চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৮

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৮
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

স্পর্শ নিজের রুমে বসে ছিল হঠাৎ সীফা দৌড়ে এসে স্পর্শের হাতে একটা হলুদ রঙের জামদানি শাড়ি দিয়ে বলে উঠে,
‘ ভাইয়া দেখো তো এই শাড়িটা কেমন? আমাকে মানাবে নাকি! এটা আমি তানহা আপুর গায়ে হলুদে পরতে চয়েজ করেছি।’
স্পর্শ সীফার থেকে চোখ সরিয়ে শাড়িতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে,
‘ আমি কি মেয়ে নাকি! মেয়েদের জিনিস শাড়ি পছন্দ করতে যাব। তোর যেটা পছন্দ হয় সেটাই পরিস আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন?’
সীফা চেঁচিয়ে উঠল স্পর্শের উওর শুনে, ‘ এটা তুমি বলতে পারলে ভাইয়া? ভাবির জন্য যে কতো সুন্দর সুন্দর ড্রেস শাড়ি পছন্দ করে কিনে আনো। তখন তো এসব বলো না। এখন বোন যেই পছন্দ করে দিতে বলছে তখন তোমার মেয়ে হতে হবে!’

‘ ওর জন্য তো আমি নিজের পছন্দ আনি। সেসব ওর পছন্দ হবে কিনা ভাবিনা কারণ আমার ব‌উকে আমি নিজের পছন্দের বাজে জিনিস টাই পরাতে চাই‌। কিন্তু আমার এই মিষ্টি বোনকে তো তা করতে পারিনা আমি তাই আমার বোন সব চেয়ে সুন্দর জিনিস পরুক নিজের পছন্দ মতো। আমার করা অসুন্দর জিনিস পরিয়ে তাকে পেত্নী সাজাতে চাইনা। আর তোকে সব কিছুতেই সুন্দর লাগে।’
সীফা অবাক গলায় নিজের ভাইকে বলল, ‘ তোমার পছন্দ বাজে? কি সব বলছো ভাইয়া তোমার পছন্দ তো খুব সুন্দর। আমি কিছু জানি না এবার শাড়ি আমাকে তুমিই চয়েজ করে দিবে।’
‘ আমার করা অসুন্দর জিনিস পড়ে পেত্নি সাজতে চাস?’
‘ হ্যা চাই। চলো আমার সাথে।’ সীফা স্পর্শকে টেনে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলো। স্পর্শ বাধ্য হয়েই এলো। অনেক শাড়ি নিয়ে বসে আছে মিনারা বেগম ও মোহিনী। তারাও শাড়ি পছন্দ করছে। সীফা ও টেনে ভাইকে সেখানেই নিয়ে এলো।
স্পর্শ শাড়ি উল্টা পাল্টা করে একটা পছন্দ করে দিল আদরের বোন কে। সীফা সেটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল আয়নায় দেখবে কেমন লাগে শাড়িতে ওকে।
স্পর্শ চলে আসতে যাবে তখন স্পর্শের মা মিনারা বেগম একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল,
‘ সাদাফ দেখ তো এটা মারিয়ার জন্য নিয়েছি ঠিক আছে কিনা।’
স্পর্শের শাড়িটা একটুও পছন্দ হলো না কিন্তু মা পছন্দ করেছে বলে নিজে থেকে কিছু বলল ও না মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে এলো।
সীফা মারিয়াকে ভিডিও কল করল। প্রতিদিন‌ই মারিয়ার সাথে সীফার ফেসবুক কথা হয়। আজ ও কথা বলতে কল দিয়েছে ‌। আগে শাড়ির ছবি তুলে দিয়ে দিয়েছে‌‌।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ব‌ই খুলে পরছিলাম। তখন ফোনটা বেজে উঠলো। ডাটা অন করেই পরছিলাম। পরিক্ষা না হলে পরতাম ও না কিন্তু আমার ফাটা কপাল কাল দিন পর আপুর বিয়ে আর আমাকে পরিক্ষার জন্য পরতে হচ্ছে। ব‌ই থেকে চোখ তুলে ফোন হাতে নিয়ে আমার একমাত্র ননদিনী সীফার কল পেয়ে রিসিভ করলাম।
‘ ভাবি!!’
‘ হুম কেমন আছো?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো ভাবি?’
‘ জানোই তো কেমন আছি। খালি প্যারা।’
‘ হুম। আমার পরিক্ষা সামনের মাস থেকে। তোমাদের তো আগেই শুরু হয়েছে।’
‘ আমি তোমাদের কলেজে থাকলে ভালো হতো। তাহলে এই পরিক্ষার ঝামেলা থাকতো না এই সময়ে।’
‘ ভাবি দেখো শাড়ি‌।’
‘ ওয়াও খুব সুন্দর তো। ‘
‘ হুম জানো এটা কার পছন্দ?’
আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ কার?’
‘ তোমার জামাইয়ের। ভাইয়া এটা আমাকে পছন্দ করে দিছে। ভাইয়ার পছন্দ খুব সুন্দর তাই না।’
‘ হুম। ‘

