চৈত্রিকা পর্ব ১৮

চৈত্রিকা পর্ব ১৮
বোরহানা আক্তার রেশমী

সারা রাত অর্পিতার সাথেই ঘুমিয়েছে চৈত্রিকা আর অর্থি। ওদের দুজনকে ছাড়া অবশ্য অর্পিতাই কাউকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। চৈত্রিকার অনেক অনুরোধ আর বোকা সোকা অর্থির কান্নার কাছে হার মেনে ওদেরকে ঢুকতে দিয়েছে৷ সারাটা রাত অর্পিতা চৈত্রিকাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে গেছে। এই কান্নার বিপরীতে কিছুই বলতে পারেনি চৈত্রিকা। জীবনে কিছু কঠিন সময়, খারাপ সময় আসে যখন এভাবে আগলে ধরে রাখার বা কারো বুক পাওয়া যায় না যার বুকে মাথা গুজে কান্না করে নিজেকে হালকা করা যাবে।

অর্থি কান্না করার ফলে ঘুমিয়ে পড়েছিলো কিন্তু চৈত্রিকা সারা রাতে দু চোখের পাতা একটুও এক করেনি৷ মূলত ভয় পাচ্ছিলো না জানি অর্পিতা নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে! এবাড়ির মানুষগুলোর প্রতি তার আকাশসম ক্ষো’ভ থাকলেও এই নিষ্পাপ দুটি মেয়ের ওপর তাার কোনোরুপ ক্ষো’ভ নেই৷ বরং মেয়ে দুটির ওপর তার অল্প কিছুদিনেই একটা ভালোবাসার জায়গা তৈরী হয়ে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চৈত্রিকা। বিড়বিড় করে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘জীবন বড্ড নি’ষ্ঠুর অর্পিতা আপু। সাজানো, গোছানো স্বপ্ন ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে যায় এক নিমিষেই। কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ ভাবতেও পারে না। আমি কি কখনো ভেবেছি নিজের চোখের সামনে নিজের প্রিয় আব্বুকে পু’ড়তে দেখবো! তবুও দেখতে হয়েছে। মা নামক এক নি’ষ্ঠুর মহিলার জন্য আমি পাড় ভাঙা ঢেউ।’

চৈত্রিকার বিড়বিড় আওয়াজ ঘুমন্ত অর্পিতা শুনতে পায় নাহ। চৈত্রিকা অর্পিতার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে আলগোছে শুইয়ে দেয়। পাশেই অর্থি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। এক পলক দুজনের দিকে তাকিয়েই চৈত্রিকা ঘর থেকে বের হয়। মাথার আঁচল টেনে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা লাগায়। একটা অদ্ভুত শব্দ কানে আসতেই পা দুটো আপনা আপনি থেমে যায়। কান খাঁড়া করে আবারও বোঝাার চেষ্টা করে এটা ঠিক কিসের শব্দ ছিলো! কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারে এটা নুপুরের শব্দ। চৈত্রিকা পাশের ঘরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোনো রকম শব্দ না করে একদম ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় দরজার কাছ ঘেঁষে। কাকতালীয় ভাবে ঘরের দরজাটা শুধু ভেড়ানো ছিলো আটকানো ছিলো না। তাই স্পষ্ট ভেতরের কথা গুলো শুনতে পেলো চৈত্রিকা। আশে পাশে নজর বুলিয়ে দরজায় কান পাততেই তার কানে ভেসে আসে,

‘চিত্রর মতো ভদ্র ছেলের কি আর অতো ক্ষমতাা আছে যে নিজের চিন্তা ভাবনায় এসব করবে! আমিই তো উ’স্কালা’ম। যদিও চিত্রর ঘরে শুধু দুটো চিঠিই রেখে এসেছিলাম। কিন্তু বোকা চিত্র যে সত্যিই রেগে গিয়ে আমাদের প্ল্যানমতো কাজ করবে তা কি আর জানতাম! খুব অ’হং’কার না ওদের! এবার সব ধুলোতে মিশবে। আমাদের অ’পমা’ন করেছিলো তাই না!’
চৈত্রিকা স্পষ্ট বুঝলো ভেতর ঘরে থাকা মানুষগুলোর ক্ষো’ভ। ভেতরের প্রতিহিংসা যে মানুষকে মানুষ থেকে অমানুষ করে দেয় তারই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ পেলো চৈত্রিকা। চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে মুহুর্তেই। চোয়াল শক্ত করে আওড়ায়,
‘এর শা’স্তি আপনারা পাবেন শিল্পা খালা।’

