চৈত্রিকা পর্ব ১৩

চৈত্রিকা পর্ব ১৩
বোরহানা আক্তার রেশমী

চৈত্রিকার ‘মা’ ডাকে নাসিমার আত্মা বের হয়ে আসার উপক্রম। হাতের তালুতে হাত ঘষছে অনবরত। আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছে বার বার। ঘেমে ঘাম কপাল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। পাশেই চৈত্রিকা বসে তাকিয়ে আছে নাসিমার মুখের দিকে। চৈত্রিকার চোখে মুখে ক্ষো’ভ স্পষ্ট। বার বার বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে ব্যর্থ। উপায়ন্তর না পেয়ে উঠে দাঁড়ায় নিজ জায়গা থেকে। কন্ঠের কাঠিন্যতা ধরে রেখে বেশ কড়া স্বরেই বলে,

‘এবার আর আপনাদের নিস্তার নেই মিসেস নাসিমা সাদিক রেনওয়াজ। আমার আর আমার বাবার সাথে যা যা করেছেন তার গুণে গুণে শা’স্তি আপনাদের সবাইকে দেবো। একবার যখন এই বাড়ির সাথে জুড়েছি তখন এই বাড়িতেই আপনাদের পাপের হিসাব নিবো৷’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চৈত্রিকা চলে যায়৷ নাসিমা চেয়ে থাকে চৈত্রিকার যাওয়ার দিকে৷ সে খানিকটা অবাকই হয়েছে। তার মেয়ে তো এমন ছিলো না! চৈত্রিকার তো এতো দাপট, তেজ, কন্ঠের এতো কাঠিন্যতা ছিলো না! মেয়েটা তো সব সময় মাথা নিচু করে নরম স্বরে কথা বলতো। সবসময় সবার সাথে সুন্দর ভাবেই কথা বলতো। এই চৈত্রিকা তো তেমন নয়! এই চৈত্রিকার মাঝে অন্যকিছু আছে। এবার কি সত্যি তাদের পত’নের সময় এসে গেছে? শিউরে ওঠে নাসিমা। ভয়ে, চিন্তায় নিজ জায়গা থেকে উঠে যায়। ভয়ে তার পা-ও যেনো নড়তে নারাজ। কোনো রকম ভারী শরীরটা টেনে নিয়ে এগিয়ে চললো তার স্বামী সাদিক রেনওয়াজের দিকে। বিষয়টা সাদিককে জানানো দরকার!

অর্থি খাওয়া শেষেও বসে বসে হাড্ডি চিবুচ্ছিলো। অর্পিতা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। অর্থি খাচ্ছে তো খাচ্ছেই। যেনো পৃথিবীতে এই মুহুর্তে খাওয়া ব্যাতীত তার কোনো কাজ নেই৷ আর এতোটাই ধীরে সুস্থে খাচ্ছে যে মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি খেলে কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে নয়তো বড় সড় কোনো পাপ হবে। শেষমেশ ধৈর্য রাখতে না পেরে অর্থির মাথায় গা’ট্টা মে’রে দেয় অর্পিতা। অর্থি খেতে খেতেই উল্টে পড়তে নেয়। মুখ ফুলিয়ে তাকায় অর্পিতার দিকে৷ অর্পিতা বেশ রাগী স্বরে বলে,

‘কখন থেকে দেখছি গি’লেই যাচ্ছিস! খাবি একটু জোড়ে খা! এমন কচ্ছপের মতো কে খায়? নিজে তো খাওয়া শেষ করছিসই না আবার আমাকেও যেতে দিচ্ছিস না।’
‘তুমি আমাকে খাওয়ার জন্য বকা দিলা আপু? আমারে বকা দিলা? এইটা তুমি করতে পারলা?’
‘তাড়াতাড়ি না খেলে এবার তুই মা’ইর খাবি আমার কাছে। দেখ তো কার খাওয়া বাকি আছে? তুই বাদে আর কে খাচ্ছে এখানে!’
‘কেউ নাহ তো। এজন্যই তো আমি বেশি বেশি খাচ্ছি।’

