জলকাব্য পর্ব ১৬ || লেখিকা:সুরাইয়া আয়াত

জলকাব্য পর্ব ১৬
লেখিকা:সুরাইয়া আয়াত

সন্ধ্যা হবো হবো ,পার্কের ভিতর বসে আছে নিখিল আর মিঠি ৷ প্রথমে ওরা নিজেদের মধ্যে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে বসেছিলো কিন্তু কিছুখন পর নিখিল মিঠির দিকে একটু এগিয়ে আসতেই মিঠিও নিখিলের দিকে এগিয়ে যেতে কিছুটা সাহস পেলো ৷ আপাতত দুজনের মাঝে দুরত্ব কয়েক ইঞ্চির মাত্র ৷
আচমকাই নিখিল নিজের হাতটা মিঠির হাতের ওপর রাখল ৷ মিঠি নিখিলের দিকে তাকালো, নিখিলের চোখ দুটো বেশ অনেক কথা বলতে চাইছে মিঠিকে তা ও কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে ৷ নিখিলের কিছু বলার আগেই মিঠি বলে উঠলো
” কিছু বলবেন?”

নিখিল তখন নিজের হাতটাকে মিঠির হাতের মাঝে মুঠিবদ্ধ করে বলল
“আই থিঙ্ক আই লাভ ইউ , এন্ড আই নিড ইউ ৷”
কথাটা শুনে মিঠির মুখের হাসিটা খানিকটা চওড়া হলো আর মনে খানিকটা হলেও অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করতে লাগলো ৷ আসলে রুদ্রর সাথে এখন আর সম্পর্কটা ঠিক আগের মত নেই , বলতে গেলে বিচ্ছেদের পর্যয়ে , আর ওর এই দুঃসময়ের মাঝে নিখিল ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ নিখিলের যে ওর প্রতি একটা অন্য রকম অনুভূতি ছিল সেটা মিঠি বুঝতে পারতো কিন্তু নিখিল যে সেটা এতো তাড়াতাড়ি মুখের ভাষায় প্রকাশ করে দেবে তা মিঠির ধারনার বাইরে ছিলো ৷
মিঠিও নিখিলের হাতের উপর হাত রেখে বলল “আপনি আমার সমস্ত কথা জেনেও আমাকে মেনে নিতে রাজি?”

নিখিল তখন একজন প্রেমিক পুরুষের মতো বলে উঠলো ” আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার অতীতকে নয় তাই তুমি কি কোথা থেকে এসেছে , তুমি কে তার কোনো কিছুরই জানার ইচ্ছা বিন্দুমাত্র আমার নেই ৷ শুধুমাত্র ভবিষ্যতে তোমাকে আমার পাশে পেতে চাই এটাই আমার ইচ্ছা ৷ আর তাছাড়া এক বছর হল আমরা পরস্পরকে চিনি, হয়তো এখন সম্পর্কটা গভীর হয়েছে , তা আরো ভালোভাবে হতে পারে , তুমি চাইলে আমরা পরস্পরকে আরো ভালোভাবে চিনতে পারি , জানতে পারি , একে অপরকে বুঝতে পারি ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মিঠি মুচকি হেসে বললো ” ঠিক কিভাবে জানতে পারি?” নিখিল মিঠির কাছে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল ” আমরা লিভ-ইন রিলেশনশিপেও থাকতে পারি যদি তুমি রাজি থাকো তো ৷ গড়িয়াতে আমার ফ্ল্যাট আছে সেখানে কেউ থাকেনা আর এমনিতে আমার পরিবার বলতে সবাই মুম্বাইতে থাকে, শুধু ব্যবসার খাতিরে আমাকে এখানে থাকতে হয় ৷ আমরা প্রথমে লিভ ইন রেলেশনশিপ থাকবো তার পরে একে অপরকে জানবো বুঝবো তারপর আমরা বিয়ে করবো ৷ এরপরও যদি তোমার মনে হয় যে তুমি আমার সাথে খুশি নও তাহলে ফাইন আমি তোমাকে জোর করব না কখনো আমাকে বিয়ে করার জন্য ৷”

