ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৩

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৩
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ

নোমান কাল সারারাত ডিউটি করে দুপুর বেলা বাসায় ফিরেছে।আর এসেই পুরোদমে ঘুম পারছে।কয়েক ঘন্টা ঘুম পেড়ে আবার তাকে সন্ধ্যাবেলাতেই চেম্বারে বসতে হবে।অন্যদিকে তানিশা এখনো চেম্বারেই আছে।আমান কিছুক্ষন আগেই বাসায় এসেছে।সে এসেই ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রুমে বসে একটু রেস্ট নিচ্ছে।

হঠাৎ গোলাপি কালারের সুতি শাড়ি আর চোখে চশমা পড়ে এক ভদ্র মহিলা নোমানদের বাসায় প্রবেশ করলেন।যাকে লিনা চিনতে পারছে না।লিনা সেজন্য শিরিনকে ডাকতে লাগলো।শিরিন লিনার ডাক শুনে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।
শিরিন এসেই জিজ্ঞেস করলো আপনি কে?কাকে চাই?
ভদ্র মহিলা তার শান্ত কন্ঠে বললেন,আমাকে তুমি চিনবে না মা?ডাক্তার তানিশা ম্যাডাম আছেন?
–না নেই।ও তো চেম্বারে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভদ্র মহিলা পুরো বাড়ি টা এক নজর দেখে নিয়ে বললো, বাহঃ ভালোই তো সাজিয়েছে বাসাটা।অথচ যে থাকার কথা ছিলো সেই নেই।
শিরিন সেই কথা শুনে বললো, কিছু কি বললেন আমাকে?
–না মা।কিছু বলি নি।
এদিকে শিরিনের ভয় হতে লাগলো।সে মনে মনে ভাবতেছে মহিলা টি এভাবে দেখছে কেনো চারপাশ?সে তখন আমান কে গিয়ে বললো,দেখো তো কে এসেছে বাসায়?শুধু চারপাশ কেমন ভাবে দেখছে।
আমান সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসলো রুম থেকে।আমান আসতেই মহিলাটি অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো আমানের দিকে।মুহুর্তের মধ্যে ওনার চোখে পানি এসে গেলো।তিনি তার অজান্তেই আমানের চোখ মুখ স্পর্শ করে একটা চুমু খেলো।

আমান তো অবাক।এভাবে একজন অচেনা মহিলা এভাবে চুমু খেলো কেনো।কারণ আমানও চিনতে পারলো না মহিলাকে।সে তখন বললো কে আপনি?
মহিলাটি তখন কান্না ভরা চোখ নিয়ে হেসে হেসে বললো,চিনবা না বাবা আমাকে।
আমান তখন বললো তাহলে কি জন্য এসেছেন বাসায়?
মহিলা টি তখন বললো তাহমিনা আর তায়েব চৌধুরী কি বাসায় আছে?ওনাদের দুইজনের সাথে আমার কিছু হিসাব নিকাশ ছিলো।

–হিসাব নিকাশ?কিসের হিসাব নিকাশ?
এদিকে তানিশাও চেম্বার থেকে ফিরলো।সে তো মালিহা চৌধুরীকে দেখামাত্র বললো,আন্টি?আপনি?এভাবে হঠাৎ? তা আমাকে ডাকলেই তো আমি বাসায় আসতাম।
মালিহা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আমি একটু দরকারে এসেছি মা।বেশিক্ষন দেরি করবো না।তায়েব চৌধুরী আর তাহমিনা চৌধুরী কে একটু ডেকে দিবা?খুব এমারজেন্সি কিছু কথা ছিলো।
তানিশা সেই কথা শুনে বললো আন্টি আপনি বাবা আর ফুপিকে আগে থেকেই চিনতেন?
–হ্যাঁ মা।চিনতাম।খুব ভালো করেই চিনতাম।

