তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬৩

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬৩
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

ললাটে জুড়ে কোন পরিচিত পুর‍ুষের অধরের স্পর্শ পেতেই,পিটপিট করে আখিজোড়া খুলে তাকায় রিমি, কিন্তু কেউ নেই। রিমি ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে। রিমি অনুভব করতে পারছে কেউ রয়েছে তার কক্ষে। খুব কাছের কেউ সে, কিন্তু তাকে রিমি দেখতে পারছে না। রিমি বিছানা ছেড়ে দ্রুত জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো,কিন্তু বাইরেও কেউ নেই। রিমি হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়লো।

পাশে অয়রি গভীট নিদ্রায় রয়েছে। রিমির মনে হচ্ছে এক মুহুর্তের জন্যে হলেও অয়ন তার কাছে এসেছিলো, কিন্তু অয়ন কী করে ফিরবে? সে তো সদূর বিদেশে। অয়নের কথা মনে পড়তেই, পরক্ষনেই রিমির নেত্রকোণে অশ্রু জমাট বাঁধলো। বক্ষ হলো ক্ষ/ত/বি/ক্ষ/ত। কি বিচ্ছিরি এক পরিস্হিতি। চাইলেও রিমি কাঁদতে পারছে না। অয়নকে ছাড়া রিমি দিনশেষে একা! সম্পূূর্ন একা। রিমিকে দূর থেকে কেউ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে, যা রিমিও উপলব্ধি করতে পারছে কিন্তু সে তো জানে অয়ন এখানে থাকতে পারে না এখন। যাকে বলে অসম্ভব ব্যাপার!
রিমির ওড়না ধরে কেউ টান দিতেই, রিমি পাশ ফিরে ঘুড়ে তাকায়। অয়রি হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে,প্রশ্ন করে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ মাম্মাম! তুমি এখনো ঘুমাও নি? ‘
রিমি অয়রির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ না, মাম্মাম! আসলে ঘুম আসছিলো না, তুমি ঘুমিয়ে পরো।সকালে তোমার স্কুল আছে তো। ‘
অয়রি তার ছোট্ট ছোট্ট চুলে বাঁধা ঝুটিজোড়া নাড়িয়ে বলে,
‘ উহু! তোমাকেও ঘুমাতে হবে। তোমারও তো কালকে চেম্বার আছে, আর মাম্মাম তুমিই তো বলেছিলে, গুড গার্লরা সবসময় আর্লি ঘুমিয়ে পরে। আমার মাম্মামও গুড গার্ল তাই আমার মাম্মাম ও তাড়াতাড়ি ঘুমাবে। ‘
রিমি গালে হাত দিয়ে হেসে বলে, আমার পাঁকা বুড়ি মা যখন বলেছে তখন তো আমার তার হুকুম মানতেই হবে,কিন্তু আমার যে ঘুম আসছে না। তার বেলায় কি করবো? ‘

অয়ন গালে তার ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে নিজের গালে কিছুক্ষন ভাবলো, অতঃপর রিমিকে নিজের কোলে মাথা রাখতে বললো। রিমি কিছুটা অবাক হলেও, নিজের মেয়ের অনুরোধে বিনা বাক্যে ছোট্ট অয়রির কোলে মাথা রাখলো। অয়ন তার ছোট্ট ছোট্ট ফরসা হাতজোড়া দিয়ে, রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে ছন্দের সুরে বলতে থাকে,
‘ আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, যাদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা, আমার মাম্মাম যাতে ঘুমিয়ে যায়।’
অয়রির ছন্দ শুনে রিমি হেসে ফেলে, মেয়েটা তাকে এমন ভাবে ঘুম পাড়াচ্ছে, যেন সে মেয়ে এবং অয়রি তার মা। অয়রিও তার ফোকলা দাঁতে হেসে বলে,
‘ মাম্মাম! দেখবে এখন তোমার ঘুম চলে আসবে। ‘

