ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২৮+২৯

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২৮+২৯
মৌমি দত্ত

আফিমের উপর বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো স্পন্দন। তাহজিবও বুঝলো স্পন্দনকে পটাতে হবে। কেননা তাদের তিনজনের মধ্যে স্পন্দনই একমাত্র ব্যাচেলরশিপ প্রায় হারিয়েছে রিলেশনে গিয়ে। তাহজিব একবার উঁকি মেরে দেখলো রান্নাঘরে। ইনায়াত আর রুহি আড্ডা দিচ্ছে আর রাতের রান্নার কাজ করছে। তাহজিব হালকা কেশে আফিম ও স্পন্দনের মনোযোগ নিজের দিকে করলো।
– বলছিলাম কি,, আমরা কোথাও বসি??

স্পন্দন আর আফিম একে অপরের দিকে তাকিয়ে সম্মতি দিলো। তাহজিব এগিয়ে গেলো নিজের বারের দিকে যেখানে অনেক ধরনের দামী মদের কালেকশন রাখা। আফিম ডিপ্রেশনে ” জীবন যখন বেদনা ” সিনেমার স্ক্রিপ্ট মনে মনে সাজাবার আগেই থেমে গেলো বার দেখে। মুখে খুশী নিয়ে ঢুকলো স্পন্দনের পিছু পিছু। স্পন্দন প্রস্তাব করলো সে সার্ভ করবে। তাহজিব আর আফিম রাজি হলো। স্পন্দন পেগ বানিয়ে দিচ্ছে আফিম আর তাহজিবকে। আবার নিজেও খাচ্ছে। কথা বলতে এলেও তিনজনে প্রথমেই বেশ কয়েক পেগ খেয়ে ফেললো নিশ্চুপ ভাবে। একটা সময় পর নেশা হয়ে গেলো তিনজনেরই। তিনজনই রীতিমতো টলছে। তখন তাহজিব মুখ খুললো,,
– ইয়ার স্পন্দন ,, প্রেম করে কিভাবে?? তোর তো বেশ অভিজ্ঞতা আছে বুঝাই যায়।
আফিমও মিনতির সুরে বললো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– হ্যাল্প মি ইয়ার,, স্পন্দন। তোর জন্য আমার বোন আছে। তাহজিব আর রুহিরও জমে ক্ষীর। তোরা দুইজন আয়েশ করছিস। আর আমি কিনা এখনো ছিপে মাছ আটকাতে পারলাম না??
স্পন্দন টলতে টলতে বললো,,,
– সো শেম!! দি আফিম আহসান। যে কিনা প্রচন্ডরকম মেয়েবাজ,, মেয়ে পটাতে যে ওস্তাদ,, সে-ই আজ আমার বোনের সামনে ভ্যাবলা। এই??তোর লজ্জা করে না??
– লজ্জা করে তো। আর বুকে ব্যাথাও করে।
আফিমের নিষ্পাপ উত্তর। তখনই তাহজিব হাত ক্ষমা চাওয়ার মতো করে মাথার উপর তুলে বললো,,,
– দোস্ত,,, আমার ভাই স্পন্দন,, তুই আমাদের হ্যাল্প কর প্লিজ।
তখনই আফিম খেঁক করে উঠলো।

– ঐ,, আগে আমাকে হ্যাল্প করতে বল। তোরটা তোকে ভালোবাসে এটা তোর জানা। জাস্ট অভিমান করেছে। কিন্তু আমারটা তো হ্যাঁ ও বলে না,,,নাও বলে না।
তাহজিবের মায়া হলো খুব। টলমল পায়ে আফিমের কাছে এসে আফিমকে বুকে চেপে ধরলো। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে বললো,,
– আহারে!! তুই ভালোবাসা না পেয়ে মাতাল হয়ে গেছিস দোস্ত।
তাহজিবের কান্না দেখে আফিমেরও কান্না কান্না পেলো। সে তাহজিবকে জড়িয়ে ধরে বললো,,
– আমারও তোকে দেখে মেয়েদের মতো কাঁদুনি পাচ্ছে দোস্ত!!
স্পন্দন তখন এসে তাদের কোলাকুলিতে যোগদান করলো।
– আমি মিস যাবো না। আমি দি এস.এ।

আফিম আর তাহজিবের কান্না দেখে মন গললো মাতাল স্পন্দনের।
– শুন,, be a প্রেমিক। ওকে??
তাহজিব বিরক্ত হয়ে ” চ ” ধরনের আওয়াজ করে বললো,,
– বাট কেমনে ম্যান?? হাও??
আফিমও তাল মিলালো টেবিলের উপর মাতা এলিয়ে দিয়ে,,
– ঠিকই তো। কেমনে হয় প্রেমিক?? চালের জায়গায় গম খাইলে হয়?? নাকি বাতাসের জায়গায় হাওয়া খাইলে।
আফিমের কথা শুনে চিন্তায় ডুবে গেলো তাহজিব। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,,
– এই যাহ!! আমি তো চাল আর বাতাস খাই। এখন কি হবে??
আফিম তাহজিবের পিঠে শান্তনার হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। পরক্ষনেই স্পন্দনের কথা শুনে সাহস পেলো।
– তাহলে আর কি!! কালকে এক বস্তা গম আর এক বস্তা হাওয়া নিয়ে আয়।

বিরক্ত হয়ে এ কথা বললো স্পন্দন মাতাল গলায় ভ্রু কুঁচকে। তাহজিব মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো,,
– ওকে,, ওকে। কালকেই ঘরে গম আর হাওয়া এক বস্তা নিয়ে আসবো।
তখনই স্পন্দনের মোবাইল বেজে উঠলো। তাহজিব আর আফিম একে অপরকে ধরে মাতলামি করতে ব্যস্ত। স্পন্দন টলতে টলতে মোবাইল নিয়ে চোখের সামনে ধরলো। অনেক কষ্টের পর ঝাপসা চোখ দিয়েই বুঝলো তার জানের মানুষ,, পরানের মানুষ আফরামনি কল করেছে। স্পন্দন রিসিভ করতে যাবে তখনই ভ্রু কুঁচকে তাকালো আফিম আর তাহজিবের দিকে। ” এদেরকে ভাগাতে হবে ” মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো। এরপর বেশ সিরিয়াস মুখ করে জ্ঞানী বাবার মতো হাত তুলে বললো,,
– এদিকে আসো বাছারা। শুনে যাও প্রেমিক হওয়ার প্রথম স্টেপ।
আফিম আর তাহজিব নিজেদের মাতলামির মাঝে এই কথা শুনে থেমে গেলো। এগিয়ে গেলো মাতালের মতো হেলেঢুলে স্পন্দনের দিকে।

