চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৭

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৭
লেখনীতে- নন্দিনী নীলা

শপিং চললো অনেকক্ষন ধরে। আপু সারা মার্কেট ঘুরে ও ড্রেস চুজ করতে পারেনি। তাই তার পছন্দের জন্য অর্ডার করা হলো। আপু সমস্যা হচ্ছে ডিজাইন পছন্দ হলে তো কালার পছন্দ হয়না। আবার কালার পছন্দ হলে ডিজাইন পছন্দ হয় না। আর আমার আপুর তো দুইটাই নিজ পছন্দের লাগবে তাই জন্য এই ব্যবস্থা। ঘুরতে ঘুরতে আমার পায়ের তালু ব্যাথা হয়ে গেছে। মাঝখানে স্পর্শ হাওয়া হয়ে গেছিল কিছুক্ষণ পর তিনি ব্যাগ হাতে আবার ফিরে এসেছে। ব্যাগে নিজের জন্য কি কিনে এনেছে উনিই জানে। আমাদের দেখায় নি। আপু দেখতে চাইলেও দেখায় নি। মাহিন ভাইয়া আমাকে ড্রেস কিনতে বলেছিল আমি কিনি নি। আর কিনেই কি হবে। ওইদিন তো আমার শাশুড়ি মা এক গাধা পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছে এতো জামাকাপড় দিয়ে আমি করবোটা কি!

বিকেলে বের হয়েছিলাম এখন রাত হয়ে গেছে। আমরা বাইরে ডিনার করেই বাসায় ফিরবো এমনটা বলতে শুনলাম আপুকে। সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছি। আপু ভাইয়া খাওয়ার মাঝে বলল তারা নাকি একটু পরে বাড়ি ফিরবে আমাকে পৌঁছে দিতে বলল স্পর্শ কে। আমি আপুর হাত টেনে বললাম,
‘ দুইদিন পর বিয়ে এখনো প্রেম করতে আলাদা যেতে হবে তোমাদের!’
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোকে আর স্পর্শ কে আলাদা করে প্রেম করার সুযোগ করে দিচ্ছি আর তুই আমাকে কথা শুনাচ্ছি? তুই না বললি স্পর্শ তোকে পাত্তা দেয় না‌। এজন্য তো এসব করছি। দুজন একা টাইম স্পে কর ফ্রী হ। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর!’
আমি বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ সত্যি?’
‘ একদম।’
‘ ওকে বাই।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমাদের খাওয়া শেষ হ‌ওয়ার আগেই আপুরা চলে গেল। এখন আমি আর স্পর্শ শুধু আছি। এতোক্ষণ আপুরা ছিল বলে আমি ইজিলি থাকতে পেরেছি।এখন স্পর্শের সাথে একা থাকতে আমার কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে।
স্পর্শ ফোনে কথা বলছে কার সাথে জানি। আমি আড়চোখে তাকাতাকি করছি খালি।
‘ না খেয়ে বসে আছো কেন?’ ফোনের কথা শেষ করে স্পর্শ প্রশ্ন ছুড়লো আমার দিকে।
আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম, ‘ আমার খাওয়া শেষ। আর খাব না। ‘
‘ এইটুকু তেই! এতো কম খাও বলেই তো শরীরে গোস্ত নাই‌। খালি হাড্ডি‌। বেশি করে খাবে এখন থেকে। আমার টাকা বাঁচাতে এতো কম খাওয়ার প্রয়োজন নাই । তোমার হাজব্যান্ড এর আল্লাহর রহমতে ভালো আছে।’
‘আমি আপনার টাকা বাঁচাতে কম খাব কোন দুঃখে? আমার পেটে যতটুকু আটবে ততটাই তো খাব তাই না।’
‘ হুম। তো হাত ধুয়ে বসে আমার খাওয়া দেখো। আমার খাওয়া বাকি আছে।’

বলেই স্পর্শ খেতে লাগলো‌। আমি সত্যি হাত ধুয়ে বসে আছি। পেটে অবশ্য খালিই আছে খাইনি তো বেশি‌। আমি উনার খাওয়া দেখছি হা করে। আর উনি এক মনে খেয়ে যাচ্ছে!!
আচমকা উনি আমার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিল। আমি চমকে উঠলাম।
‘ এমন করে তাকিয়ে ছিলে আমার তো নজর লেগে যাবে। তুমিও একটু খাও।’
আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। উনি এমন অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে ফেলল।
‘ আমার হাতে খাবে?’

