তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬৪

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬৪
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

নিজের মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে,একপ্রকার মাথায় ভাজ পরলো যেন রিমির। রিমি সবকিছু ফেলে, হসপিটাল থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে পরলো।
রিমিকে বেড়োতে দেখে কয়েকজন দেহরক্ষী মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। রিমি তাদের দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে, চেচিয়ে বললো,

‘ আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন? ওদিকে আমার মেয়েকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না,সেদিকে কোন খেয়াল আছে আপনাদের? কি করে হলো এইসব?’
দেহরক্ষীগণ মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। একজন অত্যান্ত নিচু গলায় বললো,
‘ আসলে ম্যাম, আমরা তো অয়রি ম্যামকে স্কুলে ঢুকিয়ে বাইরে দাঁড়িয়েই ছিলাম, কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরে, ম্যাম যখন বেড়োলেন না, তখন আমরা স্কুলে প্রবেশ করলাম, কিন্তু কোথাও ম্যামকে দেখতে পারলাম না। ‘
রিমি পা পিছিয়ে পিছনে হটে যায় কিছুদূর। মাথা কাজ করছে না তার। এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রিমি কিছু না ভেবে ফারহানকে ফোন করে জানায়, ফারহান সবকিছু শুনে রিমিকে জানায়, ‘সে যেন দ্রুত থানায় চলে আসে, মিসিং ডাইরি করতে হবে। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুহানা চৌধুরীর কাছে খবর পাওয়া মাত্রই, তিনি উত্তেজিত হয়ে পরেন। উপরের মহলে ফোন করে, দ্রুত ব্যাবস্হা নিতে বলেন, এমনকি তিনি পুলিশের বড় কর্তাদের ফোন করে হুমকির সুরে বলেন,
‘ ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমি আমার অয়রিকে দেখতে চাই, নাহলে সবগুলোর খবর আছে। ‘

রুহানা চৌধুরী ফোন টা কেটেই, সোফায় বসে পরেন। হাত বাড়িয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেন। কপাল বেয়ে ঘাম বেড়োচ্ছে, বয়স্ক মানুষ এই বয়সে এতো চিন্তা কিংবা দখল কোন কিছুই নিতে পারেন না তিনি। অয়নের পরে, অয়রিই একমাত্র মানুষ,যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসেন রুহানা চৌধুরী। অয়রির কোন প্রকার ক্ষতি তিনি সহ্য করবেন না। সুমাইয়া দূর থেকে রুহানা চৌধুরীর অবস্হা বেগতিক দেখে, সার্ভেন্টদের দিয়ে পানি আনিয়ে, রুহানা চৌধুরীর মুখের সামনে ধরে বললেন,

‘ গ্রেন্ডমা! পানিটা খেয়ে আপনি একটু শান্ত হন। আপনি যদি এখন উত্তেজিত হয়ে পরেন, তাহলে রিমিকে কীভাবে সামলাবেন বলুন তো? আপনিই তো আমাদের এখন একমাত্র ভরসা। ‘
রুহানা চৌধুরী সুমাইয়ার হাত থেকে পানি নিয়ে ঢগঢগ করে খেয়ে ফেললেন। সুমাইয়া মেঘকে দেখে প্রশ্ন করে,
‘ সুমাইয়া বাড়ির এই পরিস্হিতিতে, তুমি কোথায় যাচ্ছো? ‘
মেঘ কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে রেডি হয়ে বেড়োচ্ছিলো, সুমাইয়ার প্রশ্ন শুনে থেমে যায়। মেঘ কোনমতে আমতা আমতা করে উত্তর দেয়,
‘ আসলে ভাবি আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, আমাকে এখন বেড়োতেই হবে, আমি যাই কেমন? ‘

