তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৮

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৮
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ভয়ংকর নিস্তব্ধতা চারপাশে। এলোমেলো হয়ে বিধস্ত অবস্হায় রাস্তার এক কোণে দাঁড়িয়ে মাথা খামচে অনবরত মদের বোতল থেকে মদ্যমান করছে অয়ন। বুকটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করছে বার বার। অয়নের মনে হচ্ছে,তার রিমিপরী ঠিক নেই। কোন ভয়ংকর এক বিপদের মাঝে রয়েছে। রিমির নেত্রকোণে লেপ্টে থাকা জলে বিনষ্ট হওয়া কাজল বার বার যেন ছু/রিঘাত করছে অয়নের হৃদয়কে। অয়ন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে সিধান্ত নিলো, সে আর যাই হোক তার রিমিপরীর প্রতি অভিমান করে, নিজেকে কিংবা তার প্রেয়সীকে কষ্ট দিবে না।

সে এখুনি ছুটে চলে যাবে রিমির দারপ্রান্তে। শক্ত করে হাতখানা ধরে মুছিয়ে দিবে রিমির ভিতরের কষ্টগুলো। অয়ন অপেক্ষা করলো না এক মুহুর্ত। দ্রুত পায়ে গাড়িতে বসে রওনা দিলো সেই ফার্ম হাউজের উদ্দেশ্যে। যেখানে অয়ন রিমিকে রেখে দিয়ে এসেছিলো।অয়নের একজন সার্ভেন্ট উপর থেকে রিমির কোনপ্রকার সারাশব্দ না পেয়ে দ্রুত গতিতে উপরে চলে এলো। উপরে এসে দেখতে পেলো রিমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে একপ্রকার লুটিয়ে পরেছে এবং রিমির র/ক্তাক্ত পা থেকে অনাবরত র/ক্তপাত হচ্ছে। সার্ভেন্ট মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে। অয়ন সবেমাত্র গাড়ি পার্ক করে, সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলো, সার্ভেন্টের চিৎকার করে, একপ্রকার দৌড়ে নিজের কক্ষে গিয়ে একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের প্রাণের থেকেও অধিক প্রিয় প্রিয়তমা স্ত্রীর এমন করুণ অবস্হা দেখে মাথা কাজ করে দেয় অয়নের। অয়ন দৌড়ে গিয়ে রিমির পাশে বসে, রিমির মাথা নিজের কোলে রেখে, রিমির গালে আলতো থাপ্প/ড় মেরে চিৎকার করে ডাকতে থাকে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ রিমিপরী কি হয়েছো তোমার? নিজের সাইকোর উপর রাগ করে কি তুমি উঠছো না? একবার উঠে পরো আমার পরী। প্রমিজ কখনো এমন ভুল করবে না, তোমার সাইকো। একবার উঠে পরো আমার ভিষন কষ্ট হচ্ছে,তোমাকে দেখে। ‘
আফসোস অয়নের আকুল আর্যি রিমির কান অব্ধি পৌঁছালো না,সে অচেতন অবস্হায় শুয়ে আছে। অয়ন রিমির হাতের পার্লস চেক করলো, খুব ধীর গতিতে চলছে। অয়নের মাথা বিঘড়ে গেলো। মনে হানা দিলো প্রেয়সীকে হারানো ভয়। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে ছুটে নীচে চলে যেতে লাগলো। অতঃপর রিমিকে গাড়িতে শুইয়ে, হসপিটালের দিকে রওনা হলো। সারারাস্তায় রিমিকে বার বার ডেকেছে অয়ন, সে জানে অচেতন অবস্হায় রিমি কোনপ্রকার উত্তর দিবে না, তবুও অবাধ্য মনে বার বার ডেকেছে অয়ন রিমিকে, কিন্তু রিমি নিষ্চুপ।

