চৈত্রিকা পর্ব ১৫

চৈত্রিকা পর্ব ১৫
বোরহানা আক্তার রেশমী

কাঠফাটা গরমে মানুষের বেহাল অবস্থা। এই রোদ্রের মধ্যেই চৈত্রিকা আর প্রহর দুপুরবেলা করে চলে এসেছে সাথীদের বাড়িতে। এখানে তাদের দুদিন থাকার নিয়ম কিন্তু একই গ্রামের হওয়ায় প্রহরের বাড়িতে যাতায়াত করতে কোনো সমস্যাই হবে না। সকাল থেকে এটা ওটা করতে করতেই দেড়ি হয়ে গেছে৷ তারপর তৈরী হতে হতে ১২ টা পার হয়েছে। প্রহর শুধু ভ্রু কুঁচকে দেখে গেছে সবটা। একবার তো বেশ গম্ভীর স্বরে বলেই বসেছে,

‘বাড়িতে যাওয়ার কি ইচ্ছে আছে?’
চৈত্রিকা শাড়ি ঠিক করতে করতেই বেশ অবাক সুরে বলে, ‘ইচ্ছে আছে মানে কি? ইচ্ছে না থাকলে কি তৈরী হতাম? আপনি কি আজকাল চোখে কম দেখেন নাকি জমিদার সাহেব?’
প্রহর উত্তর দেয় না। চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে এগোতে এগোতে বলে, ‘আর ৫ মিনিটের মধ্যে নিচে না আসলে মামার বাড়ি যাওয়ার আশা ছেড়ে দিও!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈত্রিকার জবাবের অপেক্ষা না করেই প্রহর বেড়িয়ে গেছে। নিজের শাড়ি ছেড়ে কপালে ভাজ ফেলে প্রহরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে চৈত্রিকা। বিড়বিড় করে বলে,
‘আরো ৫ মিনিট কেন! ৫০ মিনিটেও আমার তৈরী হওয়া শেষ হবে না। কিভাবে আমাকে মামার বাড়ি যাওয়া থেকে আটকান আমিও দেখে নিবো!’
সত্যি সত্যি বেশ আস্তে ধীরে তৈরী হয় চৈত্রিকা। প্রহর বিরক্তিতে, রাগে ফেটে পড়লেও বাহিরে শান্ত স্বভাব ধরে রেখেছে। চৈত্রিকা নিজের কাপড় নিয়ে বেশ ধীরেই নেমে আসে হল রুমে। প্রহর প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তাকায়। চৈত্রিকা তা পাত্তা না দিয়ে বেশ ভদ্র গলায় বলে,
‘চলুন!’

প্রহর কিছু বলতে গিয়েও বলে না। চুপচাপ নিজের রাগ, জিদ, বিরক্তি পেটের মধ্যে চেপে রেখে পল্লবীর থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা লাগায়। চৈত্রিকা নিজেও পল্লবীকে ছোট করে বলে, ‘আসি!’
পল্লবী কোনো জবাব দেয় না। চৈত্রিকা বাড়ির সদর দরজা পেরোতেই ছুটে আসে নাসিমা। চৈত্রিকার হাত চেপে ধরে হাসি হাসি মুখে বলে, ‘এই বাড়ি থেকে বের হয়েছিস আর যেনো এবাড়িতে তোর পা না পড়ে!’
চৈত্রিকা হাসে। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের রাস্তায় হাঁটা লাগায়। কন্ঠে বেশ রসিকতা মিশিয়ে বলে, ‘কি যে বলেন না কাকিমা! আমি হলাম এবাড়ির বড় বউ। আমি এই বাড়িতে পা না রাখলে কে রাখবে?’

নাসিমা চৈত্রিকার হাসির মানে বোঝে না। চৈত্রিকার ঠোঁটে হাসি থাকলেও চোখে ছিলো অন্যকিছু। যা নাসিমার চোখে না পড়লেও চোখ এড়ায়নি চৈত্রিকার থেকে কিছুটা দুরে দাঁড়ানো প্রহরের। চৈত্রিকা পাশাপাশি আসতেই প্রহর নিঃশব্দে হাঁটতে শুরু করে৷ চৈত্রিকা রোদটাও উপভোগ করতে করতে হাঁটছে আর গুনগুণিয়ে গান গায়ছে। প্রহর বুঝলো না চৈত্রিকার হঠাৎ এতো আনন্দের বিষয়টা! বেশ খটকা লাগলেও কোনো কথা বলে না। চৈত্রিকা নিজে থেকেই বলে,
‘আজকের রৌদ্রের তাপটা একটু বেশিই। তাই না জমিদার সাহেব?’

