ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৩০+৩১

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৩০+৩১
মৌমি দত্ত

রুহির জামা কাপড় নিচ্ছে রুহি। আর খাটে বসে গল্প করছে আফরা আর ইনায়াত। গল্পে রুহিও আছে। এমন সময় রুমে ঢুকলো আসিফ,, কামাল,, স্পন্দন,, তাহজিব আর আফিম। তারা এখন স্বাভাবিক। কেননা, নিচে ইরশাদ আর জনকে গার্ডরা জীবন্ত আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এখন সবাই আফিমদের বাসায় যাবে। আসিফ সহ সবাইকে রুমে ঢুকতে দেখে রুহি দাঁড়িয়ে পড়লো,,
– এসে গেছো তোমরা?? ভালো করেছো। আসিফ ভাই,, জলদি প্যাকিং করে নাও। আন্টি কিন্তু জলদি পৌছাতে কল করেছে। আর শুনো,, আমি তোমার কাপড় চোপড় প্যাকিং করে নিয়েছি। দেখে নাও আর কিছু লাগবে নাকি।

তাহজিব আর রুহিকে স্পেস দিতে সবাই চুপচাপ বের হয়ে এলো। তাহজিবের মুখে হাসি ফুঁটেছে। এমন ভাবে তার সবকিছুর খেয়াল রাখবে কে জানতো?? ইনায়াত যদি কখনো ভালোবেসেও ফেলতো তাহজিবকে,, তবুও কি পারতো এভাবে গভীর ভাবে নিজের মাঝে তাহজিবকে মিশিয়ে নিতে?? সবাই বের হয়ে গেছে দেখে রুহি লজ্জা পেয়ে বের হয়ে আসতে চাইলো রুম থেকে। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা তাহজিব রুহির লজ্জা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসলো। রুহি দরজার কাছাকাছি যেতেই হাত টেনে আটকে দিলো তাহজিব। আচমকা টানে রুহি গিয়ে পড়লো তাহজিবের বুকে। ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকালো রুহি। গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মোহনীয় লাগছে রুহিকে। তাহজিব ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে। তাহজিব মুখ এগিয়ে নিলো রুহির কাছে। চোখ বন্ধ করে ফেললো রুহি লজ্জায়। তাহজিবের ঠোঁট জোড়া ভালোবেসে আঁকড়ে ধরলো রুহির নরম ঠোঁট জোড়া। গা শিউরে উঠলো রুহির। তাহজিবকে আলতো ধাক্কা দিয়ে সড়ে আসলো রুহি। মাথা নিচু করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো রুহি। চঞ্চল চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো লজ্জা ঢাকতে। তাহজিব তা বুঝতে পেরে এগিয়ে আসতে গেলেই রুহি দ্রুত পায়ে গিয়ে দাঁড়ালো খাটের কাছে। খাটে বসে রুহি ভাঁজ করা কাপড়গুলোই ভাঁজ করতে লাগলো অগোছালো হাতে। তাহজিব বাঁকা হেসে কাছে এগিয়ে আসলো। এক টানে টেনে নিলো রুহির হাতের কাপড়।

রুহি চমকালেও তাকালো না মুখ তুলে তাহজিবের দিকে। তাহজিব কাপড়টা খাটের অন্য কিনারে ছুড়ে দিলো। ঝুঁকে এলো বসে থাকা রুহির কাছে। ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে চিবুক ধরে মুখ তুললো নিজের বরাবর। রুহি চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। তাহজিব আবারও নেশাগ্রস্ত। রুহির ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো আবারও। ভালোবাসার পরশে রুহিও বাঁধা দিলো না। রুহি খাটে শুয়ে পড়লো। তাহজিবও নিজের ভর ছেড়ে দিলো রুহির উপর। রুহির হাত চেপে ধরলো খাটে। দু’টো মানুষ মিলে মিশে যাচ্ছে। ভালোবাসায় মত্ত রুহির মাথায় হঠাৎ নাড়া দিলো এক প্রশ্ন,, ” ইনায়াতকে সত্যিই ভুলে তাহজিব কি আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছে?? নাকি আমাকে শুধুই মেনে নিয়েছে নিজ জীবনে?? ”

রুহির প্রশ্নটা মনে আসতেই রেসপন্স করা বন্ধ করে দিলো। তাহজিব বিরক্ত হয়ে রুহিকে নিজের সাথে আরো চেপে ধরলো। কিন্তু রুহি রেসপন্স করছে না। রুহি তাহজিবকে ধাক্কাতে লাগলো। তাহজিবের মাথায় আসলো রুহির কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। তাহজিব দ্রুত সড়ে এলো রুহির থেকে।
– আর ইউ অলরাইট??
তাহজিব জানতে চাইলো রুহির কাঁধ ধরে। রুহি নিঃশব্দে তাহজিবের হাত ছাড়িয়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে। তাহজিব ভ্রু কুঁচকে তাকালো রুহির চলে যাওয়ার দিকে। পরক্ষনেই হেসে বললো,,
– দরজা খোলা দেখে লজ্জা পেয়েছে আই থিংক। আর আমারও এমন ভাবে ওকে স্পর্শ করা ঠিক না। খুব দ্রুত তোমাকে আমার করতে হবে রুহি রানী।
বলেই মাথা চুলকে মিষ্টি হাসলো তাহজিব।