এইমূহুর্তে স্পন্দনকে ফল গাছ আর তাহজিব ও আফিমকে লোভী বাচ্চা মনে হচ্ছে। তবে ব্যাপার না!! সবাই মাতাল তো। স্পন্দন সিরিয়াস ভঙ্গীতে বললো,,
– প্রেমিক হবার প্রথম ধাপ হলো,, be a প্রেমিক।
– অহহহহহ!!!
সবজান্তা জ্ঞানী ছাত্রর মতো শব্দ করে উঠলো আফিম। তাহজিব মুখের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে কি যেন ভাবলো। এরপর বললো,,,,
– প্রেমিক হবার প্রথম ধাপ প্রেমিক হওয়া?? কিন্তু এই প্রথম ধাপ কিভাবে করে??
স্পন্দন ফেসে গেলো গেড়াকলে। ধুপ করে চড় বসিয়ে দিলো তাহজিবের মাথায় বিরক্ত হয়ে। তাহজিব ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বললো,,,
– এটা কি ছিলো??
আফিমও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। স্পন্দন পরক্ষনেই জিহবায় কামড় দিয়ে বললাও,,
– না ইয়ে মানে,,, দেখছিলাম আইডিয়া তোর মাথা থেকে বাড়ি দিলে বের হয় কিনা।
– ওহহ!!
আবারও সবটা বুঝে গেছে মতো আওয়াজ করলো তাহজিব। আফিম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা অবিস্থায় এগিয়ে এসে তাহজিবের পুরো গা,, আশপাশের জায়গা চেক করলো। এরপর হতাশ স্বরে বললো,,
– কোথায় দোস্ত,, কিছু পড়ে নাই মাথা থেকে।
তাহজিবও নাথা নাড়িয়ে বললো,,
– হ্যাঁ তো,,,, পড়ে নাই কিছু।

স্পন্দন দেখলো আবারও কল এসেছে আফরার। কিভাবে এই দুই মাতালকে ভাগাবে তা স্পন্দন মাতাল ভাবতে লাগলো। তখনই ফোনের রিংটোন কানে আসলো। মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো স্পন্দনের। কোনমতে টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,
– গান,,, প্রেমিক হবার প্রথম ধাপ গান। যাও বাবারা,, নিজের প্রেমিকাদের গান শুনাও।
তাহজিব আর আফিম যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। দুজনেই হেলেদুলে বেড়িয়ে এলো বার থেকে। স্পন্দন বত্রিশ দাঁত বের করে হাসি দিলো। হেলতে ঢুলতে কল রিসিভ করলো আফরার। কিন্তু কথা বলার সৌভাগ্য বেচারার ছিলো না। ” হ্যালো ” বলতে না বলতেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো মেঝেতে।
.
.
তাহজিব আর আফিম মাতালের মতো হেলে ঢুলে বারের বাইরে এসে সার্ভেন্টসদের দেখতে পেলো। তাহজিব বললো,,
– রুহি ইনায়াত কোথায়??
তাহজিবের মাতলামো দেখে ভয় পেলেও সার্ভেন্টসরা জানিয়ে দিলো রুহি আর ইনায়াত ছাদে। তাহজিব আর আফিম দুজনেই গলাগলি করে ছাদের জন্য সিড়িতে পা রাখতেই আফিম চিৎকার করে উঠলো।
– স্টপ!!!
আফিমের চিৎকারে তাহজিবও থেমে গেলো।
– কি হলো দোস্ত??
– খালি গলায় গান গাইলে তো কোন লাভ হবে না। গিটার লাগবে,, গিটার। কিন্তু গিটার কই পাবো??
আফসোসের সুরে বললো আফিম। তাহজিব দাঁত কেলিয়ে হাসলো। সার্ভেন্টসকে ডেকে বললো রুম থেকে গিটার নিয়ে আসতে। সার্ভেন্ট গিটার এনে দিলো তাহজিবের হাতে। তাহজিব তা আফিমের হাতে দিয়ে বললো,,
– লেটস গো দোস্ত। তোর জন্য বৌ আনবোই আমরা। দিলওয়ালে দুলহানিয়া জারুর লায়েঙ্গে।

আফিমও বুক ফুলিয়ে তাহজিবের সাথে গলাগলি করে উঠতে লাগলো সিড়ি বেয়ে। উঠতে উঠতে দুজনের কথোপকথন,,
– দোস্ত,, তুই গিটার বাজাবি আমি গাইবো। তোর তো রুহি সেট আছে। আমার টা আগে সেট করে নিই। কেমন??
আফিমের কথা শুনে তাহজিব বললো,
– সরি দোস্ত,, আমি ডিশকাও চালাতে পারি। ডিংডিং চালাতে পারিনা। গিটার আমি বাজাইতে জানিনা।
তাহজিবের কথা শুনে আফিম হেসে বললো,,
– আহারে!! আচ্ছা কান্দিস না। আমি সারাজীবন তোরে গিটার বাজাই দিবো গানের সময়।
– লাবিউ দোস্ত।

তাহজিব আফিমের গালে শব্দ করে চুমু খেলো। দুজনেই কথা বলতে বলতে চলে এলো ছাদের দরজার সামনে।
রান্না শেষ করে ফ্রেশ হয়ে ইনায়াত আর রুহি এসেছে মুক্ত বাতাসে। দুজনেই মেয়েলি আড্ডা দিচ্ছে। তখনই দরজার কাছে ধুরুম করে আওয়াজ হলো। রুহি আর ইনায়াত ফিরে তাকালো। দরজায় হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে আছে আফিম। গিটার নিয়ে পোস দিয়েছে যেন। আর তাহজিব আফিমের উপর ভর ছেড়ে দিয়ে আফিমের কাঁধে মাথা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের মাতালের মতো হেল দোল দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না ইনায়াত আর রুহির যে এরা নেশা করেছে দুজনেই প্রচন্ড রেগে গেলো।

– কমনসেন্স নেই কোন। ঘরে দুটো মেয়ে আছে। আর এর মধ্যে নেশা??
রুহি রাগে গজগজ করতে করতে বললো। তাল মিলালো ইনায়াত।
– লজ্জা শরম বেঁচে চকলেট খেয়ে ফেললে যা হয় আর কি!!
তখনই আফিমের হাতে গিটার চোখে পড়লো রুহির।
– আপি দেখ!! তোকে প্রোপোজ করবে আফিম ভাইয়া।
ইনায়াত রুহির কথা শুনে অবাক হলো।
– যা কি বলছিস??