চৈত্রিকা নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। ঘরে এসে বার বার পায়চারি করছে আর কি থেকে কি করবে তা ভাবছে! একবার হাতের তালুতে হাত ঘষছে তো আরেকবার শাড়ি প্যাচিয়ে আঙুলে গিট্টু দিচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই মাথায় কিছু আসছে না। ফোঁস ফোঁস করে কয়েকটা শ্বাস ছাড়ে। পুরোটাই ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রহর দেখে। হঠাৎ চৈত্রিকা এমন করছে কেনো তা সে বুঝলো না। তবে মুখটা গম্ভীর করে ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে এগিয়ে আসলো চৈত্রিকার কাছে। একদম চৈত্রিকার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ভীষণ শীতল কন্ঠে বলে,

‘চর্কির মতো ঘুরছো কেনো? কি হয়েছে?’
হঠাৎ কথা বলায় চৈত্রিকা চমকে ওঠে। ব্যস্ত হয়ে পেছনে তাকাতে নিলে সরাসরি ধাক্কা খায় প্রহরের বুকে। এতে প্রহর এক চুল পরিমাণও নড়ে না কিন্তু চৈত্রিকা লাফিয়ে সরে যায়। কপালে ভাজ ফেলে বলে,
‘আপনি কি নিজের ভাইয়ের মতো হচ্ছেন নাকি? মেয়ে দেখলেই কাছে ঘেঁষতে মন চায়?’
প্রহরের চোখ মুখ গম্ভীর থেকে আরো বেশি গম্ভীর হয়ে যায়। সিনা টান টান করে বসে খাটের ওপর। শক্ত গলায় বলে, ‘আমার ভাইয়ের মতো হচ্ছি বলতে কি বুঝালে? চিত্র কিন্তু ওরকম ছেলে না। হয়তো আবেগ, রাাগ, জিদের বশে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মানে এই না ‘ও’ চরি’ত্রহীন!’

চৈত্রিকার কপালের ভাজ আরো দৃঢ় হয়। গটগট করে প্রহরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আপনাদের সমস্যা কি বলেন তো? মানে জমিদার বাড়ির ছেলেদের ৪ লাইন বেশি বুঝতেই হবে? শোনেন আমি চিত্র ভাইকে কিছু বলিনি। আপনার পিয়াস ভাইকে বলেছি!’

প্রহর হুট করেই কোমড় জড়িয়ে ধরে চৈত্রিকার। কয়েকদফা চমকায় চৈত্রিকা। চোখ বড় বড় করে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে নিলে মুখ গুজে দেয় উদরে। অদ্ভুত কন্ঠে বলে, ‘৪ লাইন যখন বেশি বুঝি তখন তুমি সঠিক বুঝটা দাও!’
চৈত্রিকা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। প্রহরের সামনে আমতা আমতা বা কাঁপা কাঁপা গলায় কিছু বলা মানেই প্রহরকে প্রশ্রয় দেওয়া। কিন্তু সে তো প্রহরকে প্রশ্রয় দেবে না। তাই নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ বন্ধ করে। সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিজের পু’ড়তে থাকা বাবার মুখ। চট করে চোখ মেলে বড় বড় শ্বাস নেয়। প্রহর অনেকক্ষণ চৈত্রিকার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ওই অবস্থাতেই ভ্রু কুঁচকে নেয়। কিন্তু তার ভাবনা সঠিক করে মুহুর্তেই চৈত্রিকার চোয়াল শক্ত করা কন্ঠে ভেসে আসে,