তাহজিবদের স্পেস দিয়ে নিচে নেমে এসেছে আফরা,, স্পন্দন,, আফিম ও ইনায়াত। কামাল আসিফের রুমে। কামালের জন্য আসিফ প্যাকিং করে নেবে বলেছে। দুজনে ইতোমধ্যেই বন্ধু হয়ে গেছে।
আফিমের মাথায় বুদ্ধি এলো ইনায়াতের সাথে সময় কাটানোর। তখনই আফরাকে ইশারা করলো যেন স্পন্দনকে সামলে নেয়। আফরা চোখের ইশারায় আস্বস্ত করলো। ইনায়াত মোবাইল টিপছিলো। হঠাৎ এক জোড়া হাত তাকে টেনে নিলো পাশেই থাকা খালি রুমে। এই রুমটায় গতকাল আফিমকে থাকতে দেওয়া হয়েছিলো। আফিম ইনায়াতকে টেনে এনে দেওয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড় করালো। ইনায়াত হঠাৎ এমন কাজে ভড়কে গেলো। পরক্ষনেই সবটা বুঝতে পেরে ইনায়াত সংকোচে ও ভয়ে কিছু বলতে যাবে। তখনই আফিম সড়ে দাঁড়ালো ইনায়াতের থেকে। বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে রইলো ইনায়াতের থেকে অনেকটা দূরে। ইনায়াত মাথা তুলে সেদিকে একবার তাকালো। তবে তেমন কিছু বললো না। আবারও মাথা নামিয়ে মেঝেতে নখ খুটতে লাগলো। সেদিকে তাকিয়ে আফিম বললো,,

– আর ইউ নার্ভাস??
চমকে তাকালো ইনায়াত। যেন চোর ধরা পড়েছে। আটকে আটকে বললো ইনায়াত,,
– আমি কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমি তো জানিনা ভালোবাসা কি। তাই আর কি,,,
ইনায়াতের কথা শুনে মুচকি হাসলো আফিম। এগিয়ে আসলো একদম ইনায়াতের কাছে। ইনায়াতের মুখের উপর শ্বাস আছড়ে পড়ছে আফিমের। চমকে মাথা তুলে তাকাতেই ইনায়াতের চোখ আটকে গেলো আফিমের চোখে। যেখানে এমন কিছু ছিলো যা অশ্লীল বা বিকৃত ইচ্ছে বলা যায় না। আফিম ফুঁ দিলো ইনায়াতের মুখে। ইনায়াত চোখ বন্ধ করে নিলো।
– ইনায়াত?? এতো কাছে আছি আমি তোমার?? অস্বস্তি হচ্ছে??
প্রশ্ন করলো আফিম। ইনায়াত দ্রুত চোখ খুলে তাকিয়ে রইলো ড্যাবড্যাব করে। মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে না জানালো। আফিম আবারও হাসি উপহার দিলো ইনায়াতকে।

– এটা ছিলো ভরসা। তুমি নিজের অজান্তেই ভরসা করো যে আমি তোমার ক্ষতি করবো না। এটা ভালোবাসার প্রথম ধাপ।
ইনায়াত অবাক হলো। সত্যিই কি এটা ভালোবাসার প্রথম ধাপ?? আফিম এবার বাঁকা হেসে ইনায়াতের কপালে গাঢ়ো করে চুমু খেলো ঠোঁট ছুঁইয়ে। চোখ বন্ধ করে ফেললো ইনায়াত। শরীরে অদ্ভুত এক ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। আফিম নিজেকে সড়িয়ে ঝুঁকে দাঁড়ালো আবারও ইনায়াতের উপর,, ইনায়াতের পাশে দেওয়ালে হাত রেখে। ইনায়াত ধীরে ধীরে চোখ খুললো। আফিমের কাজটা কেন ছিলো,, কি ছিলো জানেনা সে। তবে মনে হলো অনেক সুন্দর এক অনুভুতি ছিলো। যা শেষ না হলেও পারতো হয়তো। আফিম ইনায়াতের চোখে চোখ রেখে বললো,,

