চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৬

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৬
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

জারা আমাকে ওর রুমে এনে বসিয়ে গল্প শুরু করল। আর ফোনে একটা খুব সুন্দর ছেলেকে দেখালো। বলল এই ছেলে না কি ওকে ভালোবাসো ওর পেছনে ঘুরঘুর করে। ওর পেছনে কতো ছেলের লাইন লেগে আছে। ও নাকি ওদের কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী। সবাই ওর জন্য পাগল। নিজেকে নিয়ে আরো কতকিছু যে বলল। গর্ব করে। আমি বিরক্ত মুখে ওর এই আজাইরা প্যাচাল শুনতে লাগলাম। এক ঘন্টা ওর সামনে বসে রইলাম এত কথা বলতে পারে এ তো দেখি আমার থেকেও বাঁচাল।মনে মনে ভাবছি কেউ আমাকে এখানে তো থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাও। এই মেয়ে তো আমার কান খেয়ে দেবে দেখছি।
আমাকে বাঁচানোর জন্য আমার উনি চলে। মানেই স্পর্শ। স্পর্শ ঘুম থেকে উঠে আমাকে আশেপাশে না দেখে। অপরিচিত জায়গা কোথায় আছি চিন্তা করে খুঁজতে চলে এসেছে। স্পর্শের ডাকটা যেন আমাকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিলো। আমি থপ করে দাঁড়িয়ে পড়লাম বিছানা থেকে,

‘ আমি যাই আমাকে ডাকছেন উনি।’
আমাকে দাঁড়াতে দেখে জারা ও দাঁড়িয়ে পড়ল আর আমার হাত টেনে ধরলো।
‘আরে কোথায় যাচ্ছো? সব সময় তো তোমার উনির সাথে থাকবে। এখন না হয় একটু আমার সাথে গল্প করো।’
‘না মানে কোন দরকার কিনা আবার পরে গল্প করবো নি!’
‘না এখন কত সুন্দর গল্প করছি আমার আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে! এখনই গল্পটা শেষ করে যাও আমার অনেক কথা বলার বাকি আছে! তুমি যে কোন দিক দিয়ে আমার নখের যোগ্য না সেইসব তো বলাই হল না। ভাইয়া যে তোমাকে কি দেখে তোমার জন্য পাগল হলো। সেটা ভেবে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়।আমার আম্মুর ও ইচ্ছে ছিল জানো আমাকে স্পর্শ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেবে। কিন্তু তোমার জন্য সব নষ্ট হয়ে গেল। ফুপি আম্মাকে কিছু বলার আগেই তিনি জানান। তারা নাকি স্পর্শ ভাইয়ার জন্য মেয়ে ঠিক করে ফেলেছে। মেয়েটা নাকি স্পর্শ ভাইয়া নিজে পছন্দ করেছে। আমাদের মা-মেয়ে দুজনের মন ভেঙ্গে দিয়েছো তুমি। তোমার কি একটুও গিলিটি ফিল হচ্ছে না।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কেন হবে! এখানে আমার কি দোষ? আমি কি তোমার স্পর্শ ভাইয়ার জীবনে জোর করে এসেছি না তো। স্পর্শ নিজে আমাকে নিজের জীবনের জন্য চুজ করেছে। তাই তোমার যত অভিযোগ আছে সব স্পর্শের কাছে প্রদান করো।আমাকে না বলে।’
আমি আর না দাঁড়িয়ে জারার থেকে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম রুমে থেকে। একটু এগুতেই স্পর্শের সাথে দেখা হলো স্পর্শ এদিকে আসছিলো। আমাকে দেখে থেমে গেল। আমি কাছাকাছি যেতেই জিজ্ঞেস করল,
‘কোথায় ছিলে?’
‘ জারার সাথে গল্প করলাম।’
‘ও তোমার সাথে গল্প করল? আজ অবধি তো কথা বলতে দেখলাম না।’
‘ আজ নিজে থেকে আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়েছিল। আর অনেক গল্প করল।’
‘ ভালোই তো। এখন ওদের বাড়িতে আসছ এখন তো গল্প করবেই‌‌। আগে যতই না বলুক।’
‘হ্যাঁ তাই বোধহয়! আপনার ঘুম শেষ?’
‘ হ্যাঁ ওই আর কি এখন আর ঘুমাবো না।’
‘ ওহ।’
‘ চলো নানুর কাছে যাই‌!’
‘ চলুন।’

স্পর্শ আমাকে নানুর কাছে নিয়ে গেল। সেখানে কিছু সময় গল্প করলাম দুজন। নানু খালি আমাকে লজ্জা দিল। বলল,
‘ নানাভাই এবার তোমাগো ঘরে একটা পোলাপাইন দেইখা মরতে পারলে খুব শান্তি পাইতাম। ব‌উটারে‌ এহন বাড়ি আনো তারা তারি। আমি কবে জানি ম‌ইরা যামু তহন আমার লিগা কানবা। মরার আগে আমার ইচ্ছা টা পূরণ কইরা দে নানাভাই‌‌!’
আমি লজ্জা মাথা নিচু করে ছিলাম। এমন কথা নানু বলবেন কল্পনাও করিনি।
আমি পরের সময় টা চুপচাপ করেই ছিলাম। তাদের লাগামছাড়া কথায় আমি কি বলবো খুজেই পাই নি।
নানু ঘুমাবে তাই আমি আর স্পর্শ চলে এলাম রুম থেকে। মামিরা খেতে ডাকলো। আম্মু আপুরাও সবাই উঠে গেছে। সবাই খেতে এলাম। এদের আন্তরিকতা এতো সুন্দর। খাবার ও খুব টেস্ট ‌। সবাই খাওয়ার সময় অনেক প্রশংসা করলো। স্পর্শের বড় মামির হাতের রান্না নাকি খুব ভালো তিনিই রান্না করেছে।
তৃপ্তি করে খেলাম খাওয়া-দাওয়া শেষে আমি মামীকে বললাম,
‘আপনার মত রান্না আমাকে শেখাবেন মামি?’

