ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৫

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৫
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান,তানিশা,আমান আর শিরিন জিসানকে সাথে করে নিয়ে নীলাদের বাড়িতে চলে গেলো।জিসানের কথায় ঠিক হলো।আসলেই নীলার বাবা একজন নামকরা সন্ত্রাসী। আশেপাশের লোকেরা সেটাই জানালো নোমানদের।তবে নীলা যে খারাপ মেয়ে সে কথা একজন লোকও বললো না।তবে কেউ কেউ মনে করে বাবা খারাপ তাহলে মেয়ে ভালো হয় কি করে?
সেজন্য অনেকের ধারণা নীলাও খারাপ মেয়ে।কিন্তু বাস্তবে নীলা আসলেই ভালো আর সরল প্রকৃতির।

নীলাদের বাড়ি একদম অজপাড়াগাঁয়ে।ছোট্র চার টি ঘর নীলাদের।পাশে একটা ডোবা।আর পুরো বাড়িটি কেমন যেনো অন্ধকারের মতো।কারণ চারপাশে গাছপালা দিয়ে ঘেরা।তবে নীলা গ্রামে থাকে না।সে ঢাকায় পড়াশোনা করে আর মেসে থাকে। এইজন্য জিসানের সাথে তার পরিচয় হয়।তারপর পরিচয় থেকে প্রেম ভালোবাসা শুরু হয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জিসান মোটেও রাজি নয় নীলাকে বিয়ে করতে।সে কখনোই ভাবতে পারে নি এইরকম একটা ছোট পরিবারের মেয়ের সাথে তার বিয়ে হবে।সে নীলার চালচলন আচার আচরণ দেখে ভেবেছে সে কোনো বড়লোক ঘরের মেয়ে।
আসলে নীলার বাবা নীলাকে কোনো দিক দিয়ে কমতি রাখে নি।ভালো কলেজে ভর্তি করিয়েছে,ভালো ভালো পোশাক কিনে দিয়েছে।দেখলে যে কেউ ভাববে উচ্চ বংশের মেয়ে সে।

তানিশা আগেই নীলাকে বলেছে যে তারা আসবে আজ।সেজন্য নীলার পরিবারের সবাই ওয়েট করে আছে তানিশাদের জন্য।তানিশারা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই সবাই বের হয়ে আসলো রুম থেকে।অনেক বড় পরিবার নীলাদের।
নীলা সবাইকে দেখামাত্র রুমে নিয়ে গেলো।আর এক এক করে তার পরিবারের লোকদের সাথে পরিচয় করে দিলো।
হঠাৎ এক পিচ্চি ছেলে জোরে চিৎকার করে বললো,ডাক্তার ম্যাডাম আপনি এখানে?
তানিশা সহ বাকি সবাই পিচ্চির কথা শুনে চমকে উঠলো।
নোমান আর তানিশা তো সাথে সাথে দৌঁড়ে পিচ্চির কাছে চলে গেলো।আর বললো,
আদ্রিয়ান!তুমি এখানে?তোমার আম্মু কই?

আদ্রিয়ান সেই কথা শুনে বললো,আম্মু তো রান্নাবান্না করছে।ডেকে দিবো আম্মুকে?
নীলা তখন বললো ম্যাডাম আপনি আদ্রিয়ান কে চেনেন?
তানিশা বিস্ময় ভরা মুখ নিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো,এ কে হয় তোমার?
নীলা তখন বললো আমার ভাই হয় ম্যাডাম।
তানিশা তখন বললো, তোমার বাবার নাম কি আকবর?
–হ্যাঁ ডাক্তার ম্যাডাম।কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন?