– খুব ভালো লেগেছে তোমার বিষয়টা। শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেছে। মনে হলো কেন শেষ হয়ে গেছে ব্যাপারটা। তাই না??
ইনায়াত আবারও অবাক হলো। আফিম কিভাবে তার না বলা বিষয়টা জানতে পারলো??
– কি হলো?? বলো। তাই না??
ইনায়াত বিস্মিত ভাবেই জবাব দিলো হ্যাঁ মাথা উপর নিচে ঝাঁকিয়ে। আফিম ইনায়াতের বোকা বোকা মুখ দেখে হেসে ফেললো। গাল টেনে দিলো ইনায়াতের। ভ্রু কুঁচকে ফেললো ইনায়াত গাল ফুলিয়ে। আফিম বললো,,
– ঐ শিহরন প্রমাণ করে যে, আমার ভালোবাসা তোমাকে তোমার গভীরে ছুঁয়ে দিয়েছে। যা ভালোবাসার দ্বিতীয় ধাপ। আর ঐ অনুভূতিকে দীর্ঘক্ষন পেতে চাওয়ার মানে আকাঙ্ক্ষা। যা ভালোবাসার তৃতীয় ও শেষ ধাপ।
একটু থেমে আফিম আবারও বলতে লাগলো,,

– তিনটা ধাপই সম্পূর্ন হয়েছে। তার অর্থ হলো,,,
সুর টেনে বললো আফিম। চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকালো ইনায়াত। আফিম তা দেখে হেসে দূরে সড়ে এসে বললো,,
– তার মানে তোমার মনেও আমার জন্যে ভালোবাসা আছে।
ইনায়াত আফিমের কাছে এসে রেগে আফিমের কলার খামচে ধরলো। আফিম ইনায়াতের কোমড় খামচে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ইনায়াতের গলায় মুখ ডুবিয়ে বলতে লাগলো,,

– আমাকে ছেলে সেজে সামলানোর সময়ও তোমার মাঝে একজন বন্ধু,, শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ভালোবাসা ছিলো আমার জন্য। তুমি না চাইতেও আমার সম্পর্কে সব সত্যি জানতে জানতে তা আরো গভীর হয়েছে। তাই আমার পার্টির দিন তুমি অভিমান করে চলে গেছো। তুমিই বলো,, বসের সাথে ফর্মাল রিলেশনে মান অভিমান আসে?? না আসে না। অথচ তুমি করেছো।
একেতো আফিমের ঠোঁট নিজের গলায় কথা বলার তালে নড়ছে। এর উপর আফিমের গরম নিঃশ্বাস আঁছড়ে পড়ছে ইনায়াতের কাঁধে। শরীর না চাইতেও জমে গেলেও, মস্তিষ্ক কাজ করছে। তাই আফিমের কথা গুলো শুনে,, বুঝে অবাক হলো ইনায়াত। আফিম ছেড়ে দিলো ইনায়াতকে। ইনায়াত কয়েক পা পিছিয়ে এলো । দ্রুত পায়ে পিছু ফিরে দরজার দিকে এগিয়ে দরজার নবে হাত রেখে তা ঘুরাতেই আফিমের কন্ঠ শুনে থেমে গেলো ইনায়াতের পা জোড়া।

– ভালোবাসার বীজ তোমার মধ্যে ছিলো ইনায়াত। আর এখন আমার স্পর্শ সে বীজকে আরো এক ধাপ বৃদ্ধি করেছে। খুব দ্রুত তুমি আমাকে নিজের অজান্তেই ভালোবাসবে।
জমে গেলো ইনায়াত নিজের জায়গায়। উদ্ভ্রান্তের মতো তার চোখ এদিক ওদিক ঘুরছে। স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে বিষয়টা সে মেনে নিতে না চেয়ে নিজের সাথে যুদ্ধ করছে। আফিম ধীর পায়ে হেঁটে দরজার কাছে এসে ইনায়াতের হাতের উপর হাত রেখেই নব ঘুরালো। ইনায়াত আফিমের দিকে তাকালো অসহায় ভাবে। ইনায়াত এর চোখ স্পষ্টই বলছে,, ” সত্যটা না জানালে কি হতো না?? ”
আফিম ইনায়াতের এক হাত ধরে রুমের বাইরে নিয়ে এলো। তারপর ইনায়াতের হাত ছেড়ে চলে গেলো অন্যদিকে।

ইনায়াতকে কোথাও না পেয়ে স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে ইনায়াতকে ডাকতে যাচ্ছিলো। তখনই আফরা দ্রুত পায়ে এসে চেপে ধরলো স্পন্দনের মুখ নিজের হাত দিয়ে।
– করছো টা কি?? প্ল্যানিং ভেস্তে দেবে নাকি??
শাসনের সুরে বললো আফরা। স্পন্দন অবাক হলো কথার কিছুই বুঝতে না পেরে। আফরা স্পন্দনের মুখ থেকে হাত সড়িয়ে স্পন্দনের হাত ধরে চোরের মতো আফিমের পাশের রুমে ঢুকে পড়লো। রুমে ঢুকে দরজা হালকা ভেঁজিয়ে দিয়ে স্পন্দনকে টেনে নিয়ে গেলো ব্যালকনিতে। ব্যালকনিতে একটা দরজা দেখা যাচ্ছে। দরজাটা সময় নিয়ে নিঃশব্দে খুললো আফরা। স্পন্দন এখনো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নিজের কৌতুহল ধরতে না পেরে বলে উঠলো,,
– কি হচ্ছে আফরামনি??