– ইশশ কি রোমান্টিক!! গিটার বাজিয়ে নায়কের মতো গান গাইবে ভালোবাসার। আর তুই লজ্জায় লাল হবি। আহা!!
রুহির এমন বর্ণনা শুনে না চাইতেও হালকা লজ্জা পেলো ইনায়াত। সত্যিই গাল লাল হলো তার লজ্জায়।
– কিন্তু হাঁদারামের পোষা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো কাবাবের হাড্ডি হয়ে তাহজিবকে কে আসতে বললো??
রুহি রাগে গজগজ করতে করতে বললো।
– দোস্ত শুরু করি??
আফিম প্রশ্ন করলো। কোনমতে সে এই পোসে নিজের ব্যালেন্স রেখেছে। যেকোন সময় মাটিতে ধপাস হয়ে যেতে পারে তার এই জিম করা শরীর। তাহজিব নিজের ব্যালেন্স এর মধ্যেই হারিয়ে আফিমের উপর লুটিয়ে পড়েছে।
– শুরু কর দোস্ত। আমি আছি তোর সাথে।
আফিম বুক ফুলিয়ে গিটারে টান দিলো।
রুহি আর ইনায়াত যখন বিষয়টাকে রোমান্টিক ভাবে ভাবছিলো। তখন তাদের মাথা থেকে সড়ে গেছিলো হয়তো যে আফিম আর তাহজিব মাতাল হয়ে আছে। আর মাতাল অবস্থায় সিনেমাতেই নায়ক গান গাইতে পারে। আসলে ঠিক কেমন দৃশ্য তা হয়তো জানতো না তারা।

আফিম বুক ফুলিয়ে গিটারের কর্ডে উলটা পালটা টান দিয়ে কাকের মতো বেসুরা গলায় ভুলভাল সুরে গাইতে লাগলো,,,
– তোমায় নিয়ে ভাবি না
ভুলতে গেলেও পারিনা
আমার পোড়া কপালে তুমি নেই
এতোটুকু করার পর মাথা চুলকে আফিম বললো,,
– এইরে!! এর পরের লাইন যেন কি দোস্ত??
অতি আনন্দে মাতাল স্বরে ঠিক আফিমের কার্বন কপি করেই সুরহীন,, তালহীন উল্টোপাল্টা গাইতে শুরু করলো,,
– আমার পোড়া কপালে তুমি নেই
তাই মনের দুখে বারে বারে কই
রুহি আমি ভালোবাসি
বৌগো ভালোবাসি

আফিম গিটারে টুং টাং ঝুপুর ঝাপুর টান দিয়েই যাচ্ছে।
এদিকে এদের এই অবস্থা। আর অন্যদিকে রুহি ও ইনায়াত সহ্য করতে না পেরে কান চেপে ধরেছে। কিন্তু তাতেও কানের ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচাতে পারছে না। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে ইনায়াত ধুপধাপ পা ফেলে আফিমকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে এলো। আর চলে আসার সময় আফিমের গায়ে ঠাসঠাস কয়েকটা থাপ্পর মেরে বললো,,
– বেসুরা মাতাল কাওয়া!! মদ গিলে সিনেমার হিরো হয়ে আসছে প্রেম দেখাইতে।
মুখ ঝামটা মেরে চলে গেলো ইনায়াত। রুহিও রাগে গজগজ করতে করতে তাহজিবের সামনে এসে বললো,,
– ফিরুক কালকে তোর জ্ঞান। কান টাইন্ন্যা ছিড়ে নিবো বজ্জাত কোনহানকার ।
রুহিও মুখ ঝামটা মেরে চলে এলো। ইনায়াতের মাইর খেয়ে আফিম তো মাটিতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেছিলোই। রুহির মুখ ঝামটানি দেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে ” ও বৌ ” বলে ডাকতে ডাকতে তাহজিবও জ্ঞান হারালো।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো স্পন্দনের পানির ছিটকায়। মেঝেতে পড়ে থাকা স্পন্দন কোনমতে নিজের চোখ খুলে পিটপিট করে বুঝলো সার্ভেন্ট পানির বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্পন্দন দ্রুত উঠে বসার চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝলো মাথা ভার হয়ে যেন ছিড়ে পড়ে যেতে চাইছে। তবুও নিজের ফর্মাল রূপে ফিরে গম্ভীর মুখে উঠে বসলো স্পন্দন। সার্ভেন্ট বললো,,
– ইনায়াত ম্যাম বলেছে ফ্রেশ হয়ে দ্রুত খাওয়ার টেবিলে না গেলে আপনার বিয়ের শখ আফরা ম্যামকে বলে মিটিয়ে দিবে স্যার।
স্পন্দন প্রথমে সার্ভেন্টের মুখে এই কথা শুনে ” কিইইইই ” বলে বিষ্ময়ে চিৎকার করে উঠলেও পরমূহুর্তে নিজের কাজ বুঝতে পেরে দ্রুত দৌড় লাগালো নিজের রুমে।

একই পদ্ধতিতে আফিম আর তাহজিবের মুখে বোতলের পানি খালি করেছে সার্ভেন্ট ছাদে গিয়ে। ধড়ফড়িয়ে ” আমার বউ ” বলে আর্তনাদ করে উঠে বসলো তাহজিব। তাহজিবের হাত ধরে উঠে বসলো আফিমও। পরমূহুর্তে কালকে রাতের মজার সাজা মাথার ভিতরের ব্যাথায় অনুভব করলো দুজন। সার্ভেন্ট মাথা নিচু করে অস্বস্তি নিয়ে উত্তর দিলো,,
– তাহজিব স্যার!! রুহি ম্যাম বলেছে দ্রুত উঠে নিচে না গেলে দিন দুনিয়া ভুলিয়ে আবারো নতুন করে চেনাবে লাঠি দিয়ে। আর আফিম স্যার,, ইনায়াত ম্যাম বলেছে আপনি কিছু সেকেন্ডে নিচে না নামলে আপনাকে আপনার চাকরি থেকে ফায়ার্ড করে দেবে জোসেফ স্যারকে সব কুকীর্তি জানিয়ে। আর ফ্রেশ হওয়া ছাড়া টেবিলে আপনাদের মুখ না দেখাতেও বলেছে।
সার্ভেন্টের কথা শুনে তাহজিব রেগে এগিয়ে যেতে গিয়েও থেমে গেলো। দ্রুত নেমে নিজের রুমে গেলো। আর আফিমও দ্রুত নেমে নিজের রুমে ঢুকলো। সার্ভেন্ট নিচে নেমে এলো ডাইনিং টেবিলের কাছে যেখানে খাবার
টেবিলে সাজাচ্ছিলো ইনায়াত আর রুহি। সার্ভেন্টকে দেখেই রুহি বললো,,
– স্যারদের মেসেজ দিয়েছো??
সার্ভেন্ট মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো এরপর চলে গেলো।