নীলার কথা শুনে তানিশা আর নোমানের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।এ তারা কি শুনছে?নোমান তো এই কথা টা শুনেই মাটিতে বসে পড়লো আর বললো, মা তুমি এটা কি করেছো?আমি তো ভাবতেই পারছি না কিছু।আমার বাবার এখন কি হবে?কত আশা করে ছিলাম আমরা যে বাবার জীবনে আবার সুখ ফিরে আসবে।
আমান,শিরিন আর জিসান কিছুই বুঝতে পারছে না।হঠাৎ তানিশা আর নোমান এই পিচ্চিটাকে দেখে এতো ইমোশনাল কেনো হলো?কিন্তু আমান মনে মনে ভাবলো ইনি আবার কোন আকবর?
আমান সেজন্য তানিশাকে বললো,তানিশা হয়েছে টা কি?নোমান এরকম করছে কেনো?
তানিশা তখন বললো, আমান ভাইয়া সর্বনাশ হয়ে গেছে।মা তো আকবর কে সত্যি সত্যি বিয়ে করেছে।আদ্রিয়ান আর নীলা মা আর আকবরের সন্তান।

আমানের মাথাতেও এবার আকাশ ভেঙে পড়লো।সবাই কিছুক্ষনের জন্য চুপচাপ থাকলো।
এদিকে আকবর নীলাকে ডেকে নিয়ে বললো, এনারা এসব কি বলছে?তুই না বললি বিয়ের মানুষ আসবে।কিন্তু এনারা তো পাগলের মতো ভুলভাল বকে যাচ্ছে।

নীলা তখন বললো হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছি।কিন্তু এনারা কেনো যে এমন করছে সত্যি আমি বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ মালিহা চৌধুরী শরবতের গ্লাস নিয়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করলো।আর সবাইকে সালাম দিলো।কিন্তু তিনি যখন আমান,নোমান,তানিশা আর শিরিন কে দেখলেন সাথে সাথে শরবতের গ্লাস রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
তানিশা তখন বললো মা দাঁড়ান।কই যাচ্ছেন?সেদিন ওভাবে কেনো পালিয়ে এসেছেন?আপনার ছেলেরা আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে একদম পাগল হয়ে গেছে।এইভাবে ছেলেদের কে একা রেখে এসে কাজ টা ঠিক করেন নি আপনি?
মালিহা তানিশার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলেন না।

নোমান তখন দৌঁড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,তুমি কি করে আমাদেরকে রেখে এভাবে চলে এসেছো মা?আমরা তোমাকে খোঁজার জন্য এমন কোনো জায়গা বাদ রাখি নি।
মালিহা সেই কথা শুনে বললো, কেনো খুঁজেছিস তোরা?এতোদিন তো মা ছাড়াই ছিলি?তাহলে আজ কেনো মাকে খোঁজার প্রয়োজন মনে হলো তোদের?

আমান সেই কথা শুনে বললো, মা আমরা কি জানতাম নাকি তুমি বেঁচে আছো?জানলে তো কবেই নিয়ে যেতাম আমাদের কাছে।এখন যখন তোমার দেখা পেয়েছিই আর কিছুতেই এভাবে দূরে থাকতে দেবো না।
আকবর তখন এগিয়ে এসে বললো,মালিহা এরা তোর আমান আর নোমান?

মালিহা কথা বলতে পারতেছিলো না।তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, হুম।এরাই আমার সেই আমান আর নোমান।
মালিহার কথা শুনে বাড়ির সবাই অবাক হলো।এ কি শুনছে তারা?পুরো এলাকা জুড়ে হই হই পড়ে গেলো।সবাই শুধু বলতে লাগলো এতো বছর পর মালিহার সন্তানরা ফিরে এসেছে।কেউ কেউ তো আফসোস করতে লাগলো।কেউ কেউ মালিহাকে পোড়াকপালি বলেও সম্বোধন করলো।এতো বড় বড় ছেলে থাকতে সে কি কষ্ট করে জীবন যাপন করছে।আর যখন শুনলো মালিহার বড় ছেলে পুলিশ অফিসার আর ছোট ছেলে ডাক্তার সবাই আরো বেশি হা হুতাশ করতে লাগলো।
হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে এসে বললো,কই আমার আমান নোমান?দেখি?

