ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৫

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৫
মেহা মেহনাজ

ভোর হলো। রোজ যেভাবে ভোর হয়, ঠিক সেভাবেই। আঁধার বুক চিঁড়ে একটু একটু করে সূর্যরশ্মি পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়ে। সব কোণায় কোণায়- আলোকিত করে তুলে গোটা জগতটাকে। শুধুমাত্র আজকের ভোর যেন বকুলের জীবনকেই আরও আঁধারের মুখে পতিত করল।

বকুল তখনো কিছু জানে না। তবে টের পেয়েছে, কিছু একটা হয়েছে। তার অবচেতন মন ভেবে নিয়েছে, বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার তার কপালে পূর্বের চেয়েও আরও বেশি নির্যাতন লিখা হয়ে গেছে। কিন্তু তার চাইতেও যে বড় কিছু অপেক্ষা করছে, সেই জ্ঞানটুকু এখনো মস্তিষ্কে হানা দেয়নি। সকালের নাশতায় সবকিছু ঠান্ডাই ছিল। আগের চেয়েও বেশি ঠান্ডা। কারো মুখে টুকটাক কথাও নেই। যে যার মতো চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেল। বকুলের প্রাণে অসম্ভব অস্থিরতা। কেউ কেন তাকে কিছু বলছে না! বললেও বোধকরি মাথার চিন্তাটা কমতো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বেলা গড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার। হাটবাজারের দিন। তবে মোরশেদ যায়নি। বুধে আরেকবার হাট বসে। সেদিন যাবেন হয়তো। ঘরে মুদি বাজার প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। আজকে চালে ডালে সবজি মিশিয়ে খিচুড়ি রান্না হবে। বকুল একবার নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আম্মা, একটা মুরগি জবে দিমু? খিচুড়িতে দিলে খাইতে ভাল লাগত।”
রুনু বেগম গম্ভীর কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করেন,
“দরকার নাই।”

এরপর আর কিছু বলল না বকুল। একবার আঁড়চোখে শাহজাদির দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। শাহজাদি হেলেদুলে যাচ্ছে পুকুর পাড়ে। সম্ভবত গোসল করবে। অথচ বকুল সবসময় বিকেলে গোসল করত। সব কাজ শেষ করে তারপর। অনেক সময় রাতের রান্না শেষে একেবারে গোসল করে ঘরে উঠত। সকাল সকাল রানীর মত গোসল করে বসে থাকার কপাল তার কখনো হয়নি!

আধ প্রহরের দিকে ঘামে জর্জরিত ক্লান্ত একখানা ময়লা বর্ণের মুখ মোরশেদদের উঠোনে এসে উঁকি দেয়। কোথাও কেউ নেই। খাঁ খাঁ রোদ্দুর। উঠোন ফাঁকা। মাথা গোঁজ করে বড় ব্যর্থ ভঙ্গিতে সে এগিয়ে চলে বাড়ির পেছনে। সরু মাটির রাস্তা ফুরিয়ে গেলে বড় কলাপাতা আর সুপারির খোল মিশেলে বেড়া চোখে পড়ল। এক হাতে সেসব টেনে ভেতরে মুখ দিতেই আরেক জোড়া চোখ তাঁকে দেখে ভীষণ চমকালো। বকুল বসে ছিল। তার পায়ের নিচে বটি, খিচুড়িতে বাগাড় দেবে। সেই জন্যে পেঁয়াজ কুচি করছিল। বাপকে দেখে সব ফেলে ছুটে এলো সে। এসেই বাপের হাতে ধরে থাকা চারটি হাঁস নিজের হাতে নিয়ে নিলো। একান ওকান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল হাসি। কত দিন পর বাবার মুখটা দেখার সৌভাগ্য হলো!