আমার কথা শুনে মামি সে কি হাসি। সেই কথা সবাইকে বলল কেন যে কথা বলতে গেলাম নিজের মাথা নিজে বাড়ি মারতে মন চাচ্ছে। কিন্তু বলা যেহেতু শেষ এখন আর কিছু করার নাই।
আমি মামি টাকে রান্না শেখানোর কথা বলে খুব ভুল করেছি কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম তিনি মজার ছলে আমাকে চরম অপমান করল। তিনি যে জারার মা আমি তো ভুলেই গেছিলাম তিনি আমাকে সহ্য করতে পারে না।
সবার সামনে বড় মামী বলল,

‘আমাদের স্পর্শ কি মেয়েকে বিয়ে করল সে নাকি রান্নাই পারে না আমাকে বলছে শেখাতে।’
আমার মায়ের দিকে ইশারা করে বললো,’বিয়ান আপনি দেখি মেয়েকে কিছুই শেখাতে পারেন নি। আমার মেয়ে জারা মারিয়ার থেকে ছোট তাও সব পারে এক হাতের রান্না বান্না সমস্ত কাজ পারে‌।’
ছোট মামী তখন বড় মামি কে টেনে বললো,’ থাক না বুবু ও তো তোমার রান্না ভাল লেগেছে বলেই বলেছে।রান্না শিখতে হবে কেন? আমরা না হয় আমাদের স্পর্শের বউকে সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নেবো তাইনা।’
‘ এখন পর্যন্ত সামান্য রান্না শিখতে পারেনি এই মেয়ে ধারা রান্না শেখা হবে না। এর রান্না তো কখনো খাওয়া যাবেনা। ভবিষ্যতে আমাদের স্পর্শের কপালে দুর্গতি আছে বুঝতে পারছি। শুধু মেয়ের রুপ দেখে গলে গেল গুন দেখলো না।’
আমাদের বাসায় সবাই আমরা লজ্জায় চুপ করে আছি। আম্মু আমাকে চোখ রাঙানি দিয়েছে। আমাকে আগেই পই পই করে বলে দিয়েছিল আমি যেন পাকনামো করে বেশি কথা না বলি কারও সাথে। সেই উলটাপালটা কথা বলে দিলাম আমার জন্য সবাইকে কত কথা শুনতে হচ্ছে।

বড় মামি কে কেউ থামাতে পারল না তাকে থামাতে সক্ষম হলো স্পর্শ। সেই মুহূর্তেই স্পর্শ এখানে ছিল না স্পর্শ ছিল রুম। কারণ স্পর্শর আগে খাওয়া শেষ করে চলে গিয়েছিলো। তাই সে চলে গিয়েছিল এখন নিচে এসে এসব দেখে স্পর্শের শ্যাম বর্ণ মুখটা লাল হয়ে গেল‌। সরাসরি মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার বউ কি পারে আর না পারে সেসব আপনাকে দেখতে হবে না মামি। সেসব আমি বুঝবো। আপনি এসব মাথা না ঘামালেই আমরা খুশি থাকবো।’
সবাই সামনে স্পর্শের কথা শুনে মামির মুখ হয়ে গেল বাংলার পাঁচের মতো। তিনি চুপ করে এক কোনে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
আমি জানি মামি এমন কেন করেছে তাই মামির কথায় আমার কষ্টের থেকে রাগ হয়েছে বেশি। কিন্তু আব্বু আম্মু খুব কষ্ট পেয়েছে আমি বুঝেছি। তাই আমার ও কষ্ট হয়েছে। তাদের আমার বোকামোতে কষ্ট পেতে হলো।
পরদিন আমরা সবাই বেড়াতে গেলাম। সাথে স্পর্শের পাঁচ মামাতো বোন আসলো। আমি গাড়িতে আপুর পাশে বসে ছিলাম। সেই সুযোগকে জারা এসে স্পর্শ এর সাথে বসে পড়লো। আমি চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
স্পর্শ জারা কে বলল,’ তুই এখানে বসলি কেন এখানে মারিয়া বসবে। তুই নীতির পাশে বস।’
জারা গাল ফুলিয়ে বলল, ‘ ভাইয়া একদিন না হয় আমাদের পাশে বসেন। সব সময় আপনার বউয়ের সাথে থাকবেন একদিন না হয় আমাদের সাথে থাকেন।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৫

স্পর্শ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।
আমি দূর থেকে তারা যে কিছু বলাবলি করছে বুঝতে পারছি।আমার মনে হয়েছিল স্পর্শ জারা কে নিজের পাশ থেকে উঠিয়ে আমাকে নিজের পাশে বসাবে। নাহলে নিজে আমার পাশে বসবে এসে বসবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। দুইজনের একজন ও উঠলো না। আমি গাল ফুলিয়ে দুজনকে দূর থেকে দেখতে লাগলাম। জারার মুখে শয়তানী হাসি সে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো মুখে কি যেন বলে বোঝাতে চাইল আমি কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু স্পর্শের উপর আমার রাগ হলো। অভিমান হল খুব। কিন্তু প্রকাশ করতে পারলাম না। সারা রাস্তা আমার গোমরা মুখে থাকতে হলো।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ১৭