শিরিন এবার তানিশার কাছে এগিয়ে এসে বললো,কে ইনি?
তানিশা তখন বললো, ইনিই তো সেই আন্টি যিনি সেদিন খাবার রেঁধে দিয়েছিলেন।
শিরিন সেই কথা শুনে মালিহা চৌধুরীকে বললো,আসসালামু আন্টি।আমি শিরিন।তানিশার বড় জা হই।
মালিহা চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, মাশাল্লাহ মা।তোমাদের সবাইকে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।কারো নজর না লাগে যেনো।

মালিহা চৌধুরীর কথা শুনে তানিশা,শিরিন আর আমান খুব বেশি অবাক হলো।এ মহিলা এমন ভাবে কথা বলছে কেনো?মনে হয় তিনি তাদের কতই না আপনজন।
হঠাৎ তাহমিনা চৌধুরী আসলো। তিনি এসেই বললেন কি হয়েছে এখানে?আর ইনি কে?
মালিহা চৌধুরী তখন তার চশমা টা খুলে বললো, আসসালামু আলাইকুম আপা।চিনতে পারছেন আমাকে?
মালিহাকে চেনামাত্র তাহমিনা দশ হাত দূরে সরে গেলো?মনে হলো সে যেনো একটা বিদ্যুৎ এর ঝটকা খেলো।তাহমিনা একদম বোবার মতো চুপচাপ হয়ে রইলো।

মালিহা তখন আবার বললো, চিনতেন পারছেন আমাকে?না এখনো চেনেন নি?
তাহমিনা কোনো উত্তর না দিয়ে তার ভাইকে ডাকতে গেলো।
তায়েব চৌধুরীও তার নিজের ঘরে ঘুমিয়ে আছেন।তিনি তহমিনার চিৎকার শুনে বললো, কি হয়েছে?এভাবে ডাকছিস কেনো?
তাহমিনা তখন হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,ভাই মালিহা ভাবি এসেছে।

–মালিহা?
–হ্যাঁ মালিহা।কত বড় নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে! এতোদিন পর কোন লজ্জায় এসেছে দেখ।মনে হয় ছেলেদের কে ভুলভাল বোঝাতে এসেছে।
তায়েব চৌধুরী সেই কথা শুনে আর এক মুহুর্ত থাকলেন না রুমে। তাড়াতাড়ি করে তার রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেলেন।আর মালিহাকে দেখে বললেন, মালিহা আমার রুমে এসো।আমরা রুমে বসে কথা বলি।
মালিহা তখন চিৎকার করে বললো, না।রুমে না।আমি সবার সামনে আজ কথা বলতে এসেছি।
তাহমিনা তখন বললো,ভাই যা বলছে সেটাই শোনো ভাবি।রুমে চলো।
মালিহা তখন বললো আমি কি চোর না ডাকাত যে আলাদা ভাবে তোমাদের সাথে কথা বলতে হবে?আমি যা বলার এখানেই বলবো।

তায়েব চৌধুরী তখন তাহমিনা কে থেমে দিয়ে বললো, তুই চুপ কর তাহমিনা।বলতে দে ওকে।ও যদি নিজের মানসম্মান নিজের হাতে নষ্ট করতে চায় তাহলে করুক।
তাহমিনা তখন মালিহার কানে কানে গিয়ে বললো,আমান নোমান কিন্তু কেউই তোমার অপকর্মের কথা জানে না।আমরা তোমার দোষ ঢেকে রেখেছি।ওরা কিন্তু তাদের মাকে খুব সম্মান করে।তোমার আসল চরিত্র জানার পর কিন্তু থু থু ছিটিয়ে দেবে।

মালিহা সেই কথা শুনে হঠাৎ সবার সামনেই তাহমিনাকে জোরে করে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো থু থু আমাকে দেবে না কেউ।থু থু দেবে তোকে।তোর মতো একটা কাল নাগিনী সাপকে।যে মানুষের সুখ নষ্ট করতে এক্সপার্ট।
মালিহা চৌধুরীর এমন কান্ড দেখে সবাই আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।অন্যদিকে নোমান সবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নিজেও এগিয়ে এলো।সে যখন এসে দেখলো তাহমিনা মাটিতে পড়ে আছে সাথে সাথে তাহমিনা কে উঠিয়ে বললো, কি হয়েছে ফুপি তোমার?