আফরা পিছনে ফিরে ঠোঁটে আঙ্গুল চাপিয়ে ” শসসস ” আওয়াজ করে চুপ করতে বললো। স্পন্দনের চোখ আটকে গেলো আফরার আঙ্গুলে যা আফরার ঠোঁট ছুঁয়ে আছে। স্পন্দন একঝটকায় আফরার কোমড়ে হাত রেখে টেনে নিলো আফরাকে নিজের কাছে। আফরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। কিছু সেকেন্ড সেভাবেই থেকে সড়ে এলো স্পন্দন ধীর গতিতে। তখনই কানে এলো আফিমের গলার স্বর। ভ্রু কুঁচকে স্পন্দন ব্যালকনির খোলা দরজা দিয়ে আফিমের রুমের ব্যালকনিতে ঢুকলো। কান খাড়া করে শুনতে লাগলো আফিমের ইনায়াতকে বলা কথা। শুরু থেকে শেষ সবটা শুনে নিজের জায়গায় জমে গেলো স্পন্দন।

আফিম আর ইনায়াত রুমের বাইরে চলে যেতেই স্পন্দনের হুশ হলো। কিছুক্ষন বিষ্ময়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে মুখে হাসি ফুঁটলো স্পন্দনের। আফিম যে ইনায়াতের জন্য ভুল হবে না তা নিয়ে নিশ্চিন্ত স্পন্দন এখন। এই ভেবে নিজেও রুম থেকে বের হবে বলে ব্যালকনির দরজা আটকে পিছনে ফিরতেই দেখলো আফরা মূর্তীর মতো নিজের ঠোঁটে হাত দিয়ে ছুঁয়ে পলকহীন দাঁড়িয়ে আছে। স্পন্দন বুঝলো আফরা হঠাৎ হওয়া কাজটা নিতে পারেনি। স্পন্দন আফরার কোমড় টেনে আবারও নিজের সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। এবার আফরার হুশ হলো। আগের মতোই কিছু সেকেন্ড থেকে সড়ে এলো স্পন্দন। আফরা হা হয়ে তাকিয়ে বললো,,

– এটা কি ছিলো??
– ভালোবাসার প্রথম পরশ।
আফরার হুশ হলো তার সাথে কি হয়েছে। লজ্জায় মাথা নামিয়ে আফরা দ্রুত পায়ে বের হয়ে এলো রুম থেকে। বাইরে এসেই মূর্তীর মতো ইনায়াতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো আফরা। আফরার পিছু পিছু স্পন্দনও বের হয়েছিলো। ইনায়াতকে ওভাবে দেখে সে এগিয়ে গেলো অন্যদিকে। আফরা এগিয়ে গেলো ইনায়াতের দিকে। আফরাকে দেখে ইনায়াত নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো যতোটা সম্ভব। আফরা আর ইনায়াত পা বাড়ালো বাইরের দিকে বসার ঘরে।

বসার ঘরে সবাই উপস্থিত ছিলো। আফরা আর ইনায়াতকে দেখে সবাই বের হবে ঠিক করলো আফিমদের বাসার উদ্দেশ্যে। রুহির দিকে তাহজিব তাকিয়েছে নিজের গাড়িতে উঠতে বলবে বলে। তখনই রুহি দ্রুত বলে উঠলো,,
– আমরা মেয়েরা আসছি। আপনারা সবাই এক গাড়িতে যান।
ভ্রু কুঁচকে ফেললো তাহজিব রুহির হঠাৎ এমন আচরনে। তাহজিবের কেন যেন মনে হলো রুহি তার থেকে পালাতে কাজটা করেছে। তবুও ছেলেরা সবাই এক গাড়িতে উঠলো। ইনায়াত আর আফরারও এমন একটা সুযোগ দরকার ছিলো। মেয়েরা উঠলো এক গাড়িতে। আসিফ আর কামাল এক গাড়িতে। পরপর তিনটা গাড়ি তাহজিবের বিশাল বাড়ির গেইট পার করে রাস্তায় নামলো আফিমের বাসার উদ্দেশ্যে।

দুই সপ্তাহের এই ভ্যাকেশনটা যেন খুব কঠিন এক সময় তিন মেয়ের জন্য। ছেলেরা সময় পুরোই এঞ্জয় করছে। আসিফ আর কামাল অফিশিয়াল ছুটি নিয়ে গেছে কক্সবাজার। স্পন্দন,, তাহজিব আর আফিম। তিনজনই নিজেদের জীবনে অনেকটা সময় ধরে ব্যস্ততা নিয়ে কাটিয়েছে। তাই বন্ধুত্বের সময় পায়নি বললেই চলে। এখন আফিম,, তাহজিব আর স্পন্দন বন্ধু হয়ে গেছে। ভ্যাকেশনের সবে ৪ নাম্বার দিন চলছে দুই সপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু এর মধ্যেই ছেলেদের ইয়ার দোস্তি, তুই তোকারি সম্পর্ক হয়ে গেছে। লাবিবা আর জোসেফকে হানিমুনে পাঠিয়েছে ছেলে মেয়েরা সবাই মিলে। ভ্যাকেশনের ৩ নাম্বার দিন,, অর্থাৎ গতকাল লাবিবা খুবই লজ্জায় পড়ে গেছিলো ঘরে সবার কাছে বিদায় নেবার সময়। তবে হাসিখুশী জোসেফ বিষয়টা বেশ উপভোগ করেছে। লাবিবা আর জোসেফকে প্যারিস পাঠিয়েছে ছেলে মেয়েরা।