প্রহর চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটার মনে কি চলছে! মুখের দিকে তাকিয়ে কি মনের মাঝে চলা ঘটনা টের পাওয়া যায়! হয়তো যায়। কিছু মানুষের চোখ দেখলে বোঝা যায় কিন্তু এই মেয়ের চোখের দিকে তাকালেও অতল গভীরে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই বোঝা যায় না। প্রহর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। মাথাটা ঝিম ধরে যায়। বড় বড় করে শ্বাস নেয়। মেয়েটার সৌন্দর্যর প্রখরতা এতো কেনো? তাকালেই মনে হয় হারিয়ে যাবে ভীষণ গভীরতায়। চৈত্রিকা আঁড়চোখে একবার প্রহরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে৷ প্রহরের উদ্দেশ্যে বলে,
‘জমিদার সাহেব সূর্যের দিকে যেমন তাকিয়ে থাকাটা দায় তেমনই চৈত্রিকার দিকেও তাকিয়ে থাকা দায়। চোখ ঝল’সে যাবে, মাথা ঝিম ধরে যাবে।’

প্রহরের চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। এই গাম্ভীর্যতা বজায় রেখেই আওড়ায়, ‘নারী সূর্যের মতো তেজী হয় না। এরা ছ’লনা’ময়ী হয়। রুপের তেজে পুরুষের শক্ত-সামর্থ্য হৃদয়কেও কাবু করে দেয় এরপর সেই রুপের পেছনের আসল রুপ দেখায়। এক পুরুষকে আঘাত করে, তার হৃদয়ে ক্ষ’ত করে আবার অন্য পুরুষের কাছে যায়।’
‘ঠিক যেমন মহুয়া বুবু করেছিলো আপনার সাথে! তাই না?’
প্রহর ভেতরে ভেতরে চমকালেও ওপরে তার ছিটেফোঁটাও টের পেতে দেয় না। রাগে, ক্ষো’ভে মাথার ভেতরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। মুখের গম্ভীরতার সাথে সাথে রাগে চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে যায়। হাঁটার গতি বাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে,

‘নারী মমতাময়ী আবার নারীই ছ’লনা’ময়ী। নারীই পুরুষের সফলতার কারণ আবার নারীই পুরুষের ধ্বংসের কারণ। তেমন নারী নিজেই নিজের ধ্বংস, মৃ’ত্যুর কারণ। নারী সরল হোক তবুও সৎ হোক। ভুল করেও ছ’লনা’ময়ী হইও না চৈত্রিকা। তবে আমি তোমাকে তোমার নিজের ধ্বংস দেখাবো।’

বাড়িতে প্রবেশ করতেই সাথী ছুটে আসে৷ চৈত্রিকাকে শেষ দেখেছিলো তাদের বউভাতের দিনে। আর একটিবারের জন্যও দেখা হয়নি। সনিয়া বেগম আর সাথী বেশ চিন্তায়ই ছিলো। আজ চৈত্রিকাকে সুস্থ দেখে দুজনেই বেশ শান্তি পেলো। পাশেই দাঁড়ানো গম্ভীর প্রহরকে দেখে চমকালোও। আজম আলী বাড়িতেই ছিলো। সাথী আর সনিয়া বেগমের আওয়াজ শুনে বেশ বিরক্তি নিয়েই একটা বি’শ্রী ভাষায় গালি দিতে দিতে ঘর থেকে বের হয়৷ সামনে দাঁড়ানো প্রহরকে দেখে ঘাবড়ে যায়।

সনিয়া বেগম আর সাথী ততক্ষণে মাথা নত করে নিয়েছে। বাড়ির জামাইয়ের সামনে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা ভাবতেও পারেনি। প্রহর সবটা শুনেও এমন ভাব করলো যেনো সে কিছুই শোনেনি। চৈত্রিকা নিজেই পরিস্থিতি সামলাতে তাড়া দিলো সনিয়া বেগমকে। বেশ ক্লান্তি দেখিয়ে সনিয়া বেগমের মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। প্রহর আর চৈত্রিকাকে একটা ছোট ঘরের সামনে এনে মাথা নিচু করে বলে,

‘জমিদার বাবা আমাদের তো ছোট্ট ঘর। আপনার হয়তো থাকতে সমস্যা হবে৷’
প্রহর কিছু বলার আগেই চৈত্রিকা বেশ উৎফুল্ল কন্ঠে বলে, ‘কি যে বলো না মামি! থাকতে সমস্যা হবে কেনো? উনি বিয়ে করেছে চাল চুলোহীন মেয়েকে তাই শ্বশুড়বাড়ি হিসেবে তোমরাই শেষ সম্বল। তাই তোমাদের এই ছোট্ট ঘরে থাকতে উনার একটুও সমস্যা হবে না৷ ঠিক না জমিদার সাহেব?’