তাহমিনা কোনো উত্তর দিলো না।
এবার তায়েব চৌধুরী এগিয়ে গেলো মালিহার কাছে।আর বললো তুমি কোন শাসনে তাহমিনাকে ধাক্কা দিলে?
মালিহা তখন হাসতে হাসতে বললো, সাহসের দেখছো কি?আরো কি কি করি সেটা শুধু দেখো।
নোমান তখন বললো আন্টি!আপনি কখন এসেছেন? আর কি হয়েছে?আপনি বাবার সাথে এরকম ব্যবহার করছেন কেনো?
মালিহা তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, বাবা নোমান আর আন্টি বলে ডাকিস না আমাকে।বুকের এই জায়গাটা ব্যাথা করে আন্টি ডাক শুনলে।আমি তোদের মা হয়।মিসেস মালিহা চৌধুরী আমি।

–মা?সবাই অবাক হয়ে গেলো মালিহার কথা শুনে।আমান নোমান তার বাবার কাছে এসে বললো,বাবা!কি বলছেন ইনি?আমাদের মা তো মারা গেছে।
তায়েব চৌধুরী একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন।তিনি শুধু ভাবছেন,মালিহা কি করলো এটা?এতো বছর ধরে লুকানো কথা টা সে কেনো এভাবে টেনে আনছে?ছেলেরা ওর অপকর্মের কথা শুনলে একদম লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে।

তাহমিনা চৌধুরী এবার আমান আর নোমানকে বললো হ্যাঁ ইনি তোদের মা হন।যে তিনবছরের আমান আর এক বছরের নোমানকে রেখে তার প্রাক্তন প্রেমিক আকবরের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো।আমরা সবাই লজ্জায় আর শরমে সত্য টা প্রকাশ না করে তাকে মৃত বলে চালিয়ে দিয়েছি।যাতে কেউ তোদের বা আমার ভাই এর দিকে আংগুল তুলে কথা বলতে না পারে।
আমান আর নোমান তাহমিনার কথা শুনে একদম পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো।তারা এটা কি শুনছে?এই কথা শোনার আগে তাদের মরন কেনো হলো না?যে মাকে তারা এতো শ্রদ্ধা করে সেই মা তাদের কে ফেলে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে?

এদিকে তায়েব চৌধুরী লজ্জায় মাথা নিচু করে আছেন।
তানিশা সেই কথা শুনে তাহমিনা কে বললো, ফুপি এসব কি বলছেন?
–হ্যাঁ ঠিক বলছি আমি।ইনি হলেন সেই মা যিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও প্রাক্তন প্রেমিক কে ভুলতে পারেন নি।আমার ভাই এর জীবন টা তছনছ করে ফেলেছে।ভাই তাকে কত ভালোবাসতো?তারপরেও ভাই এর বুকে লাথি মেরে চলে গিয়েছে।

তায়েব চৌধুরী তখন বললো তাহমিনা তুই চুপ কর।আমি এসব অতীতের কথা শুনতে চাই না।আমি বর্তমানে অনেক বেশি সুখে আছি।আমার মতো সুখী কেউ নেই।তুই ওকে যেতে বল।
মালিহা তখন কাঁদো কাঁদো গলায় বললো আমি এখানে থাকতে আসি নি তায়েব।আমি শুধু সত্য কথা টা বলতে এসেছি।আমি আমার কথাগুলো বলেই চলে যাবো।তোমাদের সংসারের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র লোভ নেই।আমিও এখন যেখানে আছি বেশ ভালো আছি।আমার মতোও সুখি মনে হয় আর কেউ নেই।

