চৈত্রিকা পর্ব ১৭

চৈত্রিকা পর্ব ১৭
বোরহানা আক্তার রেশমী

পরেরদিন সকালে আজম আলীকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে সনিয়া বেগম। বেলা তখন ১০ টা। আজম আলীর কাঁধে ব্যান্ডেজ। ব্যাথার ইনজেকশনের জন্য তাও ব্যাথাটা নেই। সনিয়া বেগম আজম আলীকে নিয়ে যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন প্রহর বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে সিগারেট ফুঁকছে। চৈত্রিকা আর সাথী ঘরের সব টুকটাক কাজ শেষ করছে। আজম আলী প্রহরকে দেখে ভয় পায়। প্রহর ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। সিগারেট ফেলে দিয়ে পায়ে পিষে সিগারেটের আগুন নেভায়। তারপর এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

‘মামাশ্বশুড়ের অবস্থা কি? হাসপাতালে মজা পাইছেন তো মামা? বেশি কষ্ট হয়নি তো?’
আজম আলীর শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে যায়। সনিয়া বেগম স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই সবটা দেখে। আজম আলীর প্রতি তার মনে যতটা ক্ষো’ভ আছে তাতে আজম আলীর এই অবস্থা দেখে সে এতটুকুও ব্যাথিত নয়। উল্টো কেউ তো জা’নো’য়া’রটাকে পিষে দিয়েছে এটাই শান্তি। আজম আলীকে ঘরের দিকে নিয়ে যায়। প্রহর শরীর টানটান করে হাসে৷ হাক ছেড়ে ডাকে চৈত্রিকাকে। চৈত্রিকা কলপাড় থেকে বের হয়ে আসে ভ্রু কুঁচকে। বেশ রাগী কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘চেঁচান কেন? কি সমস্যা?’
‘আরেহ বউ তোমার মামা আয়ছে হাসপাতাল থেকে। যাও যাও তার সেবা করো!’
‘আপনার মন চাইলে আপনি করেন। আমার কাজ আছে।’
প্রহর পাত্তা দেয় না চৈত্রিকার কথা। নিজের মতো বাড়ি থেকে বের হতে হতে বলে, ‘বিকেলে তৈরী হয়ে থাকবা আমরা আজ বাড়ি যাবো।’

চৈত্রিকার কপালের ভাজ দৃঢ় হয়। প্রহরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে। সে সময় ঘর থেকে বের হয় সনিয়া বেগম। চৈত্রিকা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কন্ঠস্বর নরম করে বলে,
‘সারা রাত তোমার কিছু খাওয়া হয়নি মামি। চলো কিছু খেয়ে নাও! মামাও তো খাবে তাই না?’
সনিয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। বলে, ‘সাথী কোথায়? কিছু খেয়েছে ‘ও’?’
চৈত্রিকা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বলে। তারপর সনিয়া বেগমের হাত টেনে নিয়ে যায় খাবার ঘরে। সনিয়া বেগমকে খেতে বলে নিজে খাবার নিয়ে যায় আজম আলীর ঘরে। আজম আলী তখন ঘাড় বাকিয়ে শুয়ে ছিলো। চৈত্রিকা খাবার নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

‘ঘাড় বাঁকা মামা! জমিদার জামাই তাহলে হাসপাতালের স্বাদও খাইয়ে দিলো!’
আজম আলী চমকে তাকায়। চৈত্রিকার দিকে তাকাতেও ভয় পায়৷ চৈত্রিকা খাবার রেখে বলে, ‘আপনাকে এতো ঘৃ’ণার পরও আপনাকে বাঁচিয়ে রাখার কারণ কি জানেন মামা? একেবারে ম’রে গেলে আপনার পাপের শা’স্তি কম হয়ে যাবে। আপনাকে তো মা’রবো তিলে তিলে। যেনো সমস্ত পাপের জন্য আপনার আক্ষেপ শেষ না হয়!