ভ্যাকেশনের আজকে ৪ নাম্বার দিন। লাবিবা আর জোসেফের সামনে আফরা,, ইনায়াত আর রুহি হাসি হাসি খুশী খুশী দেখালেও। মনে মনে তারা শেষ হয়ে যাচ্ছে যেন। আফিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনায়াত তাকে ভালোবেসে কাছে না চাইলে নিজ থেকে যাবে না ইনায়াতের কাছে। দূর থেকেই ভালোবেসে যাবে। আফিম তাই ইনায়াতের যত্ন নিলেও দূরে দূরে থাকছে। যা ইনায়াত মেনে নিতে পারছে না। ইনায়াত আফিমকে ভালোবাসে এই কথা মেনে না নিলেও আফিমের দূরে যাওয়া তাকে আঘাত করছে। স্পন্দনও আফরার থেকে দূরে থাকছে। থাকবে নাই বা কেন??

স্পন্দন আফরার কাছে গেলেই কোন এক নেশায় আটকা পড়ে যেন। বিয়ের আগে ওভাবে করে ছুঁয়ে দিতে চায়নি সে আফরাকে। তবুও তেমন কিছু হওয়াতে হতাশ নিজের উপর স্পন্দন। আবেগের বশে আবারও এমন কোন কাজ করতে চায় না স্পন্দন। তাই আফরার থেকে দূরে থাকছে। আর রুহি নিজের মনের প্রশ্নগুলো সড়াতে না পারলেও তাহজিবকে নিজের কাছে কাছেই চাইছে। তবে রুহির প্রথম দিকের পালিয়ে বেড়ানো নিয়ে অভিমান করেছে তাহজিব। তিন জন ভালোবাসার মানুষ তাদের সঙ্গীর থেকে আলাদা থাকছে। যা মেনে নিতে পারছে না মেয়েরা। তাই তিনজনই খুব বিষন্ন। ডিনার শেষে
তিন মেয়ে কোল্ড কফি নিয়ে জড়ো হয়েছে ছাদে। ছেলেরা আজকে নাইট আউট করবে। তাই বাসায় একা মেয়েরা। তিন মেয়ের মুখেই কথা নেই। হঠাৎ রুহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,

– ইনুপ্পি,, আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
হঠাৎ রাতের নিস্তব্ধতা চিড়ে রুহির আওয়াজ কানে আসতেই চমকে তাকালো ইনায়াত ও আফরা।
– কি সিদ্ধান্ত রে??
জানতে চাইলো আফরা। ইনায়াত হাতে থাকা কোল্ড কফির গ্লাসের স্ট্রতে একবার টান দিলো। তখনই রুহির কথা যেন বজ্রাঘাত করলো ইনায়াত ও আফরার কানে। যার আঘাত মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছে গেছে।
– আমি বিদেশ চলে যাবো তাহজিবকে না জানিয়ে।
রুহির এই কথাটাই ছিলো যথেষ্ট বিষন্নতা কেটে বিষ্ময় আর কৌতুহল নিয়ে আসতে ইনায়াত ও আফরার মনে।
– কি বলছিস তুই??
জিজ্ঞেস করলো ইনায়াত অস্থির স্বরে।

– দেখ্ ইনুপ্পি,, তোর কি মনে হয় না আমাদের উচিত ছেলেদের থেকে পরীক্ষা নেওয়া। মেয়েরা স্বভাব বশতই কোমল মতি। ভালোবাসা তাদের অন্তরে থাকবে এই স্বাভাবিক। কিছু ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম হলেও,, কিছু নারী আলাদা হলেও,, বেশির ভাগ মেয়েতো কোমলই হয়। তাই না আপ্পি??
ইনায়াত ও আফরার দিকে প্রশ্নপূর্ন নজর ছুড়ে দিলো রুহি। ভ্রু কুঞ্চিত হলো আফরা ও ইনায়াতের। কথাগুলো সুন্দর তবে কৌতুহলপূর্ন লাগলো তাদের।
– খুলে বল রুহি,,
আফরা বললো। রুহি হেসে শুরু করলো,,
– দেখ আফুপ্পি,, আমরা তিনজনই এখন না চাইতেও এক প্রশ্নের কাঁদায় ডুবে আছি। আর তা হলো,, ” ছেলেরা আমাদের ভালোবাসে কিনা!! আর ভালোবাসলেও আমাদের নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসে কিনা ”
ইনায়াত আর আফরা সম্মতি জানালো। কারণ সত্যি বলতে তারাও একই প্রশ্ন নিয়ে মাথা ব্যাথা করে ফেলছে। রুহি হেসে বললো,,
– তাই আমার কাছে এক অসাধারণ আইডিয়া আছে।
রুহির চোখেমুখে খেলে গেলো চাপা দুষ্টুমি হাসি। ইনায়াত আর আফরা কিছু বুঝতে পারছে না বলে ভ্রু কুঁচকে মুখে হাসি টেনে তাকিয়ে আছে।