বেশ খানিকক্ষণ বাদে প্রায় একসাথে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো স্পন্দন,, তাহজিব আর আফিম। কাল রাতে নেশার ঘোরে ঠিক কি কি মাতলামি তারা করেছে কে জানে!! কি যে করেছে তা তাদের জানা নেই। আজ সকালে কামাল ও আসিফ চলে এসেছিলো। তারা বসে আছে টেবিলে। রুহি আর ইনায়াত মুখ গম্ভীর করে বসে আছে খাওয়ার টেবিলে পাশাপাশি। আফিম,, স্পন্দন আর তাহজিব এসে জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করে তাদের শুভ সকাল জানাতে চাইলেও মুখ দেখে সে আশা গুড়ে বালি হয়ে গেলো। তিনজনেই চেয়ার টেনে বসে পড়লো। রুহি আর ইনায়াত কফি এগিয়ে দিলো তিনজনের দিকে। আসিফ আর কামাল সবটাই সার্ভেন্টদের মুখে শুনেছে। তাই স্পন্দন,, আফিম ও তাহজিবের দিকে একটু বাদে বাদেই তাকিয়ে হাসছে মুখ চেপে। আফিম সবে কফি একটু মুখে দিয়েছিলো। তখনই মোবাইল বেজে উঠলো তার। মোবাইল বের করে দেখলো এই শহরেই তাদের যে বাড়ি তার কেয়ারটেকার।আফিম কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকালো মোবাইলের দিকে। তারপর কল রিসিভ করলো আফিম।

– হ্যালো?? হুম বলো।কি হয়েছে??
– হ্যালো স্যার?? আগুন লেগেছে বাসায়।
এতটুকু বলেই কেয়ারটেকার কল কেটে দিলো। কিন্তু আফিম হতবাক হয়ে গেলো। এরপর কল যে কেটে গেছে তা খেয়াল না করেই বলতে লাগলো।
– হোয়াট!!হ্যালো?? হ্যালো??
আফিমের অস্থিরতা দেখে স্পন্দন জিজ্ঞেস করলো
– কি হয়েছে আফিম?? এমন করছো কেন??
আফিম অস্থির ভাবেই জবাব দিলো।
– আমাদের এখানকার বাড়ির কেয়ারটেকার কল করেছিলো। আমাদের এই বাড়িতে আগুন লেগেছে।আমাকে এখনই যেতে হবে।
একথা শুনে তাহজিব আফিম কে সাথে যাবে বললো
– আফিম?? আমরা ও আসছি সাথে।আর রুহির দিকে ফিরে ওকে বললো
– রুহি??তুমি ঘরে সাবধানে থেকো।

কিন্তু রুহি নাকমুখ ফুলিয়ে নিষেধ করে দিলো সাথে সাথেই।
-চুপ। এমনিতেই মাথা খারাপ। আর রাগিও না।আমিও যাবো।
এ কথা শুনে তাহজিব আর দ্বিরুক্তি করলো না।কারণ গতকাল সে আর আফিম কি করেছে তা তাদের মনে নেই।কিন্তু বোঝাই যাচ্ছে যে এমন চূড়ান্ত ভুল কিছু করেছে তারা,,যে রুহি আর ইনায়াত এখনো রেগে আছে।তাই তাদের আর রাগ বাড়ালো না। আসিফ আর কামালকে থাকতে বলা হলো এখানেই। কেননা ইরশাদ আর জন এখনো তাহজিবের বেসমেন্টে আটকানো । বাদবাকি সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। খুব দ্রুত পৌছালো আফিমদের এখানকার বাড়িটায়। আফিম খুব চিন্তায় আর উত্তেজনায় থাকায় ড্রাইভ করলো তাহজিব। আফিমদের বাড়িতে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করেই সবাই নেমে এলো। কিন্তু কোথায় আগুন?? কোথায় কি?? আগুন তো দূরে থাক জনমানুষের চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না। এর উপরে মেইন গেইটে দাড়োয়ান নেই। গেইট পুরোটাই খোলা। তা দেখে অবাক হলো সবাই।

– কি ব্যাপার??
বলে উঠলো আফিম।
– এখানে তো কোনো আগুন নেই!!
তাহজিবও বললো। তখনই স্পন্দন বলে উঠলো,,
– এটা কোন ট্র‍্যাপ না তো??
তাহজিব আর আফিম স্পন্দনের দিকে তাকালো। স্পন্দন দ্রুত মোবাইল বের করে কল করতে লাগলো কামালের নাম্বারে। তখনই আর্তনাদ করে উঠলো তাহজিব।
– রুহি আর ইনায়াত কোথায়??

চোখ ঘুরিয়ে তিনজনেই দেখলো রুহি আর ইনায়াত বাড়ির খোলা দরজার প্রায় কাছাকাছি। গাড়ি থেকে নেমেই যে তারা এগিয়ে গেছে কোন কিছু না ভেবে তা বুঝাই যাচ্ছে। আসিফ কিংবা কামালকে কল করবার কথা ভুলে তিন ছেলেই দৌড় লাগালো রুহি আর ইনায়াতের দিকে। নামধরে ডাকাও সম্ভব না। কেননা এটা যদি ট্র‍্যাপ হয়ে থাকে। তাহলে চিৎকার শুনে সতর্ক হয়ে যাবে শত্রুপক্ষ। রুহি আর ইনায়াত দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে থেকে ঘরের পরিস্থিতি কিছুই বোঝা যাচ্ছে না,,,পুরো ঘর অন্ধকার। রুমের সবগুলো জানলার থাই গ্লাস বন্ধ,, তার ওপর মোটা পর্দা টেনে দেওয়া। আর রুমের ভিতরেও কোন লাইট জ্বালানো নেই। তাই দরজা খোলা থাকলেও ঘরের ভিতর কিছু বুঝা যাচ্ছে না। তা দেখে রুহি বলে উঠলো,,

– আপু,, ওদের জন্য দাঁড়াই?? আমরা একা যাওয়া কি ঠিক??তুইই ভাব??
– আরেহ ব্যাপার না!! তুই দাঁড়া। আমি গিয়ে দেখছি।
এটুকু বলেই রুহিকে আর কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো ইনায়াত। কিছু সেকেন্ড যেতে না যেতেই বিকট আওয়াজ হলো পরপর দুটো। সাথে চিৎকার দিলো ইনায়াত। তখনই তিনছেলে দরজার কাছাকাছি এসে থমকে গেলো। স্পন্দন
“বোন” বলে চিৎকার করে উঠলো। আফিম আর কিছুই ভাবতে পারলো না। ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই তাহজিব ধরে ফেললো আফিমকে। রুহিও হতবাক। দরজায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার ঘরে ইনায়াতের অবস্থা বুঝা যাচ্ছে না।

