রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৩৬
নবনী নীলা
গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামলো স্নিগ্ধা ঘড়ির দিকে তাকালো রাত ভালোই হয়েছে। এর আগে কখনো এত রাতে একা একা সে বাড়ির বাইরে বের হয়নি কিন্তু আজ হয়েছে। শুধু ওই লোকটাকে একবার দেখবে বলে সেই সাহসটা করেছে। কোনো ভয় যেনো আজ তাকে গ্রাস করতে পারলো না।বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই স্নিগ্ধা নিজেই অবাক হয়ে গেল মানুষরা নিজের অজান্তে মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে ফেলে যা তাকেই অবাক করে দেয়। সে অবাক হয়ে ভাবে তাকে দিয়ে সত্যিই এটা সম্ভব ছিল?
স্নিগ্ধা গাড়ির ভিতরে বসে বাড়িটার দিকে একবার তাকালো সব সময়ের মতো বাড়িটা আলোময়। কিন্তু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। ড্রাইভার এর ভাড়া মিটিয়ে এক পাশে দাঁড়ালো স্নিগ্ধা। বাড়িতে ঢুকার আগেই বিশাল এক গাড়ি বাড়ির গেট দিয়ে বের হয়ে গেল। গাড়ি করে কে বের হয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধা জানে না। চেহারাটা তার হতাশায় ভরে গেল। এই গাড়ি করে আদিল বেরিয়ে যায় নি তো? তাহলে কি এত রাতে এই বাড়িতে আসাটা তার বৃথা! যতদূর গাড়িটা দেখা যায় স্নিগ্ধা তাকিয়ে রইল। গাড়ি সীমানার বাইরে চলে যেতেই সে মুখ মলিন করে বাড়িতে প্রবেশ করলো।
সিকিউরিটি গার্ড তাকে দেখে সালাম জানিয়ে বললেন,” ম্যাডাম আপনি এত রাত?”
স্নিগ্ধা উত্তরে কিছু বলল না, কয়েক সেকেন্ড ভেবেই সিকিউরিটি গার্ডকে প্রশ্ন করল,” আচ্ছা একটু আগে গাড়ি করে কে বেরিয়ে গেল?”
সিকিউরিটি গার্ড মলিন কণ্ঠে বললেন,” বড় সাহেব বের হয়ে গেছেন। আপনারা এ কয়দিন ছিলেন না বাড়িটার নকশায় বদলে গেছে।”
স্নিগ্ধা চুপ করে রইলো বড় সাহেব বলতে যে আনোয়ার সাহেবের কথায় বলা হয়েছে সেটা সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আনোয়ার সাহেব এত রাতে গাড়ি করে কোথায় যাচ্ছেন? এত রাতে তো সে কখনো তাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেখেনি তাহলে আজ হঠাৎ কি এমন প্রয়োজন পড়ল তার!
স্নিগ্ধা একপলক বাইরে তাকাল তারপর বলল বাড়িতে কি কেউ আছে? স্নিগ্ধা চাইলে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারতো বাড়িতে আদিল রয়েছে কিনা? তবুও কেন জানি সে প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করল. প্রশ্নটা করে সে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে এদিক সেদিক তাকালো। সিকিউরিটি গার্ড হেসে উঠে বললেন,” থাকবো না কেন? ছোট সাহেব আছেন।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
স্নিগ্ধার চোখ পুলকিত হয়ে গেলো। যদিও সে তা প্রকাশ করলো না। ও আচ্ছা বলেই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।
বাড়িতে পা রেখেই সে বুঝেছে এই বাড়ির নকশা বদলে গেছে। সিকিউরিটি গার্ড মিথ্যে বলেনি। চারিদিকে কোনো গার্ডকে দেখা যাচ্ছে না। কিচেনে কোনো সেফ নেই। নিচের ফ্লোরে বাতি জ্বললেও। দোতালা সম্পূর্ন অন্ধকার।
আদিল রুম অন্ধকার করে বেলকনিতে বসে আছে। দৃষ্টি তার আনমনা। হাতে ধরে থাকা জ্বলন্ত সি/গা/রেটটি শেষ প্রায়।অন্ধকারে শুধু আদিলের অবয়ব আর হাতে থাকা জ্বলন্ত সি/গা/রেটটি স্পষ্ট।
