চৈত্রিকা পর্ব ১৪

চৈত্রিকা পর্ব ১৪
বোরহানা আক্তার রেশমী

সকাল থেকে অর্থির বমি আর পেট ব্যাথা। বেশ কয়েকবার বমি করে সে ক্লান্ত হয়ে পেট ব্যাথা নিয়ে কাঁদছে। পল্লবী, নীরা, চৈত্রিকা, নাসিমা, অর্পিতা, শায়লা সবাই বসে আছে অর্থির ঘরে। মেয়েটা ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে থেকে থেকে কেঁদে উঠছে। চিন্তায় পল্লবীর অবস্থা খারাপ। বার বার মেয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,

‘একটু সহ্য কর মা! এই তো ঠিক হয়ে যাবে।’
‘কখন ঠিক হবে আম্মাজান? আমার তো পেটে অনেক ব্যাথা করছে!’
পল্লবী কোনো কথা না বলে মেয়ের মাথায় হত বুলাতে থাকে। চৈত্রিকা অপরপাশ থেকে বললো, ‘আম্মা ওরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলেন! ওর মনে হয় বেশিই ব্যাথা করছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পল্লবী এক পলক চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। যেনো সে চৈত্রিকার কথা শুনেও শুনলো না। তবে বাহিরে দাঁড়ানো প্রহর, চিত্র, চয়ন সবাই শুনলো। প্রহর কোনো রকম কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ওপাশ থেকে চিত্র কিছু বলতে চেয়েও বলছে না। তার এই মুহুর্তে এই ঘরে ঢোকা নিষেধ। নিজের ছোট বোন অসুস্থ তবুও তার এই ঘরে ঢুকে তার বোনকে দেখা যাবে না। অর্থির হঠাৎ অসুস্থতায় চিন্তায় ভেতরটা অস্থিরতায় ছেপে গেছে। বার বার হাতের তালুতে হাত ঘষছে আর পায়চারি করছে।

পুরোটাই পর্যবেক্ষণ করে চয়ন। মনে মনে তিনি হাসেন। ভাইদের বোনের প্রতি ভালোবাসা দেখে তার কেনো জানি বুকটায় শান্তি শান্তি লাগে। ৩ ছেলের পর ১ মেয়ে তার। এই মেয়ের প্রতি যে তার কি পরিমাণ ভালোবাসা আছে তা বোধহয় মুখে প্রকাশ করার মতো না! হায় আফসোস! এই ভালোবাসাটা যদি অন্যের মেয়ের প্রতিও থাকতো তবে হয়তো দিনগুলো অন্যরকম হতো। ভেতর থেকে অর্থির আবারও কান্না ভেসে আসে। চৈত্রিকা অর্থির পাশে বসে তেল নিয়ে পেটে মালিশ করতে থাকে। অর্থি মাথা খাটের সাথে এলিয়ে দিয়ে বলে,

‘ভাবীজান! আমার পেটের মধ্যে এমন হলো কেনো? আমার কি মনে হয় জানেন! কাল খাওয়ার সময় অর্পি আপু আর মাষ্টারমশাই নজর দিয়ে দিছে।’
অর্পিতা খ্যাক করে ওঠে। ভ্রু কুঁচকে ধমক লাগিয়ে বলে, ‘আমরা নজর লাগাবো কেন? আর নজর লাগাইলে তোর বমি আর পেট ব্যাথা হতো না সোজা বেডরুম টু বাথরুম আর বাথরুম টু বেডরুম হইতো।’
অর্থি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। অর্পিতা চোখ বুজে জিভ কাটে। তারপর আদুরে ভাবে অর্থির পাশে বসে বলে, ‘কাঁদিস না বোন। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর দেবো না ধমক। সরি!’

অর্থি নাক টানে। পল্লবী নীরাকে গরম পানি আনতে বলে। শায়লা বের হয়ে যায় ঘর থেকে। নাসিমা এক পলক তাকায় চৈত্রিকার দিকে। মেয়েটা একদম শান্ত ভঙ্গিতে নিজের কাজ করছে। কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলে চুপচাপ নিজেও ঘর থেকে বের হয়ে যায়। থেকে যায় শুধু অর্পিতা, চৈত্রিকা আর পল্লবী। অর্থি তখনো কান্না করছে। এতো বড় একটা মেয়ের কান্না দেখে অর্পিতা আর চৈত্রিকা বার বার নিজেদের দিকে তাকাচ্ছে। এর মধ্যেই প্রহর ডক্টর নিয়ে ঘরে আসে।

