চৈতালি পূর্ণিমা পর্ব ৩

চৈতালি পূর্ণিমা পর্ব ৩
Writer Asfiya Islam Jannat
— এট লাস্ট তুমি ফোনটা ধরেছ স্পর্শী।
সদ্য ঘুম থেকে উঠায় নিম্প্রভ মস্তিষ্ক কন্ঠটা সনাক্ত করতে ব্যর্থ হলো। তাই সে জিজ্ঞেস করলো, “কে?”
“আমি রুদ্র।”
‘রুদ্র’ নামটা কর্ণকুহরে প্রতিধ্বনিত হতেই স্পর্শীর চোখে-মুখে কাঠিন্য ভাবটা ছড়িয়ে যায়। সে কোন প্রকার দ্বিরুক্তি না করে নিভৃতেই লাইনটা কেটে দেয়। রুদ্র নামক ব্যক্তির সাথে আপাতত তার কোন কথা নেই। লাইন কাটার পর, যেই নাম্বারটা ব্ল্যাকলিস্টে ফালাতে যাবে ঠিক তখনই পুরো দম নিয়ে ফোনটা বাজতে শুরু করে। স্পর্শী লাইনটা একবার কাটতে গিয়ে কাটলো না, কলটা রিসিভ করলো। ক্ষণেই রুদ্র কাতর কন্ঠে বলে উঠলো, ” প্লিজ স্পর্শী, আমাকে কথা বলার একটু সুযোগ দাও। ফোনটা কেট না। “
স্পর্শী কন্ঠের তীক্ষ্ণতা প্রখর করে বলে, “আমাকে ফোন করার সাহস আসে কোথা থেকে তোমার, হ্যাঁ?বলি নি আমি,তোমার সাথে কথা বলার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই?”
“জান, শুধু একটা বার দেখা করো আমার সাথে। প্লিজ! আমি সবটা ক্লিয়ার করে দিব। আমাকে বুঝানোর একটা সুযোগ দাও।”
“দেখা করবে কি আবার থাপ্পড় খেতে? আর সকল বোঝা-বুঝির পাঠ আমি আগেই চুকিয়ে নিয়েছি। এখন কিছু বোঝার নেই আমার, তোমার থেকে তো একদমই না। নেক্সট…”
স্পর্শীর কথার মাঝেই রুদ্র ফোড়ন কেটে বলে, “আমি জানি, আমি ভুল করেছি। এর জন্য আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার কাছে ক্ষমাও চাইছি।”
“ক্ষমা মাই ফুট! এইসব নকল অভিনয় অন্যের সামনে করো আমার সামনে নয়। আর যদি তুমি আমার নাম্বারে ফোন করেছ তাহলে আমার দু’মিনিটও লাগবে না, তোমার নামে হ্যারাসমেন্টের ক্যাস দিতে। মাইন্ড ইট!”
রুদ্রকে আর কথা বলার সু্যোগ না দিয়ে স্পর্শী ফোনটা কেটে, নাম্বারটা ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিল। এই নিয়ে বোধহয় স্পর্শী রুদ্রের মোট পাঁচটি নাম্বার ব্লকে ফালালো। কিন্তু তাও যুবকটির নতুনত্ব নাম্বার থেকে ফোন দেওয়া-দেওয়ির নিশ্চলতা নেই। স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখেই ঘুরে দাঁড়ালো সে, ক্ষণেই নির্বাণকে জাগ্রত অবস্থায় দেখে ভড়কে গেল সে। নির্বাণ বিছানার উপর সটান হয়ে বসে, ভ্রু যুগল একত্রিত করে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুহূর্তেই তীব্র অস্বস্তি ঘিরে ধরে তাকে। সে সাথে ভাবনায় আসে, “নিবার্ণ কি তার কন্ঠে উঠে গিয়েছে? কিছু কি শুনেছে সে?”