স্মরণ সকালেই জানিয়েছে বিয়েটাতে সে দেড়ি করতে চায় না। প্রহর আর চৈত্রিকা বাড়িতে ফিরলেই তাদের আকদের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এতে কেউ সামান্যও আপত্তি করেনি। চয়ন নিজেও রাজি হয়ে গেছে। শুধু ভেতর ভেতর পু’ড়ছে চিত্র আর অর্পিতা। চিত্র একবার ভাবে সে সরাসরি অর্পিতা আর শিমুলের সাথে কথা বলবে আবার ভাবে এতে যদি হীতে বিপরীত হয়! কি করবে আর কি করবে না ভেবেই প্রায় পাগল পাগল অবস্থা চিত্রর। সারাটাদিন ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। পল্লবী কয়েকবার এসে দরজা থেকেই ঘুরে গেছে। চিত্র দরজা খোলেওনি কিচ্ছু খাইওনি। অর্পিতা নিজেও ঘর থেকে বের হয়নি। বাড়ির এতো সব ঝামেলার মধ্যে অর্থির কোনো হেলদোল নেই৷ সে তো আর জানে না তার প্রাণের ভাইয়ের কি অবস্থা! বিকেলে নিবিড় পড়াতে এসেছে। অর্থি আজ আগেই অঙ্ক করে রেখেছে। সেই অঙ্ক দেখে নিবিড় অবাক হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো অর্থির মুখের দিকে। তারপর গোল গোল চোখ নিয়ে বলে,

‘তুমি অঙ্কও করতে পারো মেয়ে? এতো ট্যালেন্টেড তুমি?’
অর্থির চোখ চকচক করে ওঠে। মুখটা খানিকটা এগিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে, ‘তাই না? আপনি শুধু শুধু এতোদিন আমাকে গা’ধা বলতেন মাষ্টারমশাই! দেখেছেন আমি কতো ট্যালেন্টেড!’
গর্বে বুক ফুলিয়ে খুশি খুশি মুখে তাকায় অর্থি। নিবিড় একবার খাতার দিকে তাকিয়ে আরেকবার তাকায় অর্থির দিকে। অর্থির চোখ মুখ দেখে নিবিড়ের চোয়াল দ্বিগুণ শক্ত হয়। রাগে কিড়মিড় করতে করতে রাম ধমক লাগিয়ে দেয়। অর্থি ভয়ে চমকে ওঠে। চেয়ার থেকে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে ভোলা ভালা মেয়ের মতো তাকায়। নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘তুমি শুধু গা’ধা না তুমি আস্ত একটা গা’ধী, ব’লদ। মানুষ কি পর্যায়ের ব’ল’দ হলে করা অঙ্কও ভুল করে! আবার বলো যে তুমি ট্যালেন্টেড!’
অর্থি কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বলে, ‘আপনিই তো বললেন আমি ট্যালেন্টেড! এখন আবার বকা কেনো দিচ্ছেন মাষ্টারমশাই?’
‘তোমাকে এই অঙ্ক আমি করাইনি?’
অর্থি মাথা নাড়ে৷ নিবিড় রেগে বলে, ‘তাহলে ভুল করলে কেমন করে? এই পৃষ্ঠা উল্টে এপাশের অঙ্ক দেখে করলেও তো অন্তত অঙ্কটা সঠিক হতো!’

‘মাষ্টারমশাই আমি ভালো মেয়ে। ওসব বা’ট’পা’রি করি না আমি।’
‘তোমার মতো মেয়ে বা’ট’পা’রি করতেও পারবে না। বা’ট’পা’রি করতেও বুদ্ধি লাগে যা তোমার মাথায় ছিটেফোঁটাও নেই।’
অর্থি কাঁদো কাঁদো মুখ করে মাথা নিচু করে নেয়। নিবিড় বড় বড় শ্বাস নেয়। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলে, ‘আচ্ছা আমি তোমাকে একটা কথা বলি! শোনো!’

অর্থি তাকায় নিবিড়ের দিকে। নিবিড় বেশ শান্ত স্বরে বলে, ‘দেখো আর মাত্র ২ মাস পরই তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষা। অথচ তুমি কিন্তু কিছু পারো না। এমন করলে কি তুমি পাশ করতে পারবে? আর তুমি যদি পাশ করতে না পারো তাহলে কি তোমার মান সম্মান থাকবে? লোকে যখন বলবে জমিদারের মেয়ে মাধ্যমিক ফেইল তখন কি তোমার ভালো লাগবে নাকি তোমার বাড়ির কারো ভালো লাগবে?’
‘নাহ।’
‘তাহলে কি তোমার উচিত না পড়ালেখা করা?’