ডক্টর মাথা নিচু করে এসে জমিদার গিন্নিকে সালাম দেয়। ডাক্তার দেখে অর্পিতা ঘর থেকে বের হতে নেয়। অদ্ভুত ভাবে সে সময়ই চিত্র হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকতে নিলে অর্পিতার সাথে জোড়ে একটা ধাক্কা খায়। দুজনই এক পলক শুধু নিজেদের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। চৈত্রিকা আড়চোখে দুজনকে খেয়াল করে ভ্রু কুঁচকায়। প্রহর চৈত্রিকার পাশে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,
‘নিজের শাড়ি ঠিক আছে কি না ভালো করে দেখে মাথায় ঠিক মতো কাপড় টানো। নয়তো ঘর থেকে যাও!’

চৈত্রিকা ভ্রু কুঁচকে তাকায় প্রহরের দিকে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সব ঠিক আছে। হুট করে প্রহরের এহেন কথার কোনো মানে খুঁজে পায় না। তবে ঠিকই চুপচাপ ঘর থেকে চলে যায়। রয়ে যায় শুধু পল্লবী, প্রহর আর চিত্র। পুরো ঘর ফাঁকা হতেই বোনের প্রতি তাদের অস্থিরতা প্রকাশ পায়। দু ভাই দুইদিক থেকে বোনকে আগলে নিয়ে বসে।

চৈত্রিকা ঘরে না গিয়ে সোজা চলে আসে ছাঁদে। রোদের তাপে ছাঁদে পা রাখা-ই যেনো দায়। তবুও সে ছাঁদে এসে এক কোণায় দাঁড়ায়। মনের মাঝের হাজারো চিন্তাকে নাড়িয়ে দেখতে থাকে। এর মধ্যেই পেছন থেকে নাসিমার স্বর আসে। চৈত্রিকা শান্ত ভঙ্গিতে পেছনে তাকিয়ে দেখে নাসিমা দাঁড়িয়ে আছে। নাসিমা নিজেই এসে চৈত্রিকার সামনাসামনি দাঁড়ায়। চৈত্রিকা হাত বগলদাবা করে দাঁড়াতেই নাসিমা কন্ঠ রূঢ় করে বলে,

‘তুই প্রহরকে বিয়ে করেছিস কেনো? দেখ চৈত্র! যা হওয়ার তা এক বছর আগে হয়ে গেছে। তুই ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছিস যখন তখন চুপচাপ শান্তিতে বাঁচ!’
চৈত্রিকা কপালে ভাজ ফেলে৷ এই মহিলাকে তার মা বলতেও ভীষণ ঘৃ*ণা হয়। কিন্তু ভাগ্যের জোড়ে মহিলাটা আসলেই তার মা। এটা ভাবতেই তার গা গুলিয়ে আসে। ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়লেও ওপরে ওপরে নিজেকে শান্ত করে। ভীষণ ঠান্ডা গলায় বলে,
‘যা হওয়ার তা ১ বছর আগে হলেও সেই ঘটনাগুলো আমার মনে দাগ কে’টে গেছে। তাই সেসব ভুলে যাওয়া তো আমার পক্ষে সম্ভব নাহ। যদি ভাবেন আমার সাথে সমঝোতা করবেন আর আমি তা ভদ্র মেয়ের মতো মেনে নিবো তবে আপনি ভুল।’

নাসিমা দমে না। কন্ঠের রুক্ষতা ধরে রেখেই বললো, ‘তুই কিন্তু আগুনে হাত দিচ্ছিস চৈত্র! এখনো সময় আছে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যা!’
‘কেনো যাবো? আমি না আপনাকে দেখে ভীষণ অবাক হই। পৃথিবীতে কি সত্যিই এমন নি’ষ্ঠুর মা হয়? যে মা ১০ মাস গর্ভে রেখে আবার নিজের প’র’কী’য়ার জন্যই সেই সন্তানকে মা’রতে চায়! আপনাকে দেখলেই আমার না আপনার মুখে থু’থু মা’রতে ইচ্ছে করে।’

চৈত্রিকার ঠান্ডা গলার অপমানে ক্ষেপে ওঠে নাসিমা। নিজের দোষ সামান্যও স্বীকার না করে উল্টো আরো রেগে যায়। কয়েকটা অকথ্য ভাষায় গা’লি দিয়ে চৈত্রিকার কাছে এগিয়ে আসে। চৈত্রিকা দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। নাসিমা বড় বড় শ্বাস নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,
‘আমাদের না এবার তোর প’ত’ন হবে। দেখে নিস!’