মেঘ দাঁড়ালো না, বরং দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো। সুমাইয়ার মনে প্রশ্ন জাগলো বেশ। অয়রিকে পাওয়া যাচ্ছে না,কিন্তু মেঘের মুখস্রীতে চিন্তার কোন ছিঁটেফুটাও নেই, অথচ মেঘের সবথেকে আদরের অয়রি, কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সুমাইয়া।
অপরদিকে, থানায় অফিসারের কেবিনে বসে রয়েছে রিমি এবং ফারহান্। অফিসার তার সমস্ত সোর্স লাগিয়ে, অয়রিকে খুঁজার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে ফারহান রিমিকে শান্ত করার চেষ্টায় রয়েছে, কিন্তু ব্যর্থ সে! কিছুক্ষনের মাঝে সাদেক ও এসে তার সোর্স লাগিয়ে, অয়রির স্কুলে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছেন, কিন্তু সেখানেও কোনপ্রকার ফুটেজ নেই, সব যেন গাঁয়েব! বিষয়টি বেশ রহস্য লাগছে সাদেকের। অয়রির কোনপ্রকার খবর না পেয়ে, নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা রিমি। হু হু করে কেঁদে উঠে সে। নিজেকে দায়িত্বহীন মা এবং স্ত্রী মনে হচ্ছে, যে নিজের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ অপরদিকে, অয়রির দায়িত্ব অয়ন তাকে দিয়ে গিয়েছিলো, তা পালনেও ব্যর্থ সে! রিমি লুহু লুহু কাঁপছে। ফারহানের হঠাৎ করে ফোন আসায়, সে উঠে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে, কিছুক্ষনের জন্যে বাইরে যায়। রিমি কিছুক্ষন স্হীর হয়ে তাকিয়ে থেকে,বাইরের দিকে বেড়িয়ে আসে। মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, কাজ করছে না কিছু।

অন্যদিকে, অয়রি গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সারাদিন ধরে কিচ্ছু খাইনি সে, না খাওয়ার ফলে মুখখানি এইটুকুখানি হয়ে রয়েছে! অয়রির জানা মতে, তাকে জোড় করে কয়েকজন মেয়ে গুন্ডা তুলে নিয়ে আসে সকলের অগোচরে। যদিও তারা গুন্ডা টাইপ নয়, বেশ মোলয়ম স্বভাব তাদের। সারাক্ষন শুধু কানের কাছে ‘ম্যাম, ম্যাম ‘ করছে। তাদের আচরণে মোটেও অয়রির মনে হয়নি, তাকে অপহরণ করা হয়েছে, সিনেমার মতো মোটেও তাকে কোন অন্ধকার রুমে বন্ধী করা হয়নি,বরং বিশাল আলিশান রুমে তাকে রাখা হয়েছে। তার সামনে রয়েছে হরেক রকমের খাবার, কিন্তু অয়রি কিছুতেই খাচ্ছে না, তা নিয়ে মহিলা সার্ভেন্টদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
‘ অয়রি ম্যাম কিছু খেয়ে নিন, নাহলে স্যার আমাদের আস্ত রাখবে না। ‘

অয়রি হাত ভাজ করে, মুখ ফুলিয়ে তেজি গলায় উত্তর দেয়, ‘ আগে আপনাদের স্যারদের ডাকুন, নাহলে আমি কিচ্ছুটি খাবো না। আপনারা জানেন আমি কে? আমি হচ্ছি ডক্টর অয়ন চৌধুরী এন্ড রিমি চৌধুরীর মেয়ে। বুঝলে? ‘
একপ্রকার এক আঙ্গুল দিয়ে শাষিয়েই বলে অয়রি। সার্ভেন্টগুলো একপ্রকার ঘাবড়ে যায়। একজন বিড়বিড় করে বলে,
‘ যেমন বাপ, তেমনই মেয়ে। ‘
‘ কি হলো ডাকো তোমাদের স্যারকে। ‘
অয়রির চিৎকারে সবাই চলে যায় ধীরে ধীরে। তখনি পিছন থেকে কেউ গেঁয়ে উঠে,
লক্ষীসোনা, আদর করে দিচ্ছি তোকে
লক্ষ চুমু, মায়া ভরা তোরই মুখে।