স্পর্শী একপলক নির্বাণের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সে নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাণ ওয়াশরুমে যেতেই স্পর্শী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
বাসায় এখন তেমন কোলাহল নেই, গত রাতেই সকলে যে যার বাসায় চলে গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে শুধু চার সদস্যের পরিবারটির সাথে নির্বাণ।  নিত্যদিনের তুলনায় আজ একটু পূর্বে উঠেই চুলো ধরিয়েছেন সাহেলা, দ্রুত কাজ শেষ করার আশায়। কিন্তু সে গুড়োর বালি, ঘড়ি কাটা নয়টার ঘরে এসে স্থির হতে না হতেই গ্যাস ফুরিয়ে গেল। হায়-হুতাশ বাড়লো তার মনের। ঘরে নতুন জামাই, কখন না কখন উঠে পড়ে। সময় মত নাস্তা সামনে পেশ করতে না পারলে কি এক বিড়ম্বনাতেই না পড়তে হবে তাকে। হায়-হতাশ করতে করতেই তিনি সেই জ্বালেই কোনমতে রান্না শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
স্পর্শী ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং টেবিলের কাছে আসতেই দেখে সকলে খেতে বসে পড়েছে। স্পর্শী আড়চোখে একবার নির্বাণকে দেখলো, সে মিজান সাহেবের পাশের চেয়ারে বসেছে। টুকটাক কথা চলছে দুইজনের মাঝে। অকস্মাৎ নির্বাণ চোখ তুলে তাকাতে দৃষ্টি মিললো তাদের। জড়তা ও সংশয় স্পর্শী দ্রুত দৃষ্টি সরালো, “মা, পার্শিয়া কোথায়?”
সালেহা নির্বাণের প্লেটে খাবারা সাজাতে সাজাতে বলে, ” স্পৃহার কাছেই হবে হয়তো, রাতে ওর সাথেই ছিল।”
“রাতে খেয়েছিল ও?”
সাহেলা স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বলেন, “অন্যের হাতে আজ পর্যন্ত খেয়েছে যে জিজ্ঞেস করিস? তুই কালকে ওকে খাবার দেসও নি, সে খায়ও নি।”
“তাই বলে, ওকে জোর করে কিছু খাওয়াবা না? উফফ! কি যে করো না। আমি না থাকলে তো ওকে না খায়িয়ে মারবা।”
সাহেলা কিছু বলতে নিলেও মিজান তাকে চুপ করিয়ে দেন। অতঃপর নেই মৃদুস্বরে স্পর্শীকে বললেন, “তোমার মা আর স্পৃহা অনেক চেষ্টা করেছিল খাওয়ানোর, ও খায়নি। তুমি যাও এখন, ওকে গিয়ে খাবার দিয়ে আসো।”
স্পর্শী মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর রান্নাঘরে গিয়ে পার্শিয়ার জন্য বরাদ্দ করা পাত্রে খাবার নিয়ে ছুটলো স্পৃহার রুমের দিকে।
এতক্ষণ ধরে নির্বাণ নীরব দর্শক হয়ে সবটা দেখছিল৷ পার্শিয়াকে তা জানা কৌতূহলী মনে জাগ্রত হলেও তা প্রকাশ করলো না সে। নীরবে খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেয়।
নির্বাণ রুমে আসতেই সর্বপ্রথম তার চোখে পড়লো কৃষ্ণ ধূসর রঙ্গে আবৃত লোমশ বিড়ালটির দিকে। সে বিছানার ঠিক সামনে বসেই লেজ দুলিয়ে খাবার খাচ্ছে আর স্পর্শী হাটু মুড়ে বসে অতি আদর সহিত তার লোমশ পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে মিষ্টি হেসে বিরবির করে কি যেন বলছে। বিড়ালটি আদৌ কথা বুঝছে কি-না কে জানে, কিন্তু মিনিট দুই-এক পর পর মৃদুস্বরে ডাকছে আর মাথা হেলিয়ে দিচ্ছে স্পর্শীর দিকে। বিড়ালটির খাওয়া শেষ হতেই স্পর্শী সপ্তপর্ণে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসে। পরক্ষণে দরজার দিকে চোখ যেতে নির্বাণের সাথে তার পুনরায় দৃষ্টি অদলবদল হয়। নির্বাণ বলল, “তুমি বিড়াল পালো?”
স্পর্শী দৃষ্টি নত করে মিনমিনে কন্ঠে বলে, “হ্যাঁ!পার্শিয়া নাম ওর।”
নির্বাণ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তীক্ষ্ণ বলে, “ওকে রুম থেকে বের করো।”
নির্বাণের কথায় স্পর্শী হতবিহ্বল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়, “বের করবো মানে? কেন?”