আমার খুব রাগ লাগছিল এমন ভাবে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপর হঠাৎ স্পর্শের খাইয়ে দেওয়ার কথা শুনে আমার রাগ উবে গেল। আর পেটের খিতে বেড়ে গেল আমি রাজি হয়ে গেলাম। স্পর্শ ঠোঁট কামড়ে হাসলো আমার রাজি হ‌ওয়া দেখে। নিজে ও খাচ্ছে আমাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ খাওয়ার মাঝে বলে উঠলো,
‘ আমাদের বিয়ে পর কিন্তু প্রতিদিন সকালে আর রাতে তুমি আমায় খাইয়ে দিবে আমি কিন্তু নিজ হাতে খাই না‌ বেশি কিন্তু কি সুন্দর এখন তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি দেখছো‌‌।’
আমি হতবিহ্বল হয়ে স্পর্শের দিকে তাকালাম।
‘ এখন আম্মু আমাকে বেশির ভাগ খাইয়ে দেয়। বিয়ের পর ব‌উয়ের হাতে খাব তুমি না করতে পারবে না কিন্তু।’
আমি থমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। এই উনাকে আমায় দুবেলা খাইয়ে দিতে হবে! কি জ্বালা!

‘ মুখ কালো করে লাভ নেই। খাইয়ে কিন্তু দিতেই হবে যত‌ই বিরক্ত হ‌ও না কেন!’
আমরা রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে এলাম। স্পর্শ ফোন করে নিজের গাড়ি আনিয়েছে।ড্রাইভার গাড়ি দিয়ে চলে গেল। আমি আর তিনি রয়েছি।
আমাকে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসিয়ে নিজে ও এসে বসলো।
আমি কি নিয়ে কথা বলবো কিছুই বুঝতে পারলাম না। স্পর্শ কথা বলল আমি তার উওর দিলাম। এভাবেই খুব দ্রুত রাস্তা শেষ হয়ে গেল আর উনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল আমি ভেতরে যেতে বললাম উনি গেল না। যাওয়ার আগে সেই শপিং ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেল।আমি তো শপিং ব্যাগের দিকে হতবাক হয়ে চেয়ে ভেতরে চলে এলাম। আপুরা এখনো আসেনি। আম্মু আমাকে ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বলল।

আমি রুমে এসে ব্যাগে কি আছে বের করে দেখলাম হিজাব দুইটা। এ্যাশ ও খয়েরি রঙের। সুন্দর কিন্তু আমি অবাক হয়েছি কারণ আমার শশুর বাড়িতে থেকে যত শপিং এসেছে আমার জন্য কখনো হিজাব দেয়নি। এই ফার্স্ট তাও স্পর্শ দিল‌। আমি খুশি হলাম স্পর্শের হাতে থেকে প্রথম কোন গিফট পেয়ে।
পারলে কালকেই কলেজে একটা বেঁধে যেতাম কিন্তু সম্ভব না কারণ আমাদের কলেজে রঙ হিজাব নিয়ে গেলে ঢুকতেই দিবে না।
আম্মুকে দেখালাম নিয়ে দৌড়ে। আপু এলো আরো এক ঘন্টা পর। আপুকেও দেখালাম আপু খয়েরিটা একদিন পরার জন্য চাইলো আমি সরাসরি দেব না বললাম। এই ফার্স্ট জামাইয়ের পছন্দের কিছু পেয়েছি তা আমি খুব যত্ন করে রাখবো।
আপু ভেংচি কেটে চলে গেল।

