চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২১

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২১
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

‘তোর মুখটা এমন লাল হয়ে আছে কেন রে? কার উপর এত রেগে আছিস?’
কলেজে পৌঁছাতেই নিঝুম আমার দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ল। আমি রাগী চোখে মাঠে থেকেই স্পর্শের কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছি। নিজের বউকে নিয়ে কলেজ সে ভেতরে আসতে পারে না। কিন্তু অন্য মেয়েকে নিয়ে ঠিকই সারা কলেজ ঘুরতে পারে। এই না হলে আমার বর। খুব কপাল করে এমন জামাই পেয়েছি। আমার ভবিষ্যৎ জীবন যে অন্ধকার আমি এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছি। আমার কার সাথে বিয়ে হয়ে গেল আল্লাহ। এ তো আমাকে এখন পাত্তাই দেয় না। দিল আবার কবে সবসময়তো এমনটাই করে। হনুমান একটা।

‘ এই মারু কই হারাই গেলি।’ মিষ্টির এক ধাক্কায় আমি নিঝুম এর উপরে পড়ে গেলাম।
বিরক্তকর চোখের মিষ্টির দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলাম।
‘তোদের সমস্যা কি আমাকে কি? কোন কিছু ভাবতেও দিবি না। আমি খুব রেগে আছি তোরা চুপচাপ বসে থাক না হলে চলে যা।’
‘কি ভাবছিস? আর রেগে আছিস কেন? কার উপর রেগে আছিস। সব বল আমাদের না হলে তোকে কিছুই ভাবতে ও দেবো না আমরা।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ এতো জ্বালাস কেন বলতো? আমি সত্যি খুব টেনশনে আছি। ‘
‘ ওরে বইন টেনশন টা কি বলবি তো?’
‘ কি বলবো? আর বললেই বা কী তোরা কি কিছু ঠিক করতে পারবি। সব জ্বালা আমাকে সহ্য করতে হবে। তোরা তো কিছুই করতে পারবি না তাই আর জানতে চাস না আমাকে আমার মত থাকতে দে।’
‘ কিছু করতে পারবো কিনা আগে বল জেনে নেই। করতেও তো পারি এমন হলো তোর সমস্যার সমাধান আমরাই করে দিলাম। আল্লাহ হয়তো আমাদের হাতে তোর সমস্যার সমাধান রাখছে।’ নিঝুম বললো।
‘ আমাকে ও‌ই স্পর্শ পাত্তা দেয় না সব সময় খালি কষ্ট দেয়। আমার সামনে অন্য মেয়েদের সাথে ঘোরাঘুরি করে। আর আমাকে নাকি এত ভালোবাসে কিন্তু নিজের মুখে এখন অবধি আমাকে প্রপোজ অবধি করে নি এত আনরোমান্টিক। আমাকে একটু বোঝো না।’গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বললাম।

‘ আহারে মারু তোর এতো কষ্ট! আমার বুকটা ফাইটা যাইতেছে তোর কষ্ট দেইখা।’ কান্না কান্না করে মিষ্টি বলল।
আমি চোখে পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম।
‘ এই একদম চোখ রাঙাবি না আমাকে।তোর জামাইরে তোর পেছনে যদি পাগলের মতো না পড়েছি তো আমার নাম ও মিষ্টি না। তোকে চোখে হারাবে। আর লাভ ইউ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে।’
আমি বিশ্মিত চোখের দিকে মিষ্টির দিকে তাকালাম।
আমার সামনে বসে ওরা তিনজন স্পর্শকে নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। কিভাবে আমার দুঃখ কষ্ট গোছাতে পারে। সেই চেষ্টায় বিভোর ওরা। আমি গালে হাত দিয়ে ওদের পরিকল্পনা করা দেখছি। ওদের জঘন্য একটা পরিকল্পনা দেখে আমি হতভম্ব। এইসব কি পরিকল্পনা করছে। আমাকে ও নাকি এই সবে শামিল হতে হবে ইম্পসিবল। আমি স্পর্শর সামনে এসব কিছুই করতে পারবোনা।
‘ পারবি আর তোকে করতেই হবে। যদি না করিস তাহলে কিন্তু আর জামাইয়ের মুখে ভালোবাসি শুনতে পারবিনা। মনে
রাখিস।সারাজীবন আনন্দে থাকার জন্য একটু অ্যাক্টিং করলে সমস্যা ?’