“লিভ ইন রেলেশনশিপ” কথা শুনে মিঠি খুব অবাক হলো ৷ রুদ্রও ওকে এমন প্রস্তাব কখনো দেয়নি কিন্তু নিখিলের হঠাৎ এমন করে বলায় মিঠি খানিকটা হলেও ঘাবড়ে গেল ৷ লিভ ইন রেলেশনশিপ কথার অর্থ মিঠি বোঝে , খুব ভালোভাবেই বোঝে ৷ আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো মিঠি নিখিলকে এখনো ঠিকভাবে জানেও না তবুও হট করে একটা অপরিচিত মানুষের সাথে লিভ-ইন রিলেশনশিপে যাওয়া ! কথাগুলো ভেবে মিঠি খানিকটা চতুরতার সাথে মিথ্যা বলে উঠলো “একচুয়ালি আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমি মাকে বলেছি যে আমি রুদ্রকে ছেড়ে কালকেই রুদ্রর বাড়ি থেকে মা র কাছে চলে যাব ৷ তাই মা জানে যে আমি সেখানে কিন্তু এখন হুট করে আপনার সাথে লিভ ইন এ থাকতে গেলে মা কি বলবে না কি !”

নিখিল তখন বললি ” সমস্যার কি আছে সেই তো আমরা বিয়ে করবো ৷”
মিঠি যেন কোনভাবে রুদ্রর কথাতে সম্মতি দিতে পারছে না দেখে নিখিল এর মুখে বিরক্তির ছাপ মিঠি স্পষ্ট লক্ষ করতে পারছে কিন্তু এখন ওর কোন রকম বোকামোতে যদি নিখিল হাতছাড়া হয়ে যায় তবে ওর চাকরিটাও যাবে সাথে নিখিলের মতো একজন ও ছাতছাড়া হবে ভেবে মিঠি কিছু বলতে যাবে তখনই হঠাৎ নিখিল বলল ” আচ্ছা ঠিক আছে আমরা লিভ ইন এ যাবো না, একেবারে বিয়েই করবো ৷ পরের সপ্তাহে আমার বাবা-মাকে আমি আমাদের বাড়িতে ডাকি , ডেকে তোমার সাথে তাদের মুখোমুখি কথা বলিয়ে দিয় ৷ আর ততদিনে তুমি রুদ্র সাথে ডিভোর্সের আপিল করো ৷”

নিখিলের কথা শুনে মিঠি যেন আকাশের চাঁদ ওর হাতে পেলে ৷ আবেগের বশে নিখিলকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে যেন হাতের কাছে অনেক খাজানার সন্ধান পেয়েছে ও , ছাড়লেই হাতছাড়া হয়ে যাবে ৷
” থ্যাংক ইউ সো মাচ, আপনি আমাকে বুঝেছেন নিখিল ৷ আই লাভ ইউ সো মাচ ৷” কতো সহজ ভাষায় নিখিলকে মুহূর্তেই আই লাভ ইউ বলে দিলো , এমন ভাবে রুদ্রকেও নিজের কাছে টেনে এনে নীলুর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে ও ৷
নিখিল মিঠিকে ছাড়িয়ে বলল ” তাহলে আসছো তো পরের সপ্তাহে আমাদের বাড়িতে ? সন্ধ্যা বেলার দিকে এসো ,রাত্রে ডিনার করে ফিরবে কেমন?”
মিঠি লাজুক ভঙ্গিতে বলল “আচ্ছা ৷”

রাতের বেলা সবাই খেতে বসেছে একসাথে ৷ শ্রাবণের মা মাছের বড় মাথাটা নীলুর পাতে তুলে দিতেই নীলু ওনার দিকে থতমত চোখ করে তাকালো,খানিকটা হতাশ হয়ে বলল ” এটা তুমি কি করলে ?এটা তুমি ভাইয়াকে দাও ৷”
শ্রাবণের মা ধমকের সুরে বললেন ” চুপচাপ খেয়ে নে ,আর কোন কথা না ৷ তাছাড়া এটা শ্রাবণেরই হুকুম , ওর কথা না শুনলে ও কিন্তু খুব রেগে যাবে ৷” নিলু শ্রাবণের দিকে তাকালো শ্রাবণ একমনে খেয়ে যাচ্ছে তার মুখ ভঙ্গি দেখে কোনভাবেই মনে হচ্ছে না যে আশেপাশের কোন কথা তার কানে যাচ্ছে ৷