– আমার তো ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। তাই না??
রুহি প্রশ্ন করলো। আফরা বললো,,
– হুম। তোহ??
– তোহ আর কি?? এবার সবটা বলছি মন দিয়ে শুন তোরা। আমরা হঠাৎ উধাও হয়ে যাই। যাবো আমার চিকিৎসা করাতে বিদেশে। এরপর চিকিৎসা শেষে এসে ছেলেদের অবস্থার উপর নির্ভর করে আমরা বুঝে নেবো তারা আমাদের বিহনে কেমন ছিলো।
আফরা আর ইনায়াত এমন মারাত্মক প্ল্যানিং শুনে চমকে উঠলো।
– কি বলছিস রুহি?? মাথা ঠিক আছে??
বলে উঠলো আফরা। ইনায়াতও বললো,,

– ওরা তাহজিব খান,, স্পন্দন আজাদ আর আফিম আহসান। যে সে মানুষ না। সেকেন্ড সময় লাগবে না আমাদের খুঁজে বের করতে।
– আহ!! শুন না আগে। আমিও একজন কমিশনারের মেয়ে। মানুষজন আমারও চেনা আছে। টাকা দিয়ে আমার চেনা এক মানুষকে দেবো সব দায়িত্ব। আমরা কোথায় গেছি তার কোন নামনিশানা অফিশিয়াল ভাবে থাকবেই না। তাই এয়ারপোর্ট হোক বা পাতাল,, হাজার খুঁড়াখুঁড়ি করেও আমাদের খোঁজ জানবে না কেও।
ইনায়াত আর আফরা চুপ হয়ে গেলো।
– তোরা কি জানতে চাস না?? দেখতে চাস না ছেলেরা কতোটা ভালোবাসে তোদের??
আফরা আর ইনায়াত একে অপরের দিকে তাকিয়ে রোবটের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। রুহির মুখে হাসি ফুঁটলো।
– ঠিক আছে তবে শুন,, আমার শর্ত আছে।
ইনায়াত বলে উঠলো। আফরা আর রুহি তাকালো ইনায়াতের দিকে।
– শুন,, তিনজন যেহেতু যাচ্ছি বিষয় ভাগ করে নেওয়া ভালো। তোর পরিচিত,, আমার টাকা আর আফরা আপুর নজরদারি নিয়েই পুরো প্ল্যানিং কার্যকর হবে। ডান??

এক হাত বাড়িয়ে জানতে চাইলো ইনায়াত। আফরা আর রুহি একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইনায়াতের হাত দিয়ে একসাথে বলে উঠলো ” ডান “। রাতের মৃদু মন্দ হাওয়া চলছে,, তিনটি মেয়ে ভালোবাসার পরীক্ষা নেবার আগাম পরিকল্পনা করতে করতে উত্তেজনায় শিউরে উঠছে। আর মুখে তাদের রহস্যময় হাসি।
– প্ল্যানিং নাহয় হলো,, এখন বল তোদের পাসপোর্ট কোথায় আপি??
রুহি প্রশ্ন করলো ইনায়াত আর আফরাকে। ইনায়াত আর আফরা একে অপরের মুখ দেখাদেখি করেই কপালে হাত।
– আমার পাসপোর্ট তো আফিম স্যারের কাছে।
কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো ইনায়াত। আফরাও আফসোসের সুরে বললো,,
– আমার টাও। কিন্তু তোর টা কোথায় রুহি??
রুহির আচমকা মনে পড়লো তার পাসপোর্ট নেই। বানাতে হবে বলে আসিফকে সব ডকুমেন্টস দিয়েছিলো যা বর্তমানে তাহজিবের তালা দেওয়া বাড়িতে আছে।

– আমার পাসপোর্ট নেই। বানানোর জন্য সব ডকুমেন্টস আসিফ ভাইকে দিয়েছিলাম। এখন সবগুলো তাহজিবের বাড়িতে।
তিন মেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলো। তখনই আফরার মাথায় একটা প্রশ্ন এলো,,
– আমরা যদি এই পাসপোর্টগুলো দিয়ে যাই তাহলে ওরা আমাদের সহজে ধরে ফেলবে না??
ভাবলো রুহি মন দিয়ে। ঠিক তাই হবে শেষে। রুহি একটু ভেবে বললো,,
– নতুন পাসপোর্ট বানাতে হবে তিনজনেরই।
– কিন্তু একটা পাসপোর্ট থাকাকালীন অন্য পাসপোর্ট ইস্যু করবে না।
চিন্তিত সুরে বললো ইনায়াত। রুহি বাঁকা হাসলো।
– কেন?? আমাদের পাসপোর্ট তো চুরি গেছে।