রিমি তার মেয়ের হাসির দিকে মুগ্ধ পানে তাকিয়ে থাকে। অয়রির হাসিটি একদম অয়নের মতো মনমুগ্ধকর। অয়ন যেমন ভাবে হাসতো, ঠিক তেমনিই অয়রি হাসে। আখিজোড়া রিমির তো ডাগর ডাগর গভীর। যে কেউ দেখলেই সহজেই মায়ায় পরে যাবে। এতোটাই নিষ্পাপ দেখতে অয়রি। মা এবং মেয়ের সুন্দর মুহুর্তটি ফ্রেমবন্দী করে নিলো অয়ন। অতঃপর বারান্দা দিয়েই, পাইপ বেয়ে দ্রুত নীচে নেমে, পড়নে থাকা কালো ব্লেজার টা হাতে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো। রাতের ঘোর অন্ধকারে সকলের অগোচরে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে এবং নিজের মেয়েটাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলো না অয়ন। তাইতো ছুটে এসেছে। ইশা গাড়িতে বসে আপনমনে ফোন গুতাচ্ছিলো। অয়ন ইশার পাশেই বললো,

‘ ট্রাস্ট মি ইশা! রিমিপরীর মায়াবী মুখশ্রীর মতোই আমার লিটেল প্রিন্সেস হয়েছে। আমার এক মুহুর্তের জন্যে মনে হচ্ছিলো, দুইটা পরী যেন আমার কক্ষে সর্বস্হান জুড়ে বসবাস করছে। ‘
ইশা অয়নকে দেখেই বিরক্তির সহিত বললো,
‘ আচ্ছা অয়ন আমরা কেন লুকিয়ে বেড়াচ্ছি? বাড়ির সবাই, তোর বউ, মেয়ে সবাই তোর জন্যে কত বছর ধরে অপেক্ষা করছে, কিন্তু তুই সেই সুস্হ হয়ে দেশে ফিরার পরেও লুকিয়ে বেড়াচ্ছিস। হুয়াই? ‘

শেষের কথাটি ক্ষোভ নিয়ে জানালার দিকে তাকালো ইশা। অয়ন তা দেখে ক্ষীন্ন হাসলো। ইশার প্রশ্নের বিপরীতে, সিটে হেলান দিয়ে আয়েশের সাথে বসে বললো,
‘ কালকের দিনটির অপেক্ষা শুধু, তুই সব প্রশ্নের উত্তর কালকেই পেয়ে যাবি। ‘
ইশা হতাশ হলো। অয়ন পরক্ষনে প্রশ্ন করলো,
‘ ছেলেগুলোর কি অবস্হা এখন? ‘
ইশা কিছুটা রাগান্বিত সুরে বললো,
‘ রিমির দিকে শুধু তাকিয়েছিলো বলে, ওদের চোখের মনির মধ্যেই তুই ছু/রি মেরে দিলে, তোর অভ্যাস আর ঠিক হলো না তাইনা? ‘

অয়ন অধরের কোণে ভয়ংকর ভাবে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো, ‘ কিছু কিছু ভয়ংকর অভ্যাস চাইলেও বদলানো যায়, তা থেকে যায় অত্যান্তকাল। আমার রিমিপরীর দিকে চোখ তুলে তাকালেই, তা আমি উপড়ে দিবো। লেট’স গো নাও। ‘
অয়ন কথাটি বলেই গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে, গাড়ি ঘুড়িয়ে নিলো।

সুমাইয়া মুখ ভার করে, শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফারহান অসহায় মুখ করে সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সুমাইয়া ভেংচি কেটে ঘুড়ে গেলো। ফারহান হতাশার সুরে বললো,
‘ সুমু! ও সুমু! তুমি কি এখনো রাগ করে থাকবে আমার উপর? ‘
সুমাইয়া উত্তর দিলো না। মুখ ফুলিয়েই রাখলো। ফারহান সুমাইয়ার গালে হাত রেখে, সুমাইয়ার গাল টানতে টানতে বললো,
‘ আমার গুলুমুলু বউটাকে রাগলে হেব্বি লাগে। ‘