‘হুটহাট এভাবে স্পর্শ করে নিজের বাপ ভাইয়ের মতো নিজের চরিত্রটাও আর প্রকাশ করবেন না। ছাড়ুন আমাকে!’
প্রহর নিঃশব্দে হেঁসে আবার নিজেকে গম্ভীর করে ছেড়ে দেয় চৈত্রিকাকে। চৈত্রিকা যেভাবে শব্দ করে কাছে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই দুরে সরে গেলো। আলমারি থেকে নিজের শাড়ি, প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে গোসলখানার দিকে যায়। পেছন থেকে প্রহর বলে,
‘নিজের বউকে হুটহাট স্পর্শ করাতে যদি আমার বাপ ভাইয়ের মতো চরিত্র প্রকাশ পায় তবে আমি এমন চরি’ত্রহীন আজীবন হতে চাই চৈত্রিকা।’

চৈত্রিকা কোনো রকম নিজেকে দমিয়ে গোসলখানায় ঢোকে। রাগে কয়েক বালতি পানি নিজের মাথায় ঢেলে বের হয়ে আসে। পুরো ঘরে আর প্রহরকে নজরে আসে না। হয়তো নিচে গেছে নয়তো কোনো কাজে বাড়ির বাাহিরে গেছে। এদের আবার কাজ! অ’নৈতিক কাজ ছাড়া এরা আর পারেই বা কি! চুলগুলো ভালো করে মুছে তোয়ালে আর ভেজা কাপড় শুকাতে দেয় ব্যালকনিতে। রোদ এসে সরাসরি পড়ে মুখের ওপর। গোসলের পর রোদে দাঁড়াতে মন্দ লাগে না চৈত্রিকার। তাই মন ভালো করতে হালকা রোদের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকে।

গোসলের পরে স্নিগ্ধ রুপের সাথে মুখের ওপরের হালকা রোদে কি ভীষণ স্নিগ্ধ আর মায়াময় লাগছে তা কি এই সপ্তদশী কন্যা জানে? উহু জানে না। তার এই রুপে আটকে আছে ২ জোড়া চোখ। একটা তার স্বামীর। যার ভীষণ ভাবে অধিকার আছে তার ওপর। আর অন্যটা এক প’শুর। যার লালসার দৃষ্টি পড়েছে চৈত্রিকার ওপর। চৈত্রিকা বিষয়টা খেয়াল না করলেও নিচে দাঁড়ানো প্রহর ঠিকই খেয়াল করে। চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। চোখ দুটো মুহুর্তেই লাল টকটকে হয়ে যায়।

চৈত্রিকা নিচে এসে দেখে খাবার টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে নীরা। চৈত্রিকা কোনো রকম শব্দ না করে নিজেও এসে সেখানে দাঁড়ায়। চৈত্রিকার উপস্থিতি টের পেয়েও নীরা কোনো রকম শব্দ করে নাহ। মনের মাঝে জ্ব’লতে থাকা আগুন বাড়ে। মেয়েটা একটু বেশিই সুন্দর আর এজন্যই তার স্বামীও পাগল প্রায় এই মেয়েটার জন্য। মেয়েটাকে এতো সুন্দর হতে কে বলেছে? আগে তো তাও পিঠপিছে যত ন’ষ্টামি ছিলো পিয়াসের আর এখন তার সামনেই হা করে তাকিয়ে থাকে চৈত্রিকার দিকে৷ নীরার মুখ ভঙ্গি দেখে বুঝতে বাকি রইলো না তার মনের ভাবনাগুলো। চৈত্রিকা তবুও বেশ স্বাভাবিক স্বরে বলে,

‘বুবু আমি কি আপনাকে সাহায্য করবো?’
‘বুবু’ ডাক শুনে চমকে ওঠে নীরা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে চৈত্রিকার মুখের দিকে। চৈত্রিকা নীরার তাকানো দেখে হেঁসে দেয়। নীরার হাতে হাতে কাজ করতে শুরু করে নিজে থেকেই বলে,
‘আপনি আমার সম্পর্কে ছোট হলেও বয়সে বেশ খানিকটা বড়। তাই বুবু বলছি৷ মেজো বউ বা নাম ধরে ডাকতে আমার একটু অস্বস্তি হয়। বুবু ডাকলে সমস্যা হবে কি বুবু?’