অর্থি মাথা নাড়ায়। নিবিড় ভাবে অর্থি বোধহয় বুঝেছে কিন্তু নিবিড়কে হতাশ করে অর্থি বেশ উৎফুল্ল স্বরে বলে, ‘কিন্তু আমি তো কিছু পারি না মাষ্টারমশাই! আর এতো কষ্ট করে পড়ালেখার থেকে তো ভালো আমি ফেইল করে বিয়ে করে ফেলবো!’
নিবিড়ের রাগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। টেবিলের নিচে বেত ছিলো৷ কোনো কিছু না ভেবেই ওই বেত তুলে নিয়ে সরাসরি অর্থিকে বলে, ‘হাত পাতো!’

অর্থি ভয়ে হাত আগায় না। ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে রাখে। নিবিড় রাগে নিজেই অর্থির হাত টেনে এনে ঠা’স করে দুটো বা’রি লাগিয়ে দেয়। ব্যাথায় অর্থির চোখ মুখ নীলবর্ণ ধারণ করে। নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘অঙ্ক না পারার শা’স্তি এগুলো। এখন থেকে অঙ্ক না পারলে এভাবেই প্রতিটা অঙ্কের জন্য দুইটা করে বা’রি খাবা।’
ব্যাথায় অর্থির চোখ বেয়ে জল গড়ায়। মাথা নত করে হাত আগলে নিয়ে অন্য হাতে কাঁপা কাঁপা ভাবে কলম নেয়। অভিমানে আর একবারও চোখ তুলে তাকায় না নিবিড়ের দিকে।

রাত তখন প্রায় ১০ টার মতো। যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রহর আর চৈত্রিকা আজ ফেরেনি। চিত্র সারাদিন নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখলেও রাতের বেলা হঠাৎ করেই ঘর থেকে বের হয়। মাথায় চেপে বসেছে নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জিদ। চয়ন তাকে ঠ’কিয়েছে তার মানে এই না সে নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে আরামে ঘুরে বেড়াবে। রাগ, জিদ, হিং’স্রতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷ ধুপধাপ পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে হাঁটা লাগায় অর্পিতার ঘরের উদ্দেশ্যে। অর্পিতা তখন জেগেই ছিলো। মেঝেতে বসে জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিলো অন্যমনষ্ক হয়ে। হঠাৎ করেই ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চমকে ওঠে৷ নিচু স্বরে শুধায়,

‘কে?’
প্রথমেই চিত্র জবাব দেয় না। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বেশ অনেকটা সময় পর স্বাভাবিক স্বরে বলে, ‘আমি চিত্র। দরজা খোল!’
অর্পিতা চমকায়। দৃষ্টি এদিক ওদিক করে৷ এতো রাতে হঠাৎ করে চিত্র এ ঘরে কেনো? হৃদপিণ্ডের উঠানামা বেড়ে যায়। কোনো রকমে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে দরজা খুলে দেয়। দরজায় দাঁড়ানো চিত্রর চোখ মুখ দেখে বেশ ভয় পায়। লাল হওয়া চোখ মুখে চিত্রকে কোনো হিং’স্র প্রাণীর থেকে কম কিছু লাগছে না। বার কয়েক ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় আওড়ায়,

‘এতো রাতে তুমি এখানে কেনো চিত্র ভাই? কিছু বলবে?’
চিত্র জবাব না দিয়ে বাহু টেনে ধরে অর্পিতার। শক্ত করে চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘তুই শুধু আমার অর্পি। আমি কোনোমতেই তোকে অন্যের হতে দেবো না। যা করছি বা করবো তার জন্য ক্ষমা করিস!’
অর্পিতা কিছুই বুঝলো না। ফ্যালফ্যাল করে শুধু চেয়ে রইলো চিত্রর মুখের দিকে। চিত্র কয়েকবার বড় বড় শ্বাস নিয়ে হুট করেই হাত দেয় অর্পিতার শাড়িতে। অর্পিতা আঁতকে ওঠে। চিল্লিয়ে উঠে চিত্রের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,
‘চিত্র ভাই দোহায় লাগে তোমার! আমার শাড়ি ছাড়ো। কি করতেছো এইটা তুমি?’