অর্পিতা কপাল চাপড়ায়। অর্থির মাথায় আরেকটা গা’ট্টা মে’রে নিজেই উঠে যায়। অর্থি ঠোঁট উল্টে নাক টানে৷ এক হাতে চুল ঠিক করে অন্য হাতে হাড্ডি খাওয়া শুরু করে। অর্পিতা তাকে মে’রে যাওয়ায় দুঃখে একটু পর পর নাক টানছে কিন্তু খাওয়া বন্ধ করছে না। তাকে এই অবস্থায় দুর থেকে দেখে নিবিড়৷ খাওয়ার সময় এমন করছে কেনো তাার বুঝে আসে না৷ চুপচাপ এগিয়ে আসে অর্থির কাছে। অর্থির সামনের চেয়ারে বসে ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে তাকায়। অর্থি নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ফের নাক টেনে হাড্ডি মুখে পুড়ে দেয়। নিবিড় গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,

‘কান্নার তো লেশ মাত্র নেই চোখে মুখে তবে খাওয়ার সময় এমন নাক টানো কেন? ঝাল লেগেছে? ঝাল লাগলে খাচ্ছো কেনো?’
অর্থি চেয়ারটা একটু এগিয়ে বসে নাক টেনে টেনে বলে, ‘ঝাল লাগেনি মাষ্টারমশাই। অর্পি আপু আমাকে মে’রেছে তাই মনে মনে কান্না করছি আর নাক টানছি।’
অর্থির লজিকে নিবিড় একটুও অবাক হলো না। সে এমন কিছুই আশা করেছিলো। তাই একটুও অবাক না হয়ে নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলো,

‘তা কি কারণে অর্পি আপু তোমাকে মা’রলো?’
‘কি কারণ আবার! এই যে আমি নাকি অনেকক্ষণ থেকে হাড্ডি চিবুচ্ছি। আপনিই বলেন আমি কি অনেকক্ষণ থেকে হাড্ডি চিবুচ্ছি? নাহ তো। এই একটু আগে বসেছি।’
‘হ্যাঁ। তুমি তো একটু আগেই খেতে বসেছো! তোমার পরে যারা বসেছিলো সবাই খেয়ে বাড়িও চলে গেছে আর তুমি একটু আগে বসেছো! নাহ, ঠিকই তো আছে।’

অর্থি কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আবার নিজের খাওয়ার দিকে মন দিলো নিবিড় শুধু বসে বসে অর্থির খাওয়াটাই দেখে গেলো। অর্থির খাওয়া পাক্কা ২০ মিনিট পর শেষ হয়৷ হাত ধুয়ে পানি খেয়ে উঠে হাসি মুখে তাকায় অর্থি। তার হাসিতে ছাই ফেলে নিবিড় বেশ সাবলীল গলায় বলে,
‘এতোক্ষণ ধরে আজাইরা হাড্ডি চিবুতে পারো আর পড়ালেখার ‘প’ টাও পারো না! তোমার মাথায়, মস্তিষ্কে ব্রেইনের ‘ব’ টাও কি আছে?’

অর্থির হাসিমুখ মিলিয়ে গেলো৷ ঠোঁট উল্টে বললো, ‘আপনি আমাকে এভাবে কেনো বলছেন মাষ্টারমশাই? আমি তো ‘প’ ‘ব’ এগুলো পারি। ‘ক-ঁ’ তো আমার মুখস্থ।’
নিবিড় কিছু বলার ভাষা পেলো না। সে কি বুঝালো আর মেয়েটা কি বুঝলো! হতাশ না হয়ে ফের নিজেই জিজ্ঞেস করলো, ‘আর কি কি পারো?’