আমান আর নোমান সেই কথা শুনে মহিলাটির কাছে গেলো।মহিলাটি তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো,একটু নিচু হ তোরা।আমি একটু তোদের মুখ খানা বুলিয়ে দেই।তোদের দেখার জন্যই বুঝি আমার মরন হয় নি।এটাই আমার বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা।
আমান আর নোমান সেই কথা শুনে ঝুকে গেলো।আর মহিলা টি আমান নোমান কে চুমু খেয়ে বললো, আমি তোদের অভাগা নানী হই রে।
আমান আর নোমান তখন তাদের নানীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।একদিকে মালিহা কাঁদছে তো অন্যদিকে তার ছেলেরা।এ দৃশ্য দেখে পুরো বাড়ির লোকজন কাঁদতে লাগলো।কারণ এ যে অবিস্মরণীয় ঘটনা।তারা কেউ ভাবতেই পারে নি এতো বছর পর এভাবে মালিহার সন্তানদের সাথে দেখা হবে।

এবার নোমানের নানী বললো, ওই শয়তান,পাষান আর নির্দয়ালু তায়েব কই?ও কি বেঁচে আছে না মরে আছে?একদিনের জন্যও কি ওর মনে হয় নি যে তার বউ সত্যি সত্যি কারো সাথে ভেগে গেছে না কেউ ষড়যন্ত্র করেছে?এতই পাষাণ ওই?আমার মেয়ের জীবন টা একদম ছারখার করে দিলো?শয়তান টা কি ফির বিয়ে করেছে?
নোমান তখন বললো নানি মনি এভাবে বলো না আমার বাবাকে।আমার বাবা এখনো মায়ের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে।বাবা এখন পর্যন্ত মাকেই ভালোবাসে।সেজন্যই তো দ্বিতীয় কোনো নারীকে গ্রহন করে নি।আমার বাবার মতো ভালো মানুষ দ্বিতীয় টি আর কেউ খুঁজে পাবে না।

নোমানের নানী তখন বললো, তো আমার মেয়ে কি খারাপ?আমার মেয়েও তায়েবের স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছে।সে এতো অপমান আর লাঞ্চনা সহ্য করেও বেঁচে আছে শুধুমাত্র তায়েব কে সত্য কথা টা বলবে বলে।তা না হলে কবেই নিজের জীবন টা শেষ করে ফেলতো।
তানিশা তখন নীলাকে বললো তাহলে নীলা তুমি যে বললে আদ্রিয়ান তোমার ভাই হয়।আমরা তো জানি আদ্রিয়ানের আম্মু মিসেস মালিহা চৌধুরী। মা নিজের মুখে বলেছিলো।

নীলা তখন বললো হ্যাঁ ঠিকই তো।আদ্রিয়ানের আম্মু তো আমার ফুপিই।কারণ আদ্রিয়ান হওয়ার সময় আমার মা মারা যায়।তখন ফুপি বাবার কাছে আবদার করে আদ্রিয়ান কে তিনি নিবেন।ওনার পরিচয়ে বড় করবেন।আদ্রিয়ান তো ফুপির কাছেই থাকে।আদ্রিয়ান ফুপিকে মা বলেই ডাকে।আজ আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে শুনে সবাই এসেছে।
নীলার কথা শুনে অবশেষে সবাই চিন্তামুক্ত হলো।তা না হলে তো সবাই একদম চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো।অবশেষে সবার চিন্তা দূর হলো।

এবার সবাই জিসান আর নীলার বিয়ের কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো।তবে নীলার প্রেগন্যান্ট হওয়ার ব্যাপার টা লুকায়িত রাখলো সবাই।কারণ এটা দুই পরিবারেরই মানসম্মানের ব্যাপার।তানিশা আর নোমান ঠিক করলো বিয়ের পর প্রকাশ করবে এটা।মুহুর্তের মধ্যে বাড়িটা আবার খুশিতে ভরে উঠলো।
এদিকে নোমান তার বাবাকে ফোন করে বললো যে তাদের মাকে তারা খুঁজে পেয়েছে।তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে নিজেও ভীষণ খুশি হলেন।কারণ তিনি নিজেও মালিহার জন্য টেনশন করছিলেন।
সবাই সবার কাজে ব্যস্ত থাকলেও আমান কিন্তু আকবরের দিকে শুধু নোটিশ করতে লাগলো।আমানের কেনো জানি মনে হচ্ছে তার মাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পিছনে আকবরেরই হাত আছে।সেজন্য আমান শুধু বার বার আকবরের দিকে দেখতে লাগলো।

