ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৪

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৪
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

তায়েব চৌধুরী মালিহার কথা শুনে অনুশোচনা করতে লাগলেন। তিনি যে ক্ষমা পাওয়ারও যোগ্য না।তবুও মালিহার কাছে গিয়ে মাথানত করলেন।হাতজোড় করে বললেন,এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মিস্টেক।আমার উচিত ছিলো তোমাকে খুঁজে বের করে তোমার মুখে সত্য কথাটা শোনা।কিন্তু তখন আমি মানসিক ভাবে ভীষণ ভেংগে পড়েছিলাম।আমি ভাবতেই পারছিলাম না এতো ভালোবাসার পরেও তুমি কি করে এই রকম একটা জঘন্য কাজ করতে পারো।আমি তো মানসম্মানের ভয়ে এভাবে নিজের বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে এসেছি এখানে।যাতে আমাকে আর আমার সন্তানদের কেউ আংগুল তুলে কিছু বলতে না পারে।

মালিহা তখন তায়েবের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,এতে কারো কোনো দোষ নাই।সব আমার কপালের দোষ। আমার ভাগ্যে সুখ লেখা ছিলো না বিধায় আমি এসব বিপদের সম্মুখীন হয়েছি।আমি আসলেই একজন পোড়াকপালি।
আমান আর নোমান তো তাদের মায়ের কথা শুনে কাকে কি বলবে সত্যি বুঝতে পারছিলো না।তারা তাদের মাকে কাছে পেয়েছে এটাই তো বেশি।সেজন্য তারা তাদের মাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো মা,আমরা সবাই সত্যি অনুতপ্ত।আমরা যদি শুধু একবার জানতাম আমাদের মা বেঁচে আছে তাহলে পৃথিবীর যেখানেই থাকতে না কেনো ঠিক খুঁজে বের করতাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মালিহা তার দুই ছেলেকে নিজেই জড়িয়ে ধরলো আর তাদের কপালে চুমু দিয়ে আদর করতে লাগলো।মায়ের আদর পেয়ে আমান আর নোমান দুইজনই কাঁদতে লাগলো।তারা ভাবতেই পারছে না তারা তাদের মাকে খুঁজে পেয়েছে।
তায়েব চৌধুরী এবার তাহমিনার কাছে চলে গেলো।আর জোরে জোরে কয়েকটা চড় মেরে বললো,সত্যি করে বল সেদিন মালিহাকে বাড়ি থেকে কে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো?

তাহমিনা সেই চড় খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো আর কাঁদতে কাঁদতে বললো,তা আমি কি করে জানবো?তুমি আমাকে সে কথা বলছো কেনো?
আমি ভাবিকে পছন্দ করতাম না এটা ঠিক আছে,
আমি ভাবি কে হিংসা করতাম এটাও ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে এই ভাবে প্রতিশোধ নেবো?বিশ্বাস করো ভাই আমি এটা করি নি।আমি একটা মেয়ে মানুষ কিভাবে ভাবিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাবো?

মালিহা তখন বললো তাহমিনা মিথ্যা কথা কেনো বলছো?তুমি ছাড়া আমার আর অন্য কোনো শত্রু নাই।একমাত্র তুমিই আছো যে চাইতে না আমি আর তায়েব মিলেমিশে সংসার করি।আমার জীবন থেকে এতোগুলো বছর কেড়ে নিলে,আমার সন্তানদের থেকে আমাকে দূরে রাখলে তবুও কি তোমার শান্তি হয় নি?এর পরেও অভিনয় করে যাচ্ছো?
তাহমিনা তখন আবার তার ভাই এর কাছে আসলো।আর বললো, ভাই তুমি যদি আমাকে মেরেও ফেলো তবুও আমি এটাই বলবো যে ভাবিকে আমি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাই নি।তবে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম যে ভাবি আমাদের বাড়ি থেকে দূর হয়েছে।কারণ ভাবি আসার পর থেকে তুমি শুধু ভাবিকেই ভালোবাসতে।আমাকে আর আগের মতো দেখতে পারতে না।ভাবি কে আমি আমার দুশমন মনে করতাম এজন্য।কিন্তু আমি এ কাজ করি নি।

নোমান এবার এগিয়ে আসলো তাহমিনার কাছে।আর বললো ফুপি আমরা কিন্তু তোমাকে যথেষ্ট সম্মান করি।এভাবে বার বার মিথ্যা কথা বলে আমাদের কে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করো না।প্লিজ সত্যি টা বলো।আমার মায়ের সাথে যেই অন্যায় করুক তাকে কিন্তু আমি আজ ছেড়ে দিবো না।
তাহমিনা সেই কথা শুনে গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।