“আব্বা, বহো।”
বকুল ফিরি (কাঠের তৈরি বসার ব্যবস্থা) এগিয়ে দিলো। মকবুল বসেন না। কেমন জড়তা নিয়ে মেয়ের মুখের দিকে স্পষ্ট নয়নে তাকিয়ে থাকেন। শাহজাদি আসে। আসে রুনু বেগম ও। শাহজাদি এসে বকুলের হাত থেকে হাঁস গুলো নিয়ে নিতে গেলে রুনু বেগম থামতে বললেন।
“ওডি নিয়া যাউক। যেই ঘরের লগে আর সম্পর্ক থাকব না,হেই ঘরের কিচ্ছু নিমু না।”
বকুল ভ্রু কুঁচকে অবাক চোখে তাকাল।
“আম্মা, এডি কি কন?”

রুনু বেগম কঠিন গলায় শাহজাদি কে আদেশ করলেন,
“মোরশেদরে খবর দাও। যাও।”
শাহজাদি চোখমুখ কুঁচকে শ্বাশুড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে ঘরের ভেতর চলে গেল। বকুল হতভম্ব মুখ করে চেয়ে রইলো। ওর মাথায় আগামাথা কিচ্ছু ঢুকছে না।

মোরশেদ ঘরেই ছিলেন। বকুলের বাবা এসেছে খবর পেয়ে তিনি প্রায় হন্তদন্ত হয়েই ছুটে এলেন। এরপর যা হলো, সবটা ঝড়ের বেগে হয়ে গেল। বকুল ঠিকঠাক কিছু বোঝার সুযোগ ও পেল না। মোরশেদ কিছু কথা ছুঁড়ে দিলো। বকুলের বাবা কি যেন বলতে চাইলেন, বোঝাতে চাইলেন, পারলেন না। ছেলের বাড়ি, ছেলে স্বয়ং উচ্চস্বরে কথা বলছে! সেখানে গরীব বাবার কিচ্ছু বলার সুযোগ নেই।

বকুল নিজেও কিছু বলতে চাইলো। ওর ভেতরটা অস্থিরতায় ভরে গেল। কিন্তু গলা দিয়ে বের হলো না একটি শব্দও। দু’গাল বেয়ে শুধু টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। মেয়েদের জীবন কত সস্তা! কত সহজ তাদেরকে বাড়িচ্যুত করা! চাইলেই বাবার বাড়ি থেকে সারাজীবনের জন্য আরেক বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া যায়! চাইলেই আবার শ্বশুর বাড়ি থেকে ‘এটা তোমার বাড়ি না’ বলে বের করে দেওয়া যায়। তাহলে কোনটা মেয়েদের বাড়ি? কোথায় গেলে কেউ আর মেয়েদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার মতো সাহস করে উঠতে পারবে না? কোনখানে শান্তি আছে?

ঝড় থামলো একটি শব্দ তিনবার উচ্চারণের মাধ্যমে।
‘তালাক, তালাক, তালাক!’
বকুলের স্তব্ধ নয়ন তখন কাঁদতেও ভুলে গেছে। একটা সম্পর্ক ছিন্ন করা এত্ত সহজ?
এই প্রথম বকুলের কি যেন হলো। কেমন যেন লাগল। মনে হলো নিজের ভেতর সে আর নেই। সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। সব ভয় কেটে গেছে। সে দুই পা সামনে এগিয়ে শাহজাদির মুখোমুখি দাঁড়াল। কয়েক সেকেন্ড নিশ্চল, স্থির হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়েই রইলো। তারপর বলে উঠে,

“এই ঘরের সবখানে আমার হাত লাগছে। সবখানে আমার ছোঁয়া। তাও নাকি কিছুই আমার না। কারণ স্বামীডাই তো আমার না! আপনের কপালে এমুন দিন যেন না আহে, হেই দোয়া আমি সবসময় করুম। স্বামী,সংসার দুইডা নিয়াই ভালো থাহেন। আপনেরে আমি মাপ কইরা দিলাম।”
শাহজাদি হৈহৈ করে উঠে।

“আরে, আমারে মাপ করার তুমি কেডা? নিজের সংসার নিজে খাইছো, নিজের স্বামীরে নিজেই বশ কইরা রাখবার পারো নাই। এহন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপাইতেছো…খা*** মা***…”
রুনু বেগম ধমকে উঠলেন,
“নতুন বউ! মুখের ভাষা ঠিক করো। ও যা কইতে চায়, কউক। তুমি উত্তর দিতাছো ক্যান?”
“আমারে যা মন চায়, তা কইবো আর আমি দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া হুনুম? ও আমারে মাপ করার কেডা? আমি কি ওর সংসার খাইছি নাকি!”