আকবর আবার আমানকে এভাবে দেখা দেখে ভাবতে লাগলো, এই ছেলে টা তার দিকে বার বার কেনো তাকাচ্ছে?কিছু আবার বুঝতে পারলো না তো?কারণ পুলিশ দের চোখ তো খুবই খারাপ।ঠিক বুঝে যায় কে অপরাধী আর কে সাধু?

আমান আর নোমান আজকেই মিসেস মালিহাকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলেন।কিন্তু মালিহা বললেন না তিনি কিছুতেই যেতে পারবেন না।তানিশা তখন নোমানের কানে কানে বললো, আরে পাগল,তোমাদের কথা তে তিনি যাবেন নাকি?বাবাকে পাঠাতে হবে।বাবা এসে ওনার বউকে নিয়ে যাবেন।
নোমান তানিশার কথা শুনে আবার আমানকে বললো কথাটা।আমান সেই কথা শুনে বললো এটা তো ভেবে দেখি নি।আচ্ছা আমরা তাহলে কাল বাবাকে পাঠাবো।
এদিকে নীলা আর জিসানের বিয়ের দিন ঠিক করা হলো।শিরিন তার বাবার সাথে কথা বলেই কনফার্ম করেছে ডেট।মিঃ শফিক সাহেব জানেন যেখানে তার মেয়ে আর মেয়ে জামাই আছে সেখানে তিনি না থাকলেও চলবে।তবে শিলা ভীষণ আফসোস করতে লাগলো।তাকে কেনো নিয়ে যাওয়া হলো না?তাদের একমাত্র ভাই এর বউ দেখতে কেমন হবে তা দেখার জন্য সে অস্থির হয়ে রইলো।

নোমান আর আমান মিঃ তায়েব চৌধুরী কে একা একা পাঠালেন মালিহা চৌধুরী কে আনার জন্য।সেজন্য মিঃ তায়েব চৌধুরীর ভীষণ লজ্জা লাগতে লাগলো।তিনি কিভাবে মালিহার রাগ ভাংগাবেন সত্যি বুঝতে পারছিলেন না।আবার ভয় ও হচ্ছে যদি আবার মালিহা না আসে তার সাথে?
তায়েব চৌধুরী কে দেখার জন্য পুরো গ্রামের লোক ছুটে আসলো।কারণ এ যে সত্যি অবিশ্বাস্য ব্যাপার।কত বছর পর মালিহার স্বামী ফিরে এসেছে।কিন্তু মালিহা ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকলো।সে আর তায়েবের সংসারে যাবে না বলে জানিয়ে দিলো।

তায়েব চৌধুরী তার শাশুড়ীর কাছে যেতেই তার শাশুড়ী সেখান থেকে সরে গেলেন।তায়েব চৌধুরী পড়ে গেলো মহা বিপদের মধ্যে।তার ছেলেরা কিভাবে এই রকম একটা সিচুয়েশনের মধ্যে তাকে একাই পাঠিয়েছে।কারণ সবাই যে তায়েবের উপর ভীষণ রেগে আছে।এখন তায়েব কিভাবে মা মায়ের রাগ ভাংগাবে?

নীলা এবার তায়েব চৌধুরী কে রুমে নিয়ে গেলেন।সে নিজ দায়িত্বে সেবা করতে লাগলো তায়েব চৌধুরীর।নীলা হঠাৎ করেই বললো ফুফা ফুফির সাথে কথা বলতে চাইলে এই সাইটের দরজা দিয়ে চলে যান।এই দরজা টা খোলা আছে।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে সেই দরজা দিয়েই মালিহার রুমে প্রবেশ করলো।রুমে গিয়ে দেখে মালিহা অঝোর ধারায় কাঁদছে।তায়েব তখন ধীরে ধীরে মালিহার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বললো, মালিহা!