আমান তখন বললো ফুপি! কান্নাকাটি করে কোনো লাভ হবে না।তুমি আমার মায়ের সাথে যে অন্যায় করেছো তার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।এখনো সময় আছে সত্য টা স্বীকার করো।তা না হলে অন্যভাবে সত্য কথা বের করবো?তুমি ভালো করেই জানো আমি একজন পুলিশ অফিসার।অপরাধীর মুখ থেকে কিভাবে সত্য কথা বের করতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি।পুলিশের হাতের পিটন যদি না খেতে চাও ভালো ভালোই সত্য টা বলো।

তাহমিনা আমান আর নোমানের কথা শুনে তার বুক থাপড়াতে থাপড়াতে বললো, এই দিন টা দেখার জন্যই বুঝি আমি বেঁচে ছিলাম এতোদিন।আল্লাহ আমারে কেন বেঁচে রাখলা?যাদের কে কোলে পিঠে বড় করলাম আজ তারাই শাসাচ্ছে আমাকে।মা ছিলো না তোদের,এই আমি বড় করেছি।নিজের সন্তানদের মতো দেখেছি।সেই তোরাই আজ আমার সাথে এরকম দুর্ব্যবহার করছিস?

আমি কত করে বলছি যে আমি কিছু করি নি।আর কিভাবে বললে তোরা বিশ্বাস করবি?
আমি আমার এ জীবন টাই আর রাখবো না।এই বলে তাহমিনা দৌঁড়ে তার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
তাহমিনাকে এভাবে দরজা লাগানো দেখে সবাই দৌঁড়ে গেলো আর দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো।কিন্তু তাহমিনা দরজা খুললো না।আমান আর নোমান তখন দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করলো।এদিকে তাহমিনা গলায় ফাঁস দেওয়ার জন্য ফ্যানের সাথে তার শাড়ির আঁচল বেঁধেছে।জানালা দিয়ে সবাই শুধু চিৎকার করে করে ডাকতে লাগলো।তবুও তাহমিনা দরজা খুললো না।
আমান আর নোমান তখন একসাথে জোরে করে লাথি দিয়ে দরজার ছিটকিনি ভেংগে ফেললো।আর তাহমিনার গলার দড়ি খুলে দিলো।এদিকে তাহমিনা শুধু হাঁপাচ্ছে।সে কোনো কথা বলতে পারছে না।কারণ আর এক সেকেন্ড দেরী হলেই সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতো।

তাহমিনা জোর করেই তার মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করতে লাগলো।আর বললো,সবাই বিশ্বাস করো আমি মালিহা ভাবিকে তুলে নিয়ে যাই নি।তোরা যদি বিশ্বাস না করিস সত্যি আমি আমার এ জীবন টাই আর রাখবো না।
নোমান তখন বললো,ফুপি পরে শুনবো তোমার কথা এখন চুপচাপ থাকো।এই বলে নোমান আর আমান দুই জন মিলে তাহমিনা কে বিছানায় শুয়ে দিলো।এদিকে তানিশা এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলো।তারপর তাহমিনাকে খেতে বললো।তাহমিনা ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি পুরাটাই খেলো।সে আজ মৃত্যু কে খুব কাছ থেকে দেখলো।তাহমিনা ভয়ে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে গেলো।

এদিকে মালিহা বাসা থেকে চলে গেছে।সবাই তাহমিনাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে কেউ টের পাই নি।মালিহা এই সত্য টা প্রকাশ করার জন্যই শুধু এসেছিলো।কারন মিথ্যা অপবাদের বোঝা সে আর বয়ে বেড়াতে পারছিলো না।এত বছর পর সে যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
তার আর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই তায়েবের সংসার করার।সারাজীবন তো সে কষ্টেই পার করে দিলো।এই কয় দিনের জন্য এসে সবার বোঝা হতে চায় না সে।

এদিকে সবাই তাহমিনার জ্ঞান ফেরানো নিয়ে ব্যস্ত।তাহমিনার জ্ঞান ফিরলে সবাই যখন বাহিরে এলো এসে দেখে মালিহা নাই।নোমান আর আমান তা দেখে মা মা বলে ডাকতে লাগলো।কিন্তু মালিহার কোনো সাড়াশব্দ পেলো না কেউ।সেজন্য দুই ভাই দৌঁড়ে গেটের বাহিরে চলে গেলো।সবাইকে জিজ্ঞেস করলো।কিন্তু কেউই মালিহার কথা বলতে পারলো না।তায়েব নিজেও খুঁজতে লাগলো।কিন্তু কেউই মালিহা কে আর খুঁজে পেলো না।
তানিশা তখন বললো, মা হয় তো তার নিজের বাড়িতে চলে গেছে।চলো আমরাও সেখানে যাই।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো তুমি কি জানো মালিহা কই থাকে?