গটগট করে নিচে নেমে যায় নাসিমা। চৈত্রিকা রাগে নিজের হাতই দেয়াল বা’রি মা’রে। রাগের মাথায় আ’ঘাত করলেও ব্যাথাটা বেশ ভালোই পায়। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে৷ নিজ মনেই আওড়ায়,
‘আমার আর আমার বাবার জীবন ন’ষ্ট করে তুমি খুব সুখে আছো! তোমার ন”ষ্টা’মির জন্য আজ আমার বাবা দুনিয়ায় নেই৷ তোমরা যেভাবে পু’ড়িয়ে মা’রছো আমার বাবাকে, যতটা কষ্ট দিছো তার প্রত্যেকটা কষ্ট আমি তোমাদের দিবোই দিবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা।’

দুপুরে খাবার টেবিলেই কথা ওঠে অর্পিতার বিয়ে নিয়ে। খাবার টেবিলে তখন চয়ন, শিমুল, সাদিক, প্রহর, পিয়াস, চিত্র, স্মরণ খাবার খাচ্ছে। পল্লবী, নাসিমা আর নীরা খাবার পরিবেশন করছে। চৈত্রিকা, অর্থি, অর্পিতা, অর্পিতার খালা শিল্পা, শায়লা একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। শায়লা উঠে গিয়ে খাবার টেবিলেই শিমুলকে হালকা করে গুতো দিয়ে ঈশারা করে অর্পিতার বিয়ের কথা তুলতে। শিমুল গলা পরিষ্কার করে চয়নের উদ্দেশ্যে বলে,
‘বড় ভাইজান আপনাকে কিছু বলার ছিলো!’

চয়ন খাওয়া ছেড়ে তাকায় শিমুলের দিকে। বাকি সবাইও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছে শিমুলের কথা শোনার জন্য। শুধু প্রহর আর চিত্রই নিজেদের মতো খেয়ে যাচ্ছে। শিমুল বেশ সাহস নিয়ে বলে,
‘ভাইজান আমার মেয়ে তো বড় হয়েছে। বয়স হয়েছে বিয়ের। আমরা ভাবছিলাম এবার ওর বিয়েটা দেবো। সুপাত্রও পেয়েছি। আপনি কি বলেন?’
চিত্রর খাওয়া থেমে যায়। প্রহর নির্বাক। সবকিছু এক কানে শুনছে অন্য কানে বের করে নিজের খাবার আপনমনে গিলছে। চিত্র সরাসরি তাকায় হল রুমে বসে থাকা অর্পিতার দিকে। মেয়েটা নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দিয়ে মেঝেতে খুঁ’টছে। চিত্রর ভাবনার মাঝেই চয়ন বলে ওঠে,

‘সব যখন ভেবেই রেখেছিস তখন আমাকে জিজ্ঞেস কেনো করছিস? পাত্র ভালো হলে বিয়েটা দিয়ে দে। সমস্যা নেই।’
‘ভাইজান পাত্র আমাদের স্মরণ।’
স্মরণ লজ্জা পায়। চয়ন খাওয়া বন্ধ করে বলে, ‘তা বেশ ভালো তো। বিয়ের কথা বার্তা কি এগিয়েছিস কিছু? ছেলে যখন ভালো তখন দেড়ি করে লাভ কি!’

সাদিকও তাল মেলায়। চিত্রর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো রকমে ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে অর্পিতার দিকে। অর্পিতা একবারও তাকায়নি৷ দেখেওনি একটা মানুষ কি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে! খাবার টেবিলে আর কোনো কথা হয় না। খাবার শেষে হল রুমে বসে সবাই ঠিক করে নেয় এই মাসেই স্মরণ আর চিত্রর আকদ করিয়ে দেবে। তারপর বড় কোনো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্মরণ নিজের বউ ঘরে তুলবে। যেহেতু এখন সবাই একসাথে আছে তাই কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ের ডেইট ফিক্সড হয়। সবকিছুই শোনে চিত্র। কিন্তু কোনোরকম টু শব্দও করে না। একপলক অর্পিতার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা না খেয়ে খাবার শুধু নাড়াচাড়া করছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনো রকমে পা চালিয়ে ঘরে চলে যায় চিত্র। পুরো বিষয়টাই খেয়াল করে চৈত্রিকা। বুঝতে পারে গভীর কিছু আছে চিত্র আর অর্পিতার মাঝে।