নিজের বাবা তাকে এইভাবে মিথ্যের আড়ালে রাখবে ভাবতে পারেনি সে। এত বছর অকারনেই সে ফাহাদের প্রতি এত ঘৃনা পুষে রেখেছিলো মনে। বেলকনিতে বসে আদিল আনোয়ার সাহেবের গাড়ি বেরিয়ে যেতে দেখেছে। তবুও তার জানতে ইচ্ছে করছে না লোকটা কোথায় যাচ্ছে? হটাৎ এক মুহূর্তেই লোকটার প্রতি সে সব শ্রদ্ধা হারিয়ে গেছে। একসাথে তিনটা জীবন দুর্বিষহ করে ফেলেছে তার বাবা। দিনের পর দিন মিথ্যে বলে গেছে নিজের ছেলের কাছে।
আদিলের ভাবতেই অবাক লাগছে সে কতটা ভুল ছিলো। তার করা প্রতিটা কাজ ছিলো ভুল। ফাহাদকে পুলিশেও সে নিজে ধরিয়ে দিয়েছে। সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে এক দিনেই। আদিলের হটাৎ বড্ড একা লাগছে। সবসময় এমনটাই হয়ে এসেছে। ছোট বেলায় মা একা করে চলে গেছে তারপর বড় হওয়ার পর বোনও চলে গেছে। কয়েক বছর ধরেই তো একাই বেচেঁ আছে সে। আদিল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করতেই কারোর গম্ভীর আওয়াজ কানে এলো তার ” আপনি আমার কল ধরেননি কেনো?”
আদিল সঙ্গে সঙ্গে চোখে মেলে তাকালো। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই স্নিগ্ধাকে দেখতে পেলো। আদিল বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কি সত্যি নাকি সে হেলোসিনেট করছে। মানুষ অনেকসময় নিজের কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে হেলোসিনেট করে। হয়তো সে নিজেও করছে।স্নিগ্ধা এত রাতে এই বাড়িতে কি করে আসবে।
আদিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারের এই অবয়বটা স্নিগ্ধার মতনই লাগছে। স্পষ্টভাবে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না সে। কিন্তু স্নিগ্ধা অন্ধকারের আলোতে আদিলের হাতে জলন্ত কিছু দেখে চমকে উঠে বললো,” কি ঐটা আপনার হাতে?”
আদিল নিজের হাতের দিকে তাকালো সি/গা/রেট খাওয়াটাও তার অভ্যাস না তবে যখন খুব একা লাগে তখন সময় পার করতে সেটা করে থাকে। আদিল হাত থেকে সি/গা/রেটটা ফেলে দিল।
স্নিগ্ধা অন্ধকারে অনেক কষ্টে খুজে লাইটের সুইচ অন করল। রুমটা আলোকিত হতেই সে তার সামনে বসে থাকা মানুষটি কে দেখতে পেলো।
আদিলের কাছে স্নিগ্ধার চেহারাটা খুব স্পষ্ট। রাগী চোখ, মলিন চেহারায় দাড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা। আদিল কি বলবে খুজে পেলো না। তাকিয়ে থাকতে ও মায়া লাগছে তার। স্নিগ্ধা বুকের কাছে হাত ভাজ করে আদিলকে বললো,” এমন ভাব করছেন যেনো আমাকে চিনতেই পারছেন না। কি হয়েছে আপনার? আপনাকে আমি এতবার ফোন করলাম আপনি একটাবার রিসিভ করলেন না? এদিকে আমি চিন্তায় চিন্তায় অস্থির আর আপনি এখানে বসে বসে সি/গা/রেট ধরাচ্ছেন।” প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো স্নিগ্ধা।
আদিল অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ফোনটা তার আজ একবারো চেক করা হয়নি। কিন্তু স্নিগ্ধা যে তার চিন্তায় এত রাতে বাড়িতে চলে আসবে এটা তার কল্পনার বাইরে। স্নিগ্ধা তাকে নিয়ে এত ভাবে কখনো তো সে বুঝতে পারে নি। সবসময় তো মনে হয়েছে এই সম্পর্কটা শুধু জোরপূর্বক টিকে আছে। আদিল আটকে না রাখলে কি স্নিগ্ধা থাকতো তার কাছে?