–না জানি না বাবা।তবে আমাদের হাসপাতালে গেলেই ওনার ঠিকানা পাওয়া যাবে।কারণ উনি মাসে মাসেই সেখানে চোখ পরীক্ষা করার জন্য আসেন।
নোমান সেই কথা শুনে আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।তানিশা কে সাথে করে নিয়ে তার হাসপাতালে গেলো।আর চক্ষু ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে মালিহা নাম খুঁজতে লাগলো।মালিহা কোথায় থাকে সেটা দেখে নিলো।কিন্তু ঠিকানায় শুধু রাজবাড়ী লেখা ছিলো।রাজবাড়ী জেলা যেহেতু ঢাকার মধ্যেই আছে সেজন্য আমান পুলিশ বাহিনীকে পাঠালো খোঁজ নেওয়ার জন্য।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা মালিহা চৌধুরীর দেখা পেলো না।
তানিশা তখন হঠাৎ নোমান কে বললো, মা হয় তো আর ফিরে আসবে না নোমান।উনি হয় তো বাবাকে এই সত্য কথা টা বলার জন্যই শুধু এসেছিলেন।

নোমান তখন বললো, মা না আসতে চাইলেও আমরা জোর করেই নিয়ে আসবো।এতোদিন পর মাকে কাছে পেয়ে আর কখনোই তাকে হারাতে দিবো না।মা এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো আপনি কি আদ্রিয়ানের কথা ভুলে গেলেন নোমান?
নোমান তানিশার মুখে আদ্রিয়ানের নাম শোনামাত্র ওর মুখ টিপে ধরলো আর বললো চুপ থাকো।বাবাকে আগেই বলো না।বাবা ভীষণ কষ্ট পাবেন।আমরা আগে মাকে খুঁজে বের করবো।ওনার মুখে আদ্রিয়ানের সম্পর্কে জেনেই তবে প্রকাশ করবো।
তানিশা তখন বললো আমার কেনো জানি ভয় করছে,মা যদি আবার আকবর কে সত্যি সত্যি বিয়ে করে থাকে?তখন কি হবে?

নোমান তখন বললো,মুখ সামলিয়ে কথা বলো তানিশা। এরকম কখনোই হতে পারে না।বাবা যদি তার ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে এতোবছর একা একা থাকতে পারে নিশ্চয় মাও বাবার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে।এসব ভুলভাল কথা কিছুতেই মাথাতে এনো না তানিশা।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো, আমিও তো এটাই চাই যে মা আবার বাবার কাছে ফিরে আসুক।কিন্তু আদ্রিয়ান তো তোমার মায়ের সন্তান।এটা তো মিথ্যা না।

তানিশার কথা শুনে এবার নোমানের মনেও ভয় ঢুকে গেলো।এতো বছর পর তার বাবা ভালোবাসার মানুষ কে দেখা পেয়ে কত খুশি হইছে,সেই খুশি এইভাবে কখনোই নষ্ট হতে পারে না।তার মা কখনোই এটা করতে পারেন না।
এইভাবে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো, তবুও তারা মালিহার খোঁজ পেলো না।মালিহা নিজের থেকেও আর আসলো না।বাড়ির সবাই ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।সবার চোখের ঘুম একদম হারাম হয়ে গেলো।

তানিশা চেম্বারে বসেছে।পেশেন্ট দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হচ্ছে না তার আজ।কিন্তু দায়িত্ব থেকে তো সে আর পালিয়ে বেড়াতে পারে না।মন খারাপ নিয়েও রোগী দেখছে সে?এক সপ্তাহ ধরে নোমানের মুখে হাসি নেই।ঠিকভাবে খাচ্ছেও না।চেম্বারেও বসছে না।পাগলের মতো মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।হাসিখুশি ছেলেটা হঠাৎ মায়ের জন্য একদম পাগল হয়ে গেছে।এইভাবে তাদের মা কোথায় নিরুদ্দেশ হলো ভাবতেই পারছে না নোমান।