পড়া বাদ দিয়ে সীফা আর আমি খেজুরে আলাপ করেই যাচ্ছি। আমার যে কাল পরিক্ষা আছে সে খেয়াল ও নাই। আমাদের এই রসের আলাপ সমাপ্ত হলো হঠাৎ স্পর্শের নাম্বার থেকে কল আসায়। আমি চোখ বড় করে স্পর্শের কল দেখছি। সীফাকে তারাতাড়ি বাই বলে কল কেটে দিলাম।আর তারাতাড়ি স্পর্শের কল রিসিভ করলাম।
‘ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম!’
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম।’ স্পর্শ উওর নিল।
আমি কেমন আছেন বলতে যাব তার আগেই স্পর্শ
বলে উঠলো,
‘ কাল তোমার পরিক্ষা আর আজ তুমি রাত জেগে না পড়ে ভিডিও কলে কথা বলে সময় নষ্ট করছো কেন?’
‘আপনি আবার আমাকে বকা দিতে কল করেছেন?’
‘ ইয়েস! ইউ আর রাইট। তুমি পড়া বাদ দিয়ে আড্ডা দিলে তো আমাকে তার জন্য শাষণ করতেই হবে। কারণ আমার ব‌উকে শিক্ষিত হতে হবে।’
‘ আপনি একদম আমাকে সব সময় স্যার দের মতো শাষণ করবেন না।’
‘ আমি তো স্যার ‌ই।’
‘ না আপনি শুধু কলেজে আমার স্যার এর বাইরে আপনি কোন স্যার না আপনি শুধু আমার…
বলতে বলতে আমি থমকে চুপ করে গেলাম।
স্পর্শ বলল, ‘ আমি শুধু তোমার বর তাই তো?’
আমি লজ্জায় নিশ্চুপ আছি। স্বীকার করতে পারছি না।
স্পর্শ নিজেই বলে উঠলো, ‘ ওকে তোমার সব কথা পড়ে শুনবো। এখন চুপচাপ লক্ষী মেয়ের মতো পড়তে বসো। আর কোন বাড়তি কথা শুনতে চাই না।’
স্পর্শ ফট করেই কল কেটে দিল। আমি নিজের মাথায় নিজেই গাট্টি মেরে পরতে বসে পরলাম। পরতে পরতে বিছানায় চলে এলাম। বিছানায় বসে পরতে পরতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।
পরদিন

আমাদের জুথি ম্যাম গার্ডে পরেছে। ম্যাম টা খুব শান্তশিষ্ট টাইপের তাই ভেবেছিলাম ইংরেজী পরিক্ষা
খুব শান্তিতে দিতে পারবো কিন্তু না খুব কড়া ম্যাম পরিক্ষার হলে বসে বুঝতে পারলাম। ঘাড়টাও নড়াতে দেয়নি। ইংরেজী আমি ভালোই পারি মুটামুটি তাই পরিক্ষা ওই একা একাই দিতে পারলাম। ক্লাস থেকে বের হতেই অন্য ক্লাস থেকে মিষ্টি দৌড়ে এলো ওদের ক্লাসে নাকি স্পর্শ পরেছিল আর নাকি সুন্দর করে গার্ড দিয়েছে। অনেক হার্ড করে গার্ড দেয়নি।
জুথি ম্যামের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি আর মিষ্টি নিঝুম দের জন্য ওয়েট করছি। ওরা বের হয়েই ওয়াশ রুমে চলে গেছে। কালকে স্পর্শ আমাকে নাম্বারে মেসেজ করে রেখেছে তার জন্য গেটের ওয়েট করতে। রাতেই করেছিল আমি তা লক্ষ্য করেছি সকালে। সবাই গল্প করে গেটের বাইরে এলাম। ওদের কে বিদায় দিয়ে আমি একাই ওয়েট করছি স্পর্শের জন্য। উনি আসছে না। একটু পর পর কলেজের ভেতরে উঁকি মারছি উনি অফিস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।