নীরা চেয়ে চেয়ে দেখলো চৈত্রিকার হাসি। মেয়েটার হাসিতে যেনো সে নিজেই মুগ্ধ হলো৷ ভুলে গেলো ক্রো’ধ, হিং’সা, রাগ, ক্ষো’ভ সবকিছুই। শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনলো মেয়েটির কথা। চৈত্রিকা এক হাতে সব গুছিয়ে নিয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কোনো মেয়ে অসুন্দর হওয়াটা যেমন দোষের না তেমনই সুন্দর হওয়াটাও দোষের না বুবু। দোষ সেই পুরুষের দৃষ্টির যে পুরুষ নারীর সৌন্দর্যকে লা’লসার চোখে দেখে!

আচ্ছা বুবু সত্যিই কি আমার দোষ আছে আপনার স্বামীর এমন দৃষ্টি নিয়ে তাকানোতে? কখনো কি ভেবেছেন! আমি তো তার বড় ভাবীজান অথচ সে তাকায় কেমন করে! আমি কি কখনো এমন কিছু করেছি যাতে তার এমন দৃষ্টি পড়ার কারণ আছে? আসলে কি জানেন বুবু? কিছু পুরুষই হয় এমন যারা কোনো মেয়েকেই ভালো চোখে দেখে না। যাদের চরিত্রে রয়েছে আকাশসম দোষ কিন্তু আমরা বাঙালী নারীরা সেই স্বামীর জন্যই অন্য নারীর ওপর ক্ষো’ভ, হিং’সা পুষি।’

নীরা মাথা নিচু করে নেয়। চৈত্রিকা হাসে। এর মধ্যেই হুট করে অর্থির গলা পাওয়া যায়। অর্থির চেচামেচিতে নীরা আর চৈত্রিকা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে ছুট লাগায়। অজানা আশঙ্কায় চৈত্রিকার বুক কাঁপে। কোনো ভাবে অর্পিতা নিজের ক্ষ’তি করেনি তো? ঠিক আছে তো অর্পিতা? যত দ্রুত সম্ভব নীরা আর চৈত্রিকা অর্পিতার ঘরের সামনে আসে। ঘরের বাহির থেকে দেখতে পায় মেঝেতে র’ক্তের ছড়াছড়ি। অর্পিতার বুক কেঁপে ওঠে। অর্থি কান্না জুড়ে দিয়েছে। মেঝেতে অর্পিতার দেহটা পড়ে আছে আর চারপাশটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।

অর্থি ভয় পেয়েছে বুঝেই নীরা আগে অর্থিকে আগলে নেয়। অর্থি নীরার বুকে মুখ গুজে দিয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। চৈত্রিকা কাঁপা কাঁপা হাতে চৈত্রিকার হাত স্পর্শ করে৷ পালস বুঝতে না পেরে চট করে সরে যায়। কি মনে করে অর্পিতার শাড়ির আঁচল দিয়েই ওর হাতটা চেপে ধরে। অর্থির কান্নার আওয়াজে আর ৩ জনের চেচামেচিতে বাড়ির বাকি সবাই ছুটে আসে। শায়লা মেয়ের এমন নি’থর অবস্থা দেখে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে শুরু করে। পল্লবী আর চৈত্রিকা মিলে অর্পিতাকে ধরে বিছানার ওপর শুইয়ে দেয়৷ কে’টে যাওয়া হাতটা ভালো মতো চেপে ধরে যাতে রক্ত না পড়ে। কিন্তু হাতের শি’রা কি আর শুধুমাত্র এটুকু বাঁধ মানে!