অয়ন রিমিকে তার হসপিটালে নিয়ে এসে শিফট করেছে একটি কেবিনে। ইশা এবং ডক্টরদের সাথে নিয়ে রিমির চিকিৎসা করছে। ইশার থেকে রিমির অবস্হা সম্পর্কে জেনে, ফারহান ,সুমাইয়া, মেঘ ছুটে এসেছে হসপিটালে। অয়ন কিছুক্ষনের মাঝেই বেড়িয়ে আসে। বাইরে বেড়িয়ে সবাইকে দেখে কোনরুপ প্রতিক্রিয়া না করে, নিজের কেবিনে চলে যায়। কিছুক্ষন পরে ইশাও বেড়িয়ে আসে। ইশাকে দেখে সুমাইয়া তড়িৎ গতিতে অস্হিরতা নিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ কি হয়েছে আমার বোনের? ও ঠিক আছে তো? ‘
ইশা সুমাইয়াকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
‘ তুমি চিন্তা করো না ভাবি। অতিরিক্ত র/ক্ত/পাত হওয়ার ফলে, রিমি দূর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো শুধু, কিন্তু অয়ন তো পুরো হসপিটালের

ডক্টরদের ডেকে পাঠালো, শুধুমাত্র তার বউয়ের জ্ঞান ফিরানোর জন্যে, বুঝে দেখো আমার বন্ধু কতটা পাগল প্রেমিক! ‘
ইশার কথার বিপরীতে, সুমাইয়া ক্ষীন্ন হাসলোও তার মনের সংশয় রয়ে গেলো। রিমির এমন অবস্হা অয়নের পাগলামির জন্যেই হয়েছে, তা বুঝতে সুমাইয়া সময় নিলো না।
‘ রিমিপুর জ্ঞান কখন ফিরবে? ‘
মেঘের প্রশ্নে, ইশা বললেন,
‘ কিছুক্ষনের মাঝেই ফিরবে, চিন্তা করো না। ‘
মেঘ মাথা নাড়ায়। ফারহান কি মনে করে যেন, অয়নের কেবিনের দিকে যায়। অয়ন নিজের কেবিনে বসে তার উপরে থাকা সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নেত্রকোণ ছলছল। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু রয়েছে তার। শুধু মনে হচ্ছে আজকে তার জন্যেই, তার পরী এতো কষ্ট পাচ্ছে। আজ যদি রিমির কিছু হতো, তাহলে কি হতো অয়নের? কথাটি ভেবেই পুনরায় ড্রাগসের প্যাকেট থেকে, ড্রাগস নিয়ে নেয়।

‘ ভালোবাসলে, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় সর্বদা বিরাজমান থাকবে, নাহলে ভালোবাসলে কোথায় তাকে? তাইনা? ‘
ফারহান কথাটি বলেই সাদা ফকফকা দাঁতের মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। ফারহানকে দেখে ভ্রু কুচকে,
অয়ন উঠে চলে যেতে নিলে, ফারহানের একটি কথা শুনে থেমে গেলো,
‘ পারলে এই ড্রাগসের নেশাকে পরিত্যাাগ কর, নাহলে জীবনের নেশাকে হারিয়ে ফেলবি। ‘
ফারহানের কথা অয়ন কি বুঝলো কে জানে? সে দ্রুত গতিতে রিমির কেবিনে ছুটে এলো। রিমির সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছিলো, অয়নকে দেখে দ্রুত মুখ সরিয়ে নিলো। স্ত্রী রুপী প্রেমিকার অভিমান বুঝতে সময় নিলো না অয়ন। নার্সদের হাতের ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বললো। নার্সরাও বেড়িয়ে গেলো। অয়ন রিমির পাশে বসে রিমির অগোছালো চুলে সযত্নে হাত বুলিয়ে দিলো। রিমি অভিমানে অয়নের হাতখানা শক্ত করে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু ব্যর্থ সে। অয়নের মতো বলিষ্ট দেহী অধিকারের যুবকের সাথে কি সে পেরে উঠবে। অয়ন জোড় খাটিয়ে, রিমির হাতের উপর নিজের হাত চেপে, রিমির ললাটে গভীর চুম্বন করলো।অতঃপর ভেজা গলায় আলতো সুরে বললো,