প্রহর ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে তাকিয়ে রয় চৈত্রিকার দিকে৷ চৈত্রিকা দাঁত বের করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সনিয়া বেগম কিছু বলার আগেই চৈত্রিকা তাড়া দিয়ে সনিয়া বেগমকে অন্যদিকে পাঠায়। সনিয়া বেগম চলে গেলে চৈত্রিকা নিজে আরাম করে বসে নিজের বিছানায়। প্রহর ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুরো ঘরটাকে। ঘরে তেমন কিছু নেই। একটা ছোট্ট চৌকি, ছোট্ট আলনা আর ছোট্ট একটা টেবিল। চৌকিটা তেমন বড়ও নয় আবার ছোটও নয়। দুজনের বেশ ভালো মতোই হয়ে যাবে। তবে পাশাপাশি ঘুমালে একজনের শরীর সহজেই অন্যজনের শরীর স্পর্শ করবে। প্রহর ঠোঁট কামড়ে কোমরে হাত রেখে কিছু ভাবে। তারপর চৈত্রিকার কাছে এগিয়ে এসে বলে,

‘আমি কিছু বলার আগেই পাকনামো করলে কেনো?’
‘মন চায়ছে তাই। এখন ইচ্ছে হলে হাত মুখ ধুয়ে আসেন নাহলে নিজের বাড়ির দিকে যান!’
প্রহর শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে চৈত্রিকার সাহসটুকু দেখে। এরপর কোনো রকম কথা না বাড়িয়ে এগোয় চৈত্রিকার কাছে। চৈত্রিকা প্রথমে টের না পেলেও পরে বুঝতে পারে। ততক্ষণে প্রহর তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। চৈত্রিকা কিছু বলার আগেই এক হাতে তাকে চেপে ধরে প্রহর। মুখ কানের কাছে নিয়ে এসে বলে,

‘জমিদার বাড়ির ছেলেকে তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছো এই ছোট্ট কুটির থেকে? সাহসটা বাড়াবাড়ি হচ্ছে না চৈত্রিকা? আর তুমি যেভাবে নিজের অধিকার খাটাচ্ছো তাতে আমি আমার সীমা লঙ্ঘন করলে তুমি সয়তে পারবে তো?’

মাথার ওপরে ভনভন করে ফ্যান চলছে। এর মাঝেই ঘুমিয়ে আছে অর্থি। নিবিড় যে তাকে কিছুক্ষণ বাদেই পড়াতে আসবে তার বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপ নেই। দুপুরের খাবার খেয়েই ভাতঘুমে মত্ত হয়ে গেছে। পল্লবী এসে একবার ডেকে গেলেও সেই ডাক অর্থির কান অব্দি পৌঁছেছে বলে মনে হয় না। অনেকক্ষণ পরও যখন অর্থির কোনো সাড়াশব্দ পায় না তখন পল্লবী ফের আসে। অর্থিকে আগের মতোই হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাতে দেখে বেশ রেগে যায়। ঘুমন্ত অর্থিকে ভালোমতো কয়েকবার ডেকেও যখন কোনো সাড়া পেলো না তখন অর্থির কান ধরে টেনে তোলে। অর্থি ঘুম ঘুম চোখেই ব্যাথায় আর্তনাদ করে৷ আদুরে স্বরে বলে,

‘আম্মাজান আমার কানে ব্যাথা পাচ্ছি তো। ছেড়ে দেন না!’
পল্লবী দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তোকে কতবার ডেকেছি অর্থি? উঠিস না কেন? এখন কানে লাগছে! তুই আর এক মিনিটের মধ্যে না উঠলে তোর হাত, পা, পিঠ, নাক, চোখ, মুখ সব ব্যাথা করবে। জলদি ওঠ!’
অর্থি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, ‘আচ্ছা ছাড়েন! উঠতেছি তো।’

পল্লবী না ছেড়ে টেনে দাঁড় করিয়ে দেয় অর্থিকে। তারপর অর্থিকে গোসলখানায় নিয়ে চোখ মুখ ধুইয়ে দেয় নিজেই। এর মধ্যেই একজন এসে জানিয়ে যায় নিবিড় এসেছে। অর্থিকে কোনো রকমে তৈরী করে পড়ার ঘরে ঠেলে পাঠায় পল্লবী। অর্থি তখনো হাই তুলছে। ঘুমে ঢুলছে। তার এমন অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয় নিবিড়। কিছু বলার আগেই বোকা অর্থি ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে চেয়ারে বসতে নিলে উল্টে পড়ে যেতে নেয়। আকস্মিক ঘটনায় কোনো রকমে নিবিড় অর্থির এক হাত টেনে ধরে। তারপর বেশ জোড়ে ধমক লাগায়। অর্থি চমকে ওঠে৷ চোখ বড় বড় করে নিবিড়ের মুখের দিকে তাকায়। ঘুম যেনো কোথায় পালিয়ে গেছে মুহুর্তেই। নিবিড় রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘এই মেয়ে! চোখে দেখো না? এখনই তো উল্টে পড়ে কোমড় ভাঙতে। ঢুলছো কেনো? ঘুমাচ্ছিলে?’
অর্থি ঠোঁট উল্টায়। মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘আমি কি ইচ্ছে করে উল্টে পড়েছি? সব দোষ তো আপনার আর আম্মাজানের। আপনার জন্যই তো আম্মা আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলো! আবার আপনিই আমাকে ধমকাচ্ছেন?’
নিবিড় হতাশ হয়ে অর্থির হাত ছেড়ে দেয়। অযথা আর কথা বাড়ায় না৷ বই খাতার দিকে ঈশারা করে বলে, ‘পড়া শুরু করো!’