আমাদের সবার জীবনে আকস্মিকভাবে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটে। যে ঘটনার জন্য কাউকেই দোষ দেওয়া যায় না।আমাদের এই বিচ্ছেদে না আছে তোমার দোষ?না আছে আমার দোষ?তবুও আমি তোমার কাছে মাথা পেতে নিচ্ছি আর আবারও বলছি সব দোষ আমার।আমার জন্যই এসব কিছু হয়েছে।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমার সাথে চলো প্লিজ।
মালিহা তায়েবের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি কি একবারও তোমাকে দোষারোপ করেছি?না বলেছি তোমার জন্য এসব কিছু হয়েছে।

তায়েব চৌধুরী তখন বললো তাহলে তুমি কেনো এভাবে সেদিন চলে আসলে?তুমি জানো না আমি তোমাকে কত টা ভালোবাসি?এতোদিন পর তোমাকে দেখে আমার মনের অবস্থা কেমন হয়েছে?
মালিহা তখন বললো বেশি ভালোবাসো দেখেই তো আজ আমার এই পরিনতি।জীবন থেকে কতগুলো বছর এভাবে হারিয়ে গেলো।না পেলাম স্বামী সুখ,না পেলাম সন্তানদের নিজের হাতে বড় করতে।আমার মতো পোড়াকপালি আর কে আছে?এই বলে মালিহা চৌধুরী আবার কাঁদতে লাগলেন।

তায়েব চৌধুরী এবার মালিহাকে জড়িয়ে ধরে বললো, সব কিছু ভুলে যাও মালিহা।অতীত কে ভেবে কান্না করলেই কি আর অতীত ফিরে আসবে?বাকি জীবন টুকু তোমার সাথে থাকার সুযোগ করে দাও প্লিজ।তোমার ছেলেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।তুমি বাসা থেকে চলে আসাই ওরা তো পাগলের মতো খুঁজে বেড়িয়েছে তোমাকে।খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিনরাত খুঁজে ছে।

মালিহা সেই কথা শুনে আরো জোরে জোরে করে কাঁদতে লাগলো।কত বছর পর প্রিয় মানুষের বুকে সে মাথা রাখার সুযোগ পেলো।তার কান্না যেনো থামছেই না।
এইভাবে মালিহা চৌধুরী আর তায়েব চৌধুরীর মান অভিমানের পালা শেষ হলো।তায়েব চৌধুরী এবার তার শাশুড়ীর রাগ টাও ভাংলেন।তায়েব চৌধুরী এবার মালিহাকে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার পারমিশন চাইলেন।
সবাই ভীষণ খুশি হলেন এই কথা শুনে।এতো বছর পর মালিহা তার হারানো সংসারে ফিরছে এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে?

তবে মালিহার একটাই আবদার তিনি আদ্রিয়ান কেও সাথে নেবেন।কারণ আদ্রিয়ান যে তাকেই মা বলে ডাকে।আদ্রিয়ান ও যে তার আরেক সন্তান।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো শুধু আদ্রিয়ান না।তোমার মাকেও সাথে করে নাও।যে কয় দিন বাঁচবে মেয়ের সাথেই থাকবে।এই অবস্থায় ওনাকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৪

কিন্তু মালিহার মা এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না।তবে তিনি জামাই এর কথা শুনে ভীষণ খুশি হলেন।আর বললেন বাবা আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।আমার ছেলে আর ছেলের বউ তো আছেই।ওরাই দেখবে আমাকে।তুমি শুধু আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিও।তবে মাঝেমধ্যে মালিহাকে নিয়ে আসবে কিন্তু।
অবশেষে তায়েব চৌধুরী মালিহা আর আদ্রিয়ান কে নিয়ে বাসায় ফিরলেন।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৬