‘তাই বলে আমি অন্য একটা ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করব ঘোরাঘুরি করব তাও স্পর্শের সামনে? তোরা ভুলে যাচ্ছিস! স্পর্শ আমার হাজব্যান্ড তার কিন্তু আমার উপর অধিকার আছে আমি এসব করলে আমাকে চর মারবে।’
‘ হ্যা জানি। তোকে আর প্রেম করতে বলি নাই। শুধু তুই দুইটা কথা বলবি তাও স্পর্শ স্যারের সামনে। আর কিছু না।’ মিষ্টি অনুরোধ কন্ঠে বলল।
নিঝুম ধারা এসে ওবলতে লাগল।
ধারা বলল, ‘ আমরা তোর জন্য এত সুন্দর একটা প্ল্যান করলাম আর তুই এখন পাল্টি খাচ্ছিস।’
নিঝুম বলল, ‘ স্যার কে দেখিয়ে জাস্ট কয়টা কথা বলবি তুই দেখবি তাতে কাজ হয়ে যাবে। তুই যে স্যারকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে জেলাস ফিল করছিস। সেটা তো স্যার বুঝছে না। কিন্তু এখন যদি সেই কাজটা করিস তাহলে ভাইয়া দেখে জেলাস হবে তখন বুঝবে।’
ওদের বোঝানো দেখে আমিও গলে ক্ষীর হয়ে গেলাম।সেই সুযোগ ওরা নিলো। নিঝুমের লুকিয়ে রাখা ফোন বের করে ওর দুঃসম্পর্কের এক খালাতো ভাইকে ফোন করে ছুটির পর ডাকলো। সে নাকি আমাকে এমনিতেই একটু একটু পছন্দ করতো। পছন্দ করে শোনার পর আমি তাকে আসতে মানা করলাম। কিন্তু ওরা বললো সেই আসলে না কি খেলা জমবে ভাল। শামিম আমাকে অসীম ভালোবাসে তাই শামিম আসলে স্পর্শ তার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখে আরো জেলাস ফিল হবে। ভালো করে। আমি ও আর কিছু বলতে পারলাম না ওদের কথার উপর।

কলেজ শেষে সত্যি সেই শামিম এসে হাজির কলেজের সামনে।আমার এক হাত মিষ্টি আর এ হাত নিঝুম ধরে বেঁধে শামিমের সামনে নিয়ে আসলো। আমি দূর থেকেই দেখতে পেলাম ওই শামিম আমার দিকে কেমন করে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে স্পর্শ কোন জায়গায় আছে কিনা দেখতে দেখতে এসেছি।
সামনে এসে দাঁড়াতেই দুই পাশ থেকে মিষ্টি আর নিঝুম আমার হাত ছেড়ে তিনজন একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আমার কানে যাওয়ার আগে মিষ্টি ফিসফিস করে বলে গেছে‌। আমি যেন শামিমের সাথে পাঁচ মিনিট হলেও কথা বলি আর ওর কথাগুলো হজম করি। আমি ঢোঅ গিলে মাথা নাড়লাম। স্পর্শ কে কোথাও পেলাম না।
‘ হাই, কেমন আছো?’খুব খুশি গলায় বলল।
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ আলহামদুলিল্লাহ! আপনি কেমন আছেন?’
শামিম বলল, ‘ আগে ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন খুব ভাল আছি।
আমি আড়চোখে তাকাতাকি করছি। আমার খুব অস্বস্তি ফিল লাগছে। স্পর্শ কি দেখে নিয়েছে আমি অন্য একটা ছেলের সাথে কথা বলছি। উনি কোথায়?

আমার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটানো শামিম।
‘তুমি নাকি আমার সাথে কথা বলবে বলেছো নিঝুম কে‌। আমি সেই ছয়মাস আগে থেকে তোমাকে পছন্দ করি। নিঝুমকে সেই কবে বলেছিলাম তোমার নাম্বার এনে দিতে‌। কিন্তু ও বলেছে তোমার নাকি বিয়ে ঠিক তুমি নাকি তাকে খুব ভালবাসো। তাই আর আসিনি। আচ্ছা তোমার কি বিয়ে ভেঙে গেছে তাই আমাকে একটা সুযোগ দিতে চাচ্ছো?’
আমি চোখ বড়বড় করে শামিমের দিকে তাকিয়ে আছি। রাগে আমি ফেটে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। দাঁতে দাঁত চেপে তবু কথাগুলো হজম করছি‌। মন চাচ্ছে এই শামিমের বাচ্চা কে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে।
‘ এমন কিছু না আসলে…

আমি কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই স্পর্শ কে এদিকে আসতে দেখে আমি ঠেকে গেলাম।
কথা গলায় আটকে গেল। তিনি রেগে আছে নাকি বোঝা যাচ্ছে না তার মুখমণ্ডল দেখে আমি তার রিয়াকশন বুঝতে পারছিনা।
আমি শামিমের কথা ভুলে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ কি ধমক দিবে আমাকে বকবে। সেই ভয়ে আমি মুখটা চুরের মতো করে রেখেছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে স্পর্শ চলে গেল আমাকে পাশ কাটিয়ে।
আমি হতবিহ্বল হয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে চেনেই না এই ভাব ধরে চলে গেল স্পর্শ।
শামিম কি কি যেনো বলেই যাচ্ছে আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে মিষ্টি দের কাছে চলে এলাম আর বলতে লাগলাম,
‘এটা কি হলো?’