খাওয়ার পর্ব শেষে শায়লা নিজেই অর্পিতাকে বিয়ের কথা জানিয়ে দেয়। অর্পিতা কোনো রকমে কথাগুলো হজম করে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকে। খানিক বাদেই দরজায় নক পড়ে। অর্পিতা প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দেয়। কিছু বলতে গেলে দেখতে পায় চৈত্রিকা দাড়িয়ে আছে। চৈত্রিকাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গিয়ে সরে যায় অর্পিতা। চৈত্রিকা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

‘আপনার সাথে গল্প করতে আসলাম আপু৷ গল্প করবেন তো নাকি তাড়িয়ে দেবেন!’
অর্পিতা ব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘আরেহ ভাবীজান নাহ নাহ। তাড়িয়ে কেনো দেবো? আসেন না!’
চৈত্রিকা বিছানায় বসে। অর্পিতা দরজা লাগিয়ে এসে নিজেও বসে। হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘হঠাৎ আমার সাথে গল্প?’
‘ভেবেছিলাম আপনার সাথে ধীরে ধীরে গল্প সল্প করবো কিন্তু আপনার আব্বাজান তো দেখি আপনার বিয়ে ঠিক করে আপনাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছে। তাই ভাবলাম একটু গল্প করে আসি। ক’দিন পর বিয়ে হয়ে গেলে যদি সুযোগ না পাই!’

অর্পিতা ভীষণ গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না আবার সয়তেও পারে না। চৈত্রিকা স্মরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তবে অর্পিতা আশানুরূপ কোনো জবাব দেয় না। কথার ধরণেই বোঝা যায় অর্পিতা স্মরণকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না। তাই সে কথায় কথায় হুট করে বলে বসে,
‘চিত্র ভাইকে আপনার কেমন লাগে আপু?’
অর্পিতা চমকায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকায় চৈত্রিকার মুখের দিকে। চৈত্রিকা অর্পিতার চোখের দিকে তাকিয়েই যা বোঝার তা বুঝে নেয়। আলগোছে অর্পিতার হাত ধরে বেশ শান্ত কন্ঠে বলে,

‘আমি একজন মেয়ে অর্পিতা আপু। একজন মেয়ে হয়ে অন্য একজন মেয়ের চোখের ভাষা বোঝাটা আমার জন্য কঠিন কিছু নয়। সেদিন আপনার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে কিছু আন্দাজ করলেও পুরোপুরি বুঝতে পারিনি।’
অর্পিতা দৃষ্টি এদিক ওদিক করে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। চৈত্রিকা অর্পিতার এমন অদ্ভুত আচরণ খেয়াল করে তার গালে হাত রাখতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

চৈত্রিকা চমকে ওঠে৷ সাথে সাথেই অর্পিতা ডুকরে ওঠে। চৈত্রিকা অর্পিতাকে ছাড়াতে গেলে অর্পিতা না ছেড়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে রাখে। চৈত্রিকা হাল ছেড়ে অর্পিতার মাথায় হাত বুলায়। মেয়েটার হাহাকার করা কান্নায় তার বুক কেঁপে ওঠে। অর্পিতা কাঁদতে কাঁদতেই ভাঙা ভাঙা ভাবে বলে,
‘আমি চিত্র ভাইকে ভীষণ ভালোবাসি ভাবীজান। কিন্তু সে যে আমাকে বাসে না! আমার যে অন্য কারো হতে মন সায় দেয় নাহ। কেনো চিত্র ভাই আমাকে ভালোবাসে না ভাবীজান?’

চৈত্রিকা চুপ করে থাকে। অর্পিতা নিজের ভেতরের কষ্ট গুলো একটু একটু করে উগলে দিতে শুরু করে। চৈত্রিকা সবটা শুনে বলে, ‘চিত্র ভাই যদি অন্য কাউকেই ভালোবাসে তবে আপনি বিয়েটা করে নিন আপু। যে আপনাকে ভালোবাসে না সে কি আপনার মূল্য কখনো বুঝবে?’

চৈত্রিকা পর্ব ১৩

অর্পিতা জবাব দেয় না। চুপ করে থাকে। তার ঘরের বাহিরে দাঁড়ানো চিত্র কাঁপতে থাকে। অর্পিতার কান্নার শব্দ সে স্পষ্ট শুনেছে। ভেতরটা কেমন চিনচিনে ব্যাথায় ছেয়ে গেছে। দেয়ালের এপাশে আর ওপাশে দাঁড়ানো দুটি মানুষ একই ব্যাথায় নিজেদের আষ্টেপৃষ্টে রেখেছে অথচ তাদের মাঝের দূরত্ব যেনো বিশালতর থেকেও বিশাল।

চৈত্রিকা পর্ব ১৫