তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৯

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৯
Jannatul ferdosi rimi (লেখিকা

মনে পাথর নামক বস্তুটি রেখে,নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে একটা সিধান্ত গ্রহণ করলো রিমি।অয়নের ঘরে গিয়ে,খট করে দরজা বন্ধ করে দিলো। অয়ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনমনে ঠোটে সিগারেট চেপে, উপরের দিকে ধোঁয়া ছাড়ছিলো অয়ন। রিমিকে দেখে,ভ্রু কুচকে তাকায়। রিমি তার ওড়নায় আঙ্গুল পেঁচিয়ে বারংবার অয়নের দিকে ভিতু নয়নে আড়চোখে তাকাচ্ছে। অয়নকে কী করে মালেয়িশার কথার বলবে, রিমি বুঝতে পারছে না। শান্ত নিরব পরিবেশ, কিন্তু রিমির মনে বইছে উত্তাল ঝড়। গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। অয়নকে নিজের থেকে দূরে রিমিও, যেতে দিতে চাইনা, কিন্তু অয়নের ভালোর জন্য হলেও, অয়নকে রাজি করাতে হবে। রিমির ভাবনার মাঝেই, ইশা বিনা অনুমতি কক্ষে প্রবেশ করে বলতে শুরু করে,

‘ রিমি তোমার কথামতো অয়নের প্লেনের টিকিট বুক করে ফেলেছি। কালকেই অয়নকে তাদের সাথে যেতে হবে। ‘
ইশা কথাটি বলেই অয়নকে দেখে বেশ বড়ভাবে চমকে যায়। ইশা হয়তো অয়নকে খেয়াল না করেই কথাগুলো বলে ফেলেছে, তা তার চোখমুখ দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। অয়ন তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, রিমির পানে চেয়ে, অস্হির হয়ে বলে,
‘ কিসের বুকিং? আমার অনুমতি ব্যাতীত তুমি কি করেছো রিমিপরী? স্পষ্ট করে বলো। আন্সার মি পরী। ‘
অয়ন শেষের কথাটি চিৎকার করেই বললো। রিমি বুঝতে পারছে না,অয়নকে কি করে বলবে। রিমিকে দ্বিধায় পড়ে যেতে দেখে, ইশা নিজেই বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ দেখ অয়ন, তুই আগেই রাগ করিস না। আগে একটু ভালো করে ভেবে, তারপর যা বলার বলবি। রিমি এবং আমরা সবাই তোর ভালো চাই। আমরা চাই, তুই আরো কয়েয়কজন মানুষের মতো স্বাভাবিক ভাবে যেন বাঁচতে পারিস। তাই কয়েকটা বছরের জন্যে তোকে মালেয়েশিয়া যেতে হবে। তুই তো নিজেও ডক্টর হয়ে বুঝতে পারছিস, এইসব ড্রাগসের জন্যে তুই ধীরে ধীরে মৃ/ত্যুর পথে চলে যাচ্ছিস। ‘
অয়ন ইশাকে হাতের ইশারা দিয়ে থামতে বলে। যে যা বুঝার বুঝতে পেরেছে, অয়ন রক্তচক্ষু নিয়ে রিমির দিকে এগিয়ে আসে। এসি চললেও, অনাবরত ঘেমে চলেছে রিমি। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে রিমি। রিমিকে একপ্রকার এড়িয়ে, বারান্দায় গিয়ে শান্তভাবে বসে পড়ে অয়ন। অতঃপর পুনরায় সিগারেটে টান দিয়ে, পাশে থাকা ফলের ছু/ড়ি খানা দিকে তাকিয়ে, কঠোর বানী শুনিয়ে বলে,
‘ অয়ন চৌধুরীর লাইফে অন্য কেউ ডিসিশন নিবে এখন? ওয়াট দ্যা..যাই হোক। আমি কোথাও যাচ্ছি না,এন্ড দ্বিতীয়বার যেন, এ কথা না বলা হয়। ‘