চমকে উঠলো আফরা আর ইনায়াত রুহির কথার অর্থ উদ্ধার করতে না পেরে।
– শুন,, কালই আমরা তিনজন মিলে থানায় যাবো। আমার পুলিশে চেনা আছে কারা টাকা নিয়ে সব কাজ করে। ওদের টাকা দিয়ে একটা পুরান তারিখের রিপোর্ট লিখিয়ে ওটা হাতিয়ার করে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করবো। শুন ইনুপ্পি আর আফুপ্পি,, আমি তো পেশেন্ট তা প্রুভেন। তাই আমার নাম দিয়ে মেডিক্যাল ফিল্ডে আর্জেন্সি দেখিয়ে পাসপোর্টের জন্য এপ্লাই করবো। আর তোরা আমার গার্জিয়ান।
ইনায়াত আর আফরার মুখে হাসি ফুঁটলো।
– তোর কি বুদ্ধিরে রুহি!!

অবাক হয়ে বললো আফরা। রুহি বুক ফুঁলিয়ে ভাব নিতে লাগলো। তখনই ইনায়াতের একটা প্রশ্নে রুহির ভাব ফুঁস হয়ে গেলো।
– কিন্তু তুইই তো বললি তোর সব ডকুমেন্টস তাহজিবের বাড়িতে। তার মানে রিপোর্টসও ওখানে। ওগুলো উদ্ধার করবি কিভাবে??
আফরা,, ইনায়াত আর রুহি চিন্তায় পড়ে গেলো। তখনই আফরা শব্দ করে উঠলো,,
– এই এই এই এই,,, আমি আইডিয়া পেয়ে গেছি।
ইনায়াত আর রুহি খুশীতে লাফিয়ে উঠলো। তখনই আফরার আইডিয়া শুনে দুজনের মুখ চুপসে গেলো।
– আমরা তাহজিবের বাড়ি চুরি করবো।
– আপি!! তোর মাথাটা কি গেছে?? তাহজিব খানের বাড়ি চুরি?? আর তাও আমরা?? অসম্ভব।
রুহি আফসোসের সুরে উত্তর দিলো। ইনায়াত চুপ করে ভাবছে কিছু একটা। ইনায়াতের ভাবনা দেখে আফরা আর রুহি দুই দিক থেকে কনুইয়ের খোঁচা দিলো। তখনই হুশ হলো ইনায়াতের। ইনায়াত রুহির দিকে তাকিয়ে ঘাড় কাঁত করে ভ্রু কুঁচকে একটা বাঁকা হাসি দিলো। আফরা অবাক হলো আর রুহি শিউরে উঠলো। কাঁপা স্বরে আটকে আটকে বললো,,

– ইনুপ্পি,, কি ভাবছিস তুই??
আফরা যেন ইনায়াতের না বলা ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারলো। ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে একবার,, রুহি দিকে ফিরে তাকালো বাঁকা হাসি নিয়ে। এদিকে ইনায়াতের হাসি আরো প্রশস্ত হলো। রুহি চঞ্চল চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। এরপর আমতা আমতা করে বললো,,
– আমার কাজ আছে,,বাই।
কোনভাবে এই বলে রুহি যখন চলে আসতে যাচ্ছিলো তখনই ইনায়াত আর আফরা রুহির দুই হাত খপ করে ধরে,,তাকে টেনে মাঝে বসালো নিজেদের। ইনায়াত বললো,,
– রুহি!! চুরি কেন করতে হচ্ছে?? ব্যাপারটা তো আমাদের জন্য চুরি হলেও তোর জন্য চুরি না।
রুহির মাথার উপর দিয়ে গেলো বিষয়টা। আফরাও হাসি মুখে বললো,,

