত করে রান্না করতে পারিনা। আর আপনি একবারও রান্না দেখেননি রান্না ঘরে জীবনে ঢুকেননি। ফাস্ট গিয়েই এত ভাল রান্না করছেন। আপনি সত্যিই খুব ট্যালেন্টেড।’
‘তো তুমি কি মনে করছো তোমার কপাল ভালো। এমন স্মার্ট হ্যাণ্ডসাম বর পেয়ে।’
‘জ্বী না আপনি লাকি। বিকজ আমার মত একটা মিষ্টি বউ পেয়েছেন।’
‘তুমি মিষ্টি?’
‘অফকোর্স!’
‘ মিষ্টি না তিতা সেটা তো খেয়ে টেস্ট করতে হবে।’
‘ অসভ্য ফাজিল লোক।’
বলেই স্পর্শের কিল ঘুষি মেরে দিলাম। স্পর্শ হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লাম আমি বাটি নিয়ে নিচে চলে এলাম। স্পর্শের জন্য খাবার গরম করে নিয়ে আসলাম।
‘উঠোন আর খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন সোয়ামি।’
‘স্বামী যদি এতই সেবা-যত্ন করার ইচ্ছা থাকে। তাহলে সেবাদার গিন্নির মত খাইয়ে দাও ।’
‘বসতে দিলে শুতে চায় প্রবাদ বাক্যে আছে না ব্যাপারটা তেমন হয়ে গেল না। কষ্ট করে গরম করে আনলাম কোথায় নিজে খাবেন তা না এখন খাইয়ে দিতে হবে।’

‘একটু আগে আমিও কিন্তু হাত পুড়িয়ে কারো জন্য রান্না করে এনেছিলাম।’
কথাটা বলেই স্পর্শ জিভে কামড় দিল। আমি খাবারে রেখে ছুটে গিয়ে স্পর্শের দুই হাত চেক করতে লাগলাম। সত্যিই ডান হাতের দুটা আঙ্গুল পুড়ে গেছে। লাল টকটকে হয়ে আছে ইস আমি ছলছল চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আপনি খুব খারাপ।’
‘ জানি।’
‘ অনেক খারাপ। এতটা কষ্ট পেয়েছেন আর আমাকে জানালেন না। কি সুন্দর মজা করছেন আমার সাথে! এত খারাপ কেন আপনি? এজন্যই বলেছিলাম আপনাকে রান্না করে খাওয়াতে হবেনা। আমি তো এগুলোই খেতাম আপনাকে কেন কষ্ট করে রান্না করতে হবে‌। খুব ব্যথা করছে তাই না।’
‘ উহু একটু ও না ব্যথা তো করছে বুকে।
বুকের মধ্যে হাত দিয়ে বলল,’এখানে যে তুমি আমাকে বুঝো না খালি ভুল বুঝ। যেটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। যন্ত্রণা দেয়।’
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দেন। আর আমি রাগ করবো না কখনোই না। সন্দেহ ও করব না। এই কানে ধরছি।’

আমার ইনোসেন্ট ফেস দেখে স্পর্শ হেসে দিল।
‘এই ফেসটা কিন্তু খুবই কিউট।’
‘ধ্যাত।’
স্পর্শের হাতে আমি মলম লাগিয়ে দিলাম। তারপর খাইয়ে দিলাম। স্পর্শ খাচ্ছে আর আমার হাতে কামড়ে দিচ্ছে।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘ এটা কি হাত পোড়ার শাস্তি নাকি?
‘ জি না এটা আমার ভালোবাসার। তোমাকে কেন শাস্তি হতে যাবে কেন?’
‘দিতেও পারেন হাত পুড়িয়ে রান্না করেছেন।এখন কামড়িয়ে আমার হাত ক্ষত করতে চাইছেন। কিন্তু এখন আর পারবেন না আমি কথার তালে আপনার খাওয়া শেষ করে ফেলেছি।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩০

বলে আমি প্লেট রেখে হাত ধুয়ে আসলাম। আমি বিছানার কাছে আসতে স্পর্শ আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে এক টানে নিজের উপর ফেলে দিল‌ আমি তাল সামলাতে না পেরে একদমই স্পর্শর বুকের উপর আছড়ে পড়লাম।
‘ওরে আম্মু আমার কপালটা ফেটে গেল গো। এমন করে কেউ টান মারে।’
আমি রাগান্বিত চোখে স্পর্শে দিকে তাকালাম।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৩২