কি হলো ইনায়াতের?? আওয়াজ দুটো কিসের ছিলো?? ইনায়াত ঠিক আছে তো?? লেখিকা কিছুই জানেনা। জানলেও বলবে না। আপনাদের ধারণা জানতে চাই।২৩৮০ শব্দের অর্থাৎ ২ পর্বের সমান গল্প দিয়ে না দেওয়াটা পুষিয়ে দিলাম। টাটা,, বাই বাই।
আফিম তাহজিবকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে গেলো ভিতরে। তাহজিব আটকাতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আফিম অন্ধকারে ছুটে যেতে যেতেই লাইট জ্বলে উঠলো। অবাক হলো উপস্থিত সবাই। পুরো ঘর কোন অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো। ইনায়াত অবশ্য অতোদিকে দেখছে না। ও জমে দাঁড়িয়ে আছে নিজের জায়গায়। হয়তো প্রচন্ড ভয়ে। আফিম আগপিছ না ভেবে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ইনায়াতকে বুকে।
– ইটস ওকে ইনায়াত,,, দেখো উপরে,,, জায়ান্ট বেলুন ছিলো ওটা। ইটস ওকে।

ইনায়াত আফিমের কথা শুনে রোবটের মতো একবার উপরে তাকিয়ে দেখলো। পরক্ষনেই আবারও আফিমের বুকে গুটিশুটি মেরে লেগে থাকলো। রুহি,, তাহজিব আর স্পন্দন ভিতরে এলো। ভেতর ঘর থেকে লাবিবা কান ধরে নিয়ে আসলো আফরাকে। আর জোসেফ তাদের পিছু পিছু আসছে।
– কে করেছে এসব?? কেয়ারটেকার??? কেয়ারটেকার??
লাবিবাদের না দেখেই চিৎকার করে উঠলো আফিম রেগেমেগে। তখনই লাবিবাদেরকে দেখলো স্পন্দন,, রুহি,, তাহজিব আর আফিম। অবাক হলো সবাই। ইনায়াত ইতোমধ্যেই শান্ত হয়ে আফিমের বুক থেকে সড়ে এসেছে।
– এই বাঁদর মেয়েকে ধর,,, ঐ করেছে সব।আফরার কান ধরে বললো লাবিবা। আফরা কান ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বললো,,

– আহ মা!! লাগছে তো। ছাড়ো না।
স্পন্দন তো আফরাকে দেখেই দিন দুনিয়া ভুলে বত্রিশ দাঁত দেখিয়ে তাকিয়ে আছে ভ্যাবলা বনে। জোসেফ স্পন্দনকে জিজ্ঞেস করলো,
– ভালো আছো স্পন্দন??
স্পন্দনের তো হুশই নেই। স্পন্দন কোন সাড়া দেয়নি দেখে সবাই স্পন্দনের দিকে তাকালো। লজ্জা পেলো আফরা নিজের দিকে স্পন্দনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তাহজিব মুখ টিপে হাসছিলো। রুহি কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে ইশারায় না হাসতে বললো। ইনায়াত নিজের ভাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে। স্পন্দনের কানের কাছে গিয়ে দিলো এক চিৎকার,,
– ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া!!!
স্পন্দনের হুশ ফিরলো।
– হ্যাঁ?? হ্যাঁ,,,,কি হয়েছে??
সবাই মুখ চেপে হাসতে লাগলো। জোসেফ বললো,,
– কিচ্ছু হয়নি। বসো সবাই।
আফিম তখনই এগিয়ে এসে বললো,,

– মা,, বাবা,, কাল একটা পিচ্চি সাহসী মেয়ের কথা বলেছি না?? ওই যে ও।
রুহির দিকে তাকালো লাবিবা। এগিয়ে গেলো রুহির দিকে হাসি মুখে। রুহিকে বুকে জড়িয়ে ধরলো আদরে। রুহিও জড়িয়ে ধরলো।
– বাহ!! কি মিষ্টি মেয়ে!! যেন ছোট্ট ইনায়াত একটা।
ইনায়াত আর স্পন্দন হাসলো। মুখে হাসি ফুঁটলো তাহজিবেরও। তখনই লাবিবা বললো,,,
– ইশশ!! আমার আরেকটা ছেলে থাকলে তার জন্য তোমাকে নিয়ে আসতাম বিয়ে করিয়ে। আফিম তো ইনায়াতের জন্য।
এই কথা শুনে মাথায় বাজ পড়লো তাহজিবের। দ্রুত দৌড়ে এসে রুহির পাশে দাঁড়িয়ে রুহির হাত ধরে বললো,,
– আন্টি ও আমার উডবি।

হাসলো লাবিবা তাহজিবের কান্ড দেখে। আফিম কালই সবার পরিচয় আর সবটা ঘটনা খুলে বলেছে তাদের।
– সরি বাবা,, কিছু মনে করো না।
তাহজিব মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বুঝালো ঠিকই যে সে কিছু মনে করেনি। কিন্তু আসলে সে তখনও হাত ধরে ছিলো রুহির।
– কেমন লাগলো সারপ্রাইজ মা??
জোসেফ জানতে চাইলো ইনায়াতের কাছে। ইনায়াত মুচকি হেসে বললো,,
– অনেক ভালো স্যার।
ভ্রু কুঁচকে ফেললো জোসেফ আর লাবিবা।
– তুই আমাদের স্যার আর ম্যাম ডাকিস কেন আজকাল??
ইনায়াত একবার আফিমের দিকে তাকালো। আফিম ইশারায় কিছু না বলতে বললো। কানে ধরে সরিও বললো। কিন্তু কাল বেসুরা গান শুনিয়ে কানের বারোটা বাজানোর প্রতিশোধ নিতে মন চাইলো ইনায়াতের। শয়তানি হেসে বললো,,
– আফিম স্যার মানা করেছে আংকেল।