মিষ্টিরাও বলল, ‘ জানি না। আমি তো ভেবেছিলাম কোন ছেলের সাথে তোকে দেখলেই রেগে এগিয়ে এসে তাকে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাবে এখানে তো কিছুই হলো না। সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেল।’
আমি তিনটা কে মারতে লাগলাম,
‘তোর আমার উপকারের বদলে অপকার করে দিলি। উনি সব সময় আমার দিকে তাকিয়ে একটু করে হাসতো। আজকে তো হাসলেন ও না।উনি বোধহয় আর আমার সাথে কথাই বলবেন আগে যাও একটু একটু কথা হতো সেটাও শেষ হয়ে গেল। তোদের এই প্লান এর জন্য। আমার না হ‌ওয়া সংসারটা ভেঙ্গে দিলি!’
শামিম এসে বলল,

‘কি হয়েছে মারিয়া তুমি ওদের মারছো কেন আর কি বলছে এসব কিসের সংসার ভেঙ্গে যাবে!’
‘আপনি আবার এখানে এসেছেন জান তো আপনার জন্য আমার সংসারটা ভেঙে গেল। ফালতু লোক।’
‘ তোমার তো বিয়ে হয়নি তোমার সংসার আসলো কোথা থেকে।’
‘কে বলেছে আপনাকে আমার বিয়ে হয়নি আমার বিয়ে হয়েছে আরও তিন মাস আগে।’
আমার কথা শুনে শামিম অবাক হয়ে নিঝুম এর দিকে তাকালো। নিঝুম চোরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘সরি ভাইয়া তুই চলে যা!এখানে একটা গন্ডগোল হয়ে গেছে না হলে কিন্তু এই মেয়ে তোকেও মারা শুরু করে দেবো। জান বাচিয়ে পালা।’

ওদের সাথে ঝগড়া করার পর আমাকে তখন আর বাসায় না পাঠিয়ে‌। ওরা আমাকে পাশের এক পার্কে নিয়ে গেলাম মন ভালো করার জন্য। সেখানে অনেকটা সময় পার করলাম। আমার মনটা অনেক কষ্টে ভালো করলো ওরা। কিন্তু আমি ওদের উপর খুব রেগে আছি। ওরা সেটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আজ রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলেও আমার রাগ আজ রাগ ভাঙবে না। তাই ওরা আমাকে একটু শান্ত করে বাসায় পাঠিয়ে দিলো। আমি ওদের সাথে আসার আগে একটা ভালো করে কথা ও বললাম না।
ওরা গোমড়া মুখে চলে গেল। আমিও বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ও কারো সাথে কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম। মন খারাপ থাকলে কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কেউ কথা বললে আরো বিরক্ত লাগে রাগ লাগে।
দূর থেকে আম্মু আমাকে গোমড়ামুখে আসতে দেখে ডাকলো। আমি তার উত্তর দিলাম না।
রুমে এসে কাঁধ থেকে ব্যাগ খুলে বিছানায় ছুড়ে মারতে যাব। তখন বিছানায় একজনকে দেখে থমকে যায়। আমার নিঃশ্বাস আটকে আসে। আমি হতবিহ্বল চোখে বিছানায় থাকা ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে আছি।

স্পর্শ কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে বিছানার উপর।
আমি ব্যাগ বুকে জড়িয়ে স্পর্শের পানে চাহিয়া আছি‌। উনি এই বাসায় আসলো কখন? আর এখানেই বা শুয়ে আছে কেন?
আমি শব্দহীন পায়ে ব্যাগ নিয়ে টেবিলের উপরে রাখলাম। আর একটু পরপর স্পর্শের চোখের দিকে তাকালাম তাকায় আছে কিনা। উনি কি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি ব্যাগ টেবিলের উপর রেখে আবার বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালাম। উনার ঘনঘন নিশ্বাস ওঠানামা করছে। মনে হচ্ছে উনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
আমি ওনার সামনে গিয়ে হাত নাড়ালাম। উনি উঠলো না। এবার আমি নিশ্চিত উনি গভীর ঘুমে আছে। আমি উনার পাশে আস্তে করে বসে উনার দিকে ঝুকে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর বিড়বিড় করে বললাম,
‘আপনি আমাকে কেমন ভালোবাসেন? আপনার বউ আমি। আমি অন্য একটা ছেলের সাথে কথা বললাম? আর আপনি আমাকে কিছুই বললেন না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে আসলেন। কেন? আমি কথা বলছি এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যেন। কিন্তু আপনাকে একটা মেয়ের সাথে আমার দেখে কেন ভালো লাগলো না। কেন এত কষ্ট হল। তাহলে আপনি কেন স্বাভাবিক থাকলেন। আপনার কেন সেই কষ্টটা হলো না।’