তাহমিনা তখন তায়েব কে বললো, ভাই ভাবি কিন্তু ছেলেদের কে ইমোশনাল করার জন্য এসেছে।ছেলেদের কে বশ করে এই সংসারে ঢোকার মতলব আঁটছে।নিশ্চয় আকবর ওরে ছেড়ে গেছে।
নোমান তখন বললো স্টপ ফুপি!তখন থেকে কি সব ভুলভাল বকে যাচ্ছো?মাকে তো কিছু বলতে দাও।আমরা আমাদের মায়ের কথা শুনতে চাই।আমাদের মা খারাপ হলেও তিনি আমাদের জন্ম দিয়েছেন।এটা তো অস্বীকার করতে পারবো না আমরা।

আমান তখন বললো হ্যাঁ মা। বলো তুমি।কি বলতে চাও বলো?
তাহমিনা নোমান আর আমানের কথা শুনে বললো, ভাই যা বললাম সেটাই ঠিক হলো।ভাবি তো ইতোমধ্যে ছেলেদের বশ করেও ফেলেছে।এই জন্যই এতোদিন পর এসেছে ভাবি।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো তাহমিনা চুপ কর তুই।ভালোবাসার সাথে যে বেঈমানি করে তার ঠাঁই কখনোই এ বাড়িতে হবে না।ওকে বলতে দে।ওর যা মন চায় ও বলুক গিয়ে।বলা শেষ হলে এমনি চলে যাবে।
মালিহা তায়েব চৌধুরীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো এতোটাই ঘৃনা করো আমাকে?যে একবারের জন্য সত্য মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করছো না?

নোমান এবার ভীষণ রাগ হলো।সে চিৎকার করে বললো এই তোমাদের এসব ঘ্যানঘ্যানানি থামাবে এবার?আসল কাহিনী কি?আমি আসল কাহিনী শুনতে চাই।
মালিহা তখন বললো আমি যা বলবো সব সত্যি কথা বলবো।তবুও যদি আমার মুখের কথা বিশ্বাস না হয় এই যে আমি আমার দুই সন্তানের মাথা ছুঁয়ে বলছি।
তায়েব চৌধুরী তখন বললো, এই আমার ছেলেদের মাথা ছুঁবি না।আমার ছেলেদের মাথা ছেড়ে দিয়ে কথা বল।
মালিহা চৌধুরী সেই কথা শুনে আমান আর নোমানকে বললো,তোদের বাবাকে আমি আল্লাহর ফেরেশতা মনে করতাম।আর সবসময় ভাবতাম ওনার মতো স্বামী পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।তোদের বাবা আমাকে এতই ভালোবাসতো যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

তবে এটা সত্যি যে আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না।তোদের নানু জোর করেই আমাকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে।কারন আমার মামাতো ভাই আকবরকে আমি ভালোবাসতাম।তোদের নানু আবার আকবর কে পছন্দ করতো না।সেজন্য তাড়াতাড়ি করে তোদের বাবার সাথে বিয়ে টা দিয়ে দেয়।আমিও সবকিছু ভুলে মন প্রান দিয়ে সংসার করি।
কিন্তু আমার এই সুখের সংসার টাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য তোদের দাদী আর ফুপি উঠে পড়ে লেগেছিলো।তোদের বাবা যে আমাকে ভালোবাসে সেটা ওই ডাইনি দুটির সহ্য হয় নি।তোদের বাবা যখন বাসায় থাকতো তখন কিছু বলতো না।কিন্তু উনি বাহিরে গেলেই দুই মা মেয়ে মিলে ভীষণ ভাবে অত্যাচার করতো আমার উপর।আমি আবার সব কথা বলতাম না তোদের বাবাকে।কারন উনি বাহির থেকে পরিশ্রম করে আসেন,আর এসেই যদি সংসারের এসব কাহিনি শোনে তাহলে মেজাজ গরম হয়ে যাবে বিধায় বলি না।