আমি আজকের স্বাভাবিক বিহেভ দেখে খুব খুশি হয়েছি। আজ স্পর্শ অনেকটা কথা বলেছে আমিই চুপ ছিলাম। কথায় প্রেম প্রেম ভাব ছিল। আমার মনে লাড্ডু ফুটছে তাই ভেবে। আমি খুশি মনে ফেসবুকে ঢুকে সার্চ অপশন থেকে স্পর্শর আইডিতে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। সাথে সাথেই রিসিভ হলো। আমি খুশিতে বিছানায় লাফিয়ে উঠলাম।
ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। টুন করে মেসেজ এলো আমি স্ক্রিনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখি স্পর্শের আইডি থেকে মেসেজ। তারাতাড়ি সিন করে ফেললাম। যতটা খুশি মনে সিন করলাম। ততটা খুশি মেসেজ দেখে থাকলো না।

স্পর্শ মেসেজ করেছে, ‘ এতো রাতে তুমি ফেসবুকে কি করছো না ঘুমিয়ে? ঘুম না থাকলে পরতে বসো। পড়ালেখা বাদ দিয়ে খালি ফেসবুক চালানো তাইনা। কালকে তোমাদের ফিজিক্স ক্লাস ও আমি করাবো। পড়া না পারলে বেঞ্চের উপর দাড় করাবো।’
আমি রাগের ইমোজি দিয়ে ডাটা অফ করে ফেললাম। কোথায় প্রেম করবো ভাবলাম আর উনি কি করলো আমাকে থ্রেট দিল।ধুর আমার জামাইকে কে স্যার হতে বলেছিল। দুনিয়াতে এতো চাকরি থাকতে এই চাকরিটাই উনাকে নিতে হলো আমার জীবনটা নরক করতে। কিচ্ছু করে আমি শান্তি পায় না উনার জন্য।
উল্টা পাল্টা হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন কলেজে থেকে আসার পর দেখলাম আব্বু আম্মু রা রেডি হচ্ছে কোথাও যাওয়ার জন্য আমি আসতেই আম্মু বলল,

‘ মারু তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।’
‘ কোথায় যাচ্ছ?’ অবাক হয়ে বললাম।
‘ মাহিন দের বাসায় বিয়ের আগে একবার যেতে বলেছে আমাদের দাওয়াত। এবার না গেলে ভাইসাহেব রাগ‌ই করবে।’
আপুকে বাসায় রেখে আমরা বেরিয়ে পরলাম। মাহিন ভাইদের বাসায় এসে আমার শশুর শাশুড়ি কেও দেখলাম। তাদের ও ইনভাইট করেছে! দুজনকে দেখে স্পর্শ এসেছে ভেবেছিলাম কিন্তু তিনি আসেননি। ডিনার করে আমার চলে এলাম।
পরদিন কলেজে এসে পরিক্ষার নোটিশ পেলাম। আপুর বিয়ের সময় আমার পরিক্ষা আছে দেখে চিল্লাচিল্লি করতে লাগলাম। বিয়ের ডেট চেঞ্জ করতে কিন্তু হলো না। হবে কি করে ? মাহিন ভাইয়ার বিলেত ফেরত মামা তো এই ডেটে বিয়ে না হলে থাকতে পারবে না। তার আবার চলে যাওয়ার ডেট এসে গেছে। আপুর সামনে গাল ফুলিয়ে বসে আছি,

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৬

‘ নিজের বোনের বিয়েটাও শান্তি মতো ইনজয় করতে পারবো না। তোমরা এই ভাবে শত্রুতা করলে আমার সাথে। তোমার গায়ে হলুদের দিন আমার ম্যাথ পরিক্ষা জানো। কেউ আমার সুবিধা দেখলো না।’
আপু শান্তনা দিয়ে বলল, ‘ পরিক্ষা দিয়ে এসে ইনজয় করবি‌। আর ম্যাথের পর তো দুইদিন এক্সাম নাই তো বাকি দিন গুলো শান্তিতেই থাকতে পারবি।’
‘ পড়বো না পরের পরিক্ষায়?’
‘পরবি একটু মাস্তি করবি একটু। আর মাস্তি করতে না পারলেও সমস্যা কি আর কয়েকদিন পর নিজের বিয়ে তখন ইনজয় করিস।’
‘ নিজের বিয়েতে কি আর ইনজয় করা যায়। ধুর তোমরা বুঝবে না।’
উঠে রাগে গজগজ করতে করতে চলে এলাম।

চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব ৮