শ্রাবণের মুখের দিকে তাকিয়ে নীলু একটা শুকনো ঢোক গিলল , আজকাল একটুই বেশিই ভয় পায় শ্রাবনকে ৷ সময়ের সাথে সাথে জীবনকে ঘিরে ধরে একটা সিরিয়াসনেস গড়ে ওঠেছে শ্রাবনের মাঝে সেটা নীলুর চোখে স্পষ্ট ৷ নিলু কোন কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করলো ৷ এত বড় মাছের মাথাটা ওর পক্ষে কখনই খাওয়া সম্ভব নয় তবুও যতটা পারে চেষ্টা করবে , শ্রাবণের ধমক শুনে মন খারাপ করে থাকার থেকে তো ভালো ! হঠাৎ শ্রাবণের মা জিজ্ঞাসা করে উঠলেন ” এই কেসটা কি অনন্তকাল ধরে চলবে ? আমার তো মনে হচ্ছে এখন যে রুদ্র ইচ্ছা করেই মিঠিকে কোর্টে আনছে না যাতে তাড়াতাড়ি কেসটা শেষ হয়ে যায় , আর কেস শেষ হলে তো আমারাই তো জিতবো ৷ ”

শ্রাবন খেতে খেতে থেমে গেল ৷ কিছু কথা যেন গলায় এসে আটকে রয়েছে, তা চাইলেও সবার সামনে বলার মতো পরিস্থিতি কখনোই গড়ে উঠবে না ৷ সকালে উকিলের কথাটা বড্ড কানে বাজছে ৷
” এই কেসটা জেতা টাফ , কারন অভিযোগকারীর কাছে কোন প্রমান নেই ৷ থাকলে আলাদা কথা ৷ আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো প্রমান সংগ্রহ করতে গেলে আরো অনেক বেশি টাকা লাগবে, তোমরা যতো তাড়াতাড়ি টাকাগুলো দিতে পারবে ততই ভালো, ততো কেস তাড়াতাড়ি এগোবে ৷ তাছাড়া সত্যির প্রমান পেতে খাটনি বেশি লাগে কিন্তু মিথ্যা খুব সহজ আর সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় ৷”

উকিলের বলা কথাটা শুনে শ্রাবনের শরীরের উষ্ন রক্তগুলো যেন আরো তাপমাত্রা বাড়াতে লাগলো ৷ শ্রাবনের মা আর শ্রাবন অনেক আশা নিয়ে উকিল হিসাবে ওনার কাছেই গিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন যে আত্মীয়তার সম্পর্কের খাতিরে হয়তো কিছুটা হলেও টাকা মুকুব হবে , কিন্তু টাকার গন্ধে কারোরই আর সঠিক ধ্যান জ্ঞান থাকে না ৷ যাদের মাত্রাতিরিক্ত থাকে তারা আরও বেশী চাই , আর উনিও ঠিক সেই সকল মানুষদের মধ্যে পড়েন ৷ শ্রাবন শুধুমাত্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি জানিয়েছিলো আর হাতে টাকা গুজে দিয়েছিলো ৷
সকালের কথা গুলো চাইলেও নীলু আর ওর মা কে বলতে পারবে না শ্রাবন,বললেই তাদের মনোবল নষ্ট হবে , নীলু পিছিয়ে আসবে ৷ কিন্তু শ্রাবন যখন একবার দায়িত্ব সহকারে এই যুদ্ধে নেমেছে তাই যতখন না আহত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে ততখন ও লড়েই যাবে ৷
শ্রাবন গ্লাস থেকে জল খেয়ে বলল

” উকিল বলেছেন খুব তাড়াতাড়ি এই কেসটা শেষ হবে , তাছড়া আমরা তো সত্যর পক্ষে, আমাদের ভয় কোথায় ?”
নীলু শ্রাবনের দিকে অনেকখন ধরে তাকিয়ে রইলো, কি বলবে বুঝতে পারছেনা , যেখানে এই যুদ্ধে ও নিজেই বারবার মনোবল হারাচ্ছে সেখানে সব দিক সামলে শ্রাবন এই কেসটাতে এতো মনোবল কোথায় পায় নীলু সত্যিই জানে না , হয়তো জানবে কখনো , আপাতত কিছু কিছু জিনিস না হয় অজানাই থাক ৷ মাঝে মাঝে কিছু অপ্রত্যাশিত জিনিস ও মনোবল দেই আর এক্ষেত্রে তার জলন্ত উদাহারন শ্রাবন ৷
শ্রাবনের মা শ্রাবণের এই কথাটা শুনে বলে উঠলেন