বকুল হাসে। কেমন এলোমেলো সেই হাসি।
“না গো। আমার কোনোদিন সংসারই অয় নাই। আমার সংসার অইলে এমতে আমারে তাড়ায় দিতে পারত না। যা আছিল, সবটা স্বপ্ন। স্বপ্ন ভাইঙ্গা গেছে। আমার মনে কুনু দুক্ষ নাই।”
মোরশেদ দাঁত কিড়মিড় করে তাকিয়ে আছেন। কেন যেন কিছু বলছেন না। অথবা বকুলকে বলার মতো সব কথারা হয়তো ফুরিয়ে গেছে।

বকুলই বলল। যার চোখের দিকে আজ অবধি কোনোদিন চোখ তুলে তাকায়নি, তার দিকে ভীষণ কাঠিন্যতা নিয়েই বলল,
“তয় আপনারে আমি মাপ করলাম না। আল্লাহয় আপনার শেষখান যেন আমারে দেহায়।”
“কি কইলি তুই.. কি কইলি..”
মোরশেদ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বকুলকে ধরার জন্য হাত বাড়াতেই বকুল পিছ পা হয়।
“আমারে আর ছুঁইয়েন না। পাপ অইবো। আমি আর আপনার ঘরের বউ লাগি না।”
তারপর আকাশ পাতাল এক করে দিয়ে হেসে উঠে ও। সবাই তাজ্জব চোখে তাকিয়ে রয়। মকবুল কাঁদোকাঁদো মুখ করেন। একবার ডাকেন,

“ওমা! মা-রে..”
বকুল হাসি থামায় অনেকক্ষণ পর। কি ভেবে ওর এত খুশি লাগছে, কেনই বা এত হাসি পাচ্ছে, ও জানে না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজেকে পাগলের ন্যায় লাগছে। এমন কেন হচ্ছে? মোরশেদকে তো সে কোনোদিন ভালোই বাসেনি!
“আব্বা, লও.. তোমার বাড়ি যাই।”
মকবুল এক হাতে নিয়ে আসা হাঁস গুলো ধরেন, আরেক হাতে চাপেন মেয়ের এক হাত। বেরোতে বেরোতে বকুল একবার পেছন ফিরে তাকায়।

“আমার কাপড়ডি সব আগুন দিয়া পোড়াইয়া দিয়েন। যেমনে আমারে পোড়াইলেন, একদম ওমনেই…”
উঠোন পেরোতেই বকুল পথের উপর বসে পড়ে। আর পা আগায় না। বুকের ভেতর চেপে রাখা পাথরটা নড়ছে। পাজরে পাজরে অস্বাভাবিক কাঁপন শুরু হলো। সবকিছু ভেঙেচুরে গুড়িয়ে যাচ্ছে যেন। মকবুল ভয় পেয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
“মা, ঠিক আছোস?”
বকুল হাউমাউ কান্নায় দুই ধারে মাথা নাড়ালো।
“না আব্বা, লাগতাছে কেউ বুক কাইট্টা দিছে। ঝরঝর কইরা র*ক্ত পড়তাছে। আপনে কি দেখতাছেন আব্বা? দেখতাছেন হেই র*ক্ত?”