অর্পিতার চেঁচানোর পরও চিত্র ছাড়ে না। শাড়ি একটানে খুলে ফেলে। অর্পিতার চেচামেচি বেড়ে গেছে। চিত্র তখন ভাালোবাসা পাওয়ার লোভে অন্ধ হয়ে গেছে। তার মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে কিভাবে অর্পিতাকে পাওয়া যাবে! বোকা চিত্র রাগের মাথায় কত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তা বোধহয় একবারের জন্যও ভাবে না। অর্পিতা কান্না শুরু করে দিয়েছে। চিত্র অর্পিতার ব্লাউজের এক অংশ ছি’ড়ে ফেলে। অর্পিতা হাউমাউ করে কান্না করছে আর বার বার চেঁচিয়ে নিষেধ করছে চিত্রকে। কিন্তু চিত্র নিজের মাঝে নেই।

অর্পিতার চেঁচামেচির শব্দে শায়লা, শিমুল, শিল্পা আর স্মরণই প্রথমে দৌড়ে আসে। এপাশের উল্টোদিকে চয়ন পল্লবী আর পিয়াস নীরার ঘর। তারা চেচামেচির আওয়াজটা স্বল্প পায়। শায়লা, শিমুলের ঘর অর্পিতার ঘরের এক ঘর পরে হওয়ায় তারাই প্রথমে ছুটে আসে। অর্পিতা আর চিত্রকে এ অবস্থায় দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। শায়লা মাথায় হাত দিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। শিমুল এসে অর্পিতার থেকে চিত্রকে দুরে সরিয়ে থা’প্পড় বসিয়ে দেয়। চিত্র থা’প্প’ড় খেয়ে সরে যায়। অর্পিতাকে আগলে নেয় শায়লা আর শিল্পা। স্মরণ এগোয়ও না। অর্পিতা লজ্জায়, ভয়ে শব্দ করে কাঁদছে। ততক্ষণে চয়ন, পল্লবী, পিয়াস, নীরা সবাই এসে গেছে। অর্পিতাকে এমন অবস্থায় দেখে সবাই হা হয়ে যায়। শিমুল ততক্ষণে চয়নকে সবটা বলেছে। চয়ন রাগে এসে চিত্রর গালে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়। সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে চিত্রর বুঝেও আসলো না কি থেকে কি হলো!

এতোরাতেও হল রুমে বাড়ির সবাই বসে আছে। অর্পিতা এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে বসেছে। শায়লা মুখে আঁচল চেপে বিলাপ করে কাঁদছে। পল্লবী বেশ স্বাভাবিক আছে। পিয়াসের এসব কিছুতেই মাথা ব্যাথা নেই। চয়ন, শিমুল, প্রহর গম্ভীর হয়ে আছে। শিল্পা বোনকে সামলালেও স্মরণ বসে আছে। তার মনে কি চলছে তা বোঝা দায়। চৈত্রিকা, অর্থি অর্পিতার পাশে বসে আছে। যদিও অর্থিকে কয়েকবার ঘরে যেতে বলেছে কিন্তু অর্পিতার কান্না দেখে অর্থি আর যায়নি। এই রাতের বেলাতেই প্রহর আর চৈত্রিকাকে খবর পাঠিয়ে বাড়িতে এনেছে চয়ন।

সাদিক, নাসিমাও বসে আছে৷ চিত্র সবার থেকে খানিকটা দুরে এক কোণায় মাথা নিচু করে আছে। রাগে, জিদে মানুষ যে অন্যায় করে বসে তার উদাহরণ চিত্র। সে কখনো যেটা ভাবেওনি সেই কাজই করে বসেছে। এতো সহজ পথ থাকতে সে সবচেয়ে ঘৃ’ণ্য একটা কাজ করেছে। অনুশোচনায় তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত বি’ষিয়ে যাচ্ছে। বেশ অনেকটা সময় পর প্রথমে মুখ খোলে চয়ন। বেশ গম্ভীর স্বরে বলে,