নির্বাণ কিছু বলতে যাবে তার আগেই পার্শিয়া উচ্চস্বরে ডেকে উঠে আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় নির্বাণের দিকে। যার অর্থ, নির্বাণের কথা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। নির্বাণ ভ্রু কুঁচকে তাকায় পার্শিয়ার দিকে, মনে মনেই তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে সে। তিক্ত কন্ঠে বলল, “আমার প্রবলেম আছে।”
“আপনার প্রবলেম আছে বলে কি আমাকে ওকে বের করতে হবে? আজব! আপনার প্রবলেম হলে আপনি রুমের বাহিরে যান। “
“আমি তোমার স্যার ভুলে যেও না। তুমি আমার কথা মানতে বাধ্য।”
স্পর্শী মুখ বাঁকিয়ে বলে, “সেটা ভার্সিটিতে। ভার্সিটির বাহিরে আপনি আমার স্যার নন এবং আমিও আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই। উপরন্তু, এইটা আমার বাসা। এইখানে আমার রাজত্ব বেশি, আপনার না।”
নির্বাণ বিতৃষ্ণায় ‘চ’ উচ্চারণ করার মত শব্দ করে সূক্ষ্মাগ্র দৃষ্টিতে স্পর্শীর পানে তাকায়। স্পর্শী সে দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে বিছানায় বসে পার্শিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। নির্বাণ দ্বিরুক্তি করতে যাবে তার আগেই স্পৃহা এসে বলে, “আপু, একটু এদিক আয় তো। মা তোকে ডাকছে।”
” যা তুই আমি আসছি।”
স্পৃহা যাওয়ার আগে নির্বাণের দিকে তাকিয়ে ছোট হাসি দিয়ে বলে, “ভাইয়া, আপনার কোন সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাবেন। আম্মু বলেছে, আপনার যাতে কোন সমস্যা না হয় সে খেয়াল রাখতে আমায়।”
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ!”
নির্বাণ একপলক স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বলে, “তা সমস্যা আছে একটা। তোমার আপু…..”
কথার মাঝে স্পর্শী ফোড়ন কেটে একটু চেঁচিয়েই বলে, ” এই তোকে না বললাম যেতে। আমার কোন কথাই শুনোস না।”
কথাটা বলেই দ্রুত স্পর্শী উঠে দাঁড়ালো। নির্বাণ বা স্পৃহাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে স্পৃহার কোলে পার্শিয়াকে দিয়ে একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেল নিজের সাথে। তবে, যাওয়ার আগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নির্বাণের দিকে তাকাতে ভুললো না।
নির্বাণ তাতে তাচ্ছিল্য হেসে রুমে প্রবেশ করলো। বিছানায় বসে রুমের চার দেয়ালে চোখ বুলাতেই দৃষ্টি স্থির হলো মনকাড়ার মত বেশ কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যের পোট্রের্টের উপর। রঙ তুলির সংমিশ্রণে খুব নিখুঁত ভাবেই দৃশ্যগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, জীবন্ত লাগছে। নির্বাণ ভ্রু কুঁচকালো, চিত্রগুলো মোটেও বাজার থেকে কেনা মনে হচ্ছে না। সে ভালোমতো এদিক-সেদিক চোখ বুলাতেই দেখতে পেলো কাঠের আলমারির এক চিপা দিয়ে উঁকি মারছে বেশ কিছু শুভ্র ক্যানভাসের দল, স্টাডি টেবিলের উপর হামাগুড়ি খাচ্ছে কিছু সংখ্যক রঙের টিউব, কোটা, ব্রাশ। নির্বাণ বিরবির করে বলে, “মেয়েটার মধ্যে আর কত রহস্য আছে কে জানে? তবে তার আঁকার হাত সত্যি প্রশংসনীয়।”
রূপ-রঙ-সৌরভের স্মৃতির বার্তাবাহক ফাল্গুনকে বিদায় জানানো হয়েছে বহু পূর্বেই৷ চৈত্রের রৌদ্রজ্বল রক্তিম প্রভাতের অপার্থিব সৌন্দর্যে শুরু হচ্ছে দিনগুলো। মাধবীলতার মোহ ঘুরে বেড়াচ্ছে অনিলে৷ এমনই এক তপ্ত দুপুরে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে জাবির শহীদ মিনারের সিড়িতেই আড্ডায় মেতে উঠেছে বন্ধুমহলের সকলে। তবে আজ বন্ধুমহলের আড্ডায় মন নেই একজনের, সে হারিয়ে আছে আপন ভাবনাতে। হঠাৎ পাশ থেকে তার উদ্দেশ্য কেউ বলে উঠে,
“এই স্পর্শী কোন ভাবনাতে ডুবে আছিস? কখন থেকে দেখছি কোন কথাই বলছিস না।”
স্পর্শী নিজ ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নিধির উদ্দেশ্যে বলে, “আরেহ না এমনি।”
বিপরীত পাশ থেকে মাহিন বলে, “গত সপ্তাহের একদিনও ভার্সিটি আসোস নি। তার উপর এখন মনমরা হয়ে বসে আছিস। বুঝলাম ভার্সিটি আসিস নি রুদ্রের জন্য। কিন্তু এখন কি মন মরা হয়ে আছিস ওর জন্যই?  “
নিধি মাহিনের মাথায় একটা চাপড় দিয়ে বলে, “রুদ্রের কথা তুলোস কেন হারামি? মরার শখ জাগসে?”