অর্থি দুষ্টু হেঁসে বলে, ‘জাতীয় সঙ্গীত পারি। শোনাবো?’
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘তোমার ওই সার ছাড়া মাথায় জাতীয় সঙ্গীত গেছে?’
‘হুম গেছে তো। গেয়ে শোনাবো?’
‘শোনাও দেখি!’
‘আমার সোনার বাংলা
আমি আপনাকে ভালোবাসি মাষ্টারমশাই!’
অর্থি ছুটে পালিয়েছে। নিবিড় হা করে তাকায় অর্থির যাওয়ার দিকে। মেয়েটার চোখে মুখে দুষ্টুমির ছাপ দেখে ভেবেছিলো কিছু তো একটা উল্টা পাল্টা বলবে তবে এভাবে এটা বলবে তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি নিবিড়। তাই তার মুখ আশ্চর্য হা হয়ে গেছে।

রাতের আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। চারদিকে সবকিছু নীরব, নিস্তব্ধ। যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির বাইরে থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে অনবরত। পুরো বাড়িটা ঘুমিয়ে গেলেও ঘুম নেই চৈত্রিকার চোখে। প্রহর এখনো আসেনি। তাই সে চুপচাপ শুয়ে আছে। হাতটা কপালে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। রাতের আঁধারে নিজের সমস্ত রাগ, কষ্ট একের পর এক মনে দাগ কেটে যাচ্ছে। নিজের মা কিভাবে বে’ইমানী করতে পারে সে আজও তা ভেবে কুল কিনারা পায় না।

মায়েরা নাকি নিজের সন্তানকে তাদের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে তবে তার নিজের মা কেনো তাকে এভাবে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলো! সেই ভ’য়ং’কর রাতের কথা মনে পড়লে আজও চৈত্রিকার ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্ব’লে ওঠে। যে মেয়েটা সহজ, সরল, নরম মনের মেয়ে ছিলো সেই মেয়েটাই আজ এতোটা কঠিন যে নিজের উদ্দেশ্য থেকে এক পাও নড়ছে না। নিজের মা’কেও তার পাপের শা’স্তি থেকে বঞ্চিত করেনি। যতটা শা’স্তি জমিদার বাড়ির একেকটা সদস্য পাবে ঠিক ততটাই শা’স্তি সে নিজের মায়ের দিকেও ছুড়ে দেবে৷ চোখ বন্ধ রেখেই বড় শ্বাস নেয় চৈত্রিকা। চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা অশ্রু। পানি যেমন আগুন নিভাতে সক্ষম হলেও মাঝে মাঝে আগুনের তাপ বাড়িয়ে দেয় তেমনই এই চোখের অশ্রুকণাও মনের ভেতরের আগুন একফোঁটাও না কমিয়ে বাড়িয়ে দিলো দ্বিগুণ।

মনে মনে শক্ত প্রতিজ্ঞা করে নেয়। চোখের জল মুছতে মুছতেই দরজা খোলার শব্দ হয়। চৈত্রিকা চোখ খোলে না। চোখ বন্ধ করেই রাখে। প্রহর একপলক চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। সাদামাটা শাড়িতেও মেয়েটার সৌন্দর্য এতটুকুও কমে না৷ এই মেয়ের সৌন্দর্যে পুরুষ নির্দ্বিধায় পু’ড়ে যাবে। নিজের চোখ নামিয়ে আগে শার্ট বদলে নেয়। ঘামে ভেজা শার্টটা খুলে শুধু সেন্ডো গেঞ্জি পড়েই হাত মুখ ধুয়ে আসে৷ আড়চোখে চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে চলে যায় ব্যালকনিতে। তামাকের ধোঁয়ায় ভেতর পু’ড়িয়ে ফের চলে আসে ঘরে। চৈত্রিকা তখনো একরকম ভাবেই শুয়ে আছে। একটুও নড়াচড়া করেনি৷ প্রহরের সিগারেটের গন্ধে নাক মুখ কুঁচকে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে চৈত্রিকা। প্রহর চুপচাপ এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে দিতে বলে,

‘না ঘুমিয়ে জেগে আছো কেনো?’
চৈত্রিকা ভেতরে চমকালেও বাহিরে একদম স্বাভাবিক হয়েই শুয়ে রইলো। প্রহর জানলো কিভাবে সে যে ঘুমায়নি! প্রহর চৈত্রিকার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে পাশ ফিরে শুয়ে চৈত্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘অতীত চোখের সামনে ভাসলে মানুষের ঘুম হয় না চৈত্রিকা।’

এ পর্যায়ে চৈত্রিকা চট করে চোখ মেলে তাকায়। প্রহরের দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই প্রহর হাসে। চৈত্রিকার মনে হলো এ হাসিতে জীবন নেই৷ শুধু তাকে তাচ্ছিল্য করে নয়তো ভেতরের সংঘর্ষ থেকে টেনে বের করলো হাসিটা। ব্যাস! প্রহরের দিকে তাকিয়েই থাকে চৈত্রিকা। অতীতের কথা কেনো বললো প্রহর? প্রহর কি জানে কিছু? পরক্ষণেই মনে হয় জানবে না কেনো? যে অপ’রাধের অংশীদার প্রহর নিজেই সেখানে নাসিমা যে প্রহরকে জানায়নি চৈত্রিকা তার মেয়ে এটা কিভাবে হয়! নিজের অবাকতা সরিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে। প্রহর চৈত্রিকার থেকে মুখ ফিরিয়ে সোজা হয়। চলন্ত সিলিং এর দিকে তাকিয়েই বলে,

‘সবসময় আমরা যা দেখি, যা জানি তার পেছনে আরও কিছু দেখা, জানা থাকে। আমরা চোখের সামনের মানুষটাকে প্রতিদিন দেখেও তাকে চিনতে পারি না। আমরা ভাবি হয়তো সামনের মানুষটাকে পুরোপুরি চিনি, জানি। তবে আমাদের চেনা, জানার মধ্যেও আরো চেনা জানা থাকে। তোমার বয়স কম যা জানবে, শুনবে, দেখবে তাই সত্য মনে হবে। তুমি জমিদার বাড়ির বউ হয়ে এসেছো! এই জমিদার বাড়ির একেকটা খড়কুটোও যেনো রহস্য হয়ে দাঁড়াবে তোমার সামনে। সেখান মানুষগুলো তো জ্বলজ্যান্ত প্রাণী! যত জানবে তত জড়িয়ে যাবে। মনে হবে মৃ’ত্যু ধেয়ে আসছে তোমার দিকে। নিজেকে নিজে বাঁচাও।’

চৈত্রিকা বিস্ময় নিয়ে তাকায় প্রহরের দিকে। প্রহর কি তাকে সাবধান করলো! নিজের প্রতিপক্ষকে কি কেউ সাবধান করে? চৈত্রিকার মাথায় চিন্তার পোকা ঢুকিয়ে প্রহর চোখ বন্ধ করে নেয়। বিড়বিড় করে বলে, ‘বে’ঈমা’নীর শা’স্তি কেবলই মৃ’ত্যু।’
সিলিংয়ের শব্দ আর নিজের ভাবনায় মগ্ন থাকা চৈত্রিকা শুনতে পেলো না সেই ছোট্ট বাক্য। সময় যেতে শুরু করলো অথচ চৈত্রিকার চোখে ঘুম ধরা দিলো না। প্রথমবারের মতো পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রহরের দিকে। সামনে যেনো জ্বলজ্যান্ত এক রহস্য মানব শুয়ে আছে! যার রহস্য তার থেকেও অনেক বেশি গভীর।

মধ্যরাতে ঘুম না আসায়, অস্থিরতায় অর্পিতা নিজ ঘর ছেড়ে উঠে এসেছে৷ স্মরণরা জমিদার বাড়িতে থাকবে কিছুদিন। এরপর পাকা কথা বলে তারা সবাই একসাথেই ফিরবে শহরে। ভেতরের অস্থিরতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে অর্পিতার। কি হবে, কি হবে না ভেবেই তার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারংবার। চিত্রর সাথে একটাবার কথা বলা উচিত। গত ৪ টা বছর সে যেমন একপাক্ষিক ভালোবেসে গেছে তেমন করেই না হয় শেষ একটাবার বে’হায়ার মতো দাঁড়াবে চিত্রর সামনে। একটাবার সবকিছু ভেবে তাকে ভালোবাসতে বলবে!