‘দেখো যা হওয়ার তা হয়ে গেছে! চিত্র যা করেছে তার শা’স্তি সে পাবে। চিত্র যা করেছে আজ তারপর আমার মনে হয় না অর্পিতাকে আর এই বাড়িতে রাখা উচিত! ওর বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব দিয়ে দাও!’
সবাই তাকায় স্মরণের দিকে। চিত্র হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মাথা নিচু করে রাখে। অর্পিতার এসবে কোনো হেলদোল নেই৷ তার চিত্র ভাই এটা কি করলো! এটুকু ভেবেই তার সকল অনুভূতিরা বি’ষা’ক্ত হয়ে যাচ্ছে। সবার ভাবনার মাঝেই স্মরণ বেশ স্বাভাবিক, সাবলীল ভাবে বলে,

‘সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেনো? আপনাদের কি মনে হয় আমি এমন চরিত্রহীনা মেয়েকে বিয়ে করবো? মানে বিয়ের আগে ফুলসজ্জা করবে একজন আর আমি ফাউ ফাউ বিয়ে করে বউ ঘরে তুলবো!’
কান ঝা ঝা করে ওঠে অর্পিতার। চোখ দুটো লাল হয়ে যায়। শিমুল মাথা নিচু করে নেয়। চৈত্রিকা বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘বড়দের সামনে কি বলছেন তা ভেবে বলবেন! আর ফুলসজ্জা বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন? সবাই জানে এমন কিছুই হয়নি তবুও আপনি অযথা এসব কেনো বলছেন? আপনার বিয়ে করতে ইচ্ছে হলে করুন নয়তো স্ব-সম্মানে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে পারেন৷ সদর দরজার রাস্তাটা ওদিকে!’

শিল্পা আর স্মরণ ক্ষেপে ওঠে। চৈত্রিকাকে যা তা বলতে শুরু করে। মুহুর্তেই পুরো হলরুমে যা তা কান্ড শুরু হয়ে যায়। প্রহর বেশ শান্ত হয়ে উঠে আসে। স্মরণের সামনাসামনি এসে ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে বলে,
‘জমিদার বাড়িতে দাঁড়িয়ে সেই বাড়িরই মেয়েকে, বউকে যা তা বলছিস! গলা কাঁপছে না স্মরণ? আমি কাঁপাবো?’
স্মরণ আঁতকে ওঠে। প্রহরের সামনে বসে সে ঠান্ডা মাথায় এতো বড় ভুল কেমন করে করলো সেইটা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসে। প্রহর চয়নের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘স্মরণ অর্পিতাকে কি রিজেক্ট করবে? আমরাই ওকে রিজেক্ট করলাম। ওর মতো স’স্তা মানসিকতার ছেলে আমাদের অর্পিকে ডিজার্ভ করে না।’
‘তোর ভাইয়ের জন্য আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা প্রহর! এখন আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে? স্মরণ নিজের মানুষ হয়েও মেয়েটাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলো সেখানে অন্য কেউ ওকে কেনো বিয়ে করবে?’
শিমুলের কথার পিঠে প্রহরের স্বাভাবিক জবাব, ‘যার জন্য এতো কিছু হলো সেই করবে! চিত্র বিয়ে করবে অর্পিকে।’
চিত্র এতক্ষণে মাথা তুলে তাকায় প্রহরের দিকে। অর্পিতার শিরা উপশিরা কেঁপে ওঠে। চয়ন চমকে উঠে বলতে নেয়, ‘কিন্তু এটা..’