যতটা আড়ম্বর করে বিয়েটা হয়েছিল, ততটাই অনাড়ম্বর ভাবে সবকিছু ভেঙে গেল। এক কাপড়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত বকুলকে দেখতে দলে দলে লোক আসা শুরু করল। সবাই পাড়াপ্রতিবেশি, প্রতিবেশির প্রতিবেশি। যেন তালাক নয়, বিশাল বড় মেডেল জিতে এসেছে ও! প্রথম প্রথম যারা এসেছে, বকুল সবাইকে দেখা দিয়েছে। সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে ধৈর্য্য সহকারে। নানান লোকের নানান ধরনের মন্তব্য, তিক্ততা সহ্য করেছে মুখ বুঁজে।

তারপর আর পারল না। দোতলার মাচায় উঠে নিজেকে অন্ধকারে আবদ্ধ করে নিলো। তবুও কানে ভেসে এলো নিচে হওয়া কত রকমের কত কথা! কেউ ভালো বলল, কেউ মন্দ! কেউ বা সম্পূর্ণ দোষ বকুলের ঘাড়েই চাপালো। তাদের সঙ্গে যোগদান করে বকুলের সৎ মাও। বারবার ইনিয়েবিনিয়ে সবাইকে বোঝালো, বকুল তার সংসারে পুনরায় বোঝা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে। এখন এই মেয়েকে কে নেবে, আর কোথায়ই বা টাকা পাবে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার! তিনি বড় পেরেশান হয়ে গেছেন।
বকুল সব শোনে,বোঝে,নিরবে কাঁদে। এত অসহায়, এত অসম্পূর্ণ, এত শূন্য- তার এর আগে কক্ষনো লাগেনি!

আজ শুক্রবার। জুম্মাবারের দিন। মধ্যে পেরিয়েছে তিনটি দিন। তিন ভাই-বোন আর সৎ মায়ের সংসারে বকুল নর্দমার কীটের মতো আশ্রয় পেল। মুখ বুঁজে সকাল থেকে রাতের সবকিছু একা হাতে সামলে নেয়। ভুলেও সৎ মাকে কুটোটি নাড়তে দেয় না ও। সংসারের বেহাল দশা। আগে গরু-ছাগল যাও বা ছিল, এখন তাও শেষ। বসে বসে খেতে থাকলে একদিন রাজার ভাণ্ডারও ফুরিয়ে যায়! সবার পাতে পাতে প্রতিদিন খাবার তুলে দেওয়া- এর চেয়ে ভয়াবহ জিনিস আপাতত ওদের কাছে অন্য কিছু না!

এমনই সময়ে একটা সুসংবাদ এলো। শহর থেকে একজন শিক্ষিত, ভালো মানুষ এসেছে। পেশা লেখালেখি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে বেড়ায়। অনেক সিনেমার ডায়লগ রেডি করে। নিজের কয়েকখানা বই ও আছে। তার জীবন টা সম্পূর্ণ ডুবে গেছে সাহিত্য জগতে। এমন একজন মানুষ মনপুরায় এসেছে। এসেই কেমন করে যেন প্রথম সাক্ষাৎটা মকবুলের সঙ্গে হয়ে গেল। মনপুরায় কোনো হোটেল নেই। উঠলে লোকের বাড়ি উঠতে হবে। মকবুল প্রথমে একটু চিন্তিত হলেও বেশ ভালো দাম দিয়ে প্রতিটিদিন থাকবে শুনে তিনি খুশিমনে রাজী হয়ে গেলেন। যা পয়সা দেবে, একটু সামলে চললে ক’টা টাকা বাড়তি আয়ও হবে! শোনা গেল ভদ্রলোকের নাম তুষার, থাকবে প্রায় মাসখানেক। বেশ কয়েকটি সিনেমার ডায়লগ লেখার জন্য সে একটু নিরিবিলি গ্রাম্য পরিবেশে এসেছে। হাওয়া বদল করলে মন ফুরফুরে হয়। ভালো মন থেকে ভালো ভালো কথা বের হয়।

বাড়িতে একজন নতুন মানুষ থাকবে- এই নিয়ে কারো কোনো আপত্তি না থাকলেও বকুলের আপত্তি দেখা দিলো। তবে সে কাউকে কিছু প্রকাশ করল না। তার কথা কেউ পাত্তাই দেবে না। উল্টো সৎ মায়ের বকা খাওয়া! কি দরকার?
একজন পরপুরুষ ওদের সংসারে জড়িয়ে থাকবে, ভাবতেই কেমন গায়ে শূল বিঁধছে। তবুও বকুল চুপ। যা হচ্ছে হোক। ও ওর মতো থাকবে।