আমার কাছে এখন ফোন থাকলে ফোন করে কিছু বলতে পারতাম এই ভাবে অপেক্ষা করতে হতো না। গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আরো পাঁচ মিনিট পর উনার ওই সাদা গাড়িটা এলো। আর এসেই আমার সামনে থামলো। ভেতর থেকেই স্পর্শ দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে বসতে বলল। আমি উঠে বসলাম।
‘ সরি অপেক্ষা করানোর জন্য।’
আমি বললাম, ‘ আপনি কি ভুলে গেছিলেন কেউ একজন একা আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।’
‘ সব ভুলে গেলেও তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না।’
‘ আপনি আমাকে কি খুব বেশি ভালোবাসেন! আপনি এমন টা দেখান সবাইকে কিন্তু আমার কিন্তু একটু ও মনে হয়না। আপনি মোটেও অনেক বেশি ভালোবাসেন না আমাকে। কিন্তু সবাই এটা কেন বলে সেটাই আমি বুঝি না।’
স্পর্শ আমার কথা শুনে আমার দিকে খুব শান্ত ভঙ্গিতে তাকালো।
তারপর খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে বলল, ‘কেন? তোমার কি বিশ্বাস হয়না! আমি তোমাকে ভালোবাসি?’
আমি স্পর্শের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললাম, ‘ একদমি না।আমার এক বিন্দু ও মনে হয়না আপনি এই আমাকে ভালোবাসেন।’
স্পর্শ বিহ্বল চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ এমনটা মনে হ‌ওয়ার কারণ?’
আমি আজ সব বলবো বলেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি। আমি গুছিয়ে বলতে পারবো কিনা জানি না কিন্তু আজ সব অভিযোগ করবো। করবোই!

‘ আপনি এই এতো বছরের কতোক্ষণ আমাকে সময় দিয়েছেন। কতোক্ষণ আমার সাথে কথা বলেছেন? না সামনে বলেছেন আর না ফোনে। কোন ভাবেই যোগাযোগ করেন নি। কোনদিন ঘুরতে নিয়ে গেছেন? যাননি! দুটো ভালো কথা বলেছেন? কখনো ভালোবাসি বলেছেন? বলেননি। কিচ্ছু করেননি শুধু বিয়েটাই ঠিক করে রেখেছেন এর বাইরে কিচ্ছু করেননি‌। আপুর দিক থেকে দেখুন তাদের বিয়ে তো কেবল ছয় মাস ধরে ঠিক হয়েছে এতেই তারা সারাদিন ফোনে কথা বলতে থাকে। প্রতিদিন ভাইয়া আপুকে কতো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়।কতো কিছু করে।’
স্পর্শ খুব ঠান্ডা মাথায় আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর বলল,
‘ সারাদিন কথা বললে আর ঘুরতে নিয়ে গেলেই কি ভালোবাসা টা বুঝে যেতে। আমি তো ভালো না বেসে ও এসব করতে পারতাম তাই না।’
‘ কেন ভালো না বেসে কেন করবেন?’
‘ করতেই পারি। এসব করলেই যদি তুমি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে। আমি মন থেকে নাইবা বাসি কাজ থেকে ভালোবাসি বুঝতে। আমি তো জানতাম ভালোবাসাটা অনুভব করার জিনিস বলে বেরানোর না।’
‘ আমি সব দিক থেকেই বুঝতে চাই।’
‘ কিন্তু আমি এই সব কিছু তখন‌ই বুঝাতে চাই যখন তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে। যখন আমি তোমার ওই কপালে ভালোবাসা পরশ দিতে পারবো নির্দ্বিধায়। সকল সংকোচ কাটিয়ে ভরসা নিয়ে এই বুকে মাথা রাখতে পারবে পরম শান্তিতে।’