আমার চোখে জল চিকচিক করতে লাগলো। কখন যে সেই অশ্রু গাল বেয়ে স্পর্শর কপালে পড়েছে আমি লক্ষই করিনি।আর এইটাই হলো আমার কাল স্পর্শ কখন জেগে গেছে আমি বুঝতে পারিনি আর আমি এদিকে স্পর্শ গভীর হয়ে আছে ভেবে নিজের কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করতেছি।
স্পর্শ সেই সুযোগে ঘুমের ভাব ধরে আমার সব কথা শুনে নিয়েছে। আমি কথা শেষ করে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালাম। স্পর্শ উঠলে জানা যাবে উনি আবার আজকে এখানে কেন এসেছেন।আমি চলে যাওয়ার জন্য পা বারালাম তখন স্পর্শ আমার হাত টেনে ধরলো। স্পর্শের টেনে ধরা দেখে আমার বুক কেঁপে উঠল।আমি কাঁপতে কাঁপতেই স্পর্শে দিকে এলাম। কাছে আসতেই স্পর্শ আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরল। কাঁধে স্পর্শকষ নিজের মুখ লাগিয়ে বসে রইল। আমি সেসব খেয়াল না করে আমার সব কথা শুনে ফেলল নাকি সেইসব ভাবছি। আর ছোট ছোট ঢোক গিলছি।
‘কোথায় যাচ্ছ?’
‘ আপনি জেগে ছিলেন এতক্ষণ?’
‘ হ্যাঁ।’
‘তাহলে ঘুমের ভান ধরে ছিলেন কেন ?’

‘ঘুমের ভান ধরে না থাকলে কি আমার বউয়ের এত অভিযোগ শুনতে পারতাম? আর সে যে আমাকে এত ভালবাসে সেটা কে জানতে পারতাম?’
‘ তেমন কিছুই না আমি আপনাকে ভালোবাসলেও আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না।’
‘কিছু একটা হলেই কেন তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না। এই একটা কথা ছাড়া তোমার মুখে আমি আর কোন কথা শুনি না। তোমাকে যদি আমি ভালোই না বাসতাম তাহলে এতো কষ্ট করে তোমার বাবাকে রাজি করানোর জন্য তার পেছনে পড়ে থাকতাম না। আর এখন তুমি আমার ওয়াইফ। তোমার কি বিয়ে করার জন্য কত কিছু করেছি জানো। তাও তোমার শুধু মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না।’
‘ তাহলে আপনি আমাকে ভালোবাসি বলেন না কেন? অন্য আর পাঁচটা বয় ফ্রেন্ডের মতো হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করেন না কেন?’
‘ সারাদিন ভালোবাসি বললেই তোমার মনে হবে আমি তোমাকে ভালোবাসি‌। না বললে মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না।’
‘ জানি না।’
‘ আমার ভালোবাসাটা তোমায় অনুভব করতে হবে। মুখে বললেই সেটা ভালোবাসা হয় না। আমি না ভালবেসেও তোমায় সারাদিন ভালোবাসি বলে ঠকাতে পারি। কিন্তু আমি এমন টা চাই না আমি তোমাকে মন থেকে ভালবাসি সেটা আমি চাই তুমি নিজে বোঝো‌ সারাদিন বলে তোমাকে আমি বোঝাতে চাই না। তুমি নিজে থেকে আমার ভালোবাসাটা অনুভব করো, বোঝো।’
‘ এই কথাটা আরেকদিন বলেছেন আপনি। আমি এসব শুনতে চাই না‌। আমি যা চাই আপনি তা কখনোই বুঝবেন না আপনি আমাকে একটু বোঝেন না।’