কথায় কথায় মাহিন ও নিধির খুটিনাটি ঝগড়া বেঁধে যেতেই কেয়া আর সামি ওদের দুইজনকে শান্ত হয়ে ব্যস্ত পড়ে। আর স্পর্শী, সে তো এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে প্রবেশ দুয়ার দিয়ে আসতে থাকা কালো গাড়িটির দিকে। দুই ধারের কাঁচ উঠিয়ে রাখা সত্ত্বেও স্পর্শী জানে ভিতরে বসে থাকা মানুষটিকে। মানুষটি বরং কেউ নয় নির্বাণ। শেষ তার দেখা মিলেছিল পরশুদিন, চলে যাওয়ার সময়।
সেদিন রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর স্পর্শী ভুলেও ওই রুমে যায়নি, রাগ জমেছিল তার উপর। অবশ্য, নির্বাণও তার খোঁজ করেনি। তবে, বিকালে নিবার্ণ চলে যাওয়ার সময় সাহেলা এক প্রকার টেনে এনেই স্পর্শীকে তার সম্মুখে দাঁড় করিয়েছিল। দুইজন দুইজনের সামনে দাঁড়ালেও কথা হয়নি কিঞ্চিৎ পরিমাণ, নির্বাণ নীরবেই বিদায় নিয়েছিল তার থেকে। অতঃপর তাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ হয়নি।
নির্বাণের গাড়ি পার্কিং এরিয়ার কাছে চলে যেতেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। স্পর্শী এইবার সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নিধি,মাহিন,কেয়া ও সামির দিকে তাকায়। নিধি ও মাহিনের ঝগড়া ইতি টানার পরমুহূর্তেই স্পর্শী কোন প্রকার ভূমিকা ছাড়াই বলে উঠে,
“আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।”
কথাটা সকলের কর্ণধারে এসে বারি খেতেই সকলে গোলগোল দৃষ্টিতে তাকায় স্পর্শীর দিকে। নিধি ভরাট কন্ঠে বলে, “তোর কি নামের পাশে বিবাহিত মহিলা ট্যাগ লাগানোর শখ জাগসে? নাকি মেয়াদ উত্তির্ন কিছু খেয়ে টাল হয়ে আছিস, কোনটা?”
সামি বলে, “তুই কি রুদ্রের বিরহে উন্মাদ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিস নাকি? লক্ষণ তো ভালো না।”
স্পর্শী শীতল কন্ঠেই বলে, “বার বার রুদ্রকে এইসবের মাঝে আনা বন্ধ কর। ও আমার লাইফে জাস্ট একটা আবর্জনা ছিল, যা আমি প্রথমে ধরতে না পারলেও পরে পেড়েছি এবং ছুঁড়েও ফেলেছি। এখন সেই চ্যাপ্টার ক্লোসড্। আর রইলো বিয়ের কথা, সত্যি আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস নাহলে মাকে ফোন দে আমার।”
স্পর্শীর কথা শুনে সকলে থম মেরে বসে থাকে। হতবিহ্বল চাহনিতে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকে। তাদের বোঝা হয়ে গিয়েছে স্পর্শী তাদের সাথে মিথ্যে বলছে না। কিন্তু তাও সব যেন কোথাও জটলা পাঁকিয়ে যাচ্ছে। স্পর্শী  নীরবেই তাদের পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। নিজেদের বিস্ময় কাটিয়ে নিধি আর সামি একত্রেই জিজ্ঞেস করে, “কাকে বিয়ে করেছিস তুই? সে কি করে? আর কিভাবে বিয়ে হলো তোদের? মানে কিভাবে কি?”
“আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে তোরা চিনিস।”
কথাটা বলে স্পর্শী থামে। সকলে এইবার বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়, বুঝে উঠার চেষ্টা করে তাদের চেনা-জানা এমন কোন ব্যক্তি আছে যার সাথে স্পর্শী বিয়ে হতে পারে। হাজারটা সমীকরণ মিলিয়েও যখন কারো নিকটেই উত্তর ধরা দিল না তখন তারা স্পর্শীকে ওই ব্যক্তি সন্ক্রান্ত প্রশ্ন করার জন্য উদ্যোগী হলো। কিন্তু সেই সময় কেউ ঝড়ের গতিতে এসে হাজির হলো তাদের সামনে, মুহুর্তেই স্পর্শীর একহাত হাতের মুঠোয় নিয়ে কাতর কন্ঠে বললো,
— অবশেষে তুমি এসেছ