হঠাৎ নীলা প্রবেশ করলো তানিশার চেম্বারে।সে তার বয়ফ্রেন্ডের বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে।কিন্তু তানিশা তো এখন পরোপকার করার মুডে নেই।কারণ সে নিজেও ভীষণ শোকের মধ্যে আছে।কিন্তু নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে আর না করতে পারলো না।নীলাকে বললো তুমি চলে যাও এখন।আমি ঠিকানা মতো ঠিক চলে যাবো।
নীলা তখন তানিশাকে বললো ম্যাডাম আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবো না। আপনি আমার আপন কেউ না হয়েও যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন সত্যি আমি ভাবতে পারছি না।এরকম মানুষ যদি সবাই হতো সত্যি দুনিয়ার চেহারাটাই পালটে যেতো।

তানিশা তখন বললো ঠিক আছে নীলা। পরে ধন্যবাদ দিও।আগে কাজটা করি।এখন তুমি সাবধানে বাড়ি যাও।
নীলা তানিশার কথা শুনে যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
রাত দুই টা বাজে।আমান আর নোমান এতোক্ষণে বাসায় ফিরলো।বাসার বাকি সদস্য রাও জেগে আছে।তন্নি আর ইকবালও এসেছে।তাহমিনা তো সেদিনের পর থেকে আর রুম থেকেই বের হয় নি।সবাই যে এখনো তাকেই দোষারোপ করছে সে সেটা ভালো করেই জানে।
নোমান কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।সেজন্য তানিশাও নোমানের পিছু পিছু রুমে চলে গেলো।তানিশা নিজের থেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।এদিকে নোমান ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো।
তানিশা তখন বললো কিছু কি খেয়েছেন?

–না।
তানিশা সেই কথা শুনে একটা প্লেটে খাবার এনে নোমান কে বললো উঠুন একটু।খেয়ে নিন।
নোমান সেই কথা শুনে বললো বিরক্ত করো না তো তানিশা।তানিশা সেই কথা শুনে নোমান কে জোর করেই ওঠালো আর বললো শুধু হা করেন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।না খেলে আপনি তো নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।তখন মাকে খুঁজবেন কিভাবে?
নোমান তানিশার কথা শুনে হা করলো, আর তানিশা তখন খাইয়ে দিলো।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে তানিশা নোমানকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো এতোবেশি ভেংগে পড়বেন না প্লিজ।এমনিতেই খুঁজে পাবেন মাকে।শুধু আল্লহর উপর ভরসা রাখুন।
নোমান হঠাৎ সেই কথা শুনে তানিশাকে জড়িয়ে ধরলো।তার খুব কান্না পাচ্ছে।এতোদিন পর মাকে খুঁজে পেয়ে আবার কি হারিয়ে ফেললো নাকি?সে বুঝতেই পারছে না এভাবে তার মা কই উধাও হলো?

তানিশা তার ব্যাগ থেকে নীলার দেওয়া ঠিকানা টা বের করে দেখতে লাগলো।যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছে, সেই দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে এখন।নোমান যেহেতু ব্যস্ত আছে এ জন্য নোমানকে না বলে সে একা একা যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু নীলার বয়ফ্রেন্ডের নাম দেখে তানিশার চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো।তবুও সে ভালোভাবে আগে সিওর হয়ে নিলো।হ্যাঁ তার ধারনাই ঠিক হলো।পাত্র আর অন্য কেউ নয়।শিলার ভাই জিসান।

জিসানের নাম দেখে তানিশার মাথা একদম গরম হয়ে গেলো।সে ভাবতেই পারছে না জিসান এতো টা বেয়াদব একটা ছেলে।নিজের গার্লফ্রেন্ড কে রেখে সে তানিশাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলো।এদিকে তার গার্লফ্রেন্ড আবার প্রেগন্যান্ট। একজন ডাক্তার মানুষ হয়ে জিসানের চরিত্র যে এতো টা বাজে সত্যি তানিশা ভাবতেই পারছে না।
তানিশা এবার নীলাকে ফোন দিলো আর নীলাকে বললো আমি এই ছেলেকে ভালো করেই চিনি।তুমি যদি আমাকে শুধু ওর নাম টা আগে বলতে তাহলেই আর এতো কষ্ট করে তোমাকে ওর বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করতে হতো না।
তারপর তানিশা নীলাকে আশ্বাস দিয়ে বললো,নীলা তুমি কোনো চিন্তা করো না।আমি কালকের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করছি।
নীলা যে কি পরিমান খুশি হলো সত্যি সে সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না।সে তো এই কলঙ্গের জন্য নিজের জীবন টাই শেষ করতে চাইছিলো।