” হ্যাঁ রে তোর মামার টাকা পয়সার ব্যাপারে কিছু বলেছে ? মানে একটু কি কম কম নেবে কিছু ?ও ছোটবেলায় খুব দয়ালু ছিলো , কেউ কিছু চাইতে না চাইতেই দিয়ে দিতো , এখনো ঠিক তেমনটাই আছে হয়তো ৷”
শ্রাবন ওর মায়ের কথা শুনে নিজের মনেই তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো ৷ মানুষ যে চিরকাল একই রকম থাকেন তার প্রমান হয়তো শ্রাবনের দূর সম্পর্কের উকিল মামা যিনি এভাবেই সাধারন মানুষদের লুটে নেন একটা ভালো কিছুর আশা দেখিয়ে
শ্রাবন কিছু বলল না, চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়লো ৷ অযথা জিনিস নিয়ে মিথ্যা বলার একটা সীমা শ্রাবন কখনোই লঙ্ঘন করবে না , তাই চুপ থাকায় শ্রেয় ৷

লিফ্টে উঠে 6 নম্বর ফ্লোরের বাটনটা প্রেস করতেই মিঠির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাটা বলে উঠলো
” কি গো মিঠি আগে তোমাকে তো দেখতাম মাসে মাসে একবার আসতে কিন্তু এখন যে রোজই আসো, ব্যাপার কি ? তাছাড়া নীলু বৌদিকে তো আর দেখিনা, উনি কি বাবার বাড়ি গেছেন ?”
রুদ্র নীলু এদের কথা মিঠির রাগকে বাড়িয়ে দিতেই যথেষ্ট আর ঠিক তাই হলো ৷ ওদের কথা শুনতেই মিঠির রাগটা বেড়ে গেল , তবুও ভদ্রতার খাতিরে বেশ শান্ত ভাবেই বলল
” নীলু আর রুদ্রর ডিভোর্স হয়ে গেছে 1 মাস হতে যাই আর আজকে আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন যে নীলু কই ! সব খবরই তো রাখেন তাহলে এই খবরটা রাখেননি ৷”

মিঠির কথায় উনি বেশ চমকে গেলেন ৷ ওনার ও আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মিঠির সাথে তাহলে রুদ্রর নিশ্চয়ই কোন অবৌধ সম্পর্ক আছে ৷ খবরটা উনি বেশ ভালোভাবেই ওনার কানে পুরে নিলেন, এবার এই জিনিসটাই ওনাদের কদিন এন্টার টেইনমেন্টের জন্য যথেষ্ট ৷ বেশি কিছু না করলেও হয়তো এই ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে অন্য ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে দাড়িয়ে থাকা মহিলার সাথে গসিপ করবেন ৷
মিঠি ওর আর শ্রাবনের বিয়ের কথাটা বলল না , কারন এই একমাস হলো ওদের বিয়ে হয়েছে , সেটা যদি ওনাকে বলতো তাহলে উনি হয়তো মিঠিকে আরো কিছু কথা শোনাতেই তাছাড়া শ্রাবনের সাথে যখন ওর ডিভোর্সটা হয়েই যাবে তখন এসব ব্যাপারে বাইরের লোককে জানানোর মতো বোকামো মিঠি কখনোই করবে না ৷ উনি মিঠিকে ওনার কড়া ভাষায় জবাব দিতে যাবেন তার আগেই মিঠি বলল
” নিন আপনার ফ্লোর এসে গেছে ৷”