এতো বৃষ্টি, যে শাড়ি পড়ে যাতা একটা অবস্থা হয়ে উঠেছে সবার জন্য। আমি এক নজর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আবার সুন্দর করে বসে পরলাম। এই বৃষ্টিতে আমি গাড়ি থেকে নামবো না কিছুতেই না। আমাদের এখানে থেকে ষোলো টা হাইজ ও দুইটা মাইক্রো ভরে হলুদে এসেছি মাহিন ভাইয়াদের বাসায়। আমি স্পর্শের গাড়িতে আছি। আমার পাশে স্পর্শ ড্রাইভ করছে। পেছনে মোহিনী ভাবি ও সীফা আর সামির ভাইয়া( স্পর্শের বড় ভাই‌)
মাহিন ভাইয়া দের বাসা থেকে অনেক লোক আসছে ছাতা হাতে আমাদের ভেতরে নিয়ে যেতে। আমি অবাক হয়ে শুধু একটা কথাই ভাবছি আজ এই অসময়ে বৃষ্টি না এলে কি হতো না। আজ না একটু আকাশ কালো ছিল না একটু মেঘের গর্জন ছিল। সারাটা দিন কতো সুন্দর আকাশ ছিল বৃষ্টির কোন হদিস ছিল না। হঠাৎ করে এই মুহুর্তে বৃষ্টি কেন এলো। বাসা থেকে আমার বের হ‌ওয়ার সময় ও মনে হয়নি বৃষ্টি হতে পারে। মাঝ রাস্তায় হুট করেই বৃষ্টি চলছ এসেছে। এখন আমি বাসার ভেতরে কি করে যাব। যদি শাড়ি পড়ে না আসতাম তাহলে না হয় যেতে পারতাম। কিন্তু আমাকে যে আমার শত্রু এই শাড়িটা পড়ে আসতে হয়েছে এখন আমি এই কাঁদা ময় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাব কি করে। ঠাস করে আমি এই কাঁদায় পড়ে গড়াগড়ি খাব। ইশ আমার কিছুতেই নামবো না। মাহিন ভাইয়ারা যে কেন এই গ্রামে আসতে গেছিলো বিয়েটা শহরে হলে কতো ভালো হতো আমাকে এই অবস্থায় পরতে হতো না।

দুজন লোক এসে মোহিনী ভাবি ও সীফাকে নিয়ে গেল। আরেকজন এসে সামির ভাইয়াকে ও নিয়ে গেল। এখন আমি আর স্পর্শ আছি শুধু গাড়িতে। আমার দিকে নামার কোন লক্ষণ না পেয়ে স্পর্শ জিগ্যেস করলেন,
‘ তূমি এমন আয়েশিভঙ্গিতে বসে আছো কেন? নামবে না দরজা খুলে বসো ওই ছাতা নিয়ে আসছে। নাকি দরজা খুলতে পারছো না আমি কি হেল্প করবো?’
আমি বললাম, ‘ দরকার নাই। আপনি চলে যান দরজা আটকে। আমি এই এতো সুন্দর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারবো না। আমি তাই যাব‌ই না।’
আমার এমন কথা শুনে স্পর্শ হতভম্ব হয়ে গেল,
‘ হোয়াট? তুমি যাবে না মানে কি?’
‘ সিম্পুল আমি গাড়িতেই সবার জন্য ওয়েট করবো। হলুদ পর্ব শেষ হ‌ওয়া পর্যন্ত। আমি শাড়িতে এমনিতেই হাঁটতে পারি না তার উপর এই এতো সুন্দর কাঁদা ময় রাস্তা দিয়ে এক কদম ও হাঁটতে পারবো না।’
‘ তুমি এইখানে একা থাকতে চাইছো। আর ইউ ম্যাড?’
আমি কিছু বলতে যাব তখন একটা ছেলে আমার পাশের জানালার কাছে এসে বলল,
‘ তারাতাড়ি বেরিয়ে আসুন। সবাই ভেতরে চলে গেছে শুধু আপনারাই আছেন।’
আমি উনাকে বললাম, ‘ আমি যাব না। ওনাকে নিয়ে যান আপনার সাথে।’
বলেই স্পর্শ কে দেখিয়ে দিলাম। স্পর্শ উনাকে নিজের পাশে ডাকলো। তারপর বলল,
‘ আমাকে একটা ছাতা এনে দিন আমরা সেটা করে যাব প্লিজ।’
ছেলেটা স্পর্শের কথা শুনে মাথা দুলিয়ে চেঁচিয়ে কার কাছে জানি ছাতা চাইতে চাইতে এগিয়ে গেল। স্পর্শ আমাকে বলল,

