রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৩৫

রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৩৫
নবনী নীলা

আয়েশা খাতুন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। নিজের মেয়েকে এইভাবে একটা ছেলের সঙ্গে দরজা বন্ধ অবস্থায় দেখে তিনি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।রাগের মাত্রা বেড়ে গেলে তখন তিনি কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। এই মুহূর্তে তার রাগ হচ্ছে।
স্নিগ্ধার রুমের এক পাশে চেয়ারে বসে আছে। এক হাতে কপালের আগ্রহভাগ ধরে আছে। মায়ের রাগ তার জানা আছে। কিভাবে এখন বিষয়টা সামাল দিবে সে সেটাই বুঝতে পারছেনা। জিমা স্পৃহার ব্যাপারটা সে হালকা আঁচ করতে পারলেও পুরোটা ধরতে পারেনি। তাই বিষয়টা তার কাছেও অবাক করার মতনই।

রুমের দুই প্রান্তে স্পৃহা জিম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে এমন ভাব করছে যেন এক অপরকে চিনি না।
অভ্র অবাক হয়ে সবাইকে দেখছে বিষয়টা তার কাছে খুবই মজা লাগছে। ব্যাপারটা একটা খেলার মতন লাগছে তার কাছে। কিন্তু সবাই এত চুপ কেনো বিষয়টা সে ঠিক ধরতে পারছে না তবুও তার ভালোই লাগছে। তার মনে হচ্ছে একে একে সবাইকে নানু বকা দিবে। শুধু তাকে দেওয়া হবে না।
আয়েশা খাতুন নীরবতা ভাঙলেন কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলেন,” কি করছিলে তোমরা দুজনেই এইখানে?”
মায়ের কঠিন কন্ঠে স্নিগ্ধা মাথা তুলে তাকালো। ঘর একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে জিম স্পৃহা কেউই কোনো কথা বলছে না তবে অভ্র চোখে কৌতুহল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওদের চুপ থাকতে দেখেন আয়েশা খাতুন আরো রেগে গেলেন। আয়েশা খাতুন দ্বিগুণ রাগী স্বরে বললেন,” কথা বলছো না কেন?আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাদের। এখানে মুখ বন্ধ করে থাকার জন্য তো তোমাদের আনা হয়নি।”
স্নিগ্ধা এবার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো তার মায়ের রাগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে সেটা সে ঠিক টের পাচ্ছে। চিন্তিত হয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে কি করবে সে ভাবছে।
জিম অনেকক্ষণ চুপ ছিল কি বলবে সেটা নিজের মতো করে গুছিয়ে নিচ্ছে। নিজের মেয়ের সাথে অন্য কোন ছেলেকে রুমে দেখে যেকোনো বাবা মায়ের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। আয়েশা খাতুনের এই রাগ সম্পূর্ণ যৌক্তিক। এরকম অপ্রীতিকর অবস্থায় আয়েশা খাতুন এর সামনে তাকে পড়তে হবে সেটা সে কল্পনাও করেনি। যার ফলে সে অপ্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি নার্ভাস হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে তার ঠিক কি বলা উচিত সে সেটা খুজে পাচ্ছে না।

স্পৃহা নির্বিকার ভঙ্গিতে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। স্পৃহার জন্য তার খারাপ লাগছে।
আয়েশা খাতুন রাগ সামলাতে না পেরে উঠে দাঁড়ালেন তারপর বললেন,” আচ্ছা, কিছু বলবে না তাইতো? মুখে তালা মেরে রেখেছে দুজনেই। ঠিক আছে এরপর আমিও আর তোমাদের কোনো কথা শুনবো না।” বলতে বলতেএকবার স্পৃহার দিকে তাকালেন তারপর গলা কঠিন করে বললেন,” যে ছেলেটি তোমাকে দেখতে এসেছে সেই ছেলের সাথেই আমি তোমার বিয়ে ফাইনাল করবো। তোমার আর কোন কথাই আমি শুনবো না। এই আমার শেষ কথা।”
জিম অবাক হয়ে তাকালো হঠাৎ আয়েশা খাতুন এমন কথা বলে বসবে সেটা ভাবেনি। আয়েশা খাতুন এর কথায় সম্পূর্ণ আপত্তি জানিয়ে কিছু বলার আগেই স্পৃহা মাথা তুলল। নিজের মায়ের দিকে এক পলক তাকালো তারপর বলল,” আমি কখনোই ওই ছেলেকে বিয়ে করবো না।”

