ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

দরজাটা খুলতেই অধরা দেখতে পেলো অয়ন বেশ রাগি একটা লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অধরাকে দরজার ওপারে দেখতে পেয়ে তার‌ রাগ আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ভ্রূ কুঁচকে অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এতো রাত উবদি জেগে আছো কেনো? বাসায় কি অন্য কেউ নেই যে দরজা খুলে দিবে? তোমাকে কেনো আসতে হবে? যত্তসব নেকামি

* কথাটা শুনতেই অধরার হাস্যজ্বল মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। খুব সাধ ছিলো হয়তো তার প্রিয়জন ভালোবাসার মানুষটি তার সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বলবে। বেশি না একটু বুঝবে তার মনের কথা গুলো, তাকে নিয়ে তার মধ্যে থাকা অনুভূতি গুলো। আচ্ছা নিজের স্বামীর জন্য অপেক্ষা করা। সারা দিন পরে তাকে সামনে দেখে আর বুকে মাথা রাখা। একটু আলতো ভালোবাসার আবেশে জড়িয়ে ধরা। এসব কি ভালোবাসা নয়? এসবকে নেকামো বলে? অধরা অনেক আশা করে বসে ছিলো তার স্বামী তার সাথে মন খুলে কথা বলবে। একটু ভালোবাসা দিবে। কিন্তু অধরার কপালে সেইটুকুও নেই। অশ্রুসিক্ত অধরার চোখ জোড়া অয়নের চোখের মাঝে তার জন্য একটু ভালোবাসা খুঁজে চলেছে। কিন্তু অয়নের চোখে তার জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম তো তাই আরকি ঘুমা আসে নাই। তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
— রেগে যাবো না তো কি করবো? আমার জন্য অপেক্ষা করার কি হলো? আজব।
অয়ন নিজের ডান হাত দিয়ে অধরার বাম বাহু স্পর্শ করলো। আলতো করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো অধরাকে নিজের সামনে থেকে। অধরা সরে যেতেই অয়ন হনহন করে নিজের রুমে প্রবেশ করলো। ফোনটা সোফার উপর ফেলে ফ্রেশ হতে চলে যায় অয়ন। অধরা এক পা এর উপর ভর করে ভিশন কষ্ট করে খুরিয়ে খুরিয়ে রুমে চলে এলো। বিছানার একটা কোনে ধিরে বসে একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে অধরা। “সেই সদর দরজার সামনে থেকে এই রকম মচকে যাওয়া পা নিয়ে খুরিয়ে খুরিয়ে এসেছি এতো দূর।

আমার কষ্ট গুলো কি আর আগের মতো অয়নের মনের মধ্যে ঝড় তুলে না? সে কি আর আগের মতো আমার কষ্ট গুলো উপলব্ধি করতে পারে না? পারবেই বা কি করে? আগেরকার অয়ন আর এখনকার অয়নের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। দুটি সময়ের জন্য দুটি ভিন্ন মানুষ”।
* অধরা বিছানার সাথে সামান্য একটু হেল দিয়ে বসে আপন মনে কথা গুলো ভাবতে লাগলো। প্রিয় মানুষটার এমন বদলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। কিছু সময় যেতেই অয়ন ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। অয়ন বেরিয়ে এসে দেখতে পেলো অধরা বিছানায় বসে আছে। অয়ন কয়েক মিনিট অধরার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। অয়নের বিপরীতে অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে অধরা। অয়ন আয়নার দিকে তাকিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— পা এ আঘাত কি করে লাগলো?
অয়নের কন্ঠস্বর অধরার কান উবদি পৌঁচ্ছতেই অধরা ভাবনার আকাশ থেকে বাস্তবে ফিরলো। অধরা মৃদু কন্ঠে অয়নকে বলল
— রান্না করতে গিয়ে।
— ওহহ, ঔষধ দিয়েছো?
অধরা এবার আর অয়নের কথার কোনো জবাব দিলো না। বিছানা থেকে উঠে অধরা সোজা ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। অয়নের করা এই অবহেলা গুলো বড্ড বেশি কষ্ট দেয় তাকে। অধরা ব্যল্কনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। প্রিয়জনের আঘাতে আহত তার হৃদয়।
* রাতে অয়নের পাশেই অধরা শুয়ে পরলো। যদিও আগে অয়নের বুকে মাথা না রেখে অধরার ঘুম আসতো না। এখন আর সেই বুকের প্রয়োজন পরে না। যেদিন তার এই বুকে ঘুমানোর আবদারটা অয়নের কাছে ন্যাকামো মনে হয়েছে। সেই দিন থেকে অধরার এই বুকে ঘুমানোর ইচ্ছে টা মরে গেছে। অধরার এখন ঘুম সত্যি আসেনা ঠিক। তবে কোনো মতে চোখ বন্ধ করে রাত্রি পার করে নেয় সে।

মাঝ রাতে হঠাৎ করে অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কোনো কারন ছাড়াই অধরা বেশ বিচলিত হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পরে বিছানায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে অধরা নিজের মনকে শান্ত করে বোঝায় সব ঠিক আছে। নিজেই আবার একটু শান্ত হয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পরলো। অধরা আবার বিছানায় শুতেই হঠাৎ সে শুনতে পেলো ফোনের রিং টোন এর শব্দ। অধরা কান সজাগ করে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
* অয়ন বেশ সতর্কতার সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে অধরার পাশ থেকে উঠে চলে যায় ব্যল্কনির দিকে। অয়ন চলে যেতেই অধরা বিছানা থেকে উঠে পরে। অয়নের পিছন পিছন অধরাও চলে আসে ব্যল্কনির কাছে। অধরা মৃদু কন্ঠে শুনতে পাচ্ছে ব্যল্কনির এপার থেকে। অয়ন বলছে
— মানে? এই সব কি বলছো ইরা? তুমি মা হতে চলেছো মানে? অধরা এসব শুনতে পেলে কি করবে বা কি করতে পারে একবার ভেবে দেখেছো? বিন্দুমাত্র ধারনা আছে তোমার? আচ্ছা এখন রাখো আমি কাল বিকেলে তোমার সাথে দেখা করছি। অধরা জেগে গেলে আবার জেরা করবে। এখন রাখছি।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন কলটা কেটে দিলো। দেয়ালের সাথে একটু হেল দিয়ে দাঁড়িয়ে অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো অয়ন কেউ আছে কি না? না নেই। নিজের রুমের দিকে উঁকি দিতেই দেখতে পেলো অধরা বিছানায় শুয়ে আছে। অয়ন নিশ্চিত হলো এইবার। পকেট থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে মুখে তুলে নিলো সে। অয়ন ভাবছে ইরার কথা। “মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। এখন এই খবরটা যদি একবার অধরার মা বাবা বা অন্য কারো কানে যায়। তখন তো সবাই ইরাকে ফোর্স করবে কে তার বাচ্চার বাবা তা জানার জন্য। যদি ইরা সব সত্যি সবাইকে বলে দেয়‌ তো সব শেষ। অধরার মা বাবার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। না, না কিছু একটা করতেই হবে। তা না হলে অনেক বড় সমস্যায় পড়তে হবে”।

* বিছানায় শুয়ে তো ঠিকই আছে অধরা কিন্তু চোখের কোনে ঘুম নেই তার। অয়নের বলা কথা গুলো অধরার কানে বেজে চলেছে। “তার মানে ইরা প্রেগন্যান্ট! অয়নের সন্তানের মা হতে চলেছে ইরা”। এই কথাটা বার বার এসে অধরার বুকে প্রচন্ড আঘাত করছে। অধরা কিছুতেই পারছে না এই কথা গুলো বিশ্বাস করতে। যে অয়ন এতোটা স্বপ্ন আমায় দেখিয়েছে। সে কি করে আমায় ঠকাতে পারে? আপন মনে ভাবছে অধরা। চোখের জলে বালিশ ভিজে যাবে তার। অয়নের ভাগ কাউকে দিতে পারবে না সে। অয়ন তার একান্তই ব্যক্তিগত প্রিয়জন ছিলো। যাকে কখনও অন্য কারো সাথে শেয়ার করার কথা তো দূর। ভূল করে কল্পনাও করা যাবে না। আজ সেই প্রিয়জন অন্য কারোর প্রিয়। অন্য কারোর সন্তানের বাবা হতে চলেছে। আমার কি এমন অপরাধ ছিলো যার জন্য অয়ন আমাকে এতো বড় শাস্তি দিলো! এর থেকে বরং অন্য ভাবে সাজা দিতো আমার অপরাধের। আমি মেনে নিতাম। কিন্তু এই ভাবে কেনো অয়ন? মানতে পারছি না তো আমি। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। ভালোবাসার শাস্তিটা এতোটাই ভয়ানক অয়ন। আগে জানলে কখনও তোমায় ভালোবেসে এমন ভূল করতাম না আমি।

* প্রচন্ড কষ্টে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অধরা। ভিশন ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে অন্য কারোর হতে দেখলে কার না কষ্ট হবে? অয়ন সিগারেট শেষ করে অধরার পাশে এসে শুয়ে পরলো উল্টো দিক মুখ করে। অধরার বুকের মধ্যে যে দহন সৃষ্টি হয়েছে তা অয়নের বোঝার কথা নয়। অয়ন নিজের মতো ঘুমিয়ে পরলো।

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১

* ভোর হতেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন চোখ মেলতেই দেখতে পায় অধরা ঘুমাচ্ছে। অয়ন অধরাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। কারন “অধরা এর আগে তো কখনও আমার পরে ঘুম থেকে উঠে নাই। সব সময় নিজে আমাকে ডেকে তুলেছে। কিন্তু আজ এখনো ঘুমাচ্ছে”! কথাটা শেষ হতেই অয়ন অধরার কপালে আলতো করে নিজের হাত স্পর্শ করে। অয়নের ছোঁয়ায় একটু নরে উঠে অধরা। অয়ন অধরাকে স্পর্শ করে বুঝতে পারলো সে ঠিক আছে। জ্বর বা অন্য কিছু নাই। শরীর ঠিক আছে। অয়ন শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে অধরার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিতেই অধরা চোখ মেলে তাকায়। হঠাৎ করে অধরা জেগে গেছে দেখে অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অধরা অয়নকে অবাক করে দিয়ে…………………..

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ৩

3 COMMENTS

Comments are closed.