জোসেফ আর লাবিবা কটমটিয়ে তাকালো আফিমের দিকে। আফিমের মুখ শুকিয়ে এলো। যেন সে নিষ্পাপ শিশু। ইনায়াত বলতে লাগলো আরো কিছু।তা-ও বানিয়ে বানিয়ে,,
– স্যার আমাকে বের করে দিবে বলেছে,,, কারণ তোমাদের সাথে সম্পর্ক জুড়ে আমি নাকি ন্যাকামো করছি। আফরাকে যাতে কাছে ঘেষতে না দিই। আমি নাকি ভালো না। আমি বিরক্তিকর।
ইনায়াতের এতো সুন্দর মিথ্যাগুলো শুনে আফিম তো হা। সে তো ইনায়াতকে সফট কেক ভেবেছিলো। কেকটা যে স্পাইসি হবে কে জানতো?? স্পন্দন আর তাহজিব মুখ চেপে হাসছে। আফিম তাদের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলালো যেন।
– তোমরা বসো না।

ছেলেরা সবাই বসলো সোফায়। জোসেফ বসতে যাবে এমন সময় ইনায়াত বললো,,
– অফিসের কি হবে?? আমরা সবাই তো এখানে।
আফিম বিরক্ত হয়ে তাকালো। মেয়েটা কি অফিস কাজ এসব ছাড়া বুঝে না?? জোসেফ হেসে বললো,,,
– আরেহ অফিসের ছুটি দিয়েছি দুই সপ্তাহের । কতো কাজ করবি বলতো?? আফিমকে সামলানো কি কম কষ্টের??
ইনায়াত শয়তানি হেসে আফিমের দিকে তাকিয়েই বললো,,
– হ্যাঁ আংকেল,,, এমন বুড়া বাচ্চা সামলানো কি কম কঠিন??
আফিম কটমট করে তাকালো ইনায়াতের দিকে। তাকে অপমান করা??? স্পন্দন আর তাহজিব ফিক করে হেসে ফেললো। স্পন্দন বিড়বিড় করে বললো,,
– বুড়া,,
তাহজিব বললো,,
– বাচ্চা,,
আফিম ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,,,
– আমরা সেইম এইজের।

তা শুনে স্পন্দন আর তাহজিবের টাই টাই ফুস। তা দেখে আফিম বিশ্বজয়ী হাসি দিলো।
একদিকে জোসেফ ছেলেদের সাথে বিজনেস আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে। অন্যদিকে আফরা,, ইনায়াত আর রুহি যেন সেকেন্ডেই দুধে আমে মিশে গেছে। তাদের খিলখিল হাসির আওয়াজ মুগ্ধতা নিয়ে শুনছে তাদের প্রেমিকরা আলোচনার মাঝেই। তখনই লাবিবা রান্নাঘর থেকে এলো। তার পিছু পিছু এলো সার্ভেন্ট ট্রে নিয়ে। সবার জন্য খাবার আছে তাতে। লাবিবা তা টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,,
– তোমরা সবাই কটাদিন এখানেই থাকবে কেমন?? ব্যাপারটা পিকনিক বা ভ্যাকেশন ভেবে নাও।
জোসেফও বলল,,
– হ্যাঁ,, কটাদিন আনন্দ করো।
কথাটা আফরা ইতোমধ্যেই রুহি আর ইনায়াতকে বলে ফেলেছে। তারা দুজনেই রাজি। কথাটা ছেলেদের কানে যেতেই আফিমও অনুরোধ করলো। স্পন্দন হালকা অস্বস্তি নিয়ে আফরার দিকে তাকালো। আফরা কিউট ফেইস করে তাকালো স্পন্দনের দিকে। স্পন্দন রাজি হয়ে গেলো। তাহজিব রুহির দিকে তাকাতেই রুহি চোখ রাগিয়ে তাকালো। আর রাজি হতে বললো ইশারায়। তাহজিবও সুবোধ বালকের মতো রাজি হয়ে গেলো। স্পন্দন মুখ চেপে হেসে বললো বিড়বিড় করে,,

– জরু কা,,
– গোলাম।
লাইন সম্পন্ন করলো আফিম। তাহজিব সেদিকে তাকিয়ে বললো,,
– স্পন্দন তো থাকছো না?? বোনকে নিয়েই চলে যাবে??
স্পন্দন কেশে উঠলো। আফিমও এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। হবে নাই বা কেন?? বুঝতে তাদের কষ্ট হয়নি যে এটা তাহজিবের দেওয়া স্পেশাল বাঁশ ছিলো আফিম ও স্পন্দনের জন্য। কারণ স্পন্দন আফরাকে দেখতেই থেকে গেছে। আর আফিম ইনায়াতকে দেখতেই স্পন্দনকে থাকবার অনুরোধ করছে। তখনই লাবিবা বললো,,
– আসিফ আর কামালকেও ডাকিয়ে নাও এক্ষুনি। আমি সবার জন্য রুম খুলে দিয়েছি।
তখনই আফরা বলে উঠলো,,,
– আমরা মেয়েরা এক ঘরে শুবো।
তা শুনে লাবিবা হেসে বললো,,
– ঠিক আছে বাবা,, ঘুমাস।

তখনই আফিম তাকালো তাহজিবের দিকে। বিড়বিড় করে বললো,,
– ইরশাদ আর জনকে শুধুমাত্র গার্ডের ভরসায় রাখবো??
তাহজিবও বিড়বিড় করে বললো,,
– অসম্ভব।
স্পন্দন বিড়বিড় করে বললো,,
– অতো ভাবনার কি আছে?? আজকেই খেলা খতম হোক। মেয়েরা আর কখনো ওদের কথা জানবে না। ভয় পাবে জানলে।
তাহজিব,, আফিম স্পন্দনের দিকে।তাকালো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো তিনজনেই এই আইডিয়ায়। এরপর আফিম বলে উঠলো,,
– বাবা,, একটা কাজ আছে আমাদের। ওটা শেষ করেই আসছি।
রুহি এতোক্ষন ছেলেদের বিড়বিড় করে বলা কথা না শুনলেও পর্যবেক্ষণ করলো তাদের ভালো ভাবে। ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,,

– আপি,, আমার মনে হচ্ছে ওরা ইরশাদদের ব্যবস্থা করতে যাবে।
এই কথা শুনে আফরা আর ইনায়াত তাকালো ছেলেদের দিকে। ইনায়াত কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,,
– আন্টি,,, আমাদেরও কাজ আছে। একটু বাইরে যাবো। আফরা আপুকে নিয়ে যাই??
অবাক হলো আফরা আর রুহি। ছেলেরাও অবাক। কি হলো এটা??
লাবিবা হেসে বললো,,
– তো কি হয়েছে?? নিয়ে যা।
ছেলে আর মেয়েরা বের হয়ে এলো জোসেফ আর লাবিবাকে বলে। বাইরে এসে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আফিম জিজ্ঞেস করলো,,
– কোথায় যাচ্ছ তোমরা??
ইনায়াত বাঁকা হেসে বললো,,
– ইরশাদ এর বারোটা বাজাবে তোমরা আমরা দেখবো না??
ছেলেরা তো অবাক।
– তোমরা কিভাবে জানো??
তাহজিব জিজ্ঞেস করলো,,
– আমি কমিশনার এর মেয়ে।