আয়েশা খাতুন আরো ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল, ” আবার আমার মুখে মুখে কথা বলছো, নির্লজ্জ মেয়ে। তোমার বাবাকে আমি এসব কথা কিভাবে বলব?”
জিম ভেবে পাচ্ছেনা মা-মেয়ের মাঝখানে তার কথা বলাটা উচিত কি উচিত না। সে চায় শান্ত মাথায় আয়েশা বেগমের সাথে কথা বলতে যদি সেটা আজ সম্ভব না হয় তাহলে কাল। অস্থিরতা কিংবা হুড়মুড়িয়ে কোন কাজের ফলে সঠিক হয় না। তার খারাপ লাগছে মা-মেয়ের মনোমালিন্য দেখে।
স্পৃহা তার মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,” আমার পছন্দ না এই লোকটাকে, আমি তো তাকে চিনিও না। আমি করবো না বিয়ে। তোমরা শত চেষ্টা করেও আমাকে বিয়ে দিতে পারবে না। যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে ওই লোকটাকে করব।” বলতে বলতে জিমের দিকে এক পলক তাকাল স্পৃহা। আয়েশা খাতুন হকচকিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। এমন সরাসরি মেয়ে কথাটা বলবে তিনি ভাবতে পারেন নি।
স্নিগ্ধার এগিয়ে আসছিলো কিছু বলার জন্য কিন্তু এখন তার মনে হয় না আর কিছু বলা উচিত। কারণ যা বলার সেটা স্পৃহা বলেই দিয়েছে। তার মা রাগ করেছে ঠিকই কিন্তু সে জানে স্পৃহার মতের বিরুদ্ধে কখনোই তার মা জোর করে স্পৃহার বিয়ে দিবে না। মা রাগ করবে সেই রাগের রেশ কয়দিন চলবে। কিন্তু ঠিক আবার তার মন গলবে।

জিম প্রায় দুই ঘণ্টা যাবত নিচে সোফায় বসে আছে। তার আসে পাশে কেউ নেই।তাকে কেনো যে এতক্ষন ধরে নিচে বসিয়ে রাখা হয়েছে সে বুঝতে পারছে না।এইটা কি কোনো ধরনের শাস্তি? আগের বারের কথা তার মনে আছে। ঝাড়ু নিয়ে আবরার ফাইয়াজকে যেই মহিলা ধমক দিতে পারে। সেখানে জিমকে ঠিক কি করতে পারে সেটাই সে কল্পনা করছে।
পুরো বাড়ি স্তব্ধ, এতে অবশ্য একটা সুবিধা হয়েছে। সে কথা গুছিয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছে। এখন আয়েশা খাতুনের সামনে কোনো কাপাকাপি ছাড়াই সে কথা বলতে পারবে বলে তার ধারণা।

