চৈতালি পূর্ণিমা পর্ব ৫

চৈতালি পূর্ণিমা পর্ব ৫
Writer Asfiya Islam Jannat
হিম বাতাসে নিমজ্জিত পরিবেশ। সোনালী রোদ্দুরের ছটা খেলা করছে আন্তরীক্ষের আঁকে-বাঁকে। দাঁড় কাকের দল বসে আছে বটমূলে বিপরীতমুখী বৃক্ষে,  খাবারের অন্বেষণ চালাচ্ছে বহুক্ষণ ধরে। মাঝে মধ্যে তীর্যক দৃষ্টি গিয়ে ঠেকছে বটমূলের নিচে অবস্থান করা বন্ধুমহলের দিকে। সকলে মগ্ন স্পর্শীতে, তীব্র মনোযোগ দিয়ে শুনছে কিছু প্রহর পূর্বের ঘটনা।
সম্পূর্ণ ঘটনা খোলাসার পর সকলের দৃষ্টি পরিপূর্ণ হয় রোষানলে। ক্রোধে ফেটে পড়ছে তারা। এত ভালোবাসা, এত পাগলামো সবই অভিনয় মাত্র? কি নিখুঁত অভিনয়? মানুষ এতটা নিম্ন,নিকৃষ্ট কিভাবে হয়? স্পর্শীকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত ভাষাও কেউ খুঁজে পাচ্ছে না, খেই হারিয়েছে সকলেই। কি-বা সান্ত্বনা দিবে তারা, সান্ত্বনা দেওয়ার আদৌ কিছু আছে কি? সামি আর নিধি তাকিয়ে আছে স্পর্শীর মুখপানে, বুঝার চেষ্টা করছে তার ভিতরকার অবস্থা। কিন্তু স্পর্শী নির্বিকার বসে আছে, মুখভঙ্গিতে নেই কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যার দরুন তার ভিতরের অবস্থা সম্পর্কে জানা দুরূহ। সামি অবশেষে বলে, “তুই ঠিক আছিস?”
স্পর্শী মন্থর কন্ঠে বলে, “আমার খারাপ থাকার কথা নাকি? আজিব!”
কেয়া বলে, “সেটা না। কিন্তু..”
কেয়াকে বলতে না দিয়ে স্পর্শী বলে উঠে, “ওর প্রতি শুধু আমার ভালোলাগা ছিল, ভালোবাসা না। তাই সব জানার পরও আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না। বরং ঘৃণা হচ্ছে এমন একটা মানুষের সাথে আমি দুই মাস ছিলাম।”
নিধি পাংগু মুখে বলে, “কি নিদারুণ অভিনয়ই না করলো? আমি তো সত্যি ভেবে বসেছিলাম ব্যাটা তোকে সত্যি পাগলের মত ভালোবাসে। তাই তো আমরা তোকে রাজি করালাম এই সম্পর্কে যেতে। কি ভুলটাই না করলাম রে।”
মাহিন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, “শুধু তুই না আমরা সবাই ভেবেছিলাম। ভালোই অভিনয় জানে ব্যাটা৷ কয়েকটা জুতার অস্কার প্রাপ্য তার।”
স্পর্শী হেসে বলে, “জানিস! আমার বাবা সবসময় একটা কথা বলে, কাউকে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে বিশ্বাস করতে নেই৷ ভালোবাসতেও নেই। অন্যথায় দিনশেষে কান্না ব্যতীত ভাগ্যে কিছু জুটে না। সে কথা মেনে চলেছিলাম বিধায় হয়তো আজ আমি ভালো আছি।”
কেয়া বলে, “কিন্তু আমার মতে কাউকে ভালোবাসা বা বিশ্বাস করাই বোকামি। সব ছেলেরাই এক। ধূর্ত ও প্রতারক। এইসবের পর আমি কাউকে সর্বস্ব দিয়ে কেন, নিজের এক শতাংশ দিয়েও ভালোবাসতে বা বিশ্বাস করতে রাজি নই। একাই কাটিয়ে দিব পুরো জীবন, দরকার নেই কারো।”
কেয়ার কথায় মাহিন রেগে গিয়ে বলে, “সব ছেলেরা এক না বুঝলি। দুই-একজনের জন্য তুই সবাইকে একই শ্রেণীতে ফেলতে পারিস না। ভুলে যাস না, তোর বাবা-ভাইও কিন্তু পুরুষই। এখন বল তারা কি এমন? নাকি আমরা এমন?”