‘ কিন্তু ডক্টর এয়ারসি। ‘
রিমি তার কথা বলার পূর্বেই, অয়ন তাকে থামিয়ে দিয়ে, গম্ভীর ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আমি আর একটাও বাজে কথাও শুনতে চাইনা। আমি কোথাও যাচ্ছি না। ‘
অয়ন শান্তভাবেই একপ্রকার শাসিয়ে কথাগুলো বলে থামলো। ইশা হতাশ হলো, সে জানতো অয়নের থেকে প্রতাক্ষানই পেতে হবে। তাই সে বেড়িয়ে গেলো। রিমি ইশার পথপানে তাকিয়ে, অয়নের দিকে
তাকালো। অয়ন হুট করে এগিয়ে, রিমির হাত ধরে, রিমিকে নিজের কোলে বসিয়ে, রিমির কাঁধে নিজের থুত্নি রেখে, রিমির হাতে নিজের হাত পুরে বলতে লাগলো,
‘ রিমিপরী তোমার সাইকোর থেকে, তুমি নিজেকে কখনোই দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। মাইন্ড ইট। ‘
রিমি বিপরীতে অয়নের বুকে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। অবুঝ অয়নের অভিমানী কথার বিপরীতে খুবই শান্তভাবে জবাব দিলো,
‘ অনেক সময় সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্যে, কিছু বর্তমানকে নষ্ট করতে হয় ডক্টর এয়ারসি। আর দূরত্বের কথা বলছেন? দূরত্ব তো মনের উপর নির্ভর করে, শত চেষ্টা করেও কেউ আমার হৃদয় থেকে আপনার নাম মুছে ফেলতে পারবে, কখনোই না। আপনার রিমিপরী সবসময়, আপনার কাছেই থাকবে। ‘

রিমি কথা বলতে বলতে খেয়াল করে, অয়ন আখিজোড়া বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গিয়েছে একপ্রকার, কথার মাঝেই। রিমি জানে সবকিছুই ড্রাগসের প্রভাব। রিমিকে দ্রুতই কঠোর ব্যবস্হা নিতে হবে, অয়নের ভালোর জন্যে। রিমি অয়নের বুকে মাথা ঠেকিয়ে নেত্রকোণা বন্ধ করে, ঘুমাইতে চাইলো না, কিন্তু তার ঘুম যেন আজ তার সাথে অভিমান করেছে, কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। রিমি চোখ বুঝেই, ফুপিয়ে কেঁদে ফেলে অজান্তেই। নিজের ভালোবাসার মানুষটার বুকে কালকে আদোও ঠাই হবে কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই, তাই রিমি ঘুমালো না। অয়নের বুকে মাথা রেখেই, সারারাত প্রানভরে নির্দয় নিষ্ঠুর প্রেমিক পুরুষকে দেখে নিলো, যদিও রিমির মনে হয় শত শত যুগ পার হয়ে গেলেও, তার আখিজোড়া তৃপ্তি পাবে না।

ভোরের আলো ধীরে ধীরে ফুটতে শুরু হলো। সকালের সূচনা হলো নতুন কোন আশার আলোর সাথে। হয়তো নতুন কোন সূচনার শুরু হতে যাচ্ছে। অয়ন ধীরে ধীরে আখিজোড়া খুলে দেখে, রিমি অয়নের বুকে মাথা রেখে নিষ্পলক অয়নকে দেখে যাচ্ছে। অয়নকে দেখে মিষ্টি হেসে বললো,
‘ শুপ্রভাত ডক্টর এয়ারসি। ‘
অয়ন অবাক হয়ে, মুখে হাত দিয়ে বলে,
‘ রিমিপরী তুমি ঘুমাও নি? ‘
রিমির দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘ উহু! সামনে আপনার মতো সুর্দশন প্রেমিক থাকলে কি ঘুমাতে ইচ্ছে করে? তখন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে ইছে করে। ‘
প্রেয়সীর ঠাট্টা বুঝতে পেরে, অয়ন ভ্রু কুচকে বলে,
‘ তাহলে তো বেশ বড় অপরাধ করে ফেলেছো তুমি। ইউ নিড টু পানিস্টমেন্ট রাইট নাউ। আমার মতো অবলা ছেলেকে সারারাত চোখ দিয়ে গিলেছো, ইউ নিট টু পে ফর দিজ। ‘