দুই এক দিন বলে ছিলাম।তাতে উনি আমার হয়ে মা আর বোন কে অনেক শাসিয়েছে।পরে আবার সেই প্রতিশোধ ওরা মা বেটি তুলতো আমার উপর।
তারপর আমান হলো,নোমান হলো।তারপর তাহমিনার বিয়ে হয়। তাহমিনার বিয়ে হয়ে গেলে আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম।ভাবলাম এবার অন্তত একটু শান্তি পাওয়া যাবে।কিন্তু আমার ভাবনায় জল ঢেলে দিলো তাহমিনা।স্বামী আর শাশুড়ীর সাথে তার এক দিনও বনিবনা হতো না।প্রায় দিনই ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে আসতো।

সেদিন আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো।আমি সেদিন তোদের বাবার জন্য হরেক রকমের পদ রান্না করেছিলাম।সেদিন তোদের বাবা দুইটা শাড়ি এনেছেন।আমার আর তোদের দাদীর জন্য।উনি কোনোদিনই আমার জন্য আলাদা ভাবে কিছু আনে না।কারন উনি জানতো তার মা দেখলে এটা নিয়ে ঝগড়া করবে।সেদিন আবার তাহমিনাও এসেছে।ওরা মা মেয়ে শাড়ি আমাকে না দিয়ে দুইজন ভাগ করে নিয়েছে।তোদের বাবা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করলো শাড়ি পছন্দ হয়েছে কিনা?আমি উত্তরে বললাম হ্যাঁ।তো উনি বললেন এখনি পড়ে এসো।নতুন শাড়ি পড়ে দেখবো তোমাকে।

আমি তখন বললাম,আমার টা তাহমিনা নিয়েছে।তোদের বাবা সেদিন রাগ করে তাহমিনা কে একটু বকেছিলো।যে আজকের শাড়িটাও কি তোর নিতে হবে?তোকে কাল নতুন শাড়ি কিনে দেবো।ওটা তোর ভাবির জন্য এনেছি।
তোদের বাবা এইভাবে বলায় তাহমিনা ভীষণ ভাবে রেগে যায়।সে সেদিন রাগ করে বাসা থেকে চলে যায়।আর আসে না আমাদের বাড়িতে।তোদের বাবা অনেক বার গিয়েছে আনার জন্য তবুও আসে নি।কিন্তু সে যে মনে মনে আমাকে সংসার থেকে তাড়ানোর প্লান করছে তা আমি বিন্দুমাত্র বুঝতে পারি নি।

সেদিন রবিবার ছিলো।আমান ওর বাবার সাথে বাহিরে গিয়েছিলো।নোমান আর আমি শুয়ে ছিলাম।তারপর হঠাৎ কে যেনো আমার হাত পা চোখ মুখ বেঁধে বাসা থেকে বের করে।তারপর কোনো এক অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রাখে।সেখানে গিয়ে দেখি আকবর ও বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।
তারপর ওরা জোর জবরদস্তি করে আমার আর আকবরের কয়েকটা ছবি তুলে।আমি তখনো বুঝতে পারি নি আমি সারাজীবনের জন্য আমার স্বামী আর সন্তান থেকে এভাবে দূরে সরে যাবো।
প্রায় তিন মাস আমরা ঘরবন্দি ছিলাম।তারপর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।পরে বাহিরে এসে শুনি আমি আর আকবর নাকি পালিয়ে গেছি।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪২

সব টিভি চ্যানেলে এ নিয়ে নিউজ ও হয়েছে যে,দুই সন্তান রেখে প্রাক্তনের হাত ধরে পালিয়ে গেছে গৃহবধু।
আমি তো শুধু তায়েব কে খুঁজে বেড়াচ্ছি।ওকে সত্য কথা বলা টা দরকার ছিলো আমার।আমার বিশ্বাস ওকে সবকিছু বললে নিশ্চয় বিশ্বাস করতো।কিন্তু তার আর খোঁজ পাই নি আমি।
এদিকে আমাকে আর তোদের নানুও উঠতে দেয় নি।সবাই ধরে নিয়েছে আমি আর আকবর সত্যি সত্যি পালিয়ে গেছি।

ডাক্তার ম্যাডাম পর্ব ৪৪