ততক্ষণে খবর পেয়ে গেছে জমিদার বাড়ির সকল পুরুষ। চিত্র অর্পিতার এই অবস্থা দেখেই মেঝেতে বসে পড়েছে। অনুভূতি শূণ্যের মতো শুধু চেয়ে আছে অর্পিতার রক্তশূণ্য মুখের দিকে। বাড়িতে হৈ হুল্লোড় পড়ে যায়। প্রহর সাবধানে নিজ হাতেই সবটা সামলায়। অর্পিতাকে পাজাকোলা করে নিয়ে ছুটে যায় বাড়ির বাহিরে। উদ্দেশ্য হাসাপাতাল! একে একে সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। অর্পিতার ঘরে শুধু বসে থাকে চিত্র আর চৈত্রিকা। চৈত্রিকা যেতে চেয়েও চিত্রের দিকে তাকিয়ে আর যায়নি৷ অর্পিকা বোকামি করেছে এবার এই একই বোকামি যদি চিত্রও করে তবে বিষয়টা যে খুব খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে! চৈত্রিকা ধীরে পায়ে এগিয়ে আসে চিত্রর কাছে। চিত্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘চিত্র ভাই! আপনি যাবেন না? উঠুন!’
চিত্র উঠলোও না, তাকালোও না। শুধু রোবটের মতো বললো, ‘আপনি যান ভাবীজান। মেয়েটা আমার জন্যই নিজের সাথে এমনটা করলো! আমি কিভাবে যাবো ওর কাছে?’
চিত্রর দৃষ্টি তখনো মেঝেতে। অর্পিতার শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দিকে। মনে মনে নিজের ওপর ভীষণ রাগ হলো চৈত্রিকার। কেনো সে অর্পিতাকে একা ছেড়ে চলে গেলো! কেনো সে একবারও অর্পিতা কি করছে তা দেখে গেলো না! নিজের রাগ নিজের ভেতর রেখে অনেক ইতস্তত করেও বড় ভাই মনে করেই চিত্রর হাত ধরে চৈত্রিকা। জেদি কন্ঠে বলে,

‘উঠুন চিত্র ভাই! আমাদের আগে অর্পিতা আপুর কাছে যাওয়া উচিত।’
চিত্র কিছু বলার আগেই ঘরের বাহির থেকে শব্দ আসে মহিলা কন্ঠের। চিত্র আর চৈত্রিকা দুজনেই তাকিয়ে দেখে শিল্পা দাঁড়িয়ে আছে। শিল্পা বেশ বিদ্রুপ করে বলে,
‘কিগো চিত্র! আমাদের অর্পিতার জীবনটা ন’ষ্ট করে কি ক্ষ্যান্ত হওনি নাকি জমিদার বাড়ির ছেলেদের সমস্যাই এসব! বড় ভাবীর সাথে অ’বৈধ সম্পর্ক!’

চৈত্রিকা জ্বলে ওঠে। চোখ দুটো রাগে লাল হয়। চিত্রর হাত ছেড়ে গটগট করে সামনে এসে দাঁড়ায় শিল্পার। রেগে গলা চে’পে ধরে শিল্পার। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘আমার ইচ্ছে করছে আপনার গালে ক’ষিয়ে কয়েকটা থা’প্পড় বসিয়ে দেই কিন্তু আমি ময়লা ছুঁয়ে হাত অপরিষ্কার করতে চাই না। আপনি কি করেছেন তার হিসাব বাড়ি এসে মিলাবো।’

চৈত্রিকা পর্ব ১৭

শিল্পার দম আটকে যাওয়ার উপক্রম। কল্পনাও করেনি চৈত্রিকা এমন কিছু করতে পারে! চৈত্রিকা তার হাত ধরে ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। তারপর চিত্রের হাত টেনে ঘর থেকে বের হয়ে দরজা আটকে দেয়। শিল্পা অবাক হয়ে দরজার কাছে ছুটে আসে। দরজা ধাক্কাতে থাকে অনবরত। কিন্তু চৈত্রিকা দরজা খোলে না বরং অদ্ভুত কন্ঠে বলে,
‘পাপ বেশি হয়ে গেছে আপনাদের তাই এবার শা’স্তি পাবার সময় এসেছে।’

চৈত্রিকা পর্ব ১৯