আদিল চুপ করে আছে। তার মনে অনেক প্রশ্ন। আদিলকে নিশ্চুপ দেখে স্নিগ্ধা আরো রেগে গেলো। কি হয়েছে মানুষটার? যে কিনা একটা কথায় হাজারটা কথা বলতে পারতো সে আজ এত চুপ। স্নিগ্ধা এসেছে দেখেও কোনো অস্থিরতা নেই তার মাঝে।
আদিল উঠে দাড়ালো তারপর বললো,” এতো রাতে একা একা এভাবে বাড়ি ফেরা তোমার উচিত হয় না। রাত অনেক হয়েছে অভ্রর রুমে গিয়ে শুয়ে পরো।” বলতে বলতে রুমে ঢুকলো আদিল।
আদিলের কথায় স্নিগ্ধা ভ্রূ কুচকে ফেললো।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,” অভ্রর রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো মানে? আমি কি ঘুমানোর জন্যে এখানে এসেছি? একে তো আপনি আমার ফোন ধরেননি আর এখন আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। কি হয়েছে কি আপনার?”
আদিল এক পলক স্নিগ্ধার দিকে তাকালো তারপর বললো,” কিছু হয়নি। রাত জাগলে শরীর খারাপ হবে তাই বলছি অভ্রর রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরো।”
“হোক শরীর খারাপ আপনার তাতে কি? আর আমি অভ্রর রুমে কেনো যাবো? আমি এই রুমে থাকলে আপনার কি খুব অসুবিধে হচ্ছে?”, কথার পিঠে কথা বললো স্নিগ্ধা।
আদিল বুকের কাছে হাত ভাজ করে স্পষ্ট দৃষ্টিতে কিছুক্ষন স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” তুমি তো সবসম়য়ই আমার থেকে দূরে যেতে চাইতে। তাহলে আজ যখন সেই সুযোগটা তোমাকে করে দিচ্ছি তবে এতো অভিযোগ কেনো তোমার? এই সম্পর্কটা নিয়ে তুমি তো কখনোই খুশি ছিলে না। আর আমিও ভুল ছিলাম। এত বছর ভুল নিয়েই বেঁচেছি। তোমাকেও জোর করেছি বাধ্য করেছি আমার সাথে থাকতে।” বলেই আদিল কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। স্নিগ্ধা নিশ্চুপ। রাগে তার চোখ দুটো রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে।
আদিল স্নিগ্ধাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো,” তোমাকে আর আমি জোর করবো না। তুমি এ ঘরে শুয়ে পরো,আমি অভ্রর রুমে যাচ্ছি।” বলেই আদিল ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই, স্নিগ্ধা আদিলের বুকে ধাক্কা দিয়ে আদিলকে বিছানায় ফেলে দেয়। হটাৎ স্নিগ্ধার এমন কাণ্ডে আদিল হকচকিয়ে তাকায়। দুহাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে।
স্নিগ্ধা নিজের রাগ সামলে আদিলের দিকে এগিয়ে এসে বললো,” কোথায় যাচ্ছেন আপনি? এই রুম থেকে এক পা বাড়ালে আপনার কপালে খারাপই আছে। আপনি শুধু ভদ্র স্নিগ্ধাকেই দেখেছেন এতদিন।” বলেই রাগে দাতে দাঁত চিপলো স্নিগ্ধা তারপর আরেকটু এগিয়ে এসে বললো,” সমস্যা কি আপনার? নিজের যা মনে হচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন। আমি আপনাকে একবারো বলেছি এইসব কিছু?” বলেই স্নিগ্ধা আদিলের কাছে ঝুঁকে এসে আদিলের চোখের দিকে তাকালো তারপর বললো,” শুনুন, কেউ যদি মন থেকে থাকতে না চায় তাহলে আপনি বীর পালোয়ান দিয়ে পাহারা দিয়েও তাকে আটকে রাখতে পারবেন না। আমি যদি থাকতে না চাইতাম আপনিও আমাকে আটকাতে পারতেন না।অবশ্য আপনাকে আমি এইসব বলছি কেনো? আপনার তো মাথাটা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে।” কথাগুলো অজস্র অভিমান নিয়ে বললো স্নিগ্ধা।