‘আপনি চুপ থাকুন আব্বাজান! আজ যা হয়েছে তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আপনি। জমিদাররা নাকি কথার খেলাপ করে না তবে আপনি নিজে নিজের পুত্রের সাথে এমন কথার খেলাপ কেনো করলেন? আপনার জন্যই, শুধুমাত্র আপনার জন্যই চিত্র এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা শুধু ভুল না অন্যায়ও। ভালোবাসা পাওয়ার আশায় অ’ন্ধ হয়ে গিয়ে কতটা নিচু কাজ করতে গেছিলো তা কি ‘ও’ নিজেও জানে? আপনি জানতেন চিত্র ঠিক কতটা ভালোবাসে অর্পিকে অথচ আপনি নিজের দাম্ভিকতা ধরে রাখতে দুজনের জীবনটায় ন’ষ্ট করে দিলেন। তাই এই ক্ষেত্রে আপনি চুপ থাকলেই ভালো হয়।’

প্রহর কথা শেষ করতেই চৈত্রিকা খানিকটা অবাক চোখে তাকায়। পাশ থেকে অর্পিতা কোনো রকমে উঠে দাঁড়িয়ে প্রহরকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘কিন্তু আমি বিয়েটা করতে পারবো না বড় ভাইজান!’
সবাই অর্পিতার দিকে তাকায়। কিছু জিজ্ঞেস করার আগে অর্পিতা নিজেই বলে, ‘আমি তোমাকে এমন ভাবিনি চিত্র ভাই। তুমি যদি শুধু একটা বার বলতে তুমি আমাকে ভালোবাসো! আমি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে চলো আসতাম তোমার কাছে। কিন্তু তুমি এমনটা করোনি! উল্টো আমার সম্মানে হাত দিয়েছো।

তুমিও জানো আমিও জানি আমার গায়ে ক’লঙ্ক নেই তবুও আমি আজ তোমার জন্য ক’লঙ্ক পেয়েছি। তুমি আমার বিশ্বাসের জায়গা, ভরসার জায়গা একদম ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছো চিত্র ভাই। যতটা ভালো আমি তোমাকে বেসেছি ততটাই তুমি তোমাকে ঘৃ’ণা করার কারণ দিয়েছো। তোমাকে ২য় বারের মতো বিশ্বাস, ভরসা করার মতো কোনো কারণ নেই আমার কাছে। যে মানুষটা এতো যত্ন করে আমার গায়ে ক’লঙ্ক লেপ্টে দিলো তাকে কিভাবে বিয়ে করে নিবো? স্বামী হিসেবে মেনে নিবো?’

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গতকাল দেইনি বলে অনেকেই রেগে আছেন। আচ্ছা আপনারা কি জানেন একটা পর্ব লিখতে কতটা সময় লাগে? এটা তো থ্রিলার উপন্যাস যা তা লিখাও যায় নাহ। অনেকটা ভেবে লিখতে হয়। সকাল ৭ টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত আমার ১ মিনিটও সময় নেই। এরপর তো খানিকটা রেস্ট নেওয়ারও ব্যাপারটা আছে।

আমার পড়া বাদ দিয়ে সন্ধ্যা থেকে ৮/৯ টা পর্যন্ত গল্প লিখি এরপর পড়তে বসি। আপনারা সবসময় নিজেদেরটা না ভেবে একটু লেখিকার কথাটা কি ভাবেন? আমরাও মানুষ। আমাদেরও সারাদিনের ক্লান্তির পর রেস্ট নিতে ইচ্ছে হয় কিন্তু সেই সময়টুকু গল্পে দেই। তারওপর আমার ভাবী আর ভাতিজা আসছে। ওরা অনেকদিন পর আসছে। বাড়িতে হৈ হুল্লোড় সবসময়ই৷ এতো চেঁচামেচির মধ্যে লিখা যায় না।

চৈত্রিকা পর্ব ১৬

অন্তত আমি পারি না🙂 আমি একদিন না দিলে পরেরদিন অন্তত ২০০০+ ওয়ার্ড দেই। তবুও আপনাদের এতো অভিযোগ! একটা পর্ব লিখতে সময় লাগে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা। এই সময়টুকু তো আমি আমার পড়া বাদ দিয়ে গল্প লিখি। আপনারা যদি চান তাহলে গল্প আর কয়েক পর্বে এলোমেলো ভাবেই শেষ করে দিবো🙂 আমার কথায় কারো খারাপ লাগলে দুঃখিত)

চৈত্রিকা পর্ব ১৮