অর্থি গাল ফুলিয়ে নিজের বই খাতা বের করে। খাতায় অঙ্ক কষতে কষতে বলে, ‘আপনি কি অসুস্থ হন না মাষ্টারমশাই?’
‘তোমার জেনে কাজ নেই। নিজের কাজ করো!’
অর্থি মুখ বাঁকায়। তারপর নিজের কাজে মন দেয়। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ফের বলে, ‘আপনি বিয়ে কবে করবেন মাষ্টারমশাই?’
নিবিড় বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে, ‘আর একটা আজাইরা কথা বললে তোমার খবর আছে অর্থি।’
অর্থি অভিমানে গাল ফুলায়। আর একটাও কথা না বলে চুপচাপ অঙ্ক করে। মনে মনে আটে অন্য এক বুদ্ধি।

স্মরণ আর অর্পিতার বিয়ের ডেইট কাছাকাছি চলে এলেও এখন পর্যন্ত একবারও কথা বলেনি কেউ কারোর সাথে। শিল্পা একপ্রকার জোড় করেই অর্পিতার ঘরে পাঠিয়েছে স্মরণকে। স্মরণ ইতস্তত মন নিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে অর্পিতার অনুমতি সূচক শব্দ কানে আসতেই ঠোঁট প্রসারিত হয় তার। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে অর্পিতার মুখ। জানালার গ্রিল ধরে তার দিকে ফিরেই তাকিয়ে আছে মেয়েটা। স্মরণ মনে মনে হাসে। সোজা অর্পিতার বিছানার ওপর বসে বলে,

‘কি করছো?’
অর্পিতা বিরক্ত হয়৷ তবে তা প্রকাশ না করে বলে, ‘তেমন কিছু না৷ এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি।’
‘বাহিরে যাবে? আমি তো তোমাদের গ্রাম তেমন করে দেখিনি৷ ঘুরে দেখাবে?’

অর্পিতা কথা বাড়ায় না। একবার ভাবে মুখের ওপর না করে দেবে পরমুহূর্তেই ভাবে যার সাথে তার দুদিন পর বিয়ে তার সাথে না হয় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ছোট্ট একটা চেষ্টা করা-ই যায়! তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। স্মরণ বেশ খুশি হয়। খুশি মনেই অর্পিতাকে তৈরী হতে বলে নিজে বেড়িয়ে যায়। অর্পিতা শুধু নিজের চুলগুলো বেঁধে নেয়। তারপর নিজের শাড়ি ঠিক করে বের হয় ঘর থেকে। অর্থি পড়ছে বলে তাকে আর বিরক্ত করে না। শায়লাকে বলে স্মরণ আর সে বের হয় গ্রাম দেখতে। দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে অথচ নিজেদের মাঝের নীরবতা একজনও ভাঙছে না। এই নীরবতা ঠিক সেই নদীর পাড়ে শেষ হয় যেখানে চিত্র অর্পিতাকে বলেছিলো ‘সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।’ জায়গাটা দেখেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্পিতা। স্মরণ বেশ নরম স্বরে বলে,

চৈত্রিকা পর্ব ১৪

‘বিয়েতে তোমার কোনো আপত্তি আছে অর্পিতা?’
অর্পিতা বুঝতে পারে না কি উত্তর দেবে! হ্যাঁ বলবে নাকি না বলবে তা ভেবে পায় না। দৃষ্টি এদিক ওদিক করতেই পেছন থেকে ভেসে আসে পুরুষালী কন্ঠ। দুজনেই পেছনে তাকিয়ে দেখে চিত্র দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ কেমন যেনো অস্বাভাবিক! অর্পিতা বা স্মরণ কিছু বলার আগেই চিত্র কঠিন স্বরে বলে,
‘অর্পিতা এদিকে আয়! তোর সাথে আমার কথা আছে।’

চৈত্রিকা পর্ব ১৬