সুমাইয়া সঙ্গে সঙ্গে ফারহানের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে দিলো। ফারহান পড়েছে মহাবিপদে। সুমাইয়া এখন ৭মাসের প্রেগনেন্ট। সুমাইয়ার মন আজকাল খারাপ থাকে, মুড সুইং এর জন্যে।তাই ফারহান ঠিক করেছে, সুমাইয়াকে শপিং এ নিয়ে এসে, সুমাইয়ার মন ভালো করে দিবে, কিন্তু শপিং এ এসে সুমাইয়া একটা জামা পছন্দ হয়, কিন্তু গর্ভবতীর কারণে সুমাইয়ার শরীরটা কিছুটা ফুলে যাওয়ায়, ফারহান সুমাইয়াকে ‘মোটু’ বলে ক্ষেপায়। যার ফল স্বরুপ সুমাইয়া রাগ করে ফারহানের সাথে কথা বলছে না।

ফারহানদের ঝগড়ার মাঝেই, দূর থেকে কেউ তাদের হাক ছেড়ে ডাকে। ফারহান এবং সুমাইয়া দুজনেই পিছনে ঘুড়ে দেখতে পায়, সানা এবং সায়েদ। সানা এবং সায়েদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক একটি সময় ভালোবাসায় রুপান্তরিত হয়, যার কারণে সায়েদ এবং সানার ভালোবাসার প্রনয় ঘটে ৫ বছর আগে। তাছাড়াও তাদের ৪বছরের ফুটফুটে ছেলে সন্তানও রয়েছে। সানা এবং সায়েদ এগিয়ে আসলোদুজনকে একসাথে দেখে, ফারহান প্রশ্ন করলো,
‘ সানা তুমি এতোদিন পর ঢাকায়? আমি তো শুনেছিলাম, বিয়ের পর তুমি সায়েদের সাথে চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলে। ‘

সানা মুচকি হেসে বলে, ‘ হ্যা স্যার। সায়েদের বদলি হওয়ায় আমরা চট্রগ্রাম চলে গিয়েছিলাম, কিন্তু সায়েদের পুনরায় আবার ঢাকায় শিপটিং হয়েছে, তাই আমরা ঢাকায় এসেছি। এসেছিলাম শপিং করতে, কিন্তু আপনাদের দেখে ভাবলাম আপনাদের সাথে দেখা করা যায়। ‘
সুমাইয়াও পরক্ষনে মুচকি হেসে প্রশ্ন দিলো,
‘ সানা শুনেছিলাম তোমাদের ছেলে হয়েছে, সে কোথায়? ‘
সায়েদ মাথা চুলিয়ে উত্তর দিলো, ‘ আমাদের ছেলে আবার ভারি দুষ্টু। তাকে নিয়ে কি আর শপিং করা যায় ঠিকমতো, করা যায়। তার মধ্যে সামনে ইদ। ‘
‘ যাক গে সবশেষে তোমরা যে সুখী আছো, এইটাই অনেক। ‘
সুমাইয়ার কথায়, সানা মুচকি হাসে। হ্যা সে সত্যি ভাগ্যবান সায়েদের মতো স্বামী পেয়ে। সায়েদের জন্যেই নিজের ভয়ংকর অতীতকে ভুলতে পেরেছিলো সে।

অপরদিকে রিমির কাজের মাঝে, নিজের গাঁয়ে থাকা এপ্রোন খানা খুলে, জানালার কাছে দাঁড়ায়। বিষন্ন লাগছে সবকিছু। অয়নের ছবিখানা বের করে বক্ষে জড়িয়ে নেয়। আকাশে ঘন কালো মেঘ জমতে শুরু করলো। কিছুক্ষনের মাঝেই ধরনীতে বৃষ্টিপাত শুরু হলো। রিমি ছুইয়ে দেখলো সেই পানি। তার নেত্রকোণে ভীর করে
জল। রিমি ভেজা গলায় গাইতে থাকে,
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
আমার এতো সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না
সে যেন এসে দেখে

পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না
রিমি গানটি গাইতে গাইতে কেঁদে দেয়। হুট করে একজন দেহরক্ষী এসে জানায়, অয়রিকে পাওয়া যাচ্ছে না। অয়রী নিরর্দেশ!

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬২

[কালকের পর্বে ঝটকা আছে,??সবাই রেডি তো?]

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬৪

1 COMMENT

Comments are closed.