ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি গল্পের লিংক || লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ১
লেখকঃআয়ান আহম্মেদ শুভ

নিজের স্বামীর ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু ম্যাসেজ দেখে চোখ জোড়া ছানা বড়া হয়ে যায় অধরার। এইসব কি দেখছে সে‌? নিজের চোখকে বিশ্বাস করা দায় হয়ে পরেছে আজ। একের পর এক ম্যাসেজ। ম্যাসেজ গুলো ফোনের স্ক্রিন থেকে সোজা অধরার বুকে এসে বিঁধছে। অসহ্য যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছে অধরার বুকের বাম পাশে। এক মিনিটের মধ্যে অয়নের জন্য ধিরে ধিরে তৈরি হওয়া অধরার বিন্দু, বিন্দু ভালোবাসা সব কাঁচের মতো ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো।

অধরার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল উঁকি দিতেই তার কানে দরজা বন্ধ করার শব্দ ভেসে আসে তার স্বামী অয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। অয়নের এদিকে এগিয়ে আসাটা অধরার মনে ভয় তৈরি করে দিয়েছে। অধরার ভয় হলো সে চায় না অয়ন জানতে পারুক সব কিছু। অধরা চায় না অয়ন জানতে পারুক যে তার সব কিছু সম্পর্কে আমি অবগত আছি। অধরা তরিঘরি করে ফোনটা আগের জায়গা মতো রেখে দিলো। নিজেকে একদম শান্ত করে নিলো অধরা। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি আর সে কিছুই জানে না। অয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখতে পায় অধরা বেশ শান্ত মেজাজে বিছানা গোছাচ্ছে। অয়ন বিয়ের পর ঠিক এই সময় অধরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদর করতো। কিন্তু এখন আর তেমন হয় না। সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা ও বদলে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

* অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা ঝাড় দেয়া শেষ করতেই অয়নের দিকে তাকালো। অয়নের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের এক ঠোঁট দিয়ে অন্য ঠোঁট চেপে কামড়ে ধরে চুল ঠিক করছে। শার্ট নেই অয়নের পরনে। উন্মুক্ত শরীর টা স্পষ্ট অধরার সামনে। হঠাৎ করে অধরার সেই প্রথম দিনের কথা মনে পরে যায়। যেদিন অয়নের সাথে তার প্রথম দেখা হয়। দিনটা বেশ কাকতালীয় ছিলো। অয়ন ভূল করে অধরার বাসায় সামনে এসে চিৎকার করে অধরাকে ডাকতে লাগলো। অধরা তো অয়ন কে দেখে পুরো থ হয়ে যায়। আসলে একটা অপরিচিত ছেলে ব্যল্কনির বাহিরে থেকে চিৎকার করে নাম ধরে ডাকলে যে কেউ অবাক হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। অধরাও তার ব্যতিক্রম নয়। অধরা অয়নকে দেখে এক অজানা ভালো লাগার অনুভূতিতে হারিয়ে যায়। হঠাৎ করে অধরার ঘোর কাটে অয়নের কথাতে। অয়ন তাকে উদ্দেশ্য করে বিরক্তির সুরে বলতে‌ লাগলো

— এই যে অধরা কোথায়? ওকে ডেকে দিন তো।
কথাটা শুনে অধরা একটু অবাক হলো। যদিও সেই অধরা তবে আর কোন অধরাকে ডাকতে বলছেন উনি? অধরার ভাবনার মাঝে অয়ন কর্কশ গলায় বললে উঠলো
— কালা না‌কি? কথা কানে যায় না?
— ওয়াট? এই মিস্টার কি বললেন আপনি? আমি কালা!
— হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। অধরাকে ডেকে দিন।
— আপনি মনে হচ্ছে গাঁধা। এই কলনিতে আমি এক মাত্র অধরা জাহান। আর কোনো অধরা এখানে থাকে না। মিস্টার উগান্ডা বাসি।
অধরার কথা শুনে অয়ন থ মেরে যায়। মুখটা বাংলার পাঁচ এর মতো করে নিজের এক বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলে অধরার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলতে লাগে অয়ন
— সরি, আসলে একটা মিস আন্ডাসটেন্ডিং হয়েছে। সরি।
— ইট’স ওকে।

অধরা মুখ ভেংচি কেটে চলে যায় ব্যল্কনি থেকে চলে যায়। অয়ন আর তার চাঙ্গু পাঙ্গু মিলে তারাতাড়ি অধরার বাসার সামনে থেকে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে প্রতিদিন অয়নের সাথে দেখা হতো আর অয়ন মুখ লুকিয়ে পালাতো। বেশ উপভোগ করতো সেই দৃশ্যটা অধরা।
* অতিতের পাতায় চোখ বোলাতেই অধরার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি উঁকি দিলো। হঠাৎ অধরার চোখ যায় অয়নের উন্মুক্ত পিঠের দিকে। অয়নের পিঠে বেশ কিছু জায়গা জুড়ে আচরের দাগ বসে আছে। অধরা বুঝতে না‌ পেরে অয়নের দিকে এগিয়ে যায়। উন্মুক্ত পিঠে আলতো করে স্পর্শ করে জিজ্ঞাসা করে অয়নকে
— তোমার পিঠে এটা কিসের দাগ?