উনি মিঠির দিকে রাগী চোখে তাকালো, মুখ বেকিয়ে চলে গেলেন ৷ আসলে শহরের মানুষরা কেউ কারোর সুখ সহ্য কলতে পারে না , যে যার মতো থাকে কিন্তু মহিলারা গসিপ করতে ছাড়ে না ৷
মিঠি হাত ঘড়ির দিকে তাকালো , রাত 9.30 ৷ আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে কারন রুদ্র এই কদিন আগে আগে ফিরছে আর মদের আসর জমাচ্ছে ৷ তাই রুদ্র যাতে নেশায় অবচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার আগে মিঠি যাতে ডিভোর্স এর কথাটা বলতে পারে সেই কারনেই তাড়াতাড়ি ফেরা ৷ 6 ফ্লোরে নেমে গেল মিঠি ৷ কিছু পা হেটেই রুমের সামনে যেতেই দেখলো যে দরজা লক করা, অন্য দিন দরজা এতখন দরজা লক করা থাকে না কারন অন্যদিন রুদ্র তাড়াতাড়ি ফেরে তারমানে আজকে রুদ্র এখনো ফেরেনি, যাই হোক মিঠির জন্য ভালোই হলো,রুদ্রর চেতনা থাকা অবস্থায় সব বলতে পারবে ভেবেই মিঠির ভালো লাগছে কিছুটা ৷ মিঠি রুমে ঢুতে না ঢুকতেই ওর পিছন পিছন রুদ্র রুমে ঢুকলো ৷ মিঠি ব্যাগটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে যেতে নিলেই রুদ্র হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে উঠলো ” নেক্সট ডেট তোমাকে কোর্টে যেতে হবে নাহলে আইন তোমার ওপর কড়া নজরদারি রাখতে বাধ্য হবে ৷”

রুদ্রর কথা শুনে মিঠি অবাক হলো ৷ রূদ্রর উপস্থিত বুঝতে পেরে বলল
” আমি কোর্টে যাবো না, আমার অফিস আছে , আমার সময় হবে না ৷”
রুদ্র মিঠির কাছে গিয়ে বলল ” দেখো রাগ করো না, সব ভালোই হবে যা হবে ৷ আর আমি তোমার সাথে খারাপ বিহেভ করেছি তার জন্য আই এম রিয়েলি সরি ৷ আসলে রাগের মাথায় বলে ফেলেছি বোঝোই তো ৷”
মিঠি রুদ্রর দিকে দাতে দাঁত চেপে বলল
” এখন আর সরি বলে লাভ নেই, আমি আর তোমার সাথে থাকবো না, আই ওয়ান্ট ডিভোর্স ৷”
রুদ্র মিঠির কথা শুনে তাচ্ছিল্যর সুরে হাসতে হাসতে বলল ” ওয়েট ওয়েট ৷ ইউ ওয়ান্ট ডিভোর্স রাইট ?”
মিঠিও রেগে বলল ” হ্যাঁ ৷ থাকবো না তোমার মতো মানুষের সাথে যে আমকেই কখনো ভালোবাসেনি কেবল আমার শরীরটাকে ভালবেসেছে ৷”

রুদ্র এবার রেগে গিয়ে এক হাতে মিঠির দুই হত শক্ত করে চেপে ধরে আর এক হাত দিয়ে মিঠির মুখটা চেপে ধরে বলল ” তুমি কি একটা সত্যি কথা জানো যে তুমি একটা পতিতা ৷ মানে রিয়েলি ইউ আর এ প্রসিটিউট৷ যে একটা বিবাহিত পরপুরুষকে নিজের করে পেতে চাই তার শরীর বিলিয়ে দেই শুধু তার সাথে রাতে পর রাত কাটাবে বলে সে পতিতাই হয় ৷ আর তুমি মেয়েটাই এটা পতিতা ,যে শরীর বিলিয়ে দিয়ে সুখ খোজার জন্য একবার এই পুরুষ তো আর একবার অন্য পুরুষের কাছে যাও ৷ তুমি কি ভাবলে এতো সহজে তোমাকে ছেড়ে দেবো ? নাহ নাহ , তোমার জন্যই তো আজ এতোকিছু ডার্লিং ৷ তোমার জন্যই নীলুকে ডিভোর্স দিলাম, কোর্টে কেস লড়ছি আর তুমি এখন ডিভোর্স নিয়ে মুক্তি পেতে চাও আর আমি এত সহজে দিয়ে দেবো ৷ না না ৷ একদম না ৷ ইচ্ছা থাক বা না থাক দিনশেষে এই ফ্ল্যাটে তোমাকে না পেলে তোমকে গুম করে দেবো একদম ৷ ”