আদিল অবাক হয়ে শুনছে। আজকের এই স্নিগ্ধা যেনো অন্যকেউ। যে অভিমান করতে জানে, ভালোবাসতে জানে। স্নিগ্ধার বলা প্রতিটা কথা আদিলকে অবাক করছে। খুব নিখুঁত করে লক্ষ্য করছে স্নিগ্ধাকে। চোখের পাতা ঝাপটানো, দাতে দাঁত চিপে রাগ সামলানো,কটমট চোখের দৃষ্টি সবটা। সবচেয়ে বিস্ময় নিয়ে দেখেছে সে স্নিগ্ধার গলার লকেটিকে।
এক মুহূর্তের জন্যে থমকে তাকালো সে কানের বেজে উঠলো প্রথম দিনে স্নিগ্ধার বলা সেই কথাটি,” ভালোবাসার প্রথম উপহার, ভালো না বেসে কি করে পরি। যেদিন ভালোবাসতে পারবো সেইদিনই পারবো।”
মুহূর্তেই আদিলের ঠোঁট প্রসারিত হলো। অন্যরকম এক ভালোলাগা ঘিরে ধরলো তাকে। হটাৎ সব মন খারাপের কারণ যেনো কর্পূরের মতন নাই হয়ে গেলো।
নিচের ঠোঁট কামড়ে সেই হাসি আটকানোর চেষ্টা করতেই স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বললো,” আপনি হাসছেন? আপনার কাছে আমার বলা কথা গুলো ফানি মনে হচ্ছে? আসলে আমারই ভুল, আমারই উচিত হয়নি এইখানে আসা। থাকবো না তো আর আমি আপনার সাথে।”, বলেই রেগে আদিলের থেকে দূরে যেতেই আদিল স্নিগ্ধার এক হাত টেনে কাছে নিয়ে এলো। কোমড় জড়িয়ে স্নিগ্ধাকে একদম কাছে আনতেই চোখ বড় বড় করে তাকালো সে।
কয়েক সেকেন্ড দুজনেই দুই নয়নে হারিয়ে গেলো। আদিলের মনটা হুট করে ভালো হয়ে গেলেও স্নিগ্ধার রাগটা আরো গাঢ় হলো। সে প্রাণপণ শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই আদিল স্নিগ্ধার দুই হাত বিছানায় সঙ্গে চেপে ধরলো। স্নিগ্ধা ছটফট শুরু করতেই আদিল বললো,” মনে হচ্ছে আরেকটা ভুল করতে করতে বেচেঁ গেলাম। আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমাকে ছাড়া আমার চলবেই না।”
রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৩৫
স্নিগ্ধা কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,” একদম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন না।সারাদিন একবারো আমার খোঁজ নিয়েছেন? এখন খুব বলতে এসেছে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।” শেষ লাইনটি আদিলকে ব্যাঙ্গ করে বললো স্নিগ্ধা। তারপর আরো বললো,” আর আমাকে এইভাবে ধরে আছেন কেনো? । বলেছিনা আপনার সঙ্গে আমি থাকবো না। ছাড়ুন আমাকে।”
আদিল নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে শান্ত চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। হটাৎ আদিলের এমন দৃষ্টিতে শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা। আদিল স্নিগ্ধার গলার দিকে ইশারা করে বললো,” এরপর তো তোমাকে ছাড়ার প্রশ্নই উঠছে না। শত রাগের পরেও এই দুই বাহুতেই বেধে রাখবো তোমাকে।”
Please next part taratari diben ato late kore dile vlo lage na
Next part please
আপনি বড্ড লেট করেন next part দিতে
একটু তাড়াতাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করুন
Please
Next part plese
Next part kobe deben?? Eto deri keno koren.. please taratari din ???