কথাটা শুনে আর অধরার স্পর্শ পেয়ে বেশ কেঁপে আঁতকে উঠলো অয়ন। একটু নড়ে অয়ন কাঁপা গলায় বলল
— কোথায়? আরে হয়তো লেগে গেছে কোনো ভাবে।
— তাই। মনে তো হচ্ছে কেউ বেশ আবেশে এমন দাগ এঁকে দিয়েছে তোমার পিঠে।
— ওয়াট! কেউ দাগ এঁকে দিয়েছে মানে? আমাকে সন্দেহ করো তুমি? — উফফফ! অধরা এতো ফোর্স কেনো করো আমায়? প্রত্যেকটা কাজে আমায় তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে? অসহ্য কর।
কথাটা শুনতেই অধরার বুকটা ফুলে উঠলো। মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে রক্তক্ষরণ করে দিয়েছে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে অধরার। নিজের স্বামী যখন অবহেলা করে তখন কতটা কষ্ট হয় তা প্রকাশ করার মতো নয়। অধরা একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এখন আমি তোমার কাছে অসহ্য কর একটা মানুষ হয়ে গেছি অয়ন! রোজ রাতে লেট করে বাড়ি ফেরো। কয়েক রাত তো বেপাত্তা। আমি বোকার মতো তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি। এই সব কিছু…..
— এই সব ন্যাকামো করতে বলেছে কে? আমি‌ বলেছি? যত্তসব। আমি আগেও বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না তোমায়। আমার এই সব বিষয় একদম ভালো লাগে না।
* কথাটা শেষ করতেই অয়ন শার্ট পরে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। অধরা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল অয়নের চলে যাওয়ার দিকে। আগেও তো অয়নের জন্য অপেক্ষা করতো অধরা। অয়ন বাড়ি ফিরলে এক সাথে দুজন খাবার খেয়ে গল্প করতো। হাজারটা বায়না করতো অধরা আর অয়ন তা শুনে বিরক্ত হওয়ার বদলে মুচকি হেসে তা পূরণ করতো‌। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই অয়ন আর সেই অয়ন এক মানুষ।

অয়ন চলে যাবার পর অধরা নিজের রুমের এক কোণে গুটিয়ে বসে আছে। আপন মনে ভাবছে অধরা সেই ম্যাসেজ গুলোর কথা। কোনো মতে নিজের মনকে বোঝাতে পারছে না অধরা যে তার ২বছরের ভালোবাসার মানুষ এখন আর‌ তার নেই। আরে ২ বছর তো কম যেখানে নিজের বোনই এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে সেখানে অয়ন আর কি? অধরা ভাবছে সেই ম্যাসেজ গুলোর কথা। যেখানে তার স্বামী আর তার নিজের বোনের আপত্তি কর কথোপকথন রয়েছে।
* যে দিন‌ অয়নের সাথে তার বিয়ের কথা পাকা হয়। সেদিন ইরা বেশ হাস্যরস্য ভাবে অধরাকে বলতে লাগলো
— আপু অয়ন ভাইয়া যদি তোকে বিয়ে না করে আমাকে প্রপোজ করতো। তবে আমি এক পা এ দাড়িয়ে অয়ন ভাইয়াকে বিয়ে করে নিতাম।

সেই দিনকার ইরার কথাটা বেশ কঠিন ভাবে আঘাত করে আমার হৃদয়ে। যদিও মজা ছিলো ভেবে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সেই মজাটাই আমার জীবন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার বোন আমার থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে।
* প্রিয় মানুষটিকে একটু একটু করে অন্যের হতে দেখতে হয়তো সবারই কষ্ট হবে। অধরা ও তার ব্যতিক্রম নয়। অধরা চোখ মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। রান্না করতে হবে এখন। রান্না ঘরে যেতেই হঠাৎ করে অধরাকে পিছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরলো। অধরা একটু ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে কাঁপা গলায় বলতে লাগলো অধরা
— কে?
— আমি তোমার কিউট ননদিনি।
অধরার ভয় কেটে গেলো। অনু তাকে জড়িয়ে ধরেছে। অনু হলো অয়নের ছোট বোন। অনু অধরার চোখ জোড়া ফোলা দেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কি হয়েছে ভাবী? আজ কাল প্রায় তোমাকে বেশ আপসেট দেখায়। ভাইয়ার সাথে কি কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার?
অধরা মুচকি হেসে মনের কষ্ট আড়াল করে বলল
— আরে না। ঐ একটু অসুস্থ লাগছে তাই আরকি এমন দেখাচ্ছে।
— ওহহহ।

অনু আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না। অধরা রান্না করতে লাগলো। সব কথা সবার সাথে শেয়ার করা যায় না। থাক না কিছু কথা মনের মধ্যে একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে। তিলে তিলে পাথর করে দিক একটা মানুষকে।
* রাতে খাবার টেবিলে বসে অধরা অয়নের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছু সম। অপেক্ষা করতেই দরজার কলিংবেলের বেজে উঠার শব্দ আসতে লাগলো তার কানে। অধরা দৌড়ে ছুটে চলে যায় দরজার কাছে। দরজাটা খুলতেই অধরা দেখতে পেলো অয়ন………………………

ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব ২