চৈত্রিকা পর্ব ১২

চৈত্রিকা পর্ব ১২
বোরহানা আক্তার রেশমী

আজ চৈত্রিকা, প্রহরের বউভাতের অনুষ্ঠান৷ পুরো বাড়ি সাজানো শেষ। মেহমানের আগমন কাল বিকেল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। অনেক আত্মীয়ই কাল এসেছে। বাদ বাকি সবাই আজ আসবে। প্রহরের হঠাৎ বিয়েতে সবাই খানিকটা অবাকই হয়েছে। পিঠপিছে এ নিয়ে অনেক কথা হলেও সামনাসামনি সবাই নিশ্চুপ, নীরব। প্রহরের জ্বরও ভালো হয়ে গেছে। চৈত্রিকা নিজের ঘরে বসে আছে। একে একে এসে সকল আত্মীয় দেখে যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রশংসায় পঞ্চমুখ তো কেউ কেউ হিংসায় জ্ব’লে পু’ড়ে যাচ্ছে। চৈত্রিকা সবই দেখছে তবুও কিছু বলছে না। সে অপেক্ষায় আছে বিশেষ একজন মানুষের। কখন সে আসবে! পল্লবী দেখলো চৈত্রিকার দৃষ্টি। ভ্রু কুঁচকে মুখ কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো,

‘এমন ছটফট করছো কেনো মেয়ে? কি হয়েছে?’
চৈত্রিকা শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে। বড় বড় শ্বাস নেয়। হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘আসলে এতো মানুষের মধ্যে একটু অস্বস্তি হচ্ছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পল্লবী আর কথা বাড়ায় না। সবাই কে ঘর থেকে বের করে দিয়ে চৈত্রিকাকে একা সময় দেয়। সাথী সকাল সকাল চলে এসেছে। সনিয়া বেগম দেড়িতে আসবে। সাথী, অর্থির সাথে কথা বলতে বলতে চৈত্রিকার ঘরে ঢোকে। প্রহর, চিত্র দুজনেই বাহিরের কাজ দেখতে ব্যস্ত। অর্পিতা নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। অর্থি কয়কবার ডেকেছিলো কোনো লাভ হয়নি। শেষে হতাশ হয়ে একাই চৈত্রিকার কাছে আসার উদ্দেশ্য বের হয়। সাথীকে রাস্তায় পেয়ে তার সাথেই অর্থি গল্প জুড়ে দেয়।

সাথী শুধু অর্থির মুখের দিকে তাকিয়ে তার গল্প গুলো শুনলো কোনো রকম টু শব্দটিও করলো না। তার ভয় হয়। পুরো জমিদার বাড়ির একেকটা সদস্যকেই সে ভয় পায়। তার মধ্যে অর্থিও বাদ পড়েনি। অর্থির রাজ্যের গল্প ফুরোতে ফুরোতে চৈত্রিকার কাছে এসে বসে। চৈত্রিকা তখন কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়ে বিছানার মাঝে বসে বসে নিজস্ব ভাবনায় মগ্ন। অর্থি চৈত্রিকাকে দেখেই খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। ধপাস করে চৈত্রিকার পাশে বসে বেশ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,

‘ভাবীজান আপনি যা পড়েন তাতেই অনেক সুন্দর লাগে। আচ্ছা আজ তো আপনাদের বউভাত তাই না? অনেকে আসবে!’
চৈত্রিকা অর্থির কথার মানে বোঝে না। আসলে মেয়েটা বলতে কি চাইছে! তাই অর্থির কথায় শুধু মাথা নাড়ে। অর্থি মন খারাপ করে বলে, ‘কবে যে আমার বিয়ে হবে! আমার বউভাতেও তো আপনারা সবাই যাবেন তাই না? নিশ্চয় অনেক মজা হবে!’

চৈত্রিকা আর সাথী চোখ বড় বড় করে তাকায়। পরমুহূর্তেই দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে ফেলে। বলে, ‘তুমি এখনো ছোট অর্থি। তাই তোমার বিয়ের দেড়ি আছে। বুঝেছো?’
অর্থি ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ায়। সেসময় ঘরে ঢোকে নীরা। চোখ মুখ কালো করে গম্ভীর স্বরে চৈত্রিকার উদ্দেশ্যে একটা ডালা এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘এগুলো পড়ে তৈরী হও। আমি একটু পর এসে নিয়ে যাবো তোমাকে।’

চৈত্রিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীরার মুখ পর্যবেক্ষণ করে। তারপর নরম স্বরে বলে, ‘জ্বি রেখে দিন! আমি পড়ে নিচ্ছি।’
নীরা চুপচাপ ডালা রেখে দেয়। চৈত্রিকার এতো রুপ, এতো প্রশংসা তার সহ্য হয় না৷ এর একমাত্র কারণ পিয়াস। পিয়াস যদি চৈত্রিকাকে বিয়ে করতে না চাইতো তবে হয়তো নীরার কাছে চৈত্রিকা ক্ষো’ভ হয়ে দাঁড়াতো না। সম্পর্কটা মিষ্টি হতো। তবে এখন নীরা চাইলেও চৈত্রিকার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না। হয়তো এই নারীর প্রতি তার স্বামীর মুগ্ধতায় তার হিংসা, ক্ষোভ, রাগের কারণ। চৈত্রিকা নীরার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। সাথী চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘তৈরী হবি না?’
চৈত্রিকা নিঃশব্দে শাড়ি হাতে তুলে নেয়। দুজনকে বসতে বলে নিজে যায় গোসলখানায়৷ অর্থি একবার সেদিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপু তুমি এখানে থাকো! আমি নিচে যাই। একটু চক্কর দিয়ে আসি।’
সাথী মাথা নাড়ায়। অর্থি এক ছুটে নাচতে নাচতে ঘর থেকে বের হয়৷ চৈত্রিকা শুধু শাড়ি পড়ে ঘরে এসে দাঁড়ায়। সাথী বেশ আতঙ্কিত স্বরে বলে,
‘আজ কি হবে বুঝতেছিস? তুই উনার সামনে গেলে যদি উনি তোকেও মে’রে ফেলতে চায়?’
চৈত্রিকা ফট করে তাকায় সাথীর দিকে। পুরো ঘরে একনজর তাকিয়ে সাথীর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। চেপে ধরে বেশ আস্তে বলে, ‘চুপ! এখানে কিচ্ছু বলবি না। দেওয়ালেরও কান আছে!’
সাথী মাথা নত করে নেয়। চৈত্রিকা বেশ সাবধানে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে নেয়। তারপর আয়নার সামনে বসে গহণা পড়তে পড়তে বলে, ‘অর্থি কোথায়?’
‘নিচে গেছে।’
চৈত্রিকা নিঃশব্দে হাসে। নিজের মতো তৈরী হতে শুরু করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পল্লবী আর নীরা আসে। নিজেদের মতো চৈত্রিকাকে গুছিয়ে নেয়।
৩১.
অর্থি দুতলা থেকে নিচ তলায় একবার উঁকি মারে। অনেক লোকজন দেখে ঠোঁট কামড়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। চারপাশে নজর বুলিয়ে খোঁজে নিবিড়কে। মাষ্টারমশাই আজ আসেনি? সবাই তো এসেছে নিমন্ত্রণে তবে কি মাষ্টারমশাই আসেনি? ভেবেই ঠোঁট ফুলায় অর্থি। সাথে সাথেই পেছন থেকে কেউ তার মাথায় গাট্টা মা’রে। অর্থি চমকে, আর্তনাদ করে চোখ মুখ কুঁচকে পেছনে তাকায়। পেছনে স্বয়ং নিবিড়কে দেখে খানিকটা অবাকই হয়। চোখ বড় বড় করে বলে,
‘আপনি কখন আসলেন মাষ্টারমশাই? আপনাকে তো নিচে দেখলাম না!’

নিবিড় গতকাল দুপুরের ঘটনায় এমনিতেই বড় সড় আতঙ্কে আছে। মেয়েটা সাংঘাতিক! মানে দিনদুপুরে যে মেয়ে জ্বলজ্যান্ত মানুষকে বলে স্বপ্ন সে যখন তখন যা তা বলে দিতে পারে! নিবিড়কে চুপ করে থাকতে দেখে অর্থি ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকায়। বলে,

‘মাষ্টারমশাই কিছু বলছেন না কেনো? কোথায় হারাইছেন?’
নিবিড় নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে, ‘কোথাও হারাইনি। আর একটু আগে এসেছি। তুমি হয়তো দেখোনি! তা তোমার স্বপ্নের কি খবর? দিন দুপুরে কি এখনো স্বপ্ন দেখো?’
অর্থি লাফিয়ে ওঠে। ফ্যালফ্যাল করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি কেমন করে জানলেন আমি দিন দুপুরে স্বপ্ন দেখি? আপনিও কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন মাষ্টারমশাই?’

নিবিড় কোনো কথা বললো না। এখন কিছু বলা মানে এই মেয়ের বোকা বোকা কথা শুনে নিজের মাথা খারাপ করা। তাই সে নিশ্চুপ হয়ে কিছুক্ষণ অর্থির দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্থি তখনো নিজের জবাবের আশায় নিবিড়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিবিড় উল্টো ঘুরে নিচে নামতে নামতে বললো,
‘সারাদিন বোকা বোকা কথা না বলে নিজের দিকে ধ্যান দাও! বাড়ি ভর্তি মেহমান অথচ তুমি পড়ে আছো নিত্যদিনের শাড়ি। তাই শাড়িটা বদলে তোমার বড় ভাবীজানের কাছে যাও!’

অর্থির খেয়াল হলো। চমকে নিজের দিকে তাকিয়ে ছুট লাগালো নিজের ঘরের দিকে। সে তো সব সময় সবার আগেই তৈরী হয় তবে আজ এমন ভুল করলো কেনো? গাল ফুলিয়ে এক পলক পেছনে তাকিয়ে দেখলো নিবিড় তার যাওয়ার পথের দিকেই চেয়ে আছে। অদ্ভুত ভাবে অর্থির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।

২ দিন থেকে নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছিলো অর্পিতা। তেমন একটা বেরও হয়নি, কারোর সাথে কথাও বলেনি। আগের মতো চঞ্চলতাও নেই তার মাঝে। বিষয়টা খেয়াল করেও বেখেয়ালী ভাব নিয়ে ছিলো শায়লা। আজ এতো মেহমানের মধ্যে তার আত্মীয়ও এসেছে। সেই সুবাদে তিনি মেয়ের ঘরে নিয়ে এসেছে তার পছন্দের বোনকে। তার মনের চিন্তাধারা যে ভিন্ন তা তার চোখে মুখের উপচে পড়া হাসিতেই টের পাওয়া যাচ্ছে। মেয়ের ঘরে ঢুকে দেখে অর্পিতা তখনো বিছানার ওপর বসে আছে। শায়লা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,

‘কিরে অর্পি তুই এখনো বসে আছিস কেনো? তৈরী হবি কখন? ওদিকে তো সব মেহমান চলে এসেছে। নতুন বউও তৈরী হয়ে গেছে। জলদি ওঠ! আর দেখ কাকে নিয়ে এসেছি!’
অর্পিতা অনিচ্ছা স্বত্বেও নিজের মায়ের দিকে তাকায়। তারপর তার পাশে দাঁড়ানো নিজের খালামনির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়। শিল্পা ভাগ্নীর অবাক মুখ দেখে হেঁসে বলে,

‘কিরে খালামনিকে আশা করিসনি? আমি এসে থেকে তোকে খুঁজে যাচ্ছি আর তুই তখন থেকে লুকিয়ে আছিস নিজের ঘরে!’
অর্পিতা নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে। বিছানা থেকে নেমে শিল্পাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘কখন আসলে খালামনি? তুমি যে আসবে তা তো বলোনি!’
‘তোকে একটু অবাক করে দিলাম। খুশি হয়েছিস?’
অর্পিতা হেঁসে বলে, ‘অনেক!’
শিল্পাও হাসে। তারপর অর্পিতাকে তাড়া দিয়ে বলে, ‘জলদি যা শাড়ি পড়ে আয়! আরও একজন কিন্তু অপেক্ষা করছে তোর!’

অর্পিতা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে তা অগ্রাহ্য করে শায়লা আর শিল্পা। অগত্যা দুজনের জোড়াজুড়িতে অর্পিতা আগে শাড়ি পড়ে নেয়। শাড়ি পড়ে আসলে শিল্পা আর শায়লা ধরে হালকা গহণাও পড়িয়ে দেয়। তারপর বাহিরে নিয়ে আসে৷ অদ্ভুত ভাবে সেই সময়ই চিত্রও নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। অর্পিতার সাজহীন রুপ দেখেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নেয়। অর্পিতা অনুভূতি শূণ্যের মতো তাকিয়ে রইলো চিত্রর মুখপানে। চিত্র তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই অর্পিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার মা আর খালামনি তাকে টেনে আনে নিচে। শিল্পা একটা ছেলের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলে,

‘স্মরণ! দেখ তো অর্পিকে কেমন লাগছে?’
অর্পিতা আর স্মরণ দুজন একসাথেই নিজেদের দিকে তাকায়। স্মরণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেও অর্পিতার চোখে মুখে বিস্ময়। তার বিস্ময় কাটার আগেই শায়লা বলে,
‘আমার অর্পিকে কি খারাপ লাগার সুযোগ আছে? তাছাড়া তোর ছেলেট হবু বউ আমার অর্পি। খারাপ লাগার প্রশ্নই আসে না। কি বলিস স্মরণ!’
স্মরণ খানিকটা লজ্জা পায়। অর্পিতা অবাক হয়ে, বিস্ময়ে হতভম্বের মতো চেয়ে রয় তার মায়ের দিকে। স্মরণের হবু বউ মানে! অবাকতার রেশ না কাটিয়েই বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি আর স্মরণ ভাই!’

চৈত্রিকা আর প্রহর পাশাপাশি বসে আছে। প্রহরের চোখ মুখ দেখে বোঝা দায় সে খুশি নাকি অখুশি! চৈত্রিকা কয়েকবার তার মুখের দিকে তাকিয়েছে৷ চৈত্রিকা সবার সাথে বেশ হাসিখুশি মুখেই কথা বলছে। কেউ বুঝতেই পারবে না মেয়েটা বিয়ে নিয়ে অখুশি৷ চৈত্রিকার এতো খুশি খুশি রুপ হজম হলো না অনেকেরই। দুর থেকে পিয়াস, আজম আলী দুজনেই মনে মনে ফুঁসছে। আজম আলীকে প্রহর এতোভাবে আতঙ্কিত করার পরও শুধরেছে বলে মনে হয়না৷ প্রহর আড়চোখে পুরো পরিবেশটাই পর্যবেক্ষণ করে নিয়েছে। পাশাপাশি বসা দুটি মানুষের মনেই চলছে একই কথা অথচ একজন জানলেও অন্যজন তা জানে না। দুজনেই অপেক্ষায় আছে আসন্ন চমকের। এরমাঝেই সব মেহমান এসে গেছে। সবার সাথে দেখা হলেও যার জন্য অপেক্ষা সেই মানুষের দেখা এখনো পায়নি চৈত্রিকা। ভেতর ভেতর অস্থির হয়ে আছে কখন তার দেখা পাবে! তার অস্থিরতা খেয়াল করে প্রহর বাঁকা হাসে। মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে চৈত্রিকার কাছে৷ ফিসফিস করে বলে,

‘তোমার অপেক্ষার সমাপ্তি প্রিয় বউ!’
সাথে সাথেই চমকে তাকায় চৈত্রিকা। প্রহরের দিকে তাকাতেই ভেসে আসে এক মহিলা কন্ঠের আওয়াজ। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে চৈত্রিকার। পল্লবী হাসতে হাসতে এক মহিলাকে নিয়ে এগিয়ে আসে। চৈত্রিকাকে দেখিয়ে বলে,
‘এটা আমার বাড়ির নতুন বড় বউ চৈত্রিকা। আর বড় বউ এটা তোমার কাকি শ্বাশুড়ি হয়।’

চৈত্রিকার নাম শুনেই চমকায় নাসিমা। চৈত্রিকা একদম স্বাভাবিক ভাবেই সালাম দেয়। নাসিমা মুখ দেখে আরো এক ধাপ চমকায়। বড় বড় শ্বাস নিয়ে কোনো রকমে নিজেকে সামলায়৷ সালাম নিয়েই কোনো কথা না বলে সরে যায়। চৈত্রিকা হাসে। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় নিমিষেই৷ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাসিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার পাশে তাকায়। প্রহর তখন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রহরের এহেন দৃষ্টিতে খানিকটা চমকে যায় চৈত্রিকা। প্রহর অদ্ভুত ভাবে হেঁসে নিজ জায়গা থেকে উঠে যায়। সাথী ছুটে আসে চৈত্রিকার কাছে। ফিসফিস করে বলে,

‘চৈত্রিকা! উনি…’
চোখের ঈশারায় থামিয়ে দেয় চৈত্রিকা। সাথী বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। অর্থি, অর্পিতা এসে চৈত্রিকার সাথে গল্প করে। যদিও বেশির ভাগ কথা বোকা অর্থিই বলতেছে আর তারা চুপচাপ শুনছে। একপর্যায়ে খাওয়া দাওয়ার পর্ব আসলে সবাই ধীরে ধীরে খাওয়ার জন্য যায়। প্রহর আর চৈত্রিকাকে একই প্লেটে খাবার দেওয়া হয়। গ্রামের রীতি অনুযায়ী এক প্লেটে খাবার খেলে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বাড়ে৷ কথাটা শোনার সাথে সাথেই চৈত্রিকা চোখ মুখ কুঁচকে নিয়েছে। বিড়বিড় করে বলে,

‘মিথ্যা হোক বা সত্যি যদি এক প্লেটে খাবার খেলে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বাড়ে তাহলে আমি খাইলাম না এই লোকটার প্লেটে। আসছে! এটার প্রতি ভালোবাসা বাড়বে শুনলেই তো আমি মেপে মেপে ১০ হাত দুরে থাকবো।’
প্রহর চৈত্রিকার মুখভঙ্গি দেখে ঠোঁট চেপে হাসে৷ এর মধ্যেই প্রহরের বন্ধুমহলের একজন খোঁচা মে’রে বলে, ‘প্রহর নিজ হাতে খাইয়ে দিস ভাবীরে। এতে ভালোবাসা একদম সাগরের জলের মতো বাড়তেই থাকবে।’

মুহুর্তেই হাসাহাসিতে ভরে ওঠে পরিবেশ। অন্য সময় হলে প্রহর নিজেই ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতো তবে চৈত্রিকার মুখের অবস্থা দেখে তার আর ইচ্ছে করলো না ধমক দিতে। চুপচাপ মজা নিতে থাকে। চৈত্রিকা পড়ে আছে চিপায়! না পারছে উঠে চলে যেতে আর না ইচ্ছে করছে লোকটার হাতে বা তার প্লেটে খেতে! মুখটা কাঁদো কাঁদো করে অবশেষে অনেক অযুহাতেও যখন ছাড় পেলো না তখন প্রহরের হাতেই খেয়ে নিতে হলো। ইচ্ছে করলো ঠা’স করে প্রহরের মাথাটাই ফা’টিয়ে দিতে!
খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার মতো বসে রেস্ট নিচ্ছিলো। নাসিমা ঘেমে একাকার হয়ে আছে। চৈত্রিকা দুর থেকে একবার তা দেখে হেঁসে এগিয়ে আসে৷ হাতে থাকা রুমাল টা এগিয়ে দিয়ে বলে,

চৈত্রিকা পর্ব ১১

“ঘেমে যাচ্ছেন কেনো কাকিশ্বাশুড়ি? নিন রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে নিন!’
নাসিমা চমকে তাকায়। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে একদমে বলে, ‘এটা অসম্ভব! তুই কিভাবে!’
‘কেনো মা? খুব বেশি অবাক হচ্ছো নিজের পেটের মেয়েকে বেঁচে থাকতে দেখে!’

চৈত্রিকা পর্ব ১৩