স্নিগ্ধাকে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে একটু সস্থি পেলো জিম। যাক স্নিগ্ধার কাছ থেকে একটু পরামর্শের আশা করা যায়। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো যদি স্নিগ্ধাও রেগে থাকে। রাগ করাটা যদিও স্বাভাবিক। জিম একটু ভীত চোখে তাকালো।
স্নিগ্ধা ইচ্ছে করে গম্ভীর মুখে নিচে নামলো। তারপর কোনো কথা না বলে সোজা জিমের সামনের চেয়ারে বসে পড়লো। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো জিমের দিকে। জিম একটু হকচকিয়ে তাকাতেই স্নিগ্ধা হেসে ফেললো।
জিম একটা সস্থির নিশ্বাস ফেললো। যাক এই হাসির মানে নিশ্চয় সব ঠিক আছে।
স্নিগ্ধা হাত দিয়ে হাসি চেপে ধরে বলল,” আমাকে এত ভয় পেতে হবে না। বাপরে চোখ মুখের যা অবস্থা করেছেন!”
জিম নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,” না করে উপায় আছে? দুঘন্টা যাবত এইভাবে বসে আছি। আর কতো দিন এই ভাবে বসে কাটাতে হবে একটু জানাবে?”

স্নিগ্ধা ঠোঁট চেপে বলল,” যতদিন না মায়ের রাগ পড়ছে।”
জিম ব্যাথাতুর দৃষ্টি দেখে স্নিগ্ধা বললো,” কি ব্যাপার মশাই? প্রেম করেছেন আর একটু কষ্ট করবেন না, হয়? কষ্টের বিনিময়েই সুখ আসে জানেন নিশ্চই। আর এইটা তো সবে শুরু, এখনো আরো কত হয়রানি আপনার কপালে আছে।”
জিম দু আঙ্গুলে কাপলের মধ্যভাগ ধরলো তারপর বললো,” স্পৃহার কি মন খারাপ?”
” ওরে বাবা! স্পৃহার মন নিয়ে তো দেখি আপনার অনেক চিন্তা? সে ঠিকই আছে। শুধু রেগে আছে। কি করবেন বলেন আপনার হবু বউ বুনো ওল আর আপনার হবু শাশুড়ি বাঘা তেতুঁল। দুটোই জুটেছে আপনার কপালে।”, কথা গুলো বেশ আনন্দের সঙ্গেই বললো স্নিগ্ধা।

জিম নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি আর করার আছে। স্নিগ্ধা হাসি থামালো। সে যে কারণে নিচে এসেছে। সেটা বলাই ভালো। আর সে দুশ্চিন্তা করতে পারছে না।
জিম দৃষ্টি নামাতেই স্নিগ্ধা বললো,” আচ্ছা। মিস্টার আবরার ফাইয়াজের কোনো খোঁজ পেয়েছেন?”
জিম মাথা তুলে তাকালো তারপর বললো,” হুম্, আজ দুপুরে বাড়ি ফিরেছেন, শুনেছি।”
জিমের কথায় স্নিগ্ধার কপাল কুচকে গেলো। কারণ সন্ধ্যা থেকে অনেকবার সে আদিলকে কল করেছে কিন্তু একবারও আদিল ফোন রিসিভ করে নি। শুধু তাই নয়, লোকটা একবারো তার খোঁজ পর্যন্ত করে নি। স্নিগ্ধার হার্টবিট বেড়ে গেলো। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তার। স্নিগ্ধা দাড়িয়ে পড়লো।

রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৩৪

জিম ভ্রূ কুচকে বললো,” দাড়িয়ে পড়লে কেনো?”
” আমি বাড়িতে ফিরবো।”,স্নিগ্ধার কথায় জিম অবাক হয়ে বললো,” এতো রাতে!”
স্নিগ্ধা মাথা নাড়লো। সে এক্ষুনি বাড়ি যাবে। আদিলের জন্যে আর চিন্তা করতে পারছে না সে। আদিল তার ফোন রিসিভ করেনি এমন কখনো হয়নি। আদিলের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত তার মনের অস্থিরতা কমবে না। জিম আর প্রশ্ন না করে বললো,” ঠিক আছে। চলুন।” বলেই জিম উঠে দাড়াতে যাবে এমন সময় স্নিগ্ধা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,” আপনাকে আসতে হবে না। আমি একাই যেতে পারবো।”

রংধনুর স্নিগ্ধতা পর্ব ৩৬