‘ তুমি বড্ড পাষাণ প্রেমিকা,বড্ড নির্দয় যার মনে মায়া নেই। আছে শুধু একরাশ অভিমান। সেই অভিমানে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে হৃদয়টা। বড্ড বেদনা দেয় ভালোবাসার দূরত্ব। ‘
রিমি ফুপিয়ে কেঁদে দিলো, অয়নের মতো নির্দয় প্রেমিকের আখিতেও আজ অশ্রু তার প্রেমিকার জন্যে।
‘ আপনি স্বাভাবিক হয়ে উঠুন এইবার ডক্টর এয়ারসি। আপনার এইসব পাগলামো, আপনার ড্রাগস আমাদের মাঝে শুধু দূরত্ব সৃষ্টি করছে। ‘
ড্রাগস ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে অয়ন উঠে দাঁড়ালো। রিমির কথার বিপরীতে সে কোনরুপ উত্তর দিতে পারলো না। কীভাবে পারবে সে? পারার তো কোনপ্রকার অবকাশ নেই। ড্রাগস সে ছাড়তে পারবে না, কোনমতেই নয়। ড্রাগস না নিলে, তার মাথায় অদ্ভুদ যন্ত্রণা হয়। কষ্ট হয় ভিষন, কিন্তু রিমির মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে তো তা বুঝা সম্ভব নয়। তাই অয়ন কথা বাড়ালো না। বেড়িয়ে গেলো।
অয়নকে বেড়িয়ে যেতে দেখে, রিমি আরেকদফা কেঁদে উঠলো ঠোট চেপে। রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে সুমাইয়া রিমির পাশে বসলো। এতোবছর পর নিজের বোনের স্পর্শ পেয়ে আলতো হাসলো রিমি শুধু। কোনপ্রকার কথা বলার শক্তিটুকু নেই তার মাঝে। সুমাইয়া সুদীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘ অয়নকে স্বাভাবিক করাটা খুব জরুরী বোন। আজকে যা হলো, তা ঠিক হলো না। ‘
‘ আমিও চাই, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো উনিও স্বাভাবিক ভাবে বাঁচুক। উনি একজন ডক্টর হয়েও বুঝতে পারছেন না, উনার শরীর ড্রাগস প্রবেশ করছে,এতে উনি যেমন অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। ‘
‘ একটা উপায়ই আছে শুধুমাত্র। ‘
‘ কিন্তু কি? ‘
রিমির পাল্টা প্রশ্নের জবাবে, ইশা বললো,
‘ মালেয়েশিয়াতে বিশ্বের বেস্ট একটি মাদক নিরাময়
কেন্দ্র আছে, অয়নকে সেখানেই পাঠাতে হবে। কয়েকটা বছর লাগবে কিন্তু অয়ন পুরোপুরি সু্স্হ হয়ে উঠবে। এখন অয়নকে রাজি করানোটাই হচ্ছে মূল সমস্যা। ‘
রিমি ইশার কথা শুনে চুপ হয়ে রইলো। রিমিকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত সে আগের তুলনায় বেশ সুস্হ রয়েছে, তার মস্তিষ্কে শুধু ইশার কথাগুলো ঘুড়পাক খাচ্ছে। অয়ন যদি মালেশিয়া চলে যায়, তাহলে সে কীভাবে থাকবে,? কিন্তু অয়নের স্বাভাবিক জীবনের জন্যে, এখন দূরত্ব শ্রেয়।

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৭

[ মানে কি যে বলবো?‍♀️! আজকাল কেউ আর ঘটনমূলক কমেন্টও করে না?কারো ভালো লাগে না?মেইবি]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৯

2 COMMENTS

Comments are closed.