কথাটি বলেই অয়ন অধরজোড়া রিমির দিকে এগিয়ে নিয়ে এলে, রিমি অয়ন বুকে আলতো ধাক্কা মেরে, উঠে যেতে নিলে, পিছন থেকে অয়ন রিমির হাত ধরে, রিমিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে, রিমির উপর আধশোয়া অবস্হায় দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
‘ অয়ন রওযাক চৌধুরীর সাথে ফ্লাইটিং? উহু তোমাকে আমি এখন ছাড়ছি না। শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। ‘
রিমি অয়নের বুকে ধাক্কা দিয়েও রেহাই পায়। গাল ফুলিয়ে, অবশেষে অয়নের কাছে হার মেনে নেয়। অয়ন মুচকি হেসে, রিমির ললাটে অধর ছুইয়ে দিয়ে বলে,
‘ পরী কিছুক্ষন নিরব হয়ে থাকো, আমিও তোমায় প্রানভরে দেখে, অন্তরের তৃপ্তি সাধন করি। ‘
‘ কতক্ষন তাকিয়ে থাকবেন? ‘
‘ গোটা জীবন তাকিয়ে পার করে দিবো। ‘

অয়ন কিছু ফাইল চেক করতে করতে বের হচ্ছিলো, ড্রইং রুমে হসপিটালের ইউনিফর্মে থাকা কিছু লোকদের দেখতে পেলো। রুহানা, ইশা, মেঘ, ফারহান এবং সুমাইয়াও ছিলো। অয়নের তাদের ইউনিফর্ম দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না,উনারা আসলে সাইকোথেরাপিস্ট।
অয়ন তাদের দেখেই প্রশ্ন করলো,
‘ উনারা এখানে কেন? ‘
উনাদের মধ্যে একজন উত্তর দিলো,
‘ ডক্টর এয়ারসি, আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে। ‘
অয়ন সঙ্গে সঙ্গে ইশার দিকে একপ্রকার তেড়ে গিয়ে, চিৎকার করতে করতে বললো,
‘ তোকে আমি মানা করেছিলাম না? আমার অনুমতি ব্যাতিত কোন কাজ না করতেও, তাও তুই সেই একি কাজ করলি? গার্ডস! এখুনি উনাদের বের করো। ‘

‘ গার্ডসদের ডেকে লাভ নেই। ইশা আপুর কোন দোষ নেই, ডক্টর এয়ারসি। আমি উনাদের ডেকে পাঠিয়েছি ডক্টর এয়ারসি এবং আপনাকে উনাদের সাথেই যেতেই হবে। ‘
রিমি সিড়ি থেকে নামতে নামতে অয়নের প্রশ্নের বিপরীতে কড়া উত্তর দিলো। একজন অয়নের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে, অয়ন সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে ব/ন্দুক বের করে তার হাতে গু/লি করে দিলো এবং ব/ন্দুক হাতে নিয়েই রাগে বেড়িয়ে গেলো। সকলে হতভম্ব! রিমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
‘ আমাকে এখুনি ডক্টর এয়ারসিকে আটকাতে হবে, এট এনি কস্ট। আমাকে উনাকে আটকাতেই হবে। ‘

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫৮

রিমি এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না অয়নের পিছন পিছন বেড়িয়ে গেলো। অয়ন গাড়ি নিয়ে সবেমাত্র বেড়িয়েছে, রিমিও অয়নের পিছনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। অয়ন দ্রুততার সাথে গাড়ি চালাচ্ছে, রাস্তায় কাউকে পরোয় করছে না। সবকিছু ক্রস করে সে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, রিমিও তার গাড়ির স্প্রিড বাডিয়ে দিলো। অয়ন গাড়িটি একটি পুরোনো বাড়ির সামনে রাখে এবং গটগট করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। রিমিও দ্রুত পায়ে অয়নের পিছন পিছন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। রিমি প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সদরদরজা বন্ধ হয়ে যায়। উচ্চস্বরে হেসে উঠে অয়ন। পিছন থেকে…….

তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৬০

2 COMMENTS

Comments are closed.