এলোমেলো, বিক্ষিপ্ত হৃদয়ে চিত্রর ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো৷ বড় বড় শ্বাস নিয়ে ঘরের দরজায় হাত দিতেই দরজা আপনাআপনি খুলে যায়৷ চিত্রর ঘরের দরজা খোলা দেখে বেশ অবাকই হয় অর্পিতা। চিত্র তো দরজা খুলে ঘুমায় না! দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে চারদিকে নজর বুলিয়েও যখন চিত্র কে ঘরে দেখতে পেলো না তখন চিন্তারা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ইতস্তত মন নিয়ে গোসলখানায় উঁকি দিয়ে দেখে সেখানেও নেই চিত্র। অর্পিতা দ্রুত ব্যালকনিতে আসে। সেখানে এক কোণায় বসে আছে চিত্র।

এলোমেলো ঘুমন্ত অবস্থায় দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। অর্পিতা চিত্রর পাশে বসে। চিত্রর এমন এলোমেলো অবস্থা দেখে বেশ ভয় পায়৷ ভয়ে ভয়ে মাথাটা চিত্রর বুকের বাম পাশে নিয়ে হৃদপিণ্ডের বিট শোনে। হাফ ছেড়ে স্বস্তির শ্বাস নেয়। মাথাটা তু্লে নিতে গিয়েও নেয় না। চুপচাপ মাথাটা চিত্রর বক্ষে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে থাকে। ভেতরটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়। এতক্ষণের অশান্ত, বিক্ষিপ্ত হৃদয়টা মুহুর্তেই শান্তিতে ভরে ওঠে। মনে মনে প্রার্থনা করে সময়টা থেমে যাক। তাদের এই মুহুর্তটা অনন্ত কাল এভাবেই থাকুক। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায়।

তবুও বেহায়া চোখ ফেটে জল গড়ায়। কোনো রকমে শব্দ না করে ওভাবেই বেশ অনেকক্ষণ থাকে। এরপর আস্তে করে নিজের মাথা উঠিয়ে চিত্রর মুখের দিকে তাকায়। কাঁপা কাঁপা হাতে চিত্রর চুলগুলো নেড়ে দিয়ে কান্নারত অবস্থাতেই হাসে। চিত্রর চোখ মুখ ছুঁয়ে আক্ষেপ নিয়ে বলে,

‘তুমি আমার এ অসীম ভালোবাসা বুঝলে না চিত্র ভাই। আমার এ বিক্ষিপ্ত হৃদয়ের প্রশান্তি হয়েও হলে না। কেনো ভালোবাসলে না চিত্র ভাই? আমাকে কি সামান্য পরিমাণও ভালোবাসা যায় না? আমি যে বিরহে গত ৪ টা বছর পু’ড়ছি এই বিরহের একেকটা দিন, একেকটা রাতও কেনো তুমি পেলে না? কেনো আমার সুখ হলে না চিত্র ভাই?’
ঘুমন্ত চিত্র হয়তো শুনলোও না বাক্যগুলো। অর্পিতা মুখ এগিয়ে চিত্রর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় গভীর ভাবে। নড়ে ওঠে চিত্র। অর্পিতা সরে আসে। দুরে বসেই তাকিয়ে থাকে চিত্রর মুখের দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। মনের সমস্ত কথা আবারও মনেই থেকে গেলো। নিজেকে উজাড় করে প্রকাশ করা হলো না তার চিত্র ভাইয়ের কাছে। ভারী শরীরটা টেনে নিয়ে এলোমেলো ভঙ্গিতে এগোতে এগোতে আওড়ালো,

চৈত্রিকা পর্ব ১২

‘আমার হৃদয়ে ক্ষ’ত করে তুমি কি সুন্দর করে ঘুমাও চিত্র ভাই! এতোটা শান্তিতে তুমি কিভাবে ঘুমাও? আমার ভালোবাসা কেনো তোমার হৃদয়ে ক্ষ’ত করে না? ৪ বছর অপেক্ষার পরও তুমি ভালোবাসলে না আমাকে। আদৌও কি কখনো আমার ভালোবাসা অনুভব করতে পারবে নাাকি আমার অনুভূতি গুলো তোমার কাছে অবহেলিতই রয়ে যাবে? আমি জানি তুমি বুঝবে! তবে সেদিনটা যেনো খুব বেশি দেড়ি না হয় চিত্র ভাই!’

চৈত্রিকা পর্ব ১৪