‘ তোমাকে আমি বুঝিনা বলছো?’ স্পর্শ বিক্ষিপ্ত গলায় বলল।
আমি স্পর্শ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম, ‘ হ্যাঁ বোঝেন না।’
‘ ঠিক আছে।’ বলেই স্পর্শ আবার বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো।
আমি ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম স্পর্শ শুয়েই আছে।
আমি না ডেকে খেতে চলে গেলাম। স্পর্শ হয়তো খেয়েছে এসে। আম্মু তো তাকে আর না খাইয়ে বসিয়ে রাখেনি‌।
‘ আম্মু খেতে দাও।’
ডাইনিং টেবিলে বসে আম্মুকে খাবার দিতে বললাম। আম্মু আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘স্পর্শ কোথায়?’
আমি বললাম, ‘উনি ঘুমাচ্ছে!’
‘যা ডেকে নিয়ে আয় না। খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে নাকি। একঘন্টা হলো এসেছে আসার পর থেকে খাওয়ার কথা বলছি। তোকে ছাড়া নাকি খাবে না। তাই রুমে চলে গেল ওয়েট করতে।’
‘উনি খাননি আমার জন্য।’বিড় বিড় করে বললাম।
আম্মু বলল, ‘কি হলো এখনো বসে আছিস কেন যা!’

‘আমি পারবোনা। তুমি গিয়ে ডাক। আমাকে খেতে দাও আর না হলে আমি একাই নিয়ে নিচ্ছি।‌ কাউকে ডাকতে পারবো না।’
আম্মু রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কথা শুনে যে তিনি রাগে ফেটে পড়ছে তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে অসুবিধা হলো না। আমি ঝড়ের পূর্বাভাস বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমের দিকে চলে এলাম‌। মা না তো শত্রু এটা আমার।
স্পর্শ বেগুড়ে ঘুমাচ্ছে।আমি এত কিছু বললাম এত কিছু শোনার পরও উনি এত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে এই লোকটা কি আদো আমাকে ভালোবাসে?
‘এই যে শুনছেন? উঠোন!’
নো রেসপন্স। আমি আরো দুইবার ডাকলাম রেসপন্স করলো না। এবার হাত বাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে লাগলাম।উনাকে না নিয়ে গেলে ও তো আমাকে খেতে দেবে না উল্টা ঝাড়ি দিবে।

‘আরে উঠুন না 2 মিনিটে আপনি এত গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন কিভাবে? নাকি আবার অ্যাক্টিং করছেন! একটি বার উঠুন আপনার জন্য আমি খেতে পারছিনা। আমার খুব খিদে পেয়েছে। আপনার খিদে না পেয়ে থাকলে ও উঠে একবার বাইরে গিয়ে আম্মুকে বলুন।’
ফাইনালি আমি স্পর্শকে উঠাতে পারলাম। তিনি উঠে থ মেরে বসে রইল আমার দিকে তাকিয়ে। কি নিষ্পাপ চাহনি। এবার তিনি নিশ্চিত ঘুমিয়েছিল। বোঝা যাচ্ছে তার চোখমুখ দেখেই। বোকা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,’ কি হয়েছে?’
আমি আকাশ সমান রাগ নিয়ে বললাম, ‘ আমার মাথা হয়েছে। দয়াকরে উঠুন। ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে বাইরে চলুন।’
‘ তুমি কি কোথাও বেড়াতে যেতে চাচ্ছ? ওকে চলো‌।’
‘ আমি খিদের জ্বালায় মরি আর উনি আমায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলছে, কপাল।’
‘ খিদে পেয়েছে? বাড়িতে খেতে চাচ্ছো না! ওকে তাহলে চলো রেস্টুরেন্টে যাই।’
আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন তো যান।
স্পর্শ কে টেনে ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দিলাম। তারপর বাইরে নিয়ে এলাম। আম্মু খাবার রেডি করেই বসে ছিল। যেতে খেতে দিল আর আমি গপাগপ খেয়ে আগেই চলে এলাম। স্পর্শ এলো পড়ে। এসেই বলল,

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২০

‘ যাও রেডি হ‌ও।’
‘ রেডি হবো কেন? কোথায় যাব?’
‘ গেলেই দেখতে পাবে!’
‘ এখন আমি কোথাও যাব না।’
‘ যাবে। তারাতাড়ি রেডি হ‌ও। কুইক।’
‘ আমি যাব না বললাম তো। আমি এখন ঘুমাবো।’
‘ নো।’
‘ ইয়েস।’
‘ নো।’
‘ হ্যা, হ্যা, হ্যা।’
বলেই বিছানায় শুয়ে পরলাম। স্পর্শ আমাকে হেঁচকা টানে বিছানা থেকে তুলে ফেললো।
‘ রেডি হবে নাকি এইভাবে নিয়ে যাব।’
‘ ধ্যাত।’
বলেই রেডি হয়ে আসলাম।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ২২