সামি বলে, “কেয়া শুন! এই কথাগুলো তোর মস্তিষ্কের, মনের না। ভালোবাসাহীন জীবন হয় না।আর ভালোবাসা বলে কহেও হয় না। যখন হওয়ার এমনেই হয়ে যায়, কোন বাঁধা-নিষেধ সে তখন মানে না। তুই কাউকে ভালোবাসলে বুঝবি।”
নিধি বলে, ” সবসময় কি আর মস্তিষ্কের জোর চলে? ভালোবাসলে অবুঝ মনের নিকট এক না এক সময় নিজের সর্বস্ব হারাতেই হয়।”
স্পর্শী কিছু না বলে সকলের কথা মন দিয়েই শুনলো। আনমনে ভাবলো, “আসলেই কি ভালোবাসলে নিজের সর্বস্ব হারাতে হয়?”
ক্ষণে কেয়া মুখ ছোট করে বলে, ” আচ্ছা বাবা সরি। আমি কথাটা ওভাবে বলতে চাই নি।”
 স্পর্শী বলে, “আচ্ছা তোরা থামবি এইবার?”
 অতঃপর একটু সময় নীরব থেকে ব্যঙ্গ করে বলে, “ভাগ্যিস! রুদ্রের প্রতি আমার মুগ্ধতা আগেই কেটেছিল, নাহলে কি যে হতো।”
মাহিন স্পর্শীর মনোভাব বুঝতে পেরে হেসে বলে, “কি আর হতো? পাগল গরাদে সিট বুক হতো।”
কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠে। হঠাৎ নিধি বলে বলে, “এই তুই সত্যি বিয়ে করেছিস?”
স্পর্শী নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল, “আর কতবার বলবো?”
“জামাই কেডা তাইলে? নাম কো?”
স্পর্শী এক মূহুর্ত চুপ থেকে বলে, “নাম বা পরিচয় দিয়ে তোর কাজ কি? আপাতত এতটুকু জেনে রাখ তোরা তাকে চিনিস।”
সামি বলে, “এইভাবে আমাদের ঝুলিয়ে রাখা কি ঠিক?”
স্পর্শী বলে, “অবশ্যই ঠিক। তোদের ঝুলিয়ে রাখা আমার বন্ধুগত অধিকার।”
মাহিন বলে, “বুঝছি, জামাই বুইড়া বা ভুড়িওয়ালা টাকলা ব্যাটা। তাই তুই বলতে চাস না।”
মাহিনের কথা শুনে স্পর্শী রোষানল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “বাজে বকবি না একদম।”
“বাব্বাহ! জামাই এর জন্য দেখি এখনই দরদ উতলাইয়া পড়তাসে। কি প্রেম! উহুউ!”
স্পর্শী মাহিনের পিঠ ধুম করে কিল বসিয়ে দেয়। মাহিন ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্পর্শী বলে উঠে,
 “এই সম্পর্কে আমি কথা বলতে চাই না। সময় হোক জেনে যাবি আমার জামাই কে।”
সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে এক মুঠো রক্তিমা ছড়িয়ে গেল নীলাভ অম্বরের বুকে। পাখিরা ব্যস্ত হলো নিজ নীড়ে ফিরতে। আযানের পরপরই যান্ত্রিক শহর আবৃত হলো কৃত্রিম আলোয়, পরিবেশ নিমজ্জিত হলো নিরালোকে।
নির্বাণ এক কাপ কফি নিয়ে বসলো ল্যাপটপ খুলে, ওয়েবসাইট ঘাটছে কোন এক কারণে। এমন সময় রুমে নাহিদের আর্বিভাব হয়৷ সদ্য ঘুম থেকে উঠার ফলে চুলগুলো বেশ এলোমেলো, চোখের পাতা জুড়ে এখনো ঘুম ঘুম ভাব বিদ্যমান। নাহিদ নিঃশব্দে গিয়ে বসে পড়লো নির্বাণের পাশে৷ নির্বাণ ভ্রু কুঞ্চিত করে পাশ ফিরে তাকানোর পরমুহূর্তেই নাহিদ নির্বাণের হাত থেকে নিয়ে কফি খাওয়া শুরু করে। তৃপ্তি নিয়ে বলে, “আহা! কি শান্তি।”
  নির্বাণ মুখ ঘুচে বলে, “মুখ ধুয়েছিস তুই?”