‘ এই খানে তোমাকে একা রেখে আমি ভেতরে যেতে পারবো না মারিয়া‌। তুমি শাড়ির আঁচল আর কুঁচি ভালো করে উঁচু করে ধরে আমার সাথে যাবে কিচ্ছু হবে না আমি তোমার সাথে থাকবো।’
‘ আমি যাব না। কেন আমাকে এতো ঝামেলায় ফেলছেন বলুন তো। আপনি জানেন এই শাড়ি পড়ে আমি কতোটা পেরেশানিতে আছি। তার মধ্যে আবার এই বৃষ্টি সব কিছু আমাকে এটাই বলছে আমার ভেতরে যাওয়া উচিত না। এজন্য এতে বাঁধা আসছে।’
‘ অযুক্তিক কথা বলো না। তুমি একাই এই অবস্থায় পরো নি।সবাই এই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে আর পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। তুমি একা এমন দ্বিমত পোষণ করতে পারো না।’
‘ আপনি আমাকে কেন জোর করছেন আমি যাব না।’
‘সামান্য এই রাস্তা পার হওয়ার ভয়ে যদি তুমি নিজেকে সব আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে চাও করো। আমার কি? তোমার কাছে আনন্দ কিছুই না এই রাস্তা পার হওয়াটাই বড়। ওখানে সবাই যে তোমার ওয়েট করছে তোমার দুলাভাই মাহিন তাকে তুমি সবার আগে হলুদ দিবে এতো এতো প্লান সব নষ্ট করবে ওকে তাহলে থাক। আমি যাই ওই যে ছাতা চলে এসেছে।’

এমনিতেই এতোক্ষণ মনটা খারাপ হয়ে ছিল। পরিক্ষার জন্য ঠিকমত ইনজয় করতে পারছি না এখন আবার এই বৃষ্টি এসেছে আমার আনন্দ মাটি করতে। সব কিছু একসাথে ঘটতে হবে। ধুর ছাই ভাল্লাগে না। এখন তো যাইতেও মন চাইছে। কিন্তু যাব কি করে? আচ্ছা স্পর্শের কথা শুনে কি আমার উচিত এই রাস্তা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া‌। আমি ঢোক গিলে রাস্তায় দিকে তাকালাম। স্পর্শ নেমে গেছে। আমি হুট করেই তাকে ডেকে উঠলাম।
‘ স্পর্শ আমি যাব।’
এই প্রথম আমি তার নাম ধরে ডাকলাম। স্পর্শ আমার মুখে নিজের নাম শুনে থমকে দাঁড়ায়।
পেছনে ঘুরে আবার আমার কাছে এসে আমার পাশের দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে বলে।
আমি কাচুমাচু মুখ করে বেরিয়ে আসি। স্পর্শের মুখে হাসি তিনি মিটিমিটি করে হাসছে। আমি তার হাসি দেখতে গিয়ে উল্টে পরতেছিলাম একটুর জন্য। আঁচল আর কুঁচি ধরে হাঁটছিলাম তখন স্পর্শের দিকে তাকাতে গিয়ে আমি এক গর্তে পড়ে যাচ্ছিলাম। তখন স্পর্শ আমার হাতের কবজি কেটে ধরে।
‘ আমাকে পরেও দেখতে পারবে আগে সাবধানে হেঁটে চলো।’
আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, ‘ আপনাকে দেখতে আমার বয়েই গেছে। আপনি হাসছেন কেন জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম।’
‘ ওহ আচ্ছা।’

রাস্তা পার হতে আমার পাশে ছায়ার মতো ছিল স্পর্শ যার জন্য আমি ঠিক ভাবে মাহিন ভাইয়া দের বাসায় এসে পৌঁছেছি। কতোবার যে পরতে গিয়েছি স্পর্শ আমাকে সামলে নিয়েছে। সন্ধ্যার অনেক আগে আমরা এখানে এসেছি অনেক দূরের রাস্তা বলে আগেই বেরিয়ে পরেছিলাম। আবার সন্ধ্যার পর পর‌ই বিদায় নিয়ে নিলাম। এখন বৃষ্টি নাই কিন্তু রাস্তা তো এখন শুকায় নি। সীফাদের সাথে এবার হাঁটছি। স্পর্শ আমার সাথে নাই। তাকে খুঁজতে গিয়ে এবার আমি সত্যি কারের আছড় টা খেলাম।
শরীরে বেশি লাগে নি কারণ আমি শক্ত এক জায়গায় পরেছি। এখানে কাদা মাটি নাই‌। আমার মামাতো ফুফাতো ভাই বোনরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো।
আমি লজ্জা মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি।‌এই অন্ধকারে আমি কি কিছু ঠিক মতো দেখতে পেয়েছি পায়নি। তাই তো পরে গেলাম না হলে এবার আমি পরতাম না।
আমাকে টেনে তুললো স্পর্শ কোথা থেকে এসে। আর ফট করেই সবার সামনে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি চোখ বড় করে স্পর্শের দিকে তাকালাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ সরি আমার তোমার দিকে খেয়াল রাখা উচিত ছিল। ব্যাথা কি বেশি পেয়েছো?’
আমি বললাম, ‘ না লজ্জা পেয়েছি খুব। আমি ব্যাথা বুঝার সময় ই পায়নি।’