তানিশা এবার নোমানকে সব খুলে বললো।নোমান নিজেও ভীষণ অবাক হলো জিসানের চরিত্র দেখে।নোমান এবার আমান,আর শিরিন কে বললো ব্যাপার টা।শিরিন তো কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছিলো না।তার ভাই এতো নীচে নেমে গেছে?
তানিশা তখন বললো ভাবি!এখন মাথা গরম করার সময় নয়।জিসানের সাথে যে করেই হোক নীলার বিয়ে টা দিতে হবে।কারণ পেটের বাচ্চার বয়স ইতোমধ্যে ৪+.কোনো ধুমধাম না করে চুপেচাপে কাজটা সারতে হবে।লোকে ভাববে অনেক আগেই হয় তো বিয়ে টা হয়েছে।
শিলা সেই কথা শুনে বললো, ছিঃ ছিঃ।এই কথা আমি আমার বাবা মাকে কি করে বলবো?বাবা মা শুনলে একদম হার্ট অ্যাটাক করবে।

নোমান তখন বললো, ওনাদের কে এতোকিছু বলার দরকার নাই।শুধু বললেই হবে দুইজন দুইজনকে পছন্দ করে।সেজন্য বিয়ে করতে চায়।তাছাড়া ওনারা তো জিসান কে বিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে খুঁজছেই।
শিলা নোমানের কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো।তারা ঠিক করলো জিসান কে সাথে করে নিয়ে নীলার বাড়ি তে যাবে।আর সেই দিনই বিয়ের ব্যবস্থা করবে।
একদিকে মালিহা চৌধুরী কে খুঁজে না পেয়ে ভীষণ চিন্তায় আছে তারা,তার মধ্যে নতুন এক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লো আমান আর নোমান। কিন্তু এ ঝামেলাও কিন্তু কম টেনশনের ছিলো না।একটা মেয়ের মানসম্মানের ব্যাপার জড়িত আছে এটার সাথে।

পরের দিন শিরিন জিসান কে কৌশলে ডেকে আনলো।আর এনেই ঘরের দরজা লাগিয়ে ইচ্ছেমতো কয়েকটা চড় মারলো।
জিসান কিছু বুঝতে পারলো না।সে শুধু বললো, আপু কি হয়েছে?এভাবে মারছিস কেনো?
এবার আমান ও রুমের মধ্যে এসে ইচ্ছেমতো কয়েকটা চড় মারলো জিসানকে।আর বললো নীলা কে?
জিসান ভীষণ অবাক হলো।আমান ভাইয়া নীলাকে চিনলো কিভাবে?

নোমান তখন বললো,ছিঃ জিসান। একজন ডাক্তার মানুষ হয়ে এই ধরনের কাজ করতে তোর বিবেকে বাঁধলো না?তুই সত্যি অমানুষ হয়ে গেছিস জিসান।আমাকেও ফাঁসাতে ধরেছিলি।ইচ্ছে করলে তোর উপর আমি মান হানির মামলা দিয়ে জেলে দিতে পারতাম।কিন্তু দেই নি। বন্ধু মানুষ বলে মাফ করে দিয়েছি।কিন্তু এবার তোর আর ক্ষমা নাই।
তানিশা এগিয়ে এসে নোমানকে থামিয়ে দিয়ে বললো, নোমান শান্ত হও।এভাবে মাথা গরম করলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।এখন নীলা যেহেতু প্রেগন্যান্ট হয়েছে আর ওর পেটের বাচ্চা জিসানের বলে দাবি করছে সেজন্য যত শীঘ্রই বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

জিসান সেই কথা শুনে বললো আমি ওই মেয়েকে কখনোই বিয়ে করতে পারবো না।কারণ ওই মেয়ে একজন নষ্ট প্রকৃতির মেয়ে।আমি আগে জানতাম না ওদের ফ্যামিলির ব্যাপারে।কিন্তু যখন জানতে পারলাম ওদের ফ্যামিলির ব্যাপারে তখন থেকেই সরে এসেছি।
নোমান তখন বললো সেটা সম্পর্ক করার আগে ভাবা উচিত ছিলো।এখন কোনো উপাই নাই।যেহেতু নীলার পেটে তোর বাচ্চা এখন তোকে নীলাকেই বিয়ে করতে হবে।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৩

জিসান তখন বললো বাবা মা কখনোই ওইরকম একটা পরিবারে আমার বিয়ে দেবে না।কারণ ওর বাবা একজন সন্ত্রাস।যে দিনে রাতে অপকর্ম চালিয়ে বেড়ায়।আর নীলার চরিত্রও ভালো না।সেটা আমি এতো দিন দিয়ে জানতে পারলাম।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৫