রুহি নিজের জামার অদৃশ্য কলার ধরে ভাব নিয়ে বললো। মেয়েরা ভাব নিয়ে উঠলো এক গাড়িতে। ছেলেরা অন্য গাড়িতে উঠলো। মেয়েদের গাড়ি ইনায়াত ড্রাইভ করছে। আর ছেলেদের গাড়ি তাহজিব।
দুটো গাড়িই এসে পৌছালো তাহজিবের বাড়িতে। স্পন্দন কল করে বলে রেখেছিলো আসিফকে সব কিছু রেডি করতে। মেয়েরা বাসার ভিতর আগে ঢুকলো। তাদের পিছু পিছু ছেলেরা। সবাই গেলো বেসমেন্টে। বেসমেন্টটাও রুমের মতো সাজানো। শোফা আছে,, টিভি আছে। মেয়েরা গিয়ে দেখলো জন আর ইরশাদের হুশ নেই। মাতালের মতো টলছে। আফরা জিজ্ঞেস করলো,,
– এরা টলছে কেন??
স্পন্দন উত্তর দিলো,,
– ওদের ড্রাগস দিয়েছি। যাতে হুশ না থাকে।
ছেলেরা গিয়ে বসলো সোফায় তিনজনই। মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে।
– রুহি?? এরা কাদের তুলে নিয়ে গেছে??
জানতে চাইলো ইনায়াত। এমন একটা অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে অবাক হলো আফরা আর রুহি। তবুও রুহি জবাব দিলো,,,
– আমাদেরকে,,

– তাহলে এদের শাস্তিও তো আমাদের পছন্দের হওয়া দরকার তাই না??
শয়তানি হেসে বললো ইনায়াত। আফরা আর রুহি তাকালো ইনায়াতের দিকে। ইনায়াত দুজনকে ইশারায় কাছে ডাকলো। রুহি আর আফরা কান এগিয়ে দিলো। ইনায়াত নিজের প্ল্যানিং বলতে লাগলো যা সে কাল রাতেই ভেবে রেখেছে। ছেলেরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেয়েদের দিকে।
– কি ব্যাপার??
বললো স্পন্দন।
– এরা কি নিয়ে ফুসুরফাসুর করছে??
জানতে চাইলো তাহজিব।
– কুচ তো লোচা হে।
বললো আফিম।
আসিফ আর কামাল গার্ডদের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো। তারা নীরব দর্শক। মেয়েরা ফুসুরফাসুর ছেড়ে ছেলেদের দিকে ঘুরে তাকালো।
– ভাইয়া!! আমরা এদের শাস্তি দিতে চাই,, কিছুটা এঞ্জয় করতে চাই।
ইনায়াতের স্পষ্ট আবেদন। চমকে উঠলো তিন ছেলে। তিনজন ছেলেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে যেন আলোচনা করে নিলো কিছু একটা। পরক্ষণেই স্পন্দন বললো,,

– ওকে!!
– তবে আমাদের গার্ডস,, আসিফ ভাইয়া আর কামাল ভাইয়ার সাহায্য দরকার।
বললো রুহি। ছেলেরা আরো অবাক হলো। তবে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
আফরা ডাকলো কামালকে।
– কামাল ভাই,, এদিকে আসুন। আসিফ ভাই আপনিও।
কামাল আর আসিফ নিজেরাও অবাক। তবুও এগিয়ে এলো। ইনায়াত তাদের কানে কানে কিছু একটা বললো। এরপর সড়ে দাঁড়িয়ে বললো,,
– পারবেন তো যোগাড় করতে??
আসিফ আর কামালের মুখ হা। আসিফ কাঁপা গলায় বললো,,
– সত্যিই লাগবে??
– হ্যাঁ,, লাগবে।

রুহি বললো। আসিফ আর কামাল কিছু গার্ডস নিয়ে বের হয়ে গেলো বেসমেন্ট থেকে। ছেলেরা অবাক,, কি হচ্ছে তা জানা নেই। মেয়েরা পৈশাচিক এক হাসি দিলো। যা দেখে ছেলেদের গা শিউরে উঠলো।
প্রায় ৪০ মিনিট পর আসিফ এলো খালি হাতেই। কামাল এলো ব্যাগ নিয়ে হাতে। তার পিছনে গার্ডসদের হাতেও ব্যাগপত্র দেখা যাচ্ছে শপিংয়ের। আরো কিছু অচেনা মুখ দেখা যাচ্ছে। মেয়েরাও এতোক্ষন সোফায় বসেছিল। আসিফ আর কামালকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলো খুশীতে লাফিয়ে।
– আসিফ ভাই?? পেয়েছেন??
জানতে চাইলো ইনায়াত।
– হ্যাঁ পেয়েছি।
– কামাল ভাই,, এনেছেন??
– এনেছি বোন। কিন্তু তোমরা কি শিউর এটা করবে??
প্রশ্নটা করে কামাল একটা শুকনো ঢোক গিললো। আসিফ ও কামালের মুখের ভয় স্পষ্ট। ছেলেরা কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না। মেয়ে তিনজন একসাথে উত্তর দিলো,,

– হ্যাঁ,, আমরা শিউর। ওদের রুমে পাঠিয়ে দিন।
কামাল গার্ডদের ব্যাগপত্র নিয়ে সামনের ছোট্ট একটা রুমে পাঠিয়ে দিলো ইরশাদ ও জনকে। অচেনা মুখগুলোও চলে গেলো ঐ রুমে। মেয়েরা এসে বসলো আবারও।সোফায়। নিজেদের মধ্যেই মেয়েলি গল্প চালিয়ে যেতে কাগলো। হঠাৎই আফরা চিৎকার করে বলে উঠলো,,
– কামাল ভাই,, আসিফ ভাই,, পপকর্ন আর ঠান্ডা হবে??
কামাল আর আসিফ ইতোমধ্যেই অস্বস্তি আর ভয়ে ছিলো। এই কথা শুনে অবাক হলো। মেয়েগুলো কি রে বাবা?? এমন আইডিয়া বের করলো?? আর এর উপর পপকর্ন আর ঠান্ডা চাইছে?? তবুও আসিফ মাথা নাড়িয়ে বললো,,
– হবে না কেন?? দুনিয়ার সবই হবে।
– তাহলে সবার জন্য নিয়ে আসুন। আপনাদের জন্য সহ কিন্তু।
কামাল আর আসিফ মুখ চাওয়া চাওয়ি করে চলে গেলো পপকর্ন আর ঠান্ডা আনতে। ছেলেরা আন্দাজ করে নিয়েছে ইতোমধ্যে। তারা ভাবছে ইরশাদ ও জনকে হয়তো অপমান করা হবে। কিন্তু তারা জানেনা তারা ভুল।