‘ পাগলি।’
‘ এখনো পাচ্ছি আপনি এমন হুট করে কোলে কেন নিলেন। সবাই কি ভাবছে। বাসায় গেলে সবাই আমাকে চেপে ধরবে এজন্য। আর খুব লজ্জা দিবে!’
‘ তাহলে কি নামিয়ে দেবো? আমি তো তোমার অসুবিধার জন্য কোলে নিলাম! যাতে আর এমন করে পড়ে না যাও!’
‘ থাক, এখন তো নিয়ে ফেলেছেন।’
‘ এজ ইউর উইশ।’

বাসায় আসার পর থেকে সত্যি আমার সব ভাই বোনেরা আমাকে চেপে ধরলো। আমি হব সময় ওদের বলতাম উনি আমায় পাত্তা দেয়না। ঠিক মতো কথা বলে না। আর এখন এসব দেখে তাদের এক কথা,
‘ মারু তুই কি বলেছিলি স্পর্শ ভাইয়া নাকি তোর সাথে কথা বলে না। দেখলেও না দেখার ভান করে চলে। কিন্তু আজ কি দেখলাম আমরা। এসব দেখেও তোরা কেউ বল ওদের মধ্যে কোন গভীর সম্পর্ক নাই। না হলে সবার সামনে এমন হুট করে কোলে তুলে হাঁটা যায়। হাউ রোমান্টিক। এই সব কিছু মারু আমাদের লুকিয়ে আড়ালে করেছে। দুজনে চুটিয়ে প্রেম করছে আর জিজ্ঞেস করলে বলে আমার তার সাথে কথা হয় না। তিনি আমার সাথে, সামনে কি বা ফোন দুই মিনিট ও কথা বলে না। তিনি আমাকে পাত্তাই দেয় না। কতো বড় মিথ্যুক।’
আমাকে অপরাধী ন্যায় সামনে বসিয়ে রেখে নিজেদের আলোচনা চালাচ্ছে। আমি তো সব সত্যি কথাই বলেছি কিন্তু ওদের কি করে বুঝাবো। ওরা এই কোলে নেওয়া নিয়ে কতো কি ভেবে নিল আমার সব কথা মিথ্যা ভাবছে কিন্তু আমি তো মিথ্যা বলিনি। স্পর্শ কেন যে দরদ দেখিয়ে কোলে নিলো না হলে এসব আমাকে সহ্য করতে হতো না।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৭

আজ আপুর বিয়ে। সেই খুশিতে আমি মজে ছিলাম তখন আমি আরেকটা কথাও শুনলাম। তা শুনে আমি তো হতবিহ্বল হয়ে গেলাম। দৌড়ে আমি আম্মুর কাছে গেলাম। এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত কিনা আমাকে না জানিয়ে করে দিলো তারা।
আমার এতে সমস্যা নাই কিন্তু তাই বলে আগে থেকে আমাকে কিছু জানাবে না। আমি মাহিন ভাইয়ার জুতা চুরি করে ছিলাম কেবল তখন এসব শুনেছি তাই জুতা সহ চলে এসেছি।
আম্মু কে এসেই জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আম্মু আমি তো এখন আর এই বিয়ে নিয়ে কোন দ্বিমত পোষণ করিনি। আমি রাজি তাহলে এই কথাটা আগে কেন আমাকে জানালে না তোমরা।’
আম্মু বলল, ‘ আমরা ই তো জানতাম না তোকে কি জানাতে যাব।’
‘ মানে কি তোমার জানতে না তাহলে এই সিদ্ধান্ত কার?’
‘ স্পর্শের।’

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৯