নাহিদ একটা হামি তুলে বলে, “ধুবো নে। এত তাড়া কিসের?”
“মুখ না ধুয়ে তুই আমার কফিতে মুখ দিলি কোন সাহসে? এখনই বের হো আমার রুম থেকে বলছি। খাচ্চোর একটা!”
নাহিদ মন্থর কন্ঠে বলে, ” মুখ না ধুয়ে কফিতে মুখ দিয়েছি বলে আমাকে এইভাবে বলতে পারলি? ভাই নামে কলঙ্ক তুই।”
নির্বাণ মুখ বিকৃতি করে বলে, “তোর মত নোংরা মানুষের ভাই হওয়া চেয়ে কলঙ্ক হওয়া ভালো। কফির মগটাই আমার এখন চেঞ্জ করতে হবে। ধ্যাৎ!”
নাহিদ দাঁত চিবিয়ে বলে, “দোয়া দিলাম, তোর বউ যাতে আমার চেয়েও ডাবল নোংরা হয়। তোর জীবনটা যাতে নোংরার সাগরে ভাসিয়ে দেয়। শালা শুচিবাই একটা!”
নির্বাণ তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাতেই নাহিদ দাঁত কেলিয়ে বলে, “বউ থেকে মনে পড়লো আমার ভাবী কেমন আছে রে? তোদের প্রেমালাপ কত দূর?”
নির্বাণ প্রত্যুত্তর করলো না, নিজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে মনোযোগী হলো। তা দেখে নাহিদ সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “তোর আদৌ ভাবীর সাথে কথা হয় তো?”
নির্বাণের সরল স্বীকারোক্তি, “না!”
“সর্বনাশ! বিয়ের এক সপ্তাহ হয়ে গেল এখনো তুই কথা বলা শুরু করিসনি? দুইজনে কি বিবাহিত ব্যাচেলর হওয়ার পণ নিয়েছিস? “
নির্বাণ ভ্রু কুঞ্চিত দৃষ্টিতে তাকায় নাহিদের দিকে, “ফাজলামো করবি না।”
“তুই ফোন দিস না কেন ভাবীকে? প্রেমালাপ এখন থেকে শুরু করবি না তো কি আমার নাতি-নাতনি জন্ম নেওয়ার পর করবি? একটু তো রোমান্টিক হো ভাই, নাইলে ভাবী তোকে নিরামিষ ভাববে।”
“হোস্টেলে থেকে এই শিখছিস? মাকে বলে তোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”
“ভাইদের গোপনীয় কথার মাঝে মাকে টানিস কেন হ্যাঁ? লজ্জা করে না এই বয়সে সারাক্ষণ মা,মা করতে?”
“ঠাডিয়ে দিব এক। বেদ্দব একটা!”
নাহিদ ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলে, “ভালো কথার দাম নাই। সময় থাকতে আমার থেকে টিপস নে, নাইলে কপালে বউয়ের সোহাগ জুটতো না।”
নির্বাণ এইবার চেঁচিয়ে উঠে, “মা!!!”
নাহিদ এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আরেহ ভাই যাচ্ছি তো। মাকে ডাকস কে?”
কথাটা বলে কফির কাপটা নির্বাণের পাশে রেখে রুম থেকে চলে যায়। পিছন থেকে নির্বাণ চেঁচিয়ে বলে, “কফির কাপ সাথে নিয়ে যা। এই কফি এখন কে খাবে?”
পার্শিয়াকে কোলে মাঝে নিয়ে স্পর্শী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আনমনে কি যেন ভাবছে। হঠাৎ পার্শিয়া মৃদুস্বরে ডেকে উঠতে স্পর্শীর ধ্যান ভাঙ্গে। সে পার্শিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “কি হয়েছে?”