কলিজা তুই আমার,
তুই যে নয়নের আলো
লাগেনা তুই ছাড়া,
লাগেনা তো যে ভালো।
রূপকথা তুই তো আমারই,
জীবনের চেয়ে আরো দামি।

অয়রি গানটি শুনে পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে, অয়ন পিছনে হাত ভাজ করে, কালো ব্লেজার পরিহিত। মুখে এক চিলতি চমৎকার। অয়রি কিছুক্ষন চোখে হাত দিয়ে কচলালো। তার বিশ্বাস হচ্ছে না, তার সামনে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে, তাও এতো বছর পর। যাকে এতোদিন ছবির ফ্রেমে দেখে এসেছে, আজ সে স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছে অয়রির সামনে। অয়ন হাত বাড়িয়ে নিজের মেয়েকে কাছে ডাকে, অয়রি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। অয়ন নিজের মেয়ের মনের অবস্হা বুঝতে পেরে, নিজেই হাত বাড়িয়ে মেয়ের কাছে গিয়ে, মেয়ের মাথায় আলতো করে, হাত বুলায়। অয়রি নেত্রপল্লব নিমিষেই বুজে ফেলে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের পাপাকে, যার জন্যে ছোট্ট অয়রির এতো অপেক্ষা! অয়রি তার বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে খুশির সহিত বললো,

‘ পাপা তুমি কখন এলে? তুমি আমাকে নিয়ে এসেছো? ‘
অয়ন অয়রির মাথায় হাত রেখেই, স্নেহের সাথে বলে,
‘ হ্যা আমার লিটেল চ্যাম্প আমিই তোমাকে নিয়ে এসেছি, দেখতে এসেছিলাম আমার চ্যাম্প তার বাবার মতো হয়েছে কিনা। ‘
অয়রি গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন ভেবে, হুট করে লাফিয়ে উৎসাহের সাথে বলে, ‘ পাপা তুমি এসেছো মাকে তো জানাতে হবে, তুমি জানো? মা তোমার জন্যে কবে থেকে অপেক্ষা করছে। ‘
অয়রিকে থামিয়ে দিয়ে, অয়ন অয়রির গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলে, ‘ এখন তোমার মাম্মামকে কিছু বলা যাবে না। সারপ্রাইজ আছে তোমার মাম্মামের জন্যে। ‘
‘ কিন্তু কি সারপ্রাইজ পাপা? ‘

অয়রির প্রশ্নে অয়ন শুধু হাসে, অয়ন হাসলেও পরক্ষনে বুকটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলো, কিন্তু সেই ব্যাথার কারণ আদোও জানে না অয়ন।
ধূসর রংয়ে আকাশ ফিকে হয়ে পড়েছে। খা খা রৌদ্দুরের ছিঁটেফুটাও নেই। কেমন একটা ভয়ংকর নিরবতা বিরাজমান সর্বদিকে। রিমি ছুটে চলেছে এদিক, ওদিক। সে জানে না সে কোথায় যাচ্ছে, সে শুধু জানে, তাকে যেতেই হবে। তাকে খুঁজে বের করতে হবে,নিজের মেয়েকে। রিমির হুট করে কেন যেন মাথাটা ঘুড়িয়ে গেলো, হাত থেকে পরে গেলো পার্সটা। রিমি মাটিতে লুটিয়ে পরলো। সামনে ট্রাক এগিয়ে আসছে রিমির দিকে। রিমি উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। নেত্রকোণা বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো তার………

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬৩

[প্রথমেই আমি ক্ষমাপ্রার্থী ৩দিন গল্প না দেওয়ার জন্যে, আসলে ইদের জন্যে আমি বাসাতে ছিলাম, না তাই লিখতে পারেনি অপরদিকে আমি চেয়েছিলাম, আজকে গল্পের ইতি টেনে দিবো, কিন্তু তাও পারলাম না। আগামী পর্বে ইতি টেনে দিবো ইনশা-আল্লাহ। আমি প্রথমেই বলে দিচ্ছি যেকোন এন্ডিং এর জন্যে প্রস্তুত থাকবেন]

তুমিময় নেশায় আসক্ত শেষ পর্ব