প্রায় ঘন্টাখানেক পর সেই অচেনা ছেলে মুখ গুলো বের হয়ে এলো ঐ বন্ধ রুম থেকে। ইনায়াত স্পন্দনের কাছে গিয়ে বললো,,
– ভাই এদের পে করো। এরা বিউটেশিয়ান।
স্পন্দন চুপচাপ পেমেন্ট করে দিলো নগদ টাকা দিয়ে । ছেলেরা এখন সত্যিই কৌতুহলী। আফরা গার্ডসদের দিকে ফিরে বললো,,
– কি ব্যাপার?? ইরশাদ আর জনকে বাইরে আনো।
গার্ডসরা চলে গেলো রুমের ভিতর। ইরশাদ আর জনকে বাইরে আনা হলো। সবার চোখ ছানাবড়া। ইরশাদ আর জনকে দেখে একদম সেই লাগছে। মুখে দাড়ি নেই,, গোঁফ নেই। উইগ সুন্দর করে নায়িকার মতো পড়ানো। মুখে সুন্দর মেকাপ। গায়ে উত্তেজক মেয়েলি জামা।

ছেলেরা দেখে হা। ইরশাদ আর জন যেন একদম মেয়ে হয়ে গেছে বিউটেশিয়ানদের হাতের কামালে। তখনই রুহি ইরশাদ আর জনের সামনে গিয়ে বললো,,
– এবার হবে খেলা।
– আসিফ ভাইয়া!! যাও। তাদের নিয়ে এসো। এর আগে গার্ডসরা যান,, এই কীট দুটোকে ফেলে আসুন ঐ রুমে।
গার্ডরা ইনায়াতের কথা মতোই কাজ করলো। আসিফ তখনও দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে আফরা বললো,,
– কি ব্যাপার ভাইয়া?? ডাকুন তাদের।
– তুমি শিউর বোন??
আসিফ ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলো। মেয়েরা সবাই হাসি দিয়ে সম্মতি জানালো। আসিফও আর কি করবে?? বাইরে গিয়ে নিয়ে আসলো ভিতরে অতি কাঙ্ক্ষিত মানুষগুলোকে। যাদের আনতেই আদেশ করএছে মেয়েরা তাকে। রুহি আর আফরা গিয়ে নিজ নিজ লাভ পার্টনারের কাছে গিয়ে হসলো। ইনায়াত সদ্য ঘরের ভিতর আনা ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে বললো,,

– কতো টাইম আপনারা কাজ করবেন আর কতো টা সাউন্ড এফেক্ট পাবো। তার উপর নির্ভর করে এমন একটা টাকার এমাউন্ট দেবো যা অনেক কষ্টের পর আর্ন হয় আপনাদের।
ছেলেগুলো হাসিমুখে মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলো। ইনায়াত হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো রুম। ছেলেগুলো চলে গেলো রুমের ভেতর। ভয়ার্ত আসিফ আর কামালের হাত টেনে নিয়ে গিয়ে একটা খালি সোফায় বসালো। আর তাদের মাঝখানে বসলো সে নিজে। হাতে তুলে নিলো পপকর্ণ।
একটু বাদেই রুমের ভিতর থেকে ভেসে আসলো গগন কাঁপানো আর্তনাদ। ইরশাদ আর জনের চিৎকার যেন পুরো রুম ভারি হয়ে উঠেছে ক্রমশ। ছেলেদের বুঝতে কষ্ট হলো না যে ভিতরে আসলে কি হচ্ছে। ইরশাদদের মেয়ে সাজানো,,, ছেলেগুলোকে রুমে টাকা দিবে বলে ঢুকানো আর এরপর এই আর্ত্নাদ বুঝতে কষ্ট হলো না ছেলেদের। তবুও কাঁপা স্বরে তাহজিব জিজ্ঞেস করলো,,

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২৬+২৭

– এসব কি হচ্ছে?? অরা কারা ছিলো??
– কেন?? ওরা গে এস্কোর্ট।
কথাটা শুনেই চমকে উঠলো স্পন্দন,, আফিম আর তাহজিব। তিনজন তিনজনের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। মেয়েদের মাথায় এমন ভয়ানক নিষ্ঠুর কল্পনা আসবে ভাবতে পারেনি তারা।
– এটা কার আইডিয়া??
আবারও জানতে চাইলো তাহজিব। আফরা পপকর্ন খেতে খেতে বললো,,
– কেন?? ইনায়াতের।
সবাই ঝট করে তাকালো ইনায়াতের দিকে। যে চোখ বন্ধ করে আয়েশ করে পপকর্ন খাচ্ছে। তাকে দেখলে কেও বলিতে পারবে না সে কি করছে। দেখে তো মনে হচ্ছে কোন সুন্দর মিউজিক উপভোগ করছে। আহা!! আহা!!

প্রায় দেড় ঘন্টা পর চিৎকার থেমে গেলো একদমই। কিছু মিনিট বাদে বের হয়ে এলো ছেলেগুলো ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে। ইনায়াত উঠে তাদের কাছে গেলো। স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
– ভাইয়া!! এদের দুহাত ভরে টাকা দাও।
স্পন্দন গার্ডকে বলে এক লাখ টাকা তুলে দিলো সেই ৪ জন এস্কর্টের হাতে। তারা খুশী মনে বের হয়ে গেলো। মেয়েরা উঠে দাঁড়ালো।
– আমাদের কাজ শেষ। এবার যা ইচ্ছে তোমরা করো। আমরা রুহির কিছু জামা প্যাকিং করতে গেলাম। আয়রে রুহি!!
বলেই ইনায়াত বের হয়ে এলো। আফরা আর রুহিও বের হয়ে এলো ইনায়াতের পিছু পিছু। ছেলেরা এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। স্পন্দন গার্ডসকে ইশারায় ডাকলো,,,
– অবস্থা কি দেখো তো।
গার্ড চারজন ঐ রুমে ঢুকলো। তবে সেকেন্ড বাদেই দ্রুত গার্ডগুলো বের হয়ে এলো। একটা গার্ড তো রীতিমতো কোণায় গিয়ে বমিও করে ফেলেছে এক গাল। তা দেখে শুকনা ঢোক গিকলো তিন ছেলে। এমনই কি বাজে অবস্থা যে গার্ডদের সহ্য হল না??

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৩০+৩১