পার্শিয়া প্রত্যুত্তরে আলতো করে মাথাটা ঘেষে দেয় স্পর্শীর বা পার্শ্বের বাহুদ্বয়ে, আদুরে সুরে ডেকে উঠে কয়েকবার। স্পর্শী তা দেখে হালকা হেসে পার্শিয়ার কৃষ্ণ-ধূসর লোমশের মাঝে হাত গলিয়ে দেয়, মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে, “দিন দিন বড্ড আহ্লাদী হয়ে যাচ্ছো।”
পার্শিয়া কথাটা বুঝলো কি-না কে জানে, কিন্তু পরক্ষণেই আবার আদুরে সুরে ডেকে উঠলো। বেশ কিছুক্ষণ এইভাবেই অতিক্রম হতে স্পর্শী আনমনে বলে, ” “ভালোবাসা বলতে কি কিছু আছে? আমি কি সত্যি কখনো কাউকে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে ভালোবাসতে পারবো? আদৌ কি সম্ভব?”
স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “রুদ্রের প্রতি নিছক আমার অনুভূতিগুলো ফিকে ছিল, তাই এইবারের ধাক্কা সহ্য করে যেতে পেরেছি৷ কিন্তু জীবনের বাকি মোড়ে কি পারবো? নির্বাণের স্যারের সাথেও তো আমার সম্পর্ক পুরো আগোছালো। একে গোছাবো কিভাবে? এই অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের পরিনতি কি? উফফ! জীবনটা হঠাৎ এলোমেলো হয়ে গেল কেন? ভাল্লাগে না।”
হঠাৎ স্পর্শীর মুঠোফোন বেজে উঠতে সে আপন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। সে পার্শিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে ফোন হাতে নেয়, স্ক্রিনে অপরিচিত নাম্বার প্রদর্শিত হতে দেখে ক্ষণেই তার ভ্রু কুঁচকে আসে। ফোন রিসিভ করে, “আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন?”
ওপরপাশ থেকে উত্তর না আসায় স্পর্শী বেশ কয়েকবার একই কথা পুনরাবৃত্তি করে। কিন্তু তাও কোন প্রত্যুত্তর না পাওয়ায় স্পর্শীর অভিব্যক্তি বিরক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সে ঈষৎ মেজাজ দেখিয়ে বলে, ” আজিব তো! চুপ থাকার জন্য ফোন  দিয়েছেন নাকি? কথা বলেন না ক…”
কথাটি শেষ হওয়ার পূর্বেই ফোনটা কেটে যায়। স্পর্শী এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মুঠোফোনটির দিকে তাকায়। কে ফোন করেছিল কে জানে?
রৌদ্রজ্বল দুপুরে ঘর্মাক্ত শরীর শৈথিল্য করতে
ক্লাসরুমের ফ্যানের নিচে বসে আছে অনেকেই। কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প করতে মশগুল, তো কেউ আবার আগতপ্রায় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত  অনুষ্ঠান নিয়ে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়া সুবাদে অনুষ্ঠানের অর্ধাংশ দায়িত্ব এসে পড়েছে তাদের উপর। দায়িত্ব নিয়ে কারো আক্ষেপ নাহলেও আক্ষেপটা হচ্ছে গিয়ে অন্যকিছুতে।
“ভাই, আর কাউকে পাইলো না স্যার? অনুষ্ঠানটার দেখা-শোনার দায়িত্ব হিটলার স্যারকেই দিতে হলো?”
হায়-হুতাশ করতে করতে কথাটি বললো মাহিন৷ কেয়া মুখ ছোট করে বলে, “সাথে লেডি হিটলারও তো আছে। এইবার কাজে কোন ভুল হলে ডাইরেক্ট  ইন্না-লিল্লাহ।”
নিধি পাংশু মুখে বলে, “কত ভালো ভালো টিচাররা বদলি হয়ে যায় বা ভালো জব পেয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। এরা যায় কেন ভাই? কই ভার্সিটি লাইফে একটু চিল করুম তানা। নির্বাণ স্যার আর তাপসি ম্যামের অত্যাচারে জীবনটাই কয়লা। কোন দুঃখে এইখানে মরতে আইসিলাম আমি?”
স্পর্শী একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে, “থামবি তোরা?”
নিধি বলে, “এখন কি নিজের দুঃখও প্রকাশ করতে পারুম না তোর লিজ্ঞা? আর তুই এমন মুখ বানাচ্ছিস কেন যে তোর প্রিয় স্যারের নামে কিছু কইতাসি? দুইজনই তো তোর চরম অপছন্দের। স্পেশালি নির্বাণ স্যার, সে তো তোর দুই চোখের বিষ। দেখতেই পারোস না একদম।”
স্পর্শী কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে, “কে কার চোখের বিষ আর কে কাকে দেখতে পারে না শুনি?”