কথাটা বলে মিঠিকে ছেড়ে দিলো , মিঠি বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে ৷ রুদ্রকে গালিগালাজ করে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সেই শক্তিটুকু ওর মাঝে নেই ৷ হাঁপাতে হঁপাতে ডাইনিং টেবিলের ওপর থাকা বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে জল খেলো ৷ রুদ্র ওয়াশরুমে ঢোকার আগে বলল ” আমি এক্ষুনি আসছি , পালানোর চেষ্টা করলে খবর আছে ৷”
মিঠির গলা শুকিয়ে আসছে রুদ্রর এমন কাজে তবে আর যাই হোক রুদ্রর সাথে থাকবে না,দরকার হলে রুদ্রর বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করবে ৷”

স্টেজে গান গাইছে শ্রাবন, নীলুও সাথে এসেছে ৷ আজ সেমি ফাইনাল, আজকে ফাস্ট হলে শ্রাবন ফাইনালে গিয়ে গাইবে ৷ নতুন অ্যালবাম বানানোর সুযোগ পাবে , গান হিট হলে ওর আরো গান আসবে ৷ নীলু কেবল বাইরে দাড়িয়ে উপওয়ালাকে ডাকছে যাতে তিনি যেন ওদের জীবনে ভালো কিছুর আগমন ঘটান ৷ ওয়েটিং রুমে বসে আছে নীলু ৷ শ্রাবনের সব জিনিস ওর কাছে, ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ৷ হঠাৎ গানের মাঝে নীলুর কাছে কল এলো ৷ নীলুর ফোনে কল এসেছে ৷ অচেনা নাম্বার থেকে ৷ নীলু অনেক দ্বিধা নিয়ে কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এলো

জলকাব্য পর্ব ১৫

” মিঠি বলছি ৷ তোমার সাথে কিছু দরকারি কথা ছিলো ৷ ”
মিঠির নাম শুনে নীলুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো ৷ চুপচাপ রইলো ৷ গলা দিয়ে আওয়াজ বার হচ্ছে না ৷ কি বলবে ও ?
নীলুর নিস্তব্ধতা দেখে মিঠি বলল
” আই ওয়ান্ট টু হেল্প ইউ ৷ আই মিন রুদ্রর এগেইনস্টে প্রমান জোগাড় করতে আমি তোমাকে হেল্প করবো ৷”
নীলু ভাবলো মিঠি হয়তো মজা করছে , কারন আজ মিঠির কারনেই ওদের বিচ্ছেদ ৷
নীলু বলল ” আমার কোন হেল্প লাগবে না কারোর থেকে , সরি রং নাম্বার ৷” কথাটা বলে কেটে দিতে গেলেই মিঠি বলল ” আর একটা অপশন আছে ৷ তুমি চাইলে রুদ্রর কাছে ফিরে যেতে পারো কারন আমি রুদ্রকে ডিভোর্স দিচ্ছি ৷ তাই তুমি এখন ওর লাইফে থাকলে কি না থাকলে আই ডোন্ট কেয়ার ৷ তাই এই সবকিছুর জন্য তোমার সাথে দেখা করার প্রয়োজন ৷ আসবে ?”

নীলু চুপ করে আছে ৷ রাগে শরীরে জ্বালা ধরছে , ঘৃনা লাগছে তীব্র , একটা মেয়ে কতোটা খারাপ হতে পারে , আর কতোটা নীচে নামতে পারে ৷ মিঠি আবার বলল ” আমি যতদূর জানি কালকে আবার তোমাদের কোর্টে ডেট আছে, আমি কালকেও যাচ্ছি না তাই আশা করি কেস কালকেও এগোবে না , যতখন না আমি যাচ্ছি কেস নড়বে না , উল্টে টাকা নষ্ট হবে ৷ তাই পরের মঙ্গলবার আমি গড়িয়াতে থাকছি , তুমি যদি চাও যে এই কেসের সমাধান হোক অথবা রুদ্রকে ফিরে পেতে তাহলে সেদিন বিকাল 4.30 টেই দেখা করো আমি লোকেশন সেল্ড করে দেবো ৷ বাকিটা তোমার ওপর নির্ভর করছে ৷”
কথাটা বলে মিঠি কল কেটে দিলো ৷ নীলু ফোনটা নিয়ে ব্যাগে ঢোকালো আর বেরিয়ে গেল ওখান থেকে ৷

জলকাব্য পর্ব ১৭