– দেখ,, যেহেতু তুই তাহজিবকে ভালোবাসিস। তাহজিবও তোকে ভালোবাসে। তোর যা,, তা তাহজিবের। তাহজিবের যা তা তোর। যেহেতু তাহজিবের সব তোর। সেহেতু তাহজিবের আলমারিও তোর,, আলমারির ভিতরের সব জিনিসও তোর। যেহেতু তাহজিবের জিনিস তোর জিনিস। সেহেতু তোর জিনিস তুই নিলে কোন সমস্যা নেই। কারণ,, তোর জিনিসই তোর নেওয়া হবে,, তাহজিবের জিনিস নেওয়া হবে না। কারণ তাহজিবের জিনিস তো তোরই জিনিস।
একনাগাড়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে,, ” হা ” আওয়াজ করে শ্বাস নিলো আফরা। রুহি কিছু বুঝতে না পেরে এমনিই বোকা বনে গেছিলো। এখন আফরার কথা শুনে যেন ভ্যাবলা বনে গেলো। আইডিয়াটা ইনায়াতের মাথায় প্রথমে এলেও। আফরার পরিবেশনার ধরন দেখে ইনায়াতও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রুহির সাথে তাল মিলিয়ে। পরক্ষনেই নিজের ভ্যাবলা বিষ্ময় ঝেড়ে ফেলে ইনায়াত আবারও হাসি নিয়ে বললো,,
– সব কথার শেষ কথা। আমরা আজ রাতেই তোর জিনিসপত্র আনতে যাচ্ছি।
রুহি শুকনো ঢোক গিলে ইনায়াত আর আফরার দিকে তাকালো।

– দোস্ত!! বাসায় যাবো না??
আফিম জানতে চাইলো বারের স্পেশাল রুমে বসে। ড্রিংক্স ইদানীং তার মনে ধরে না। ইনায়াত যে তার মাঝে এর থেকেও বড় কিছুর নেশা ধরিয়েছে। ” ভালোবাসার নেশা “। সব নেশার উর্ধ্বে। আফিমের উত্তেজনা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো মাতাল তাহজিব।
– কেন দোস্ত?? তোর কি বৌ বৌ পাচ্ছে??
স্পন্দন ও হো হো করে হেসে ফেললো।
– আহারে!! জরু কা গোলাম।
তিন ছেলেই হেসে উঠলো একসাথে।
বার থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা কিভাবে যেন পৌনে একটা হয়ে গেলো তা বুঝলোই না ছেলেরা। বার ওয়েটারদের টাকা দিয়ে সাথে এনেছে তারা। প্রচন্ড ড্রিংক্স করে ফেলায় হুশহীন বলা যায় তাদের। ওয়েটাররা নিজেরা ড্রাইভ করে আফিমের বাড়িতে এনে রীতিমতো টেনেটুনে যুদ্ধ করে ঘরে পৌছে দিয়ে গেলো । মেয়েরা বিষয়টা নিয়ে অন্য সময় ক্রুদ্ধ হলেও আজ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। তাহজিবের বাড়ির চাবি তাহজিবের রুম থেকে আগেই সড়িয়ে রেখেছিলো তিনজন। এখন ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকতে থাকা,, বিছানার উপরে তিন ছেলেকে একবার শেষবার চেক করে নিয়ে বেরিয়ে এলো চুপিসারে । গাড়িতে উঠেই ইনায়াত স্টার্ট দিলো গাড়ি। দ্রুত কাজ সাড়তে হবে।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২৮+২৯

তাহজিবের বাড়ির পেছনের দিকের গেইট টপকে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে রুহি ও ইনায়াত। বাইরেই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে তৈরি হয়ে আছে আফরা। যেন রুহি আর ইনায়াত গাড়িতে ঢুকে বসলেই গাড়ি স্টার্ট দিতে পারে। সাহস করে রুহি আর ইনায়াত গেইট টপকে ঢুকলেও বাড়িতে যেতে ভয় হচ্ছে তাদের। ইনায়াত আর রুহি একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারা করে সাহস যোগালো। এরপর ঢুকে পড়লো বাড়ির ভিতর। কিচেন এর দরজা খুলে এক দৌড়ে দুজনে চলে এলো তাহজিবের রুমে। আলমারি খুলে রুহি দেখলো সব ডকুমেন্টস একটাই প্যাকেটে রাখা। তা দেখেই খুশী হলো ইনায়াত আর রুহি। তা হাতে তুলে আলমারি বেঁধে দৌড়ে বেড়িয়ে এলো দুজনে। কিচেনের দরজায় তালা লাগিয়ে যেই না দৌড় শুরু করেছে তারা। তখনই পিছন থেকে শুনতে পেলো সামনের মেইন গেইটের দাড়োয়ানের কন্ঠস্বর,,

– কে?? ক্যাডা??
মেয়েরা থামলো না। আবারও গেইট টপকে এসে ঢুকলো গাড়ির ব্যাকসিটে। আফরাও তৈরি ছিলো। দুজনকে দেখেই গাড়ি একটানে নিয়ে এলো তাহজিবের বাসার থেকে দূরে।
বাসায় পৌছে তিন মেয়ে একসাথে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে খাটে গা এলিয়ে দিলো। জীবনে প্রথমবার চুরির অভিজ্ঞতা তাদের মনে গেঁথে থাকবে। আর কালকের জন্য ধামাকা প্ল্যান তো করাই আছে।
কি হবে ভাই আগে?? আর গল্পটা পড়ে যান ভালোই লাগবে আশা করছি। মিল সবার হওয়ার থাকলে অবশ্যই হবে। না হইলে নাহয় গালি দিয়েন। কিন্তু এখন আগে পড়ে যান।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা শেষ পর্ব