ওদের প্রথম দেখাটা হলো সন্ধ্যে বেলা। যখন শীত নামতে শুরু করেছে জেঁকে। বকুল রান্নাঘর থেকে সব কাজ শেষ করে পুকুর থেকে পানি তুলে হাত-পা ধুয়েছে মাত্র, ওমনি ওর পেছনে এসে তুষার দাঁড়াল। বকুল প্রথম দেখায় ভীষণ ভয়ে চমকে উঠল। কতখানি লম্বা! ভীষণ পুরুষালি শরীর, সুঠাম সুন্দর দেহ, মুখখানা মায়া মায়া, তীর্যক চুল, ঠোঁটে একটা হাসি লেগে আছে। আরও চমকালো যখন তুষার বিনয়ের সঙ্গে বলে উঠে,

“আপনি কি দয়া করে আমাকে পানি তুলে দিবেন? আমার পুকুরে নামার অভ্যেস নেই।”
এমন শুদ্ধ ভাষা, সুন্দর আচরণ, পুরুষের নম্রতা-ভদ্রতা, সবকিছু প্রথম চোখের সামনে ধরা দিলো ওর। এর আগে দেখেছে, তবে ছবিতে। বিয়ের আগে প্রতি শুক্রবার মিলন ভাইদের বাড়ি যাওয়া হতো ছবি দেখার জন্য। হৈহৈ করে কত লোক আসতো! খুব মজা হতো। সেইসব দিন এখন ফুরিয়ে গেছে।
বকুলের হাত-পা সব থরথর করে কাঁপন শুরু করে। গলা শুকিয়ে আসে। অজানা ভয় চেপে বসল বুকের ভেতর। কেন এমন লাগছে, সেই উত্তর অজানা। আকাশে আলো পুরোপুরি ভাবে ফুরিয়ে যাচ্ছে। একটুখানি লালীমা ঘঁষা পশ্চিমে। তুষার তাড়া দিয়ে উঠে,,

“কি হলো? আপনি কি পানি তুলে দিতে পারবেন না?”
“পা…পারুম।”
গলা অস্বাভাবিক হাড়ে কাঁপে। তুষারের ভ্রু জোড়া আপনাআপনি কুঁচকে আসে। অন্ধকারে সে চোখ কুঁচকে ভালো মতো বকুলকে দেখার চেষ্টা চালায়। মেয়েটা কে? প্রথম দেখল! এ বাড়ির কেউ?
বকুল ফের পুকুরে নামে। ছোট বালতি ভরে পানি তুলে উঠে আসে। উঠার সম্পূর্ণ সময় ওর চোখ স্থির হয়ে রয় তুষারের দিকে। তুষার খেয়াল করল। বকুলের চোখে চোখ রেখে সে হাসি ছুঁড়ে দিতেই বকুলের পা পিছলে গেল। বালতি হাত থেকে ছুটে পড়ে যায়। বকুল ধুপ করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাদামাটির উপরে। তুষার ‘আরে আরে’ বলে এগিয়ে আসে।
“ঠিক আছেন?”

তুষার ওর একটা হাত বাড়িয়ে দেয় বকুলকে টেনে তোলার জন্য। বকুল স্থির চাউনিতে তাকিয়ে। ওই হাতখানা ধরার প্রবল ইচ্ছে বুকে চেপে বসলেও সাহস হয় না! কিছু জিনিস এতই সুন্দর যে তার সৌন্দর্য ধরতে গেলে পু*ড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তুষার ঠিক তেমনই!

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৪

মূল গল্প এখান থেকেই শুরু।
গল্প ২০ পর্ব হওয়ার সম্ভাবনা। এরচেয়ে বেশি-কম হতে পারে।

ঝরা বকুলের গল্প পর্ব ৬